নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

বিশ্বজোড়া পাঠশালা মোর সবার আমি ছাত্র

একজন দেশপ্রেমীক

একজন দেশপ্রেমীক › বিস্তারিত পোস্টঃ

বঙ্গবন্ধু হত্যা ও উপমহাদেশের রাজনৈতিক হত্যাগুলো একই সূত্রে গাথা!

১৯ শে অক্টোবর, ২০১৬ বিকাল ৩:৩৮

১৯৭৫ সালের আগেও দক্ষিণ এশীয় উপমহাদেশে শীর্ষস্থানীয় রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড সংঘঠিত হয়েছে। ব্রিটিশদের বিদায়ের পরপরই ১৯৪৮ সালে প্রথম রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ডে নিহত হন ভারতের জাতির জনক মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধী। এই হত্যাকাণ্ডের তিন বছরের মাথায় ১৯৫১ সালে নিহত হন পাকিস্তানের প্রথম প্রধানমন্ত্রী লিয়াকত আলী খান। ১৯৫৯ সালে আততায়ীর গুলিতে নিহত হন সিংহলের প্রধানমন্ত্রী সলোমন বন্দরনায়েক।
১৯৬৩ সালে লেবাননের বৈরুতের এক হোটেলে রহস্যজনক পরিস্থিতিতে মারা যান অবিভক্ত বাংলার শেষ, এবং পাকিস্তানের পঞ্চম প্রধানমন্ত্রী হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী। অনেকে বলেন, বৈরুতের এক হোটেল কক্ষে নিঃসঙ্গ অবস্থায় মারা যাওয়া সোহরাওয়ার্দী আসলে গুপ্তহত্যার শিকার হন। একই কথা মুহাম্মদ আলী জিন্নাহর বোন ফাতেমা জিন্নাহর মৃত্যুর ক্ষেত্রেও শোনা যায়। ১৯৬৫ সালের আলোচিত প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে আইয়ুব খানের বিরুদ্ধে প্রেসিডেন্ট পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা চিরকুমারী এই ডেন্টিস্ট ১৯৬৮ সালে একাকী অবস্থায় করাচীর মোহাত্তা প্রাসাদে মারা যান। অনেক বছর পর করাচীর তৎকালীন পুলিশ প্রধান দাবী করেন, তিনি সেদিন ফাতেমা জিন্নাহর কোয়ার্টারে গিয়ে বসার ঘরে তাঁর গলাকাটা লাশ দেখতে পেয়েছিলেন।
কিন্তু সেসব হত্যাকাণ্ড ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট সংঘঠিত মুজিব হত্যাকাণ্ডের মতো উপমহাদেশের শীর্ষ নেতাদের মনে নিজেদের নিরাপত্তা সম্পর্কে চাপা আতংকের জন্ম দেয়নি।
১৯৭৭ সালের গ্রীষ্মে প্রধান সেনাপতি জেনারেল জিয়াউল হকের নেতৃত্বে পরিচালিত এক সামরিক অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত হন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী জুলফিকার আলী ভুট্টো। ভুট্টোর কন্যা, ২০০৭ সালে রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ডের শিকার দেশটির সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেনজির ভুট্টো তাঁর রাজনৈতিক আত্মজীবনী ডটার অভ ইস্টে ১৯৭৭ সালের সেই ঘটনার স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে লেখেন, সেনাবাহিনীর জওয়ানরা যখন রাওয়ালপিণ্ডিতে প্রধানমন্ত্রীর সরকারী বাসভবনের দেয়াল টপকে ভুট্টোকে গ্রেফতার করতে আসছিলো, তখন ভুট্টো পরিবার স্মরণ করছিলেন দুই বছর আগে ঢাকায় সপরিবারে শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যাকাণ্ডের কথা!
সম্প্রতি অবমুক্ত করা মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের গোপন নথি থেকে জানা যায়, মুজিব হত্যাকাণ্ডের খবরে ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী নিজের নিরাপত্তা নিয়েই চিন্তিত হয়ে পড়েন। তিনি রাতে শোবার সময় নিজের ঘরের দরজা বন্ধ না করে ভিড়িয়ে রাখা শুরু করেন, সোভিয়েতদের সাথে মুজিব হত্যা নিয়ে প্রকাশ্যে কথা বলতে অনীহা প্রকাশ করেন, এতোদিন এড়িয়ে চললেও দিল্লীস্হ মার্কিন রাষ্ট্রদূতের দাওয়াত কবুল করেন এবং দিল্লীর সফদর জঙ্গ সড়কে অবস্থিত নিজের সরকারী বাসভবনের নিরাপত্তা বাড়িয়ে দেন।
সত্যিই, মনে হয় ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট কোন এক অদৃশ্য ট্রিগারে দম দিয়ে দেয়া হয়, যার ফলে পরবর্তীতে নিয়মিত বিরতিতে রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড চলতে থাকে।
যেন এরই ধারাবাহিকতায় ১৯৭৮ সালে আফগানিস্তানের প্রথম প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ দাউদ খান, ১৯৭৯ সালে পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী জুলফিকার আলী ভুট্টো, একই বছর কয়েকদিনের ফারাকে ততোদিনে সোভিয়েত করদ রাজ্যে পরিণত হওয়া কমিউনিস্ট আফগানিস্তানের দুই রাষ্ট্রপ্রধান নূর মোহাম্মদ তারাকী ও হাফিজুল্লাহ আমীন, ১৯৮১ সালে বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান, ১৯৮৪ সালে ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী, ১৯৮৮ সালে পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট জিয়াউল হক, ১৯৯১ সালে ভারতের সাবেক প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধী, ১৯৯৩ সালে শ্রীলংকার প্রেসিডেন্ট রানাসিংহে প্রেমাদাসা, ১৯৯৪ সালে শ্রীলংকার বিরোধীদলীয় নেতা গামিনী দেশনায়েক, ১৯৯৬ সালে আফগানিস্তানের সাবেক প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ নাজিবুল্লাহ, ২০০১ সালে নেপালের রাজা বীরেন্দ্র বীর বিক্রম শাহ, ২০০৫ সালে শ্রীলংকার পররাষ্ট্রমন্ত্রী লক্ষণ কাদিরগামার, ২০০৭ সালে পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেনজির ভুট্টো ও ২০১১ সালে আফগানিস্তানের সাবেক প্রেসিডেন্ট বুরহান উদ্দীন রব্বানী রাজনৈতিক অপঘাত ও গুপ্তহত্যায় প্রাণ হারান।
১৯৭৫ সালের আগেও দক্ষিণ এশিয়ায় রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড হয়েছে। কিন্তু ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের পর তার ভলিউম যেন এক লাফে তেড়েফুড়ে উঠতে থাকে। সে হিসেবে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট উপমহাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসের একটি ক্রান্তিকাল ছিলো, যে ঘটনার পর দৃশ্যত এই অঞ্চলের দেশগুলোর শীর্ষ নেতৃত্বের প্রাণের উপর অাঘাতের প্রবণতা বেড়ে যায়।
বিগত আঠারো বছরের এই এই দীর্ঘ তালিকায় কমপক্ষে আরো তিনটি নাম যুক্ত হতো, যদি ১৯৯৯ সালে তামিল টাইগারদের বোমা হামলায় শ্রীলংকার প্রেসিডেন্ট চন্দ্রিকা কুমারাতুঙ্গা নিজের এক চোখের বদলে প্রাণটা ফিরে না পেতেন, যদি ২০০৩ সালে অদ্যাবধি অস্পষ্ট কোন গোষ্ঠী কতৃক কয়েক দিনের মাথায় দুইবার চালানো ভয়ংকর বোমা হামলা থেকে পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট পারভেজ মুশাররফ প্রাণে না বাঁচতেন, অথবা যদি ২০০৪ সালে ঢাকায় মারাত্মক এক গ্রেনেড হামলা থেকে বাংলাদেশের তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেত্রী হাসিনা ওয়াজেদ রক্ষা না পেতেন!

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.