নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আকাশের বুকে কিছু কিছু নক্ষত্র আছে যাদের জৌতি এখনো পৃথিবীর বুকে এসে পৌঁছেনি, সেসব নক্ষত্রের ভিড়ে আমি একজন। - ধ্রুব নয়ন ঢাকা

ধ্রুব নয়ন চৌধুরী

সত্যের পথে প্রেম, অন্যায়ের বিরুদ্ধে আমার কলম চলবেই

ধ্রুব নয়ন চৌধুরী › বিস্তারিত পোস্টঃ

ছোটগল্প

১১ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৫ রাত ১:০৩

শাড়ী
- ধ্রুব নয়ন

অগ্নিলা দি তখন ডিগ্রীতে আমি ইন্টারে। অগ্নিলা দি-ই আমাকে অ-আ, ক-খ, ১-২ শিখিয়েছে। সাইকেল চালানো, সাঁতার কাটা, চৌধুরী বাগানের তেতুল,বড়্‌ই, আম আর রতনদের পুকুরের মাছ চুরিও শিখিয়েছে। বাটুলে মারবেল দিয়ে গণেশ কাকুর খেজুর রসের ঠিলা ফুটা করাও শিখিয়েছে। অগ্নিলা দির বকে মাথা রেখে কাজলা দিদি আর চাঁন্দের বুড়ির চরকায় সুতা কাটার গল্প শুনতে শুনতে ঘুমিয়ে পড়েছি বহুরাত। দি আমায় মোনা বলে ডাকতো। দিকে ছাড়া আমার এক মুহূর্তও চলে না। দি আমার জ্ঞানে-ধ্যানে, শয়নে-স্বপনে। আমার পয়লা যৌবনের সুপ্ত হৃদয়ের কানভাঁসে প্রথম আঁচরে একেঁছিলাম অগ্নিলা দির ছবি। একি ভালোবাসা নাকি...... পাগলামি আমি জানি না............. তবে অগ্নিলা দি ছিল আমার প্রথম বিশ্বাস-সূর্যদয় প্রেম। কিন্তু দিকে কি করে জানাই আমার অসম বিশ্বাসের কথা? কারণ- দি ছিল আমার চেয়ে তিন বছরের বড়। অবশ্য বয়সস বাধা নয়, বাধা ছিল ধর্মে। অগ্নিলা দি হিন্দু, আমি মুসলিম। আমাদের একই পাড়াতে, একই আলো আঁধারে, একই ঝড়-বৃষ্টিতে বসবাস। মা আর মাসিমা ছিল দুজনা জানের দোস্তী। দুজনার পিতৃভূমিও একই গ্রামে। আব্বাজান এবং মেসোমশাই ছিলেন বাল্যবন্ধু। অগ্নিলা দি আমার মায়ের কাছে কোরআন শিখে চমৎকার স্বরে তেলাওয়াতও করতে পারতো। কিন্তু আমি ততটা শুদ্ধভাবে গীতাপাঠ করতে পারতাম না। পাড়ার সবাই মিলে মেতে উঠতাম ঈদ ও দূর্গাপূজায়। হিন্দু-মুসলমান কোন ভেদাভেদ ছিল না। কিন্তু এখন আর আগের মতো উৎসব করা হয়না। কোথায় যযেন একটা বাধা। সেবার কলেজের বাস ভাড়া মেরে মেরে দূর্গাপূজায় অগ্নিলা দি কে একটা টুকটুকে লাল শাড়ী দিয়েছিলাম। সেদিন দি আমাকে অনেক চুমো দিয়েছিিল। এব আগেও দিয়েছে তবে তা স্নেহের নাকি............... আমি জানি না। গত ঈদে অগ্নিলা দি আমাকে এককটা পাঞ্জাবি দিয়েছিল। দি কে ছেলেবেলা থেকে চুমমু দিয়ে এলেও এবারই প্রথম তার ডাবের প্রলেপ মাখানো ঠোঁটে আমার ঠোঁটের প্রণয় চিহ্ন এঁকে দৌঁড়ে পালাাই। যা ছিল আমার ভালোবাসার প্রথম স্পর্শ। দি পিছু ডাকলেও আমি আর লজ্জাই ফিরে তাকাইনি। ইদানিং দি কে খু-উ-ব ভাল্্লাগে। দির নরম শরীরের এঁটেল মাটির প্রলেপ মাখানো রংধুনুর প্রত্যকটি ভাঁজ আমার চেনা, চেনা শিরা-উপশিরা,সোনালী কেশ। কৈশরের ঠোঁটট এখন কল্পনায় স্পর্শ করে বিধাতার সুদক্ষ নিপুণ কারুকার্যের সৌখিন সৃষ্টি ঐ- বুকের পদ্মকোড়ক দুটোর গভীর নালার ডান পাশের তিলকে। মোহনীয় সুগন্ধ, নিঃশ্বাসের উষ্নতা আর বুকের ধুকধুক আওয়াজ আমার খুব পরিচিত। দির নাকের উপরের বিন্দু বিন্দু ঘাম যেন শিশশিরের ফোটা। বেশ ক মাস ধরে দেখছি হায়েজের সময় দি আড়ালে থাকছে। আগে অবশ্য এমনটা হয়নি। ফিজিক্যাল পিরিয়ড শুরু হলে আমায় সঙ্গে নিয়ে ফার্মেসী থেকে কন্ট্রাসেভটিভের প্যাকেট নিয়ে আসতো। কি জানি, এখন হয়ততোওবা অনেক কিছু বুঝি তাই! দির সবকিছু আমার চেনা-জানা হলেও একটা লাল রঙ্গের ডায়েরিতে কোনদিনই হাত দিতে দেইনি। কি যেন গভির রাতে লিখে আবার তা লুকিয়ে রাখে। অনেক খুঁজেছি কিন্তু পাইনি। কলেজের বড় ভায়েরা লেডীস সেবা বাড়িয়ে দিয়েছে। তাই হঠাত করেই মেসোমশাই দির সন্মন্ধ পাকা করে ফেলেছেন। এর আগেও সম্বন্ধ এসেছিলো। তবে তা চালাকি করে করে ভেঙ্গে দিতাম। অবশ্য তাতে অগ্নিলা দিরও সায় ছিল। কিন্তু এবার আর হল না। আমার দেওয়া সাড়িটাই পরে এসেছিলো অগ্নিলা দি। দেখতে ঠিক যেন দুর্গাদেবী। বিয়ের আগের রাতে দি আমার বালিশের ভিতর থেকে সেই লাল রঙ্গের ডায়েরীটা বের করে আমারই হাতে দেয়। সে ডায়েরীর প্রত্যেকটি পৃষ্ঠাই ছিল আমাকে নিয়ে লেখা দির নিঃশব্দ ভালোবাসার কবিতা। আমি অবাক। দি আমাই নিয়ে অজানায় পারি জমাতে চেয়েছিল। আমিই যাইনি। কারণ- মৌলবাদীদের বিষাক্ত ফতুয়া। শুধু ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়েছিল ভোরবেলা, নিষ্পাপ শিশুর মতো। নিরবে মুছেছিল জল একটাও শব্দ করেনি। যেমনটি একবার বর্ষার মৌসুমে কদমের দাল দিয়ে কি আঘাতটায় না করেছিলাম, কোন প্রতিবাদ করেনি। শুধু কেঁদেছিল ফুফিয়ে ফুফিয়ে। সে দাগ বেশ কয়েকদিন ছিল ফর্সা পিঠের রক্তিম বর্ণে। মঙ্গলমন্ত্র, সাতপাক ঘুরে দি সিঁদুর পরে আমার হৃদয়ের রক্তে। আমাদের নিঃশব্দ ভালোবাসা নিরবে ডুকরে কাঁদে মনের গহীন অরণ্যে। অকাতর চিত্তে নিপুণ কারুকারজে, সাক্ষী চিতা- প্রতীক্ষা মিলনের লগ্নে দুধ বর্ণ নিরভেজাল হাতে দিয়েছে শাঁখা, সানায়ের সুর বরই বিমধুর, অগ্নিলা দি পরেছে সিঁদুর। সৌখিন সংশয়। শুনেছি- সনো রিপোর্টে অগ্নিলাদির গর্ভে অতিথি কন্নাকলি। শুরু হয় দুরবাবহার। এলাকার চেয়ারমান করেছিলেন আমার অগ্নিলা দির গর্ভের চুক্তিনামা। কন্না শিশু প্রসব করলে দিকে নিতে হবে তালাকনামা। এরপর দাবি করে মোটা অংকের যৌতুক। প্রতিবাদ করাই শুরু হয় নির্যাতন। নির্যাতনের একপর্যায়ে খুন করে সিলিং ফ্যানে ঝুলিয়ে রাখে। বলা হয় আত্মহত্যা। খবর পেয়ে গিয়ে দেখি- আমার হৃদয়ের অগ্নিলা দির গলাই আমারই দেওয়া সেই শাড়ি........................।। অবাক বদনে তাকািয়ে রইলাম শাড়ি আর চঞ্চলা প্রজাপতির দিকে। আমার নিঃশব্দ ভালোবাসা কালো মেঘে ঢেকে গেলো। অগ্নিলা দির ভালোবাসা চাপা পরে গেলো আর অগ্নিলা দি ছাই হয়ে প্রজাপতির মতো উড়ে গেলো মুক্ত আকাশে। বাঁশ বাগানের মাথার উপর চাঁদ উঠেছে অই এখন চৌধুরি বাগানে দারুণ আমের মুকুল আসে, রতনদের পুকুরে মাছেরা দল বেঁধে ভেসে বেড়ায়, এ মৌসুমেও কদম ফুল ফুটেছে। কিন্তু আমার অগ্নিলা দি কই? অগ্নিলা দি নেই, তাই দু-চোখে ঘুম আসে না। অবিশ্বাসও করতে পারি না। এখন আমি আমার নিঃশব্দ ভালোবাসার কবিতা শোনাই রাতের তারাগুলিকে...... ভাবি অই নক্ষত্রগুলোর মাঝেই অভিমানে লুকিয়ে আছে আমার অগ্নিলা দি। মাঝেমধ্য দু- একটি নক্ষত্রের উল্কাপিণ্ড অগ্নিলা দি হয়ে ছোটাছুটি করে আমার নিঃশব্দ ভালোবাসার কবিতা শুনতে।

- ধ্রুব নয়ন
লেখক, কবি, সাংবাদিক, কথা সাহিত্যিক, মঞ্চ- অভিনেতা, নবীন নির্মাতা।

মন্তব্য ২ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ১৪ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৫ রাত ২:৩৩

হাসান মাহামুদ সাগর বলেছেন: আসাধারণ লাগলো আসাধারণ

২| ২৫ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৫ রাত ১২:৫৭

ধ্রুব নয়ন চৌধুরী বলেছেন: আকাশের বুকে কিছু কিছু নক্ষত্র আছে যাদের জৌতি এখনো পৃথিবীর বুকে এসে পৌঁছেনি, সেসব নক্ষত্রের ভিড়ে আমি একজন। - ধ্রুব নয়ন । ধন্যবাদ ভাইয়া।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.