নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমার চিন্তা ভাবনার খোলা খাতা আপনাদের সবার ভালো লাগলে ভালো না লাগলে দুঃখিত

মুর্খদের সাথে তর্ক করতে ভাল্লাগেনা,মুর্খ দের এভয়েড করতে ভাল্লাগে

ধ্রুব অন্যকোথাও

আমাকে অমানুষ ডাকুন

ধ্রুব অন্যকোথাও › বিস্তারিত পোস্টঃ

প্লাস্টিক প্রতিবাদঃ রক,পাংক,মেটাল,হিপহপ,র‍্যাপ

০৮ ই মার্চ, ২০২০ বিকাল ৫:৫১

প্লাস্টিক প্রতিবাদঃ রক,পাংক,মেটাল,হিপহপ,র‍্যাপ
বাংলাদেশের রক মিউজিক এর সাথে আমার পরিচয় যদি বলি তাইলে সেটা হবে ২০০০ এর দিকে।আমি থাকতাম প্রত্যন্ত এক এলাকায়। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় এর ক্যাম্পাসে। এই প্রত্যন্ত অঞ্চলে নগর বাউল কে দেখতে আমি ১০ বছর বয়সে গিয়েছিলাম। গুরুর দুঃখীনি দুঃখ করোনা এখনো কানে বাজে। যদিও ওই বয়সে আসলে গুরুর ভয়েসের পাওয়ার, ব্লুজি গিটার প্লেয়িং আর ফান্টির অসাধারন ড্রামিং বুঝার বয়স হয় নাই। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় প্রচন্ড রাজনীতি মুখী, স্বল্পশিক্ষিত, দুনিয়া হতে বিচ্ছিন্ন ,নোংরা একটা সমাজের সকল উপকরন নিয়ে গঠিত একটা এলাকা। যেখানেই পা দেই সেখানেই গরুর গোবর নাহয় ছাগলের লাদি। ৮০ শতাংশ মানুষ শুদ্ধ ভাষায় কথা বলতে পারে না।পুরাটাই গ্রাম দিয়ে ঘেরা। সেই গ্রাম্য মানুষজনের সাথে আবার প্রায়ই শিক্ষার্থীদের মারপিট হইতো সিএনজির ভাড়া থেকে শুরু করে আরো অনেক কিছু নিয়ে। আমার স্মৃতিতে এখনো একটা দৃশ্য জলজল করে। লুংগি পড়ে সিএনজিতে ঝুলে ঝুলে এক হাতে বাশ আরেকহাতে রাম দা নিয়ে মানুষজন ছাত্র পিটাতে আসতেছে। আমি টিউশনি করায় লোকাল বাস থেকে নেমে দৌড় দিয়ে চলে গেলাম।
তো এরকম একটা জায়গায় বাংলাদেশের পশ আন্ডারগ্রাউন্ড রক/মেটাল ব্যান্ড রা আসবেনা সেটাই তো স্বাভাবিক তাই না? কে আনবে? কে ডাকবে? কি খেত জায়গা। লুঙ্গি পড়ে নিজের বিচি চুলকাচ্ছে শ্রোতা সেখানে নেমেসিস এর জোহাদ সাহেব আর্কটিক মাংকি এর “ডু আই ওয়ান্ট টু নো” গাবে সেটা কিভাবে হয়? কিন্তু এরপরেও নেমেসিস এসেছিল এবং তরুন দের একটা অংশ এসেছিল। কিন্তু কবে ছাড়া কেউ কোন গানের রিকুয়েস্ট করে নি। তাও আশা করা যেত বগি পিটানো একুস্টিক গিটার বাজানো ছেলেপেলে গুলো রাজনৈতিক ভাবে সচেতন লিরিক্স লিখবে মাকসুদ ও ঢাকার মতন। কিংবা নিজস্ব কিছু দাড়া করাবে গুরু আজম খান কিংবা জেমসের মতন। রেললাইনের সেই বস্তি কিংবা মন্নান মিয়ার তিতাস মলমের কথা লিখবে। সেইদিন এখনো আসেনি। পত্রঝড় এখন ডিস্কাউন মেঘদলের মতন গান বানাচ্ছে যা কানে ভাল্লাগে কিন্তু অরিজিনাল বলে মনে হয় না। মনে হয় যেন কোথাও শুনেছি। আশা করি ওরা ওদের ট্যালেন্টের প্রকাশ ঘটাবে দ্রুতই। দ্রোহীর একটা ছোট ইপি ছিল যেটা বাজে প্রোডাকশনে ধরা খেয়ে গেছে।
আমার এতবড় ভূমিকার পিছনের কারন টা বলি। আমাদের দেশের রক এবং মেটাল মিউজিকের সামাজিক দায়বদ্ধতা মূলক লিরিক্স কিংবা লিরিক্স এর রাজনৈতিক সচেতনতার সাথে সারা বিশ্বের রক এবং মেটাল মিউজিকের রাজনৈতিক সচেতনতার যোগসাজশ কতখানি সেটার পর্যালোচনা করা। এই লেখার স্কোপ থাকবে ২০০৫ পরবর্তী ব্যান্ডের এলবাম গুলো নিয়ে। আমার জেনারেশনের কাছে যে সিন টা জরুরী ছিল সেটা নিয়ে আমার আলোচনা থাকবে। একদম উতসবের পর (ব্ল্যাক),নতুন দিনের মিছিল(অর্থহীন), দানব(ক্রিপটিক ফেইট) থেকে শুরু করে হালের কনক্লুশন, ইমপ্লিসিট, রকাফোবিক পর্যন্ত।
রক মিউজিক এবং মেটাল মিউজিক কে অনেকে প্রটেস্ট, প্রতিবাদ এবং স্রোতের বিরুদ্ধে কথা বলার হাতিয়ারের মিউজিক হিসাবে প্রচার প্রসার করতে ভালোবাসে। কিন্তু আসলে রক কিংবা মেটাল মিউজিক প্রথম থেকেই ওরকম কিছু ছিল না। আফ্রিকান আমেরিকান দাসত্বের বৈষম্যের অন্ধকারের সুর গুলো সাদা গরীব পোলাপান নিজেদের জীবনের সাথে মিলাতে গিয়ে দেখে সেটা পুরোপুরি খাপ খাচ্ছে না। তাই প্রেম বিরহের গান কিছুদিন গেয়ে তারা যুদ্ধবিগ্রহের বিরুদ্ধে গান লিখে। পিংক ফ্লয়েড,রোলিং স্টোনস এর পর মেটাল ব্যান্ড দের বাবা ব্ল্যাক স্যাবাথ টুকটাক যুদ্ধ বিগ্রহের বিরুদ্ধে গান লিখালিখি করে। বাদবাকি পুরোটাই বিভিন্ন ড্রাগস আর এলএসডি এর ট্রিপ এ দেখা ফেরারি রূপকথার গান। রক এন্ড রোল আসলে ব্লুজ,আর এন বি এর সাফারিং টা তুলে ধরার সৎ চেষ্টা করেও হয়েছে বিপর্যস্ত,পরাজিত এবং সবশেষে হয়েছে বিক্রিত। চকচকে প্রোডাক্টে পরিনত হয়েই রক মিউজিক এর মরন হয় গানস এন্ড রোজেস, মটলি ক্রু, স্কিডরো,এরোস্মিথের এর ঝাকড়া চুলের দুর্দান্ত পার্ফরম্যান্স এ। কিন্তু ওদের কোন বলার কিছু ছিল না। পার্টি ফুর্তি আনন্দের এবং মেয়ে ময় জীবন ওই গান গুলোয়। আর না হয় ফ্যান্টাসির গল্প অথবা মাদকযুক্ত হাই এর এবস্ট্রাক্ট গল্পে ভরপুর। এর ভিতরেও কিছু ব্যতিক্রম ছিল অবশ্যই তবে তা খুব বেশি না।
এগুলোর পাশাপাশি পাংক রক এবং পরবর্তীতে হার্ডকোর পাংক এর উত্থান হয় ব্রিটেন এবং আমেরিকা জুড়ে। গ্যাস স্টেশন এবং আইস্ক্রিমের দোকানে কার্যরত ছেড়া জিন্সের প্যান্ট পরিহিত ময়লা সাদা গেঞ্জি পরিহিত গরীব সাদা আমেরিকান দের ব্যান্ড ব্ল্যাক ফ্ল্যাগ এবং প্রচন্ড ইনোভেটিভ আফ্রিকান আমেরিকান ব্যান্ড ব্যাড ব্রেইনস নতুন দুনিয়া খুলে দেয়। প্র্যাকটিকাল,পলিটিকাল এবং ব্যক্তিগত রাগ ও ক্রোধের বহিঃপ্রকাশ করা এই মিউজিক টানে গরীব কম শিক্ষিত সাদা চামড়ার আমেরিকান দের কে। এদের ভিতর যারা চরম ডান পন্থী তাদের জন্য আসলো নাজি/হোয়াইট সুপ্রিমিস্ট হার্ডকোর পাংক আর যারা বামপন্থী টাইপের তাদের জন্য আসলো এনার্কিস্ট/সবজিভোজী/বামপন্থী হার্ডকোর পাংক ব্যান্ডরা।এই এখন আপনারা যে মেটালকোর বাজান ঐ যে ওপেন স্ট্রিং রিদমিক পাম মিউট প্যাটার্ন এর রিফ বাজান ওইটা কোত্থেকে আসছে জানেন? আর্থ ক্রাইসিস নামে একটা ব্যান্ড ছিল তাদের গিটারিস্ট এইটাকে পপুলার বানাইছে। গডফাদার অফ মেটালকোর বলে। নাম টা মনে রাখেন খুবই ইম্পর্টেন্ট হবে সামনে।
এই হার্ডকোর মুভমেন্ট খুবই ইম্পর্টেন্ট একটা জিনিস বর্তমান মিউজিক সিনের অবস্থা বুঝার জন্য।এই হার্ডকোর পাংক এর সাথে হার্ড রক মিলে হইছে গ্রাঞ্জ, মেটাল মিশে হইছে থ্র্যাশ মেটাল,গ্রাইন্ডকোর, মেটালকোর ইত্যাদি। এই থ্র্যাশ মেটাল থেকে আরো তৈরি হইছে ব্ল্যাক মেটাল,ডেথ মেটাল, ডেথকোর, পোস্ট হার্ডকোর সেই সাথে আরো অনেক কিছু। শেষ করা যাবেনা বলে। এখন প্রথমে গ্রাঞ্জ নিয়ে বলি। গ্রাঞ্জ এনেছিল মেইন্সট্রিম মিডিয়াতে মিউজিশিয়ান দের গেটাপ থেকে শুরু করে পার্ফরম্যান্স স্টাইল এর পরিবর্তন। চাছাছোলা কথাবার্তা। প্রচন্ড বিশৃংখল পার্ফরম্যান্স স্টাইল, তুলনামুলক রিলেটেবল লিরিক্স (সাউন্ডগার্ডেন ছাড়া), হাসিখুশি আর মেয়েদের নিয়ে গান হলো বন্ধ। পার্ল জ্যাম,নির্ভানা, এলিস ইন চেইন্স,সাউন্ডগার্ডেন রক/মেটাল মিউজিক এর বাগাড়ম্বর অতি নাটকীয়তা কে বেসিকালি জানালা দিয়ে ফেলে দেওয়ার প্রচেষ্টা চালায়।কারন হার্ডকোর পাংক দ্বারা অনুপ্রানিত এইসব মিউজিশিয়ান দের এত তেল ছিল না। স্কিডরোর মতন স্টেজে কোরিওগ্রাফিতে ভরপুর নেচে নেচে গাওয়ার মন মানসিকতা এইসব ডিপ্রেসড ড্রাগ এডিক্ট রকস্টার দের ভিতর ছিল না। কিন্তু এন্টারটেইনমেইন্ট যেহেতু দিন শেষে একটা ইন্ডাস্ট্রি এই গ্রাঞ্জ মানসিকতাই হয়ে গেল নতুন প্রোডাক্ট।আন্ডারগ্রাউন্ডের হার্ডকোর পাংক আরো আন্ডারগ্রাউন্ডে চলে গেল।ওইদিকে থ্র্যাশ মেটাল সিনে কিঞ্চিত বাগাড়ম্বর ছিল। টাইট লেদার পড়া পোলাপান ওইখানেও ছিল কিন্তু এরা তাদের পূর্বসূরি হেভি মেটাল মিউজিশিয়ানদের তুলনায় অনেক বেশি মাটির মানুষ ছিল। জিন্সের জ্যাকেট পড়া হেটফিল্ড এখন তাই থ্র্যাশ মেটালের আইকন। ডেথ মেটাল ও খানিকটা এরকম কিন্তু এটা নিয়ে কথা বলবোনা আর ব্ল্যাক মেটাল ছিল পুরোই উল্টো জিনিস কিন্তু তাও আমি ব্ল্যাক মেটাল নিয়ে আলাপ করবো।
প্রথমতঃ আমি এখনই বলে রাখি, আমি বলবো না মিউজিক কে অবশ্যই প্রতিবাদী হতে হবে, রাজনৈতিক হতে হবে কিংবা কিছু জরুরী কথা বলাই লাগবে তা নয়। আমি বিলি আইলিশ এর ব্যাড গাই শুনেও আমি মাথা দুলাতে থাকবো।কারন মিউজিক শুধু লিরিক্স না,মিউজিক তাল,সুর আর লয়ের ব্যাপার ও বটে। কিন্তু এই আলোচনাটা করবো প্রতিবাদী গান এবং মুভমেন্ট সৃষ্টিকারি ব্যান্ড নিয়ে। কেইস স্টাডি হিসেবে আমাদের কাছে আছে বব ডিলান, রেইজ এগেন্সট দা মেশিন, পিংক ফ্লয়েড, দেশের আর্বোভাইরাস,পাওয়ারসার্জ, ক্রিপটিক ফেইট, আর্টসেল ইত্যাদি। আরো অনেক আছে কিন্তু আপাতত এই কয়টা নিয়ে একটু আলাপ করি। বব ডিলান নোবেল পুরষ্কার প্রাপ্ত মিউজিশিয়ান। সবাই তার গান গুলো নিজের সম্পত্তি করে নিয়েছে,এতটাই রিলেটেবল তার গান গুলো। মানুষজন খুবই পছন্দ করে। তবে কিনা ডিলান কিন্তু কোনদিনই স্বীকার করেন নি তিনি কোন মুভমেন্টের কথা চিন্তা করে এগুলা লিখেন।এই জিনিস টা খুবই ক্রিটিকাল। মেটালিকা, স্লেয়ার থ্র্যাশ মেটাল গান বানায় যুদ্ধ বিগ্রহের বিরূদ্ধে। কিন্তু কয়েক বছর আগে নিউজ এসেছিল যে সি আই এ মেটালিকার গান ব্যবহার করে কয়েদিদের উপর অত্যাচার করে ফুল ভলিউমে ছেড়ে। জেমস হেটফিল্ড সেটা নিয়ে বেশ নর্মালি বলেন তিনি গর্বিত। সবাই সেটা নিয়ে কুপোকাত আমাদের দেশে। মানুষের কত কথা, কেমনে মুসলিম দের উপর অত্যাচার করার গান ওরা করে? মেটালিকা হারাম ইত্যাদি, ওই নিউজ শুনে আমি আর মেটালিকা শুনি না হেন তেন আরো কত কি। আমাদের বুঝ আমাদের মেন্টালিটি আমাদের মানসিকতা এর সাথে ওদের জীবনধারার আকাশপাতাল পার্থক্য। যারা এই গান গুলো বানাইতেছে এরা খুবই স্বল্প শিক্ষিত, ডানপন্থী কিন্তু আব্রাহামিক ফেইথ নিয়ে বিরক্ত,বাবা মা এর কাছ থেকে প্রায় অসহযোগিতা ময় সম্পর্ক, অর্থনৈতিক ভাবে অসহায়। আর আমেরিকাতে গরীব হওয়া আর লাশ হওয়া একই কথা। অর্থনৈতিক ব্যবস্থা টা এমনই যে কোন ভাবে গরীব হলে আপনার জীবন আটকা। এখন এরা কেউই আমার আর আপনার মত বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষিত না। কারন আমেরিকাতে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে বিশাল টাকার লোন করা লাগে। বিশ্ব রাজনীতির ইম্প্যাক্ট নিয়ে গভীর ভাবে এবং সূক্ষ্ম ভাবে চিন্তা করার সময়, ইচ্ছা,দরকার কিংবা সামর্থ্য কোনোটাই নাই এদের। স্লেয়ার এর ও একই অবস্থা। স্লেয়ারের ভোকাল টম আরায়া প্লাম্বার ছিলেন। উনি এখন এমন সব কথা বলেন যেটা কিনা কঠিন ডানপন্থী রা বলতেও ভয় পায়। এই ডানপন্থী কথা গুলো আমরা আমাদের দেশে অনেকেই বলে এবং করে (পাহাড়িদের উচ্ছেদ করে বাংলাদেশী বসাইতে হবে, রোহিংগাদের আমাদের স্কুল কলেজে ঢুকতে দেওয়া যাবেনা, চাকমা-মারমা দের আমাদের মিডিয়াতে ঢুকতে দেওয়া যাবেনা ইত্যাদি) । আবার স্লেয়ারের অনেক গান আছে ইন্ডিরেক্টলি নাজি জার্মান দের গ্লোরিফাই করে। ওয়ার অন টেররিজমের আমেরিকান পজিটিভ ভিউপয়েন্ট কে তুলে ধরে এবং হলিস্টিকালি যুদ্ধের হালকা নিন্দা করে। একমাত্র ব্যতিক্রম হলো ল্যাম্ব অফ গড যারা কিনা প্রচন্ড শিক্ষিত এবং অনেক বেশি পার্সপেক্টিভ গানের কথা নিয়ে।
এসব ব্যান্ড এবং আর্টিস্ট দের দ্বারা ইনফ্লুয়েন্স হয়ে আমাদের দেশের এলিটরা , প্রাইভেট স্কুল পড়ুয়ারা, পয়সা ওয়ালারা, অনেক বেশি শিক্ষিত, অনেক বেশি সুযোগ পাওয়া মানুষেরা করতেছে থ্র্যাশ মেটাল যেখানে কিনা থ্র্যাশ মেটাল এবং থ্র্যাশ মেটালের পুর্বপুরুষ হার্ডকোর পাংকের জনক ব্ল্যাক ফ্ল্যাগের ভোকাল আইস্ক্রিমের দোকানের সার্ভার(হেনরি রোলিন্স) আর বাকিরা গ্যাস স্টেশনে কাজ করতো। সমাজের নিচের তলার মানুষের সাথে আনাগোনা অনেক বেশি। শো গুলাতে আসতোও জমে থাকা রাগ নিয়ে ভায়োলেন্ট মানুষজন। শো গুলার ভিডিও ক্লিপ অনলাইনে এভেইলেবল , গুগল করলে দেখতে পাবেন। এখন আমাদের দেশে সমাজের উপর তলার মানুষের আরোপিত রাগ,দুঃখ ,বিষাদ সবই এই মিউজিক দিয়ে বের হয়ে আসে। যেটার আসলে খুব বেশি ইম্প্যাক্ট আর সমাজে পড়েনা। যদিও দিনবদল হইছে। গত ২-৩ বছরে অনেক বদলাইছে। রেকর্ডিং টেকনোলজি আর মিউজিকাল ইন্সট্রুমেন্টের দাম কমে যাওয়াতে এখন দেশ জুড়ে একটা পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে। অনেক সাধারন পোলাপান এখন বাজায়। কিন্তু গানের কথায় ভারী বোধ এবং জরুরী কিছু বলার তাগিদ টা খুব একটা বেশি দেখা যায় না। এখনো এই ব্যাপারে লিডার বাংলাদেশে আর্বোভাইরাস। বন্ধুর লাশ,নিলাম এর আগে কর্পোরেট এনথেম কিছুটা কথা বলে, জালো আগুন জালো, প্রলাপ গানেই সরাসরি এই প্রতিবাদের কথা কণ্ঠ আক্রমন করে শ্রোতাদের কে। যদি কেউ গভীর ভাবে চিন্তা করে তবে। ক্রিপটিক ফেইট এর দুটো এলবামের এরকম আগুন ছড়ানো গান আছে, অর্থহীনের কিছু আছে। কিন্তু এসব মিউজিশিয়ানদের জীবন সম্পর্কে আমরা যতখানি জানি সেটা থেকে সহজেই বলতে পারি এই যুদ্ধবিগ্রহ এর প্রতিবাদের গান গুলো বেশিরভাগই আরোপিত। তাই সমাধি শহর আমার কাছে এন্টারটেইনমেন্ট মনে হয় কিন্তু ডিপ মনে হয় না। কিন্তু ওইদিকে ক্রিপটিক ফেইটের সাকিব ভাইয়ের চিতকার “যুদ্ধে শহীদ হয়েছে ৩০ লাখ কিন্তু কেন মাত্র ৭ জন মাত্র বীরশ্রেষ্ঠ” আমার কাছে অনেক বেশি সত্য ,সাহসী এবং সৎ মনে হয়। ক্রিপ্টিক ফেইট এজন্য মিউজিকালি অনেক বেশি সফল ব্যাণ্ড হিসেবে আমার মতে। আর্টসেল অবশ্য একটা ভিন্ন জিনিস।কমার্শিয়ালি অনেক সফল কিন্তু ওদের লিরিক্স গুলো একদম ভিন্ন এবং এবস্ট্রাক্ট প্রকৃতির তো আমি ওদের কথা এইখানে বলবো না।
পশ্চিমা বিশ্বের অর্থনৈতিক অসমতা এবং জীবনের অর্থহীনতা অনেক মিউজিশিয়ানদের বানিয়ে ফেলেছিল অনেক বেশি সত,ডিরেক্ট এবং আগুন ঝরানো। ব্লুজ মিউজিশিয়ানরা,রক মিউজিশিয়ানরা, হার্ডকোর এবং এনার্কিস্ট পাংক ব্যান্ড রা এগুলো তে বেশ কন্ট্রিবিউট করেছিল। গ্রাঞ্জ রক মিউজিশিয়ান রা অনেক বেশি এবস্ট্রাক্ট হয়ে গিয়েছিল এবং যদিও হার্ডকোর পাংক এর ইনফ্লুয়েন্স তাদের উপর ছিল কিন্তু তারা ওইখান থেকে সরে গিয়েছিল। পার্ল জ্যাম কিছু টা এক্টিভিজম বেইজড লিরিক্স করেছিল। বুশ এর বিরুদ্ধে অনেক প্রতিবাদ এর অংশ তারা ছিল। এখনো প্রতি এলবামে একটা দুটো তারা প্রতিবাদী হার্ডকোর পাংক ইনফ্লুয়েন্সড গান তারা করেছিল। এরপর হার্ডকোর পাংক যতদিন যাচ্ছে ধীরে তত বেশি আরো বেশি আন্ডারগ্রাউন্ডে চলে যাচ্ছে।হারিয়ে যাচ্ছে। আই মিন, আর্থ ক্রাইসিসের কথা বলতেছিলাম। আর্থ ক্রাইসিস(No drugs,No alcohol) তাদের স্ট্রেইট এজ এবং তাদের নিরামিষাষী আইডিওলজির লিরিক্স নিয়ে এগিয়ে গিয়েছিল। তারা তাদের মিউজিক নিয়ে অনেক দূর এগিয়ে গিয়েছিল সেই সাথে তারা তাদের আইডিওলজি সবখানে সবরকমের লেভেলে নিয়ে গিয়েছিল। একদম মেইনস্ট্রিম মিডিয়াতে পর্যন্ত নিয়ে গিয়েছিল। এখন, সমস্যা হইল যখন আইডিওলজি থাকে তার অন্ধকার ও দিকে থাকে। হেভি মেটাল,গ্ল্যাম মেটাল, হার্ড রক মানুষরে বানাইছে ড্রাগ এডিক্ট,ড্রাংক। ব্ল্যাক মেটাল থেকে হইছে নাজি,চার্চ পোড়ানো। হার্ডকোর পাংক থেকে শুরু হল ভায়োলেন্স,খুনাখুনি এবং নাজি পাংক মিউজিক। আইডিওলজি আবার উলটো ঘুরে। যেমনঃ রেইজ এগেন্সট দা মেশিন এর কট্টর বামপন্থী লিরিক্স অনেকেই ডানপন্থী এবং উগ্রপন্থী নিজেদের উগ্র চিন্তা কে সাপোর্টের জন্য ব্যবহার করছে। সিনেটর পল রায়ান আর রেইজ এগেন্সট দা মেশিন এর লিরিক্স নিয়ে চমৎকার ভিডিও আছে ইউটিউবে।
এখন আইডিওলজি প্রচারের জন্য গান কে ব্যবহার করা সঠিক কি?সেইটা আর্টিস্ট দের নিজেদের মেনে চলা উচিত কি? আবার আর্টিস্টের গান কে শ্রোতা কিভাবে নিতেছে সেটায় আর্টিস্টের কতখানি দায়? আসলে এইসবের ইম্প্যাক্ট কতখানি? এই প্রশ্ন গুলো নিয়ে আমাদের সবার উচিত চিন্তা করা উচিত। গান আসলে একধরনের এন্টারটেইনমেন্ট।বাংলাদেশের সিনে আসলে গভীর গান খুব বেশি না।ভাবাতে পারে চিন্তা করাতে পারে এই ধরনের গান আধুনিক এয়ারওয়েভে আরো আসা উচিত। পশ্চিমে র‍্যাপ আর হিপহপ এখন মেটাল,রক,পাংক কে সরায় দিয়ে সমাজব্যবস্থা,অর্থনীতি এবং রাজনীতি নিয়ে কথা বলার হাতিয়ার হয়েছে বেশ অনেকদিন হচ্ছে। NWA, Public Enemy থেকে শুরু করে হালের কেন্ড্রিক লামার, চাইল্ডিশ গ্যাম্বিনো সোশ্যালি কনশাস গান বানাইতেছে। থাইল্যান্ডে আছে র‍্যাপ এগেন্সট ডিক্টেটরশীপ কালেক্টিভ।এখন এগুলোর ইম্প্যাক্ট কি আদৌ আছে? নাকি এগুলো কমার্শিয়ালাইজড প্যাকেটেড প্রতিবাদ। NWA এর মূল দুই মেম্বার মাল্টি মিলিয়নিয়ার । প্রতিবাদের কণ্ঠস্বর কে এন্টারটেইন্মেন্ট ইন্ডাস্ট্রি তে আটকে রেখে রাজনীতির দখল রেখে দেওয়ার এই টেকনিক সবখানেই চলে।
এই চক্রটা আমাদের দেশেও বেশ ভালোভাবেই আছে। কিন্তু প্রতিবাদী গানে কতখানি কাজ হচ্ছে?
“গনতন্ত্র সে আবার কি?”
আসলে এই লাইন কি আমাদের ভাবায়? দুই কুকুরের মারামারি দেখে কি আমরা প্রতিবাদ করি? নাকি প্রতিবাদ করতে গিয়ে একঘরে হয়ে গিয়ে নিজেও ভেড়ার পালে যোগ দিয়ে ঘুষ খাই আর মেধা থাকলে বিদেশে চলে যাই? এই চিন্তা গুলো করতে গিয়ে নেগেটিভ কিয়ের্কাগার্ড-ইয়ান হয়ে নিজেকে শেষ করে দেওয়ার চেয়ে গান থেকে এন্টারটেইনমেন্ট নিয়ে ফারুক ভাইয়ের প্রজেক্টে গোলাপি শুনে পাছা দুলিয়ে নেচে বেড়ানো বাংলাদেশী হওয়াটাই আমার ইদানিং মনে হয় সুখের একটা চয়েস।
লেখকঃ ধ্রুব



মন্তব্য ৭ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৭) মন্তব্য লিখুন

১| ০৮ ই মার্চ, ২০২০ সন্ধ্যা ৬:০১

রাজীব নুর বলেছেন: রক,পাংক,মেটাল,হিপহপ,র‍্যাপ এইসব থেকে আমি দূরে থাকি।

০৮ ই মার্চ, ২০২০ রাত ৮:২৩

ধ্রুব অন্যকোথাও বলেছেন: সব কিছুর এক্সপেরিয়েন্স থাকা খারাপ না

২| ০৮ ই মার্চ, ২০২০ রাত ৮:০০

নেওয়াজ আলি বলেছেন: খুব ভালো।

০৮ ই মার্চ, ২০২০ রাত ৮:২৩

ধ্রুব অন্যকোথাও বলেছেন: ধন্যবাদ

৩| ০৮ ই মার্চ, ২০২০ রাত ১০:৪৫

রাজীব নুর বলেছেন: লেখক বলেছেন: সব কিছুর এক্সপেরিয়েন্স থাকা খারাপ না

এই কথাটা ঠিক বলেছেন।
ধন্যবাদ।

৪| ১০ ই মার্চ, ২০২০ সকাল ৯:৫২

হাসান মাহবুব বলেছেন: দিন যত যাচ্ছে, মেইনস্ট্রিমের গান ততই সরলীকৃত হচ্ছে, সহজ হচ্ছে, ফরমুলায় পড়ে যাচ্ছে। একটিভিস্টরা ক্রমেই আন্ডারগ্রাউন্ডে চলে যাবে আরো।

১২ ই মার্চ, ২০২০ রাত ১১:৫২

ধ্রুব অন্যকোথাও বলেছেন: সত্য বলেছেন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.