নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

জীবে প্রেম করে যেজন, সেজন সেবিছে ঈশ্বর

দীপান্বিতা

দীপান্বিতা › বিস্তারিত পোস্টঃ

কথাচ্ছলে মহাভারত - ১৫০

৩০ শে জুলাই, ২০১৭ সকাল ১১:২৫

[পূর্বকথা - যুধিষ্ঠির কৃষ্ণের অনুমতি নিয়ে রাজসূয় যজ্ঞের আয়োজন করেন এবং যথাযথ ভাবে যজ্ঞ সমাপন করেন....সকল রাজারা নিজ দেশে ফিরলেও দুর্যোধন থেকে যায় ও পাণ্ডবদের হিংসা করতে থাকে ... শেষে মামা শকুনির সাথে পরামর্শ করে পিতা ধৃতরাষ্ট্রকে বাধ্য করে পাণ্ডবদের পাশা খেলায় আমন্ত্রণের জন্য ... শকুনির ছলনায় যুধিষ্ঠির একে একে সব হারতে থাকেন.... পঞ্চ পাণ্ডবদের যেমন পাশা হারলেন তেমনি দ্রৌপদীকেও হেরে এ খেলা শেষ হল ... ]



পঞ্চপাণ্ডবকে সভাতলস্থ করণঃ

সূর্যপুত্র কর্ণ আনন্দে অট্টহাস্যে বলে ওঠে –দেখ দেখ কেমন দৈবের লিখন। হে দুর্যোধন মনে পরে আমাদের সবার মাঝে তোমাকে এরা লজ্জা পাইয়েছিল, উপহাস করেছিল। আজ তার ফল পেল। সেদিন নিজ ভবনে এই ভীমার্জুন, এই মাদ্রীর দুই পুত্র তোমায় দেখে বারবার হেসেছিল। যেন তারা বাতুল(পাগল) দেখছিল। আজ তুমিও নিজ প্রাসাদে তার সোধ তুললে।
হে যুধিষ্ঠির দৈবের লিখন দেখ আজ তোমরা সেই অধর্মের ফল পাচ্ছ। দৈব আজ তোমাদের দাস করে দুর্যোধনের পায়ে ফেলল। সবাই দেখ যুধিষ্ঠির আর তার ভাইরা আজ দুর্যোধনের দাস। দাসরা সম যোগ্য আসন পায় না। এসভায় এদের সাথে আর বসে থাকা যাচ্ছে না।

দুর্যোধন বলে – সখা উত্তম কথা বললে।
সঙ্গে সঙ্গে পঞ্চপাণ্ডবদের দাসস্থানে গমনের আজ্ঞা হল।

দুর্যোধন বলে ওঠে – এদের সবার দামী বস্ত্র আভরণ কেড়ে নাও। সখা কর্ণ তুমি বিচার করে এই পাঁচ দাসকে যোগ্য কর্মে নিযুক্ত কর।

একথা শুনে দুষ্ট বৈকর্তন(সূর্যপুত্র কর্ণ) বলে –দৈবের কারণে বহুজন ভৃত্যকর্ম করে। কর্ম বিনা সংসারে কারো স্থান নেই। রাজার যেমন রাজধর্ম কাজ, ভৃত্যদেরও ভৃত্যকর্ম অনেক আছে। সখা দুর্যোধন তুমি যখন আমায় এ দায়িত্ব দিলে, অবশ্যই পালন করব। পাঁচজনকে সঠিক কর্ম দেব।
ধর্মরাজের সুকোমল অঙ্গ, অন্যকাজে এর ক্ষমতা হবে না। একে তাম্বুল সেবার জন্য নিযুক্ত করছি। পান নিয়ে সব সময় সঙ্গে সঙ্গে ঘুরবে।
হৃষ্টপুষ্ট বৃকোদর ভীম- বলবান পুরুষ। তাই আমার মতে একে চতুর্দোলার দায়িত্ব দেওয়া হোক। এতো ক্ষীণ জন নয়, সহজেই অনেক ভার বহন করতে পারবে। স্বচ্ছন্দে তোমাকে ও তোমার ভাইদের কাঁধে নিয়ে ভীমসেন বিভিন্ন স্থানে যেতে পারবে।
অর্জুনের জন্য আমার অনুরোধ আছে। একে কেবল দামী বস্ত্র ও অলঙ্কার সুরক্ষার ভার দেওয়া হোক।
আর মাদ্রীর দুই সুন্দর কুমারকে তোমার নিজের সেবায় রাখ দুর্যোধন। তারা সব সময় তোমার সাথে সাথে থাকবে। চামর নিয়ে তোমায় ব্যজন করবে। এভাবে পাঁচ ভাইকে পাঁচটি কর্মে নিযুক্ত কর।
কৃষ্ণা দ্রৌপদীও আজ দাসী। তাকেও গৃহের কাজে নিযুক্ত করা হোক।

দুরাচার কর্ণের এত কথা শুনে গান্ধারীকুমার দুর্যোধন হেসে বলে –সখা উত্তম বিধান দিলে। তোমার কথা আমার মনে ধরেছে।
দুর্যোধন কৌরবদের ইঙ্গিতে পাণ্ডবদের সভাতলে বসাতে আজ্ঞা দেয়।
সঙ্গে সঙ্গে কৌরবরা কর্কশ বচলে ‘ওঠ, ওঠ’ করে তেড়ে আসে। তারা বলে – কোন লজ্জায় এখনও সিংহাসনে তোরা বসে থাকিস! নিজেদের যোগ্য স্থানে গিয়ে বস।
দুঃশাসন উঠে গিয়ে যুধিষ্ঠিরকে ধরে ‘চল, চল’ বলে পিঠে ধাক্কা মারে। ক্রোধে, অপমানে ধর্মপুত্র কাঁপতে থাকেন। চক্ষু রক্তবর্ণ, লোহ(চোখের জল) বহে ঝরঝর।
যুধিষ্ঠিরের এমন রূপ দেখে ভীমসেন ক্রোধে থরথর কাঁপতে কাঁপতে ভৈরব গর্জনে দাঁত কড়মড়িয়ে ওঠে। দেখে মনে হয় প্রলয়কাল আগত। যুগান্তে যম যেন সৃষ্টির সংহার করবেন। অরুণ আকার চক্ষে একদৃষ্টে চায়, নাকে ঝড় বহে প্রলয় সমান। মহাবীর ভীমসেন কর্ণের দিকে চায়। তা দেখে কৌরবরা শঙ্কিত হয়ে ওঠে। হাতে গদা তুলে ভীম মাথার উপর চক্রাকারে ঘোরাতে থাকে। তার চরণ ভারে ক্ষিতি বিদীর্ণ হয়। ক্রোধমুখে ভীম দুঃশাসনের দিকে ধায়। অনুমতির জন্য ভীম যুধিষ্ঠিরের পানে চায়। যুধিষ্ঠিরকে হেঁট মুখে দাড়িয়ে থাকতে দেখে অর্জুন গিয়ে ভীমকে ধরে, বোঝাতে চায়।

অর্জুন বলেন –ভাই অনৈতিক কাজ কিছু কর না। ধর্মরাজের অনুমতি বিনা কিছু করা সম্ভব নয়। আজ যদি দিক্‌পালদের নিয়ে দেবরাজ আসেন এবং পৃথিবীর শত শত বীর এসে ধর্মরাজকে অপমান করেন তবে মুহূর্তে আমরা তাদের যমের গৃহে পাঠাতে পারি। এরা তো সব তৃণ তুল্য। এখনই এদের দগ্ধাতে পারি। কিন্তু ধর্মরাজের আজ্ঞা বিনা আমাদের কোন শক্তি নেই। আজ ধর্মরাজ একাজের সমর্থন করছেন না, তাই আর এসব করতে যেও না।

অর্জুনের কথায় ভীম ক্রোধ সম্বরণ করলেন, গদা ছুড়ে ফেলে দিলেন।
পঞ্চপাণ্ডব তাদের শরীরের সকল আভরণ খুলে দিলেন। সভা ত্যাগ করে তারা ধূলাসনে অধোমুখে বসে থাকেন।

হেনকালে দুষ্ট কর্ণ বলে ওঠে –দ্রৌপদীকে আনতে এবার দূত পাঠান হোক।

শুনে দুর্যোধন বিদুরকে উপহাস্যে ডাকে।
তখন অবস্থা বুঝে অন্ধ ধৃতরাষ্ট্র সভা ছেড়ে আপন গৃহে চলে যায়।
......................................
উৎসর্গ: সকল ব্লগার বন্ধুকে
.....................................
আগের পর্ব:

কথাচ্ছলে মহাভারত - ১৪৯ Click This Link

মন্তব্য ৬ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৬) মন্তব্য লিখুন

১| ৩০ শে জুলাই, ২০১৭ বিকাল ৪:০৪

নাবিক সিনবাদ বলেছেন: অনেকদিন পর পোস্ট দিলেন, আপনার এই সিরিজটা আমার বেশ ভালো লাগে।

ধন্যবাদ।।

১৩ ই আগস্ট, ২০১৭ সকাল ১১:০১

দীপান্বিতা বলেছেন: ধন্যবাদ, নাবিক সিনবাদ!

২| ৩০ শে জুলাই, ২০১৭ বিকাল ৫:৩৫

রাতু০১ বলেছেন: ভাললাগা ও শুভকামনায়।

১৩ ই আগস্ট, ২০১৭ সকাল ১১:০০

দীপান্বিতা বলেছেন: ধন্যবাদ, রাতু০১!

৩| ২০ শে নভেম্বর, ২০১৭ বিকাল ৪:৫৭

রাতুল_শাহ বলেছেন: পরের পর্বের অপেক্ষায়

৪| ২৪ শে জুন, ২০১৯ সন্ধ্যা ৭:৪৫

হিমেল দত্ত বলেছেন: দিদি বাকি পর্ব গুলি???

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.