![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
পরিবর্তন যে কোন সমাজ ও রাষ্ট্রের একটি সহজাত প্রবণতা। সাম্প্রতিক বাংলাদেশে রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক ইত্যাদি সকল ক্ষেত্রে ভিন্ন মাত্রিক পরিবর্তনের ব্যাপক কর্মযজ্ঞ চলছে। চলমান পরিবর্তনকে যদি উন্নয়ন বলি, তাহলে বলা যায় উন্নয়নের গতি যেমন দ্রুত, তেমনি সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়াও ভিন্নতর।
চলমান পরিবর্তন বা উন্নয়ন বা সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়া নিয়ে কেউ কোন প্রশ্ন তুলে লাভ নেই এমন ভাবনা মেনে নিলেও জনস্বার্থে কিছু প্রাসঙ্গিক কথা বলা যায়। এমন কিছু প্রাসঙ্গিক আলোচনা আজকের লেখায় করতে চাই।
অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে বাংলাদেশ বেশ দ্রুত উন্নতি লাভ করছে, যা কিনা মধ্য আয়ের দেশে রূপান্তরের স্বপ্ন পূরণে এগিয়ে চলেছে। সে উন্নয়নের ঢামাডোলের আঞ্চলিক ক্ষেত্রে চট্টগ্রামেও লেগেছে উন্নয়নের জোয়ার। একদিকে ব্যাপক ও দৃশ্যমান অভিযোগ হচ্ছে চট্টগ্রামের প্রাণ কর্ণফুলী নদী ভরাট করা হচ্ছে কৌশলে, আর অন্যদিকে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সরাসরি নির্দেশনায় কর্ণফুলীতে হতে যাচ্ছে সেতু ও টানেল।
বিগত ক’বছর সিডিএ বেশ কিছু সড়ক সম্প্রসারণ ও সংস্কার করে প্রশংসা যেমন কুড়িয়েছে তেমনি সড়কের দু’পাশ ফেরিওয়ালা ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের দখলে চলে যাওয়াও প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে আছে। একদিকে ক্ষমতাসীনদের প্রশ্রয়ে পাহাড় কাটা, বন্দর ও রেলের সরকারী জায়গা বেদখলের মহোৎসব যেমন কারো দৃষ্টি এড়ায়নি, তেমনি হাজার হাজার কোটি টাকার ফ্লাইওভার নির্মাণ ও এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণের পরিকল্পনা এগিয়ে চলেছে সরাসরি প্রধানমন্ত্রীর তত্ত্বাবধানে। চট্টগ্রামে গণপরিবহন সংকট ও অব্যবস্থাপনা, সিডিএ-এর আইনকানুন এর তোয়াক্কা না করে বিভিন্ন রকম ভবন নির্মাণ, যত্রতত্র পার্কিং, আবাসিক এলাকায় কোচিং সেন্টার, স্কুল, হাসপাতাল, ক্ষুদ্র কারখানা ইত্যাদি নৈরাজ্যকর অবস্থা উন্নয়নের ঢামাডোলে গুরুত্ব পাচ্ছে না। চট্টগ্রামকে ঘিরে আরো বহু সংস্থার বহু বড় বড় উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণের কথা শুনা যাচ্ছে। কিন্তু ছোট্ট এ শহরে নাগরিক বিড়ম্বনার কথা কেউ মাথায় রাখছে বলে মনে হচ্ছে না।
রাজনৈতিক ক্ষেত্রেও বাংলাদেশের সাম্প্রতিক পরিবর্তন বেশ লক্ষণীয়। একদিকে শক্ত হাতে জঙ্গি দমন এবং যুদ্ধ অপরাধের বিচার কার্যকর করা প্রশংসিত হয়েছে। অন্যদিকে, নির্বাচন ব্যবস্থা, পুলিশের বাড়াবাড়ি, বিচার বিভাগের চলমান বিতর্ক, ক্ষমতাসীনদলের সকল ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রী নির্ভরতা এবং বিরোধী রাজনৈতিক দলের দেউলিয়াত্ব দেশের টেকসই রাজনৈতিক উন্নয়ন নিয়ে সন্দেহের অবতারণা করে। নির্বাচন ব্যবস্থার সাম্প্রতিক প্রবণতা নিয়ে সরকারের ভিতরেও অনেকে চিন্তিত বলে মনে হচ্ছে। এ প্রসংগে দৈনিক প্রথম আলো পত্রিকায় প্রকাশিত একটি প্রবন্ধের কিছু অংশ তুলে ধরতে চাই। “পৌরসভা নির্বাচনের পরপরই কিশোরগঞ্জের এক দলীয় সভায় সরকারের মন্ত্রী এবং শাসক দল আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম বাজিতপুরের নির্বাচন প্রসঙ্গে যে মন্তব্য করেছেন, তা খুবই তাৎপর্যপূর্ণ। সরাসরি কারচুপির কথাটা না বললেও নির্বাচন যে ত্রুটিপূর্ণ ছিল, সে ইঙ্গিত তাঁর কথায় স্পষ্ট ছিল।
তিনি বলেছেন, নির্বাচন বিষয়ে কিছু কিছু বিষয় আমি মেনে নিতে পারি না। …..যদি আমরা বাজিতপুরে পরাজিত হতাম, তাহলে কি আমাদের সরকারকে উচ্ছেদ করে দিত ?” (দৈনিক প্রথম আলো, ১০ ফেব্রুয়ারী ২০১৬, পৃ: ১০) ‘গণতন্ত্র নানা দিক থেকে আক্রান্ত’ শীর্ষক উক্ত প্রবন্ধে লেখক হায়দার আকবর খান রনো লিখেন, ‘প্রশ্নটা আমারও। এটা একটা মানসিকতার প্রকাশমাত্র। সবকিছু দখল করতে হবে, বৈধ অথবা অবৈধভাবে, যেভাবেই হোক না কেন। রাজনৈতিক পদ, নির্বাচিত পদ, ব্যবসা-বাণিজ্য টেন্ডার, জমি, সম্পদ এবং যাবতীয় সুযোগ-সুবিধা সবকিছুই।”
ক্ষমতাসীন দলের নীতি নির্ধারকদের এবং নেতা-কর্মীদের মনে রাখতে হবে গণতন্ত্রের মানসপুত্র হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী আওয়ামী লীগের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা। তাঁর যোগ্য উত্তরসূরী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান বাংলাদেশের স্থপতি ও জাতির জনক। মরহুম তাজউদ্দিন আহমদ, সৈয়দ নজরুল ইসলাম, ক্যাপ্টেন মনসুর আলী প্রমুখ এ দলের আদর্শস্থানীয় নেতৃত্ব। ঐতিহ্যবাহী এবং গণতান্ত্রিক এ রাজনৈতিক দল যদি গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থা রক্ষায়, জাতীয় স্বার্থ, দেশীয় সংস্কৃতি, জনস্বার্থ ইত্যাদি প্রতিষ্ঠায় ও রক্ষায় রোল মডেল হতে না পারে, তাহলে নতুন প্রজন্ম কাকে অনুসরণ করবে ? আজকের জনপ্রিয় শাসক গোষ্ঠীকে মনে রাখতে হবেÑরাষ্ট্র হচ্ছে কতিপয় আইনসঙ্গত বৈধ প্রতিষ্ঠান ও আইন-কানুন এর সমষ্টি। সরকারের কাজ ও ক্ষমতা প্রয়োগই হচ্ছে শাসন প্রক্রিয়া, শাসন প্রক্রিয়া সব সময় দমনমূলক হওয়ার চেয়ে আইনমূলক ও নেগোসিয়েশন এবং যুক্তিভিত্তিক হওয়া উত্তম।
আমাদের প্রিয় স্বদেশ, তার প্রতিটি নাগরিকের মর্যাদাপূর্ণ বেঁচে থাকার অধিকার নিশ্চিত করে স্থিতিশীল উন্নয়নের পথে এগিয়ে যাক এটাই সবার প্রত্যাশা। আমাদের নীতি নির্ধারকরা উন্নয়ন কর্মসূচীতে স্বাস্থ্যসেবা ও শিক্ষা ব্যবস্থায় সুশাসন নিশ্চিত করার এজেন্ডা গ্রহণ করুন। প্রয
©somewhere in net ltd.