![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
অসহযোগ আন্দোলন মহাত্মা গান্ধী ও বঙ্গবন্ধু ১
দীপ্ত দেব অপু
অংশঃ১.......
ঘটনাক্রমে যে বছর মহাত্মা গান্ধী অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দিয়েছিলেন, ১৯২০ সালের সে বছরই বাংলাদেশের স্বাধীনতার স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান জন্মগ্রহণ করেছিলেন। অসহযোগ আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়ে মহাত্মা গান্ধী পুরো ভারতকে ঐক্যবদ্ধ করেছিলেন। এ আন্দোলনে সংযুক্ত হয়েছিল খেলাফত আন্দোলনও। মওলানা মোহাম্মদ আলী-শওকত আলী ভ্রাতৃদ্বয় মহাত্মাজির নেতৃত্বে ভারতীয় মুসলমানদের ঐক্যবদ্ধ করেছিলেন। ভারত উপমহাদেশের রাজনীতিতে এ বছর হিন্দু-মুসলমান মিলনের শুভ সূচনা ঘটেছিল।
মনীষী রোঁমা রোঁলা মহাত্মা গান্ধী নামে যে বইটি লিখেছেন, সেখানে সুন্দরভাবে দেখানো হয়েছে, কেন মহাত্মাজি ইংরেজ সরকারের বিরুদ্ধে অসহযোগ ও অহিংস আন্দোলনে নেমেছিলেন। ১৯২০ সালের ২৮ জুলাই মহাত্মাজি ঘোষণা দিয়েছিলেন, ১ আগস্ট থেকে ভারতে অসহযোগ আন্দোলন শুরু হবে। তার আগের দিন ৩১ জুলাই ভারতবাসীকে উপবাস ও হরতাল পালনের আহ্বান জানালেন। তিনি ভালো কাজে ইংরেজকে সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছিলেন। তাহলে তিনি ওই সময় ইংরেজের বিরুদ্ধে এতটা ক্ষুব্ধ হয়ে কেন যে ঘোষণা করলেন, ‘নিজের অমর্যাদার প্রতি অসহায় দর্শক হওয়ার চেয়ে আমি চাইব ভারত বরং তার মর্যাদা রক্ষার জন্য অস্ত্র ব্যবহার করুক।’ (আমার জীবন আমার বাণী, পৃ. ৯৮)। অনুবাদ রেজা পারভেজ।
ইংরেজদের কুশাসন ধীরে ধীরে ভারতবাসীকে ক্ষুব্ধ করে তুলছিল। তাদের দমননীতি কঠোর থেকে কঠোরতর হচ্ছিল। ১৯১৪ সালের প্রথম বিশ্বযুদ্ধে ইংরেজ সরকার জার্মানির বিরুদ্ধে ভারতবাসীকে ব্যবহার করেছিল। ভারতের সেনা, অর্থ, অস্ত্র সবই প্রয়োগ করেছিল। ভারতবাসীকে ইংরেজ কামানের খোরাক বানিয়েছিল। ইউরোপ ও মধ্যপ্রাচ্যের রণাঙ্গনে পথে পথে ভারতীয় সেনা তাদের মূল্যবান জীবন দিয়েছে। ভারতীয় নেতারা প্রথম বিশ্বযুদ্ধে ইংরেজকে সমর্থন দিয়েছিলেন। লোকমানী তিলক একটানা ছয় বছর জেল খেটেও ইংরেজকে সমর্থন দিয়েছিলেন। কিন্তু এর প্রতিদান হিসেবে ভারতবাসী পেয়েছিল তার উল্টো ফল।
যুদ্ধের কুফল ভারতবাসী অচিরে পেতে শুরু করেছিল। অর্থনীতিতে যে ধস নেমেছিল তার ভোগান্তি শুরু হলো ভারতের ওপর। ভারতের অভ্যন্তরে অশান্তির ছায়া পড়ল। জিনিসপত্রের দাম বেড়ে গেল। শুরু হলো হোমরুল আন্দোলন। নেতৃত্ব দিলেন তিলক ও শ্রীমতী এনিবেশান্ত। প্রতিষ্ঠা ঘটল হোমরুল লীগ। এ সময় আয়ারল্যান্ডের স্বাধীনতা যুদ্ধ তিলককে ইংরেজবিরোধী পদক্ষেপ নিতে অনুপ্রাণিত করেছিল। ভারতের অনেক বিখ্যাত নেতা হোমরুল লীগে যোগদান করলেন। এর মধ্যে ছিলেন সিপি রাম স্বামী আয়েঙ্গার ও মুহম্মদ আলী জিন্নাহ। এতে ইংরেজের মাথার তালু গরম হতে লাগল। চালাকি করে ইংরেজ মন্টেগু চেমসফোর্ড সংস্কারের মাধ্যমে ভারতকে ডোমিনিয়ন স্ট্যাটাসের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল।
১৯১৮ সালে প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শেষ হয়। জয় হয় ইংল্যান্ডের। এরপরই ইংরেজ প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করে কুখ্যাতরাও লাট আইন প্রবর্তন করেন। ১৯১৮ সালের এপ্রিলে রাওলাট কমিটির সুপারিশমালা প্রকাশিত হলো। রাওলাট অ্যাক্টের প্রধান লক্ষ্য ছিল ভারতের জাতীয়তাবাদী আন্দোলন দমন করা। এতেও কংগ্রেস ক্ষুব্ধ হলো। দেখা গেল মন্টেগু চেমসফোর্ডের রিপোর্টে ভারতীয়দের আশা-আকাক্সক্ষাকে ন্যূনতম মূল্য দেওয়া হয়নি। ভারতীয়দের হাতে সামান্যতম ক্ষমতা প্রদানের পথ রুদ্ধ করা হলো। কংগ্রেসের নেতারা ১৯১৮ সালে বোম্বাইয়ের অধিবেশনে চেমসফোর্ড রিপোর্ট প্রত্যাখ্যান করলেন।
১৯১৯ সালের শুরুতেই ভারতের আকাশে অশনিসংকেত দেখা দিতে থাকে। ভারতীয়দের মতামত উপেক্ষা করে রাওলাট কমিটির সুপারিশ পাস করে পুলিশের হাতে বেপরোয়া ক্ষমতা দেওয়া হলো। ভারতীয় নেতাদের দমনই ছিল এর লক্ষ্য। বিখ্যাত বাগ্মী ও নেতা সুরেন্দ্রনাথ ব্যানার্জি রাওলাট আইনকে অসহযোগ আন্দোলনের জনক বলেছেন। এই কুখ্যাত আইনের বিরুদ্ধে ভারতীয়রা হয়ে উঠেছিল জ্বলন্ত আগুনের মতো উত্তপ্ত। গান্ধী এবং জিন্নাহ দুজনই এ আইনের বিরুদ্ধে প্রবল প্রতিবাদ করেছিলেন। গান্ধীজি সর্বপ্রথম এ সময় জাতীয় নেতৃত্বের সামনের কাতারে চাল আসেন। রাওলাট আইন প্রতিহত করার লক্ষ্যে তিনি সত্যাগ্রহ কমিটি গঠন করেন। তিনি নির্দেশ দিলেন ইংরেজের দমনমূলক আইন অহিংসপন্থায় অমান্য করতে। আইন অমান্য আন্দোলনের দিন হিসেবে গান্ধীজি ঠিক করলেন ১৯১৯ সালের ৬ এপ্রিল। ওইদিন সারা ভারতে হরতাল পালিত হয়েছিল।
গান্ধীজির নেতৃত্বে এ আন্দোলন যেমন ভারতবাসীকে ঐক্যবদ্ধ করল, তেমনি উত্তেজিতও করল। ৬ এপ্রিল হরতালের আগুন ভারতের শহর থেকে গ্রাম পর্যন্ত পৌঁছে গিয়েছিল। এই ফাঁকে বলে নেওয়া দরকার যে, ভারতের মুসলমানরাও প্রথম বিশ্বযুদ্ধে ইংরেজকে সহযোগিতা করেছিল। তারপরও প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করে ইংরেজ তুরস্কের খেলাফতের ওপর হস্তক্ষেপ করে। এতে সারা ভারতের মুসলমানরা ইংরেজের ওপর ক্ষুব্ধ হয়। এসব প্রেক্ষাপটে ভারতে জোরালোভাবে হিন্দু-মুসলমান ঐক্যবদ্ধ হলো। সীমান্ত গান্ধী খান আবদুল গাফফার খানের নেতৃত্বে এ সময় মাদ্রাজে প্রায় ৫ হাজার মুসলমানের একটি জমায়েত হলো। এ জমায়েতে মহাত্মা গান্ধী আমন্ত্রিত হয়ে বক্তৃতা দিয়েছিলেন। তুরস্কের খেলাফত অসম্মান করার ফলে ভারতের মুসলমানরা যারপরনাই মনে আঘাত পেয়েছিল। মহাত্মাজি মুসলমানদের পক্ষ নিলেন। তিনি বললেন, এর প্রতিশোধ নিতে হলে ভারতে ইংরেজকে বয়কট করতে হবে। এভাবে মওলানা মোহাম্মদ আলী ও শওকত আলী ভ্রাতৃদ্বয় মহাত্মাজির সঙ্গে জোট বাঁধলেন জেল থেকে মুক্ত হয়ে।
পাঞ্জাবের অমৃতসরের জনগণের ওপর কী ধরনের অত্যাচার করা হয়েছিল তার বর্ণনা দিয়েছেন রোঁমা র‘পাকিস্তানের জাতীয় অধিবেশন অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হলো।’ সঙ্গে সঙ্গে জনগণ রাজপথে নেমে এলো। ঢাকা স্টেডিয়ামের ক্রিকেট খেলা বন্ধ হয়ে গেল। সেøাগান দিতে দিতে তারা রাস্তায় নেমে এলো। বঙ্গবন্ধু তখন হোটেল পূর্বাণীতে ছিলেন। তার সহকর্মীদের নিয়ে ছয় দফার ভিত্তিতে পাকিস্তানের খসড়া সংবিধান প্রণয়নে ব্যস্ত ছিলেন। ক্ষুব্ধ জনগণ ছুটে গেল তার সামনে। তিনি প্রতিবাদী জনগণের সামনে অগ্নিগর্ভ এক ভাষণ দিলেন। বললেন কাল থেকে আপনারা শান্তিপূর্ণভাবে হরতাল পালন করবেন। ৭ তারিখে আমি আমার কর্মসূচি ঘোষণা করব।
★অসম্পূন অংশ শীঘ্রই প্রকাশিত হবে★
দীপ্ত দেব অপু
©somewhere in net ltd.