নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

যে জলে আগুন জ্বলে

বালক ভুল করে পড়েছে ভুল বই , পড়েনি ব্যাকরণ পড়েনি মূল বই

দস্যু রত্নাকর

ছাত্র জীবনের একসময় সক্রেটিস , প্লেটো , রুশো , মার্ক্স এর দর্শনের প্রেমে পড়েছিলাম । এখন প্রতিদিন সক্রেটিস , প্লেটো , রুশো , মার্ক্স এর দর্শন পড়িয়ে সেই আনন্দটা ধরে রেখেছি ।

দস্যু রত্নাকর › বিস্তারিত পোস্টঃ

আরজ আলী মাতুব্বর , বাংলার সক্রেটিস

৩০ শে অক্টোবর, ২০১১ রাত ৮:১৬



আরজ আলী মাতুব্বর(১৯০১ - ১৯৮৬) (১৩০৭-১৩৯২ বাংলা) স্ব-শিক্ষিত দার্শনিক, চিন্তাবিদ এবং লেখক। জগত ও জীবন সম্পর্কে নানামুখী জিজ্ঞাসা তাঁর লেখায় উঠে এসেছে যা থেকে তাঁর প্রজ্ঞা, মুক্তচিন্তা ও মুক্তবুদ্ধির পরিচয় পাওয়া যায়।

বরিশাল শহর থেকে ৭/৮ কিলোমিটার দূরে লামচরি নামক গ্রামে বাংলা ১৩০৭ সনের ৩রা পৌষ এক দরিদ্র কৃষক পরিবারে আরজ আলী মাতুব্বর জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম এন্তাজ আলী মাতুব্বর। আরজ আলী মাত্র চার বছর বয়সে তাঁর বাবাকে হারান। এর পরে তাঁদের পরিবারটি দেনার দায়ে বসতবাটি ও জমি হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে যায়। আরজ আলী নিজ গ্রামের মুন্সি আবদুল করিমের মক্তবে সীতানাথ বসাকের কাছে 'আদর্শলিপি' পড়তেন। দরিদ্রতার কারণে তাঁকে মক্তব ছাড়তে হয়। এরপর তিনি কৃষিকাজে নিয়োজিত হন। সাথে সাথে তিনি নিজের ঐকান্তিক চেষ্টায় লেখাপড়া শিখতে থাকেন। কৃষিকাজের ফাঁকে ফাঁকে তিনি জমি জরিপ বা আমিনের কাজ শিখে নেন। এরপর জমি জরিপের কাজকেই পেশা হিসেবে গ্রহণ করেন। এক সময় মানুষ ও জীবন সম্পর্কে তাঁর মনে প্রশ্ন জাগলে তিনি এই বিষয়ে পড়াশোনা শুরু করেন। নিজের অভিজ্ঞতা থেকে নিজস্ব ধরণের চিন্তা-ভাবনা শুরু করেন।

ঠিক গ্যালিলিওর মতো আরজ আলী মাতুব্বর পেশিশক্তির শ্যেনদৃষ্টি এড়িয়ে তার চিন্তা-ভাবনার ফসল লেখাগুলো গ্রন্থিত করে বই আকারে প্রকাশ করতে সক্ষম হয়েছিলেন, যা বরিশালের বাইরে তার পরিচিতি এবং খ্যাতি এনে দেয়। কুসংস্কার এবং গোঁড়ামির বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে তিনি যেভাবে মুক্তচিন্তার চর্চা করেছেন এবং স্বাধীনভাবে দর্শন, বিজ্ঞান ও ধর্ম বিষয়ে মতামত রেখেছেন তার সঙ্গে তুলনা চলে মুক্তবুদ্ধির চর্চায় উচ্চশিক্ষিত জ্ঞানী-গুণীদের সাধনার। লেখাপড়ায় এবং সামাজিক অবস্থানে তাদের সঙ্গে আরজ আলী মাতুব্বরের ছিল যোজন যোজন দূরত্ব।

আরজ আলী বলেছেন, ‘বিদ্যাশিক্ষার ডিগ্রী আছে, কিন্তু জ্ঞানের কোনো ডিগ্রী নেই। জ্ঞান ডিগ্রীবিহীন ও সীমাহীন। সেই অসীম জ্ঞানার্জনের মাধ্যম স্কুল-কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয় নয়, তা হচ্ছে লাইব্রেরী।’ লাইব্রেরি ছিল তাঁর জীবনের প্রধান আনন্দক্ষেত্র। অন্যের নামে বরিশাল পাবলিক লাইব্রেরি থেকে বই এনে পড়েছেন। একপর্যায়ে এসে স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি ওয়ারিশদের বুঝিয়ে দিয়ে কাজ করেছেন লাইব্রেরি প্রতিষ্ঠার জন্য। এমনকি নির্মাণের খরচ কমানোর জন্য লাইব্রেরি নির্মাণে শারীরিক অংশগ্রহণ করেছেন। এই লাইব্রেরি যাতে তাঁর মৃত্যুর পরও টিকে থাকে, সে জন্য তাঁর উদ্বেগ ছিল এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাও তিনি গ্রহণ করেছেন। লিখিতভাবে তহবিল, লাইব্রেরি ও যাবতীয় অনুষ্ঠানাদির পরিকল্পনা জানিয়ে গেছেন। মৃত্যুর পর নিজের অবশিষ্টাংশ যাতে মানুষের কাজে লাগে, সে ব্যবস্থাও করেছেন। মৃতদেহ বরিশাল মেডিকেল কলেজে দান করেন; চোখ দুটি চক্ষু ব্যাংকে।

আরজ আলী মাতুব্বরকে আজীবন বিশেষভাবে ভাবিত করেছে মানুষের দৈনন্দিন দুর্ভোগ এবং সে সম্পর্কে মানুষের নিজস্ব ব্যাখ্যা, সমাজে অধিপতি-চিন্তায় সেসব দুর্ভোগ আর অপমান যুক্তিযুক্ত করবার চেষ্টা। এসব বিষয় অনুসন্ধান করতে গিয়েই তিনি ক্রমেই আরও গভীর দার্শনিক-বৈজ্ঞানিক প্রশ্নের মুখোমুখি হয়েছেন। নারীর অবস্থান, নারীর অধিকার, বিবাহ, বিবাহবিচ্ছেদ, সন্তানের ‘বৈধতা’, সন্তানের ওপর অধিকার সম্পর্কে সব ধর্মেই কড়া বিধিবিধান আছে। এসব বিশ্বাস ও প্রথা, অন্য আরও অনেক আইনের মতো কত নারীর জীবনকে বিষময় ও বিপর্যস্ত করেছে, কত নারীকে ভয়াবহ অপমানের মধ্যে ছুড়ে ফেলেছে—তার পরিসংখ্যান বের করা অসম্ভব। আরজ আলী এসব বিশ্বাস বিধিবিধানের নানা অসংগতি নিয়েও অনেক প্রশ্ন উত্থাপন করেছেন। সে জন্য এই নিপীড়িত নারী-পুরুষেরাই ছিল তাঁর প্রধান আশ্রয়।

কিন্তু শহুরে মধ্যবিত্ত কিংবা গ্রামীণ ক্ষমতাবান কারও কাছেই আরজ আলী মাতুব্বর গ্রহণযোগ্যতা পাননি। কারণ, এ দেশে মধ্যবিত্ত কিংবা বিদ্বৎসমাজ যেভাবে গড়ে উঠেছে, সেখানে ভক্তি দিয়ে জগৎসংসার দেখাতেই তাঁর স্বস্তি, তাতেই তাঁর আসক্তি। এই ভক্তি যেমন সৃষ্টিকর্তা কিংবা ধর্মের প্রচলিত বয়ানের প্রতি, তেমনি এই ভক্তি প্রচলিত বিশ্বব্যাংকীয় উন্নয়ন দর্শনের প্রতিও। দুটোই তাঁর আশ্রয়। এই আশ্রয়ের খোলসে নিরাপদ জীবনযাপনের জন্য তাঁর কাতরতা সমাজ স্থবিরতার প্রধান কারণ। প্রশ্ন তাই তাঁর জন্য বিপদের কারণ, অস্বস্তির কারণ। আরজ আলী মাতুব্বর তাই তাঁদের কাছে ভীতিকর। আরজ আলী মাতুব্বরের প্রশ্নের যে শক্তি, তা নিজে নিজে তৈরি হয়নি, হয়েছিল ‘পা ভাঁজ করে শোয়ার অবস্থা’ নিয়েও মহাবিশ্ব, মানুষ ও জগতকে মুক্তভাবে দেখার সক্ষমতা থেকে, সামাজিক কর্তৃত্ব এবং মতাদর্শিক আধিপত্যকে অস্বীকার করবার অব্যাহত লড়াই থেকে।

প্রকাশিত গ্রন্থ



ম্যাকগ্লেসান চুলা (১৯৫০)

সত্যের সন্ধান (১৯৭৩)

সৃষ্টি-রহস্য (১৯৭৮)

স্মরণিকা (১৯৮২)

অনুমান (১৯৮৩)

মুক্তমন (১৯৮৮)

সম্মাননা



বাংলা একাডেমী কর্তৃক আজীবন সদস্য পদ প্রদান এবং বাংলা ১৩৯২ সালের ১লা বৈশাখ নববর্ষ সংবর্ধনা জ্ঞাপন।

হুমায়ুন কবির স্মৃতি পুরস্কার (১৩৮৫ ব.)

উদীচী শিল্পী গোষ্ঠী কর্তৃক বরণীয় মনীষী হিসেবে সম্মাননা (১৩৯২ ব.)

তথ্যসূত্র :

আরজ আলী মাতুব্বর ,আনু মুহাম্মদ

আরজ আলী মাতুব্বর - উইকিপিডিয়া

কেন আরজ আলী প্রাসঙ্গিক? :: হাসনাত আব্দুল হাই

মন্তব্য ১১ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (১১) মন্তব্য লিখুন

১| ৩০ শে অক্টোবর, ২০১১ রাত ৮:২৬

""ফয়সল অভি "" বলেছেন: সত্যের সন্ধান : আরজ আলী মাতুব্বর

৩০ শে অক্টোবর, ২০১১ রাত ৮:৩৭

দস্যু রত্নাকর বলেছেন: ধন্যবাদ

২| ৩০ শে অক্টোবর, ২০১১ রাত ৮:৩৫

মানবিক ৩০ বলেছেন: বেটা একটা বিরাট বাটপার ছিল ........

৩০ শে অক্টোবর, ২০১১ রাত ৮:৩৮

দস্যু রত্নাকর বলেছেন: কিভাবে একটু বুঝায়ে বলবেন

৩| ৩০ শে অক্টোবর, ২০১১ রাত ৮:৩৯

মরমি বলেছেন: আরজ আলী মাতুব্বর আমাদের প্রশ্ন করতে শিখিয়েছেন।

৪| ৩১ শে অক্টোবর, ২০১১ ভোর ৬:১৬

আনন্দক্ষন বলেছেন: ধন্যবাদ লেখক এবং ""ফয়সল অভি "" কে- জানার ইচ্ছা ছিল , পড়ার ইচ্ছা ছিল তার কোন বই।

৩১ শে অক্টোবর, ২০১১ সকাল ১১:৩৪

দস্যু রত্নাকর বলেছেন: আপনাকেও ধন্যবাদ

৫| ০৭ ই নভেম্বর, ২০১১ রাত ১:২৩

নিরন্তর যাত্রী বলেছেন: মানবিক ৩০ র মনে আসছে বলেছে,উনি বুঝাইতে পারবেননা । হয়ত তিনি কারও মুরীদ..........

০৯ ই নভেম্বর, ২০১১ সকাল ১১:০৯

দস্যু রত্নাকর বলেছেন: ঘটনা এইটাও হতে পারে

৬| ০৭ ই নভেম্বর, ২০১১ রাত ১:২৭

রাহীম বলেছেন: জীবনে অনেক বাটপার দেখেছি তার মতো দেখিনি ।

০৯ ই নভেম্বর, ২০১১ সকাল ১১:১০

দস্যু রত্নাকর বলেছেন: রতনে রতন চেনে , বাটপার চেনে বাটপাররে :) :) :) ;)

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.