নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

I am nobody

নিজের সম্পর্কে নিজে বিশ্লেষণ করা অনেক কঠিন কাজ।

ড্রাকুলার রক্ত

নিজেরে খুব ভালো মানুষ বলে দাবি করি না,তবে ভালো কিছু করার চিন্তা সবসময় মাথার মধ্যে ঘুরপাক খায়। আমার অভাগী এই দেশটা,এই দেশের খেটে খাওয়া অথচ না খেয়ে থাকা মানুষগুলো,জীবন বাস্তবতার চরম শিকার ঐ রাস্তার টুকাই,রাস্তার জ্যামে \"ভাইয়া,ভাবির জন্য এই কয়ডা ফুল নিয়া যান\" বলা পাগলগুলোর জন্য কিছু করতে মন চায়।

ড্রাকুলার রক্ত › বিস্তারিত পোস্টঃ

তোমাকে ভেবে.......................

২৯ শে ডিসেম্বর, ২০১৩ রাত ১১:৪৪

বাড়ি ভর্তি মানুষের মাঝে নিতু প্রথম বারের মত আজ খুব অসহায় বোধ করছে। এরকমটি হবার কোন কারণ ছিলনা। সারাটা জীবন নিতু নিজেই পুরো বাসার সব কাজ একা হাতে করেছে। বিনা নোটিশে বাসা ভর্তি মানুষ চলে আসলেও ও কিভাবে যেন সব কিছু ম্যানেজ করে নিত। নিতুর আজকের এই অসহায়ত্তের কারণটা নিতু ঠিক করতে পারছে না, কারণটা কী- আজ ওর বিয়ে? নাকি হাসান?



আজ সারাদিন’ই ওর হাসানের কথা মনে পড়ছে। হাসান এর সঙ্গে অনেকদিন হল ওর যোগাযোগ নেই। যোগাযোগ থাকার ও কথা না, কারণ সুযোগ নেই। শেষবার যখন হাসানের সঙ্গে দেখা হয়েছিল সেইদিন হাসান একটা কালো রঙের শার্ট পড়ে বাসায় এসেছিলো। কলিংবেল এর শব্দ শুনে যখন নিতু দরজা খুলল, ও অবাক হয়ে গিয়েছিল হাসানের শুকনা মুখটা দেখে।

- এ কী হাল করেছিস শরীরের?

- ডায়েট করছি।

- চোখ দুইটা তো পাণ্ডার মত বানিয়েছিস...। ঘুমাস না কয়দিন?

- ঘুমাই তো, প্রচুর ঘুমাই। বাস এ উঠলেই ঘুমিয়ে পড়ি।

- আমি রাত এ ঘুমানোর কথা বলছি। রাত এ কি করিস??? চুরি?

- আর এ না!! চুরি করবো কেন? কবিতা লেখি, গল্প লিখি......

- গল্প, কবিতা লিখলে চলবে? চাকরী করতে পারিস না একটা?

- করি তো। এক মাস হল। গতকাল বেতন পেলাম...

- বলিস কী??? কোথায় জব পেলি?

- ডাচ বাংলা ব্যাংক এ।

- বাহ! ভালই তো। জানাইলি ও না...

- জানানো হয় নাই আর কী......

- তোকে অনেকবার ফোন দিয়েছি, সবগুলো নাম্বারই বন্ধ...

- সিম চেঞ্জ করেছি...

- যাতে আমি তোকে খুজে না পাই সেই জন্য?

- তা না...

- ঠিক আছে, আর মিথ্যা বলতে হবে না। তা কী মনে করে আজকে বাসায় আসলি?

- তুই তো আমার কাছে ৫০০০ টাকা পাবি। সেইটা দিতে আসলাম...

- আমি কোনো টাকা পাবনা।

- প্লিজ নে। তুই’ই তো বলছিলি, চাকরী পেয়ে টাকা ফেরত দিতে, না পেলে ফেরত দিতে হবে না। এখন তো চাকরী পেয়েই গেলাম......

- তারমানে, এই ৭ মাস ১১ দিন পরে তুই শুধুমাত্র এই টাকা টা ফেরত দিতে আসছিস?

- না। এই শাড়ি টা রাখ। প্রথম মাসের বেতন দিয়ে কিনেছি। মনে হয় ভালো হয় নাই। ভালো না হলে রাগ করিস না প্লিজ। এখন যাই।

- এখন যাই মানে? ভাত খেয়ে যা। তোর প্রিয় বেগুন ভাজি করে দিচ্ছি।

- না, সময় নেই। আজকে যাই। ভালো থাকিস।



কথা শেষ করে ঠিক যেমন হঠাৎ করে এসেছিল, তেমনি হঠাৎ করেই চলে গিয়েছিল হাসান। দরজাটা ধরে অনেক্ষন দাঁড়িয়ে ছিল নিতু, অনেকদিন পর কেন যেন খুব কান্না পাচ্ছিলো ওর সেইদিন। এসব কথাগুলো ভাবতে ভাবতে আজও কেঁদে ফেলল নিতু, মনের অজান্তেই।



হাসান আর নিতু একসঙ্গেই Anthropology তে পড়াশুনা করেছে। ফার্স্ট সেমিস্টার এ একটা অ্যাসাইনমেন্ট এ একসঙ্গে কাজ করার পর থেকেই মুলতঃ হাসান নিতুকে ভালবাসতে শুরু করে, নিতুকে ভালবাসার কথাটা জানায় মাস্টার্স এর শেষে এসে!! হাসান সবসময়ই ছিল ওর খুব ভালো বন্ধু, প্রেমিক হিসেবে কখনো ওকে ভাবেনি নিতু। নিতু তাই ওর ফ্যামিলি’র কথা জানায়, নিজের অপারগতার কথা জানায়। হাসান ছেলেটা বুদ্ধিমান, হয়তো অনেক অভিমানীও ছিল। নিতুর অপারগতাকে মেনে নিয়ে ও চুপচাপ হারিয়ে যায়। নিতু কষ্ট পাবে ভেবে বার বার অনুরোধ করেনি আর। ও সবরকম যোগাযোগ বন্ধ করে দেয় নিতুর সঙ্গে, একেবারে নিশ্চুপ একটা জীবন বেছে নেয়। এক সময়ের বেস্ট ফ্রেন্ড ওর জীবন থেকে দূরে সরে যায়। নিতু কয়েকদিন কাঁদে, মন খারাপ করে, তারপর আবার কিছু হয়নি এরকম ভাব করে স্বাভাবিক হয়ে যায় ও। অনেক অভিনয় করতে হয় মেয়েদেরকে তাদের ছোট্ট জীবনে। তবুও, মাঝরাতে ঘুম ভেঙে গেলে মাঝে মাঝেই নিতু কাঁদে, খুব করে কাঁদে।



বিয়ে বাড়ীতে অনেক মানুষ। সবার সামনে আজ কাঁদতে চায়না নিতু। চোখ মুছে ও ছাদে চলে যায়, পড়নে এখন হাসানের দেয়া শাড়িটা। ছাদের এক কোনায় কতগুলো বাচ্চা খেলছে। কি স্বাধীন ওদের জীবন, কোনো কষ্ট নেই, কোনো বাধ্যবাধকতা নেই, নেই কোনো সিদ্ধান্তের দোলাচাল, শুধুই আনন্দ আর আনন্দ। হাসান মাঝে মাঝেই বাচ্চাদের মত কাজ করতো, খুব মজা করতে পারত ও। সারাক্ষন আসেপাশের সবাইকে মাতিয়ে রাখতো। শুধুমাত্র নিতুর জন্যই ও হয়তো সবার কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছিল।



দূরে সরে গিয়ে হাসান নিতুকে ভালবাসার সুযোগ করে দিয়েছে। নিতু এখন হাসানকে অনেক ভালোবাসে, হয়তো হাসানের চেয়েও বেশী ভালোবাসে। এখন সবই আছে, শুধু ভালবাসার মানুষটা আর নেই। আর কখনো সে ফিরেও আসবেনা। একরাশ ভালোবাসা নিয়ে নিতু মাঝে মাঝেই ছাদে এসে বসে থাকে। কখনো পূর্ণিমায়, কখনো অমাবস্যার রাতে, কখনো ভর দুপুরে, কখনো বা শেষ বিকেলে ছাদের রেলিং এ বসে হাসানকে ভেবে দূর আকাশের দিকে অপলক তাকিয়ে থাকে। অভিমানী ছেলেটা আর কখনো ফিরে আসবেনা, আর কখনো ওর কাছে গান শুনতে চাইবেনা, আর কখনো রাস্তার মাঝে হঠাৎ করে গলা ছেড়ে গান গাইবেনা, আর কখনো পাগলামি করবেনা, আর কখনো ওর জন্মদিনে ওকে অবাক করে দিয়ে কেক নিয়ে বাসায় এসে হাজির হবেনা। অঝোর ধারায় কাঁদে নিতু। কেন অভিমানী ছেলেটা সবকিছু ছেড়ে না ফেরার দেশে চলে গেল?



কাধে একটা হাতের ছোঁয়া টের পায় নিতু। মা এসেছে। চোখ মুছে নিজেকে সামলে নেওয়ার চেষ্টা করে ও। পার্লার এ যেতে হবে, গাড়ি নীচে দাঁড়িয়ে আছে। হাসানের জন্য নয়, অন্য একজনের জন্য সাজবে ও।

মন্তব্য ৮ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৮) মন্তব্য লিখুন

১| ২৯ শে ডিসেম্বর, ২০১৩ রাত ১১:৫৬

সুমন কর বলেছেন: ভাল লাগল। শেষে সুন্দর!

২| ৩০ শে ডিসেম্বর, ২০১৩ রাত ১২:০৩

ড্রাকুলার রক্ত বলেছেন: ধন্যবাদ

৩| ৩০ শে ডিসেম্বর, ২০১৩ রাত ১২:৫৫

ঘাষফুল বলেছেন: এখন সবই আছে, শুধু ভালবাসার মানুষটা আর নেই। আর কখনো সে ফিরেও আসবেনা। একরাশ ভালোবাসা নিয়ে নিতু মাঝে মাঝেই ছাদে এসে বসে থাকে। কখনো পূর্ণিমায়, কখনো অমাবস্যার রাতে, কখনো ভর দুপুরে, কখনো বা শেষ বিকেলে ছাদের রেলিং এ বসে ... ভেবে দূর আকাশের দিকে অপলক তাকিয়ে থাকে।

....সময় আর সিদ্ধান্ত... :(

৪| ৩০ শে ডিসেম্বর, ২০১৩ রাত ১:১৬

তোমার গল্পের মৃত রাজকন্যা বলেছেন:


অভিমানী মানুষগুলো আর ফিরে আসে না কেন জানেন ??


:(
আমি ও জানি না কেন ...
হয়তো , তাদের যেনো মনে রাখা হয় তাই !

৫| ৩০ শে ডিসেম্বর, ২০১৩ সকাল ৯:৩২

কালীদাস বলেছেন: মন খারাপ কইরা দিলেন!
লেখাটা ভাল হইছে /:)

৬| ৩০ শে ডিসেম্বর, ২০১৩ সকাল ১০:২২

ডরোথী সুমী বলেছেন: মন খারাপ করা গল্প, কিন্তু ভাল লেগেছে।

৭| ৩১ শে ডিসেম্বর, ২০১৩ দুপুর ২:৩৮

ড্রাকুলার রক্ত বলেছেন: হুম @ঘাসফুল
হুম @রাজকন্যা

৮| ৩১ শে ডিসেম্বর, ২০১৩ দুপুর ২:৩৯

ড্রাকুলার রক্ত বলেছেন: ধন্যবাদ সবাইকে আমার ব্লগে আপনাদের স্বাগতম

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.