নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

I am nobody

নিজের সম্পর্কে নিজে বিশ্লেষণ করা অনেক কঠিন কাজ।

ড্রাকুলার রক্ত

নিজেরে খুব ভালো মানুষ বলে দাবি করি না,তবে ভালো কিছু করার চিন্তা সবসময় মাথার মধ্যে ঘুরপাক খায়। আমার অভাগী এই দেশটা,এই দেশের খেটে খাওয়া অথচ না খেয়ে থাকা মানুষগুলো,জীবন বাস্তবতার চরম শিকার ঐ রাস্তার টুকাই,রাস্তার জ্যামে \"ভাইয়া,ভাবির জন্য এই কয়ডা ফুল নিয়া যান\" বলা পাগলগুলোর জন্য কিছু করতে মন চায়।

ড্রাকুলার রক্ত › বিস্তারিত পোস্টঃ

জানি তুমি আসবেই

২২ শে মার্চ, ২০১৫ রাত ১০:৩৫

কলিংবেলের আওয়াজ শুনেই দরজা খুলতে দৌড়ে চলে যায় আদ্রিনা।অনেকদিনের অভ্যাস,নিশাদ বাইরে থেকে ফিরলে,দরজাটা যেন ওরই খোলা লাগবে।
-আজ এত দেরি করলে যে,নিশু ভাইয়া।
-হুম ভার্সিটি থেকে ফিরতে তো দেরি হতেই পারে।তুই কি ঘড়ি নিয়ে বসে থাকিস নাকি?হেসে উত্তর দেয় নিশাদ।
-বুঝেছি...যাও হাতমুখ ধুয়ে খেতে এসো।
-আজকে বাইরে থেকে খেয়ে এসেছিরে,তুই বুঝি খাসনি এখনও?
-ইস আমার বয়েই গেছে তোমার জন্য না খেয়ে থাকতে।আমি কি তোমার বউ লাগি নাকি।ভেংচি কেটে চলে যায় আদ্রিনা।
-এই এক কাপ চা খাওয়া তাইলে।
পারবোনা বললেও নিশাদ জানে কিছুক্ষনের মধ্যেই এই পাগলী মেয়েটা ঠিকই চা নিয়ে আসবে।আদ্রিনা নিশাদের ফুফাতো বোন,ওর চেয়ে তিন বছরের ছোট।বছর সাতেক আগে এক্সিডেন্টে বাবা মা মারা যাওয়ার পর থেকেই নিশাদ ওর ফুফুর সাথেই থাকে।
-এই নাও চা।চা টা নিশাদের হাতে দিয়ে পাশের সোফাটায় বসে আদ্রিনা।
-কি বানাস এইগুলা,চিনি এত কম কেন?এরচেয়ে তো বিলকিসও ভাল চা বানায়।বিলকিস ওদের কাজের বুয়ার নাম।
-তাহলে বিলকিস কেই বলনা কেনও চা বানায় দিতে?? রেগে যায় আদ্রিনা।যদিও ও জানে ওকে রাগানোর জন্যই নিশাদ এটা বলেছে।
আদ্রিনার রাগী রাগী মুখটা দেখে হো হো করে হেসে উঠে নিশাদ।
-এই তোকেতো বলাই হইনি।আজ ভার্সিটি থেকে বেরিয়েই একটা মেয়েকে দেখলাম,এত সুন্দর মেয়ে আমি জীবনেও দেখিনিরে।গার্লফ্রেন্ড হলে এমনটাই হওয়া উচিত।
-নিশু ভাইয়া তুমি সিমিন আপুর বেলায়ও একি কথা বলছিলা।কিন্তু রিলেশনটা তো আট মাসের বেশি টিকলো না।আর কতো??আর সুন্দর হলেই যে ভাল তা কিন্তু ঠিকনা।
-হাহ তুই এসব বুঝবিনা।প্রেমে পর তারপর বুঝবি।
-আমার এত বুঝে লাভ নেই।চায়ের কাপটা নিয়ে উঠে যায় আদ্রিনা।
নিজের ঘরে গিয়ে বড় আয়নাটায় তাকায় আদ্রিনা।ওর গায়ের রঙ শ্যামলা,টানাটানা কালো নয় ওর চোখ,হাসিটাও যে খুব সুন্দর তাও নয়।হুম নিজেকে কোনোদিক থেকেই সুন্দরি বলা যায়না।আর তাই বুঝি নিশুটা ওরদিকে ফিরেও তাকায় না।
-উহ প্রেমে পর তারপর বুঝবি!! আরে বুদ্ধু আমিতো সেই কবে থেকেই তোমার প্রেমে পড়ে আছি,শুধু তুমিইই বুঝলানা।আয়নায় তাকিয়ে নিজে নিজেই বলে আদ্রিনা।
নিশাদের দেখা সেই সুন্দরি মেয়েটার নাম নিঝুম,বয়ফ্রেন্ড নেই তাই কথাবার্তায় এগোতে খুব বেশিদিন লাগেনি নিশাদের।কেমন যেন একটা ঘোড়ের মধ্যে থাকে ও যখন নিঝুম ওর পাশে থাকে।এর আগে কখনো এমন ফিলিংস হয়নি,জীবনে প্রথমবার কারো প্রেমে সিরিয়াসলি পরেছে ও।কিন্তু কিভাবে যে প্রপোজ করবে বুঝতে পারছেনা।আর ওর এই সিরিয়াস হওয়া দেখে মনে মনে ভীষণ কষ্ট পায় আদ্রিনা।নিশুকে বুঝি আর পাবেইনা ও।তাই নিজেকে নিশুর কাছ থেকে দূরে সরাবে বলেই ঠিক করে ও।
বাসায় কয়েকদিন ধরে আদ্রিনার বিয়ের কথা চলছে।আদ্রিনাও এবার আর না করেনি,বাবা মার পচ্ছন্দেই বিয়ে করবে ও।ডায়নিং খেতে বসে আজ আদ্রিনার বিয়ের কথা তুলতেই যেন স্বভাববশতই নিশাদ খোঁচা মারা শুরু করলো।
-ফুপ্পি আমাদের আদ্রি কিন্তু আসলেই অনেক বড় হয়ে গেছে শুধু বুদ্ধি কিছু বাড়েনি।বিয়ের পর যদি একটু বুদ্ধিশুদ্ধি হয় আর কি!!
নিশাদের বত্রিশ দাত বের করা হাসি দেখে পিত্তি জলে যায় আদ্রিনার।
-তোমার তো অনেক বুদ্ধি তা কি করতে পারো দেখবোনে।
নিশাদকে অবাক করে দিয়েই ডাইনিং থেকে উঠে যায় খাবার ফেলে,পাছে নিশু ওর কান্না দেখে ফেলে।তারপর থেকে নিশাদ দেখেছে আদ্রি কেমন যেন চুপচাপ হয়ে গেছে,আগের মত ঝগড়া,খুনসুটি,আবদার,অভিমান কিছুই করছে না।এখন আর দরজা খুলতে ছুটে আসেনা,আর বিলকিসের হাতের চা খেতে খেতে ওর মুখের স্বাদ ও বিস্বাদ হয়ে গেছে।জীবনের অর্ধেক আনন্দই যেন হঠাৎ করে হারিয়ে গেছে কোথায়।কেনও এমন করে বদলে যাচ্ছে আদ্রি নিশু ভেবে পায়না।ওর প্রেমে টেমে পরেনিতো পাগলীটা?নাহ এটা কি ভাবছে নিশাদ।কখনো তো বলেনি এমন কিছু,যদিও অনেকবারই মনে হয়েছিলো এমনটা ওর সব কেয়ারিং দেখে।আর নিজেওতো কেমন যেন অভ্যস্ত হয়ে পরেছে ওর এই এক্সট্রা কেয়ারিং এ।নাহ বোধহয় বিয়ের আগে মেয়েরা এমনই বদলে যায়।নিজেকে এভাবেই সান্ত্বনা দেয় নিশাদ।
নিঝুমের সাথে আজকাল আর কথা হয়না নিশাদের।মেয়েটা সরাসরি রিফিউজ করে দিল ওকে।কয়দিন ধরে তাই বিশাল কষ্টে আছে ও।তবে নিঝুমের চেয়ে বেশি কষ্টে আছে ও আদ্রির ব্যাপারটা নিয়ে।কিছুতেই আদ্রির এই অবহেলাটা মেনে নিতে পারছেনা ও।কেমন যেন একটা কনফিউশন কাজ করছে মনের ভেতর,কিন্তু এই কনফিউশনটার নাম যদি হয় ভালবাসা তবেই বিপদ।এদিকে ওর বিয়েটাও এগিয়ে এসে সামনের সপ্তাহে ঠেকেছে।নাহ ওর সাথে কথা বলতে হবে,আদ্রি নিজের রুমেই ছিল
-আদ্রি,তুই আমায় ভালবাসিস?
-নিশু ভাইয়া আমার বিয়ে তুমি জানো না?কি বলছ এসব?
-বিয়েটা ভেঙ্গে দে।তুই আমার বউ হবি!আমি তোকে ছাড়া থাকতে পারবোনা।
আদ্রির খুব ইচ্ছে করছিল বলতে,কেনও এত দেরি করলে বুঝতে,আমি তো তাই চাই,তোমাকে ছাড়া যে আর কাউকে ভালবাসতে পারবোনা।কিন্তু ওকে শাস্তি দিতেই যেন বলল
-এখন আর তা সম্ভব না।সবকিছু ঠিকঠাক হুয়ে গেছে।আর আমি কাওকে ভালবাসি না।তুমি যাও এখন।
নিশাদ যেন নিজের কান কেই বিশ্বাস করতে পারছেনা।কি বলছে পাগলীটা!
আর এক সপ্তাহ পর বিয়ে।চোখের সামনে আদ্রির বিয়ে দেখতে পারবেনা বলেই সেদিনই নিশাদ চলে গিয়েছিল ওর এক বন্ধুর বাসায়।বিয়ের দিন পেরিয়ে যখন বাসায় এলো,আদ্রির বিয়ে ভাঙ্গার কথাটা তখনি মাত্র জানতে পেলো।আদ্রিকে খুঁজে পেলো ছাদে।একলা বসে জোছনা দেখছিল ও।
-তুই বিয়ে ভেঙ্গেছিস কেনও?
-ও তুমি!দেখনা আজকে কি সুন্দর চাঁদ উঠেছে।
-কথা ঘুরাচ্ছিস কেনও?
-বিয়েটা হয়ে গেলে কি তোমার সাথে এভাবে জোছনা দেখা হতো?আর আমি চলে গেলে কে তোমার জন্য অপেক্ষা করত,কে তোমার খেয়াল রাখত,বলো??বিয়েটাও আমকেই ভাংতে হলো।এত অবুঝ কেনও তুমি?ফুপিয়ে কেদে উঠলো আদ্রিনা।
নিশাদ শক্ত করে ওকে জড়িয়ে ধরলো,আদ্রি তখনও কাঁদছে।চোখটা মুছে দিতে দিতে বলল,
-আর হবেনা এমন,প্রমিস।অনেক ভালবাসি যে তোকে,অনেক বেশি।
আকাশের ওই চাঁদটার চাইতেও আজ আদ্রিনাকে বেশি সুন্দর লাগছে।আর নিশাদকে নিয়ে জোছনায় ভেজার সেই প্রতীক্ষিত মুহূর্তটি অবশেষে এলো আজ আদ্রির জীবনে।ও যেন জানতই নিশাদ ফিরে আসবেই,আসবেই।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.