![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
নিজেরে খুব ভালো মানুষ বলে দাবি করি না,তবে ভালো কিছু করার চিন্তা সবসময় মাথার মধ্যে ঘুরপাক খায়। আমার অভাগী এই দেশটা,এই দেশের খেটে খাওয়া অথচ না খেয়ে থাকা মানুষগুলো,জীবন বাস্তবতার চরম শিকার ঐ রাস্তার টুকাই,রাস্তার জ্যামে \"ভাইয়া,ভাবির জন্য এই কয়ডা ফুল নিয়া যান\" বলা পাগলগুলোর জন্য কিছু করতে মন চায়।
আমি তরু।নামটা বাবার দেয়া। আমার জন্মের ২ বছর পর বাবা মারা যায়।আমি এখন ৭ম শ্রেণীতে পড়ি।মা একটি ছোট চাকরি করে।ছোট শহরে একটি নতুন বাসায় উঠেছি।মা বলেছে এখন আমি বড় হয়েছি।একা কোথাও যেতে নিষেধ করেছে।মা সারাদিন অফিসে থাকে।আমি একা ঘরে থাকতে থাকতে অস্থির হয়ে যাই।পাশের বাসার চাচী মাঝে মাঝে আসে।তখন সময়টা ভাল কাটে।কিছুদিন যাবত একটা ব্যাপার লখ্য করছি।রাস্তায় বের হলে কিছু ছেলে সীস বাজায়।সবথেকে অসহ্য লাগে কেমন করে যেন তাকিয়ে থাকে। তাকানোর ঠিক মানে বুঝিনা। আমাদের ক্লাসের অনেক বন্ধুকেই দেখি আমার দিকে তাকিয়ে থাকতে।কিন্তু ওদের তাকানোর সাথে এদের তাকানোর অনেক অমিল।রাস্তার ছেলেগুলোর তাকিয়ে থাকা দেখে মনে হয় এখনি মাটি ফাক করে ভিতরে ঢুকে যেতে পারলে ভাল হত। বাসা থেকে স্কুল পায়ে হাটার পথ।সকালে মা রেখে আসে।কিন্তু ফেরার পথে কেউ থাকে না।আমাদের গলির সামনে চায়ের দোকান।কিন্তু চৈত্রের দুপুরে ৩/৪ জনের বেশী লোক দেখা যায় না।প্রতিদিন দুপুরে একই ছেলেদের এখানে দেখা যায়।সবাই ১৭/১৮ এর মধ্যে হবে।চোখ কোঠরাগত।এদের একদমই দেখতে ইচ্ছে করেনা।মাঝে মাঝে এরা আমার পিছন পিছন বাসা পর্যন্ত আসে।আর পুরোটা রাস্তা খুবই জঘন্য কথা বলতে থাকে
ছেলেগুলোর কথা শুনলেই গা গুলায়।বাসায় আসার পর অনেকটা সময় রাস্তার কথা মনে পড়ে খারাপ লাগে।এই দুপুরে বিদ্যুত চলে গেছে।বাতাস পাওয়ার আশায় বারান্দায় এসে দাড়িয়েছি।এমন সময় কলিংবেলের শব্দ শুনলাম।গিয়ে দেখি ডাকপিয়ন।এ যুগে কেউ চিঠি লেখে না।কিন্তু আমার মামাত ভাই ফুয়াদ ভাইয়া,মাঝে মাঝেই আমাকে চিঠি লেখে।দশম শ্রেণীতে পড়ে।দারুণ গান গায়।ভাইয়ার প্রিয় খেলা ক্রিকেট।ডাকপিয়ন কাকুর কাছ থেকে চিঠি নিতে নিতে তার সাথে একটা সখ্যতা গড়ে উঠেছে।গত ৭ দিনে ৪ টি চিঠি নিয়েছি। তাকে বসতে বললাম কিন্তু বসল না।কাকুকে আমার দারুণ ভাল লাগে।মুখে সবসময় একটা হাসি লাগান থাকে।কিছু মানুষ আছে যাদের সাথে কিছুদিন কথা বললে তাদের প্রতি একটা সম্মানবোধ তৈরী হয়।কাকু হচ্ছে তেমন একজন।চিঠিটা পড়ার জন্য টেবিলে গিয়ে মাত্র খুলেছি,এমন সময় আবার কলিংবেলের শব্দ পেলাম।গিয়ে দেখি ডিশ লাইনের লোকটা।দরজা খুলতেই একটা ফালতু হাসি দিয়ে জিজ্ঞেস করল:
-তোমার মা আছে?
-না,অফিসে।
-আমি তাহলে সন্ধ্যায় আসব।
এই লোকটাকে আমার একদমই পছন্দ না।আমাদের আগের বাসাতেও বিল নিত।লোকটা প্রতিমাসের বিল নিতে রাত ৯ টায় আসবে।মাকে ভাবী বলেই গল্প শুরু করবে।তাকে যেতে না বললে উঠবেই না।
আমাদের লাইনে এর মাঝেই ২ বার সমস্যা হয়েছে।সে ঠিক করার নাম করে আসে।এসে গল্প শুরু করে।সন্ধ্যায় মা বাড়ি ফিরল।তাকে অসুস্থ লাগছিল।গায়ে হাত দিয়ে দেখি জ্বর উঠেছে।সাধারণ চিকিৎসা শেষ করে আমি পড়তে বসলাম।রাত ১০ টার দিকে দেখি মা বমি করছে।গায়ে প্রচুর জ্বর।কি করব বুঝতে না পেরে পাশের বাসার চাচীকে ডাকতে গেলাম।কিন্তু ওনারা কেউ বাসায় নেই।আমি ঘরে ফিরে এলাম।ফিরে দেখি মার জ্বর আরো বেড়েছে।আমাদের গলি থেকে বেরিয়ে বা দিকে ২০০ গজ দূরেই ফার্মেসী।ফার্মেসীর মালিক দোকানেই ঘুমায়।কাকুকে ডেকে আনতে এত রাতে বেরোলাম।গলিটা পার হয়ে চায়ের দোকানের সামনে কিছু লোকজন দেখলাম গোল হয়ে বসে কি যেন করছে।আমাকে এক মধ্যবয়সী লোক ডাক দিল।আমি না শুনে ফার্মেসীর দিকে হাটতে লাগলাম।কিন্তু খেয়াল করলাম কেউ একজন আমার পিছনে আসছে।আমার হাত-পা জমে এল।একটু দূরেই দেয়াল করা খালি জায়গা আছে।সেখানে আসতেই কে যেন আমার মুখ চেপে ধরল।আমি হাত-পা ছুড়তে লাগলাম কিন্তু ছুটতে পারলাম না।৩/৪ জন ধরে আমাকে দেয়ালের ভেতর নিয়ে গেল।আমার সারা শরীর তখন কাপছে।আবছা আলোয় বুঝলাম লোকগুলো আমার বাবার বয়সী।আমি মনকে বললাম*এরা আমাকে ধর্ষণ করতে পারে না,এদের হয়ত আমার বয়সী মেয়ে আছে।
কিন্তু আমার সব চিন্তা ভুল হয়ে গেল।আমার নিশ্বাস বন্ধ হয়ে আসছে।ঘৃণায় কাঁদতে ভুলে গেলাম শুধু চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে পড়ছে।সাথে আমার মুখ থেকে একটা অস্ফুট শব্দ বেরিয়ে এল *ছি*।হঠাৎ প্রচন্ড ব্যাথায় একটা আকাশ ফাটানো চিৎকার দিলাম।জা*জগুলা চলে গেল।আমি নড়তে পারলাম না।কিছুখনের মধ্যে লোকজন এসে ভিড় করল।কেউ আমাকে কোলে নিয়ে বাসায় যাচ্ছে।আমি চাচ্ছিলাম যেন বাসায় যাওয়ার আগেই মরণ হয়।কিন্তু হলো না।আমাকে বাসায় নিয়ে গেল।মা দৌড়ে এল।কে যেন মাকে জানাল।মা বাকরুদ্ধ হয়ে বসে পড়ল।কিছুখন পর মাকে দেখলাম প্রলাপ বকল আর সবাইকে বলছিল যাহ যাহ।তারপর আমার কিছু মনে নেই। জ্ঞান ফিরল বা ঘুম ভাঙল সকালে।পাশে চাচী শুয়ে আছে।মামীকে দেখলাম মাকে যেন কি বোঝাচ্ছে।মামা আর ফুয়াদ ভাই বসে আছে।আমি কারো চোখের দিকে তাকাতে পারলাম না।বাইরে গোলমালের শব্দ শুনলাম মামা দেখলাম বাইরে যাচ্ছে আর বলছে সাংবাদিকদের আগে পিটানো দরকার।আমার কাছে সবকিছু ঘোরের মত লাগছে।আকাশের রং বেগুনী মনে হল।চাচী সবাইকে বাইরে যেতে বলল।সবাই বাইরে চলে যাচ্ছে এ সময় মা হঠাৎ দৌড়ে এসে আমার উপরে পড়ে কাঁদতে লাগল।আমার মাকে এ অবস্থায় দেখতে ভাল লাগল না।আমি ভাবলাম আমি কি আত্মহত্যা করব?
চাচী মাকে টেনে নিয়ে গেল।আমি ভাবলাম আল্লাহ কেন আমাকে এমন একটা সকাল দিল।ধর্ষণকারীর শাস্তি কেন আল্লাহ সরাসরি পৃথিবীতে দেয় না।চাচী আমাকে প্রাতকাজ শেষ করতে বলল।আমার কোন কাজ করতেই ভাল লাগল না।কোনভাবে কিছু খেলাম।মামা মাকে বলল *অন্য শহরে যেতে হবে।আমি ব্যবস্থা করছি।আর আজকেই ওদের নামে কেস করতে হবে।*খাওয়া শেষ হলে মামা আমাকে রিকশায় নিয়ে থানার দিকে রওনা হল।এখন কোন সাংবাদিক নেই।তবে শুনেছি পত্রিকায় আমার কথা লিখেছে।রাস্তার লোকগুলো আমার দিকে যেন কেমন করে তাকিয়ে রইল। কিছু গুন্জন শুনতে পেলাম *মেয়েটারই দোষ, এত রাতে ওখানে কি করতে গেছিল*, *মেয়াটা বেহায়া, একদিনও বোরকা পরে না*।আমার নিজেকে এক মুহূর্তের জন্যও পৃথিবীতে রাখতে ইচ্ছে করছিল না।তবু থানায় গেলাম।পুলিশ বিভিন্ন অরুচিকর প্রশ্ন করছিল।ঘটনা বর্ণনা করতে গিয়ে মনে হল আমি আবার ধর্ষিত হচ্ছি।পুলিশ বলল *ডাক্তার পরীকখা করে রিপোর্ট দিবে। ধর্ষণের আলামত পাওয়া গেলে কেসটা শক্ত হবে।*আমার কিছুই ভাল লাগছে না তবু পরীকখা করে মামার সাথে বাসায় ফিরলাম।বাসায় ফিরে দেখলাম মা পাগলের মত হয়ে গেছে।আমি ভাবলাম *একটা নষ্টা মেয়ে হয়ে বেচে থাকার দরকার নেই।আমি আজ রাতেই আত্মহত্যা করব।
চাঁদ মাথার উপর এসে গেছে।শেষবারের মত ঘুমন্ত মাকে জড়িয়ে ধরেছি।ছাদের এক কোণে দাঁড়িয়ে আছি।শুধু একটা লাফ দিব আর পৃথিবীর সকল রং তামাশা আমার জন্য মিথ্যা হয়ে যাবে।সারাখন মরতে চেয়েছি কিন্তু এখন মরতে পারছি না।বারবার লাফ দিতে গিয়েও দিতে পারছি না।আপন মানুষের স্মৃতিগুলো বারবার পায়ে শিকল পরাচ্ছে।না,আমি এবার মারা যাবই।কিন্তু কেউ আমার গল্প জানবে না।মরার পর কি আল্লাহ আমাকে মাফ করবেন?আমার মাকে আমি কি দিলাম?আমাকে তো মা অনেক দিয়েছে।আমার কি এভাবে চলে যাওয়া ঠিক হচ্ছে?আমি চলে গেলেত ধর্ষকদের কোন খতি হবে না।যারা আমার খতি করল আমি তাদের এত সহজে ছেড়ে দেব?না,আমি মরব না।যে সমাজ ধর্ষকের শাস্তি দিতে না পেরে সব দোষ ধর্ষিতার উপর চাপিয়ে নিজেদের ব্যার্থতা ঢাকে,সে সমাজের কথায় তরুর মৃত্যু হবে না।জীবনে যত বাধাই আসুক না কেন,আল্লাহ ডাক না দিলে কখনো মরব না।যতদিন বেঁচে থাকব ধর্ষকদের জন্য এক ভয়ঙ্কর নাম হয়ে বেচে থাকব।বড় হয়ে এমন একটা কিছু হব যাতে এদের সাথে লড়াই করা সহজ হয়,একজন আইনজীবী/সাংবাদিক বা পুলিশ কর্মকর্তা।আর মাঝে মাঝে নিষিদ্ধ কর্ম *ধর্ষকহত্যা* করব।কেউ জানবে না,শুধু আমি জানব আমার সবথেকে বড় পরিচয় ধর্ষকহত্যাকারী।
©somewhere in net ltd.