![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
এই মুহূর্তে লেখালেখির জন্য সবচেয়ে আকর্ষণীয় বিষয় অবশ্যই ‘শাহবাগ’। নিজস্ব অভিজ্ঞতা, সমীক্ষা, উদ্দেশ্য কিংবা পরিণতি এমন সব বিষয়ে নিয়েই নিত্য দিন লেখালেখি চলছে। দুই একজন ছাড়া প্রায় কেউই বিপক্ষে লেখার চেষ্টা করেন নি। আর স্বপক্ষে যারা লিখছেন তাঁরাও, অবস্থা বুঝে লিখছেন? না মন থেকে লিখছেন, এই মুহূর্তে বোঝার খুব একটা উপায় নেই।
বেশ কিছু আর্টিকেল পড়লাম। অনেক ধরনের প্রশ্নের সমাহার। মনের ভেতর যেসব প্রশ্ন আসছে তাঁর অন্যতম হচ্ছে, ‘বিরোধী দল এখন কি করবে?’ কিছু লেখা পড়ে মনে হল, বিরোধীদলের বর্তমান নীরব অবস্থানকে চরম ভুল হিসেবে মনে করছেন অনেকেই। আরও একটি সম্ভাবনা হতে পারে, তাঁরা দোদুল্যমান অবস্থায় আছে। কোন দিকে যাবে এই প্রশ্নেও যেমন দোদুল্যমান, তেমনি শাহবাগে গেলে তাঁদের সঙ্গে কি আচরণ হবে এই প্রশ্নেও কিছু ভীতি তাঁদের ভেতর কাজ করছে। যেহেতু শুরু থেকেই বর্তমান সরকারী দলের ছাত্র সংগঠন অন্যান্য আর সব ছাত্র সংগঠনের সঙ্গে সম্মুখভাগে ছিল, তাই বিরোধী দল একটু দুশ্চিন্তায় আছে সেখানে যাওয়া ঠিক হবে কি না। তাঁদেরকে দোসর হিসেবে ধরা হবে না জনতার অংশ হিসেবে মেনে নেওয়া হবে।
অবশেষে একটা প্রচেষ্টা দেখা গেল। কিছু দাবী অন্তর্ভুক্তির জন্য লিফলেট। এটাকে কেন যেন আমার ফেস সেভিং ফর্মুলা মনে হল। আন্দোলন এ পুরোপুরি একাত্মতা দেখালে জামায়াত নাখোশ হতে পারে কিংবা বিদেশী প্রভুরা সরে দাঁড়াতে পারে। আবার না দেখালে জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন হতে পারে। লিফলেট ফর্মুলা তে দুই কুলই রাখবার চেষ্টা হল। ওখানে যাওয়া এবং কিছুটা একাত্মতা প্রকাশ ও হল আবার ওখানে যাওয়ার কিছু লোক দেখানো কারণ ও তৈরি করা হল। তবে জনগণকে কতটা বোঝানো গেল তা নিয়ে বোধহয় বিরোধী দল নিজেও সন্দেহে আছে।
ঢাকার বাইরে থাকবার কারণে শাহবাগ বা প্রজন্ম চত্বর নিয়ে একটা অতৃপ্তি আমার থেকেই যাবে। ইলেকট্রনিক মিডিয়া কিংবা প্রিন্ট মিডিয়া কেবল খবর দিচ্ছে কিন্তু যা দিতে পারছে না তা হচ্ছে অনুভুতি। ওখানে একদিনের জন্য যাওয়ার সুযোগ হয়েছিল, এবং সেই অনুভুতি আমার পক্ষে ভাষায় প্রকাশ করা সম্ভব না। আমার এই গত সাত মাসের কলামিস্ট জীবনের যে বক্তব্য, অর্থাৎ প্রচলিত রাজনৈতিক ধারা বিশেষ করে দেশের প্রধান দুটি রাজনৈতিক দলের প্রতি অশ্রদ্ধা, তা চাক্ষুষ করলাম। ‘এই রাজনৈতিক দলগুলো কিছুই করবে না, যা করার আমাদেরকেই করতে হবে’ এই অনুভুতি খুবই স্পষ্ট।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে রাজনৈতিক দলগুলো এই অনুভুতি বুঝতে পারছে কি না? প্রথমটায় মনে হয় পারে নি। প্রথমে তাই সন্দেহের দৃষ্টিতে তাকিয়েছিলেন, সমর্থন করবেন না নীরব থাকবেন এই নিয়ে চিন্তা করেছেন। এরপর চিরাচরিত স্টাইলে কৃতিত্ব নেয়ার চেষ্টা করতে গিয়েছিলেন। এবং প্রত্যাখ্যাত হয়েছেন। কোন আলাদা মঞ্চ না থাকা, বিভিন্ন ভঙ্গিমায় বিরোধ জানানো, ছোট ছোট গ্রুপে ভাগ হয়ে নিজের মত করে কথা বলা এক নতুন মাত্রা দিয়েছে। যে বিরোধী দল হরতালের বিকল্প খোঁজার জন্য হন্যে হয়েছিল, তাঁদের চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়া হল, যদি সত্যি জনগণের প্রানের দাবী নিয়ে এগিয়ে আসেন, জনগণও এগিয়ে আসে।
কি দাবী নিয়ে এই আন্দোলন শুরু হয়েছিল, তাঁর চেয়ে বড় ব্যাপার হয়ে আমার মনে হয়েছে, আমাদের ভেতরে একটা শক্তির আবির্ভাব। নিজেদের ওপর একটা বিশ্বাস এসেছে। আমরা কিছু করতে চাইলে করতে পারি, মুক্তিযুদ্ধে যা করেওছিলাম, তা প্রমাণ করেছি। এবার এই বিশ্বাসটা রাজনৈতিক দলগুলোর ভেতরেও প্রবেশ করানোর পালা। তাঁরা নিজেরাই যদি বুঝে যান, জনগণকে এদিক ওদিকের কথা বলে আর খুব বেশী ভোলানো যাবে না, তবে তাঁদেরই সুবিধা। সবাই ভাবছে বিরোধী দল একেবারেই শিক্ষা নেয় নি, তাঁদের প্রতিই বেশী কটাক্ষ করছেন, কেন তাঁরা নিশ্চুপ। হয়তো ঠিকই করছেন। তবে একটি ভুল হয়তো সবাই করছেন, সরকারী দল ও খুব বেশী শিক্ষা নিয়েছেন বলে মনে হচ্ছে না।
বিরোধী দল ঠিক কখন মৌনতা ভাঙবে কিংবা কখন বুঝতে পারবে এই আন্দোলন সরকারী নাটক না তাঁর ওপর নির্ভর করছে তাঁদের ভবিষ্যৎ। অনেক হিসেব নিকেশ হয়তো তাঁরা করছেন, সবকুল রাখবার চেষ্টাও যে করছেন না এমন মনে হয় না, তবে খুব দ্রুত সিদ্ধান্ত নেয়া জরুরী। আরও কিছু দাবী যোগ কিংবা সরকারী দলের অন্যায়ের প্রতি মনোযোগ আকর্ষণ আলাদা করে করার প্রয়োজন কি আর পড়বে? এই আন্দোলন সফল হলে বাকী সব অন্যায় নিয়ে কথাবার্তা এমনিতেই শুরু হয়ে যাবে।
ফেসবুক এ যে সাইবার যুদ্ধ শুরু হয়েছে তাঁর একটি অংশে আছে এই প্রচারণা। দেশে তো আরও অন্যায় হয়েছে, এসবের ও বিচার চাওয়া হোক। সরকারী দলেও তো রাজাকার আছে তাঁদেরও বিচার করা হোক। সবচেয়ে বড় চেষ্টা হচ্ছে এই আন্দোলন কে সরকারী দলের আন্দোলন বলার চেষ্টা। এখন পর্যন্ত খুব বেশী সফল হয়েছে বলে মনে হচ্ছে না। আরও একটি চেষ্টা চলছে তা হচ্ছে ভাঙ্গনের। বামপন্থী গ্রুপ এবং সরকারী দলের মাঝে। সফল হবে কি না, কিংবা আন্দোলন কোথায় যেয়ে থামবে এসব প্রশ্ন উঠানোর চেষ্টাও হচ্ছে। আর এর একটা অন্যতম কারণ হচ্ছে, আমাদের পূর্ব অভিজ্ঞতা। বিভিন্ন সময় আঁতাতের মাধ্যমে যেকোনো আন্দোলনের যবনিকা পাত হওয়া। তবে এবার বোধ হয় আশা রাখা যায়। কারণ এটা কোন রাজনৈতিক দলের আন্দোলন না, এটা তো গন আন্দোলন।
©somewhere in net ltd.