নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমার সব লেখা

ডা: আহমাদ যায়নুদ্দিন সানী

চিকিৎসক এবং লেখক

ডা: আহমাদ যায়নুদ্দিন সানী › বিস্তারিত পোস্টঃ

‘টক শো’ সমাচার

১১ ই মার্চ, ২০১৩ সন্ধ্যা ৬:৪২

টক শো গুলোর আদল পলাটানো খুব জরুরী হয়ে পড়েছে। বিরক্তি তৈরি হতে বোধ হয় আর খুব বেশী দেরি নাই। সেই কবে থেকে চলছে কয়েকজন বিশিষ্ট সাংবাদিক কিংবা বুদ্ধিজীবী আর একজন উপস্থাপক এই ফরম্যাট টা। সারাংশ হচ্ছে ‘দেশ ভাবনা’ কখনও ‘সমালোচনা’ কখনও বা ‘উপদেশ’। সরকারী এবং বিরোধী দলকে মৃদু তিরস্কার ( বেশী করলে সমস্যা আছে), কিছু উপদেশ (উভয়েই যেন খুশী হয়), সঙ্গে থাকে একরাশ আশার বাণী, ‘আমাদের ভবিষ্যৎ আসলে অনেক উজ্জ্বল’। দ্বিতীয় আরেকটি ফরম্যাট থাকে দুই প্রধান রাজনৈতিক দলের নেতা বা নেত্রী (মাঝারী গোছের ই বেশী আসেন), একজন উপস্থাপক আর একজন নিরপেক্ষ ধাঁচের কেউ (যিনি প্রায়ই নিরপেক্ষ থাকতে পারেন না, কোন এক দলের দিকে হেলে পড়েন)।

এভাবেই চলে আসছে গত বছর পনের যাবত। প্রথমে একটি দুটি টেলিভিশান চ্যানেলে দেখাতো। জনপ্রিয়তা পাচ্ছে দেখে সবাই শুরু করে দিয়েছে। একই সময়ে দুটো অনুষ্ঠান প্রচার হলে দর্শক সমস্যায় পরে যান, কোনটা দেখবেন। তখন দর্শক যে কাজটি করেন, তা হচ্ছে, আগত অতিথি দেখে ঠিক করেন কোনটা দেখবেন (আসলে কোনটায় বেশী ঝগড়া লাগার সম্ভাবনা আছে) আর বিরতির সময়ে এক পশলা ঘোরাঘুরি, ‘আর কোন টক শো তে ঝগড়া লাগলো’। প্রথম থেকে এখন অব্দি ঝগড়াই হচ্ছে মুল আকর্ষণ। ঝগড়া লাগলে এবং একজন রাগে টইটুম্বুর হয়ে গেলে দর্শকের সেদিন ‘পয়সা উসুল’। এরপর যখন দর্শক যে কাজটি করেন তা হচ্ছে, তিনি কিছুক্ষণের জন্য তখন হয়ে যান বিচারক, ‘কে জিতল’।

দলীয় দর্শকের অবশ্য খুব বেশী উন্নতি দেখা যায় না। সেই দলীয় লাইনেই মন্তব্য করা। ‘মইন খান যা জবাব দিল না!’ কিংবা ‘শাহজাহান খান ঠিকই করেছে, কথার মধ্যে কথা বললে তো রাগবেই’। শুধু অনুষ্ঠানের সময়টাতেই সীমিত থাকছে না আর এই টক শো। এখন ফেসবুক, ইউটিউব সেখানেও পাওয়া যাচ্ছে এই টক শো র ভিডিও। ‘মুক্তিযুদ্ধের শহীদের সংখ্যার ওপর মনি এর রিসার্চ এর ফলাফল’ যা তিনি টক শো তে বলেছিলেন তাঁর ভিডিও এখন ফেসবুক খুললেই দেখতে পাওয়া যাবে।

এভাবেই চলছিল। একঘেয়ে লাগলেও উপায় ছিল না। নতুন কেউ আসবার কোন সম্ভাবনা যখন প্রায় শূন্য তখন এলো এই ‘গণজাগরণ মঞ্চ’। কয়েকদিনের জন্য ‘শিরোনাম’ ছিনতাই করে নিল। প্রতিটি চ্যানেল এবং পত্রিকার প্রধান খবর হয়ে ওঠে। শুধু কি তাই, টক শো র বিষয়বস্তু ও হয়ে গেল এই ‘গণজাগরণ মঞ্চ’। কোন কোন টক শো তে নেতাদের সরিয়ে চেয়ার দখল করলেন এই ‘ব্লগার’ সেলিব্রিটিরা।

দৈনন্দিন আলাপ আলোচনার বিষয়ও কিছুটা পাল্টাল। রাস্তাঘাটে আলাপ আলোচনার সুত্রপাত হলে যে কথাটি প্রথম উচ্চারিত হয় তা হচ্ছে ‘ব্লগ’ আর ‘ব্লগার’। ব্লগের গুরত্ব আসলে কেউ ই উপলব্ধি করতে পারেন নি। ফলে এই দিকে কোন রাজনৈতিক দলও মনোযোগ দেয় নি। ‘আওয়ামী ব্লগ’ কিংবা ‘জাতীয়তাবাদী ব্লগ’ তৈরি করার কথা নেতাদের মাথায় আসে নি। বেশ কিছু নেতা অবশ্য ফেসবুকে আই ডি করেছেন এবং মাঝ মাঝে কিছু কথা লিখেন। কারো আবার প্রচুর ফ্রেন্ড ও আছে। তবে এদের সংখ্যা বেশ নগন্য।

এতদিন রাজনৈতিক ঘরে জন্ম না নিলে কিংবা কোন দলের দুর্ধর্ষ ক্যাডার না হলে রাজনৈতিক দলে খুব ভালো করা যেত না। নেতা হতে হলে আরও প্রয়োজন হত চাটুকারিতা। জননেত্রী, দেশনেত্রী, পল্লিবন্ধু এমন সব উপাধি সহ নেতা নেত্রীর নাম উচ্চারণ করে আর স্তুতি গাওয়া ছিল ওপরে ওঠার অন্যতম চেষ্টার অংশ। এখন তাঁর সঙ্গে যুক্ত হতে যাচ্ছে, নেতা নেত্রীদের প্রশংসা গেয়ে ব্লগে লেখালেখি কিংবা ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেয়া। নেতা নেত্রীকে কটাক্ষ করলে তাঁকে গুষ্টি উদ্ধার করে গালি দেয়া এবং ব্লক করে দেয়া। এভাবে অচিরেই তৈরি হতে যাচ্ছে কিছু ‘ফেসবুক সেলিব্রিটি’ কিংবা ‘ব্লগার সেলিব্রিটি’।

‘গণজাগরণ মঞ্চ’ কিছু সেলিব্রিটি ইতিমধ্যে তৈরি করে ফেলেছে। এই আন্দোলনের বক্তব্যের সঙ্গে যেহেতু একটি বিশেষ দলের বক্তব্যের একটু বেশী মিল দেখা যাচ্ছে, তাই ধারণা করা হচ্ছে এই ব্লগার রা সেই পন্থী। ফলে ওপর দলের জন্য জরুরী হয়ে উঠেছে অচিরেই কিছু ব্লগার তৈরি করা। কিংবা বলা উচিৎ কাজটা শুরু হয়ে গেছে। নিজেদের মত বা মতাদর্শের সঙ্গে মিলে যায় এমন সব কথা বলবে এমন একটা ব্লগ অচিরেই বাজারে আসবে। শুরু হবে ব্লগে ব্লগে যুদ্ধ। ‘এই ব্লগার তো আওয়ামী পন্থী! ও তো লিখবেই এই কথা’ কিংবা ‘ঐ ব্লগ তো বি এন পি র। ওখানে আর কক্ষনো ঢুকবি না।‘ কিছু থাকবে নিরপেক্ষে(??) ব্লগ ‘এই ব্লগটায় দুই দলকেই ধোলাই করে দেয়।‘

পরিবর্তন আসবে টক শো তেও। নিরপেক্ষ হিসেবে এখন সুশীল সমাজের কাউকে না এনে হয়তো নিরপেক্ষ কোন ব্লগারদের একজন কাউকে আনা হবে। কেউ হয়তো ব্লগ লিখে নেতা নেত্রীর সান্নিধ্য পাওয়ার চেষ্টা করবেন। গায়ে ‘পন্থী’ লাগলেও আপত্তি করবেন না তাঁরা, যদি বিনিময়ে কিছু পাওয়া যায়। পাওয়ার সম্ভাবনা আরও বাড়বে যদি তাঁরা এই টক শো গুলোতে নেতা নেত্রীর জয়গান করতে পারেন। একটু নতুনত্ব আনবার জন্য হয়তো দলীয় নেতাদের বদলে অচিরেই দেখা যাবে এই পন্থী ব্লগার সেলিব্রিটিদের।

অচিরেই দেখতে পাবো উপস্থাপকের দুই পাশে বসে দুই ‘পন্থী ব্লগার’ তুমুল বিতর্ক জুড়ে দিয়েছেন। ‘দেশ রসাতলে যাচ্ছে’ আর ‘দেশে উন্নয়নের জোয়ার বইছে’ এমন সব গল্প শুনব। একজনের কথা শেষ হওয়ার আগেই আরেকজনের কথা বলা শুরু। এরপর একদিন ‘চোখ উপড়াতে চাওয়া’। পর্দার পেছনে চলতে পারে আরেক খেলা। ‘ব্লগার সেলিব্রিটি’ হওয়ার প্রতিযোগিতা। যোগ্যতা থাকলে ভালো আর না থাকলে তাঁর জন্য তদবির।

ফলে একসময় এখানেও এসে হামলা করবে অর্থ,প্রতিপত্তি। কিংবা উত্তরাধিকার। ‘আমার ছেলেটা বেশ ভালোই লেখে, ওর লেখাগুলো স্টিকি করতে হবে। যা খরচ লাগে আমি দিব।’ কিংবা হয়তো বিরোধী পক্ষের হুমকি আসবে ‘আবার যদি দেখি ঐ শালার লেখা স্টিকি করসস, তোর খবর আছে।‘

ফেসবুকে চলবে গোয়েন্দা গিরি। কার ফ্রেন্ড লিস্টে আওয়ামী পন্থী ফ্রেন্ড বেশী আর কার ফ্রেন্ড লিস্টে বিএনপি পন্থীরা গিজগিজ করছে। কে জামায়াত পন্থী ‘পেজ’ এ লাইক দিয়েছে। কে বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষণ এর ভিডিও শেয়ার করেছে আর কে জিয়ার খাল কাটার ভিডিও। সেলিব্রিটি হওয়ার জন্য শুরু হবে ফেক আইডি তৈরি করে নিজের পোস্টে হাজার খানেক ‘লাইক’ দেয়া। ‘দারুণ লিখেছেন’ ‘সহমত’ এমন সব মতামত।

টক শো গুলো কিন্তু সত্যিই এখন একঘেয়ে হয়ে উঠেছে। কোন বৈচিত্র নেই। কে, কি কথা বলবেন আগে থেকেই বলে দেয়া যায়। একজন শুরু করবেন ‘আপনারা জানেন জাতির পিতা...’ আরেক জন ‘স্বাধীনতার ঘোষক শহীদ রাষ্ট্রপতি...’ এরপর যথারীতি অপর দলের বদনাম। নিজের দলের কর্মকাণ্ড নিয়ে বলার মত যেহেতু কিছু নেই, তাই পরনিন্দা দিয়েই কার্যোদ্ধারের চেষ্টা। এবং দারুণ সফলতার সঙ্গে প্রায় পনের বছর পার করে দেয়া।

টক শো গুলো দেশের কোন উন্নতিতে ভুমিকা রেখেছে কিনা জানি না। এখানে হওয়া আলোচনা শুনে কোন দল তাঁর নীতি পাল্টেছে বা কোন নেতা তাঁর চাটুকারিতা কমিয়েছে এমন মনে হয় না। একরাশ উপদেশ যে বুদ্ধিজীবীরা দেন, কাকে দেন? কেউ কি শোনে তাঁদের কথা? না কোনদিন শোনার কোনোরকম সম্ভাবনা তাঁরা দেখতে পান। বরং নতুন সেলিব্রিটিরা আসলে অন্ততঃ কিছুদিন নতুন কিছু শোনা যাবে। কিছুদিনের জন্য একঘেয়েমি কাটবে।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.