![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
সিস্টেমটা এতো নিষ্কলুষ থাকে না। ধীরে ধীরে এই সিস্টেমের অনেক শাখা প্রশাখা যুক্ত হতে থাকে। কিছু সুন্দর শাখা প্রশাখা থাকে। যেমন সব ধরনের বিশেষজ্ঞ বসানোর চেষ্টা হয়। কারণ বিশেষ কিছু পরীক্ষা বিশেষ ধরনের বিশেষজ্ঞ ছাড়া সাধারণতঃ লেখে না। তাই ‘কিডনির রোগ’ নির্ণয়ের বিভিন্ন পরীক্ষা সাধারণতঃ কিডনি রোগ বিশেষজ্ঞরা দিয়ে থাকেন। তাই সেই ধরনের পরীক্ষা বেশী করে পেতে একটি সেন্টারের তাই কিডনি রোগ বিশেষজ্ঞ দরকার। এভাবেই যত বেশী বিশেষজ্ঞ বসানো যাবে ততো ধরনের পরীক্ষার ব্যবস্থা রেখে লাভ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
শুধু বিশেষজ্ঞ বসালেই হবে না। তাঁদের পরিচিতিও জরুরী। তাই চেষ্টা চলে পরিচিতি আছে এমন ডাক্তার বসানোর। তেমনটা পেলে, তাকেই অগ্রাধিকার দিয়ে বসানো হয়। আর না পাওয়া গেলে তখন নতুন কোন বিশেষজ্ঞ ডাক্তার কে সুযোগ দেয়া হয়। তিনি যদি সেই পার্শ্ববর্তী সরকারী হাসপাতালে চাকরী রত থাকেন তবে সুযোগ পাওয়ার ক্ষেত্রে তাকে বিশেষভাবে বিবেচনা করা হয়। এছাড়াও পরিচিত, অমুকের আত্মীয় এসব দিয়েও অনেক সময় কাজ হয়।
ডায়াগনস্টিক সেন্টার টি আরও কিছু উপায়ে রুগী জোগাড় করা করে। সরকারী হাসপাতালের ‘আউট ডোর’ এ দেখাতে আসা রুগীদের কোন পরীক্ষা করতে দিলে তারা কোথায় করবে এই সমস্যায় পরে যায়। তখন সাহায্য করতে এগিয়ে আসে এই ‘দালাল’। নিয়োগ। ‘দালাল’ আবার ‘স্বাধীন’ আর ‘বেতনভোগী’ দুরকম ই হয়। দালাল সাধারণতঃ সাথে করে নিয়ে আসে। এছাড়াও উন্নত চিকিৎসা পাওয়ার আশায় বিভিন্ন জেলাশহরে আসা রুগীগুলো যেন অন্য কোথাও না যেয়ে এখানেই আসে সেকাজটিও করে এই ‘দালাল’। বেতনভোগী রা সাধারণতঃ নিজের সেন্টারেই নিয়ে যায়। আর স্বাধীন দের জন্য সবার দুয়ার খোলা।
কেবল যে পরীক্ষা করানোর জন্য রুগী ধরে আনা হয় তা না। অনেক সময় ভালো ডাক্তার দেখিয়ে দেয়ার নাম করেও সরকারী হাসপাতাল থেকে দালালটি রুগী ভুলিয়ে ভালিয়ে নিয়ে আসে। এই কষ্টকর কাজটি কি সে এমনিই করেছে? না, এর জন্য তাকে তো তাঁর পারিশ্রমিক দিতে হয়। কোথা থেকে আসবে সেই পারিশ্রমিক? সেখানেও একটি অলিখিত চুক্তি আছে। নিয়ে আসা রুগীটির রোগ নির্ণয়ের জন্য যে সব পরীক্ষা বা ইনভেস্টিগেশান করা হবে, তাঁর যে বিল আসবে, তাঁর একটি অংশ সে পাবে পারিশ্রমিক হিসেবে। অনেক সময় বেতনভোগী রাও মাসিক বেতনের সাথে এই কমিশনও পায়। দালালটি স্বাধীন হলে, সে যে রুগীটি জোগাড় করেছে, এবার তাকে ব্যবহার করার খেলা সে শুরু করে। সে প্রথম হিসেব করে কোন ডাক্তারকে দেখালে সবচেয়ে বেশী পারিশ্রমিক পাওয়া যাবে। কে সবচেয়ে বেশী ইনভেস্টিগেশান দিবে। তাকেই সে এই রুগী দিবে।।
এখনও খুব পসার জমে নি এমন বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের জন্য দুটি রাস্তা খোলা। নীতি কথা কপচানো, ‘কোন অপ্রয়োজনীয় পরীক্ষা দিব না’ আর অন্যটি সেই দালালের দাবীর কাছে নতি স্বীকার করা। যে এলাকার রোগ সেই এলাকায় করা যায় এমন বেশ কিছু পরীক্ষা করতে বলা হয়। দালাল বেশ মোটা পারিশ্রমিক পায় আর মনে মনে ভাবে এরপরের রুগীটিও এই স্যারকে দেখাবো। আর সেই নীতি বাগীশ নতুন বিশেষজ্ঞ টি মাছি মারতে থাকেন এবং এক সময় সেন্টার মালিক জানান, ‘স্যার রুগী তো হচ্ছে না, আমরা বরং রুগী আসলে আপনাকে কল দিব’ অর্থাৎ ‘আপনার মত অপদার্থ ডাক্তার দিয়ে আমাদের চলবে না। আপনি ভাগেন। আমরা অন্য বুদ্ধিমান ডাক্তার বসাব’।
শুরু হয় আমাদের অন্যায়ের হাতেখড়ি। ডাক্তার সাহেব তখন একটি কম্প্রোমাইজ ফর্মুলা বের করেন। আপাততঃ দালাল কে খুশী করে রুগী দেখা শুরু করেন। রুগী যখন বাড়বে, যখন পসার জমবে তখন না হয় আর ওদের কথা শুনবো না। এভাবে রুগী একসময় বাড়ে। সেন্টারের ও নাম ধাম বাড়ে। বেশ কিছু রুগী সেই সেন্টারের নামেই আসে। ‘ওখানে গেলে ভালো ডাক্তার পাওয়া যায়’। ফলে সেই সেন্টারের নিজস্ব ‘গুড উইল’ এর কারণে কিছু রুগী তৈরি হয়। এই রুগী গুলো কোথায় যাবে কিংবা কাকে দেখাবে তা নির্ভর করে রিসেপশানে যারা থাকে তাঁদের ওপর। অনেক সময় সেই সেন্টারের ম্যানেজমেন্ট এর ওপর।
নতুন যে ডাক্তার বসছেন, তাকেই দেয়ার চেষ্টা হয়, যেন তাঁর পসার হয়। অনেক সময় এই লোভেও ডাক্তাররা একটু নামী দামী সেন্টারে বসার চেষ্টা করে। তবে অন্য টাও হয়। যিনি খুব বেশী পরীক্ষা করতে দেন তাকেই রুগী দেয়া হয়। রিসেপশানেও তেমনটা বলা থাকে। আবার কোন কোন ডাক্তার মাঝে মাঝে রিসেপশানে বসা ছেলে মেয়ে গুলোকে নিয়মিত মাসহারা দিয়ে তাঁদেরকে হাতে রাখে। মোদ্দা কথা এই রুগী পেতে হলে ডাক্তার সাহেবকে কিছু কাঠ খড় আর পুরোপুরি বিবেক বিসর্জন হবে। পরিণতি? ডাক্তার সাহেবের জন্য খুব খারাপ না। চিকিৎসা দিয়ে রুগী ভালো করে তাঁর নিজের পসার বাড়াতে থাকেন। একসময় হয়তো রুগী পাওয়ার জন্য তাকে আর কারো মুখাপেক্ষী থাকতে হয় না। রুগীই রুগী আনতে থাকে।
এরপর কি ডাক্তার সাহেব সৎ হয়ে যান? অতিরিক্ত পরীক্ষা দিয়ে রুগীর অজথা পয়সা খরচ করানোয় বিরাম আনেন? অন্যায় পথচলা কি এখানেই শেষ হয়? বরং উল্টোটা ঘটে। ডাক্তার সাহেব এবার ভাবেন, এখন তো আর কোন দালাল আমার কাছে রুগী আনছে না। এখন তো রুগী গুলো আমার পসারের কারণে আমার কাছে আসছে। তবে পরীক্ষা নিরীক্ষা করার কমিশন ‘দালাল’ কেন নিবে। এগুলো তো আমার প্রাপ্য। সেন্টার মালিক কিংবা ম্যানেজার কে ডেকে পাঠায়। ‘এখন থেকে ফ্লোটিং রুগীগুলোর ইনভেস্টিগেশানের কমিশন আমি নেব’। এখন ডাক্তার সাহেবের পায়ের নীচে বেশ শক্ত মাটি। ডাক্তার সাহেব কে হাত ছাড়া করা যাবে না। ‘তথাস্তু’ বলে সেন্টার মালিক মেনে নেয়। শুরু হয় ডাক্তার সাহেবের নিজস্ব পথচলা।
(চলবে)
©somewhere in net ltd.
১|
০৯ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ রাত ৯:৩৯
এেলােমেলা সব বলেছেন: আপনাকে সাধুবাদ ।