নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সৌরভ

ডি.এস আলম সৌরভ

ফুলটাইম ঊদাস

ডি.এস আলম সৌরভ › বিস্তারিত পোস্টঃ

নিরুদ্দেশ ভালোবাসা

২৬ শে মে, ২০১৩ সকাল ৮:২৪

বিয়ে বাড়িতে এত হইচই ই বলে দেয় আজকের দিনটা কতটা আনন্দ আর উৎসবের।সবার মনের এতটা আনন্দ দেখে নিজের সব দুঃখ ভুলিয়ে নিলাম।আজ থেকে বছর দুয়েক আগে ঊপমা বলেছিল সে আমাকে ছাড়া আর কাউকে ভালোবাসবেনা কাউকে বিয়ে করবে না !ভালোবেসে আমরা দুজন সবসময় পাশে থাকবো সুখে দুঃখে।সেদিন থেকেই আমরা দুজন দুজনার।সাদা দেয়ালটায় হেলান দিয়ে কথাগুলো ভাবতে ভালোই লাগছে সোহাগের পাশ থেকে কে"ঐ মিয়া বিয়া বাইত আইছো এত মন কালা ক্যা ?

লোকটার কথার উত্তর না দিয়ে বেরিয়ে যায় সোহাগ।জগৎ এর সব বিষণ্ণতা আজ তাকে ঘিরে ফেলেছে।যেন পালাবার কোন পথ নেই।কিছুক্ষণ বাদে এত ভালোবাসা আর স্বপ্নে বোনা বিয়ের লাল শাড়িতে কনের বেশে উপমা চলে যাবে শ্বশুরবাড়ি তবে অন্য কারো হাত ধরে।আমি যদি হিন্দু হতাম তাহলে উপমা আমার সাথেই যেত আজকের রাতে।রাত গভীরের দিকে এগুচ্ছে আর মনটাকে পোড়াচ্ছে।কিছুক্ষণ বাদেই সাঁতপাকে বাধা পড়বে ও ,ভাবতে খারাপের চেয়ে বেশি লাগছে।কোনকিছুর আশায় নয় প্রিয়জনটা কী করে আমার সাথে এত বড় গেম খেলতে পারলো?জানিনা;সেটা দেখার জন্যই আজ এসেছি উপমার বিয়েতে।হিন্দুবাড়ির বিয়ে বেশ ঢাকঢোল পেটানো হচ্ছে ।ঢাকের কাঠিগুলে ঢাকের উপরে আঁছড়ে পরে বিকটে আওয়াজে ধ্বনিত হচ্ছে তার চেয়ে বেশি বেগে ধ্বনিত হচ্ছে উপমার প্রতি আমার ঘৃণামাখা ভালোবাসা। কী করে পারলো ভুলে যেতে সেই বিকেলগুলোর কথা ।বিয়ে বাড়িতে আসা উচিত হয়নি হয় মনটা খুব খারাপ হয়ে গেল।কী করবো ?বুঝতে পারছিনা ! বিয়েতে ডিষ্টার্ব করলে বিয়েটা ভেঙে যেতে পারে'' আর বিয়ে ভেঙে লাভ নেই কারণ ;এ বিয়ের সুখে আমার ভালোবাসার মানুষ উপমার ইচ্ছা রয়েছে বলে জেনেছি।একসপ্তাহ ধরে কথা নেই ,শুধু একটা এস.এম.এস পেলাম যেটা গ্রেনেডের মত একপাশ ক্ষতবিক্ষত করা দিয়েছে আমাকে "ক্ষমা করে দাও সোহাগ ,আমি পারলাম না তোমাকে আপন করতে।আমার বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে ,বাবার মতের বিরুদ্ধে কথা বলতে পারবোনা বলেই বিয়েতে রাজি হয়েছি .তুমি অন্য কাউকে খুঁজে নিয়ো,আমি তোমাকে ভালোবাসি এক হতে পারলাম না ।ক্ষমা করে দিয়ো সোহাগ-" ম্যসেজের পর কথা বলার অনেক চেষ্টা করেছি কিন্তু পারিনি।তবে বিয়ের কার্ডটা পাওয়াতে বিয়ে বাড়িতে হাজির ,প্রিয়মানুষটাকে শেষবারের মত চিরবিদায় জানাতে নয় দেখতে এসেছি।ওর বিয়ের পর আমি আত্মহত্যা করবো ঠিক করেছি এসব আজগুবি কথা ভাবতে ভাবতে সোহাগ বিয়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে গিয়ে পাড়ার সামনের হোটেলটায় বসে চায়ের অর্ডার দেয় ভাবে।চা খেয়ে আছ চলে যাবে আজ;'বিয়ে খাবেনা।হোটেলে বসেই কতই না কথা আর গল্প হত উপমার সাথে।আজ সে নেই বাট্ আমি আছি এক কাপের চায়ের সাথে ।চায়ের রংটা লালচে কিছু না বলেই চা আর সিঙ্গারা না খেয়ে বের হলাম।মোবাইলে ম্যসেজ পুত পুত বুঝতেছিনা এত বিপদের সময় কে দ্যায় ম্যাসেজ ?ফোন দিয়ে দুটো মিনিট কথা বলা যায় না?হতদরিদ্র দেশে কলরেটের সাশ্রয়ী বিজ্ঞাপন কি চোখে পড়েনা,'নাকি মোবাইল কোম্পানির অ্যাডের নতুন অফার সমৃদ্ধ বিজ্ঞাপনী ম্যাসেজ ?সব রহস্য বিলীন করে ফোনের স্ক্রিনে তাকিয়ে অবাক এ কী ?'এতো উপমার ম্যাসেজ ! , "তাড়াতাড়ি গাবতলীর গ্রীণ লাইনের কাউন্টারে আসো,সাথে পারলে কিছু নিয়ে এসো " ব্যাস সঙ্গে রিপ্লে আমি আসছি ওয়েট করে বিশ মিনিট।বাসায় গিয়ে গুছিয়ে নিলাম লাগেজে কাপড় চোপড় আর কিছু টাকা।রাস্তায় বেরিয়ে আবারো হতাশায় কাতরতা সি.এন.জি বা ট্যাক্সি ক্যাবের দেখা নেই।বহু কষ্টে পাওয়া ক্যাবে একশো টাকা বেশি ভাড়া দিতে রাজি হয়ে তবেই পৌছোলাম।লাগেজ নিয়ে কাউন্টারে গিয়ে দেখি ওমা উপমা কই ?এখানে দেখি কেউ নেই ।মাথার সব রাগ মুহূর্তেই সারাগায়ে রক্তের মতই ছড়িয়ে পড়ল।এখন কী করি?এভাবে বারবার নাহ্ আর নয় কত ধোকা দিবে আর উপমা মনের অজান্তে ভাবে সোহাগের অবচেতন মন।কাউন্টার থেকে বেরিয়ে ফোন দিলাম কোথায় কেউ কথা বলেনা ফোনের ওপাশ থেকে।চারপাশে কেউ নেই কাউন্টারে, ঘাড়ে শক্ত করে কে যেন চেপে ধরেছে হাত ছাড়াতে না পারে এবার পেছনে তাকানোর আগেই পারাপার দুগালে চড় বসে গেল।যখন দেখি আরে উপমা যে ,তখন আর পাল্টা জবাব দেয়ার সাহস পেলাম না।মুখদুটো বিষের মত করে উপমার সাহসখচিত চোখ "সময়জ্ঞান কবে হবে তোমার সোহাগ?এত লেট করলে ক্যান ?তোমার জন্যই তো কক্সবাজারের বাসটা মিস করলাম-" সোহাগের গলায় আওয়াজ বেরোয় না তবুও বলে না এমনি ,চলো যাই।বিয়ে থেকে পালালে কেন উপমা ? উপমার হাসি মুখে জবাব "একটা ছেলেকে খুব ভালোবাসি বুঝলেন সোহাগ সাহেব ?তাই তাকে ছাড়া অন্য কাউকে বিয়ে করা সম্ভব নয়।

-হুম উপমা ।তাহলে থাকো আমি যাই ?

-অ্যারি আজব কই যাও তুমি সোহাগ,বোকা ছেলে এটাও বোঝেনা ,আমি তো তোমার কথাই বলছিলাম !

সোহাগের চোখে আকাশছোয়া নীল হাসি ,"সত্যি?" উপমাও বলে ;রসিকতার সুরে না এমনি ফান করলাম,'এতদিন লাগলো গাধা যে আমি তোমাকে ভালোবাসি '!এটা তুমি বোঝনা?

',অশ্রুর বাঁধা উপেক্ষা করে উপমাকে জড়িয়ে কাঁদতে থাকে সোহাগ।

চলো এবার যাওয়া যাক বলে বাসের সিটে চেপে রওনা নিরুদ্দেশ গন্তব্যে যেখানে থাকবেনা ধর্ম আর ভালোবাসার বিরোধ থাকবে শুধুই তুমুল ভালোবাসা।গভীর রাতের আকাশে তারাগুলো বাসের জানালোর কাঁচভেদ করে সোহাগ আর উপমার ঐশ্বরিক ভালোবাসার দিকে তাকিয়ে লজ্জায় মুখ ফিরিয়ে নেয়।ভালোবাসা কোন বাঁধা নয়,ভালোবাসা হল সকল সামাজিক,ধর্মীয় আর সকল বাঁধ ভাঙার এক অলৌকিক অদৃশ্য শক্তি।রাতের সৌরভের স্নিগ্ধ আলোয় গোলাপের গন্ধের সবটুকুই তাই ভালোবাসার মানুষগুলোর জন্য সৃষ্টিকর্তার এক অপার উপহার।



-ডি .এস আলম সৌরভ

-১১ই মে ,01:11PM

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.