নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

লেলিহান শিখা

েশখ েসিলম

I am a critique.

েশখ েসিলম › বিস্তারিত পোস্টঃ

বিগত সরকারের দুর্নীতিঃ সিএমসি কামালের শেয়ারের দরবৃদ্ধি!

০৩ রা ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ সকাল ৮:১৬

পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত বস্ত্র খাতের কোম্পানি সিএমসি কামালের শেয়ারের দর গত দুই বছরে অস্বাভাবিক বেড়েছে। আর এ সময় নিজেদের শেয়ার বিক্রি করে বিপুলভাবে লাভবান হয়েছেন প্রতিষ্ঠানটির উদ্যোক্তারা। সিএমসি কামাল লোটাস-কামাল গ্রুপের একটি সহযোগী প্রতিষ্ঠান। আর এ গ্রুপের প্রেসিডেন্ট ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা অর্থ মন্ত্রণালয়-সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগের অর্থ সম্পাদক আ হ ম মুস্তফা কামাল। এ ছাড়া তিনি বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) সভাপতি।



কোম্পানিটির শেয়ারের দর অস্বাভাবিক বাড়লেও বর্তমান সরকার ক্ষমতা গ্রহণের কয়েক দিন আগেও কোম্পানিটির ১০০ টাকা অভিহিত মূল্যের প্রতিটি শেয়ারের দর ছিল মাত্র ৪০ টাকা। অথচ অভিহিত মূল্য ১০ টাকায় পরিবর্তন করার পর যা প্রায় ৩০০ টাকা পর্যন্ত ওঠে। ১০০ টাকা অভিহিত মূল্যের হিসাবে যা প্রায় তিন হাজার টাকার সমান। এর অর্থ, এ সময়ে শেয়ারটির দাম বেড়েছে প্রায় ৭৫ গুণ। অথচ প্রতিষ্ঠানটি এর আগে পর পর পাঁচ বছর কোনো লভ্যাংশ দিতে পারেনি। এমনকি পর পর দুই বছর বার্ষিক সাধারণ সভাও (এজিএম) অনুষ্ঠিত হয়নি।



শেয়ারের এ অস্বাভাবিক দর বাড়ার কারণ নিয়ে শেরেবাংলা জাতীয় স্টেডিয়ামে বিসিবি সভাপতির কার্যালয়ে গত সোমবার মুস্তফা কামালের সঙ্গে প্রথম আলোর দুই প্রতিবেদকের দীর্ঘ সময় কথা হয়। তিনি বলেন, ‘কেবল আমাদের কোম্পানির শেয়ারের দামই নয়, সাম্প্রতিক সময়ে বাজারে সব ধরনের কোম্পানির শেয়ারের দামই বেড়েছে। চাহিদার তুলনায় শেয়ারের সরবরাহ কম থাকায় অনেক কোম্পানির শেয়ারই তার মৌলভিত্তির চেয়ে বেশি দামে লেনদেন হয়েছে। এ কারণে আমি অনেকবার সংসদীয় কমিটির বৈঠক থেকে বাজারে শেয়ার সরবরাহ বাড়ানোর কথা বলেছি।’



ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) সূত্রে জানা গেছে, অস্বাভাবিক দাম বাড়ার মাঝপথে সিএমসি কামালের পাঁচজন উদ্যোক্তা মোট দুই লাখ ২৫ হাজার ৮৭৩টি শেয়ার বিক্রি করেছেন। ওই সময়ের বাজারমূল্য হিসাবে (এক হাজার ২০০ টাকা) যার আর্থিক মূল্য প্রায় ২৭ কোটি টাকা। উদ্যোক্তারা শেয়ার বিক্রির আগে কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদের পক্ষ থেকে বোনাস লভ্যাংশ ঘোষণা, সম্পদ পুনর্মূল্যায়ন, রাইট শেয়ার ইস্যুসহ শেয়ারের অভিহিত মূল্য পরিবর্তনের মতো মূল্য সংবেদনশীল তথ্য প্রকাশ করা হয়। শেয়ারবাজার সম্পর্কে মন্তব্য করতে গিয়ে মুস্তফা কামাল গত ৮ ফেব্রুয়ারি বলেছেন, ‘সূচক তিন-চার হাজারে নেমে না আসা পর্যন্ত কেউ না কেউ ক্ষতিগ্রস্ত হবে।’ তাঁর এ বক্তব্যে ক্ষুব্ধ সাধারণ বিনিয়োগকারীরা রাজপথে বিক্ষোভ করেন। এই বক্তব্যের পর সিএমসি কামালের শেয়ারের অস্বাভাবিক দর বাড়ার বিষয়টি নিয়েও ব্যাপক আলোচনা হচ্ছে। একাধিক বাজার বিশেষজ্ঞ নাম প্রকাশ না করার শর্তে এ বিষয়ে প্রথম আলোকে বলেন, নানা পন্থায় শেয়ারের দাম বাড়িয়ে ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করা হয়েছে। আর এতে শেষ পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি লাভবান হয়েছেন উদ্যোক্তারাই। দর বাড়ানোর পেছনে রাজনৈতিক প্রভাবও কাজে লাগানো হয়েছে এ ক্ষেত্রে।



এ বিষয়ে অনুসন্ধানে জানা যায়, ২০০৭ ও ২০০৮ সমাপ্ত বছরে কোম্পানিটি কোনো এজিএম করেনি। এ সময় বেশ কিছুদিন কোম্পানির উৎপাদন কার্যক্রমও বন্ধ ছিল। পরে ২০০৯ সালে উচ্চ আদালতের অনুমোদনক্রমে একই দিনে দুই বছরের বকেয়া এজিএম করে কোম্পানিটি। এজিএম করলেও এ সময় সাধারণ শেয়ারধারীদের কোনো লভ্যাংশ দেওয়া হয়নি। কিন্তু ২০১০ সালের ৭ জুন প্রতিষ্ঠানটি ২০০৯ সালে সমাপ্ত বছরের জন্য ১০ শতাংশ বোনাস শেয়ার লভ্যাংশ হিসেবে ঘোষণা দেয়। এ সময় কোম্পানিটির পক্ষ থেকে জানানো হয়, প্রতিষ্ঠানের বার্ষিক মুনাফা দাঁড়িয়েছে এক কোটি ৭৩ লাখ টাকা। এ হিসাবে শেয়ারপ্রতি আয় বা ইপিএস দেখানো হয় ১০ টাকা ছয় পয়সা। অথচ একই বছরের প্রথম ছয় মাসে, অর্থাৎ ৩০ জুন ২০০৯ পর্যন্ত প্রতিষ্ঠানের অর্ধবার্ষিক হিসাবে ৮৯ লাখ ৯০ হাজার টাকা লোকসান দেখানো হয়। ওই পর্যন্ত কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি লোকসান ছিল পাঁচ টাকা ২২ পয়সা।

কোম্পানির উৎপাদন কার্যক্রম বন্ধ থাকা প্রসঙ্গে মুস্তফা কামাল বলেন, ‘তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় আমাকে দুই বছর জেলে আটক রাখা হয়েছিল। ওই সময় কিছুদিন কোম্পানির উৎপাদন কার্যক্রম বন্ধ ছিল। জেল থেকে বেরিয়ে আসার পর উৎপাদন কার্যক্রম স্বাভাবিক রয়েছে।’



লভ্যাংশ ঘোষণার আগে সিএমসি কামালের প্রতিটি শেয়ার ২৪০ থেকে ২৮০ টাকা দরে লেনদেন হতো। লভ্যাংশ ঘোষণার পরপরই দাম এক লাফে ৪০০ টাকার ওপরে চলে যায়। এরপর ২০১০ সালের ১৮ জুলাই শেয়ারটি ইলেকট্রনিকস পদ্ধতিতে লেনদেন উপযোগী করতে অজড়করণ (ডিম্যাট) করার পাশাপাশি অভিহিত মূল্য পরিবর্তনের ঘোষণা দেওয়া হয়। এ সময় শেয়ারের মার্কেট লট ৫০টির পরিবর্তে ২৫০টি নিয়ে গঠনেরও ঘোষণা আসে। একই বছরের ২০ সেপ্টেম্বর কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদ একটা সাধারণ শেয়ারের বিপরীতে দুটি রাইট শেয়ার দেয়। একই সঙ্গে কোম্পানির সম্পদ পুনর্মূল্যায়নেরও ঘোষণা দেওয়া হয়। এ ঘোষণা আসার পর থেকে শেয়ারটির দাম অস্বাভাবিক গতিতে বাড়তে শুরু করে এবং সেপ্টেম্বর মাসের মধ্যেই তা ৮৫০ টাকা ছাড়িয়ে যায়।

এ পর্যায়েই কোম্পানির উদ্যোক্তারা শেয়ার বিক্রি শুরু করেন। ৩০ সেপ্টেম্বর উদ্যোক্তা প্রতিষ্ঠান সাবিনকো ৩৫ হাজার ১২৩টি শেয়ার বিক্রির ঘোষণা দেয়। ৪ অক্টোবর এক ঘোষণায় কোম্পানির অন্যতম পরিচালক ও মুস্তফা কামালের ছোট ভাই গোলাম সারোয়ার পাঁচ হাজার ২৫০টি শেয়ার বিক্রির ঘোষণা দেন। এর এক দিন পরে, অর্থাৎ ৫ অক্টোবর আরেক পরিচালক ও মুস্তফা কামালের কন্যা নাফিসা কামাল ১৭ হাজার ১৫০টি বোনাস শেয়ারসহ মোট এক লাখ ৩৬ হাজার ৯০০টি শেয়ার বিক্রি করেন। একই পরিচালক ২৮ অক্টোবর আরেক ঘোষণায় সাত হাজার ১০০টি শেয়ার বিক্রি করেন। আর ২১ অক্টোবর মুস্তফা কামাল ও তাঁর স্ত্রী কোম্পানির পরিচালক কাশ্মিরী কামাল যথাক্রমে ২৩ হাজার ৫০০টি ও ১৮ হাজার বোনাস শেয়ার বিক্রির ঘোষণা দেন।

নিয়ম অনুসারে ঘোষণা দেওয়ার এক মাসের মধ্যে এসব শেয়ার বিক্রি সম্পন্ন করতে হয়। বিক্রির ঘোষণা আসার পর থেকে বিক্রির মেয়াদ শেষ হওয়ার আগ পর্যন্ত শেয়ারটি বাজারে সর্বনিম্ন এক হাজার ১৮০ থেকে এক হাজার ৬০০ টাকায় লেনদেন হয়েছে। যদি প্রতিটি শেয়ার গড়ে এক হাজার ২০০ টাকায়ও বিক্রি হয়, তাহলেও মুস্তফা কামালের পরিবারের সদস্যরা প্রায় ২৩ কোটি টাকার শেয়ার বিক্রি করেছেন। অথচ সিএমসি কামালের পরিশোধিত মূলধন মাত্র ১৮ কোটি ৮০ লাখ টাকা। এর মধ্যে মুস্তফা কামালের পরিবারের সদস্যদের বিনিয়োগের পরিমাণ মাত্র সাত কোটি টাকা।



দাম বাড়ার পর শেয়ার বিক্রির বিষয়ে মুস্তফা কামাল বলেন, ‘আমরা কোনো উদ্যোক্তা শেয়ার বিক্রি করিনি। লভ্যাংশ হিসেবে যে বোনাস শেয়ার পাওয়া গিয়েছিল, সেটাই বিক্রি করা হয়েছে। উদ্যোক্তা বা পরিচালকদের শেয়ার বিক্রির যে নিয়ম রয়েছে, তা যথাযথভাবে পরিপালন করা হয়েছে। এমনকি আমার মেয়ের বাজার থেকে কেনা সাধারণ শেয়ার বিক্রির সময়ও ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘শেয়ার বিক্রির মাধ্যমে আমরা বিনিয়োগকারীদের একটা বার্তা দিতে চেয়েছি যে, উদ্যোক্তারা যেখানে শেয়ার বিক্রি করছেন, সেখানে শেয়ারটির দাম বাড়ার উল্লেখযোগ্য কোনো কারণ নেই। কিন্তু তাতেও কোনো কাজ হয়নি। এ অবস্থায় আমি এসইসির চেয়ারম্যানকে বাজার নিয়ন্ত্রণের জন্য “প্রাইস ব্রেকার” বসানোর পরামর্শ দিয়েছিলাম। যাতে কোনো শেয়ারের দাম একটি নির্দিষ্ট মূল্য-আয় অনুপাতের (পিই) বাইরে চলে গেলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে লেনদেন বন্ধ হয়ে যায়।’

বাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (এসইসি) সম্প্রতি সিএমসি কামালের রাইট শেয়ার ছাড়ার প্রস্তাব অনুমোদন করেছে। কোম্পানিটি মোট তিন কোটি ৭৮ লাখ ৪০ হাজার রাইট শেয়ার বাজারে ছাড়বে। এর মাধ্যমে বাজার থেকে সংগ্রহ করা হবে ৬৬ কোটি ২২ লাখ টাকা। সাত টাকা প্রিমিয়ামসহ প্রতিটি রাইট শেয়ারের দাম চাওয়া হয়েছে ১৭ টাকা। গত মঙ্গলবার ছিল রাইট শেয়ারের জন্য মনোনীত শেয়ারহোল্ডারদের চিহ্নিত করার জন্য নির্ধারিত দিন বা রেকর্ড ডেট। উদ্যোক্তাদের কাছে বর্তমানে মোট এক কোটি ২৯ লাখ ৯২ হাজারের বেশি শেয়ার রয়েছে।



বাজার বিশ্লেষণে দেখা গেছে, মুস্তফা কামাল অর্থ মন্ত্রণালয়-সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির চেয়ারম্যান নিযুক্ত হওয়ার পর জেড গ্রুপে (যারা লভ্যাংশ দেয় না) থাকা সিএমসি কামালের দাম বাড়তে শুরু করে। ২০০৮ সালের ১৭ ডিসেম্বর কোম্পানিটির প্রতিটি শেয়ারের দর ছিল মাত্র ৪০ টাকা। এর মাত্র ২০ দিন পর বর্তমান সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পরের দিন ২০০৯ সালের ৭ জানুয়ারি ১০০ টাকা অভিহিত মূল্যের প্রতিটি শেয়ার সর্বোচ্চ ৫৩ টাকায় বিক্রি হয়েছে। অভিহিত মূল্য পরিবর্তনের পর গত নভেম্বর মাসের শেষভাগে যা ২৯০ টাকা পর্যন্ত লেনদেন হয়েছে।



সিএমসি কামালের সম্পদ পুনর্মূল্যায়ন ও অভিহিত মূল্য পরিবর্তনের মতো মূল্য সংবেদনশীল তথ্য শেয়ারের দাম বাড়ানোর জন্য উদ্দীপক (সুইটেনার্স) হিসেবে কাজ করেছে—এ প্রশ্নের জবাবে মুস্তফা কামাল বলেন, ‘আইনি কাঠামোর মধ্যে থেকেই কোম্পানির সম্পদ পুনর্মূল্যায়ন করা হয়েছে। তা ছাড়া এটি কেবল সিএমসি কামাল করেছে, এমন নয়। অন্য কোম্পানিও করেছে। আর অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে যখন সব কোম্পানির শেয়ারের অভিহিত মূল্য পরিবর্তনের ব্যাপারে অনাপত্তি দেওয়া হলো, তখনই আমরা এটা করেছি। তার আগে নয়।’

মন্তব্য ১ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ০৩ রা ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ সকাল ৮:২৭

হাসিব০৭ বলেছেন: কিচ্ছু বলার নেই

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.