নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সত্যের সন্ধানে

দুর্জয় তারুণ্য

যেখানে গভীর শূন্যতা , যেখানে অন্তহীন কোন পথের শুরু সেখানেই আমার অস্তিত্ব। আমি আঁধারের ব্যাক্তিগত অহংকার ।আমি বৈরাগ্যের ভ্রান্তি। অসম্পূর্ণ ছায়ামাত্র! আমি ব্যাথিত , ব্যর্থ নই। আমি রৌদ্রের মতো অভিকর্ষহীন ,অনুভূতিহীন নই।

দুর্জয় তারুণ্য › বিস্তারিত পোস্টঃ

দুর্জয় তারুণ্য জাগ্রত করে মূঢ় চৈতন্য

২২ শে নভেম্বর, ২০১৪ রাত ১২:৪৯

বাংলাদেশে ধর্ষণ ও যৌন নিপীড়নের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ অনেকবারই গড়ে উঠেছিল। কিন্তু অপর্যাপ্ত আইন এবং শিক্ষা ব্যবস্থায় সামাজিক শিক্ষা না থাকায় এসব বিকৃত লালসা দিন দিন বেড়েই চলেছে। স্কুল কলেজগামী ছাত্রীসহ বিভিন্ন বয়সী নারীদের ইভটিজিংয়ের মাধ্যমে অশ্ল¬ীল আচরণ, চাহনি, অযাচিত ইঙ্গিত, অযাচিত স্পর্শ, কুৎসিৎ ভাষার প্রয়োগ, টিপ্পনী ইত্যাদি যৌন হয়রানি আজ চরমে পৌঁচেছে। সামাজিকভাবে কোন প্রতিরোধ না থাকায় দিন দিন এ ধরনের নির্যাতন ক্রমশ বাড়ছে এবং এক পর্যায়ে এসব ছাত্রী-তরুণীরা নির্যাতন থেকে মুক্তি পাওয়ার আশায় আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়। বর্তমানে চাঞ্চল্য সৃষ্টিকারী নারী সহিংসতার কথা মিডিয়ার মাধ্যমে ব্যাপকভাবে প্রচারিত হচ্ছে।
‘ইভটিজিং’ শব্দটিকে এখন শুধু নারী বা ছাত্রী উত্ত্যক্তকরণের মধ্যেই সীমাবদ্ধ রাখা যায় না। বখাটেদের উত্ত্যক্তকরণের সীমা মাত্রা ছাড়িয়ে গিয়েছে। এখন ইভটিজিংয়ের পাশাপাশি চলছে ইভটিজিং প্রতিরোধকারীদের ওপর হামলা; অত:পর হত্যা। অকুতোভয় এই খুনিরা নির্যাতিত নারীদের বাবা-মা, ভাই, বয়োজ্যেষ্ঠ আত্মীয়-স্বজন এমনকি শিক্ষকদের অবলীলায় হত্যা করছে। প্রশাসনের নাকের ডগায় তারা এসব অপকর্ম তারা চালাচ্ছে। চাক্ষুস প্রমাণও রয়েছে প্রচুর। কিন্তু তাদের বিরুদ্ধে কেউ সাক্ষী হতে চায় না। কারণ তারা দেখছে, প্রশাসন নিরাপত্তা প্রদানে অপারগ। মৃদু সাজাপ্রাপ্ত এই ঘাতকেরা আবারও হয়ে উঠছে দুর্দমনীয়, অকুতোভয় হত্যাকারী। ৭১ এ জীবন বাজি রাখা সকল সৎ, সাহসী, নির্ভিক মানুষের চেতনাধারণকারী মানুষেরা হয়ে যান কোণঠাসা। ঠিক এসময়ই নিরাপত্তাহীনতায় জুবুথুবু মানুষদের মধ্য থেকে হঠাৎ রুখে দাঁড়ানো কেউ হয়ে উঠেন কিংবদন্তি। নমস্য তাঁরা, সমাজের বিবেককে তাঁরা দিয়ে যান কষাঘাত। মানুষ জেগে ওঠে, সংগঠিত হয়, প্রতিবাদ করে এবং অপরাধীর শাস্তি দাবি করে। এ পর্যন্তই। থানায় অভিযোগ দাখিলের পরেও বখাটে সন্ত্রাসীদের অপকৃষ্ট তৎপরতা না থামায় জনগণের যুযুৎসা স্তমিত হয়ে যায় এবং সন্ত্রাসীরা আরো বেপরোয়া হয়ে উঠে।
অসামান্য সাহসী এবং নিঃস্বার্থ মহাপ্রাণ শিক্ষক মিজানুর রহমান তাঁর মৃত্যুর মধ্য দিয়ে যখন দেশে প্রতিবাদের ঝড় তুলেছেন, ঠিক তখনই বখাটে কর্তৃক মেয়েকে উত্ত্যক্ত করার প্রতিকার চাওয়ায় মায়ের প্রাণ কেড়ে নিল বখাটে নির্যাতকরা। মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী সেই পরিবারের সাথে দেখা করতে গিয়ে বলেছেন, “ইভটিজিং রোধে কঠোর আইন প্রণয়ন করা হচ্ছে।” এসব আশার বাণী বেশ কিছুদিন ধরেই শোনা যাচ্ছে। নতুন আইন বা কঠোর আইন প্রণয়নের প্রহর আমরা গুণছি। কিন্তু খুনি বা নির্যাতনকারীদের জন্য কী একটা দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেয়ার আইন আমাদের নেই! প্রশাসন অবশ্যই অবগত যে, নির্যাতনকারীদের এই মুহূর্তে আইনগত ভাবে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি সমাজে অত্যন্ত প্রয়োজন। চাঁপা রানী হত্যাকারী দেবাশীষ সাহা রনি কিছুদিন আগে আরেকজন মেয়েকে অপহরণ করেছিল (২৮ অক্টোবর ’১০, দৈনিক প্রথম আলো)। মিজানুর রহমান হত্যাকারী রাজন কলেজ ছাত্র দোহা হত্যা মামলার একজন আসামী (২৫ অক্টোবর ’১০, দৈনিক প্রথম আলো)। পরিকল্পিত এই হত্যাকান্ডের বিচারের জন্য ইভটিজিং বিরোধী কোন নতুন আইনের প্রয়োজন আছে বলে মনে হয় না। দেশের প্রচলিত আইন অনুযায়ী যদি তাদের সঠিক বিচার হতো তাহলে হয়তো একজন শিক্ষক, একজন কর্মজীবী মাকে অসময়ে প্রাণ দিতে হতো না।
যৌন নিপীড়ন অর্থাৎ ইভটিজিং নামক এই সামাজিক ব্যাধিকে দূর করতে হলে সরকারকে সর্বাত্মকরণে এগিয়ে আসতে হবে এবং বিরোধী দলসহ সকল জাতি, ধর্ম, বর্ণ ও শ্রেণী- পেশার মানুষকে অংশগ্রহণ করতে হবে। বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সময় প্রণীত “নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন-২০০০” এ ইভটিজিং সংক্রান্ত ধারায় শাস্তির ব্যাবস্থা রাখা হয়েছিল। এরপর বিএনপি-জামাত জোট সরকার সেই আইন সংশোধন করে ইভটিজিং সংক্রান্ত ধারাটি বাদ দিয়ে দেয়। এমনকি তৎকালীন একজন প্রভাবশালী মন্ত্রী পর্যন্ত বিষয়টিকে তাচ্ছিল্য করে একজন নারী নেত্রীকে অপমান করেন (সূত্র: ২৭শে এপ্রিল ২০১০, দৈনিক সংবাদ)। বেগম রোকেয়া দিবস ২০১০ উপলক্ষে প্রধান অতিথির ভাষণে প্রধানমন্ত্রী নারীর পোশাকে শালীনতা আনা এবং ইভটিজিংয়ের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান জানান (১০ ডিসেম্বর ২০১০, দৈনিক আমাদের সময়)। তিনি অত্যন্ত ক্ষোভের সাথে অতি আধুনিকতার নামে একশ্রেণীর নারীর কথা বলেছেন যারা পোশাক-পরিচ্ছদ ও চালচলনে নিজের আব্রু রক্ষার প্রয়োজন মনে করে না। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সমীপে জিজ্ঞাসা, বাংলাদেশের অর্ধেক জনগোষ্ঠী নারীদের মধ্যে এই অতি আধুনিকাদের সংখ্যা শতকরা কত জন এবং ইভটিজিংয়ের কারণে নির্যাতিত আত্মহননকারী নারীদের মধ্যে শতকরা কতজন পোশাক-পরিচ্ছদ ও চালচলনে আব্রুহীন অতিআধুনিকা ছিলেন ? পরিবার-পরিজন, ধর্ম, সমাজ, রাষ্ট্র সবদিক থেকেই যখন নারীদের প্রতি অঙ্গুলি প্রদর্শন করা হয় তবে শুধু আইন প্রয়োগ করেই সামাজিক এই ব্যাধি থেকে পরিত্রাণ পাওয়া সম্ভব নয়। নারীদের প্রতি অঙ্গুলীহেলন না করে প্রচলিত আইনের আওতায় কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। গড়ে তুলতে হবে সামাজিক আন্দোলন। শাস্তি প্রদান করে বিপথগামী যুবকদের সাময়িকভাবে নিবৃত্ত করা গেলেও সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে ছড়িয়ে থাকা ক্যান্সারের এই জীবাণুকে সামাজিক প্রতিরোধ ছাড়া নির্মূল করা সম্ভব নয়।
আমাদের দেশের প্রচার মাধ্যমগুলো এ বিষয়টি নিয়ে দিনের পর দিন তাদের প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছে। জনগণ জানতে পারছে সামাজিক এই মহামারির ভয়াবহতা। মিডিয়ার কল্যাণে আমরা আরো জেনেছি, ১ বছরে ১২৬৯ উত্ত্যক্তকারীর বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ দেয়া হয়েছে। অথচ পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে মাত্র ৫২০ জনকে (সূত্র: ২৭শে এপ্রিল ২০১০, দৈনিক সংবাদ)। এদের বেশিরভাগকেই আবার মুচলেকার মাধ্যমে মুক্তি দেয়া হয়। এই গোষ্ঠী পরবর্তীতে আরো বেপরোয়া হয়ে মামলাকারীর বিরুদ্ধে হামলা চালায়। তারা মনে করে, নারীর প্রতি নির্যাতন করা, তাকে সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে রাখা তার জন্মগত অধিকার। এর বিরুদ্ধে যে কোন প্রতিরোধ তারা মেনে নিতে পারে না। তাদের মধ্যে মানবতাবোধ বলেও কিছু থাকে না। চরম নিরাপত্তাহীনতার ফলে বাধ্য হয়ে কোমলমতি তরুণীরা আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়।
জেলা প্রশাসকরা ইভটিজিং রোধে দ্রুত বিচার করার ক্ষমতা চেয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে যে প্রস্তাব পাঠিয়েছেন সেটা সঠিক ভাবে বাস্তবায়িত হলে অপরাধের মাত্রা অনেকটা কমানো সম্ভব। ২০০০ সালের আইনকে যুগোপযোগী করার লক্ষ্যে ২০০৩ (সংশোধিত) সালের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে ৫০৯ ধারায় আরো কিছু বিধান যুক্ত করা হয়। সামাজিক আন্দোলনকে বেগবান করার মধ্য দিয়ে সামাজের এই বিপর্যয়ের মোকাবেলা করা সম্ভব। এক্ষেত্রে দেশের প্রতিটি অঞ্চলে সমাজের সচেতন নাগরিক একত্রিত হয়ে বখাটে সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে প্রবল জনমত সৃষ্টি করতে পারে। কিছু সংস্থা, নারী সংগঠন ছাড়া দেশের প্রধান রাজনৈতিক দলগুলো বখাটে সন্ত্রাসী কর্তৃক ছাত্রীদের উত্তক্তকরণ প্রতিরোধ তেমন কোন পদক্ষেপ গ্রহন করে নি।
বর্তমানে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ইভটিজিং প্রতিরোধে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে একজন করে স্টুডেন্ট কাউন্সিলর নিয়োগের কথা চিন্তা করছে, এভাবে তরুণ সমাজের নৈতিক মূল্যবোধ গড়ে তুলতে হবে। কারণ বাংলাদেশের ইতিহাসের প্রতিটি ইতিবাচক অর্জনে রয়েছে তরুণদের গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকা। বৃটিশবিরোধী আন্দোলন থেকে শুরু করে ’৫২-এর ভাষা আন্দোলন, ’৬২-এর শিক্ষা আন্দোলন, ’৬৯-এর গণ-অভ্যুত্থান, ’৭১-এর মুক্তিযুদ্ধ ও স্বৈরাচারবিরোধী ’৯০-এর গণ-আন্দোলনসহ প্রিয় স্বদেশের স্বাধীনতার স্বপ্নপূরণে গণতান্ত্রিক, সুশাসিত ও দুর্নীতিমুক্ত দেশ গড়ার আন্দোলনে তরুণেরা অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে। এভাবে দুর্জয় তারুণ্য সম্মিলিতভাবে ইভটিজিং বিরোধী প্রবল জনমত গঠন করে মানব সম্পদ হিসেবে নারীকে গড়ে তুলে প্রগতি ও উন্নয়নের পথকে বেগবান করতে পারে।

মন্তব্য ১ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ০৮ ই ডিসেম্বর, ২০১৪ সকাল ১০:৪৮

অপূর্ণ রায়হান বলেছেন: আপনার নাম যদি Jamila Bupasha Click This Link না হয়, তাহলে বলবো কপি পেস্ট পোস্ট দিয়ে কিন্তু অন্তত সামহোয়্যারইন ব্লগে টিকতে পারবেন না।

হ্যাপি ব্লগিং :)

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.