![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
জানবে আমি শুধু আমি নই, আমি মানে অন্য কেউ কিংবা প্রতিবিম্ভ তোমাতে মিলিয়ে আমার সব সুখ।
ছোটবেলা থেকেই রমজান মাসটাকে আমার উৎসবমূখর মনে হত। চারিদিকে কেমন যেন একটা উৎসবের আমেজ বিরাজ করত। আমি অবশ্য এখন যে খুব একটা বড় তা নয়। সবে মাত্র ২৩ এ পা দিলাম। তবে আমার এই ক্ষুদ্র জীবনে গ্রামের ছেলে হওয়ার সুবাধে অনেক কিছুই দেখেছি। যা এখনকার দিনে শহরের ইটের স্তূপে বন্ধী বেড়ে উঠা আধুনিক ছেলেদের জন্য করাতো দূরের কথা চিন্তা করাও কষ্টসাধ্য।রমজান মাস প্রায় শেষ হতে চলল। তাই আমার এই লেখাটি শৈশবের রমজান মাস নিয়ে।
(ক) সেহরী পর্ব-
রাত যখন দুইটা বাজতো তখন দূর মসজিদ থেকে ভেসে আসতো মধ্য বয়স্ক মোয়াজ্জেনের চিরাচরিত কন্ঠটি " রোজদারীগণ উঠুন, সেহরী খান, রোজা রাখুন" তবুও ঘুম ভাঙ্গতে চাইত না এই কথা শুনার পর রাজ্যের যত ঘুম যেন আমার উপর চেপে বসতো। লেপটা যেন সবে মাত্র আরামদায়ক হতে শুরু করেছে। শেষে আম্মা-আব্বা নিতান্ত অনিচ্ছা সত্বে ডাকতে আসতো। যেন না উঠলে তারা বাঁচে। তবে শেষ মূহূর্তে গা ঝাড়া দিয়ে উঠে পড়তাম। তখন বাহিরের কলঘরে যখন মুখ ধূতে যেতাম, আশেপাশের ঘর থেকে হলুদ আলো সারা উঠানম্বয় ছড়িয়ে পড়তো। দেখতে বেশ ভালো লাগতো। আর হাঁড়ি-পাতিলের শব্দতো আছেই। তখন কোনভাবে শীতকে ফাঁকি দিয়ে তাড়াতাড়ি আধা মুখ ধূয়ে ঘরে ঢুকে পড়তাম।
খাওয়া-দাওয়া শেষ হলেই আমার ছোট্ট গ্যাং এর সদস্যরা বিভিন্ন অঙ্গভঙ্গিতে আমাকে ডাকতো। এটা হলো নামাজে যাওয়ার সিগন্যাল। যদিও নামাজটা মূল উ্দ্দেশ্য কখনোই ছিলো না। মাঝে-মাঝে ডাকতে আসলে আব্বা-আম্মার কাছে আমার গ্যাং সদস্যরা ধরা পরে যেত। তখন আমার নামাজের যাওয়াটা একটু অসুবিধা হত। তবুও আমাকে দমানো যেত না। শেষমেষ বেড়িয়ে পড়তাম। সাথে থাকতো শীতকে হার মানানোর পূর্ব প্রস্তূতী। আবার আমাদের গ্যাং এর যে সদস্য বের হয়নি তাকে ঘর থেকে বের করার জন্য চলতো নানা আয়োজন। শেষ মেষ প্রায় ১৪-১৫জনের একটা গ্রুপ হত। নামাজে গিয়ে চলতো নামাজের মধ্যে নানা দুষ্টামী। নামাজের পরে যে নামাজীরা আমাদেরকে বকাঝকা দিবে সেদিকেও আমাদের খেয়াল ছিলো। তাইতো সালাম ফিরিয়ে আমাদেরকে আর মসজিদে দেখা যেত না। আমরা যখন নামাজ পড়ে বের হতাম,তখন চারিদিক বেশ ঘুটঘুটে অন্ধকার থাকতো। কুয়াশা আচ্ছন্ন করে রাখতো চারিদিক। যত বেশী অন্ধকার থাকতো আমরা তত বেশী খুশী হতাম। ঘুরার মজাইতো অন্ধকারে। আমরা একেক দিন যেতাম একেক দিকে। বেশীর ভাগ যেতাম আনন্দ রাজার দীঘীতে। আমরা রাস্তা দিয়ে যেতে যেতে রাস্তার পাশের জলপাই গাছ থেকে জলপাই কুড়াতাম। আর আশেপাশে মালিককে না দেখলে দুই একটা ঢিল ছুড়ে দিতাম। তাতে মাঝে মধ্যে অনেক তাড়া খেতে হতো। আমরা সূর্য্য ওঠা পর্যন্ত এলাকা চড়ে বেরাতাম। যখন পূর্বের আকাশ একটু সাদা হয়ে আসতো, তখন আগে থেকে জমিয়ে রাখা খড়ে আগুন ধরিয়ে দিতাম। সবাই পুরো উদ্দ্যেমে আগুন পোহাতাম। মাঝে মধ্যে দুষ্টামীর বশে অন্যের জমিয়ে রাখা খড়ের গাধায় আগুন দিয়ে লাপাত্তা হয়ে যেতাম। পড়ে অবশ্য অনেক নালিশ যেত বাড়ীতে। তাতে কি? শৈশবের মজাকি তাই বলে থেমে থাকবে নাকি? যখন শেষ সময়ে বাড়ী ফেরার পালা তখন চলতে আরেক ধরনের খেলা। টিনের চালে ঢীল মেড়ে পালিয়ে যাওয়া। আমাদের মজা যখন শেষ হতো তখন আমরা বাড়ী ফিরতাম একে একে। আবার অপেক্ষা করতাম আগামীকালের জন্য। এভাবেই কেটে গেছে কতো দিন। এখন যা শুধুই স্মৃতি। মাঝে-মাজে মনে হয়, ইশ! যদি ঐ রঙ্গিন দিনগুলি আবার ফিরে পেতাম। আমার কাছে যদি এমন যাদুর কাঠি থাকতে যা দিয়ে আমি আমার হারানো শৈশবে ফিরে পারতাম। কিন্তু এমন ভেবে কি লাভ? সেই রঙ্গিন শৈশব আর ফিরে আসবে না আর।
©somewhere in net ltd.