নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

এই সময়

এই সময়

ই. আলম

জানবে আমি শুধু আমি নই, আমি মানে অন্য কেউ কিংবা প্রতিবিম্ভ তোমাতে মিলিয়ে আমার সব সুখ।

ই. আলম › বিস্তারিত পোস্টঃ

"টাঙ্গুয়ার হাওর" এর নীল রাজত্বে .....

২৪ শে জানুয়ারি, ২০১৪ রাত ৯:১৪

রাত প্রায় ১০ বাজে। দিন থেকে গোছানো ভারী ব্যাগটা কাঁধে করে বেড়িয়ে পড়লাম। আপাতত গন্তব্য কুমিল্লা রেল ষ্টেশন। রাত ১২টায় আমাদের ট্রেন আসার কথা। কিন্তু খোঁজ নিয়ে জানা গেল ট্রেন আসতে আরো ২-৩ঘন্টা লেগে যেতে পারে।তাই আমরা পাশেই কৌশিক ভাইয়ের বাসায় চলে আসলাম। একে-একে সবাই আসছে। সব মিলিয়ে আমারা প্রায় ১০জন।

সবাই ট্রেনের জন্য অপেক্ষা। কিন্তু ট্রেন আর আসে না। অবশেষে রাত ১২টার ট্রেন আসলো রাত ৪ টায়। উৎসাহ নিয়ে সবাই উঠে পড়লাম। উঠেই "ফিউরিয়াস ট্রাভেলার্স" (আমাদের গ্রুপ) সদস্যরা ট্রেন কাঁপিয়ে দিল। রাতের ট্রেন চরার মজা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। আশে-পাশের ধান ক্ষেতের মাঝে বাড়ীর মিট-মিট করা আলো দেখেই মন কোথায় যেন হারিয়ে যায়।



কুমিল্লা থেকে সিলেট যেতে ট্রেনে প্রায় ৬-৭ ঘন্টা পথ। আমরা মোটামুটি সারারাত আড্ডা মেরেই কাটিয়ে দিলাম। যখন ভোর হল তখন অন্যরকম দৃশ্য চোখে পড়তে লাগলো। আশে-পাশে উঁচু পাহাড় আর চা বাগান মাড়িয়ে আমাদের ট্রেন যাচ্ছে। অনেক আনারস বাগানও চোখে পড়লো। ট্রেন বেশ কয়েক জায়গায় থামলো। কখনো ষ্টেশনে আবার কখনো ক্রসিংয়ের সময়।



আমরা নেমে আনারস খেয়ে নিলাম। ট্রেন লেট হয়ার কারণে আমরা সিলেটে পৌঁছাতে প্রায় ১০ টা বেজে গেল। আমাদের সকল পরিকল্পনা সে কারণে একটু পাল্টে গেল। আমরা ষ্টেশন থেকে সিএনজিতে করে সুনাম গঞ্জ বাস স্টেশনে চলে গেলাম। বাসে সুনাম গঞ্জ পৌঁছাতে প্রায় ২ ঘন্টা লাগার কথা। ততক্ষণে খিদায় পেটে ইঁদুর দৌঁড়াচ্ছে। আমরা একটা হোটেলে দুপুরের খাবার খেয়ে নিলাম।



তারপর আমরা সুনাম গঞ্জের বাসে উঠে পরলাম। সেখানে তেমন উন্নত কোন সার্ভিস নেই। বাসের অবস্থা মোটামুটি এখন যায় তখন যায় অবস্থা। আর ঠাসাঠাসির কথা না হয় বাদই দিলাম। তবে এ কারণে একটা সুবিধাও আছে, ভাড়া অনেক কম। যাই হোক আমরা সুনাম গঞ্জের পথে। আশে-পাশের শুকানো জলাভূমি দেখেই বুঝা যায় বর্ষার সময় এখানে শুধু জলেরই রাজত্ব।



দু-পাশেই কিনারাহীন জলাভূমি। তবে পানি না থাকায় আমরা একটু বিচলিত। হয়ত "টাঙ্গুয়ার হাওরেও" একই অবস্থা। তবুও আমরা আশাবাদি আমরা সুনামগঞ্জ গিয়ে পৌঁছালাম প্রায় ৩টার দিকে।

আমাদের হাতে তেমন সময় নেই। ক্যাম্পিং বুথে আমাদের সন্ধ্যার আগেই যেভাবেই হোক পৌঁছাতে হবে। আমরা সুনাম গঞ্জ থেকে অটো-রিকক্সা করে ঘাটের দিকে যাচ্ছি। যেতে যেতে ঘাটের কাছেই "হাছন রাজার" বাড়ী পড়লো।



ইচ্ছে থাকা সত্বেও আমরা ঐখানে নামতে পারলাম না। হাতে সময় একদম কম। ঘাটে এসেই মনটা যেন কেমন হয়ে গেল। এখান থেকেই রোমাঞ্চের শুরু। ঘাটে অসংখ্য ইন্জিন চালিত নৌকা বাঁধা। আমাদের কে দেখেই সবাই এগিয়ে আসলো। পড়ে আমরা একটা নৌকা ভাড়া করে আরেক ঘাটের উদ্দেশ্যে রওনা হলাম। নৌকার ইন্জিন চালু হয়ার সাথে-সাথে সবাই আনন্দে মেতে উঠলো। ততক্ষনে সবাই ফটো সেশনে ব্যস্ত হয়ে পড়ল।



ট্রলার এগিয়ে যাচ্ছে আর চোখে পড়ছে রং-বেরং এর নানা বড় বড় নৌকা। কিছু দূর যাওয়ার পর চোখে যা পড়লো, তা নিজে না দেখলে অন্যকে বিশ্বাস করানোর চেষ্টা করাই বোকামী। প্রথমে ভাবলাম ঐটা হয়তো কোন নীলাভ মেঘ। এত সুন্দর কেন? পাশেই নৌকা চালক বলল-"ঐডা মেঘ না, ঐডা হইছে পাহাড়"। সবার কিছুক্ষণের জন্য মুখ বন্ধ। ঘোর কাটতে না কাটতেই আমরা সবাই একত্রে চিৎকার করে উঠলাম। গলা ছেড়ে গান গাইতে লাগলাম। নৌকা ভ্রমণ পৃথিবীর সবচাইতে মজার ভ্রমণ এটা বলার অপেক্ষা রাখে না। আমাদের ঘাটে পৌঁছাতে প্রায় আধা ঘন্টা লাগলো। এখান থেকে আমাদের "তাহির পুর" যেতে হবে বাইকে করে।



এখান থেকে তাহিরপুর যাওয়ার একমাত্র যানই হল বাইক। আমরা চারটা বাইক ঠিক করলাম। আমাদের বাইক ছুটে চললো। রাস্তার পাশে সারি-সারি গাছ। তার পাশে আবার জলাভূমি। তবে এ জলাভূমি আগের মত না। এই জলাভূমি জলে ভরপুর। জলাভূমি দেখে কিছুক্ষণের জন্য মনে হল আমরা বোধহয় এসে পড়েছি। কিন্তু বাইক যাচ্ছে ত যাচ্ছেই। থামার কোন নাম নেই। পাশেই

"বিশ্বম্ভরপুর থানা" দেখতে পেলাম।



আমরা প্রায় ৪০ মিনিট বাইকে চড়ে টাঙ্গুয়ার হাওরের ঘাটে এসে পৌঁছলাম। ঘাট লাগোয়া বাজার। আমরা প্রথমে বাইক বিদায় করে ক্যাম্পিংয়ের জন্য নৌকা খুঁজতে গেলাম। অহ ! একটা কথা বলা হয়নি, আমরা সব সময় যেখানেই যাই আমাদের নিজস্ব ট্যান্ট (তাবু) নিয়ে যাই, কিন্তু এই ক্যাম্পিংটা ছিলো একটু ভিন্ন। এই ক্যাম্পিং করবো আমরা একটা "বজরা নৌকা" (বাঁশ-কাঠের সমন্বয়ে তৈরী ছাদ দেয়া এক ধরনের বিশেষ নৌকা)-তে ।



আমরা একটা নৌকা দু'দিনের জন্য ভাড়া করে ফেললাম। আমরা এমন একটা নৌকা নিলাম যেটাতে রান্না-বান্না করার ব্যবস্থা আছে। কারণ আমাদের রান্না-বান্না সব নৌকাতেই হবে। আমরা বাজার থেকে আমাদের প্রয়োজনীয় সব বাজার সদাই নিয়ে নিলাম। আগুন ধরানোর জন্য কেরোসিন আর কাঠ নিয়ে নিলাম। বাজার সদাই করে আমরা সব কিছু নৌকাতে তুলে দিলাম। তারপর বিকালের নাস্তাটা বাজারেই সেরে ফেললাম। নাস্তা করে আসার সময় কাঁঠাল নজরে পড়লো। কাঁঠালও সাথে করে নিয়ে নিলাম। একটা বিষয় আমি লক্ষ্য করলাম কোন ক্যাম্পিং এ গেলে সব খাবারই অমৃতের মত লাগে। তখন নিম পাতার সরবতও খেতে লেবুর সরবতের মত মনে হয়। বিকালটা যেন হঠাৎ পড়ে গেল। সন্ধ্যা নেমে আসছে। আমরা একে একে সবাই নৌকাতে উঠে পড়লাম। ভঅঅট...............ভঅঅঅঅ.... ভঅঅট.......ভট .... ভট শব্দে নৌকা চালু হল। আমাদের নৌকা ঘাট ছেড়ে "টাঙ্গুয়ার হাওরের" দিকে রওনা দিল।আমরা তখনো বুঝতে পারিনি সামনে আমাদের জন্য কি চমক অপেক্ষা করছে। নৌকা যখন মূল হাওরে গিয়ে পড়লো তখন একেবারে সন্ধ্যা নেমে এসেছে। আশে-পাশের অবস্থা দেখে কিছুক্ষণের জন্য আমাদের সবার মাথা ফাঁকা হয়ে গেছে। এত সুন্দর কিভাবে হয় একটা জায়গা।



সবার তখন প্রশ্ন একটাই। মূহূর্তে গত কাল ধরে ভ্রমণ করার সব ক্লান্তি কোথাও যেন উধাও হয়ে গেল। কিছুক্ষনের জন্য সবাই চুপ করে গেল। মুহূর্তে আবার সবাই গর্জে উঠলো একসাথে। সবাই যার যার মত দেশাত্ববোধক গান গাইতে লাগলো। আশে-পাশের জলরাশি আর জলরাশি। একটু পর-পর কিছু সারি বাঁধা হিজল গাছ মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে। আশে-পাশে কোন কিনারা দেখা যাচ্ছে না। বিশাল হাওরের বুকে ছোট্ট একটা ভঅঅট.... ভঅঅট..... ভঅঅট আওয়াজ তোলা নৌকা। নৌকার ইন্জিনের আওয়াজ বেশী দূর পর্যন্ত যেতে পারছে না। একটু দূর গিয়েই মিলিয়ে যাচ্ছে। হঠাৎ আমাদের মূল আকর্ষণ চোখে পড়লো। পানিতে দাঁড়িয়ে থাকা হিজল গাছের ফাঁকে চাঁদ উঁকি দিচ্ছে। আজ কিন্তু পূর্ণিমা। আজ রাতে চাঁদের দাপট কেমন হবে তা এখনই বুঝা যাচ্ছে। আমরা সবাই নৌকার ছাদে দাঁড়িয়ে আছি। হাওরের উষ্ণ হাওয়া চারদিক থেকে এসে গায়ে লাগছে। উষ্ণ হাওয়াতে গা শীতল হতে শুরু করছে। ততক্ষণে রাত নেমে এসেছে।



আশ-পাশে কোন আলোর ব্যবস্থা নেই। তবুও চাঁদের আলোতে সব কিছুই পরিস্কার দেখা যাচ্ছে। হাওয়রের পানি মাপার জন্য নৌকা থেকে একটা বাঁশ নিলাম। বাঁশটা প্রায় ২০ ফুট। কিন্তু বাঁশ দিয়ে মাটির নাগাল পাওয়া গেল না। পানির গভীরতা প্রায় ৩০-৪০ফুট হবে। প্রায় ঘন্টা খানেক আসার পর আমরা একটা হিজল বাগানের সামনে থামলাম। নৌকার ইন্জিন ঠান্ডা করতে হবে। তাছাড়া আমরা এখন গোসল করবো। চাঁদনী রাতে হাওরের পানিতে গোসল করার লোভ কেউই সামলাতে পারছিলো না। লাফিয়ে পানিতে পড়লো সবাই। এখানে পানি কোমর পর্যন্ত। আমারা জল ছিটা-ছিটি করতে লাগলাম। আমাদের চিৎকার এতোটা তীব্র ছিলো যে পাশের এক বাড়ী থেকে টর্চ এর আলো আমাদের গায়ে ফেললো। তারা ভয় পেয়েছে। একতো এখানে কেউ কখনো ক্যাম্পিং করতে আসে না। তাছাড়া এখানকার যে দু -একটা ঘর আছে তারা সব সময় ডাকাতের ভয়ে থাকে। এখানে প্রায় সময়ই ডাকাতি হয়। ডাকাতির জন্য আমরা একটা বাড়ীর পাশেই ক্যাম্পিং বুথ নির্বাচন করলাম। যদিও আমাদের উদ্দেশ্য ছিলো হাওরের মাঝখানে ক্যাম্পিং করার। কিন্তু নিরাপত্তার বিষয়টাওত মাথায় রাখতে হবে। আমাদের সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো আমাদের ক্যাম্পিং বুথের পাশেই "বিজিবি"এর পানির উপরে ভাসমান ছোট্ট একটা ক্যাম্প ছিলো।



আমরা রাতের জন্য নৌকাতে রান্না-বান্না শুরু করলাম। কয়েকজন রান্না-বান্না নিয়ে ব্যস্ত। আর তার পাশেই নৌকার ছাদে চলছে জমপেশ আড্ডা। মূহূর্তেই আকাশের চাঁদটা বড় হতে লাগলো। জোছনা ছড়িয়ে গেল পুরা হাওর জুড়ে। পুরা হাওর জুড়ে আমরাই একমাত্র প্রহরী। চারিদিকে এক অন্য রকম নিরবতা। দেখতে-দেখতে খাবার হয়ে গেল। আমরা খাবার জন্য এক সাথে বসে গেলাম। অনেক জায়গায় অনেক রকম খাবার এই ছোট্ট জীবনে খেয়েছি, কিন্তু নৌকার ছাদে বসে খাবার স্বাদ আজ পর্যন্ত পাইনি। খাবার-দাবার শেষে সবাই সখের বশে পাতার বিড়ি টানলো কিছুক্ষণ (ধূমপান মৃর্ত্যুর কারণ)। পাতার বিড়ি আসার সময় বাজার থেকে নেয়া হয়েছিলো। রাত আস্তে-আস্তে গভীর হচ্ছে। বেড়ে যাচ্ছে নিরবতা। আমাদের পাশেই একটা বড় নৌকা এসে ভীড় করলো। তারা অনেক দূর পর্যন্ত যাবে। কিন্তু এই রাতে আর নৌকা নিয়ে যাওয়াটা তারা নিরাপদ মনে করছে না। তাই তারা এখানেই নৌকা

নোঙ্গর করলো। গভীর রাতে আমরা আমাদের নৌকা একটা হিজল গাছের ঘন বনে নিয়ে গেলাম। জায়গাটা অনেক অন্ধকার।আর আমাদের ঠিক এই মূহুর্তে অন্ধকারই প্রয়োজন। কারণ এখন আমরা ভূতের গল্প করবো।



সবাই একে-একে নানা অভিজ্ঞতার কথা প্রকাশ করতে লাগলো। মূহূর্তেই অন্যরকম এক অনুভূতি এসে ভর করলো। গা ছম-ছম করতে লাগলো। মনে হচ্ছে এই বুঝি হিজল বনের পানিতে কেউ ঘাপটি মেরে বসে আছে। রাত তখন অনেক হয়ে গেছে আমরা আমাদের আগের জায়গায় ফিরে আসলাম। হঠাৎ আকাশের চাঁদ মেঘে ঢাকা পড়লো। চারিদিকে অন্ধকার নেমে আসলো। ঝিঁঝিঁপোকার বিকট আওয়াজ এক অন্যরকম আনন্দযোগ করলো। আমরা গা ছেড়ে দিয়ে নৌকার ছইয়ের উপর শুয়ে পড়লাম। সাথে-সাথে পৃথিবীর সমস্ত ঘুম চোখে এসে ভর করলো। কখন যে ঘুমিয়ে গেলাম বুঝতেই পারলাম না। শেষ রাতে হঠাৎ ঘুম ভেঙ্গে যায়। জেগে দেখি দু-এক ফোঁটা বৃষ্টি পড়ছে। কাঁথা বালিশ নিয়ে তাড়াতাড়ি নৌকার ভিতরে চলে গেলাম। কিছুক্ষণ নৌকার মধ্যে বসে বৃষ্টি দেখলাম। নৌকার পাটাতনে আবার ঘুম দিলাম। বৃষ্টির পানি হাওরে পরে এক অন্যরকম ঝুম-ঝুম শব্দ তৈরী করছে। মনটা ভরে গেল। মনে হচ্ছে আমরা পানিতে ভেসে আছি। বৃষ্টি দেখতে দেখতে আবার ঘুমিয়ে পড়লাম। তৃপ্তির ঘুম থেকে উঠে দেখি সকাল হয়ে গেছে। পাশেই সকালের নাস্তা হিসাবে খিঁচুরী রান্না হচ্ছে। কয়েকজন ক্যামেরা হাতে হাটু পানিতে নেমে আছে। আমিও ব্রাশ করতে-করতে পানিতে নেমে গেলাম। সবাই খাবার শেষে এই জায়গাটাকে বিদায় জানিয়ে "বারিক্কার টিলার"উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম। রাতে আলোর কারনে আমরা হাওরে মূল সুন্দর্য্য কিছুই দেখতে পারিনি। কিন্তু চোখের সামনে যা দেখছি তা ভাষায় প্রকাশ করা অসম্ভব।

নীল পানি, নীল পাহাড়, নীল আকাশ। মনে হচ্ছে একে অন্যের উপর গড়াগড়ি খাচ্ছে। আমি আমার জীবনে এত সুন্দর পানি আর কোথাও দেখেনি। আমরা এই পানিই খাবার জন্য ব্যবহার করেছি।



আমরা পুরা হাওরে ইন্জিনের নৌকা নিয়ে ঘুরে বেড়াতে লাগলাম। কিছুক্ষণ পর পর পানির ভিতর হিজল বন চোখে পড়ছে। কিছু ছোট বাচ্চাকে একটা নৌকাতে যেতে দেখলাম। ছবি তোলার লোভ সামলাতে পারলাম না। আমাদের পাশ কাটিয়ে অনেক বড় বড় নৌকা চলে যাচ্ছে। সামনে যেতেই দেখি কয়েকটি স্কুল ছাত্রী নৌকাতে করে স্কুলে যাচ্ছে। আমরা প্রায় ৪০ মিনিট পর একটা বাজারে কাছের একটা ঘাটে নৌকা ভিড়ালাম। সেখানে চা-নাস্তা করে নিলাম। তারপর আবার রওনা হলাম বারিক্কা টিলার উদ্দেশ্যে। কিছুদূর যাওয়ার পর পানির নিচের শৈবাল চোখে পড়লো।পানি এত স্বচ্ছ যে এত গভীরের শৈবাল পর্যন্ত স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। দেখতে দেখতে আমরা বারিক্কার টিলার ঘাটে এসে পৌঁছালাম। সেখানে অনেক পুরানো একটা পরিত্যক্ত ট্রেন লাইন নজরে পড়লো। সেখানে ছোট্ট একটা বাজার রয়েছে। আমরা বাজার দিয়ে স্কুল পেরিয়ে ইন্ডিয়ার ঠিক বর্ডারের কাছে পাহাড়টায় উঠে গেলাম। ভিতরে যাওয়ার অনেক সখ ছিল। কিন্তু এর ভিতরে যাওয়াটা অনেক বিপদ জনক। "বিএসএফ" যে কোন মূহূর্তে গুলি ছুড়তে পারে। এই সব ঐখানে প্রতিদিনের স্বাভাবিক ঘটনা। আমরা ইন্ডিয়ার না যেতে পারার কিছুটা হতাশা নিয়ে ফিরে আসলাম।



বাজারে গিয়ে ছোট সিঙ্গারা দেখে খাওয়ার লোভ সামলাতে পারলাম না। আমরা আবার আমাদের গন্তব্যের দিকে রওনা দিলাম। কিছুক্ষণ যাবার পর গোসলের জন্য একটা উপযুক্ত জায়গা পেয়ে গেলাম। সবাই লাফিয়ে নামলাম। জায়গাটা কোন অংশে নিউজিল্যান্ড থেকে কম না। ঘন সবুজ ঘাসের মাঠ, মাঠের শেষ প্রান্তে আকাশ ছোঁয়া নীল পাহাড়। সত্যিই অসাধারণ। আমরা তৃপ্তি নিয়ে প্রায় ঘন্টা খানেক গোসল করলাম। কিছুক্ষণ মাঠে ফুটবলও খেলা হলো। তারপর আমাদের ফেরার পালা।



কড়া রোদে নৌকার বাহিরে বসে আছি, গায়ের চামড়া পুড়ে যাচ্ছে। তাতে কি গায়ের চামড়ার জন্য ত আর এত সুন্দর দৃশ্য মিস করা যায় না। যেতে যেতে কিছুক্ষণ পর-পর দ্বীপের মত পাথর দিয়ে বাঁধাই করা কিছু বাড়ী নজরে পড়লো। এই সব বাড়ীতে একটা দিন থাকার খুব ইচ্ছা হচ্ছিলো। তবে কোন উপায় নেই আমাদের কে ফিরতে হবে। হাওরের সুন্দর্য্য দেখতে-দেখতে কখন যে আমরা ঘাটে এসে পড়লাম। ঘাটে এসে মনটা খারাপ হয়ে গেল। মনটা যেন কিছুতেই এখান থেকে যেতে চাইছে না। কিন্তু এই পিছুটান রেখেই যেতে হবে। হয়তো এই পিছুটানই আমাদের বার বার এখানে নিয়ে আসবে। নৌকা থেকে নেমে পিছন ফিরে হাওরের দিকে এক বার তাকিয়ে তাড়াতাড়ি হাটা ধরলাম। দেরি করা ঠিক হবে না, কারণ আমরা সবাই "টাঙ্গুয়ার হাওর" এর প্রেমে পড়ে গেছি।



কৃতজ্ঞতা স্বীকার:

"বিজিবি" সদস্য ( যারা আমাদের কে প্রতিনিয়ত তাদের ঘর ব্যবহারের সুযোগ করে দিয়েছিল)

"মেহেদী এবং জহির" ( আমাদের ক্যাম্পের পাশেই তাদের বাড়ী ছিলো, প্রতিনিয়ত তারা আমাদেরকে অনেক সহযোগীতা করেছে)

এবং "আমাদের নৌকা চালক" যাদের ছাড়া আমাদের এই ভ্রমণ অসম্ভব হত।



কিছু কথা:

# ভ্রমণে যেতে হলে একটা সুষ্ঠ পরিকল্পনার সাথে বের হবেন।

# ক্যাম্পিং করতে চাইলে, বাড়ী লাগোয়া কোথাও করবেন, না হয় ডাকাতের কবলে পড়তে পারেন।

# নৌকা ভাড়া করার সময় দর-কষাকষি করবেন। তারা অনেক বেশী চাইবে।

# ফার্স্ট এ্যাইডের সকল জিনিস পত্র সঙ্গে নিয়ে যাবেন।

# বাজার থেকে সব কিছু মনে করে নিয়ে তারপর হাওরে প্রবেশ করবেন। কারণ ঐখান থেকে ইচ্ছা করলেই আপনি চলে আসতে পারবেন না।

# সানস্ক্রীন নিয়ে যাবেন। চামড়া পুড়ে যাওয়া থেকে রক্ষা করবে।

# খাবার স্যালাইন, প্যারাসিটামল, ইমোটিল, গ্যাস্ট্রিকের ঔষধ সব-সময় হাতের কাছে রাখবেন।

মন্তব্য ১৭ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (১৭) মন্তব্য লিখুন

১| ২৪ শে জানুয়ারি, ২০১৪ রাত ৯:৪২

শিশির ডি শাখামৃগ বলেছেন: ভ্রমণকাহিনী সবসময়ই ভাল লাগে, আপনার টাঙ্গুয়ার হাওর দর্শনের বর্ণনা ভাল লাগল। +++

২৫ শে জানুয়ারি, ২০১৪ সকাল ১১:১৬

ই. আলম বলেছেন: ধন্যবাদ। সামনে আরো কিছু নিয়ে আসার চেষ্টা করবো ইনশাল্লাহ।

২| ২৪ শে জানুয়ারি, ২০১৪ রাত ৯:৪৩

শিশির ডি শাখামৃগ বলেছেন: অজ্ঞাত কারনে প্লাস দেওয়া যাচ্ছে না, দুঃখিত ভাই :|

২৫ শে জানুয়ারি, ২০১৪ সকাল ১১:১৭

ই. আলম বলেছেন: প্লাস দিতে হবে না, পড়েছেন তাতেই আমি খুশি। ভালো থাকবেন।

৩| ২৪ শে জানুয়ারি, ২০১৪ রাত ৯:৫১

মামুন রশিদ বলেছেন: টাঙ্গুয়ার হাওর অসাধারণ সুন্দর । আপনার ছবি আর বর্ণনাও হয়েছে চমৎকার ।

২৫ শে জানুয়ারি, ২০১৪ সকাল ১১:১৮

ই. আলম বলেছেন: অনেক অনেক অনেক ধন্যবাদ মামুন রশিদ ভাই।

৪| ২৪ শে জানুয়ারি, ২০১৪ রাত ১০:২৪

পথহারা নাবিক বলেছেন: নৌকা ভাড়া কেমন!!

২৫ শে জানুয়ারি, ২০১৪ সকাল ১১:১৯

ই. আলম বলেছেন: দামাদামি করতে পারলে তিনের মধ্যে হয়ে যাবে। তবে উনার ৭-৮ হাজার টাকা চাইবে। মাঝে-মধ্যে সিন্ডিকেটও করে ফেলে, তখন একটু সমস্যা হয়ে যাবে।

৫| ২৪ শে জানুয়ারি, ২০১৪ রাত ১১:৪৩

গৃহ বন্দিনী বলেছেন: পড়লাম দেখলাম আর আফসুস করলাম ।

ছবি গুলা আরেকটু ব্রাইট হলে দেখতে ভাল লাগত ।

এনিওয়ে ভ্রমণ পোস্ট ভাল লাগল।

২৫ শে জানুয়ারি, ২০১৪ সকাল ১১:২৩

ই. আলম বলেছেন: আফসুস করার মতই আসলে। আমি সুন্দর্য্যের কিছুই ফুটিয়ে তুলতে পারিনি। এটা আসলে চোখ দিয়ে উপলব্ধি করার বিষয়। আর ছবির বিষয়টা হলো- ঐখানে "ডিএসএলআর" বা ভালো কোন ক্যামেরা নিয়ে যাওয়া হয়নি। কারণ ঐজায়গায় ডাকাতের প্রতিনিয়ত ভয়ত খাকেই তাছাড়া "ডিএসএলআর"দিয়ে ছবি তোলা তেমন সুবিধাজনকও না।
ধন্যবাদ।

৬| ২৫ শে জানুয়ারি, ২০১৪ রাত ১২:০৭

শাকিল ১৭০৫ বলেছেন: যেতে হবে একদিন

২৫ শে জানুয়ারি, ২০১৪ সকাল ১১:২৪

ই. আলম বলেছেন: দল-বল নিয়ে চলে যান। আপনার জন্য শুভ কামনা রইলো।

৭| ২৫ শে জানুয়ারি, ২০১৪ রাত ২:৪০

সামাইশি বলেছেন: বড়ই সৌন্দর্য্য। নয়ন মনোহর। অনেক ধন্যবাদ শেয়ার করার জন্য।

২৫ শে জানুয়ারি, ২০১৪ সকাল ১১:২৬

ই. আলম বলেছেন: শেয়ারের মূল উদ্দেশ্য হল আমি চাই বাংলাদেশের প্রতিটা মানুষ একবার হলেও "টাঙ্গুয়ার হাওরে" যাক। তা উপভোগ করুক।
আপনাকেও ধন্যবাদ। ভালো থাকবেন।

৮| ২৫ শে জানুয়ারি, ২০১৪ দুপুর ১:৩১

স্বপ্নচারী গ্রানমা বলেছেন:
ভালো লাগলো,কিন্তু ভাই পাখির ছবি কই..?

ধন্যবাদ ।

২৫ শে জানুয়ারি, ২০১৪ দুপুর ২:১৫

ই. আলম বলেছেন: পাখি দেখতে হলে ঠিক শীতের মাঝা-মাঝি যেতে হবে। তখন ঐখানে পাখি আর পাখিই দেখা যাবে।
আপনাকেও অসংখ্য ধন্যবাদ।

৯| ১৯ শে জুন, ২০১৫ বিকাল ৫:০৩

ঘুড়তে থাকা চিল বলেছেন: ভাই ট্রলার চালকের নাম্বার টা কী পাওয়া যাবে??

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.