নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

এই সময়

এই সময়

ই. আলম

জানবে আমি শুধু আমি নই, আমি মানে অন্য কেউ কিংবা প্রতিবিম্ভ তোমাতে মিলিয়ে আমার সব সুখ।

ই. আলম › বিস্তারিত পোস্টঃ

ভালোবাসি ক্রিকেট !

২৯ শে এপ্রিল, ২০১৫ রাত ৯:৫৯

ক্রিকেটের জন্য সেই ছোটবেলা থেকেই আমি পাগল। ক্রিকেট ! ক্রিকেট ! আর ক্রিকেট। এই ক্রিকেট খেলতে গিয়ে মজার কত কিছুই না দেখলাম। যা আজও বুকের মধ্যে গেঁথে আছে।ক্রিকেটকে নিয়ে ছোটবেলার সেই মজার কিছু অভিজ্ঞতা আজ আপনাদের সাথে শেয়ার করছি।

ঘটনা প্রবাহ ১: (ক্রিকেটের গাব্বার সিং)

তখন ক্লাস সিক্স- এ পড়ি খুব সম্ভবত। যে মাঠে আমরা সব সময় খেলতাম সেই মাঠের পাশেই হঠাৎ করেই একটা মুরগীর ফার্ম গড়ে উঠলো।
তাতে আমাদের মাঠের কোন প্রকার ক্ষতি না হলেও আরামে খেলার বারোটা ঠিকই বেঁজেছে। কারণ মুরগীর ফার্মের মালিক ঐদিকে একটু আধটু বল গেলেই খবর আছে বলে সাঁসাতো একটু পর পর। তার ফার্মের টীনের চালে বল পড়লে নাকি টীনের বিকট আওয়াজে তার মুরগী স্ট্রোক করে মারা যায়। আসলে দূর্ভাগ্যেক্রমে ফার্মের মালিক ছিল আমাদের এলাকার এক বদ লোক। আমাদের ক্রিকেট খেলাটাকে সম্ভবত তিনি ভালো নজরে দেখতেন না। আসলে আমরা খেলতামও একটু বেশী। যাই হোক তার কথা মাথায় রেখেই আমরা খেলা চালিয়ে যেতে লাগলাম। অবশ্য যখন তিনি আশেপাশে না থাকতেন। তিনি থাকলে খেলা বাধ্য হয়ে বন্ধ রাখতে হত। শেষমেষ বাধ্য হয়ে আমি নিজেই একটা আইন করে দিলাম যে ফার্মের দিকে বল মারলে আউট এবং তার সাথে ২০ টাকা বলের জন্য
জরিমান দিতে হবে। কারণ বল ঐখানে একবার গেলে ঐ লোক ফার্মে থাকুক আর না থাকুক ঐ বল আনার সাহস আমাদের কারো মাঝেই ছিলো না। আসলে আমাদের ক্রিকেট খেলা কোন কারণে আটকে থাকবে এই ধরণের চিন্তাই আমাদের মাথায় আসতো না তখন। বহু নিয়ম কানুন করার পরও মাঝে মাঝে ঐখানে বল চলে যেত।আর আমাদের আবার নতুন বল কিনতে হত। একদিন ঐ বদ লোক তার ফার্মের মধ্যেই কাজ করছিলো। আর আমরা মাঠে খেলছিলাম। বেটিং করছিলাম আমি। বল মারার সাথে সাথেই উড়ে গিয়ে পড়ল টীনের চাল গড়িয়ে ব্যাটার গায়ে। বুঝ অবস্থা এবার ঠ্যালা সামলাও। বল পড়ার সাথে সাথেই আমার সাথের অনেকে বাতাসের সাথে মিলিয়ে গেল। আমার কি যেন হল আমি দৌড়ে যেতে পারলাম। সম্ভবত আমার পা ভয়ে জমে গিয়েছিলো। আমি বোকার মত দাঁড়িয়েই রইলাম। যা থাকে কপালে। লোকটা এক হাতে বল আর অন্য হাতে কোঁদাল নিয়ে আমার দিকে এগিয়ে আসছে। আমার আর বুঝতে বাকী রইলো না এই লোক আজ আমাদের মাঠ কুঁপিয়ে ফেলবে। মাঠ
কুঁপাক বা না কুঁপাক এই মূহূর্তের বুদ্ধিমানের কাজ হল ঝেড়ে দৌড় মারা। কিন্তু ততক্ষণে অনেক দেরি হয়ে গেছে। দেখতে দেখতে লোকটা আমার সামনে এসে দাঁড়ালো। উনি আমাকে ধমক দিয়ে বলল- কিরে ! তোদের কি লাজ-লজ্জা বলতে কিচ্ছু নাই? এত গালি-গালাজ করি তারপরও খেলা বন্ধ নাই। তোরা আমার অনেক ক্ষতি করছস। আমার অনেক মুরগী
তোদের কারণে মারা গেছে। এখন তুই ই বল তোকে আমি কি শাস্তি দিব। আমি বোকার মত উনার দিকে তাকিয়ে আছি। কি বলব ঠিক বুঝে উঠতে পারছিলাম না। মুখ দিয়ে অবশ্য কথাও বের হচ্ছে না। মনে হচ্ছে জিহ্বা সীঁসার মত ভারী হয়ে গেছে। উনি আমাকে দ্বিতীয় বারের মত ধমক দিয়ে বলল- কিরে কথা বলছিস না কেন? আমার এখন কাকুতি মিনতি করে বলতে ইচ্ছে হচ্ছিল যে আজকের পর থেকে এখানে আর খেলবো না। কিন্তু কথা কয়েক যেন মুখ দিয়ে বের হতে চাইছে না। তিনি কিছুক্ষণ আমার দিকে তাকিয়ে থেকে হঠাৎ হ্যাঁচকা টান মেরে আমার হাতের ব্যাটটা
উনার হাতে নিলেন। হয়ত ব্যাটটা উনি ভেঙ্গে ফেলবে। মাত্র সপ্তাহ খানেক হল অনেক কষ্টে টাকা জমিয়ে ব্যাটটা কিনেছি। নিতান্তই বোকামীর কারণে এখন ব্যাটটা ভাঙ্গার পথে। কেন যে দৌড় মারলাম না?
এখন নিজের প্রতি নিজেরই রাগ লাগছে। তিনি চূড়ান্ত পর্যায়ের একটা ধমক দিয়ে বলল- কিরে কথা বলছিস না যে? তোকে কি শাস্তি দিব বল? আমি মাথা নিচের দিকে নামিয়ে বললাম- আমি জানিনা। আপনার যা ইচ্ছা হয় দেন। উনি মুখটা বিকৃতি করে বলল- আচ্ছা যা তোর শাস্তি পরে। আগে আমি তোকে এখন একটা বল করবো যদি তুই আমার এই বলে একটা ছক্কা মারতে পারিস তাহলে তোর শাস্তি মাপ। আমি আশার আলো খুঁজে পেলাম। উনি বলল- কি পারবি? যদি না পারস শাস্তি কিন্তু দিগুণ হবে। আমি বললাম আচ্ছা। উনি বল হাতে দৌড়ে এসে আমাকে বলল করলো। বলটা খারাপ হয়নি তারপরও আমি কোনভাবে জান প্রাণ ঢেলে স্বজোড়ে একটা বাড়ি মারলাম। টাইমিংটাও ভালো হয়েছে। কিন্তু একি হল?
বল গিয়ে পড়লো আবার উনার ফার্মের টীনের চালে। আমার মুখখানা মূহুর্তে ফ্যাকাসে হয়ে গেল। উনি রাগী রাগী চোখে আমার দিকে তাকিয়ে তার ফার্মের দিকে চলে গেলেন। একটু পরে বল হাতে ফিরে আসলেন। আমি কাতল মাছের মত মুখ হা করে উনার দিকে তাকিয়ে রইলাম। হয়তো এবার আর রক্ষা নাই। তিনি আমার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে হঠাৎ অপ্রত্যাশিত ভাবে হেসে ফেললেন। তারপর বলটা আমার হাতে দিয়ে আমাকে
বললেন তোরা খেল সমস্যা নাই। তবে আমার ফার্মের দিকে একটু কম মারিস। আমার মুরগী স্ট্রোক করে। এই হাস্যকর কথা শুনে আমি শব্দ করে হেসে ফেললাম। উনি আমার দিকে তাকিয়ে হাসতে হাসতে চলে গেলেন।


ঘটনা প্রবাহ- ০২: (পল্লীর ক্রিকেট)

একবার এক গ্রামে গেলাম ক্রিকেট খেলতে হায়ার প্লেয়ার হিসেবে। নাইন সেটের খেলা। প্রথমে আমাদের প্রতিপক্ষ টীম ব্যাট করে ১৪ ওভারে ৭৮ রান করলো যা আমাদের কাছে এক প্রকার
পানি ভাতের মতই স্কোর মনে হল। আমি প্রথমে নামলাম। মাত্র ৭ ওভারে কোন উইকেট না হারিয়ে আমরা ৬৪ রান করে ফেললাম। আর দরকার মাত্র১৪ রান। আমাদের যারা হায়ার করেছে তাদের
মাঝে আনন্দের কোন কমতি দেখতে পারলাম। খুশিতে তারা মোটামুটি দিশেহারা। তারা এন্ট্রি টিমকে বিভিন্ন ভাবে অহংকারী যত সব কথাও ছুঁড়ে মারছে। যাই হোক ঠীক তার পরের বলেই আমি আউট হয়ে গেলাম। বিশ্বাস করবেন কিনা জানি না আমরা ঐ ম্যাচটা সাত রানে হেরেছিলাম। এই হল অবস্থা।

যাই হোক আমরা পরবর্তীতে ঐ টুর্নামেন্টে দাপটের সঙ্গে খুব ভালো ভাবেই ফাইনালে উঠে গেলাম। ফাইনাল খেলতে গেলাম কিছুদিন পর। তারপর গিয়ে শুনি তারা আমাদেরকে সম্মান করতে এলাকার সকল ঘর থেকে চাল তুলেছে। যেন আমাদেরকে ভালো ভাবে খাতির যত্ন করতে পারে।
এটা আসলে ক্রিকেটের বেলায় না। গ্রামের মানুষ অনেক বড় বড় কাজও এভাবে মিলেমিশে করে ফেলে। তারা মানুষ গুলো যেমন ফরমালিন মুক্ত । তাদের ভালোবাসাও তেমনি ফরমালিন মুক্ত।

ঘটনা প্রবাহ- ০৩: (একজন ক্রিকেট ভক্ত)

দেখতে দেখতে বিভিন্না কারণে প্রায় সকল খেলার মাঠই বন্ধ হয়ে গেল। তুবুও নতুন নতুন মাঠ খুঁজে বের করতাম খেলার তাগীদে। আমাদের এলাকাতে একটা রড ফ্যাক্টরী ছিল। ঐখানে অনেক পাকিস্তানি উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তারা কাজ করতেন। উনারা প্রতি শুক্রবারে আমাদের সাথে খেলতেন। প্রতিটা শুক্রবার আমাদের কাছে ছিলো একট উৎসবের মতই। পাকিস্তানিরা সত্যি বলতে অনেক চমৎকার ক্রিকেট খেলতো। যাই হোক একটা সময় ফ্যাক্টরী বন্ধ হয়ার সুবাধে পাকিস্তানীরা চলে যায়। দেখতে দেখতে আমাদের সিনিয়র ভাইয়েরাও বিভিন্ন কাজে ব্যস্ত হয়ে যায় আবার কেউবা বিদেশ চলে যায়। আমরা ছোটরাই তখন ক্রিকেট খেলতাম। তবে যেই মাঠে ক্রিকেট খেলতাম ঐ মাঠের একটাই অসুবিধা সেটা হল অনেক বল হারায় বিভিন্ন ভাবে। ঐ মাঠের পাশে একটা প্রায় ভাঙ্গা একটা পুরানো ঘর ছিলো। সেখানে কিছু দিনের জন্য অস্থায়ী ভাবে কিছু পল্লী বিদ্যুৎ এর নিম্ন পদস্থ কর্মকর্তারা থাকতে আসে। তাদের কাজ বিদ্যুৎ এর খুঁটি গাঁথা।
তাদের মধ্যে একজন ছিলো রান্না বান্নার দায়িত্বে। উনি বেশীর ভাগ সময় ধরেই রান্না-বান্না করতো। আর সময় পেলে আমাদের মাঠের এক কোণে এসে চুপচাপ বসে বসে আমাদের অগোছালো খেলা দেখত। একদিন খেলার সময় আমাদের বল এমন একটা গর্তে পরে যায় যেখান থেকে বল উদ্ধার করা আর সম্ভব না। আমরা চাঁদা তুলে সাথে সাথে আরেকটা বল কিনে ফেললাম। তারপর আবার খেলা শুরু করলাম। কিছুক্ষণ পর একটা বল ফেঁটে যায়। আমরা আমাদের শেষ সম্বল দ্বারা আরেকটা বল কিনে আনলাম। যেটা নাকি একটু পরেই তালগাছে আটকে যায়। কি আর করা আমরা খেলা বন্ধ করে অনেক সাহস করে দোকানে গেলাম বাকী একটা বল পাওয়া যায় কিনা। আসলে আমরা এত ছোট ছিলাম যে আমরা যদি বাকীর অফার করি দোকানদারকে হয়ত উনি আমাদের কে মারও দিতে পারে।
তারপরও আমরা অনেক বলে কয়ে দোকান থেকে একটা বাকীতে একটা বল নিয়ে আসলাম। বাকীতে দেয়াতে আমরা আসলে অনেক খুশীই হলাম। আমারা আবার পুরু উদ্যোমে আমাদের খেলা
শুরু করলাম। দুয়েক ওভার খেলতে না খেলতেই বলটা সেই তাল গাছের ডগায় গিয়ে আটকালো। কিন্তু আমাদের মাঝে এমন কাউকে পাওয়া গেল না যে তালগাছে উঠবে। তবুও আমরা সবাই
একে একে নিজেরাই তালগাছে উঠার চেষ্টা চালালাম। কিন্তু ফলাফল শূন্য। কেউই সব চেষ্টা সত্ত্বেও গাছে উঠতে পারলো না। আমরা শেষমেষ না পেরে গাছের গোড়ায়ই মন খারাপ করে বসে রইলাম যদি কাউকে পাওয়া যায়। না হয় আজকে আর খেলা হবে না। যদিও আমাদের অন্য একটা পাড়ার সাথে খেলা ছিলো। বলের অভাবে খেলা বন্ধ হয়ে পড়ে আছে। বাকীতে আর বল আনা যাবে না। এবার গেলে বেঁধে রাখতে পারে এই সম্ভাবনাও একেবারে উড়িয়ে দেয়া যায় না। আমরা বসে আছি আমাদের পাশে এসে পল্লী বিদ্যুৎ এর ঐ লোকটা এসে দাঁড়ালো। তিনি বলল- তোমরা খেলা বন্ধ করে বসে আছ কেন? আজকে খেলবে না? আমরা তাকে ঘটনা সব বললাম। উনি শুনে ও আচ্ছা বলে চলে গেল। একটু পরে উনি আমাদের পাশে এসে আবার দাঁড়ালো। তার হাতে একটা নতুন বল আর একটা নতুন ওসাকা টেপ। তিনি আমাদেরকে দিয়ে বললেন নাও তোমরা খেল। আমরা খুশীতে প্রায় আত্মহারা আমরা আবার খেলা শুরু করলাম। আমরা প্রায় জিততে বসেছিলাম ঠিক সেই সময়ই ঘটলো আবার অঘটন। বল আবার সেই তালগাছে। রাগে ক্ষোভে এখন তালগাছটা গোঁড়া দিয়ে কেটে ফেলতে ইচ্ছে করছিলো। আর কিছুই করার নাই। লোকটা আবার আসলো। তারপর সব জানতে পেরে মন খারাপ করে বলল- আমার কাছে ত আর টাকা নাই ! থাকলে তোমাদেরকে আরেকটা বল কিনে দিতাম। এই বলে উনি চলে গেলেন। প্রায় মিনিট দশেক পরে উনি ঘর থেকে বেরিয়ে আসলো। তার পায়ে পল্লী বিদ্যুৎ এর খুঁটিতে উঠার বিশেষ এক ধরনের জুতা। জুতার নিচটাতে লোহার বিশেষ এক ধরনের স্পাইক। যেটা দিয়ে যেকোন গাছে অনায়াসে উঠা যায়। যদিও এটার জন্যও সামন্য প্রাকটিস থাকতে
হয়। উনি বলল- তোমরা দোয়া কর। আমি যাতে ঠিক ভাবে উঠতে পারি। কোনদিন উঠি নাই ত। আমরা মনে মনে আসলে দোয়া করতে থাকলাম। উনি খুব কষ্ট করে গাছের মগ ডালে উঠে। এবং আমাদের এযাবৎ কালের সকল হারানো বল নিয়ে নেমে আসে। আমরা সেই মূহূর্তে খেলা বাদ দিয়ে উনাকে নিয়ে মিছিল শুরু করে দিয়েছিলাম। উনি তখন হাসছিলো।
তিনি ঐখান থেকে উনাদের কাজ শেষ হয়ার পর চলে যান আর যাওয়ার সময় তার কষ্টার্জীত টাকা থেকে আমাদেরকে একটা ব্যাট আর এক সেট স্ট্যাম্প কিনে দিয়ে যান। আমার আজও ঐ লোকটার কথা মনে পরে। তিনি কখনো ক্রিকেট খেলেনি। তাকে অনেক চাপাচাপি করেও মাঠে নামানো যায়নি। তারপরও তিনি এই খেলার প্রতি এতটা টান অনুভব করেন।
কেন জানেন? তিনি একজন ক্রিকেট ভক্ত। এমন হাজারো ভক্ত আছে আমাদের দেশে। যারা ক্রিকেটকে অসম্ভব রকম ভালোবাসে। যারা বাংলাদেশ ক্রিকেট দলটাকে ভালোবাসে।


মন্তব্য ০ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.