কনে দেখা ও তার বিড়ম্বনা

২০ শে এপ্রিল, ২০১২ রাত ১১:১০

১.

‘’তা ওরা তোদের কেমন আপ্যায়ন করলো?’’ রেজওয়ান প্রশ্ন ছুঁড়ে দেয় নাবিল আর আসিফের দিকে। আসিফের জন্য পাত্রী দেখতে পাত্রীর বাড়িতে গিয়েছিল আসিফ আর তার বন্ধু ্নাবিল। ওখানকার অভিজ্ঞতার কথাই নাবিল খুব রঙ চড়িয়ে গল্প করছিল। আসিফ অবশ্য নাবিলের বলার ঢং চুপচাপ উপভোগ করছে।

--খাওন দাওনের আয়োজন ভালোই ছিল দোস্ত। তুই আসলেই মিস করলি।

--মেয়ে কেমন দেখলি?

--আমারে ক্যান জিগাইতাছস? যার পাত্রী তারেই জিগা।

--আমি তো ওকেই জিজ্ঞেস করছি। তুই এত কথা কেন বলছিস? কিরে আসিফ কথা বলিস না কেন?

এতক্ষণে আসিফ মুখ খোলে। ‘’বলার আর কী আছে?’’

--কেন? পছন্দ হয় নি নাকি?

--চলে আর কি, খুব একটা সুন্দরী না।

মাঝখান থেকে নাবিল আবার কথা বলে উঠে, ‘’জানস? আসিফ মাইয়ারে কী জিগায়? ‘ আপনার বয়স কত?’ মাইয়া তো ভিতরে ভিতরে জ্বইল্যা গেল, কিন্তু কিছু কইতে পারে না! হে হে হে।’’

এই নিয়ে তিন বন্ধু উচ্চ স্বরে হেসে উঠে।



২.

লোপাকে সেদিন ছেলে আর ছেলের বন্ধু দেখতে এসেছিল। তাই নিয়ে বাসায় কত যে হূলস্থূল সবার! বাসায় রঙ করা, খাবার দাবারের আয়োজন, ঘর গুছানো আরো কত কি! পাত্র ওকে দেখতে আসবে, তাই লোপাকেও সেজেগুজে থাকতে হয়েছে। পাত্রপক্ষের সামনে এভাবে যাওয়াটা এবারই প্রথম নয় ওর জন্য। এই কনে দেখা ব্যাপারটা নিয়ে ওর একটু এলার্জি আছে। যেমন লোপা খেয়াল করে দেখেছে পাত্র বা পাত্রপক্ষের লোকেরা খুব তীক্ষ্ণভাবে ওর দিকে তাকিয়ে থাকে। আর পাত্রের ভাব দেখলে তো মনে হয়, ওর জন্য একদম দিওয়ানা হয়ে গেছে! বিয়ে করলে শুধু ওকেই করবে। কনে দেখতে এসে শুধু শুধু একটু বাজিয়ে দেখার চেষ্টাও করে কেউ কেউ। এক দৃষ্টিতে তাকিয়েও থাকে কেউ কেউ। লোপা খুব ভালো করেই জানে ওর মত কালো আর খাটো মেয়েকে নিয়ে ছেলেদের আসলে কোন আগ্রহ নেই। ওরা বিয়ের জন্য খোঁজে সুন্দরী মেয়েদের। তবুও ওকে পাত্রের সামনে আসতে হয়, অনেক ধরনের প্রশ্নের উত্তর দিতে হয়।



এরেঞ্জ ম্যারেজের ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ হলো কনে দেখা, বর ও কনের নিজেদের মধ্যে আলাপ আলোচনার মাধ্যমে পরস্পরকে একটু জানা বোঝার চেষ্টা করা। আগের যুগের মত এখন মেয়েদের দাঁত, চোখ, চুল, পায়ের ছাপ হয়ত দেখা হয় না, কিন্তু কনে দেখার বিড়ম্বনায় এখনো মেয়েদের ভুগতে হয়। কনেকে সাধারণত তার নিজের বাড়িতে বা কোন মার্কেট বা রেস্টুরেন্টে দেখা হয়ে থাকে। কনের বাড়িতে আয়োজন করা হলে পাত্রপক্ষের মন জয় করার জন্য অনেক খরচও করা হয়ে থাকে। কনে দেখার জন্য এসব জায়গা বাদ দিয়ে, ইচ্ছে করলে মেয়েরা নিজেই পাত্রের বাড়িতে গিয়ে পাত্রকে ভালো মত দেখে আসতে পারেন। প্রাথমিকভাবে পছন্দ হলে পরে তাকে নিজের বাড়িতে আমন্ত্রণ জানাতে পারেন। তবে পাত্রপক্ষের মন যোগাতে আয়োজনে অহেতুক বাড়াবাড়ি করার দরকার নেই।



কনে দেখতে এসে পাত্র বা পাত্রপক্ষের লোকেরা কনের দিকে তীক্ষ্ণভাবে, একদৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকেন বলে অস্বস্তিতে পড়ে যান মেয়েরা। অস্বস্তিতে না ভুগে আপনিও যে পাত্রকে তীক্ষ্ণভাবে পর্যবেক্ষণ করছেন এবং পছন্দ না হলে আপনিও যে ‘’না’’ বলতে পারেন, সেটা পাত্রপক্ষকে বুঝতে দিন। যে সাজ পোশাকে আপনি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন, তেমন পোশাক পরেই পাত্রের সাথে দেখা করবেন। শাড়ি পরার অভ্যাস না থাকলে পরবেন না। এটা ঠিক, সুন্দরী মেয়েদের প্রতি পাত্ররা আকৃষ্ট হয়ে থাকে বেশি। মেয়েরাও যে হ্যান্ডসাম ছেলে পছন্দ করে না, তা তো নয়!দুঃখের ব্যাপার সব ছেলে হ্যান্ডসাম নয়। তেমনি সব মেয়েও সুন্দরী নয়, সবার মহাসুন্দরী হবার দরকারও নেই। নিজের গায়ের রং,উচ্চতা, শারীরিক গড়ন ইত্যাদি নিয়ে হীনম্মন্যতায় কখনো ভুগবেন না। আপনার সুন্দর ব্যক্তিত্ব ও অন্যান্যা যোগ্যতা, গুণাবলী চিনে নেবার মত তেমন মানুষ নিশ্চয়ই আছে। তবে ব্যক্তিত্ব দেখাতে যেয়ে আবার ডাঁট দেখিয়ে ফেলবেন না যেন! পরিমিত, শালীন ও পজিটিভ আচরণ করুন।



কনে দেখতে এসে বাজিয়ে দেখার জন্য ছেলেরা নানা রকম কথা বলে থাকে। পরিস্থিতি বুঝে বুদ্ধিমত্তার সাথে আপনাকে সেগুলো সামাল দিতে হবে। দরকার হলে আপনিও একটু বাজিয়ে দেখুন না, আপনার ভবিষ্যৎ জীবনসংগীটিকে! অনেকে অভিযোগ করেন, পাত্ররা নানারকম বিব্রতকর প্রশ্ন করে থাকে। আসিফের মত কেউ যদি আপনার বয়স জানতে চায় তাহলে এলোমেলো উত্তর না দিয়ে নিজের সঠিক বয়সটি জানিয়ে দিতে পারেন। আবার ইচ্ছে হলে ১৬ থেকে ৭০-৮০ পর্যন্ত যে কোন একটা সংখ্যা বলে পরিস্থিতি হালকা করে নিতে পারেন। হালকা চালে আপনিও জিজ্ঞেস করতে পারেন, ‘’আপনার স্যালারি কত?” অথবা ’’রান্না বান্না কিছু পারেন?’’

২৩ টি +৪/-০