নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমার চোখে তো সকলই শোভন/সকলই নবীন,সকলই বিমল/ সুনীল আকাশ,শ্যামল কানন/বিশদ জোছনা,কুসুম কোমল/সকলই আমার মত
প্রায় চার বছরের প্রেমের সম্পর্কটা এক সময় ভেংগে দিতে হল মাহবুবের।এছাড়া আর উপায় ছিল না। মাহবুবের সব কিছুতে অহেতুক সন্দেহ আর অবিশ্বাস করত স্মিতা।কখনো দেখা করতে দেরি হলে, অন্য কোন বান্ধবীর সাথে কথা বলতে দেখলে, মোবাইল একটু খানি বিজি পেলেই হল, অভিযোগে অভিযোগে মাহবুবের কান ঝালাপালা করে দিত স্মিতা।তা-ও যদি এসব অভিযোগের বিন্দুমাত্র সত্যতা থাকত, তবে মাহবুব নিজের দোষ স্বীকার করে নিত। কিন্তু স্মিতার আচরণ রীতিমত অসহ্য হয়ে পড়ায় একসময় সম্পর্কটির সমাপ্তি টানার কথাই ভাবতে হল মাহবুবকে।
প্রেমের সম্পর্কটি হয়ে যাবার পরে পরস্পরকে আরেকটু কাছ থেকে জানা বোঝার সুযোগ হয়। আর সেখান থেকেই স্নিগ্ধা টের পেল তার প্রেমিক রাফি খুব একটা দায়িত্বশীল নয়।কোন কিছুতে তার উপরে আস্থা রাখতে পারছিল না স্নিগ্ধা।তার উপর রাফির ধূমপানের অভ্যাস রীতিমত অসহ্য লাগত স্নিগ্ধার। রাফি সব সময় স্নিগ্ধাকে কথা দিত, নিজেকে সে শুধরে নেবে বলে।কিন্তু স্নিগ্ধা তো জানে, একজন মানুষের আচরণ, অভ্যাস বদলে ফেলা এত সহজ কথা নয়।পরবর্তী জীবনে এমন কাণ্ডজ্ঞানহীন লোকের সাথে থেকে হা-হুতাশ করতে একেবারেই রাজি নয় স্নিগ্ধা।তাই সম্পর্কটি ভেংগে ফেলার সিদ্ধান্ত নিতেই হল।
যদি মানসিক প্রশান্তিই না থাকে, ভালবাসার বিন্দুমাত্র অবশিষ্ট না থাকে, পারস্পরিক শ্রদ্ধা, আস্থা না থাকে তবে একটি সম্পর্ক শুধুমাত্র টিকিয়ে রাখার জন্য টিকিয়ে রাখার কোন মানে হয় না।যদি টের পান আপনার প্রেমিক/প্রেমিকা মাদকাসক্ত কিংবা লুকিয়ে আরো সম্পর্ক রাখছে, অথবা এমনও হতে পারে সে খুব কর্তৃত্বপরায়ন, আপনার নিজস্বতাকে অশ্রদ্ধা করছে, অন্যের সামনে আপনাকে হেয় করছে, আপনার প্রতিভাকে অবমূল্যায়ন করছে, আপনি উপেক্ষিত অথবা আপনি আর তাকে বিশ্বাস করতে পারছেন না, এসব ক্ষেত্রে কী আপনি করবেন?যদি সিদ্ধান্ত নিয়েই ফেলেন সম্পর্কটি এখানেই থামাতে চান, তাহলে কেন সম্পর্কটি ভেঙ্গে ফেলতে চান তার কারণগুলোর একটি তালিকা তৈরি করুন। খুব বিস্তত্ব কারো সাথে বিষয়টি নিয়ে কথা বলে পরামর্শ নিতে পারেন, তবে সবার সাথে এসব নিয়ে আলোচনা করতে যাবেন না। সম্পর্ক থামিয়ে দেবার বিষয়টি নিয়ে আপনার প্রেমিক/প্রেমিকার সাথে খোলামেলা আলোচনা করার জন্য সময় বের করে নিন। আলোচনা করার জন্য অবশ্যই আপনার প্রিয় কোন রেস্টুরেন্ট বা জায়গায় যাবেন না। নিজেকে মানসিকভাবে প্রস্তুত করে নিন, বিষয়টি নিয়ে কথা বলার সময় কী ধরনের তিক্ত অবস্থা তৈরি হতে পারে আর আপনি সেসব কিভাবে সামাল দেবেন।
খুব শান্ত ও সুন্দরভাবে অপরপক্ষের কাছে আপনার সম্পর্ক ভেংগে ফেলার ইচ্ছের কথা জানাতে হবে।ব্যক্তি নয়, সম্পর্ক নিয়ে আলোচনা করুন।কখনোই অপরপক্ষের দোষ ধরবেন না।‘’তুমি খুব খবরদারি কর’’ কিংবা ‘’তুমি খুব সিগারেট খাও’’ এভাবে ব্যক্তিকে আক্রমণ করে কথা বলবেন না।বরং সম্পর্কটি নিয়ে কথা বলুন এভাবে, ‘’এ সম্পর্ক থেকে আমি আরো অনেক বেশি স্বাধীনতা চাই, যেটা সম্ভব নয়’’ কিংবা ‘’ তুমি ধূমপানে অভ্যস্ত আর আমি এটা একদমই সহ্য করতে পারি না। আমাদের মধ্যে অনেক বেশি অমিল।‘’ সম্পর্ক সমাপ্তির প্রসংগে অপরপক্ষ রূঢ় প্রশ্ন করতে পারে।এসবের জবাব দিতে হবে খুব শান্তভাবে ও অত্যন্ত সংক্ষিপ্তভাবে।অপরপক্ষ যদি কেঁদে ফেলে, তবুও আবেগী হয়ে নিজের সিদ্ধান্ত বদলাতে যাবেন না। অপরপক্ষকে তর্ক করার সুযোগ দেবেন না।সে যদি তর্ক করতে চায়, যদি অশালীন ভাষায় আক্রমণ করে তবে আপনি রাগ, ভয়, দুঃখ বা অন্য কোন ধরনের প্রতিক্রিয়া দেখাতে যাবেন না।সম্ভব হলে ঐ স্থান ত্যাগ করে চলে যাবেন।যদি শারীরিকভাবে আক্রমণের আশংকা করে থাকেন তবে আলোচনার জায়গাটি আগে থেকেই ঠিক করে নেবেন জনসমাগম আছে এমন জায়গায়।তাহলে,বিপদে পড়লে আপনি মানুষের সাহায্য চাইতে পারবেন। আর যদি ব্ল্যাকমেইলিং বা বড় ধরনের ক্ষতির আশংকা করে থাকেন তবে আগে থেকে থানায় জিডি করে রাখুন।
যেকোন সম্পর্ক গড়া বা সমাপ্তিতে নিজের সৎ থাকা অত্যন্ত জরুরী। একটি সম্পর্কের গোপনীয়তাও সে কারণেই রক্ষা করতে হয়। তাই সম্পর্ক ভেংগে যাবার পরে প্রেমিক/প্রেমিকার ব্যক্তিগত চিঠি, ছবি, ভিডিও, উপহার ইত্যাদি ফেরত দিয়ে দেবেন। অন্য কাউকে এসব দেখাতে যাবেন না। প্রেমিক/প্রেমিকার আশার কথায় আবারও সম্পর্কটি নতুন করে গড়তে যাবেন না।মনে রাখবেন, মানুষের অভ্যাস, আচরণ সহজে পরিবর্তন হয় না।ঐ ব্যক্তির সাথে শুধুমাত্র বন্ধুত্বের সম্পর্কও রাখতে যাবেন না। পরিচিতজন বা বন্ধুদের কাছে সম্পর্ক ভেংগে যাবার কথা লুকিয়ে রাখবেন না, বরং আপনার ইচ্ছের কথা তাদেরকে জানিয়ে দিন।
একটি সম্পর্ক শেষ করার প্রয়োজন হলে কী করতে হবে এতক্ষণ সেসব নিয়ে আলোচনা হল। যদি আপনার প্রেমিক/প্রেমিকা আপনার সাথে সম্পর্কটি আর চালিয়ে যেতে না চায়, সেক্ষেত্রে আপনি কী করবেন? যাকে ভালবাসেন তার ইচ্ছে ও মতামতের মূল্য আপনাকে দিতে হবে।তার জন্য যা মংগলময় হবে, সেটাই আপনি করবেন।সে যদি সম্পর্কটি আর না চালাতে চায়, তবে তা ওখানেই থামিয়ে দিন।অপ্রত্যাশিতভাবে সম্পর্ক ভাংগার বেদনা থেকে আপনাকে নিঃসংগতা পেয়ে বসতে পারে। আর এ থেকে বিষন্নতা, হতাশা, হীনম্মন্যতায় আপনি ভুগতে পারেন। পুরাতন প্রেমিক/প্রেমিকার প্রতি বিন্দু মাত্র প্রতিহিংসা মনের মধ্যে জায়গা করতে দেবেন না। বরং আপনি তাকে ক্ষমা করে দিন, যদি মনে হয় সে আপনার প্রতি অন্যায় করেছে, ঠকিয়েছে তবুও।আপনি তাকে ক্ষমা করে দেবেন, কারণ আপনি তাকে ভালবাসেন, তাই।আগের প্রেমিক/প্রেমিকার সাথে কোন যোগাযোগ রাখতে যাবেন না। যদি কান্না পায়, তবে কাঁদুন।এ সময় হঠাৎ করে নতুন কোন সম্পর্কে কিছুতেই জড়াতে যাবেন না। কিছুদিনের জন্য একা থাকুন, এসময়টায় নিজেকে সময় দিন।
নিজের মন ও শরীরের প্রতি যত্নশীল হতে হবে আরো বেশি।নিজেকে ভালবাসুন পুরোদমে।তাই নিয়মমত ঘুম, খাওয়া-দাওয়া, স্বাস্থ্যের যত্ন করবেন।দৈনন্দিন জীবনে কিছু পরিবর্তন নিয়ে আসুন। চুলে নতুন কাট দিতে পারেন। নতুন সাজে চেহারায় ভিন্ন লুক নিয়ে আসুন। নতুন নতুন পোশাক কিনুন। ঘরের আসবাবপত্রের স্থান বদলে নতুন করে সাজান।এমন কোন কিছু কাজে নিজেকে ব্যস্ত রাখুন যা আগে কখনো করেন নি, যেমন মার্শাল আর্ট, স্কেটিং, সালসা নৃত্য, ফ্যাশন ডিজাইনিং, ফটোগ্রাফি, আবৃত্তি, ইকেবোনা, নতুন কোন ভাষা বা রান্না শেখার কোর্সে ভর্তি হয়ে যাওয়া।পছন্দের মুভি দেখা, বই পড়া, সুন্দর কোথাও বেড়াতে যাবেন, বন্ধুদের সাথে হৈ হুল্লোড় করবেন আগের মতই।সময়গুলো কাটান সুস্থভাবে, সুস্থ বিনোদনের মাধ্যমে।প্রতিনিয়ত নতুন নতুন মানুষের সাথে পরিচিত হোন, নিজের সীমানা আরো বাড়ান।নতুন আরেকটি সম্পর্ক যদি আপনার উজ্জ্বল-উচ্ছ্বল সময়টিতে হাতছানি দিয়ে ডাক দিয়ে যায় আর আপনি যদি প্রস্তুত থাকেন তবে তাতে সাড়া দেবেন।
©somewhere in net ltd.