![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
ছোট একটা ফার্মে কাজ করছি । সৌখিন লেখক । ক্রিকেট খেলতে পছন্দ করি । পকেটে পয়সা থাকলে এদিক ঘুরে খরচ করে ফেলি । সুনীলের লেখার ভক্ত, শামসুর রাহমানের কবিতা পড়ি। বিদেশী লেখকের মধ্যে ড্যানিয়েল স্টীলের লেখা ভাল লাগে । সবচেয়ে ঘৃণা করি স্বাধীনতার বিরোধী শক্তিকে । একাত্তর আমার সবচেয়ে বড় অহংকার। ইমেইল: [email protected]
তাকে বিদায় দেয়ার সময় ব্যবস্থাপক সাহেব অফিসে থাকেন নি। যুগ্ম ব্যবস্থাপক একটা কক্ষে সবাইকে ডাকলেন। প্রসাধনী চর্চিত মুখে রিসেপশনের শিউলী পারভিন সবার পিছনে মাথা নত করে আছেন। তার হাতের ঘড়িতে সময় কম। অফিসের সেগুন কাঠের ডেস্কের ওপাশে যুগ্ম ব্যবস্থাপক জানালেন আজকে জলিল সাহেবের কাজে শেষ দিন। জলিল সাহেব দেখলেন তিনি প্রথমে ঢুকছেন। সাতাশ বছর বয়সে কুড়ি টাকা দিয়ে খাদিমের জুতো পরে এসেছিলেন নতুন চাকুরীতে। সাদা একটা শার্ট কিনে ঢুকেছিলেন। বন্ধুদের একজন বেল্ট দিয়েছির। শার্টটা তার ঢোলা হতো। ছিপছিপে মানুষ বলে তাকে চিপাজলিল বলতো সহপাঠীরা। বিয়ে নিয়ে সহকর্মীরা যখন রসিকতা করতো তখন জরুরী দলিল দস্তাবেজ মুদ্রাক্ষরিক যন্ত্রে নিপুণ ভাবে একটানা বসিয়ে কাজে নিমগ্ন থাকতেন। বিদায় ভাষণে বিষেশণ প্রয়োজন হয়। হে বীর, যে পথিক, হে মহান। জলিল সাহেব নিচু পদের মানুষ। তাকে বীর বা মহান বললে অপেক্ষাকৃত তরুণ ছেলেগুলোর পদমর্যাদা আহত হবে। হিসাব কর্মকর্তা বললেন এই মানুষটির ত্যাগ আর তিতিক্ষা এই অফিসের দৃষ্টান্ত। ধন্যবাদ জানানোর আগে মিস শিউলী একটা ব্যাগ তুলে দিলেন জলিল সাহেবের হাতে। এক সাথে দশজোড়া হাত করতালি দিয়ে ধন্যবাদের ষোলকলা পূর্ণ করলেন।
জলিল সাহেব ভাল অভিনেতা না। পয়ঁতিরিশ বছর আগের মানুষটিও অভিনয় পারতেন না।
অফিসের গত তিন বছরে অনেকের বেতন বেড়েছে। নতুন পদ সৃষ্টি হয়েছে অনেকগুলো।এমন কি নাইটগার্ড একজনের জায়গায় তিনজন এসেছে। প্যাকেজিং এর সেকশনে ব্যবস্থাপক হিসেবে নিযুক্ত হয়েছেন একজন। অবশ্য নতুন পদগুলোর অফিসের সম্পর্কের পাশাপাশি কোন না কোন ভাবে তারা অন্য কর্মকর্তাদের আত্মীয়স্বজন। হিসাব নিরীক্ষকের পদে যিনি তার অন্য পরিচয় সে মহাব্যবস্থাপকের মামাতো ভাই। বিক্রয় অফিসার হারু ইসলামের স্ত্রীর বোন শিউলী পারভীন। আবার নাইটগার্ডগুলো মহাব্যবস্থাপকের গ্রামের পরিচিত। জলিল সাহেব কারোই পরিচিত নয়। রেন্ডি শিমুল কড়ই গাছের ভিড়ে একটা চাঁছাছোলা খেজুর গাছ ছিলেন। জলিল সাহেব।
জলিল সাহেবের বিদায়ের দিবস হলে এটা খুশির দিন ছিল অনেকের কাছে। বাইরে থেকে হয়তো দয়াপরবশত হয়ে খাবারের অর্ডার দেয়া হয়েছিল। স্ন্যাক্স, কেক আর চা। চামুচে কেক তুলতে তুলতে শিউলী এডমিনের জুনিয়ার ছেলে জুলহাসকে বলছিল এই দোকানের কেক তার খুব প্রিয়। জুলহাস তখন দোকানে পাওয়া যায় কেকগুলোর নাম শুনছিল এবং ব্ল্যাকফরেস্ট কেকটা কিনে খাবে বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। অফিস পুরনো ঢাকা থেকে আধুনিক ঢাকায় স্থানান্তরিত হবার আগে খোলা জায়গায় সব বসতো। এখন সবার ভেতর দেয়াল উঠে গেছে। খুপরির মত বলে প্রত্যেকেই যার যার মত কাজ করে। আজ যারা উপস্থিত তাদের ভেতর নতুন তিনজন জলিল সাহেবকে জানতেন না। হয়তো দেখেছেন কিনা তাও নিশ্চিত না। একজন বললেন জলিল সাহেবের কোন ছেলে থাকলে তাকে এই চাকরীটা দেয়া যেত।
অফিসে পুরোনো টাইপরাইটারটা মুছে রেখেছেন জলিল। ওটা চাইলে বাড়িতে নিয়ে যাওয়া যেত। ফিতে খুলে এসেছে। রিবনে কালি নেই। টাইপরাইটারটার অফিসে থাকার কোন অধিকার নেই। বাড়ির স্ত্রী, পুত্র যেমন অন্যকে ধার দেয়া যায় না। টাইপরাইটারটাও কাউকে দেয়া যাবে না। অনুষ্ঠান শুরু হবার আগে জামার হাতা দিয়ে টাইপের কে অক্ষরের উপর হাত বুলিয়ে দিলেন। কে কে চাপলেন। কুদ্দুস কামাল লোকটি কি বেঁচে আছেন? বহু বছর আগে ঘোড়াশাল থেকে ঢাকায় আসার সময় বেকার যুবককে দেখে কুদ্দুস কামালের মায়া হয়েছিল। কোন পর্যন্ত পড়াশোনা, ডিগ্রি পড়া অবস্থায় আব্বা মারা গেছেন। পরীক্ষা দেয়া হয় নাই কেন? ডিগ্রি পাশ না করে চাকরী হয়? টাইপিং শিখেছি। ইংরেজির স্পিড ভালো। কুদ্দুস কামাল জানতে পারলো জলিলের মেধা আছে। ছেলেটি সৎ। সে বলেছে সে মেসে থাকার সময় একটা প্রুফরিডার হিসেবে কাজ করছে চকবাজারে নজরুল প্রিন্টার্সে। বিবাহ? জি! করি নি। বলেছিল জলিল। কোন কিছু আনপেইড না। এটা কার মনে এসেছিল? জলিলের? কে.কের?
কুদ্দুস কামাল তাকে একটা জব দিয়েছিল। তেমন কোন কাজ নেই। বসে থাকতে হতো, মাঝে মাঝে জামার পাইকারী কাস্টমারদের সাথে কথা বলতে হতো। একটি মাস প্রায় কর্মহীন আরামের চাকুরী করার পর কুদ্দুস কামাল তাকে বলেছিল, জগতে কিছুই ফ্রি না। তার বোনটির সাথে বিবাহের বিষয়ে কথা বলা জরুরী। জলিল তরুণ বয়সে হ্যা বা না শক্ত করে বলতে শেখে নি। সে শুনেছিল শৈশবে পোলিওতে চলৎশক্তিহীন হয়ে যাওয়া কুদ্দুস কামালের এক বোনকে স্ত্রী হিসেবে গ্রহণ করতে হবে।
জলিল নিজেকে আয়নায় দেখেছিল একজন বিকল মানুষ হিসেবে। যে মানুষটির পা নেই। হাত নেই। মাথার জায়গাটা ফাঁকা। পরদিন সুলিখিত একটা রেজিগনেশন পত্র দিয়ে সে বেরিয়ে আসলো। পকেটে খুচরো পয়সা শব্দ করে তার প্রতিবাদ করে। কখনো পয়সার কথা না শুনলে হয় না।
জলিল সাহেব বেরিয়ে এসেছিল। সেদিন দেরী করে বাস এলো। এক যুবক তাকে নিজেই পথ ছেড়ে দিলো উঠতে। দোকানের উপর লেখা কম্পিউটার ট্রেনিঙ সেন্টার। এই মাত্র দুজন বেরিয়ে এসেছে। একসময় এই জায়গাতে টাইপ শেখানো হতো। মানুষের বদল হয়েছে।
জানালাটা তুলে দেন, ধূলা আসে।
আচ্ছা ভাই। ধন্যবাদ।
--
ড্রাফট ০.১ / অর্ধসমাপ্ত। অনুশীলনের জন্য লেখা। চলবে।
২| ১৭ ই আগস্ট, ২০১৩ বিকাল ৩:১২
সকাল রয় বলেছেন: কবে পাবো পুরোটা
৩| ১৭ ই আগস্ট, ২০১৩ বিকাল ৫:২৬
মাঈনউদ্দিন মইনুল বলেছেন: আটপৌড়ে নিম্নমধ্যবিত্ত জলিলদের জীবন এর চেয়ে রঙীন হয় কী করে...
বেশ সাবলীল লেখা! ভালো লাগলো
পরবর্তি পর্বের অপেক্ষায় থাকলাম
৪| ১৭ ই আগস্ট, ২০১৩ রাত ১১:০১
প্রোফেসর শঙ্কু বলেছেন: পরের পর্বের অপেক্ষায় রইলাম।
৫| ১৮ ই আগস্ট, ২০১৩ সকাল ৯:৪৪
কান্ডারি অথর্ব বলেছেন:
চলুক সাথেই আছি
©somewhere in net ltd.
১|
১৭ ই আগস্ট, ২০১৩ ভোর ৬:৫০
খেয়া ঘাট বলেছেন: আসল লিখার অপেক্ষায় রইলাম।