নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমিই একমাত্র ইলেক্ট্রন যে কিনা নিউক্লিয়াসে আটকে আছে

নিউক্লিয়াসে অবস্থানরত ইলেক্ট্রন

নিউক্লিয়াসে অবস্থানরত ইলেক্ট্রন › বিস্তারিত পোস্টঃ

ভুলকন্যা

০৫ ই মে, ২০১৪ সকাল ৯:১৫

"এই চুড়িগুলা তোমার জন্য"

রাকিবের মুখ থেকে কথাটা শুনে খুব ভালো লাগলো শারমিনের। ছেলেটা ওকে মারাত্মক ভালোবাসে। তা নাহলে কেউ সারাক্ষণ এভাবে একজনের খেয়াল রাখে!

প্রত্যেকটা দিন এমন করে গিফট কিনে দেয় নাকি!



==========================

সবেমাত্র ক্লাস টেনে ওঠা শারমিন ভালোবাসার কি বোঝে আমার জানা নেই। স্কুলের রাস্তায় কিংবা বাড়ির সামনে দাড়িয়ে থাকা মোটামুটি সুদর্শন যুবকদের প্রেমে পড়াটা ওদের জীবনের প্রথম ভুলই হয়ে থাকে। চলুন পড়ে আসি তেমনই একটি ভুলের গল্প।

========================







"দেখ দেখ শারমিন, রাকিব ভাই তোর দিকে কিভাবে তাকাচ্ছে! " কনুই দিয়ে খোঁচা মেরে শারমিনকে জানায় ওর বান্ধবী।

"এ আর নতুন কি! সবসময়ই তো তাকায়! "

শারমিন লজ্জাবনত মুখে বললো। ওর ভিতর কিছুটা অহংকারও কাজ করে। পাড়ার সবচেয়ে সুন্দরী মেয়ে সে। তার উপর এলাকার বাইকওয়ালা সুদর্শন রাকিব ভাই ওর প্রেমে পড়েছে! একটু অহংকার দোষের কিছু না!



"শারমিন দাঁড়াও। "

ছেলেটার ডাকে দাঁড়িয়ে পরে শারমিন আর ওর বান্ধবীরা। একটা চিঠি আর ফুল হাতে গুঁজে দিয়ে বাইক হাঁকিয়ে চলে যায় রাকিব। চিঠি আর ফুল লুকিয়ে নিয়ে তাড়াতাড়ি বাড়ির দিকে রওনা হয় মেয়েটা।



বিশাল চিঠি! চার পৃষ্ঠা!!

মনটা আনন্দে দোলা দিয়ে উঠে শারমিনের। কিন্তু আরো কিছুটা দিন সময় নিতে চায় ও। এখনই পাত্তা দেয়া যাবে না।



***



চিঠির উত্তর না পেয়ে রাকিবের মাথা খারাপ হওয়ার জোগাড়। ক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও ব্যপারটাতে সময় নিতে চাচ্ছে সে। তবে এখন আবার তর সইছে না!

"দোস্ত! পাখি এতো দেরী করে কেন! খাঁচায় ধরা দেয় না কেন! " বিরক্তি নিয়ে বন্ধুর সামনে চুল টানাটানি করছে রাকিব।

"ধৈর্য ধর দোস! আর অল্প কিছুদিন। "

"না! আজকেই! আজকেই ফাইনাল চাই"

রাকিব রাগে ফোঁসফোঁস করে।

"তাইলে দোস্ত একটু কষ্ট কর! "



বন্ধুর পরামর্শে হাত কেটে ফেলে রাকিব। বাড়ি ফেরার পথে রাকিবের কাঁটা হাত দেখে ঝরঝর করে কাঁদলো শারমিন।

এভাবেই ভুলে ভরা গল্পের প্রথম অধ্যায় শুরু হলো।







দুই মাসের প্রেম হলেও ওরা একে অপরকে দারুণ ভাবে ভালোবাসে। শারমিনের ধারণা রাকিবের মতো ভালো ছেলে এই গ্রামে একটাও নেই।

তবে সেদিনের ঘটনাটাই পাল্টে দিলো মেয়েটার ভুল ধারণা অথবা পুরো পৃথিবী।



***



"দোস! আর দেরি করা যাইবো না। এক মালের পিছনে আর কত টাকা ঢালুম! "

সিগারেটটা ধরিয়ে বন্ধুর উদ্দেশ্যে রাকিব।

"হুম! তা ঠিক কইছোস! তাইলে আজকেই ফাইনাল? "

"হ"

দুজনের মুখেই বিশেষ এক অর্থবহ হাসি। ওরা শারমিনের ছুটির অপেক্ষায় .....



***



"শারমিন! এদিকে একটু আসো তো। "

জামালের ডাক শুনে দাড়িয়ে পড়লো শারমিন। জামাল রাকিবের বন্ধু।

"কি হইছে ভাইয়া? রাকিব আসে নাই? "

শারমিনের কন্ঠে কিছুটা আফসোস। ছেলেটাকে না দেখতে পেয়ে একটু হতাশ।

"রাকিব ওই বাজারের দিকে গেল। তোমারে কেন জানি নিয়ে যাইতে বললো। "

এটা সেটা ভেবে শারমিন বাইকে চড়ে বসলো। বাজারের দিকেই তো যাবে। সামনে নেমে রাকিবকে আসতে বললেও হবে....।

শারমিনের সব ভাবনায় ছেদ পড়লো জামালের দিক পরিবর্তন খেয়াল করার পর। কিন্তু তখন আর কিছুই করার নেই।

"ভাইয়া আপনি কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন? "

"ভাইয়া! রাকিব কই? "

"ভাইয়া আমাকে নামিয়ে দেন। "

নিরুপায় মেয়েটা থেমে থেমে প্রশ্ন করেই সারাটা পথ কাটালো।



***



গ্রামে বন জংগলের অভাব নেই। আশেপাশে কিছু বাড়ি থাকলেও শারমিনকে নিয়ে ওখানেই নামলো জামাল। বেশিদূর গেলে ঝামেলা হতে পারে এই ভয়ে।

একটা ঝোপের আড়ালেই দেখা গেল রাকিবকে।

"রাকিব! এইসব কি! জামাল ভাই আমারে এইখানে নিয়ে আসলো কেন? "

শারমিন কাঁদতে কাঁদতে জিজ্ঞেস করলো রাকিবকে। মেয়েটার গায়ের ওড়নাটা এক টানে খুলে নিয়ে প্রশ্নের উত্তর দিলো রাকিব।

"***** তোর জন্য হাত কাঁটলাম। কত টাকা ঢাললাম। একটু মজা দিবি না? '



ব্যস এটুকুই। এরপর জামালের ভালো মানের মোবাইল ক্যামেরায় ধারণ করা হলো মেয়েটাকে লাঞ্চিত করার দৃশ্য। একপর্যায়ে স্বেচ্ছায় জামা কাপড় খুলতে বলা হলেও রাজি হলো না মেয়েটা। বুকে সর্বশক্তি দিয়ে বই চেপে ধরে রেখে নিজেকে সেইফ করতে চাইলো। হয়তো কিছুটা পারলো, একেবারেই অল্প। তবুও অনেক। একটা সময় রাকিব ভালো করে বুঝালো,

"তুমি যদি স্বেচ্ছায় না করো তাহলে এতটুকু ভিডিও নেটে ছেড়ে দেবো। "

এরপর শারমিন কিছুক্ষণ চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকলো। ভেবেছিলাম মেয়েটা রাজি হয়ে যাবে। কিন্তু হয়নি। খুব চালাকি করে শারমিন ধস্তাধস্তি করতে করতে রাস্তার পাশে চলে আসলো। তারপর হঠাৎ জোরে দৌড় .........



========================

আমি জানিনা এরপর শারমিনের কি হয়েছিল। তবে এটুকু জানি যে, এক কি দুই দিনের মাথায় ওই ভিডিওটা বাজারে চলে এসেছিল। এলাকার প্রত্যেকটা মানুষের ফোনে শারমিনের চিৎকার .....

"ছেড়ে দাও আমাকে ....প্লিজ ....."

কথাগুলো শুনে মানুষ হাসে। তারা আনন্দ পায়। আমার বন্ধুর এক আত্মীয়র ঘটনা এটা। প্রসঙ্গ টেনে একদিন ভিডিওটা দেখালো আমাকে। কোন এক সাধারণ কারনে আমার চোখ বেয়ে টুপটাপ পানি ঝরেছিল। হতে পারে আমি অতিরিক্ত আবেগপ্রবণ। কিন্তু আমার মনেহয় মানুষের অসহায়ত্ব দেখে দুঃখ পাওয়ার জন্য আবেগের চেয়ে মনুষ্যত্বের প্রয়োজন বেশি।

শারমিনের দৃঢ়তা ছিলো বেশ। কিন্তু এটা অসময়ে কেন? কেন সে এভাবে বিশ্বাস করলো! অনেক প্রশ্ন আমার মাথায় ঘুরপাক খায়। কিন্তু ওই মন খারাপ কিংবা কান্নাতেই থেমে যায় সব। আপনারও হয়তোবা তাই।

শারমিনরা ভুল করে। মাশুল দেয় তাদের বাপ মা। লজ্জায় মাথা কাটা যায় তাদের।



আমি জানিনা ওই মেয়ে কিংবা ছেলের আসল নাম। একটা পর্ণ (!) ভিডিও দেখেই গল্প লিখে ফেলা আমার মতো বেহায়া ছেলের জন্যই মানায়।



গল্পের চরিত্র হয়ে যাওয়া শারমিনদের পাশে আমরা দাড়াতেই পারি, তবে উস্কানি দেয়ার জন্য না-নতুন করে তাকে বাঁচানোর জন্য। একটা ভুলের কারনেই যে হারিয়ে যেতে হবে এমনটা না। কিন্তু আমাদের সুশীল সমাজ ভুলেভরা "নারী"কে গ্রহণ করে নিতে পারেনা।

অথচ গোপনে একাধিক পরকীয়া করা বউয়ের বুকে সুখ খোঁজে তারা!

বহুগামী গার্লফ্রেন্ডের চোখে কেউ দেখে ঘর বাঁধার স্বপ্ন! তাতে কোন দোষ নেই। সব দোষ ভিডিও হয়ে যাওয়া "ভুলকন্যার"!

কি অদ্ভুত আমরা।

মন্তব্য ২ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ০৫ ই মে, ২০১৪ সকাল ১০:০৫

দয়ালু বলেছেন: "সব দোষ ভিডিও হয়ে যাওয়া "ভুলকন্যার"!
কি অদ্ভুত আমরা।" মন খারাপ করে দিলেন

২| ০৫ ই মে, ২০১৪ সকাল ১০:০৫

দয়ালু বলেছেন: "সব দোষ ভিডিও হয়ে যাওয়া "ভুলকন্যার"!
কি অদ্ভুত আমরা।" মন খারাপ করে দিলেন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.