নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

বল বীর চির উন্নত মম শির !

শাহারিয়ার ইমন

শাহারিয়ার ইমন › বিস্তারিত পোস্টঃ

ছোটগল্প - উইপোকার ঢিবি

০৬ ই এপ্রিল, ২০১৬ দুপুর ১:৫০



প্রতিদিন বিকেলে পায়রা নদীর তীরে বটগাছের তলায় নির্জন জায়গায়টিতে অনু সময় কাটাতে আসে।বাড়িতে থাকলে বিকেল বেলা বটতলায় না আসলে ওর ভাল লাগে না । অনুর বাসা থেকে নদীর তীরের বটতলা আধাঘন্টার হাঁটারপথ।অনু বাড়ির পাশে মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে অষ্টম শ্রেণীতে পড়ে। বিদ্যালয় থেকে ফিরেই গোসল ,খাওয়া দাওয়া সেরে বটতলায় যায় । এই বয়সে ওর বন্ধুরা সব হৈ হুল্লোড় আর নানা রকমের খেলাধূলায় মেতে থাকে ,সেখানে ওর এরকম একা একা থাকা একটু না বেশ ব্যতিক্রম । বটতলায় অনু মাটি থেকে একটু উপরে কয়েকটা বাঁশের খুঁটির উপরে কাঠের তক্তা বসিয়ে নিজের বসার মত জায়গা বানিয়ে নিয়েছে ।অনুর পোষা একটা টিয়া পাখি আছে ।পাখিটিকেও নিয়ে আসে এখানে । গতবছর অনুদের বাড়ির পুকুর পাড়ের বড় কাঠ বাদাম গাছে টিয়াপাখি বাসা বেঁধেছিল । পাখিটিকে বাচ্চা অবস্থায় অনু ওদের বাড়ির বড় কাঠবাদাম গাছের গর্ত থেকে চুরি করে এনেছে । বাচ্চা পাখিকে অনেক কষ্ট করে বড় করেছে । পাখিটি তার সাথে সবসময় থাকে । এজন্য সে যদিও খুবই খারাপ একটা কাজ করেছে ।পাখিটির পাখা কেটে দিয়েছে যতে উড়ে না যেতে পারে ।টিয়াপাখি বড় হলে নাকি কথা বলতে পারে , এজন্যই অনু টিয়া পাখির বাচ্চা এনেছিল ।একবছর হয়ে গেছে ,এখনও তার পোষা টিয়াটা কথা বলতে পারেনা । টিয়াটির সে একটা নাম দিয়েছে তার নিজের নামের সাথে মিল রেখে , “টুনু “। “ টুনু “ ডাকলেই টিয়াটি তার দিকে তাকায় আর শিষ দেয়া ।শিষ দেয়াও অনু তাকে শিখেয়েছে ।
অনু বটতলায় বসে টুনুকে কথা বলা শিখাচ্ছে ,“এই টুনু বল ,আমার নাম টুনু ।অনু আমার বন্ধু । “
টুনু অনুর দিকে তাকিয়ে শিষ দেয় আর ট্যা ট্যা করে ।
অনু বেশ কয়েকবার চেষ্টা করে । “ধ্যাত,এই পাখি আর কথা কইবে না “ বলে রাগে গর্জে টুনুকে দূরে ছুড়ে মারে ।
পরক্ষনেই তুলে এনে গায়ের ময়লা মুছে বুকে তুলে নেয় । “ টুনু ,আমার লক্ষ্মী টুনু “ বলে চুমু খায় ।
টুনু শুধু শিষ দেয় ।
গ্রীষ্মকাল চলছে ।নদী থেকে মৃদুমন্দ বাতাস ভেসে আসে । সেই বাতাসে অনু গান ধরে “আমায় ভাসাইলি রে-এ আমায় ডুবাই লি রে-এ ,অকুল দরিয়ার বুঝি কূল নাইরে। “
আর পারেনা বারবার একই লাইন গান মুখে বাজতে থাকে । গানটি সে তার দাদুর মুখে শুনেছিল ছোটবেলায় । রাতে তার দাদু হ্যাজাক বাতি জ্বালিয়ে গানের আসর বসাত ।একতারায় সুর তুলে গান গাইত ।সেই গান যেন আকাশে বাতাসের কান্না হয়ে সারা রাত ভেসে বেড়াত ।দাদুর গান মন খারাপ করা গান ছিল । গান শুনতে শুনতে অনুর চোখ নিজের অজান্তেই জলে ভরে উঠত ,হ্রদয়ে উঠত যেন হাহাকারের স্রোত । দাদুর গামনে হয়ত জমা অনেক কষ্ট ছিল,গানের সুরে সেই কষ্ট সবার হ্রদয়ে কম্পন তুলত । দাদু এখন আর নেই । দুই বছর আগে ঝড়ের রাতে গাছের নিচে চাপা পড়ে মারা যায় ।
অনুকে বাঁচাতে গিয়েই তার দাদু আজ নেই । প্রচন্ড ঝড় হচ্ছিল সেই রাতে আর গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি । অনুদের ঘরের পাশে ছিল মস্ত বড় নারিকেল গাছ । ঝড় হলে নারিকেল গাছটা একবার তাদের ঘরের চালা ছুঁই ছুঁই করে আবার সোজা হয়ে দাঁড়ায় । সেই রাতে অনু নয়টা কি দশটার দিকে ঘুমিয়ে পড়ে ।ভীষণ চেঁচামেচিতে মুখ ভেঙ্গে দেখে মুখ থুবড়ে উঠানের কাঁদার মাঝে পড়ে আছে ।তার পিছনেই নারিকেল গাছের মাথা আড়াআড়ি করে তাদের ঘরের চালার মাঝ দিয়ে পড়ে আছে ।
সবাই দৌড়াদৌড়ি করছে ।অনুর বাবা চিৎকার করে বলতেছে , “আব্বা গাছের নিচে চাপা পড়ছে রে ,কেঠা কই গেলি ,আমার অনুরে বাঁচাতে গিয়া বাবজান গেছে রে “ । বাবা চিৎকার করে কাঁদছে আর কাঁদছে । তখন আমার চাচারা আরো কয়েকজন এসে দাদুকে উদ্ধার করে । তারপর দাদু আর ফিরে আসেনি ।
সেই রাতে অনুর নিজের প্রতি নিজের প্রচন্ড ঘৃনা জন্মেছিল । অনুর জন্যই এভাবে দাদুকে প্রাণ দিতে হয়েছিল ।
হঠাৎ টিয়ার ট্যা ট্যা শব্দে অনুর সম্বিত ফিরে আসে ।
অনুর চোখের জল টুনুর গায়ে পড়েছে দেখে ও ট্যা ট্যা করে উঠেছে ।
তখন অনু পিছনে তাকিয়ে দেখে তার দুই বন্ধু রিপন আর শিমুল তাকে নিয়ে কথা বলতেছে ।
শিমুল বলতেছে , “ অনুটা এমন ছিল না রে রিপু । আমাদের সাথে ঘুরত ,খেলত ,ঘুড়ি উড়াত ,নদীতে ঝাঁপ দিত । আর এখন কেমন যেন হয়ে গেছে রে । “
রিপন তারপর বলল , “ হয় রে শিমুল । এখন কারও সাথে তেমন কথাই বলে না । ওর দাদু মারা যাওয়ার পরই ও এরকম হয়ে যায় । জানিনা আবার আগের মত আমাদের মাঝে ফিরে আসবে কিনা । “
ওরা ওদের মত কথা বলতে বলতে চলে যাচ্ছে । অনু আর ওদের কথা শুনতে পারছেনা । হয়ত ওকে নিয়েই বলছে ।
অনু তখন নিজেকে নিয়ে ভাবা শুরু করল ,
আমি সত্যি কি অনেক বদলে গেছি ? তা জানিনা । শুধু দাদু মারা যাবার পর আমার আর কিছু ভাল লাগেনা এখানে বসে থাকা ছাড়া । খুবই অপরাধবোধ জাগে মনে ।
সন্ধ্যে হয়ে আসছে ।সূর্যটা যেন আস্তে আস্তে নদীর ভিতর ডুবে যাচ্ছে ।
না এবার ফিরতে হবে । মা অপেক্ষা করছে কখন আমি আবার তার কোলে ফিরে যাব ।





মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ০৬ ই এপ্রিল, ২০১৬ রাত ১০:৪২

শাহরিয়ার কবীর বলেছেন: ভাল লিখেছেন।
শুভ ব্লগিং

২| ০৭ ই এপ্রিল, ২০১৬ রাত ২:৩৩

শাহারিয়ার ইমন বলেছেন: ধন্যবাদ ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.