নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

বল বীর চির উন্নত মম শির !

শাহারিয়ার ইমন

শাহারিয়ার ইমন › বিস্তারিত পোস্টঃ

চর্যাপদ থেকে নেয়া ।

০১ লা নভেম্বর, ২০১৮ সকাল ১০:১৬




চর্যাপদ বাংলা সাহিত্যের অন্যতম প্রাচীন নিদর্শন । চর্যাপদ নিয়ে আগা-গোড়া জানতে চাইলে দুঃখিত তার জন্য এই লেখা নয় । চর্যাপদ থেকে নেয়া কয়েকটা পদ এবং প্রবাদ নিয়ে লিখব শুধু । তার আগে বলে নেই চর্যাপদের ভাষা অস্পষ্ট ও দুর্বোধ্য এজন্য চর্যাপদের ভাষাকে হরিপ্রসাদ শাস্ত্রী সন্ধ্যা ভাষায় লিখা কিছু আলো কিছু অন্ধকার মানে হল গিয়ে কিছু বোঝা যায় কিছু বোঝা যায়না ।

ডক্টর মোহাম্মদ শহীদুল্লার মতে চর্যাপদের ভাষা বঙ্গকামরুপী । চর্যাপদে ৫ টি ভাষার মিশ্রন রয়েছে ; বাংলা ,হিন্দী ,মৈথালি,অসমিয়া ,উড়িষ্যা ।

চর্যাপদে ৬ টি প্রবাদ আছে । প্রবাদ গুলোের ২/১ টা অনেকেরই হয়ত জানা । প্রবাদগুলোতে জ্ঞানদীপ্ত কথা ফুটে উঠেছে ।

১)আপণা মাংসে হরিণা বৈরী => ( হরিণের মাংসই তার জন্য শত্রু) ।

২) দুহিল দুধ কি বেন্টে সামায় => ( দোহন করা দুধ কি বাটে প্রবেশ করানো যায়? )

৩) হাতের কাঙ্কণ মা লোউ দাপন =>( হাতের কাঁকন দেখার জন্য দর্পন প্রয়োজন হয় না।)

৪)হাড়ীত ভাত নাহি নিতি আবেশী => (হাড়িতে ভাত নেই তবু প্রতিদিন অতিথি আসে।)

৫) বর সুন গোহালী কি মো দুঠ্য বলংদেঁ => (দুষ্ট গরুর চেয়ে শূন্য গোয়াল ভাল।)

৬)আন চাহন্তে আন বিনধা => (অন্য চাহিতে, অন্য বিনষ্ট।)


এবার চর্যাপদের কিছু পদ নিয়ে আলোচনা করা যাক ।


চর্যাপদের প্রথম পদের দুটি চরন ; (লিখেছেন লুইপা )

"কাআ তরু বর পাঞ্চ বি ডাল
চঞ্চল চীএ পৈঠা কাল ।"


"কায়া তরুর মত তার পাঁচটি তার ডাল
চঞ্চল চিত্তে কাল প্রবেশ করছে ।"


কুক্কুরীপা তাঁর একটি পদে (২ নং) বলেছেন-

" দিবসহি বহুড়ী কাউহি ডর ভাই।
রাতি ভইলে কামরু জাই ।"


"দিনের বেলা বউটি কাকের ভয়ে ভীত হয়
কিন্তু রাত হলেই কামরূপ যায় ।"



গুণ্ডরীপাদের একটি পদ পার্থিব প্রেমের তীব্র আর্তিতে জীবন্ত:

“যোইণি তঁই বিণু খনহিঁ ন জীবমি
তো মুহ চুম্বী কমলরস পীবমি”'


যোগিনী, তোমাকে ছাড়া মুহুর্তকালও বাঁচব না।
তোমার মুখ চুম্বন করে কমলরস অর্থাৎ পদ্মমধু পান করব।


শবরপাদের একটি পদে দেখা যায় নরনারীর প্রেমের এক অপূর্ব চিত্রণ –

উঁচা উঁচা পাবত তঁহি বসই সবরী বালী।
মোরঙ্গি পীচ্ছ পরহিণ সবরী গীবত গুঞ্জরী মালী।।
উমত সবরো পাগল শবরো মা কর গুলী গুহাডা তোহৌরি।
ণিঅ ঘরনি ণামে সহজ সুন্দারী।।
ণাণা তরুবর মৌলিল রে গঅণত লাগেলি ডালী।
একেলী সবরী এ বণ হিণ্ডই কর্ণ কুণ্ডলবজ্রধারী।।



''উঁচু পর্বতে শবরী বালিকা বাস করে।
তার মাথায় ময়ূরপুচ্ছ, গলায় গুঞ্জামালিকা।
নানা তরু মুকুলিত হলো। তাদের শাখা-প্রশাখা আকাশে বিস্তৃত হলো।
শবর-শবরীর প্রেমে পাগল হলো।
কামনার রঙে তাদের হৃদয় রঙিন ও উদ্দাম। শয্যা পাতা হলো।
শবর-শবরী প্রেমাবেশে রাত্রিযাপন করলো।"

চাটিল লিখছেন দার্শনিক কথাবার্তা – (পদ ৫)


“ভবণই গহণগম্ভীরা বেগেঁ বাহী।
দুআন্তে চিখিল মাঝেঁ ন ঠাহী।"

" ভবনদী গহন ও প্রবল বেগে প্রবহমান।
তার দুইতীর কর্দমাক্ত ও পিচ্ছিল"।




কুক্কুরীপা মনে হয় একটু রসিক ছিলেন । তার এই পদ প্রমান ;

দুলি দুহি পিটা ধরণ ন জাই।
রুখের তেন্তুলি কুম্ভীরে খাঅ।।”


" মাদী কাছিম দোহন করে দুধ পাত্রে রাখা যাচ্ছে না।
গাছের তেঁতুল কুমিরে খাচ্ছে।"


৩৮তম পদে নদী ও নৌকার কথা উল্লেখ আছে -

"কাঅ ণাবডহি খান্টি মন কেডুয়াল।
সদগুরুবঅণে ধর পতবাল।"



"কায় [হইল] ছোট নৌকাখানি, মন [হইল] কেরোয়াল।
সদ্গুরু-বচনে পতবাল (পাল) ধর।''



বীণাপাদের ১৭তম পদটিতে আছে–

“নাচন্তি বাজিল গান্তি দেবী।
বুদ্ধ নাটক বিষমা হোই।।”

"বজ্রযান নাচছেন, দেবী গাইছেন
আর বুদ্ধনাটক অভিনীত হচ্ছে।"



শেষ করছি কাহ্নপা এর কয়েকটি পদ দিয়ে ;

'' আলো ডোম্বী তোএ সম করিব ম সাঙ্গ।
নিঘিণ কাহ্ন কাপালি জোই লাগ ।''


"ওলো ডোমনী, আমি তোর সঙ্গে সাঙ্গা করবো।
আমি ঘৃণাহীন এক নগ্ন,কাপালিক যোগী।"


"তান্তি বিকণঅ ডোম্বি অবর না চঙ্গেড়া।
তোহোর অন্তরে ছাড়ি নড়এড়া॥''


"তুই না তাঁত আর চাঙারি বিক্রি করিস,
তোর জন্যে আমি নটের ঝাঁপি ত্যাগ করলাম।"



সবার জন্য কুক্কুরীপার একটি পদ লিখে দিলাম ।পারলে অনুবাদ করে দেখান ;

" ভনথি কুক্কুরিপা এ ভব থিরা।
জো এথু বুঝএ সো এথু বীরা ।"




তথ্যসূত্র ; উইকিপিডিয়া ,ইন্টারনেট ।

মন্তব্য ১৪ টি রেটিং +৩/-০

মন্তব্য (১৪) মন্তব্য লিখুন

১| ০১ লা নভেম্বর, ২০১৮ সকাল ১১:৩৭

কাওসার চৌধুরী বলেছেন:



বাংলা সাহিত্যের অন্যতম প্রাচীন নিদর্শন চর্যাপদ। এজন্য 'চর্যা'র পদগুলোর গুরুত্বও বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে খুব গুরুত্বপূর্ণ। আর চর্যার প্রবাদ-প্রবচনগুলো হলো বাংলার মানুষের আবেগ, অভ্যাস ও সংস্কৃতির এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।

০১ লা নভেম্বর, ২০১৮ রাত ১০:৪৪

শাহারিয়ার ইমন বলেছেন: কিন্তু চর্যাপদ নিয়ে আমাদের স্কুল-কলেজ লেভেলে কোন কিছুই পড়ায় না ; বড় দু;খের বিষয়

২| ০১ লা নভেম্বর, ২০১৮ দুপুর ১২:০৫

মনিরুজ্জামান বলেছেন: আহ, চর্যাপদ, শান্তির জায়গা!

০১ লা নভেম্বর, ২০১৮ রাত ১০:৫৮

শাহারিয়ার ইমন বলেছেন: শান্তি ঠিক কিন্তু বুঝতে অনেক কষ্ট ।

৩| ০১ লা নভেম্বর, ২০১৮ দুপুর ২:৫১

রাকু হাসান বলেছেন:


এখনও প্রত্যেকটি বাক্য আগ্রহ হারায় নি । অনুবাদ করতে বলছেন ! আমার দ্বারা অসম্ভব । :(

০১ লা নভেম্বর, ২০১৮ রাত ১০:৫৯

শাহারিয়ার ইমন বলেছেন: না পারলে অনুবাদ দেয়া হবে ।টেনশন নাই ।

৪| ০১ লা নভেম্বর, ২০১৮ বিকাল ৩:০৬

মনিরা সুলতানা বলেছেন: বার বার পড়ার মত পোস্ট !
প্রিয়তে রাখলাম , অনুবাদ পরের মন্তব্য :)

০১ লা নভেম্বর, ২০১৮ রাত ১১:০০

শাহারিয়ার ইমন বলেছেন: অনেক অনেক ভাল লাগল মনিরা আপুর কথা শুনে ।

৫| ০১ লা নভেম্বর, ২০১৮ বিকাল ৩:৪৩

রাজীব নুর বলেছেন: সেই রকম পোষ্ট। কঠিন তবে আনন্দ আছে।

০১ লা নভেম্বর, ২০১৮ রাত ১১:০১

শাহারিয়ার ইমন বলেছেন: নিজ শিকড়ের কথা । আনন্দ তো থাকবেই

৬| ০১ লা নভেম্বর, ২০১৮ রাত ১১:১৩

Sujon Mahmud বলেছেন: বুঝিনা

০১ লা নভেম্বর, ২০১৮ রাত ১১:২৪

শাহারিয়ার ইমন বলেছেন: কি বুঝেন না ?

৭| ০২ রা নভেম্বর, ২০১৮ দুপুর ২:১৪

টারজান০০০০৭ বলেছেন: অসাধারণ পোস্ট। সেই কাহ্নপা , লুইপার দেখা আবারো পাইলাম। দারুন লাগলো।

০২ রা নভেম্বর, ২০১৮ বিকাল ৩:১৩

শাহারিয়ার ইমন বলেছেন: ধন্যবাদ টারজান

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.