নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি একজন পরিব্রাজক

এমরান আলী

আশ্রুতভূমি

এমরান আলী › বিস্তারিত পোস্টঃ

বিচূর্ণ রাজনীতির সদ্ব্যবহার

০৩ রা ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ দুপুর ২:২৬



মার্ক লিওনার্ড

যুক্তরাজ্যে ইউরোপীয় ইউনিয়ন ছাড়ার পক্ষে ভোট আর যুক্তরাষ্ট্রে ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়া - এই দুটো ঘটনাই তুলে ধরেছে এক গভীর প্রজন্মগত বিভাজন। একদিকে একুশ শতকের শুরুতে বেড়ে ওঠা তরুণ - তরুণী, অন্যদিকে পেনশনভোগী জাতীয়তাবাদী - থমাস ফ্রিডম্যান যাদের বলেন "ওয়েব পিপল" আর "ওয়াল পিপল" - মনে হচ্ছে এই দুই প্রজন্মের মধ্যে কোনো মিলই নেই।
কিন্তু দুটো ঘটনাই আমাদের মনোযোগ নিয়ে যায় একটি সংকটের দিকে - রাজনৈতিক প্রতিনিধিত্বের সংকট।
যুক্তরাজ্যে "লিভ" এর পক্ষে ২৪ বছরের কম বয়েসী ১ জন ভোটারের স্থলে ৬৫ বছরের বেশি বয়েসি ভোটার ছিল ৩ জন। যুক্তরাষ্ট্রে ট্রাম্পের বিজয় এসেছে ৬৫ পেরনো ভোটারদের ৫৩% ভোট পেয়ে, অথচ তিনি ১৮ - ২৯ বছর বয়েসীদের ভোট পেয়েছেন মাত্র ৩৭%।
উভয় ক্ষেত্রেই বয়ষ্করা আকৃষ্ট হয়েছেন নেতিবাচক বাগাড়াম্বরে, সেসব কথায় যাতে দাবি করা হয়েছে যে তাদের সম্প্রদায়ে ধ্বংস ডেকে আনছে মুক্ত বাণিজ্য, মুক্ত চলাচল, ও মুক্ত ভালোবাসা; কাজের সুযোগ আর অর্থনৈতিক নিরাপত্তা বিঘ্নিত করেছে স্বয়ংক্রিয় প্রযুক্তি। দেখা গেছে, কম বয়েসীরা তাদের ভবিষ্যৎ, ব্যক্তিগত প্রত্যাশা আর প্রযুক্তির সম্ভাবনার ব্যাপারে অনেক বেশি ইতিবাচক, এবং প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর প্রতি অনেক বেশি সহানুভূতিশীল।
জয় হয়েছে নিরাশাবাদীদের, এবং তারা বেশ খুশি। প্রাক্তন আশাবাদীরা এখন ভয়ে আছে সবচেয়ে অপ্রীতিকর কিছু ঘটে যাওয়ার।
কিন্তু, প্রযুক্তি আর বিশ্বায়নের ব্যাপারে ওয়েব পিপল আর ওয়াল পিপলের দৃষ্টিভঙ্গি মৌলিকভাবে পৃথক হওয়া সত্ত্বেও একটা জায়গায় তাদের মিল রয়েছে - বিদ্যমান ব্যবস্থা র ব্যাপারে দুই দলই গভীরভাবে সন্দিহান। তারা মনে করে প্রতিনিধিত্ব মূলক গণতন্ত্র ভেঙে পড়েছে, এবং তারা দেখতে পাচ্ছে সংহতিনাশের আশংকা।
ওয়াল পিপল চায় বিদ্যমান ব্যবস্থা ভেঙে ফেলতে, যাতে আরো ভালো কিছু বেরিয়ে আসে - এমন কিছু যা বিগত সময়ের পরিচিত পৃথিবীর মতো ( অথবা অন্তত তাদের কল্পিত কোনো স্বর্ণযুগের মতো)। অন্যদিকে, ওয়েব পিপল বিশ্বাস করে প্রযুক্তির ছোঁয়ায় বদলে যাবে রাজনীতি আর রীতিনীতি, যেভাবে বদলে গিয়েছে সংবাদপত্র, ট্যাক্সি পরিসেবা আর হোটেল।
ওয়েব মানসিকতা ফুটে উঠেছে ভায়াশেস্লাভ পোলোনস্কির কথায়। ২৭ বছর বয়েসী, ইউক্রেনিয়ান বংশোদ্ভূত এই নেটওয়ার্ক বিজ্ঞানী এখন পিএইচডি করছেন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম বিষয়ে, অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে। তিনি আমাকে বললেন, " আমরা এখন বাস করছি একুশ শতকের পৃথিবীতে, কিন্তু আমাদের রাজনৈতিক ব্যাবস্থা আঠারো আর ঊনিশ শতকের পর বিবর্তিত হয়নি।"
পোলোনস্কি উল্লেখ করেন যে আমাদের সরকারব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল কেবল ফেসবুক আর ইন্সটাগ্রামের আগেই নয়, টেলিভিশন আর রেডিও আবিষ্কারেরও আগে।
আমাদের অর্থনীতিতে রয়েছে ইচ্ছার স্বাধীনতা, রয়েছে প্রয়োজনমাফিক সাজিয়ে নেওয়ার সুবিধা আর অংশগ্রহণ। অথচ আমাদের রাজনীতি এখনো আটকে আছে কূটনীতি, বিশেষ স্বার্থ আর সুপ্রতিষ্ঠিত অথচ ভাঙনোন্মুখ রাজনৈতিক দলগুলোর চাপে। তাঁর ভাষায়, "সরকার আরো সজাগ হয়ে ওঠায় মানুষ এখন রাজনৈতিক দলকে ভোট না দিয়ে ভোট দিতে পারে কোনো নির্দিষ্ট ধারণা বা আলোচ্য বিষয়ের পক্ষে। ফলে রাজনীতি হয়ে যাবে অনেকটা উবারের মতো : আরো বিকেন্দ্রিত, আরো খোলামেলা, আরো তাৎক্ষণিক।
বিষয়টা আরো জোরালোভাবে তুলে ধরার জন্য পোলোনস্কি আমাকে কথা বলিয়ে দিলেন তাঁর বন্ধু মারিয়া লুইসা মার্টিনেজ ডিলবারবোরের সঙ্গে। ২৭ বছর বয়েসী এই শিক্ষানবিশ আইনজীবি তার নিজের দেশ উরুগুয়েতে "এল পার্টিডো ডিজিটাল" নামে নতুনএকটি ডিজিটাল রাজনৈতিক দলের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা। ডিলবারবোর আমাকে স্কাইপে বললেন, "আমরা এখন বাস করছি প্রতিনিধিত্ব - সংকটের মাঝে। যখনই মানুষ ক্ষমতা হাতে পায়, তারা ভোট দেয় তাদের ইচ্ছামতো, যে ভোটাররা তাদের ওই ক্ষমতা দিয়েছে, তাদের তোয়াক্কা না করেই।"
ডিলবারবোরের সমাধান হচ্ছে ইন্টারনেট ব্যবহার করে সঠিক প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করা। "এল পার্টিডো ডিজিটাল" এখন কাজ করে যাচ্ছে সংসদে একজন প্রতিনিধি নির্বাচনের লক্ষ্যে। প্রত্যেক সংসদীয় ভোটের আগে সেই প্রতিনিধি ইন্টারনেট ব্যবহার করে তাঁর ভোটদাতাদের মতামত নেবেন, এবং এভাবে নিশ্চিত করবেন যে আসলেই তিনি তাঁর ভোটারদের প্রতিনিধিত্ব করছেন।
আরো কৌতুহলের বিষয় হচ্ছে, ভোটদাতারা তাদের ভোটদানের দায়িত্ব দিতে পারবে অন্যদের হাতে, হয়তো সেসব বন্ধুদের যাদের ওই নির্দিষ্ট বিষয়ে ভালো জানাশোনা আছে। অর্থনীতির প্রশ্নে আমার পক্ষ থেকে ভোট দিতে পারবেন অর্থনীতিবিদ ফ্রেড, এবং পরিবেশগত বিষয়ে আমার পক্ষ থেকে ভোট দিতে পারবেন বিজ্ঞানী অ্যান।
ডিলবারবোরের এই প্রত্যয়ের ভিত্তি কোনো নির্বাচন বা গণভোট নয়। প্রতিনিধি বা প্রত্যক্ষ গণতন্ত্রের পরিবর্তে এতে রয়েছে, তাঁর এবং পোলোনস্কির ভাষায়, "তরল গণতন্ত্র" - দুটো থেকে গৃহীত সর্বোৎকৃষ্ট বৈশিষ্ঠ্যের সমন্বয়ে গঠিত একটি পদ্ধতি। তিনি বলেন, "আমরা আদর্শ চাই না, আমরা চাই প্রতিনিধিত্ব। আমরা ডানের পক্ষেও নই, বামের পক্ষেও নই। আমরা মানুষের পক্ষে।"
পোলোনস্কি ও ডিলবারবোর যে কৌমের সদস্য, তাতে সারা পৃথিবী থেকে ৬০০০ সদস্য যোগ দিয়েছে, এবং তাদের একত্রিত করেছে বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরাম। এই ২৩-২৭ বছর বয়েসীরা সৃষ্টিশীল, পরস্পরসংযুক্ত, বিশ্বনাগরিক এবং প্রাণশক্তিতে ভরপুর। সাম্প্রতিক নির্বাচনের ফলাফলে তারা হতাশ (ডিলবারবোর বলেন, "২০১৬ সাল আমার জন্য মানবতায় বিশ্বাস হারিয়ে ফেলার বছর")। কিন্তু আমার মনে হয় সে বিশ্বাস শীঘ্রই ফিরে আসবে এবং বর্তমানের এই রাজনৈতিক বিঘ্নের মাঝেও সুবিধা খুঁজে নেবে।
একথা বলার মানে এই নয় যে এসব বাধাবিঘ্ন তাদের সমস্যার উত্তর, কিংবা ওয়াল পিপলের সমস্যার উত্তর। বরং তাঁরা যে ফলাফল চান, তা অর্জন আরো কঠিন হয়ে উঠতে পারে বিদ্যমান রাজনৈতিক সমস্যার কারণে।
১৯৪৫ সালের পর বেবি বুম প্রজন্ম যেসব সুবিধা ভোগ করেছে, তা পুনরুদ্ধারের ইচ্ছা আছে বয়স্ক এবং তরুণ উভয় প্রজন্মেরই। কিন্তু সেসব সুযোগ এসেছিল সম্মিলিত প্রচেষ্টা, সম্পদ পুনর্বন্টনের পক্ষে ব্যাপক সমর্থন আর শক্তিশালী অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির মাধ্যমে, যেসবের কিছুই আজ আর আশা করা যায় না। বরং বিশ্বায়ন আর অভিবাসনের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিক্রিয়ার ফলে কমে যেতে পারে বৈশ্বিক প্রবৃদ্ধি, আর ইচ্ছুকদের তদর্থক জোট গড়ার প্রয়োজনীয়তা স্তিমিত করে দেবে নতুন নতুন প্রতিষ্ঠান গড়ার অগ্রগতিকে। আজকাল অনেকের কাছেই পুনর্বন্টন একটি অশ্লীল শব্দে পরিণত হয়েছে।
সুতরাং ওয়াল পিপল যে রাজনীতি সমর্থন করে, তা কোনো সমাধান নয়। কিন্তু ওয়েব পিপলের রাজনীতেও তো নেই সমাধান। ইন্টারনেটচালিত রাজনীতি সংহতিনাশক, এবং এটি স্থিতাবস্থাকে টলমলে করে তুলতে পারে। আরব বসন্তের বিপ্লব আমাদের সেটাই দেখিয়েছে। টেকসই বিকল্প সৃষ্টিতে তা কার্যকর প্রমাণিত হয়নি।
নবীন - প্রবীণ দুই দলের অসন্তোষেরই বাস্তব ভিত্তি রয়েছে। গত কয়েক দশকের অর্থনৈতিক অর্জন ব্যাপকভাবে বন্টিত হয়নি। রাজনৈতিক দলগুলো জনগণের চেয়ে নিজেদের কাছেই বেশি দায়বদ্ধ। এখন ধনীদের জন্য রয়েছে সমাজতন্ত্র, আর গরীবদের জন্য পুঁজিবাদ। সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ আরো সন্ত্রাসী তৈরি করছে। বাণিজ্য আর অভিবাসন পদ্ধতি হারাচ্ছে সমর্থন।
প্রতিবিপ্লবের হাত থেকে স্থিতাবস্থা রক্ষার দিকে না গিয়ে রাজনীতিকদের উচিত বরং নতুন একটি পদ্ধতি দাঁড় করানো - এমন একটি কিছু যা মানুষের প্রয়োজন মেটাতে পারে। নবীন - প্রবীন উভয়েই তাদের দাবি তুলে ধরেছে। এখন সময় সেসব ডাকে সাড়া দেওয়ার।

মন্তব্য ১ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ০৩ রা ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ বিকাল ৩:৩৭

লুসিফার ০১ বলেছেন: মূল বিষয়গুলো উঠে এসেছে! ধন্যবাদ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.