![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
-ঘুমাচ্ছেন?
-উমম..
-উঠবেন?
-এখন? ভোর ৪ বাজে। আজান দিচ্ছে।
-উঠেন না। চলেন বাইরে যাই।
-কোথায় যাবেন? ছাদে?
-হ্যাঁ। আপনাকে আজকের চাঁদটা দেখানো হয় নি। চলুন দেখে আসি।
-সে তো রোজই দেখান, আজকে থাক। আজকে আমার পায়ে ব্যাথা করছে।
-সে-কি? বলেন নাই। চলুন আপনাকে কোলে করে নিয়ে যাই।
-পারবেন না, আমি আরও দেড় কেজি বেড়েছি।
-হাহা কিছু হবে না, চলুন তো..
.
.
-দাঁড়ান...ছাদের গেইটটা এতো শক্ত হয়ে আছে, মনে হচ্ছে কেউ গত ২-৩ বছরেও খুলে দেখার চেষ্টা করে নি।
-কি বলেন? গতকাল রাতেও তো আপনার সাথে এখানে বসে ছিলাম, আচ্ছা আমাকে দেন, আমি খুলছি..
.
.
-আজকের চাঁদটা অনেক সুন্দর না? চাঁদের আলোয় আপনাকে আজকে অনেক সুন্দর দেখাচ্ছে।
-সে তো রোজই বলেন একই কথা, নতুন কিছু বলেন?
-হাহাহা..খোঁচা দিয়ে দিলেন? নতুন কিছু বলতে হলে তো হয় চাঁদকে বলতে হবে সে যেন আরও অনেক বেশী সুন্দর হয়। হাহাহা..
-চাঁদ তো আপনার সামনেই আছে। বলে দেখুন।
-চাঁদের পক্ষে যে এখনও ঐ সামর্থ্য হয় নি, আপনার সৌন্দর্য কে টপকে যাবে..
-ঢং..
আচ্ছা আপনি চাঁদের আলোয় গল্প করতে খুব পছন্দ করেন,তাই না?
-হ্যাঁ। তবে গল্পের রাণী আপনি হলে আরকি..
-একেবারে রাণী বানিয়ে দিলেন? অনেক জলদি হয়ে গেল না?
-জলদি? আচ্ছা তাহলে গল্পের সহযোগী চরিত্র রাখি? হাহাহা
-(রাগান্বিত) দরকার নেই, আপনি যান এখন, আমার অনেক ঘুম ধরেছে।
-থাকি না আরেকটু। দেখুন,আপনার ছোট বোন মধুরীমাও আছে এখানে, সে এখনও ঠিক আগের মত গান করে, যেমনটা ৩ বছর আগে শুনেছিলাম। ওর রবীন্দ্র সঙ্গীত প্রিয় না?
-হ্যাঁ। মেয়েটা ছোটবেলা থেকে রবীন্দ্রনাথের ভক্ত। ঐ যে দেখুন আমার মা কে, এতো রাতেও পায়ের থেকে ঘুঙুর খোলে নি, নাচকে এমন মনে প্রাণে আগলে রেখেছে যে খুলতেই চায় না। কি যে করি বলেন তো।
-কি করবেন? আপনি অনেক ভাগ্যবতী এতো সুন্দর একটা পরিবার পেয়েছেন।
-আচ্ছা আমাকে রোজ ছাদে চাঁদ দেখাতে নিয়ে আসেন কেন? ছবি দিলেই তো পারতেন।
-ছবি দিলে তো আর চাঁদকে সামনাসামনি আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিতে পারতাম না তার অকাদ কতটুক। হাহাহা..
-এতো রাতেও আপনার পাগলামি দেখানো লাগবে।
-আমাকে দেখে পাগল মনে হয়?
-উমম পুরোপুরি না, তবে একটু, এএএককটু..
-একটা ব্যাপার লক্ষ্য করছেন, আমরা যখনই ছাদে আসি, তারাগুলো আসতে আসতে অদৃশ্য হতে থাকে..উনারা মনে হয় আমাদের একটু সুযোগ করে দিচ্ছে..
-সুযোগ? আপনার মতলবটা কি মশাই?
-হাহাহা আপনি রেগে যাচ্ছেন কেন? আপনি রেগে গেলে কিন্তু এই চাঁদটাও হারিয়ে যাবে..
-কেন?
-আপনার রাগান্বিত চেহেরা এতোই সুন্দর যে চাঁদ নিজেকে লজ্জায় গুটিয়ে নেবে।
-থামেন আজকে, একদিনেই কি সব বলে ফেলবেন? এখন যান, সবাই উঠে যাবে, আজান দিচ্ছে।
-আবার দেখা হবে?
-এতো ঘনঘন দেখা হওয়ার দরকার নেই। সামনে আমার জন্মদিন, সেদিন আসবেন, আবার চাঁদ দেখাতে।
-আপনার জন্য কি আনবো?
-কি আনতে চান? আমার পছন্দের লিস্টি কি আছে?
-কি মনে হয়?
-আপনার হাবভাব তো দেখে মনে হচ্ছে ঠিকই সব জানেন।
-হাহাহা কেন জানা কি দোষের?
-কি জানি? ঠিক আছে, আজকে আসেন। আবার দেখা হবে...
.
.
সকাল ৬ টা ২১ বাজে। "শান্তি ভিলা" র 4A তে থাকে রক্তিমরা। রক্তিমের পরিবারের সবার ঘুম ভাঙ্গে না অতো সকালে। শুধু ওর মা-কে সকালে উঠতে হয়, রক্তিমের ঔষুধের সময় হয়ে যায়। শীতে উঠতে অনেক কষ্ট হয়। সেটা অবশ্য আগে হতো না। এইতো ৩ বছর আগেও খবরের কাগজওয়ালা, দুধ-ওয়ালা এসবের আনাগোনায় মুখরিত হয়ে থাকতো শান্তি ভিলা। কিন্তু একদিন রাতে ঐ ভিলারই গোটা একটি পরিবার ছাদ থেকে লাফ দিয়ে আত্মহত্যা করে। সে থেকে ঐ বিল্ডিং এ আর কেউ উঠে না।
..রক্তিম ঘুমাচ্ছে, হয়তো ঔষধ গুলো কাজে দিচ্ছে।
©somewhere in net ltd.