![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
চিন্হ মোর নাই বা রইল কোনো ।
শিরাজ। ইরানের (পারস্য) বিশ্ববিস্তৃত নগরী। কাব্য-সাহিত্যের ডানায় ভর করে সম্ভবত পৃথিবীর আর কোনো স্থান এত জনপ্রিয় হয়নি কখনো।
ভৌগোলিক মানচিত্রের উপর মাথা ঝুকিয়ে কৌতুহলোদ্দীপক কোনো স্থান দেখার চিরাচরিত অভ্যাস গড়ে উঠেছে আমাদের বহু দিন ধরে। বিন্তু তাতে চোখের দেখা হয় শুধু, মনের তিয়াশ মেটে না। ভৌগোলিক মাপজোখের অনেক কমিশনারি খোশগল্প আমরা পৃথিবীকে উপহার দিয়েছি। বিভেদ বেড়েছে তাতে। মানবিক সম্পর্কের কাহিনী দিয়েও যে ইতিহাস বিনির্মাণ করা যায় - এখন থেকে তাই মনে করব আমরা। তাতে ভেদ কমবে। অন্তত এই আশা আমাদের।
কোথায় ইরানের শিরাজ ?
শিরাজ ইরানের দক্ষিণ-পশ্চিমে ফার্স প্রদেশে অবস্থিত। ইরানের সাংস্কৃতিক রাজধানী। গোলাপ এবং বাগানের শহর।এবং শহর ইরানের বুলবুলের। বিশ্ব জনমানসে শিরাজের পরিচিতি মূলত কবি ও কবিতার শহর হিসেবে।কবিরাই হচ্ছে ইরানের বুলবুল, যাদের গান পৃথিবীর কবিরা আজও ফেরি করে ফেরে। বলা হয় ইরানেরই আরেক নগরী নীশাপুর (ওমর খৈয়ামের জন্মভূমি) ছাড়া আর কোনো শহর বিশ্বজোড়া এত খ্যাতি লাভ করে নি। অবশ্য আজকের চাকচিক্যময় শিরাজ সেই ধূসর জগতের কাব্য নগরীর স্মৃতিকে ম্লান করে দিয়েছে অনেক খানি। শিরাজের বুলবুলেরা যে গান গেয়ে গেছে, কেবল তার সুর ধরেই আমরা পৌছতে পারি সেখানে। যেখানে একদিন বাস করত শাখ-ই-নাবাত। হরিণ-আখি-সুন্দরী। যার চোখের পলকে একদিন প্রাণ ফিরে পেত শিরাজের এক বুলবুল কবি।
শিরাজের বুলবুল :
ইরানের প্রায় সমস্ত কবিরই লীলা-নিকেতন এই শিরাজ। তাদের মধ্যে যাদের কাব্যকৃতি আজো অম্লান পৃথিবীতে, তাদের একজন সাদী শিরাজী (১২১০-১২৯১ খৃ এবং অপর জন বুলবুল-ই-শিরাজ বা শিরাজের বুলবুল বলে খ্যাত হাফিজ (১৩২৫/২৬-১৩৮৯/৯০ খৃ)।
সাদীর একটি দিওয়ান :
ধর্ম মাহাভ্রান্তি শত্রুতার চোখে
সাদী একটি গোলাপ, কিন্তু কাঁটা শত্রুর চোখে,
পৃথিবীই আশ্রয় রবি ও আলোক প্রস্রবণের-
মিথ্যা সবই ছুছুন্দরীর কুতসিত চোখে।
পশ্চিমা দুনিয়ায় সাদীকে বলা হয় ক্লাসিক সাহিত্যিক ঐতিহ্যের greatest master. আলেকজান্ডার পুশকিন সাদীকে স্মরণ করেছেন এভাব :
as saadi song in earlier ages,
some are for distance, some are dead.
নজরুলের মত সাদী ছিলেন দারিদ্রের বরপুত্র। মুসলিম দুনিয়ায় তখন মহাবিপদ। একদিকে মোঙ্গলদের ধ্বংসযজ্ঞ, অন্যদিকে খ্রিস্টাদের চাপিয়ে দেয়া ধর্ম যুদ্ধে মুসলমান দিগ্বিদিক দিশা শূন্য।সাদী ত্রিশ বছর কাটালেন পৃথিবীর পথে। পশ্চিম যেখানে মার্কো পোলোর দেখানো পথে শিখেছে পয়সা উপার্জন, সাদী তখন আমাদের শিখিয়েছেন সততার চেয়ে মহত কিছু নেই পৃখিবীতে। তিনি আসতে আসতে হিন্দুস্তানেও এসেছিলেন। সোমনাথ মন্দিরে। আর কী কান্ডটাই না করেছিলেন কৌতুহলী সাদী। তাঁর সেসব অভিজ্ঞতা তিনি লিখে গেছেন গুলিস্তা ও বোস্তা নামক কাব্যগ্রন্থে।
শাখ-ই-নবাতের কথা আপনাদের মনে আছে? সেই যে হরিণ-আঁখি সু্ন্দরী। তার কথা বলেই এ লেখা শেষ করব। ভাগ্যক্রমে হাফিজ তখন কাজ করতেন রুটির দোকানে। শহরের এক দোকানে রুটি দিতে গিয়ে হাফিজ প্রথম দেখেন শাখ-ই-নবাতকে। এবং কিশোর হাফিজ এতটাই উতলা হন যে ষাট বছর বয়সেও সে রূপের ধ্যান কাটেনি তাঁর। হাফিজ তার একটি রূবায়ে এ কথা লিখেছেন :
তোমার ছবির ধ্যানে, প্রিয়,
দৃষ্টি আমার পলক-হারা
তোমার ঘরে যাওয়ার যে-পথ
পা চলে না সে-পথ ছাড়া।
হায়, দুনিয়ার সবার চোখে
নিদ্রা নামে দিব্য সুখে,
আমার চোখেই নেই কি গো ঘুম,
দগ্ধ হল নয়ন তারা।
প্রেম কতটা মহত হলে এ রকম উচ্চারণ সম্ভব- সহজে ভাবা যায় না। এর সমতুল্য শুধু একজনই আছেন বিশ্বসাহিত্যে- কবি দান্তে। দান্তে ভালবেসেছিলেন বিয়াত্রিচেকে। সে আবার আরেক কথা।
বিস্তারিত :
*wikipedia
*রুবাইয়াত-ই-হাফিজ, কাজী নজরুল ইসলাম।
২| ১২ ই জানুয়ারি, ২০১৪ রাত ১০:২৮
প্রান্তিক জন বলেছেন: রুটি, মদ ফুরিয়ে যাবে
প্রিয়ার কালো চোখ ঘোলাটে হয়ে যাবে,
কিন্তু বইখানা মোর অনন্ত যৌবনা।-
হুমায়ুন ভুল জিনিস ভালবেসেছিলেন।
©somewhere in net ltd.
১|
১২ ই জানুয়ারি, ২০১৪ সন্ধ্যা ৭:৫২
আঁধার রাত বলেছেন: মধু থেকে তৈরী একধারনের মদ দিল্লির বাদশা হুমায়ুনের বড় প্রিয় ছিল, তিনি হাম্মাম খানায় শুয়ে শিরাজের সেরাপ খেতে বড় ভালবাসতেন।