নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

প্রান্তিক জন

মন চাই কৈতর হয়ে উড়ি আমি আসমানে আজ অথবা মাছ হয়ে সাতার কাটি জলের গহীনে।

প্রান্তিক জন

চিন্হ মোর নাই বা রইল কোনো ।

প্রান্তিক জন › বিস্তারিত পোস্টঃ

জয়নাল

০৩ রা মার্চ, ২০১৪ বিকাল ৪:৫৫

একদিন বৃষ্টি হচ্ছিল খুব। রাস্তায় বেরোবার জো ছিল না। মনটা এমনই আনচান করছিল যে, ঘরে কিছুতেই মন বসছিল না। শুনেছি, রবীন্দ্রনাথ এমনই এক বিজন বর্ষার দিনে প্রথম ছোটগল্প লেখার প্রেরণা পেয়েছিলেন। সে কথা পড়েছি তাঁর বর্ষাযাপন কবিতায়। রবীন্দ্রনাথ আসলে বর্ষার কর্ম বিমুখ দিনে অবর্ষার স্মৃতিচারণ করে বর্ষাকে যাপন করতে চেয়েছিলেন। তাঁর কলকাতা শহরে হয়তো এছাড়া কোনো উপায়ও ছিল না। কিন্তু আমি দেখেছি, ময়মনসিংহ শহরে ভারী বর্ষার দিনেও ছাতা মাথায় দিয়ে খুব করে সময় কাটানো যায়। তাই রাবিন্দ্রীক উপায়ে সময় কাটানোর চিন্তা বাদ দিয়ে রাস্তায় নেমে পড়লাম। আহা! বর্ষার এমন স্বাদ আগে কখনো পাই নি। ঘর বিজন হলেও রাস্তায় জনগণের কমতি ছিল না। তাদের ছোটাছুটি ছিল বিজন ঘরের দিকে, আমার রাস্তার কোলাহলে। তাই একসময় ঘর জনপূর্ণ হয়ে উঠল, রাস্তা হয়ে পড়ল ফাঁকা। উপর থেকে মেঘের জলপুষ্প, আর নিচে দরিদ্র ধরনীর কাদার ছিটায় আহ্লাদিত হচ্ছিলাম বারবার। দূর থেকে দেখা যাচ্ছিল ব্রহ্মপুত্রের শুষ্ক বুক কেমন করে ভিজিয়ে দিচ্ছে মেঘকন্যা। দু'জনের লুটোপুটি যেন সহ্য হচ্ছিল না মেঘকন্যার আত্নীয় সম্পর্কীয় বর্জ্রের। মুহূর্মুহূ গর্জনে বারবার শাসাচ্ছিল তাদের। পাড়াপড়শির দু'পক্ষের ঝগড়ায় তৃতীয় পক্ষের আগমনে আমরা দর্শকরা যেমন হরহর করে কেটে পড়ি, আমিও তেমন জয়নুল আবেদিন সংগ্রহশালায় ঢুকে পড়লাম বর্জ্রের কোপানল থেকে বাঁচতে। ছবির আমি বুঝিনা তেমন কিছুই, তবুও বুঝার ভান করে এটা সেটা খুটিয়ে দেখলাম অনেকক্ষণ। একটা ছবি হঠাৎ মন কাড়ল। কাচাড়িঘাটে কয়েকটা নৌকা বাঁধা, আর দূর পর্যন্ত ব্রহ্মপুত্রের আদিগন্ত বিস্তৃতি। স্পষ্ট কিছু নেই, তবুও যেন উসকে দিল ভাবনার অনেক জানালা। ঠিক এখানে এসেই বুঝা যায়, চিত্র এতো ঘোলাটে হয়েও কেন তা শিল্প।



ব্রহ্মপুত্র যখন শুকিয়ে যায় তখন তার তীর ধরে হাটার মধ্যে অন্য ধরনের একটা সুখ আছে। সে সময় আমি প্রায়ই কাচারিঘাটে এসে বসে থাকতাম। সকালের হাওয়া খেতাম বাড়তি পাওনা হিসেবে, আর শহুরে মানুষগুলোকে যারা সেবা দিয়ে বাঁচিয়ে রেখেছে, তাদের আসা যাওয়া দেখতাম। সেলু মেশিনের নৌকাটা একবার আসছে এপাড়ে, আবার ওপাড়ে ভিড়ছে কেমন বিরক্তহীনভাবে।



একটা বেঞ্চিতে বসে কুকুরের খেলা দেখছিলাম। বেঞ্চির অন্যপাশে জয়নাল এসে বসল। বলল না কিছুই। আমিই জিজ্ঞেস করলাম, ‌‌'এত সকালে এখানে কি কর জয়নাল?'

বুঝলাম খুব খুশি হলো সে। আমার দিকে ফিরে বসল, আর চায়ে চিনি দেওয়ার মতো একটু হাসল। কী মিষ্টি সে হাসি! শুনেছি গান্ধী ভাইসরয়কে বোস্টন টি পার্টির কথা মনে করাতে গিয়ে চায়ে লবণ মিশিয়ে ছিলেন। কিন্তু এটা ছিল এমন এক সময়ের চমক, যখন চমকাবার কিছু ছিল না আর। জয়নালের হাসিটা হাসিই ছিল। গান্ধীর রাজনৈতিক ক্রুঢ়তা বা ভাইসরয়ের উপহাসি ছিল না তাতে। আমি যখন ভোরের বাতাসে তৃপ্ত হচ্ছিলাম, জয়নাল এখানে রোজ সকালে ট্রাক ধোয়ার কথা বলে সুখের নি:শ্বাস ছাড়ল। আবারও জিজ্ঞেস করলাম, 'আর কি কি কর সারাদিন?'

সারাদিন করে সে অনেক কিছুই। আমার বা রবীন্দ্রনাথের মতো অবসর জয়নালের নাই। পড়াশুনার কথা জিজ্ঞেস করতেই মুখটা ফ্যাকাশে করে ওঠে পড়ল সে। ভাব দেখিয়ে বললাম, 'জয়নাল, তোমার বাড়িতে নিবে আমাকে?'

তার কথা যেন দৌড়ে এলো আমার কানে, 'সত্যি যাবেন! চলেন এখনই যাই। সকালে খেয়ে আসবেন।'

সংগ্রহশালায় দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে হঠাৎ উদরের দিকটার প্রতি মন গেল। কিউরেটর সাহেব হাওয়া থেকে উড়ে এসে বললেন, 'এবার যে আসতে হয়।'

বাইরে বর্জ্র্যের কুদুনি থামলেও আগের মতোই ঝমঝমিয়ে বৃষ্টি পড়ছিল। জয়নালকে বললাম, 'আরেক দিন আসব, আজ যাই।'

'অবশ্যই আসবেন কিন্তু। ওপাড়ে গিয়ে আমার নাম বললেই হবে। আজ গিয়েই মাকে বলে রাখব।'

জয়নুল আবেদিন থেকে যখন বের হচ্ছিলাম, জয়নালের দাওয়াতের কথা বারবার মনে পড়ছিল। গেটের কাছে এসে মনে হলো, জয়নুল আর জয়নালে - কত তফাৎ!

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ০৩ রা মার্চ, ২০১৪ বিকাল ৫:৩৬

বৃষ্টিধারা বলেছেন: হুম

০৩ রা মার্চ, ২০১৪ সন্ধ্যা ৭:৩৪

প্রান্তিক জন বলেছেন: হুম! কুনতাই কইলান না যে।

২| ০৩ রা মার্চ, ২০১৪ রাত ৯:০৭

মামুন রশিদ বলেছেন: বৃষ্টির বর্ণনাটা দুর্দান্ত হয়েছে ।

৩| ০৩ রা মার্চ, ২০১৪ রাত ১০:০৪

মোঃ নুরুল আমিন বলেছেন: ভাল লিখেছেন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.