![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
I am a Businessman in Education Sector.
পঁচিশে জানুয়ারি এ দেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে এক কালো দিবস হিসেবে চিহ্নিত হয়ে আছে। ১৯৭৫ সালের এই দিনটিতে জাতীয় সংসদের মাত্র কয়েক মিনিট স্থায়ী অধিবেশনে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ মুজিবুর রহমানের ইচ্ছা ও নির্দেশে সংবিধানের চতুর্থ সংশোধনী পাস করা হয়েছিল। এই সংশোধনীর মাধ্যমে প্রচলিত সংসদীয় পদ্ধতির স্থলে প্রেসিডেন্ট পদ্ধতি প্রবর্তিত হয়, প্রধানমন্ত্রী শেখ মুজিব স্বয়ং প্রেসিডেন্ট হন এবং সকল রাজনৈতিক দল বাতিল করে সারাদেশে একটিমাত্র দল রাখার বিধান করা হয়।
চতুর্থ সংশোধনীর ভিত্তিতে প্রেসিডেন্ট শেখ মুজিব ২৪ ফেব্রুয়ারি একমাত্র দল বাকশাল গঠন করেন এবং তার নির্দেশে তাকেই চেয়ারম্যান করে ১১৫ সদস্যবিশিষ্ট বাকশালের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটি গঠিত হয় ৬ জুন। প্রেসিডেন্ট এবং বাকশাল চেয়ারম্যান শেখ মুজিবের নির্দেশে সরকার নিয়ন্ত্রিত চারটি দৈনিক পত্রিকা ছাড়া দেশের সকল সংবাদপত্র নিষিদ্ধ হয়ে যায় ১৬ জুন।
১৯৭২ সালের ২২ ডিসেম্বর বাংলাদেশের অস্থায়ী সরকার ভারত থেকে ঢাকায় ফিরে আসে। বাংলাদেশের তৎকালীন রাষ্ট্রপ্রধান শেখ মুজিবুর রহমান তখন পাকিস্তানে বন্দী। শেখ মুজিব মুক্তি পেয়ে ১০ জানুয়ারি বাংলাদেশে ফিরে আসেন। সেই সময় থেকেই দেশের ভবিষ্যৎ সংবিধান প্রণয়নের জন্য চিন্তা-ভাবনা শুরু হয়। বাংলাদেশে সংসদীয় ব্যবস্থা কায়েম হবে, না প্রেসিডেন্ট শাসিত সরকার প্রচলিত হবে, সে সময় বিষয়টি নিয়ে জল্পনা-কল্পনা শুরু হয়। এসব জল্পনা-কল্পনার অবসান হয় ১৯৭২ সালের ১১ জানুয়ারি ‘বাংলাদেশের অস্থায়ী সংবিধান আদেশ' জারি করার মাধ্যমে।
সেই আদেশের পঞ্চম অনুচ্ছেদে বর্ণিত ছিল বাংলাদেশে ‘প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে একটি মন্ত্রিসভা থাকিবে'। ৬ষ্ঠ অনুচ্ছেদে ছিল ‘রাষ্ট্রপতি প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শ অনুযায়ী তাহার সমস্ত কার্য করিবেন'। ৭ম অনুচ্ছেদে ছিল ‘রাষ্ট্রপতি গণপরিষদের সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যদের আস্থাভাজন একজন পরিষদ সদস্যকে প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ করিবেন। অন্যান্য মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও উপ-মন্ত্রীগণ প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শ অনুসারে রাষ্ট্রপতি কর্তৃক নিযুক্ত হইবেন'। সেই আদেশের অষ্টম অনুচ্ছেদে ছিল যে, ‘নতুন সংবিধান প্রবর্তিত হওয়া পর্যন্ত মন্ত্রিসভা বাংলাদেশের একজন নাগরিককে রাষ্ট্রপতি মনোনীত করিবেন'।
বাংলাদেশের জন্য একটি সংবিধান রচনার প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে প্রেসিডেন্ট ১৯৭২ সালের ২৩ মার্চ ‘বাংলাদেশ গণপরিষদ আদেশ' (রাষ্ট্রপতির ২২ নং আদেশ) নামক সেই আদেশটির গুরুত্ব অনেক। এই আদেশ অনুসারে ১৯৭০ সালে নির্বাচনে বাংলাদেশ থেকে যে সকল জনপ্রতিনিধি তদানীন্তন পাকিস্তান জাতীয় পরিষদ ও পূর্ব পাকিস্তান প্রাদেশিক পরিষদে নির্বাচিত হয়েছিলেন তাদের নিয়েই গণপরিষদ গঠিত হয়। ১৯৭২ সালের ১০ এপ্রিল ৪৩০ সদস্যবিশিষ্ট গণপরিষদের প্রথম অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়।
১৯৭২ সালের ১২ অক্টোবর গণপরিষদের দ্বিতীয় অধিবেশনে আইন ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী ড. কামাল হোসেন খসড়া সংবিধানটি বিল আকারে পেশ করেন। ৪ নবেম্বর গণপরিষদ কর্তৃক তা গৃহীত হয়। ১৬ ডিসেম্বর থেকে সংবিধান কার্যকর হয় এবং সে দিনই গণপরিষদ ভেঙ্গে দেয়া হয়। ১৫৩ অনুচ্ছেদ বিশিষ্ট এই সংবিধান ১১টি ভাগে বিভক্ত। ১৯৭২ সালের এই সংবিধান ছিল জাতির সবচেয়ে বড় পাওয়া।
স্বাধীনতা প্রাপ্তির ১৫ মাসের মধ্যে সংবিধানের অধীনে জাতীয় সংসদের প্রথম নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এই নির্বাচনে ১৪টি দল অংশ নিয়েছিল। এই নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ২৯২টি আসন পেয়েছিল। একটি আসনে বিজয়ী হয়েছিলেন তদানীন্তন জাতীয় লীগ প্রধান মরহুম আতাউর রহমান খান, জাসদেরও একজন সদস্য সে সময় বিজয়ী হয়েছিলেন। বাকী সবাই ছিলেন স্বতন্ত্র সদস্য। তবে সেদিন সেই নির্বাচনের স্বরূপ যারা দেখেছেন তাদের অনেকেই হতবাক ও আশংকিত হয়েছিলেন। হতবাক হয়েছিলেন আওয়ামী লীগের ‘আচরণ' দেখে। যে আওয়ামী লীগ একটি গণতান্ত্রিক সংবিধান উপহার দিতে পেরেছে তারা কিভাবে নির্বাচনে অগণতান্ত্রিক আচরণ করতে পারে আর আশংকিত হয়েছিলেন এজন্য যে, এমন আচরণকারী একটি দলের হাতে ভবিষ্যতে দেশের গণতন্ত্র ও গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলো নিরাপদ থাকবে কি না।
প্রথম জাতীয় সংসদের নির্বাচনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের আচরণ সম্পর্কে যে আশঙ্কা সৃষ্টি হয়েছিল সেই আশঙ্কা সত্যে পরিণত হয়েছিল ১৯৭৩ সালের ২০ সেপ্টেম্বর। এই দিনই জাতীয় সংসদে সংবিধানের দ্বিতীয় সংশোধনী গৃহীত হয়। সংবিধানের দ্বিতীয় সংশোধনীর দ্বারা সংবিধানের ২৬, ৩৩, ৬৩, ৭২ ও ১৪২ নং অনুচ্ছেদগুলো সংশোধনের মাধ্যমে জনগণের মৌলিক অধিকার হরণ ও কালাকানুন প্রণয়নের যেসব বাধা সংবিধানে সন্নিবেশিত ছিল তা দূর করা হয়। ২৬ নং অনুচ্ছেদটি সংশোধনের উদ্দেশ্য ছিল সংবিধানে কালাকানুন সংযোজনের ব্যবস্থা করা আর ৩৩ নং অনুচ্ছেদটি সংশোধন করা হয়েছিল জাতীয় সংসদকে নিবর্তনমূলক আটকের বিধান সম্বলিত আইন প্রণয়নের ক্ষমতা প্রদান করার জন্য। এছাড়া দেশের জরুরি অবস্থা জারির ক্ষমতা সরকারকে দেয়া হয় এই সংশোধনীর মাধ্যমে। গণতন্ত্র মৌলিক অধিকার হরণের প্রক্রিয়া মুজিব আমলে এভাবে সূচিত হয়েছিল।
একের পর এক ব্যর্থতার কারণে ১৯৭৪-এর শেষাশেষি ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের হাত থেকে দেশের সামগ্রিক পরিস্থিতি যেন নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছিল। আইন-শৃক্মখলা পরিস্থিতির চরম অবনতি ঘটতে থাকে, দেশব্যাপী উগ্র বামপন্থীদের সন্ত্রাসী কার্যক্রম তখন চূড়ান্ত পর্যায়ে, সরকারের তাঁবেদার ‘রক্ষীবাহিনী'র অত্যাচারে মানুষের জীবন অতিষ্ঠ। চতুর্দিকে এক নৈরাজ্যকর অবস্থা। সমাজতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থায় উত্তরণের লক্ষ্যে দেশের শিল্পকারখানা সরকারের হাতে নিয়ে নেয়ার চরম অব্যবস্থায় উৎপাদন বন্ধ। গোটা অর্থনীতি তখন ধসে পড়তে শুরু করেছে।
এই চরম অবস্থায় সরকার দিশেহারা হয়ে পড়েছিল। আর এই সময়ই অর্থাৎ ১৯৭৪ সালেই দেখা দিয়েছিল ভয়াবহতম দুর্ভিক্ষ। ১৯৭৪ সালের এপ্রিল মাস থেকে দেশে খাদ্যাভাব দেখা দেয় এবং সেপ্টেম্বর মাস নাগাদ তা মারাত্মক রূপ ধারণ করে। তদানীন্তন আওয়ামী লীগ সরকারের ব্যর্থতা এবং দলীয় লোকজনের লুটপাট এই দুর্ভিক্ষের অন্যতম কারণ ছিল।
পরিস্থিতির দ্রুত অবনতি রোধের জন্য সরকার সে বছরের ডিসেম্বর মাসে জরুরি অবস্থা জারি করে। এই জরুরি অবস্থা জারির প্রধান লক্ষ্য কিন্তু শুধু ক্রমাবনতিশীল পরিস্থিতিকে মোকাবিলা করা নয়, বরং রাজনৈতিক বিরোধীদের শায়েস্তা করা ও সংবাদপত্রের কণ্ঠরোধ করা। যাতে সরকারের চরম ব্যর্থতার কথা সংবাদপত্রে প্রকাশ না পায়। জরুরি অবস্থা জারির আরও একটা গোপন কারণ ছিল। যেটা সরকার তখন গোপন রেখেছিল। আর সেই গোপন লক্ষ্যটি ছিল একদলীয় বাকশাল ব্যবস্থা কায়েমের জন্য পরিবেশ সৃষ্টি করা। যাতে নয়া একদলীয় ব্যবস্থার বিরুদ্ধে কেউ টু শব্দ করতে না পারে। যারা প্রতিবাদ করবে তাদের যাতে জরুরি অবস্থার অজুহাতে ধরা যায়।
১৯৭৫ সালের সূচনার ২৫ জানুয়ারি জাতীয় সংসদে মাত্র কয়েক মিনিটে সংবিধানের কুখ্যাত ৪র্থ সংশোধনীর মাধ্যমে একদলীয় বাকশাল গঠন করা হয়। এর অধীনে এক অদ্ভূত প্রেসিডেন্ট পদ্ধতি চালু করা হয়, যে ব্যবস্থার অধীনে প্রেসিডেন্ট দেশের সর্বময় কর্তা হয়ে পড়েন এবং তিনি যাতে আজীবন প্রেসিডেন্ট থাকতে পারেন, তার ব্যবস্থা ছিল তাতে। অর্থাৎ প্রেসিডেন্ট পদের মেয়াদ বেঁধে দেয়া হয়নি। ৪র্থ সংশোধনী পাসের পর ২৪ ফেব্রুয়ারি তদানীন্তন প্রেসিডেন্ট শেখ মুজিব এক ঘোষণায় তথাকথিত জাতীয় দল বাকশাল গঠন করেন। ১৯৭৩ সালের নির্বাচনেই যেখানে ১৪টি দল অংশ নিয়েছিল, সেখানে আওয়ামী লীগের ‘বি' টিম হিসেবে কথিত সিপিবি ও ন্যাপকে নিয়ে কৃষক শ্রমিক আওয়ামী লীগ (বাকশাল) গঠনের ঘোষণা দেয়া হয়। সে ঘোষণায় অন্যান্য দলকে পরবর্তী ২৫ এপ্রিলের মধ্যে বাকশালে যোগদানের আহবান জানানো হয়। এরপর ৬ জুন শেখ মুজিবকে বাকশালের সভাপতি এবং ক্যাপ্টেন মনসুর আলীকে সেক্রেটারি জেনারেল করে দলের ১১৫ সদস্য বিশিষ্ট কেন্দ্রীয় কমিটির নাম ঘোষণা করা হয়। ১৬ জুন দেশের সকল সংবাদপত্র বন্ধ করে দিয়ে মাত্র ৪টি সংবাদপত্র দলীয় ও সরকারের নিজস্ব প্রচারের জন্য বাঁচিয়ে রাখা হয়। তারপর ২৩ জুন শেখ মুজিব গোটা প্রশাসনকে দলীয়করণের লক্ষ্যে তথাকথিত দ্বিতীয় বিপ্লবের কর্মসূচি ঘোষণার মাধ্যমে দেশকে ৬১টি জেলায় বিভক্ত করেন এবং পরে সেখানে দলীয় লোকদের জেলা গবর্নর হিসেবে নিযুক্ত করেছিলেন।
এই স্বৈরাচারী ব্যবস্থা কায়েমের সময় সংবিধান সংশোধন করে দেশের স্বাধীন বিচার ব্যবস্থাকেও ধ্বংস করেছিল তদানীন্তন আওয়ামী লীগ সরকার। ১৯৭২ সালের ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশে সংবিধান প্রবর্তিত হবার সময় কিন্তু বিচার বিভাগের স্বাধীনতা পুরোপুরি নিশ্চিত ছিল। বাংলাদেশের সংবিধানের ৯৫ থেকে ১১৬ পর্যন্ত মোট ২২টি অনুচ্ছেদ হচ্ছে বিচার বিভাগ সংক্রান্ত। সংবিধান প্রবর্তনের সময় কোনো সমস্যা ছিল না। কেবলমাত্র সংকট ছিল জেলাসহ অন্যান্য পর্যায়ে ফৌজদারী আদালতসমূহে যারা বিচারক ছিলেন তাদের নিয়ে। তারা একদিকে যেমন প্রশাসনের সাথে জড়িত তেমনি একই সাথে ফৌজদারী আদালতে বিচারক।
১৯৭৫ সালের ২৫ জানুয়ারি যখন আওয়ামী লীগ দেশে একদলীয় বাকশাল ব্যবস্থা কায়েম করে গণতান্ত্রিক সমাজ কাঠামোকে ধ্বংস করেছিল, মত প্রকাশের অবাধ স্বাধীনতা খর্ব করার জন্য সকল সংবাদপত্রের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল, দেশে একটি রেজিমেন্টের সোসাইটি গড়ার জন্য আওয়ামী লীগ বিচার বিভাগের স্বাধীনতার উপর হস্তক্ষেপ করেছিল, সংবিধানের কুখ্যাত ৪র্থ সংশোধনীর মাধ্যমে সংবিধানের অন্যান্য বিষয়সহ বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ক্ষুণ্ণ করার জন্য সংবিধানের ৯৫ থেকে ১১৬ অনুচ্ছেদের বিভিন্ন স্থানে সংশোধনী সন্নিবেশিত করা হয়েছিল। ৪র্থ সংশোধনীর মাধ্যমে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা কিভাবে নস্যাৎ করা হয়েছিল তার উদাহরণ দিয়ে আলোচনা করা যেতে পারে। কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ এবং সংশ্লিষ্ট ধারা নিয়েই কেবল আলোচনা করা হবে।
১৯৭২ সালের মূল সংবিধানে ৯৫ অনুচ্ছেদে ছিল, ‘প্রধান বিচারপতি রাষ্ট্রপতি কর্তৃক নিযুক্ত হইবেন এবং প্রধান বিচারপতির সহিত পরামর্শ করিয়া রাষ্ট্রপতি অন্যান্য বিচারককে নিয়োগদান করিবেন'। ৪র্থ সংশোধনীর মাধ্যমে এই অনুচ্ছেদ সংশোধন করা হয় এভাবে, ‘‘প্রধান বিচারপতি এবং অন্যান্য বিচারকগণ রাষ্ট্রপতি কর্তৃক নিযুক্ত হইবেন’’। ইতোপূর্বে প্রেসিডেন্টের একক এখতিয়ার ছিল কেবলমাত্র প্রধান বিচারপতি নিয়োগ দান করার। অন্যান্য বিচারকদের নিয়োগ করার ক্ষেত্রে প্রেসিডেন্টের ক্ষমতা ছিল সীমিত। কিন্তু ৪র্থ সংশোধনীর মাধ্যমে বিচারকদের নিয়োগ দানের ব্যাপারে প্রেসিডেন্টকে নিরংকুশ ক্ষমতা দেয়া হয়েছিল।
অনুরূপভাবে ৯৮ অনুচ্ছেদে প্রধান বিচারপতিকে যে ক্ষমতা দেয়া হয় তা এই চতুর্থ সংশোধনীর মাধ্যমে খর্ব করা হয়েছিল। ৪র্থ সংশোধনী পূর্ববর্তী এই ধারার সুপ্রিমকোর্টের কোনো বিভাগের বিচারক সংখ্যা বৃদ্ধি করতে হলে প্রেসিডেন্টকে প্রধান বিচারপতির সাথে পরামর্শ সাপেক্ষে তা করতে হতো। ৪র্থ সংশোধনীর দ্বারা প্রধান বিচারপতির সে ক্ষমতা রহিত করে তা এককভাবে প্রেসিডেন্টের হাতে অর্পণ করা হয়েছিল।
১০৯ অনুচ্ছেদ সংশোধন করে অধঃস্তন ট্রাইব্যুনালের উপর হাইকোর্ট বিভাগের তত্ত্বাবধান ও নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা রহিত করা হয়েছিল। ৪র্থ সংশোধনীর পূর্বে ১১৫ অনুচ্ছেদ মোতাবেক বিচার বিভাগীয় দায়িত্ব পালনকারী ম্যাজিস্ট্রেট পদে নিয়োগ দানের ক্ষেত্রে প্রেসিডেন্টকে সুপ্রিমকোর্টের সুপারিশের উপর নির্ভর করতে হতো। কিন্তু ৪র্থ সংশোধনীর পর এক্ষেত্রে পুরো কর্তৃত্ব ন্যস্ত করা হয়েছিল প্রেসিডেন্টের কাছে। ৪র্থ সংশোধনীর পূর্বে ১১৬ অনুচ্ছেদে বিচার বিভাগে নিযুক্ত ব্যক্তিদের এবং বিচার বিভাগীয় দায়িত্ব পালনরত ম্যাজিস্ট্রেটদের বদলী, পদোন্নতি ও ছুটি মঞ্জুরসহ শৃংখলা বিধানের দায়িত্ব সুপ্রিমকোর্টের উপর ছিল। কিন্তু ৪র্থ সংশোধনীর মাধ্যমে সুপ্রিমকোর্টের ক্ষমতা খর্ব করে এ ব্যাপারে একক কর্তৃত্ব তুলে দেয়া হয়েছিল প্রেসিডেন্টের হাতে। ৪র্থ সংশোধনীর মাধ্যমে তদানীন্তন আওয়ামী লীগ সরকার বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ও কর্তৃত্ব কেড়ে নিয়েছিল এবং বিচার বিভাগকে প্রশাসন বিভাগের অধীনে নিয়ে গিয়েছিল।
যে বিশেষ পরিস্থিতিতে যুক্তি হিসেবে উল্লেখ করা হয়, তার জন্য আসলে দায়ী ছিল সর্বব্যাপী দুর্নীতি, কালোবাজারী ও চোরাচালানসহ প্রশাসনিক ব্যর্থতা ও অযোগ্যতা, সরকারের উদ্যোগে পরিচালিত নির্যাতন ও হত্যাকান্ড এবং সেই সঙ্গে ১৯৭৪ সালের ভয়াবহ দুর্ভিক্ষ। কিন্তু সময়ের দাবি অনুযায়ী পরিস্থিতির উন্নতি ঘটানোর পথে না গিয়ে ক্ষমতাদর্পী প্রেসিডেন্ট শেখ মুজিব রাজনৈতিক আন্দোলন ও সরকার বিরোধিতার পথরোধ করার অগণতান্ত্রিক পদক্ষেপ নিয়েছিলেন। এই উদ্দেশ্যে ১৯৭৪ সালের ২৮ ডিসেম্বর সারাদেশে জরুরি অবস্থা ঘোষণার মধ্যদিয়ে তার যাত্রা শুরু হয়েছিল এবং বাকশাল ও একদলীয় শাসন প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে এর চূড়ান্ত বিকাশ ঘটেছিল।
সমগ্র এই প্রক্রিয়া ও কর্মকান্ডের একমাত্র উদ্যোক্তা, নিয়ন্ত্রক ও লাভবান ব্যক্তি ছিলেন শেখ মুজিব, সর্বময় ক্ষমতাও কেন্দ্রীভূত হয়েছিল তার একার হাতে। বহুদলীয় বা ‘জাতীয় প্লাটফর্ম' বলা হলেও বাকশাল যে আওয়ামী লীগেরই নামান্তর মাত্র ছিল, সে কথার প্রমাণ মেলে বাকশালে বিলীন হয়ে যাওয়া অন্য দু'টি দল ন্যাপ (মোজাফফর) এবং বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি সিপিবি'র নেতৃবৃন্দের শোচনীয় পরিণতি থেকে। ১৯৭৩ সালের ৩ সেপ্টেম্বর গঠিত ‘ত্রিদলীয় ঐক্যজোট'-এর শরীক এই দল দু'টি থেকে মাত্র ৬ জনকে বাকশালের কেন্দ্রীয় কমিটিতে নেয়া হয়েছিল এবং ১১৫ সদস্যের সর্বোচ্চ কার্যনির্বাহী কমিটিতে কিংবা পাঁচটি অঙ্গ সংগঠনের কোনোটির নেতৃত্বেই সুযোগ পাননি মনিসিংহ এবং মোজাফফর আহমেদের মতো সিপিবির নেতারা। এসব অবস্থানে কেবল মুজিব অনুসারীদেরই প্রতিষ্ঠিত করা হয়েছিল। কেন্দ্রীয় ও কার্যনির্বাহী কমিটি গঠন এবং সংসদ সদস্যদের মনোনয়ন দান থেকে বাকশাল ও রাষ্ট্রীয় সকল ক্ষেত্রে একক ও সর্বময় ক্ষমতা ছিল বাকশাল চেয়ারম্যান ও প্রেসিডেন্ট শেখ মুজিবের হাতে এবং তিনি এমন একজন চেয়ারম্যান ছিলেন যাকে নির্বাচনের কোনো বিধান বা পন্থারই উল্লেখ ছিল না গঠনতন্ত্রে। অর্থাৎ পরোক্ষভাবে একথাই ঘোষিত হয়েছিল যে, শেখ মুজিব আজীবন বাকশালের চেয়ারম্যান এবং দেশের প্রেসিডেন্ট পদে বহাল থাকবেন। তার কখনও মৃত্যু ঘটবে কিংবা তার অনুপস্থিতিতে অন্য কাউকে চেয়ারম্যান বানানোর প্রয়োজনীয়তা দেখা দেবে, এই অনুমানও বাকশাল গঠনকালে করা হয়নি।
২| ২৪ শে জানুয়ারি, ২০১০ সকাল ১০:৫৫
লালসালু বলেছেন: চিন্তার কিছু নাই দেশে এখন ডিজিটাল বাকশাল কায়েম আছে
৩| ২৪ শে জানুয়ারি, ২০১০ সকাল ১০:৫৫
প্রতিবিপ্লবী বলেছেন: দারুণ পোস্ট। আচ্ছা তখন জামাতে ইসলামী কই ছিলো?
৪| ২৪ শে জানুয়ারি, ২০১০ সকাল ১১:২৭
মোহাম্মদ লোমান বলেছেন: প্রিয়তে
৫| ২৪ শে জানুয়ারি, ২০১০ সকাল ১১:২৮
মোহাম্মদ লোমান বলেছেন: প্রিয়তে
৬| ২৪ শে জানুয়ারি, ২০১০ দুপুর ২:৪৫
জর্জিস বলেছেন: চন্দন বলেছেন: চিন্তার কিছু নাই দেশে এখন ডিজিটাল বাকশাল কায়েম আছে
©somewhere in net ltd.
১|
২৪ শে জানুয়ারি, ২০১০ সকাল ১০:৪৯
চন্দন বলেছেন: চিন্তার কিছু নাই দেশে এখন ডিজিটাল বাকশাল কায়েম আছে