![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি মেজবাউল খাঁন ফরহাদ । পেশায় একজন চিকিৎসা বিজ্ঞানী । বিষয় সাইকিয়াট্রি ।ভাল লাগে ভাবতে আর বিশ্লেষণ করতে ।
খুব সাধারণভাবে যদি বলি ;
দেশের একজন সচেতন নাগরিক হিসেবে, আপনি রাষ্ট্রের যেসকল মূল কাঠামো সম্পর্কে উদ্বিগ্ন, যে সকল অসংগতির কারনে রাষ্ট্রের উন্নতি যথাযথভাবে হচ্ছে না বলে মনে করেন, ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায়ের পর্যবেক্ষণে ঠিক সেই সকল কথা গুলোই উঠে এসেছে। একারনে, এই রায়ের মূল অংশের থেকে, এর পর্যবেক্ষণকেই আমার কাছে ঐতিহাসিক মনে হয়।
বিচারপতিদের অপসারণ কিভাবে হওয়া উচিৎ, সে সম্পর্কে দু পক্ষের মতামত শুনে, বুঝে, আমার কাছে যেটা মনে হয়েছে, তা হলো, বিচারপতিদের অপসারণ সংসদ বা আদালত, যেকারো হাতেই থাকতে পারে। তবে সর্বোচ্চ আদালত যেহেতু এবিষয়ে তার সুচিন্তিত রায় দিয়েছে (যে অধিকার আদালত সাংবিধানিকভাবে প্রাপ্ত), তাই এই বিষয়ে আর কোন মতামতের সুযোগ নাই।
এই রায়ে দেশের প্রধান বড় দুই রাজনৈতিক দলেরই বিব্রত হওয়া উচিৎ ছিল, শিক্ষা নেয়া উচিৎ ছিল, নিজেদের ভুলভ্রান্তি গুলো মনে করে অনুতপ্ত হওয়া উচিৎ ছিল। কিন্তু দুঃখজনক ভাবে, বিএনপি একে সু্যোগ হিসেবে নেয়, রাজনৈতিক ভাবে আওয়ামীলীগকে
বিপদে ফেলতে চেষ্টা করে। আর যেহেতু সময়টা গুরুত্বপূর্ণ, মানে সামনে নির্বাচন, তাই আওয়ামীলীগ বিএনপি কে কোন সুযোগই দিতে চায় না। তাইতো, এই রায় নিয়ে প্রথম এক সপ্তাহ চুপ থাকলেও, দলীয় সিদ্ধান্তেই আওয়ামীলীগ এর বিরুদ্ধে সর্বশক্তি নিয়ে মাঠে নামে। এক্ষেত্রে বিএনপি কিছুটা সুবিধাজনক অবস্থায় থাকায় তাদের আচরণ সংযত আর অসুবিধাজনক অবস্থায় থাকায় আওয়ামীলীগের আচরণ বেশ অসংযত মনে হচ্ছে। কেউ কেউ এত বেশী অসংযত কথা বলছেন, যে, তা আদালত অবমাননার পর্যায়ে পরে কিনা, সে প্রশ্ন দেখা দিচ্ছে। তবে, বিএনপি আওয়ামীলীগের জায়গায় আর আওয়ামীলীগ বিএনপির জায়গায় থাকলে, ঠিক একই আচরন করতো।
এই রায়ের পর্যবেক্ষণের সকল বিষয়ই খুব গুরুত্বপূর্ণ। তবে আমার কাছে সংবিধানের "রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম " আর "বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম" থাকা বিষয়ের পর্যবেক্ষণ আলাদাভাবে গুরুত্বপূর্ণ। এটর্নি জেনারেলের এক যুক্তির খন্ডনে, পর্যবেক্ষণে যা বলা হয়েছে, তা অনেকটা এরকম, আপনারা(সংসদ) সংবিধানে সামরিক ছায়া চান না কিন্তু জিয়াউর রহমানের "বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম" আর এরশাদের "রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম " সুযোগ থাকা সত্ত্বেও বাদ না দিয়ে বহাল তবিয়তে রেখে দিয়েছেন। কথাটা আওয়ামীলীগের জন্য তিতা সত্য। তারা ৭২ এর সংবিধানে ফিরে যেতে চায়, সংবিধানে সামরিক ছায়া রাখতে চায় না, কিন্তু সংবিধানের সাথে পুরাপুরি সাংঘর্ষিক এদুটো বিষয়ে তারা একেবারে চুপ। অথচ, আমরা আওয়ামীলীগের কাছেই এর সমাধান আশা করি, আর সংগত কারনেই বিএনপি র কাছ থেকে জাতি এদুটো বিষয়ের কোন সমাধান আশা করে না।
আর, বঙ্গবন্ধুকে অসম্মান করে পর্যবেক্ষণে কিছু বলা হয়েছে বলে মনে হয়নি। বরং পর্যবেক্ষণের বিভিন্ন জায়গায় দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে তার ভূমিকার কথা তুলে ধরা হয়েছে। তাকে, বঙ্গবন্ধু, জাতির জনক বিশেষণে বিশেষায়িত করে, তিনি যে ২৬ মার্চ স্বাধীনতা ঘোষণা দিয়েছেন, তা উল্লেখ করা হয়েছে। বঙ্গবন্ধুর ডাকেই যে দেশের সকল শ্রেণীর মানুষ মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করে স্বাধীনতা ছিনিয়ে এনেছেন এবং মুক্তিযুদ্ধ যে আওয়ামীলীগ নেতাদের তত্ত্বাবধানেই পরিচালিত হয়েছে, তাও উল্লেখ করেছেন। এবং তারপর পর্যবেক্ষনে নিচের কথাগুলো বলা হয়েছে(যাতে আওয়ামীলীগ কটাক্ষ খুজে পেয়েছে)
"আমরা যদি সতর্কতার সঙ্গে আমাদের রাজনৈতিক অস্তিত্বের দর্শনের দিকে নজর দেই তাহলে দেখব, “আমরা বাংলাদেশের জনগণ” থেকেই আমাদের সব মৌলিক চিন্তাভাবনা বিকশিত হয়েছে। ১৯৭১ সালে আমরা যে বিজয় ছিনিয়ে এনেছি তার মূলে রয়েছে এই “আমরাবাদ” (উইনেস) প্রতিষ্ঠা। কিন্তু এখন আমরা অজ্ঞতা ও স্বেচ্ছাচারিতার কবলে পড়ে এই আমরাবাদকে হুমকির মুখে ঠেলে দিয়েছি।’
এর পর লেখা হয়েছে ‘কোনো জাতি বা দেশ কোনো এক ব্যক্তিকে দিয়ে গড়ে ওঠে না, কিংবা কোনো একজন দ্বারা তা গঠিতও হয় না। আমরা যদি সত্যিই জাতির জনকের স্বপ্নের সোনার বাংলা বিনির্মাণ করতে চাই, তাহলে অবশ্যই আমাদেরকে আমিত্বের আসক্তি এবং এই আত্মঘাতী অভিপ্রায় থেকে মুক্ত হতে হবে। "
এগুলা খুবই যৌক্তিক কথা। তার পরও যদি কারো কারো কাছে মনে হয়, শেষের প্যারায় বঙ্গবন্ধুকে কিছুটা খাটো করা হয়েছে, তা মানা যায়। কিন্তু সেটা নিয়ে অতি রাজনীতি মানা যায় না। এতে বঙ্গবন্ধু র সম্মান বাড়বে না কমবে, তা পুনরায় আওয়ামীলীগের ভাবা উচিৎ।
বঙ্গবন্ধু সবার, তাকে নিয়ে রাজনীতি করে একটা নির্দিষ্ট দলের বানানর চেষ্টা করা হলে, তাতে তাকে চূড়ান্তভাবে অসম্মানই করা হবে। সকল রাজনৈতিক দলেরই উচিৎ, এই রায় এবং পর্যবেক্ষণ কে স্বাভাবিকভাবে নিয়ে, বঙ্গবন্ধু র সোনার বাংলা বিনির্মাণে মনোযোগী হওয়া।
- এম.কে ফরহাদ
©somewhere in net ltd.