![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
বাঙালি হিসেবে জন্মালে জীবনের এক পর্যায়ে যে চিন্তা আসা আবশ্যম্ভি-
এই যে আমেরিকা, ইউরোপ, কোরিয়া ভারতের মত দেশ, যেগুলো আজ পৃথিবীর সীমানা পেরিয়ে পাড়ি দিয়েছে মঙ্গলে, আর এদিকে আমারা নিজের দেশের গন্ডিটাও
ঠিকভাবে পেরুতে পারলাম না।
ওই সব দেশে কাজ-কর্ম হয় রোবটিক চালিত মেশিনে, মানুষ শুধু দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে তাদের কার্যক্রম দেখে, তবুও এসব দেশে কর্মীদের পারিশ্রমিক আমাদের চাইতে শতগুন বেশি;
আর আমরা এখানে কলুর বলদে মত শ্রম দিয়েও অভুক্ত থাকি।
ওই সব দেশে নেই কোন ধর্মীয় বিধান, নেই কোন স্বর্গীয় আইন, এমন কি আল্লাহ ভগবানের রেঁসারেঁসিও নেই, জন্মের
পর পরেই নৈতিকতা জন্মানোর তাগিদে কেউ ধর্মীয় চর্চাও করে না তবুও কখনো দূর্নীতি ঘটেছে কিনা শোনা যায় নি।
অথচ আমরা যেখানে ৯৫ শতাংশ মানুষ নিজেদের চেয়ে আল্লাহ, ভগবানের গ্রন্থগুলোতে বিশ্বাস রাখি, এমনকি
সুযোগ পেলে বীর্যের সাথে সাথে গ্রন্থগুলোর বাণীও মাতৃগর্ভে চালান করি যেন ভ্রুণের বিকাশের সাথে সাথে শিশুর নৈতিকতার বিকাশও নিশ্চিত হয় ; তবে হায়! এই দেশ
দূর্নীতির দিক দিয়ে চৌদ্দতম অবস্থান কি করে হয়।
মরনাবশন্য অবস্থার উদ্ভাবন হলে নিজেরা বিজ্ঞানসম্মত বিজ্ঞ ডাক্তারের চেয়ে যেখানে মাওলানা মুনশির ওই ঝাড়ুর ঝাড়-ফুক, সাধু বাবার কেদার কর্দানীর হস্তে নিজেদের সমর্পন করি তবুও দেশের মানুষের মৃত্যুর হার তাজ্জপ ভাবে বেড়ে যাওয়া সত্যিই ভাবায়।
যে দেশের মানুষ বিজ্ঞানাগারের কিতাবগুলোর দ্বারস্থ হয় নি, বিজ্ঞান কি জানেই না, যাঁরা আল্লাহ ভগবানের ইবাদতকেই নিজেদের প্রথম ও সর্বোত্তম কাজ হিসেবে অভিহিত করেছেন
তবুও এ দেশের এমন করুণ অবস্থা সৃষ্টি হওয়া মানায় না। যে দেশের মানুষের পেকেটে কিছু থাক বা না থাক ইমামের দেওয়া এই আল্লাহু নাম করা তাবিজ থাকেই, কালা বাবার
দেওয়া রাম নাম লেখা লকেট থাকে গলায় সেই দেশের মানুষ পেট্রোল বোমায় মারা যায় কিভাবে?
তবে এতো এই দাঁড়ায় - যাঁরাই তাকে বিশ্বাস করছে, তাঁর দেওয়া চালিত পথে চলছে, নিজেদের ওপর বিশ্বাস হারিয়েও তাঁর ওপর বিশ্বাস বজায় রেখেছে তাদেরই তিনি
বিপদে ফেলছেন।
নাহ! তবে কি লাভ আর এই দেশে থেকে। অবিশ্বাসী হয়ে হলেও একটু ভালোভাবে, আরাম আয়াসে নিরাপদে বেচে
থাকার তাগিদে হয়ত অনেকে পশ্চিমা ওই দেশগুলোতে পাড়ি জমিয়েছেন। অনেকে আবার এখনো যান নি তবে যাবার জন্য উদ্দ্যত।
আচ্ছা এমন যদি হয়, আমরাই নাহয় আমাদের দেশটাকে পশ্চিমা দেশগুলোর মত করে বানিয়ে নেই । তবে তো আর জন্মভূমির পরিচয় ত্যাগ করে বিদেশী ওই দেশগুলোর
নাগরিকত্ব নিয়ে বেচে থাকতে হবে না। নিজ দেশের নাগরিক হয়েই আরাম আয়েসে মাথা উচু করে বাচা যাবে। খারাপ হবে কি?
এই প্রয়াস নিয়েই হয়ত অনেকে
দেশটাকে বিজ্ঞানের পথে চালিত করতে
কলম হাতে নিয়েছেন। অথচ তাদের মুখে নাস্তিকের ছাপ মেরে আল্লাহ ভগবানের কটুক্তি করার অভিযোগ তুলে দুনিয়া
থেকে সরিয়ে দেওয়া হল। জাতি হিসেবে আমাদের দোষ কোথায়?
আমরা মোটেই নির্বোধ নই। একমাত্র আমরাই সেই জাতি যারা বিদেশি ওই দেশগুলোর মত করে আরাম
আয়েসে, সুস্থ মস্তিষ্ক নিয়ে বাচতে চাই আবার যারা দেশটাকে ওই পশ্চিমা দেশগুলোর মত করে গড়ে তুলতে ব্যস্ত তাদেরই আমরা খুজে খুজে চাপাতি ছুরি কোদাল হতে নিয়ে
মারতে ব্যস্ত। পরিশেষটা টানা হয় এই বলে - তার লেখার মধ্যে বিজ্ঞান নেই, মুক্ত চিন্তা নেই আছে শুধু আল্লহ, নবী (স, ঈশ্বরের
কটুক্তি। তাই তাকে হত্যা করার স্বর্গীয় বিধান আছে।
এবার বলা যাক একটা কথার ব্যাখ্যা কত রকমভাবে করা যেতে পারে।
গীতা, রামায়ন, মহাভারত পড়ে যেমন সত্য প্রতিষ্ঠা,ভ্রাত্বিত্যবোধ, সত্য রক্ষা করার মত জ্ঞানও পাওয়া যায় তেমনি এর ব্যাখ্যা চেঞ্জ করে এতে যৌন বিজ্ঞানের সন্ধানো পাওয়া সম্ভব। তবে এমনটিও নয় যে যৌনবিজ্ঞানের শাখাটি বিজ্ঞানীগণ আবিষ্কারের পূর্বেই ওইসব গ্রন্থে উল্লেখ ছিল। পাঠক লেখাটি পড়ে
কিরূপে গ্রহণ করবে সেটা তার নিজস্ব সমস্যা। এর উপসংহার যেমন বিজ্ঞানের দরজায় গিয়েও দাঁড় করানো যায় তেমনি
এতে কটুক্তিও খুজে পাওয়া সম্ভব। তবে আমাদের সমাজের এই দুই শ্রেনীর মানুষ লিখাগুলোতে সর্বদা কটুক্তিই খুজে
পেয়েছেন।
প্রথম শ্রেণিভুক্ত অসুস্থ চেনা অচেনা মৌলবাদীদের কথাই বলি। তারা বর্তমানে একবিংশ শতাব্দিতে থেকেও নিজেদের জ্ঞান-গর্ভ, বিবেগ যেন মধ্যযুগেই ফেলে এসেছেন।
তারা চান চোখের বদলে চোখ, কানের বদলে কান, হাতের বিনিময়ে হাত, তবে লেখার বিনিময়ে সেটা দাঁড়ায় কাল্লাতে।
বিজ্ঞান সম্পৃক্ত কোন লেখা যদি আল্লাহ ঈশ্বরের বিপরীতে যায় তবে ওই ব্যক্তির কাল্লা নেওয়া স্বর্গীত কর্তব্য হয়ে ওঠে।
বিষয়টা এমন -যেন তারা প্রত্যেকে দশভুজা দূর্গা। দশটি হাতই চাপাতি, ছুরি, কাচি দ্বারা সজ্জিত। নাস্তিক দমন করে ধর্মীয় বিধান সংরক্ষিত করা তাদের ঈমানী দায়িত্ব।
আর দ্বিতীয় শ্রেণিভুক্ত বামপন্থিগণ ওতটা ভয়ংকর না হলেও একটা সহজ ব্যাখ্যাকে কাচাক্যাচি করে কি করে তাকে জটিলে দাঁড় করানো যায় সেটা তাদের মৌলিক বৈশিষ্টে দাঁড়িয়েছে। তারা চান - বিশ্বাস যার যার। বিশ্বাসকে কখনো বিজ্ঞান দ্বারা ব্যাখ্যা করা সম্ভব নয়। এটা একটা ধ্রুবক স্বরুপ। উনি বিশ্বাস করেন না ঠিক আছে, তবে এই বলে অন্যের বিশ্বাসে আঘাত দেবেন সেটাও তো হয় না। উনাকে চাপাতি আঘাত করা যুক্তিসম্মত।
যুক্তিসম্মত কিনা যুক্তিহীন সেই প্রসংটা নাহয় আজ বাদ। ব্যাখ্যার ক্যাচাক্যাচি করে "ডিম আগে না মুরগী আগে " এর মত অপ্রাসংগিক বস্তুকেও যুক্তিসম্মত করে ফেলা যায়। অনেকে যে বলেন, যার যার বিশ্বাস তার তার, যারা এই বিশ্বাসকে গলার মালা বানিয়ে অদ্য সকাল টু রাত পরে আসছেন, বিশ্বাসকে টিকিয়ে রাখতে নিজেদের আহুতি পর্যন্তও রেখে চলেছেন,নিজে মরে গিয়ে হলেও বিশ্বাসকে রেখে গেছেন, তাঁদের একবার
হলেও কি প্রশ্ন এসেছে, এই বিশ্বাস কতটা ভয়ংকর?
আসার কথা নয়। কারণ সহজ একটা হিসেব করলেই টের পাওয়া সম্ভব কতজন মানুষ আল্লাহ, ঈশ্বরকে ভালোবেসে তাঁর ওপর বিশ্বাস রাখেন। অশ্রব্য হলেও বলতে হয় যে প্রত্যেকে বিশ্বাসের ফল আত্মস্বাদের জন্যই এর পেছন ছুটছেন। বিশ্বাস না করলে যে ৭২ জন হুরী মিস, বিশ্বাস না রাখলে স্বর্গে গিয়ে স্বর্ণের পালঙ্কে শয়ন করে বহুরুপী পরীর সাথে ফসটি-নসটি আর হবে না - তো
বিশ্বাস যোগ্য হোক কিনা বিশ্বাস অযোগ্য সেটা দেখার বিষয় নয়, গিলে নিয়ে হজম করাটাই অতি বুদ্ধিমানের কাজ।
আর এসব কিছুর পরেও যারা নিরব তারা যে বোকার স্বর্গে বাস করছেন সেটা বলার আর উপেক্ষা রাখে না।
তবে এটাও বলা যায়, যারা এই বোকার স্বর্গে বাস করছেন তারাই বিশ্বাসের সংক্রামক বহির্ভুত। যাদের মস্তিষ্ক কখনো বিশ্বাসের এই ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত নয়।
সাধারণ ভাবেই একটি কোরয়ান বা গীতাকে তার আভ্যন্তরীণ আইন - আমানত ব্যাখ্যা করতে বলা হল, তবে কোরয়ান বা সংশ্লিষ্ট গ্রন্থগুলো পারবে কি আইনের
ব্যাখ্যা করতে?
অসুস্থ মস্তিষ্ক না হলে নিমেষেই উত্তর আসবে -না। কারণ কোরয়ান গীতা বাইবেল এসব গ্রন্থগুলো কাগজ, কালির তৈরি। তাদের ক্ষমতা নেই কোন কথা বলার বা কোন কিছুর ব্যাখ্যা করার। বলতে গেলে অবশ্যই তাকে কোন মানুষের ওপর ভর করে আইন -কানুনগুলো ব্যাখ্যা করে বোঝাতে হবে। এক্ষেত্রে সবকিছুই যেহেতু হোস্টের ওপর নির্ভরশীল সুতরাং ব্যাখ্যাগুলো মিষ্টি হবে নাকি ভাইরাসের মত করে সংক্রামক ব্যাধি ছাড়াবে পুরোটাই তার (হোস্টের) প্রকৃতির ওপর নির্ভশীল। সেজন্যই এই বিশ্বাস ধারণ করে কিছু মানুষ হচ্ছে নৈতিক মানবতাবাদী , আর কিছু মানুষ ভাইরাস দ্বারা সংক্রমিত হয়ে হচ্ছে
জিহাদী।
অনেকের ধারণা ধর্মহীন সমাজ পশু উৎপাদনের কারখানা।ধর্ম না থাকলে মানবতার কি হবে ; নৈতিকতার কি হবে? ধর্মই তো নৈতিকতার একমাত্র দাবীদার। ছোটকাল থেকে এই ধর্মপথে হেটেই মানুষ আজ মানবতার স্বর্ণ শেকড়ে পৌছেছে। সুতরাং ধর্মকে মানবতার খাতিরে কখনই সমাজ হতে বিছিন্ন করা
কল্যাণকর হবে না।
আমার ধারণা মানবতার ওপর পিএইচডি করা ওইসব মৌলবাদীদের থেকে ভিন্ন। এই বিশ্বাস নৈতিকতা, মানবতার একমাত্র
অংশিদার কখনই হতে পারে না। বিশ্বাস থাকুক কিংবা না থাকুক যারা নৈতিক মানবতাবাদী তারা সেটাই বহন করে যাবেন কারণ তারা কমনসেন্স চর্চার অনুসারী।
সেজন্যই মনেহয় অবিশ্বাসীরা এই বিশ্বাসের খাপ্পরে না পরেও ওতটা মানবতাহীন নন যতটা এই বিশ্বাসীদের কর্মকান্ডে লক্ষণীয়।
ধরা যাক অতিমাত্রায় বিশ্বাসী এই আইএস জঙ্গি সংগঠনের কথা । বিশ্বাসের ফলে তাদের মানবতা যে কতটা উপচে উপচে পরছে তার নমুনা হয়ত প্রতি নিয়তই আমরা পাই । প্রায়ই তাদের মানবতাদী কর্মকান্ডের ভিডিও চিত্র ইউটিউবে আপলোড করা হচ্ছে যেন আমরাও অনুপ্রাণিত হয়ে নিজেদের সমাজকে ইসলামিক স্টেড এ রুপান্তরিত করতে পারি। তবে আমাদের মত স্বল্প সাধারণ মানুষগুলোর পক্ষে কখনও কি আইএস এর মত মানবতাবাদী হওয়া সম্ভব?
সাকিব খান হয়ত তার মুভিতে ডায়ালগ এড করতে পারেন, তুই আমার বাবাকে মেরেছিস তোকে আমি আইএস এর মত করে জবহ করব;
তবে এই ডায়ালগ যে আমাদের মত সাধারণ মানুষগুলোর পক্ষে বাস্তব জীবনে প্রয়োগ ঘটানো সম্ভব নয় তা আমি নিশ্চিত। কারণ এই মানুষগুলো কোরয়ান, গীতার আয়াতগুলো চোখ বন্ধ করে মুখস্ত করে কার্যকর্ম করেন না। তারা জানেন -পুথিগত বিদ্যা পরহস্তে ধন, নহে বিদ্যা নহে ধন হলে প্রয়োজন ।
মানুষগুলো বোঝে কি করে সমাজে থেকে সকলের বিশ্বাসের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে হয়। তাদের বাস্তব জ্ঞানের সাথে সাথে আছে কমনসেন্স। তাই তারা মনেহয় আইএস এর অনুরূপ হন না তবে ধর্মের মত এই বিশ্বাসগুলো না থাকলে হয়ত চোখ কান বন্ধ রেখে ধর্মীয় গ্রন্থগুলোর ব্যাখ্যা বের করে কাজ করার দায়ভার প্রাপ্ত এই মৌলবাদীদের মানবতাহীনতার পরিমাণ কিছুটা কমে আসবে। কারণ প্রাচীন সভ্যতার ইতিহাস অধ্যয়ন করলে বিশ্বাস যে কতটা ভয়াবহ এর বহু উপকরণ পাওয়া সম্ভব ।
বহু সভ্যতার কথা ইতিহাস বইয়ে পাওয়া যায় যেখানে কোন নতুন প্রাসাদ কিংবা ইমারত তৈরি করার সময় সেই জায়গায় শিশুদের জীবন্ত কবর দেওয়া হত; এটা করা হত এই ধারণা থেকে যে, এটি প্রাসাদের ভিত্তি মজবুত করবে। অনেক আদিম সমাজেই বন্যা কিংবা অন্যান্য প্রাকৃতিক দুর্যোগের হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য কুমারী উৎসর্গ করার বিধান ছিল; কেউ কেউ সদ্য জন্মলাভ করা শিশুদের হত্যা করত, এমনকি খেয়েও ফেলত। প্রাচীন মায়া সভ্যতায় নরবলি প্রথা প্রচলিত ছিলো। অদৃশ্য ঈশ্বরকে তুষ্ট করতে গিয়ে হাজার হাজার মানুষকে মাথা কেটে ফেলে, হৃৎপিণ্ড উপড়ে ফেলে, অন্ধকূপে ঠেলে ফেলে দিয়ে হত্যা করা হত। এমনকি একই বিশ্বাসের রামাবলি মাথায় বেঁধে ১৪৪৭ সালে গ্রেট পিরামিড অব টেনোখটিটলান তৈরির সময় চার দিনে প্রায় ৮০,৪০০ বন্দিকে ঈশ্বরের কাছে উৎসর্গ করা হয়েছিলো। কোন কোন সংস্কৃতিতে কোন বিখ্যাত মানুষ মারা গেলে অন্য মহিলা এবং পুরুষদেরও তার সাথে জীবন্ত কবর দেওয়া হত, যাতে তারা পরকালে গিয়ে পুরুষটির কাজে আসতে পারে। ফিজিতে ‘ভাকাতোকা’ নামে এক ধরনের বীভৎস রীতি প্রচলিত ছিল যেখানে একজনের হাত-পা কেটে ফেলে তাকে দেখিয়ে দেখিয়ে সেই কর্তিত অঙ্গগুলো খাওয়া হত। আফ্রিকার বহু জাতিতে হত্যার রীতি চালু আছে মৃত-পূর্বপুরুষের সাথে যোগাযোগ স্থাপনের উদ্দেশ্য। এগুলো সবই মানুষ করেছে ধর্মীয় রীতি-নীতিকে প্রাধান্য দিতে
গিয়ে, অদৃশ্য ঈশ্বরকে তুষ্ট করতে গিয়ে। ১০৯৫ সালে সংগঠিত প্রথম ক্রুসেড এর সময় হাজার হাজার মানুষকে হত্যা করা হয় এবং বাস্তুচ্যুত করা হয়। জেরুজালেমের প্রায়
প্রতিটি অধিবাসীকে হত্যা করা হয়েছিল শহর ‘পবিত্র’ করার নামে। তৃতীয় ক্রুসেডে তিন হাজার জবাই করে হত্যা করা হয়েছিল। দ্বিতীয় ক্রুসেডের সময় সেন্ট বার্ণাড ফতোয়া দিয়েছিলেন – ‘প্যাগানদের হত্যার মাধ্যমেই খ্রিষ্টানদের মাহাত্ম্য সূচিত হবে। আর যিশুখ্রিস্ট নিজেও এতে মহিমান্বিত হবেন।’ ১২০৯ সালে পোপ তৃতীয় ইনোসেন্ট
উত্তর ফ্রান্সের আলবেজেনসীয় খ্রিষ্টানদের উপর আক্ষরিক অর্থেই ধর্মীয় গণহত্যা চালিয়েছিলেন। স্রেফ চেহারা দেখে বিশ্বাসী এবং অধার্মিকদের মধ্যে পার্থক্য করতে অসমর্থ হয়ে পোপ তখন আদেশ দিয়েছিলেন –‘সবাইকে হত্যা কর’। পোপের আদেশে প্রায় বিশ হাজার বন্দিকে চোখ বন্ধ করে ঘোড়ার পেছনে দড়ি দিয়ে বেঁধে ছ্যাঁচড়াতে ছ্যাঁচড়াতে একটা নির্দিষ্ট জায়গায় নিয়ে গিয়ে হত্যা করা হয়। তারপর বার শতকের দিকে সাড়া ইউরোপ জুড়ে আলবেজেনসীয় ধর্মদ্রোহীদের খুঁজে খুঁজে হত্যার রীতি চালু
হয়। ধর্মদ্রোহীদের কখনো পুড়িয়ে, কখনো ধারালো অস্ত্র দিয়ে ক্ষত-বিক্ষত করে কখনো বা শিরচ্ছেদ করে হত্যা করা হয়। পোপ চতুর্থ ইনোসেন্ট এই সমস্ত হত্যায় প্রত্যক্ষ ইন্ধন যুগিয়েছিলেন। কথিত আছে ধর্মবিচরণ সভার সংবীক্ষক (Inquisitor) রবার্ট লী
বোর্জে এক সপ্তাহে ১৮৩ জন ধর্মদ্রোহীকে হত্যার জন্য পাঠিয়েছিলেন। ইতিহাস কুখ্যাত ‘ব্ল্যাক ডেথ’ এর সময়(১৩৪৮- ১৩৪৯) বহু ইহুদীকে সন্দেহের বশে জবাই করে হত্যা করা হয়। পোড়ানো দেহগুলোকে স্তূপ করে মদের বড় বড় বাক্সে ভরে
ফেলা হয় এবং রাইন নদীতে ভাসিয়ে দেয়া হয়। তারপর ধরা যাক মধ্যযুগে ডাইনি হত্যার নামে নারীদের হত্যার অমানবিক দৃষ্টান্তগুলো। সে সময় (১৪০০ সালের দিকে) চার্চের নির্দেশে হাজার হাজার রমণীকে ‘ডাইনি’ সাব্যস্ত করে পুড়িয়ে মারা শুরু হয়। এই ডাইনি পোড়ানোর রীতি এক ডজনেরও বেশি দেশে একেবারে গণহিস্টেরিয়ায় রূপ নেয়। সে সময় কতজনকে যে এরকম ডাইনি বানিয়ে পোড়ানো হয়েছে তার কোন ইয়ত্তা নেই। সংখ্যাটা এক লক্ষ থেকে শুরু করে ২০ লক্ষ ছড়িয়ে যেতে পারে। ‘ঠগ বাছতে গা উজাড়ের’ মতই ডাইনি বাছতে গিয়ে গ্রামের পর গ্রাম উজাড় করে দেয়া হয়েছে। সতের শতকের প্রথমার্ধে অ্যালজাস (Alsace) নামের ফরাসি প্রদেশেই প্রায় ৫০০০ জন ‘ডাইনি’কে হত্যা করা হয়, ব্যাম্বার্গের ব্যাভারিয়ান নগরীতে ৯০০ জনকে পুড়িয়ে মারা হয়। ডাইনি পোড়ানোকে কেন্দ্র করে সৃষ্ট ধর্মীয় উন্মত্ততা সে সময় অতীতের সমস্ত রেকর্ডকে ম্লান করে দিয়েছিল। শুধু নারীরা নয়, খ্যাতিমান বিজ্ঞানী দার্শনিকেরাও রেহাই পাননি রক্তলোলুপ চার্চের কোপানল থেকে। জিওনার্দো ব্রুনোর মত দার্শনিককে বাইবেল-
বিরোধী সূর্যকেন্দ্রিক তত্ত্ব সমর্থন করার অপরাধে জ্যান্ত পুড়িয়ে মারা হয় সে সময়, গ্যালিলিওকে করা হয় অন্তরিন।
আর এই উপমহাদেশে তো ধর্মীয় কুসংস্কার ছিল রীতিমত ভয়াবহ। পনের শতকে ভারতে কালীভক্ত কাপালিকের দল
মা কালীকে তুষ্ট করতে গিয়ে ২০ লক্ষ মানুষকে জবাই করে হত্যা করেছিল। অষ্টম কিংবা নবম শতাব্দীর দিকে ব্রাক্ষণ
গোঠী ঘোষণা দেয়, মৃত ব্যক্তির পত্নি যদি অন্য কোনরুপ পুরুষের সাথে যৌনকর্মে আবদ্ধ হয় তবে ওই মৃত ব্যক্তির নরক
যাত্রা নি:সন্দেহে নিশ্চিত। তাই স্বামী মারা গেলে স্ত্রী যেন কোনরূপ যৌনকর্মে লিপ্ত থাকার সুযোগ না পায় সেজন্য স্বামীর সাথে সাথে স্ত্রীকেও জ্বালীয়ে দেওয়া হত। এভাবেই কেবল ১৮১৫ থেকে ১৮২৮ সালের মধ্যে ৮১৩৫ নারীকে সতীদাহের নামে পুড়িয়ে হত্যা করা হয় (প্রতিবছর হত্যা করা হয় গড়পড়তা ৫০৭ থেকে ৫৬৭ জনকে)। মৌলবাদী খ্রিষ্টানরা ইদানীংকালে ডাইনি পোড়ানো বাদ দিলেও অ্যাবরশন ক্লিনিকগুলোর উপর রাগ যায়নি এখনো। ১৯৯৩ থেকে আজ পর্যন্ত ‘আর্মি অব গড’ সহ অন্যান্য গর্ভপাত বিরোধী খ্রিস্টান মৌলবাদীরা আট জন ডাক্তারকে হত্যা করেছে। ক’বছর আগেও
(২০০৯ সালে) নৃশংসতার সর্বশেষ নিদর্শন হিসেবে খ্রিস্টান মৌলবাদী স্কট রোডার কর্তৃক ডঃ জর্জ ট্রিলারকে হত্যার ব্যাপারটি মিডিয়ায় তুমুল আলোচিত হয়। ন্যাশনাল অ্যাবরশন ফেডারেশনের সরবরাহকৃত পরিসংখ্যান অনুযায়ী ১৯৭৭ সালের পর
থেকে আমেরিকা এবং ক্যানাডায় গর্ভপাতের সাথে জড়িত চিকিৎসকদের মধ্যে ১৭ জনকে হত্যার প্রচেষ্টা চালানো হয়, ৩৮৩ জনকে হত্যার হুমকি দেয়া হয়, ১৫৩ জনের উপর চড়াও হওয়ার এবং ৩ জনকে অপহরণের ঘটনা ঘটে।
আবার বর্তমানকালের আইএস জঙ্গিদের আল্লাহু আকবর ধ্বণী দিয়ে শত শত মানুষ নিমেশে হত্যা করে তাকে জায়েজ
করার প্রক্রিয়া এখন সকলেরই দৃষ্টগোচর। জঙ্গি দলের এক সুইসাইড টেরোরিস্টকে গ্রেফতার করেছিল পার্শ্ববর্তী দেশের সেনাবাহিনী। সেই বোমাবাজ- সন্ত্রাসীকে প্রশ্ন করা হয়েছে তাকে যদি ছেড়ে
দেয়া হয় তবে আবারো তিনি টেরোরিজমের মাধ্যমে মানুষ মারবেন কিনা। টেরোরিস্ট উত্তর দিয়েছেন হ্যা, আল্লাহর ইচ্ছায় অবশ্যই
তিনি আবারো জিহাদে যাবেন। মানুষের উপর হামলা করবেন। তিনি জিহাদের নামে সাধারণ মানুষ হত্যাকে মোটেই অন্যায় মনে করেন না। এমনকি শিশু হত্যা করতেও
তার বুক কাঁপে না। যারা জিহাদ সমর্থন করে না, তাদের সবাইকেই বোমা মেরে উড়িয়ে দেয়া জায়েজ আছে তাঁর কাছে। প্রশ্নকর্তা একসময় বাধ্য হয়ে সেই বোমাবাজকে
জিজ্ঞাসা করলেন বাসায় তার মা বোন আছে কিনা, তিনি বিয়ে করেছেন কিনা ইত্যাদি। জিহাদি বোমাবাজ জবাবে যা বললেন, তা একেবারে মণিমুক্তা। তিনি স্পষ্ট করে
বললেন যে, তার বিয়ে করার দরকার নেই। কারণ, পরকালে তার জন্য বাহাত্তরটি হুরি তো অপেক্ষা করেই আছে:
এই হচ্ছে বিশ্বাস। এটা যার যার হলেও বিশ্বাসের ভোগান্তি পেরুতে হয় সবারই।
কথাগুলো হয়ত বানোয়াট কিছু মনেহতে পারে , তবে বলে রাখি বিশ্বাসে নিষ্ঠুরতাগুলো বানিয়ে বলার মত কিছু নয়, একটু চারপাশটা লক্ষ রাখলেই এর সম্পর্কে ঢের জ্ঞান লাভ করা সম্ভব। এই বিশ্বাসের জন্যই আজ নেই হুয়ায়ুন আজাদ, অভিজিৎ রায়, ওয়াশিকুর বাবুর মত বিজ্ঞানমনস্ক মানুষগুলো। ক্রমশ হারিয়ে যাচ্ছে বাংলা। জানি না ২০২১ এ আমরা ডিজিটাল বাংলাকে দেখব নাকি এলানগ বাংলা তবে যিনি আজীবন বাংলাকে ডিজিটাল হিসেবে দেখতে, বিজ্ঞানমনস্ক করতে লড়ে গেছেন এই মৌলবাদীদের বিরুদ্ধে, সেই অভিজিৎ রায়ের মত করেই বলি-
ধর্মকে আসলে স্রেফ ভাইরাস হিসেবেই চিহ্নিত করা প্রয়োজন। ধর্মের বৈশিষ্ট্যগুলো কেবল ভাইরাসের মধ্যেই দেখা যায়। এমনকি ভাইরাসের চিকিৎসার ব্যাপারটিও ধর্মের সাথে অনেকটাই মেলে। ভাইরাসের সরাসরি কোনও চিকিৎসা নেই। ভাইরাস চিকিৎসার একটি প্রধান দিক হচ্ছে প্রতিরোধ আর এই
প্রতিরোধের সবচেয়ে কার্যকর উপায় হচ্ছে ভ্যাক্সিন। ভ্যাক্সিনের মূলনীতি হচ্ছে – যে ভাইরাসের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ করতে চাই, সেই ভাইরাসের বিষাক্ত অংশ বা Toxin অংশটুকুকে মেরে ফেলে বা দুর্বল করে
সেই মৃত ভাইরাসটিকে মানুষের শরীরে ঢুকিয়ে দেয়া হয়। ফলে মানুষের শরীর, মৃত ভাইরাস টির দেহ বৈশিষ্ট্য বা
Physical morphology চিনে রাখে, ফলে ওই ভাইরাসের বিপরীতে মানুষের দেহের রোগপ্রতিরোধ ব্যবস্থায় এক ধরনের
মেমোরি তৈরি হয়। পরবর্তীতে যখনই সেই
মানুষ বা প্রাণীটি একই ভাইরাস দিয়ে আক্রান্ত হবে, দেহ সেই ভাইরাসের বিরুদ্ধে তার মেমরিকে কাজে লাগিয়ে প্রতিরোধগড়ে তুলবে।
ধর্মের বিরুদ্ধেও সরাসরি কোন চিকিৎসা নেই। ধর্ম-বিজ্ঞান নিয়ে মৌলবাদীদের মাথাব্যাথা নাপা এক্সট্রা দিয়ে প্রতিরোধ করা সম্ভব নয় । ধর্মের কালো দিকগুলো উন্মোচন করা আসলে ভাইরাসের টক্সিন বা বিষাক্ত অংশকে মেরে ফেলার মতই, যত বেশী মাত্রায় ধর্মের হানাহানি, সাম্প্রদায়িকতা, অবৈজ্ঞানিকতাকে তুলে ধরা যাবে, মানুষের মাঝে ততো বেশী প্রতিরোধ “মেমোরি” তৈরি হবে এবং মানুষ ধর্মের ভাইরাসের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলবে।
©somewhere in net ltd.