![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
অনেক আবেগ-উচ্ছ্বাস আর উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার লংমার্চ অবশেষে ভালোয় ভালোয় শেষ হল। ৬ এপ্রিল রাজধানী ঢাকা ছিল তৌহিদী জনতার দখলে। তারা অশান্তি করলে ঢাকার চেহারা পাল্টে দিতে পারত। নেতারা কঠিন নীতি-আদর্শ ও আন্তরিক শান্তিপ্রিয়তার অনুসারী না হয়ে উশৃংখল বা প্রতিশোধ প্রবণ হলে ঢাকার মাটি ধূলায় পরিণত হত। কোন স্বার্থপর শক্তির ফাঁদে তারা পা দিলে ঢাকা হতে পারত নাদির শাহের দিল্লীর মত। এক শ্রেণীর লোকের কথা মত, তৌহিদী জনতা জঙ্গীবাদের সমর্থক হলে অথবা হেফাজত নেতৃবৃন্দ সন্ত্রাসী ভাবধারার হলে গতকাল ঢাকা হতে পারত মারাঠা বর্গীদের দ্বারা আক্রান্ত নগরী কিংবা কর্নেল হাডসনের দিল্লীর মত। অন্তত বুশের বাগদাদ কিংবা ন্যাটোর কান্দাহার তো হতেই পারত। মারাত্মক বিধংসী বোমা ও অত্যাধুনিক মারণাস্ত্র ছাড়াই জনতার রোষাণলে জ্বলে পুড়ে ছারখার হয়ে যেতে পারত ঢাকার খোদাদ্রোহী, নাস্তিক-মুরতাদ ও ইসলামবিদ্বেষী চক্রের নানা ঘাঁটি ও আস্তানা। কিন্তু এমন কিছু হয়নি।
শত বাধা-বিপত্তি, গুজব, বিভ্রান্তি ও পরোক্ষ বা প্রত্যক্ষ অসহযোগিতার পরও হেফাজতে ইসলামের আহবানে যে অভূতপূর্ব লংমার্চ সংঘটিত হয়েছে গত ৪২ বছরে এমন নজির বাংলাদেশে পাওয়া যাবে না। জাতির জীবনে গুরুত্ব ভিন্ন ভিন্ন হলেও ঐতিহাসিক ৭ মার্চের সাথে লংমার্চ-পরবর্তী মহাসমাবেশের একটি গভীর মিল জনগণের চোখে ধরা পড়েছে। মুক্তি ও স্বাধীনতার জন্যে পাগলপারা বীর বাঙালি যেমন, ১৯৭১-এর ৭ মার্চ সমবেত হয়েছিল শ্বাসরুদ্ধকর অবস্থা থেকে বের হয়ে আসার অদম্য স্পৃহা নিয়ে। ২০১৩ সালের ৬ এপ্রিল এমনি এক অস্বস্তিকর অচলায়তন ভাঙ্গার কঠিন প্রেরণা নিয়ে শত বাধার পাহাড় ডিঙিয়ে সারা বাংলাদেশ ছুটে এসে জড়ো হয়েছিল রাজধানীর প্রাণকেন্দ্র শাপলা চত্বরে। এখানে ক্ষমতা দখল, সরকার হটানো, কোন দলকে ক্ষমতায় বসানো ইত্যাদি কোন এজেন্ডা হেফাজত নেতাদের ছিল না। তারা দেখিয়ে দিয়েছেন যে, সরকারের শত বাধা সত্ত্বেও যে কোন সময় তারা কোটি খানেক লোক ঢাকায় এনে তুলতে পারেন। বৃহত্তর সিলেটের নানা স্থান থেকে পায়ে হেঁটে আসা কাফেলা। ময়মনসিংহ, রাজবাড়ী, মাদারিপুর, সিরাজগঞ্জ, কুমিল্লা ইত্যাদি দূরত্ব এবং এর মধ্যবর্তী প্রতিটি স্থান থেকে কী চেতনা আর মনোবেদনা নিয়ে জীবনবাজি রেখে গত ৬ এপ্রিল ছুটে এসেছিলেন লাখো মানুষ, এনিয়ে সকলকে অবশ্যই ভাবতে হবে। সরকারকে অন্তত দশবার ভেবে দেখতে হবে, তারা কোন পথে এগুবেন। বিরোধী দলগুলোকেও দু’চারবার মাথা ঘামাতে হবে, তারা কী মেসেজ দেবেন এদেশের তৌহিদী গণমানুষকে।
বাংলাদেশের মূলধারা ইসলাম প্রিয় জনতা ও শতভাগ ধর্মবিশ্বাসী মানুষ। এ জনগোষ্ঠীর সমর্থন ও ভালবাসা নিয়েই বাংলাদেশ স্বাধীন করেছেন বাংলাদেশের মহান স্থপতি। ঈমান, ইসলাম, আল্লাহ, রাসূল (সা.) কোরআন, সুন্নাহ, ধর্মীয় মূল্যবোধ ও সংস্কৃতির প্রতি কোন ক্ষোভ ঘৃণা, অবিশ্বাস ও দ্রোহ নিয়ে এদেশ স্বাধীন হয়নি। মুক্তিযুদ্ধ হয়নি। গণতান্ত্রিক আন্দোলন বা গণঅভ্যুত্থান হয়নি। ৪২ বছর ধরে রাজনীতিবিদরা দেশ চালাচ্ছেন। গণতন্ত্র, স্বৈরতন্ত্র, সেনাশাসন ইত্যাদি মিলে চলছে স্বদেশ। রাজনীতি রাজনীতিই। তাদের কাজের বৃত্ত অনেক বড়। কিন্তু অসীম নয়। বিগত কিছুদিন ধরে দেখা যাচ্ছে, রাজনীতিকরা মানুষের দ্বীন-ঈমান, সংস্কৃতি, মূল্যবোধ, ইবাদত, বন্দেগী, পর্দা, দাড়ি-টুপি, কোরআন, সুন্নাহ সবকিছু নিয়ে কাজ করছেন। ফতওয়া বন্ধ করার চেষ্টা হয়েছে। হজ্ব কোরবানী, নামাজ, জিকির, তওবা, তাহাজ্জুদ নিয়েও কথা ওঠেছে। শুরু হয়েছে ধর্ম অবমাননা। নাস্তিকতা ও ধর্মদ্রোহ পৃষ্টপোষকতা পাচ্ছে অবিশ্বাস্যভাবে, অপ্রত্যাশিত স্থান থেকে। ধর্মহীনতার সুগভীর ষড়যন্ত্র চলছে। শিক্ষা, সংস্কৃতি, গণমাধ্যম, নীতিমালা, আইন-আদালত ও শাসন ব্যবস্থার নানা অঙ্গনে। মানুষ হতবিহ্বল। ধর্মীয় নেতৃবৃন্দ প্রতিবাদমুখর। নানাসময়ে সরকারী প্রতিনিধি বা শাসক দলীয় লোকজন তাদের আশা, সান্ত¦না ও অভয়বার্তা দিয়েছেন। স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী বিশিষ্ট আলেমদের চায়ের দাওয়াত দিয়ে আশ্বাস ও আশা দিয়েছেন। ক্ষেত্রবিশেষে প্রতিশ্রুতি দিয়ে তাদের সমর্থন ও সহযোগিতা নিয়েছেন। কিন্তু এসবের ফলাফল আলেম সমাজ ও তৌহিদী জনতার কাছে সুস্পষ্টরূপে আশানুরূপ হয়নি। যা কিছু হয়েছে তা-ও সঠিক পন্থায়, উপযুক্ত লোকের মাধ্যমে, সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনায় হয়নি। অনেক কিছু এমনও আছে যা, বিশাল সাফল্যরূপে প্রধানমন্ত্রীর অর্জনের খাতায় লিপিবদ্ধ হতে পারত, কিন্তু ভুল ব্যক্তির প্রতিনিধিত্বে, ত্রুটিপূর্ণ উপস্থাপনায় হয়েছে বলে মানুষের অন্তরে দাগ কাটতে পারেনি। সবচেয়ে বড় যে সমস্যাটি হয়েছে, সেটি হল, সরকারের ধর্মীয় বিষয়ের প্রতিটি কাজ ছিল, নানারকম ভণিতায় দুষ্ট। যা সংশ্লিষ্টদের অসরল কৌশলের মন্দ প্রভাবে আক্রান্ত। প্রধানমন্ত্রীর মনোভাবের ছাপ এসব ক্ষেত্রে প্রবল ছিল না। ছিল স্পষ্ট কর্মকুশলীদের অতিরাজনীতির প্রকট দাগ। যা মানুষকে কৃতজ্ঞ না বানিয়ে, বানিয়েছে সন্দিহান। উৎফুল্ল না করে করেছে উদ্বিগ্ন। এ ব্যর্থতা প্রধানমন্ত্রীর কিনা জানা নেই, তবে এর ভোগান্তি ও দায় কিন্তু সর্বাংশে তাকেই নিতে হচ্ছে।
হেফাজতে ইসলামের লংমার্চের কথাই বলি না কেন। প্রায় নবজাতক এ সংগঠনটি কী অবিশ্বাস্য কম সময়ে, গোটা বাংলাদেশকে আচ্ছন্ন করে ফেললো, এর সমাজতাত্ত্বিক বিশেষণ করার ক্ষমতা আওয়ামী লীগের হাইব্রীড নেতাদের না থাকলেও প্রবীন নেতাদের তো থাকার কথা। সুবিধাপ্রাপ্ত নেতা-মন্ত্রীদের এ নিয়ে মাথাব্যথা না থাকতে পারে কিন্তু দেশ-গেরামে জনগণের মাঝে জীবনযাপনকারী মাটিঘনিষ্ঠ নেতাকর্মীদের তো এনিয়ে কঠিন উদ্বেগ থাকার কথা। প্রধানমন্ত্রীর মত একজন অভিজ্ঞ চৌকস ও অপ্রতিদ্বন্দ্বী নেতার তো এ বিষয়টির উপর গভীর দৃষ্টি থাকা নি:সন্দেহে জরুরি। দেশের অন্যতম বৃহৎ ও প্রাচীন গণসংগঠন আওয়ামী লীগের কান্ডারি হিসেবে তৌহিদী জনতার এ অভূতপূর্ব উত্থান সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা ও নিখুঁত মূল্যায়ন থাকা আবশ্যিকভাবে অপরিহার্য। এ কথা আওয়ামী লীগের অন্তত: ১৫ জন সিনিয়র নেতা, মন্ত্রী, এমপি ও বুদ্দিজীবীর সাথে কথা বলে আমি সম্প্রতি বুঝতে পেরেছি যে, দলটির কিছু সংখ্যক লোকছাড়া বিপুল সংখ্যাগরিষ্ট নেতাকর্মী তৌহিদী জনতার সাথে তাদের দল ও সরকারের এ দূরত্ব ও ক্ষেত্র বিশেষে বিরোধের ব্যাপারে চরমভাবে উদ্বিগ্ন। তারা এ জন্যে নাস্তিক্যবাদী বামধারার কিছু অহিতাকাক্সক্ষী নেতা, দু’একজন বেয়ারা মন্ত্রী আর নেত্রীর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রকারী স্বার্থাম্বেষী মহলকে দায়ী মনে করেন। তারা নেত্রীকে সতর্ক হতে বলতে চান। তারা নেত্রীকে সব কিছু নতুন করে ভাবার আহবান জানাতে চান। তারা মনে করেন, ধর্মবিদ্বেষী নাস্তিক-মুরতাদদের পক্ষ ত্যাগ করে, অসফল রাজনীতিকদের পরামর্শ গ্রহণ বন্ধ করে এই মুহূর্তে নেত্রীকে বঙ্গবন্ধুর উদার , ধর্মপ্রাণ, গণমানুষের রাজনীতিতে ফিরে আসতে হবে। যদি তিনি মাঠ পর্যায়ের এ আহবানে দ্রুত সাড়া না দেন, তাহলে আওয়ামী লীগের রাজনীতি অদূর ভবিষ্যতে কঠিন চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হবে। যা মোকাবেলা বা এড়িয়ে যাওয়ার সাধ্য সরকারের থাকবে না। বঞ্চিত নেতাকর্মীরাও এর মুখোমুখি হতে চাইবে না। স্বার্থপর নেতারা তো শুরুতেই কেটে পড়বে। যারা অন্যায় দুর্নীতি ও সমাজবিরোধী কাজে যুক্ত হয়ে পড়েছে, তাদের মানসিক জোরই থাকবে না, পরিস্থিতি মোকাবেলার। অতএব নেত্রীকে খুব দ্রুত নির্ভূল সিদ্ধান্তে আসতে হবে। ধর্মপ্রাণ মানুষের মনস্তত্ত বোঝেন, এমন উপদেষ্টা ও কৌশলী ব্যক্তিত্বের সহায়তা নিয়ে গণঅসন্তোষের কামানের মুখ থেকে সরকার ও দলকে নিয়ে নিরাপদ স্থানে সরে যেতে হবে। আরো দেরি করলে, আরো ভুল করলে, অযোগ্য ও অমার্জিত লোকেদের আরো কৌশল অবলম্বন করতে দিলে তিনি এমন গভীর সংকটে পড়বেন, যা থেকে উদ্ধারের কোন পথ থাকবে না। নেতাদের ভাষায়, তার আম ও ছালা দুটোই যাবে। আমরা বলি, ছালা চলে যাক, তিনি আমকেই ধরুন। আম মানে তৌহিদী জনতা। ছালা হল, নাস্তিক-মুরতাদ, ধর্মদ্রোহী এর বাংলাদেশের স্বাভাবিক ধারার শত্রু গণধিকৃত কুচক্রীমহল। আশা করি, প্রধানমন্ত্রী হেফাজতে ইসলামের দেয়া ১ মাস সময়কে ইতিবাচক ভাবনায় কাজে লাগাবেন। প্রবীন আওয়ামী নেতৃবৃন্দ, প্রকৃত হিতাকাক্সক্ষী আলেম, উলামা, চিন্তাবিদ ও বুদ্ধিজীবীদের সাথে পরামর্শ করবেন। দেয়ালের লিখন পড়বেন। আকাশে বাতাসে ধ্বনিত তৌহিদী আওয়াজ শুনবেন। নবী করীম (সা.)-এর ভক্ত-প্রেমিকদের অন্তর্দাহ, কলিজাকাটা কান্না, দুঃখময় আর্তনাদ, লংমার্চের শ্লোগান ও ধর্মপ্রিয়তার ঘোষণার অনুসরণ উপলব্ধি করবেন। রাজধানীর বাতাসে এখনও তো এগুলো ভাসছে। লংমার্চকে স্বাগত জানানো ঢাকাবাসীর চোখ মুখ বুক ও হৃদয়ের ব্যাকূল ভাষা অবশ্যই যেন তিনি পাঠ করেন। নেত্রীর প্রতি এ মুহূর্তে এর বেশি আর কিছু বলার নেই।
মিডিয়াকে বলি, আপনারা দুই চোখ খুলে কাজ করুন। যারা অবস্থার বাস্তবচিত্র তুলে ধরেন, তারাই শুদ্ধ সাংবাদিক। আলহামদুলিল্লাহ, ঢাকার মিডিয়া ৬ এপ্রিলের লংমার্চের সাথে সদাচরণই করেছেন বলা যায়, কিছু সংবাদপত্র ও চ্যানেলের সুবিচার করার সৌভাগ্য হয়নি। তাদের বলব, দয়া করে পেশার সম্মান রাখুন। উদারতা ও ন্যায়ের পন্থা চর্চা করুন। তৌহিদী জনতার পাওনা অধিকারটুকু তাদের দান করুন। এমন বড় গণউত্থানকে আপনারা মিডিয়া থেকে ঝেড়ে ফেললেও বাংলাদেশের দৃশ্যপট থেকে মুছতে পারবেন না। ব্যর্থ রাজনীতির এ কঠিন সময়ে সুপ্ত তৃতীয় শক্তির সংগঠিত নতুন উত্থানকে যেন কেউ উপেক্ষা না করেন। বাংলাদেশের হৃদয়ে প্রবাহিত ধর্মীয় শান্তিপ্রিয় নাগরিক প্রেরণাকে কেউ যেন গৎবাধা বদনামে উল্লেখ না করেন। শান্তির বাণী নিয়ে ঢাকায় সমাগত লাখো মানুষকে কেউ যেন জঙ্গীবাদী সন্ত্রাসী না বলেন। নিজের বিবেককে জাগ্রত করুন। ভাষাকে সংযত করুন। কলমকে শুদ্ধ করুন। ক্যামেরাকে নিষ্কলুষ করুন। বুকে হাত দিয়ে ভাবুন, শত বাধা উপেক্ষা করে, রাজধানীতে ছুটে আসা মানুষগুলো কি বলতে এসেছিল? হৃদয় খুলে দেখুন, এদের মাঝেই দেখতে পাবেন, আপনার পিতা, ভাই ও সন্তানের নিষ্পাপ মুখচ্ছবি।
বিরোধী দলগুলোর ভেতর যারা লংমার্চের সাথে একমত হয়ে সংহতি প্রকাশ করেছেন দীর্ঘ অভিযাত্রীদের প্রীতি, শুভেচ্ছা, সম্মান ও সহানুভুতি জানিয়েছেন। তাদের সুমতির জন্য আন্তরিক কৃতজ্ঞতা জানাই। তারা সঠিক কাজটিই করেছেন। কিন্তু তৌহিদী গণমানুষের এ নিষ্পাপ পদাযাত্রাকে দূর থেকে ভালবাসলেই কেবল তাদের সব দায়িত্ব শেষ হয়ে যাবে না। আল্লামা আহমদ শফীর উদাত্ত আহবানে তাদের নিঃশর্তভাবে সাড়া দিতে হবে। ঘোষিত ১৩ দফা বাস্তবায়নের শক্ত প্রতিশ্রুতি দিতে হবে। আগামী নির্বাচনে তাদের স্পষ্ট বক্তব্য ও সুদৃঢ় অঙ্গীকার ছাড়া হেফাজতে ইসলাম তাদের সমর্থন দেবে না। এক্ষেত্রে আল্লামা আহমদ শফীর ঘোষণা বিশেষ প্রনিধানযোগ্য। তিনি বলেছেন, ক্ষমতায় থাকতে বা যেতে হলে ১৩ দফার বিষয়ে পরিষ্কার অঙ্গীকার করতে হবে। সরকার যদি তৌহিদী জনতার মনজয় করতে চায়, তাহলে ১৩ দফার প্রতি তার সম্মান প্রদর্শন করে দ্রুত বাস্তবায়নের কাজে নেমে পড়তে হবে। ইসলামের তো এটাই আদর্শ। এখানে স্থায়ী শত্রু বা বন্ধু বলতে কিছু নেই। ইসলামের স্বার্থ যারা রক্ষা করবে তারাই মুসলমানের বন্ধু। যারা ইসলামের ক্ষতি করবে তারাই শত্রু। হেফাজতে ইসলামের এ মধ্যস্থায়ী আহবান সরকার ও বিরোধী দল, সকলের জন্যই উন্মুক্ত। জনগণ দেখবে, কে এগিয়ে আসে, কে পিছিয়ে যায়। কে কিভাবে আসে, কত দ্রুত আসে।
ইসলামী দল, সংগঠন ও প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যকার ঐক্য-সংহতি, পারস্পরিক ভালবাসা বিগত সময়ের চেয়ে এবারকার আন্দোলনে ছিল অনেক অনেক গুণ বেশি। যেসব ইসলামী দল বা সংগঠন হেফাজতের সঙ্গে একমত ছিল না, তাদের প্রতিবাদ বা বিরোধের পদ্ধতিও হওয়া উচিৎ ছিল নিজেদের ভাবমর্যদার সাথে সঙ্গতিপূর্ণ নানা কারণে যারা এ আন্দোলন থেকে দূরে ছিলেন, তাদের ভাষা, বিবৃতি, বিতর্ক সবই হওয়া উচিৎ ছিল সহনশীল, মার্জিত ও ভাবগম্ভীর। কেননা, বাংলাদেশের যেসব আলেম হেফাজতে ইসলামের নেতৃত্ব বা তৎপরতা যুক্ত তাদের ফুঁ দিয়ে উড়িয়ে দেয়া কিন্তু কারো পক্ষেই সম্ভব নয়। তাছাড়া, যে যত বড় ব্যক্তিই হন না কেন, হেফাজতের নেতাকর্মীরা কেউই তার আঙ্গুলের ফাঁক দিয়ে পড়ে যাবেন, এমন ভাবাও ঠিক হবে না। সম্মানজনক অনেক ব্যতিক্রম ছিলেন। যারা সুন্দর ভাষায় হেফাজতের সমালোচনা করেছেন। ধন্যবাদ, ইসলামপন্থী নেতৃবর্গকে, যাদের ভাষা, ভঙ্গি আচরণ ও আন্দোলন থেকে নতুন প্রজন্ম আদব-কায়দা সহিষ্ণুতা, শালীনতা, পরমতশ্রদ্ধা শিখতে পারছে।
হেফাজতে ইসলাম নেতৃবর্গকে অন্তহীন শুকরিয়া। তারা সরকারকে সতর্ক করেই আন্দোলনের রাশ টেনে ধরেছেন। দেশের চিন্তাশীল, জ্ঞানী-গুণী মানুষ তাদের এ প্রজ্ঞাময় সিদ্ধান্তে আনন্দিত। সরকারের অনুমতির স্থানে অনুমোদিত সময়ের ভেতর অহিংস, শান্তিময়, নীতিনিষ্ঠ, সুশৃংখল, মহাসমাবেশ পরিচালনা ও সমাপ্ত করা। লংমার্চের আবালবৃদ্ধ জনশক্তিকে সঠিকভাবে, নিরাপদে নিজ নিজ ঠিকানায় ফিরিয়ে নেয়া। রাজধানী ঢাকার একটি তৃণখ-, ইট, পাথর বা ধূলিকণারও ক্ষতি না করে জিকিরের সাথে লংমার্চ আনা এবং ফিরিয়ে নেয়া।
বিচ্ছিন্ন দু’একটি ঘটনা ব্যক্তিগত উদ্যোগে কোন অবুঝ বা দুর্বৃত্ত করলেও তা মুহূর্তে নিয়ন্ত্রণ করা। জায়গায় জায়গায় কিছু অসভ্য লোকের আচরণ ও হামলা ধৈর্যের সাথে মোকাবেলা করে, রক্তাক্ত কলবে ব্যথা যন্ত্রনায় কাতরে কাতরে তারা ঘরে ফিরে গেছেন। তাদের আমি সালাম ও সহানুভূতি জানাই। যেসব লোক শাহবাগের গণজাগরণ মঞ্চে গিয়ে গ্যাঞ্জাম বাধিয়েছে, তাদের বলি, কেন আপনারা সেখানে গেলেন? কে বলেছিল আপনাদের সেখানে যেতে? লংমার্চের নেতারা কি বলেছিলেন যে, মারামারি কর? আমার ধারনা হেফাজতের কেউ মারামারি করতে পারে না। অন্য কেউ গিয়েছিল সেখানে হেফাজতের লেবাসে নির্দলীয় তৌহিদী জনতার ঈমানী আন্দোলনকে বদনাম করতে। তাদের প্রতি আমার ঘৃণা। মিডিয়ার যে অংশটি এ ঘটনাটিকে বড় করে দেখাচ্ছেন, তারা বুকে হাত দিয়ে বলুন তো, আল্লামা আহমদ শফী নির্দেশ দিলে ৬ এপ্রিল যে কোন ভবন, মঞ্চ বা আস্তানার অবকাঠামো খুলে হাতে হাতে নিয়ে বুড়িগঙ্গায় ফেলে দেয়া কি খুব কঠিন কিছু ছিল? খামাখা কেন আপনারা বা অন্য কিছু নেতা, মন্ত্রী, বুদ্ধিজীবী নিরপরাধ নিরীহ এসব ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতপ্রাপ্ত মানুষকে হিং¯্র, জঙ্গী, (খারপ অর্থে মৌলবাদী) বলে নিজের ঈমান, বিবেক ও মনুষ্যত্বের সাথে গাদ্দারী করছেন? লংমার্চে আগত লাখো মানুষ আপনাদের চেয়ে কোন দিক দিয়ে কম? তারা কি আপনাদের কাছ থেকে আরেকটু ভাল আচরণ পেতে পারে না? তারা কি আরো মানবিক ব্যবহারের আশা করতে পারে না?
লংমার্চের সমর্থক সকল ইসলামী শক্তিকেই নিজ নিজ অবদান, শক্তি ও সামর্থনিয়ে বিনয়ী এবং সংযত থাকতে হবে। আল্লাহ কার অবদান কবুল করবেন, তা কারো জানা নেই। নিষ্ঠা ও নিবেদন যত নিখুঁত হবে আমল ও অবদান ততই দামী হবে। আমি নিজেকে এবং সকল মুসলিম ভাই বন্ধু ও নেতৃবৃন্দকে উপদেশ দিচ্ছি আসুন, আল্লাহকে ভয় করে চলি। ঈমানী আন্দোলন শুধু আল্লাহকে খুশী করার লক্ষেই করি। প্রিয়নবী (সা.) এর মর্যাদার যুদ্ধে জীবনদানের প্রেরণা নিয়ে যখন আমরা ময়দানে নামি, তখন যেন নিজের সম্মান, প্রতিষ্ঠা, শ্রেষ্ঠত্ব ও নেতৃত্বের চিন্তা আমাদের কাজে বাধা না হয়ে দাঁড়ায়। আমরা যেন সকল মতবিরোধ ভুলে সীসাঢালা প্রাচীরেরমত ঈমানের পক্ষে সংগ্রাম চালিয়ে যাই। পরিশেষে, বলতে হয়, ঐতিহাসিক লংমার্চ, হেফাজতে ইসলামের পূর্বাপর আন্দোলন, তৌহিদী গণমানুষের অপূর্ব উত্থান, নিয়ন্ত্রিত অমূল্য আবেগ, অসাধারণ নবীপ্রেম, অনন্য ইসলামী চেতনা, অনুপম দেশপ্রেম , ধর্ম ও মূল্যবোধপ্রিয়তা এ কথারই সুস্পষ্ট ইংগিত দিয়ে গেছে যে, যে যাই বলুক, যাই ভাবুক, যে ফন্দিই আঁটুক আগামী দিনের বাংলাদেশ নিঃসন্দেহে ইসলামের। আগামী ২৫, ২০, ১৫, ১০ কিংবা ৫ বছর পর বাংলাদেশ হবে বিশ্বের অন্যতম আদর্শ ও আধুনিক ইসলামী রাষ্ট্র। এ সত্য রাজনীতিক, সেনাবাহিনী, পেশাজীবী, লেখক, বুদ্ধিজীবী, সাংবাদিক ও নতুন প্রজন্মের প্রতিনিধিরা যত তাড়াতাড়ি বুঝবেন, সবার জন্যই তা ততই মঙ্গলময় হবে। আমরা প্রত্যয়ী, আমরা আশাবাদী, আমরা নবীপ্রেমের দোহাই দিয়ে, আল্লাহর কাছ থেকে চেয়ে নেব বাংলাদেশের নিরাপত্তা, সুখ ও সমৃদ্ধি। যে নামেই হোক, যে ব্যানারেই হোক, যে নেতৃত্বেই হোক, যেভাবেই হোক যেন ইসলামের জয় হয়। ঈমান ও আমলের প্রতিষ্ঠা হয়। ইসলামী মূল্যবোধ ও সংস্কৃতির অবস্থান দৃঢ় হয়। বাংলাদেশের ধর্মপ্রাণ কোটি মানুষের চোখের এ স্বপ্ন বাস্তবায়িত হোক। সত্যি হয়ে দ্রুত ধরা দিক তাদের বুকে লালিত এ সোনালী প্রত্যাশা।
বাংলাদেশের মূলধারা ইসলাম প্রিয় জনতা ও শতভাগ ধর্মবিশ্বাসী মানুষ। এ জনগোষ্ঠীর সমর্থন ও ভালবাসা নিয়েই বাংলাদেশ স্বাধীন করেছেন বাংলাদেশের মহান স্থপতি। ঈমান, ইসলাম, আল্লাহ, রাসূল (সা.) কোরআন, সুন্নাহ, ধর্মীয় মূল্যবোধ ও সংস্কৃতির প্রতি কোন ক্ষোভ ঘৃণা, অবিশ্বাস ও দ্রোহ নিয়ে এদেশ স্বাধীন হয়নি। মুক্তিযুদ্ধ হয়নি। গণতান্ত্রিক আন্দোলন বা গণঅভ্যুত্থান হয়নি। ৪২ বছর ধরে রাজনীতিবিদরা দেশ চালাচ্ছেন। গণতন্ত্র, স্বৈরতন্ত্র, সেনাশাসন ইত্যাদি মিলে চলছে স্বদেশ। রাজনীতি রাজনীতিই। তাদের কাজের বৃত্ত অনেক বড়। কিন্তু অসীম নয়। বিগত কিছুদিন ধরে দেখা যাচ্ছে, রাজনীতিকরা মানুষের দ্বীন-ঈমান, সংস্কৃতি, মূল্যবোধ, ইবাদত, বন্দেগী, পর্দা, দাড়ি-টুপি, কোরআন, সুন্নাহ সবকিছু নিয়ে কাজ করছেন। ফতওয়া বন্ধ করার চেষ্টা হয়েছে। হজ্ব কোরবানী, নামাজ, জিকির, তওবা, তাহাজ্জুদ নিয়েও কথা ওঠেছে। শুরু হয়েছে ধর্ম অবমাননা। নাস্তিকতা ও ধর্মদ্রোহ পৃষ্টপোষকতা পাচ্ছে অবিশ্বাস্যভাবে, অপ্রত্যাশিত স্থান থেকে। ধর্মহীনতার সুগভীর ষড়যন্ত্র চলছে। শিক্ষা, সংস্কৃতি, গণমাধ্যম, নীতিমালা, আইন-আদালত ও শাসন ব্যবস্থার নানা অঙ্গনে। মানুষ হতবিহ্বল। ধর্মীয় নেতৃবৃন্দ প্রতিবাদমুখর। নানাসময়ে সরকারী প্রতিনিধি বা শাসক দলীয় লোকজন তাদের আশা, সান্ত¦না ও অভয়বার্তা দিয়েছেন। স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী বিশিষ্ট আলেমদের চায়ের দাওয়াত দিয়ে আশ্বাস ও আশা দিয়েছেন। ক্ষেত্রবিশেষে প্রতিশ্রুতি দিয়ে তাদের সমর্থন ও সহযোগিতা নিয়েছেন। কিন্তু এসবের ফলাফল আলেম সমাজ ও তৌহিদী জনতার কাছে সুস্পষ্টরূপে আশানুরূপ হয়নি। যা কিছু হয়েছে তা-ও সঠিক পন্থায়, উপযুক্ত লোকের মাধ্যমে, সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনায় হয়নি। অনেক কিছু এমনও আছে যা, বিশাল সাফল্যরূপে প্রধানমন্ত্রীর অর্জনের খাতায় লিপিবদ্ধ হতে পারত, কিন্তু ভুল ব্যক্তির প্রতিনিধিত্বে, ত্রুটিপূর্ণ উপস্থাপনায় হয়েছে বলে মানুষের অন্তরে দাগ কাটতে পারেনি। সবচেয়ে বড় যে সমস্যাটি হয়েছে, সেটি হল, সরকারের ধর্মীয় বিষয়ের প্রতিটি কাজ ছিল, নানারকম ভণিতায় দুষ্ট। যা সংশ্লিষ্টদের অসরল কৌশলের মন্দ প্রভাবে আক্রান্ত। প্রধানমন্ত্রীর মনোভাবের ছাপ এসব ক্ষেত্রে প্রবল ছিল না। ছিল স্পষ্ট কর্মকুশলীদের অতিরাজনীতির প্রকট দাগ। যা মানুষকে কৃতজ্ঞ না বানিয়ে, বানিয়েছে সন্দিহান। উৎফুল্ল না করে করেছে উদ্বিগ্ন। এ ব্যর্থতা প্রধানমন্ত্রীর কিনা জানা নেই, তবে এর ভোগান্তি ও দায় কিন্তু সর্বাংশে তাকেই নিতে হচ্ছে।
হেফাজতে ইসলামের লংমার্চের কথাই বলি না কেন। প্রায় নবজাতক এ সংগঠনটি কী অবিশ্বাস্য কম সময়ে, গোটা বাংলাদেশকে আচ্ছন্ন করে ফেললো, এর সমাজতাত্ত্বিক বিশেষণ করার ক্ষমতা আওয়ামী লীগের হাইব্রীড নেতাদের না থাকলেও প্রবীন নেতাদের তো থাকার কথা। সুবিধাপ্রাপ্ত নেতা-মন্ত্রীদের এ নিয়ে মাথাব্যথা না থাকতে পারে কিন্তু দেশ-গেরামে জনগণের মাঝে জীবনযাপনকারী মাটিঘনিষ্ঠ নেতাকর্মীদের তো এনিয়ে কঠিন উদ্বেগ থাকার কথা। প্রধানমন্ত্রীর মত একজন অভিজ্ঞ চৌকস ও অপ্রতিদ্বন্দ্বী নেতার তো এ বিষয়টির উপর গভীর দৃষ্টি থাকা নি:সন্দেহে জরুরি। দেশের অন্যতম বৃহৎ ও প্রাচীন গণসংগঠন আওয়ামী লীগের কান্ডারি হিসেবে তৌহিদী জনতার এ অভূতপূর্ব উত্থান সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা ও নিখুঁত মূল্যায়ন থাকা আবশ্যিকভাবে অপরিহার্য। এ কথা আওয়ামী লীগের অন্তত: ১৫ জন সিনিয়র নেতা, মন্ত্রী, এমপি ও বুদ্দিজীবীর সাথে কথা বলে আমি সম্প্রতি বুঝতে পেরেছি যে, দলটির কিছু সংখ্যক লোকছাড়া বিপুল সংখ্যাগরিষ্ট নেতাকর্মী তৌহিদী জনতার সাথে তাদের দল ও সরকারের এ দূরত্ব ও ক্ষেত্র বিশেষে বিরোধের ব্যাপারে চরমভাবে উদ্বিগ্ন। তারা এ জন্যে নাস্তিক্যবাদী বামধারার কিছু অহিতাকাক্সক্ষী নেতা, দু’একজন বেয়ারা মন্ত্রী আর নেত্রীর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রকারী স্বার্থাম্বেষী মহলকে দায়ী মনে করেন। তারা নেত্রীকে সতর্ক হতে বলতে চান। তারা নেত্রীকে সব কিছু নতুন করে ভাবার আহবান জানাতে চান। তারা মনে করেন, ধর্মবিদ্বেষী নাস্তিক-মুরতাদদের পক্ষ ত্যাগ করে, অসফল রাজনীতিকদের পরামর্শ গ্রহণ বন্ধ করে এই মুহূর্তে নেত্রীকে বঙ্গবন্ধুর উদার , ধর্মপ্রাণ, গণমানুষের
রাজনীতিতে ফিরে আসতে হবে। যদি তিনি মাঠ পর্যায়ের এ আহবানে দ্রুত সাড়া না দেন, তাহলে আওয়ামী লীগের রাজনীতি অদূর ভবিষ্যতে কঠিন চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হবে। যা মোকাবেলা বা এড়িয়ে যাওয়ার সাধ্য সরকারের থাকবে না। বঞ্চিত নেতাকর্মীরাও এর মুখোমুখি হতে চাইবে না। স্বার্থপর নেতারা তো শুরুতেই কেটে পড়বে। যারা অন্যায় দুর্নীতি ও সমাজবিরোধী কাজে যুক্ত হয়ে পড়েছে, তাদের মানসিক জোরই থাকবে না, পরিস্থিতি মোকাবেলার। অতএব নেত্রীকে খুব দ্রুত নির্ভূল সিদ্ধান্তে আসতে হবে। ধর্মপ্রাণ মানুষের মনস্তত্ত বোঝেন, এমন উপদেষ্টা ও কৌশলী ব্যক্তিত্বের সহায়তা নিয়ে গণঅসন্তোষের কামানের মুখ থেকে সরকার ও দলকে নিয়ে নিরাপদ স্থানে সরে যেতে হবে। আরো দেরি করলে, আরো ভুল করলে, অযোগ্য ও অমার্জিত লোকেদের আরো কৌশল অবলম্বন করতে দিলে তিনি এমন গভীর সংকটে পড়বেন, যা থেকে উদ্ধারের কোন পথ থাকবে না। নেতাদের ভাষায়, তার আম ও ছালা দুটোই যাবে। আমরা বলি, ছালা চলে যাক, তিনি আমকেই ধরুন। আম মানে তৌহিদী জনতা। ছালা হল, নাস্তিক-মুরতাদ, ধর্মদ্রোহী এর বাংলাদেশের স্বাভাবিক ধারার শত্রু গণধিকৃত কুচক্রীমহল। আশা করি, প্রধানমন্ত্রী হেফাজতে ইসলামের দেয়া ১ মাস সময়কে ইতিবাচক ভাবনায় কাজে লাগাবেন। প্রবীন আওয়ামী নেতৃবৃন্দ, প্রকৃত হিতাকাক্সক্ষী আলেম, উলামা, চিন্তাবিদ ও বুদ্ধিজীবীদের সাথে পরামর্শ করবেন। দেয়ালের লিখন পড়বেন। আকাশে বাতাসে ধ্বনিত তৌহিদী আওয়াজ শুনবেন। নবী করীম (সা.)-এর ভক্ত-প্রেমিকদের অন্তর্দাহ, কলিজাকাটা কান্না, দুঃখময় আর্তনাদ, লংমার্চের শ্লোগান ও ধর্মপ্রিয়তার ঘোষণার অনুসরণ উপলব্ধি করবেন। রাজধানীর বাতাসে এখনও তো এগুলো ভাসছে। লংমার্চকে স্বাগত জানানো ঢাকাবাসীর চোখ মুখ বুক ও হৃদয়ের ব্যাকূল ভাষা অবশ্যই যেন তিনি পাঠ করেন। নেত্রীর প্রতি এ মুহূর্তে এর বেশি আর কিছু বলার নেই।
মিডিয়াকে বলি, আপনারা দুই চোখ খুলে কাজ করুন। যারা অবস্থার বাস্তবচিত্র তুলে ধরেন, তারাই শুদ্ধ সাংবাদিক। আলহামদুলিল্লাহ, ঢাকার মিডিয়া ৬ এপ্রিলের লংমার্চের সাথে সদাচরণই করেছেন বলা যায়, কিছু সংবাদপত্র ও চ্যানেলের সুবিচার করার সৌভাগ্য হয়নি। তাদের বলব, দয়া করে পেশার সম্মান রাখুন। উদারতা ও ন্যায়ের পন্থা চর্চা করুন। তৌহিদী জনতার পাওনা অধিকারটুকু তাদের দান করুন। এমন বড় গণউত্থানকে আপনারা মিডিয়া থেকে ঝেড়ে ফেললেও বাংলাদেশের দৃশ্যপট থেকে মুছতে পারবেন না। ব্যর্থ রাজনীতির এ কঠিন সময়ে সুপ্ত তৃতীয় শক্তির সংগঠিত নতুন উত্থানকে যেন কেউ উপেক্ষা না করেন। বাংলাদেশের হৃদয়ে প্রবাহিত ধর্মীয় শান্তিপ্রিয় নাগরিক প্রেরণাকে কেউ যেন গৎবাধা বদনামে উল্লেখ না করেন। শান্তির বাণী নিয়ে ঢাকায় সমাগত লাখো মানুষকে কেউ যেন জঙ্গীবাদী সন্ত্রাসী না বলেন। নিজের বিবেককে জাগ্রত করুন। ভাষাকে সংযত করুন। কলমকে শুদ্ধ করুন। ক্যামেরাকে নিষ্কলুষ করুন। বুকে হাত দিয়ে ভাবুন, শত বাধা উপেক্ষা করে, রাজধানীতে ছুটে আসা মানুষগুলো কি বলতে এসেছিল? হৃদয় খুলে দেখুন, এদের মাঝেই দেখতে পাবেন, আপনার পিতা, ভাই ও সন্তানের নিষ্পাপ মুখচ্ছবি।
বিরোধী দলগুলোর ভেতর যারা লংমার্চের সাথে একমত হয়ে সংহতি প্রকাশ করেছেন দীর্ঘ অভিযাত্রীদের প্রীতি, শুভেচ্ছা, সম্মান ও সহানুভুতি জানিয়েছেন। তাদের সুমতির জন্য আন্তরিক কৃতজ্ঞতা জানাই। তারা সঠিক কাজটিই করেছেন। কিন্তু তৌহিদী গণমানুষের এ নিষ্পাপ পদাযাত্রাকে দূর থেকে ভালবাসলেই কেবল তাদের সব দায়িত্ব শেষ হয়ে যাবে না। আল্লামা আহমদ শফীর উদাত্ত আহবানে তাদের নিঃশর্তভাবে সাড়া দিতে হবে। ঘোষিত ১৩ দফা বাস্তবায়নের শক্ত প্রতিশ্রুতি দিতে হবে। আগামী নির্বাচনে তাদের স্পষ্ট বক্তব্য ও সুদৃঢ় অঙ্গীকার ছাড়া হেফাজতে ইসলাম তাদের সমর্থন দেবে না। এক্ষেত্রে আল্লামা আহমদ শফীর ঘোষণা বিশেষ প্রনিধানযোগ্য। তিনি বলেছেন, ক্ষমতায় থাকতে বা যেতে হলে ১৩ দফার বিষয়ে পরিষ্কার অঙ্গীকার করতে হবে। সরকার যদি তৌহিদী জনতার মনজয় করতে চায়, তাহলে ১৩ দফার প্রতি তার সম্মান প্রদর্শন করে দ্রুত বাস্তবায়নের কাজে নেমে পড়তে হবে। ইসলামের তো এটাই আদর্শ। এখানে স্থায়ী শত্রু বা বন্ধু বলতে কিছু নেই। ইসলামের স্বার্থ যারা রক্ষা করবে তারাই মুসলমানের বন্ধু। যারা ইসলামের ক্ষতি করবে তারাই শত্রু। হেফাজতে ইসলামের এ মধ্যস্থায়ী আহবান সরকার ও বিরোধী দল, সকলের জন্যই উন্মুক্ত। জনগণ দেখবে, কে এগিয়ে আসে, কে পিছিয়ে যায়। কে কিভাবে আসে, কত দ্রুত আসে।
ইসলামী দল, সংগঠন ও প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যকার ঐক্য-সংহতি, পারস্পরিক ভালবাসা বিগত সময়ের চেয়ে এবারকার আন্দোলনে ছিল অনেক অনেক গুণ বেশি। যেসব ইসলামী দল বা সংগঠন হেফাজতের সঙ্গে একমত ছিল না, তাদের প্রতিবাদ বা বিরোধের পদ্ধতিও হওয়া উচিৎ ছিল নিজেদের ভাবমর্যদার সাথে সঙ্গতিপূর্ণ নানা কারণে যারা এ আন্দোলন থেকে দূরে ছিলেন, তাদের ভাষা, বিবৃতি, বিতর্ক সবই হওয়া উচিৎ ছিল সহনশীল, মার্জিত ও ভাবগম্ভীর। কেননা, বাংলাদেশের যেসব আলেম হেফাজতে ইসলামের নেতৃত্ব বা তৎপরতা যুক্ত তাদের ফুঁ দিয়ে উড়িয়ে দেয়া কিন্তু কারো পক্ষেই সম্ভব নয়। তাছাড়া, যে যত বড় ব্যক্তিই হন না কেন, হেফাজতের নেতাকর্মীরা কেউই তার আঙ্গুলের ফাঁক দিয়ে পড়ে যাবেন, এমন ভাবাও ঠিক হবে না। সম্মানজনক অনেক ব্যতিক্রম ছিলেন। যারা সুন্দর ভাষায় হেফাজতের সমালোচনা করেছেন। ধন্যবাদ, ইসলামপন্থী নেতৃবর্গকে, যাদের ভাষা, ভঙ্গি আচরণ ও আন্দোলন থেকে নতুন প্রজন্ম আদব-কায়দা সহিষ্ণুতা, শালীনতা, পরমতশ্রদ্ধা শিখতে পারছে।
হেফাজতে ইসলাম নেতৃবর্গকে অন্তহীন শুকরিয়া। তারা সরকারকে সতর্ক করেই আন্দোলনের রাশ টেনে ধরেছেন। দেশের চিন্তাশীল, জ্ঞানী-গুণী মানুষ তাদের এ প্রজ্ঞাময় সিদ্ধান্তে আনন্দিত। সরকারের অনুমতির স্থানে অনুমোদিত সময়ের ভেতর অহিংস, শান্তিময়, নীতিনিষ্ঠ, সুশৃংখল, মহাসমাবেশ পরিচালনা ও সমাপ্ত করা। লংমার্চের আবালবৃদ্ধ জনশক্তিকে সঠিকভাবে, নিরাপদে নিজ নিজ ঠিকানায় ফিরিয়ে নেয়া। রাজধানী ঢাকার একটি তৃণখ-, ইট, পাথর বা ধূলিকণারও ক্ষতি না করে জিকিরের সাথে লংমার্চ আনা এবং ফিরিয়ে নেয়া।
বিচ্ছিন্ন দু’একটি ঘটনা ব্যক্তিগত উদ্যোগে কোন অবুঝ বা দুর্বৃত্ত করলেও তা মুহূর্তে নিয়ন্ত্রণ করা। জায়গায় জায়গায় কিছু অসভ্য লোকের আচরণ ও হামলা ধৈর্যের সাথে মোকাবেলা করে, রক্তাক্ত কলবে ব্যথা যন্ত্রনায় কাতরে কাতরে তারা ঘরে ফিরে গেছেন। তাদের আমি সালাম ও সহানুভূতি জানাই। যেসব লোক শাহবাগের গণজাগরণ মঞ্চে গিয়ে গ্যাঞ্জাম বাধিয়েছে, তাদের বলি, কেন আপনারা সেখানে গেলেন? কে বলেছিল আপনাদের সেখানে যেতে? লংমার্চের নেতারা কি বলেছিলেন যে, মারামারি কর? আমার ধারনা হেফাজতের কেউ মারামারি করতে পারে না। অন্য কেউ গিয়েছিল সেখানে হেফাজতের লেবাসে নির্দলীয় তৌহিদী জনতার ঈমানী আন্দোলনকে বদনাম করতে। তাদের প্রতি আমার ঘৃণা। মিডিয়ার যে অংশটি এ ঘটনাটিকে বড় করে দেখাচ্ছেন, তারা বুকে হাত দিয়ে বলুন তো, আল্লামা আহমদ শফী নির্দেশ দিলে ৬ এপ্রিল যে কোন ভবন, মঞ্চ বা আস্তানার অবকাঠামো খুলে হাতে হাতে নিয়ে বুড়িগঙ্গায় ফেলে দেয়া কি খুব কঠিন কিছু ছিল? খামাখা কেন আপনারা বা অন্য কিছু নেতা, মন্ত্রী, বুদ্ধিজীবী নিরপরাধ নিরীহ এসব ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতপ্রাপ্ত মানুষকে হিং¯্র, জঙ্গী, (খারপ অর্থে মৌলবাদী) বলে নিজের ঈমান, বিবেক ও মনুষ্যত্বের সাথে গাদ্দারী করছেন? লংমার্চে আগত লাখো মানুষ আপনাদের চেয়ে কোন দিক দিয়ে কম? তারা কি আপনাদের কাছ থেকে আরেকটু ভাল আচরণ পেতে পারে না? তারা কি আরো মানবিক ব্যবহারের আশা করতে পারে না?
লংমার্চের সমর্থক সকল ইসলামী শক্তিকেই নিজ নিজ অবদান, শক্তি ও সামর্থনিয়ে বিনয়ী এবং সংযত থাকতে হবে। আল্লাহ কার অবদান কবুল করবেন, তা কারো জানা নেই। নিষ্ঠা ও নিবেদন যত নিখুঁত হবে আমল ও অবদান ততই দামী হবে। আমি নিজেকে এবং সকল মুসলিম ভাই বন্ধু ও নেতৃবৃন্দকে উপদেশ দিচ্ছি আসুন, আল্লাহকে ভয় করে চলি। ঈমানী আন্দোলন শুধু আল্লাহকে খুশী করার লক্ষেই করি। প্রিয়নবী (সা.) এর মর্যাদার যুদ্ধে জীবনদানের প্রেরণা নিয়ে যখন আমরা ময়দানে নামি, তখন যেন নিজের সম্মান, প্রতিষ্ঠা, শ্রেষ্ঠত্ব ও নেতৃত্বের চিন্তা আমাদের কাজে বাধা না হয়ে দাঁড়ায়। আমরা যেন সকল মতবিরোধ ভুলে সীসাঢালা প্রাচীরেরমত ঈমানের পক্ষে সংগ্রাম চালিয়ে যাই। পরিশেষে, বলতে হয়, ঐতিহাসিক লংমার্চ, হেফাজতে ইসলামের পূর্বাপর আন্দোলন, তৌহিদী গণমানুষের অপূর্ব উত্থান, নিয়ন্ত্রিত অমূল্য আবেগ, অসাধারণ নবীপ্রেম, অনন্য ইসলামী চেতনা, অনুপম দেশপ্রেম , ধর্ম ও মূল্যবোধপ্রিয়তা এ কথারই সুস্পষ্ট ইংগিত দিয়ে গেছে যে, যে যাই বলুক, যাই ভাবুক, যে ফন্দিই আঁটুক আগামী দিনের বাংলাদেশ নিঃসন্দেহে ইসলামের। আগামী ২৫, ২০, ১৫, ১০ কিংবা ৫ বছর পর বাংলাদেশ হবে বিশ্বের অন্যতম আদর্শ ও আধুনিক ইসলামী রাষ্ট্র। এ সত্য রাজনীতিক, সেনাবাহিনী, পেশাজীবী, লেখক, বুদ্ধিজীবী, সাংবাদিক ও নতুন প্রজন্মের প্রতিনিধিরা যত তাড়াতাড়ি বুঝবেন, সবার জন্যই তা ততই মঙ্গলময় হবে। আমরা প্রত্যয়ী, আমরা আশাবাদী, আমরা নবীপ্রেমের দোহাই দিয়ে, আল্লাহর কাছ থেকে চেয়ে নেব বাংলাদেশের নিরাপত্তা, সুখ ও সমৃদ্ধি। যে নামেই হোক, যে ব্যানারেই হোক, যে নেতৃত্বেই হোক, যেভাবেই হোক যেন ইসলামের জয় হয়। ঈমান ও আমলের প্রতিষ্ঠা হয়। ইসলামী মূল্যবোধ ও সংস্কৃতির অবস্থান দৃঢ় হয়। বাংলাদেশের ধর্মপ্রাণ কোটি মানুষের চোখের এ স্বপ্ন বাস্তবায়িত হোক। সত্যি হয়ে দ্রুত ধরা দিক তাদের বুকে লালিত এ সোনালী প্রত্যাশা।
©somewhere in net ltd.
১|
২৫ শে এপ্রিল, ২০১৩ রাত ১০:৩১
রাখালছেলে বলেছেন: জ্বী জ্বী জ্বী ....আরও কিছু থাকলে বলেন । এত লেখা লিখলে তো হাত ব্যাথা হয়ে যাওয়ার কথা। নাকি কোথা থেকে কপি পেষ্ট মারছেন । বহুত ছাগলামি করছেন । এইবার থামেন ।
আফগান বা ফাকিস্তান যাওয়ার ব্যবস্থা করে রাইখেন ।