নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ঘুনে ধরা সব জিবনিগুলোর খোজে, নিজেকে হারিয়ে ফেলা সেই একলা ছেলেটি।

ফাহিম আল মামুন

ফাহিম আল মামুন › বিস্তারিত পোস্টঃ

টেবিল ল্যাম্প

০৯ ই নভেম্বর, ২০১৮ বিকাল ৪:৫২

শাহবাগ, সিটিকলেজ,সাইন্স ল্যাব......সিটিং, সিটিং গাড়ি.......

দৌড়ে কোনরকমে বাসে উঠলাম। অফিস ছুটি হওয়ার পরে বাসগুলোতে এতো ভিড় হয় বলে বোঝাতে পারব না। সিটিং বলে ডাকলেও সবগুলোই তখন ভর্তি প্রায় অবস্থা। পেছনের দিকে একটা সিট পেলাম। কোনভাবে শুধু বসলাম আর তখনি ফোনটা বেজে উঠলো । বিরক্তি নিয়ে ফোনটা বের করে দেখলাম মা ফোন করেছে। ফোনটা ধরে সালাম দিয়ে বললাম, মা গাড়িতে আছি বাসায় যেয়ে ফোন দিচ্ছি। কোন কথা না বলেই ফোনটা কেটে গেল। আমিও আর এই ক্লান্তির ভেতর ফোন দিলাম না। বাসায় এসে ব্যাগটা রেখে প্রথমেই মাকে ফোন দিলাম। ওপাশ থেকে মা হ্যালো বললে আমি সালাম দিলাম। সালাম নিয়ে মা বলল, বাসায় এসেছিস? আমি বললাম, হ্যা, মাত্রই আসলাম। কেমন আছো তোমরা? মা বলল, আমরা ভালই আছি বাবা। তুই কেমন আছিস? আমি একটু হেসে বললাম, আছি মা, ভালই আছি। মা বলল, তোর কি অরনির সাথে কথা হয়েছিল? আমি বললাম, না মা। কথা হয়নি। মা বলল, তুই তো ফোন করতে পারিস তাকে। আমি বললাম, হ্যা মা ফোন তো করতেই পারি কিন্তু তোমার বউমার স্বাধীনতায় যে আমি কোনভাবেই হস্তক্ষেপ করতে চাই না। মা একটু চুপ থেকে বলল, দেখ বাবা, কয়টা দিনই হল বিয়ে করেছিস। আর একটা মেয়ে নিজের বাড়ি থেকে পরের বাড়িতে এসে কি এত সহজে মানিয়ে নিতে পারে বল? আমি বললাম, ছয় থেকে সাতমাস হতে চলল বিয়ের আর তুমি এই কয়টা দিন বলছো? আর তাছাড়া সে তো সবকিছুই নিজের মত করেই পেয়েছে মা তাহলে আবার এসব কথা আসছে কেন? আর আমি তোমার বউমাকে চলে যেতে বলিনি। সে নিজে থেকেই চলে গেছে। মা বলল, তোর রাগটা একটু বেশিই। এতো কিছু নিয়ে চিন্তা করলে হয় না। আমি বললাম, তুমি আজ হঠাৎ এসব বলছো কেন মা? এসব বলার জন্যই কি তখন ফোন দিয়েছিলে? মা বলল, আমি আবার কখন তোকে ফোন দিলাম? আমি বললাম, কেন আমি তখন গাড়িতে ছিলাম এটাই তো ফোনে বলেছিলাম। আর তুমি কিছু না বলেই ফোনটা কেটে দিলে। মা বলল, কই নাতো আমি তো তোকে ফোন দেই নি। আমি একটু চুপ করে ভাবতে লাগলাম। তখনি আবার মা বলল, ও হ্যা আমি ফোন দিয়েছিলাম। আমার কেমন যেন একটা খোটকা লাগলো। মাকে বললাম, মা কি হয়েছে একটু বলবে। তখন ফোনে তুমি ওসব কি বললে? মা বলল, আরে তখন কিসব বলেছি মাথায় নেই। তুই ওসব নিয়ে ভাবিস না। আমি এবার হাসলাম। মাকে বললাম, মা তুমি তো তখন কিছুই বলনি। এসব মিথ্যে কেন বলছো মা? এটা শুনে মা কিছুক্ষন চুপ করে থাকলো। একটু পরে মা বলল, গতপরশু অরনি আমাদের এখানে এসেছে। ওই মনে হয় তখন ফোন দিয়েছিল। আমি তো অবাকের চেয়েও বেশি কিছু। মা আরও বলল, মেয়েটা এসে আমাকে জড়িয়ে অনেক কান্না করেছে। ওর কাছে সবটা শুনে বুঝলাম তোর রাগটা একটু বেশি হয়েছে। তোর থেকে ওর ব্যাপারে শুনে মেয়েটাকে নিয়ে কতকিছু ভেবেছি আমি। ও আর যাবেনা তোর কাছে। এখন থেকে ও আমাদের কাছেই থাকবে। এসব শুধু চুপ করে শুনছিলাম। মা বলা শেষ করে বললাম, হ্যা মা আমিই খারাপ। তাই তো একা এই শহরে এতো সমস্যা নিয়েও বেঁচে আছি। যাই হোক, যেভাবেই থেকো ভাল থেকো তোমরা। মা এবার অনেকটা রেগে গিয়ে বলল, ভালো থাকতে দিস তোরা। পারিস তো শুধু নিজের রাগ দেখাতে। আমি মাকে থামিয়ে শুধু এটুকু বললাম, তুমি আমাকে চেনো মা আমি কেমন। তাই নতুন করে আর কিছু বলতে চাচ্ছি না। কোন সমস্যা হলে বলিও। রাখলাম। মা তখন একটু চুপ থেকে বলল, বাড়ি আসবি কবে? আমি বললাম, বলতে পারছি না মা। কিছুদিন আগেই সমস্যার কারনে ছুটি নিতে হয়েছিল তাই এখন আর সামনে কোন ছুটি নেই। মা বলল, তোর বসের সাথে আমার কথা বলিয়ে দিবি। ছুটি দিবে না মানে? আমি বললাম, মা আমি এখনও সেই এলাকার স্কুলে পড়ি না যে তুমি স্যারদের সাথে কথা বলেই সব সমাধান করে নেবে। এটা আমার অফিস। এখানে আমাকে স্যালারী দিয়ে রাখা হয়। মা একটু বেশি বুঝে বলল, হ্যা এখন তো তুই বড় হয়ে গেছিস। আমাদের কথা শুনে আর কি হবে? আমি বললাম, আচ্ছা মা ঠিক আছে। আমি মাত্র আসলাম। একটু ফ্রেশ হই। তুমি ভালো থেকো। এখন তো বাবা আর তুমিই আমার সব। মা বলল, এহ, ন্যাকা। নিজের বউকে এখানে ফেলে রেখে ও পাম্প দিচ্ছে। আমি হাসলাম এটা শুনে। ওপাশ থেকে মা বলল, মেয়েটার সাথে কথা বলবি একটু পরেই। আমি সালাম দিয়ে ফোনটা রেখে দিলাম। আমার কেন যেন হাসি পাচ্ছে খুব। আসলে আমার মা এতোক্ষন ধরে আমাকে এসব বলছিল শুধুমাত্র আমাকে বাড়িতে আসার জন্য। এখন অরনি কেন ওখানে এসেছে এটাই জানার ব্যাপার। যদিও ওর খোজ রাখতাম একটু অন্যভাবে। কিন্তু হঠাৎ বাড়িতে চলে যাবে ভাবতে পারিনি। এখানেও আসতে পারত সে। ফ্লাটের চাবি ছিল তার কাছে। কিন্তু আসলো না। তিনমাস আগে এই ফ্লাট থেকে বেরিয়ে গিয়েছিল সে। সে অনেক কারনে। এই তিনটা মাস কি গেছে আমার ওপর দিয়ে সেটা বলার মত ভাষা নেই। যাক এসব কথা পরে হবে। কেন জানিনা আজ একটু ভাল লাগছে। অরনি তবে ফিরে আসছে। কাপড় পাল্টে ফ্রেশ হতে হতে ভাবলাম আজ রাতে তবে নিজের মাঝেই ছোটখাটো একটা পার্টি করা যায়। তারপর গোসল করে রুমে ঢুকতেই মাথাটা একটু ভারী হয়ে এলো। পার্টি আর কই, একটু কিছু খেয়েই শুয়ে পড়লাম। জ্বর যেন না আসে এজন্য একটা নাপা ট্যাবলেট ও খেয়ে নিলাম। বিছানায় শুয়ে চোখটা বন্ধ করে পুরনো কথাগুলো ভাবছি......

কোন মেয়ে আমাকে ভালবাসতে পারে এটা আমার মাথাতেই আসে নি। কলেজ, ভার্সিটি সব পেরিয়ে প্রেমের কোন গন্ধ আমাকে নাড়া দেয় নি। তবে আমি প্রেমে পরেছি অনেকবার। কিন্তু সেই প্রমিকাদের কখনও বলাই হয় নি। হয়তো সাহসের অভাব নয়তো বাস্তবতার অচেনা মুখোশের অন্তরালে লুকিয়ে থাকা সেই পরিস্থিতির জন্য পারিনি এসব। কিন্তু যতই হোক বয়স তো আর থেমে থাকে না। তাই মা বাবার পছন্দে আমার সহমতেই বিয়ে করার চিন্তা নেই। প্রথমে দেখতে যাই অরনি কেই। মায়ের ওকে পছন্দ হয়েছিল। বিয়ের দিন তারিখ ঠিক করা হল। বিয়ে হতে তখনও প্রায় মাশখানেক দেরী। একদিন রাতে একটা ফোন এলো। ফোন ধরে হ্যালো বললাম। কোন কথা শোনা গেল না। আরও কয়েকবার হ্যালো হ্যালো বললাম। ওপাশ থেকে কোন কিছুই শোনা যাচ্ছে না। একটু রহস্য নিয়ে কথা বলার চেষ্টায় হুট করে বলে ফেললাম, কেমন আছেন? এবার ওপাশ থেকে আওয়াজ এলো, আপনি কি আমার নাম্বারটা জানতেন? আমার মুখে তখন এক চিলতে হাসি তবে নিশ্চিত নই কে ফোনে কথা বলছে। তাই বললাম, কিছু মানুষকে চিনতে পারা একটা মনস্তাত্বিক ব্যাপার। এখানে নাম্বার জানার প্রয়োজন হয় না। একটু ভাবলেই বোঝা যায়। তো আপনি বললেন না কেমন আছেন? একটু চুপ থেকে ও বলল, ভাল আছি। আপনি কেমন আছেন? আমি বললাম, এইতো আছি। ওপাশ থেকে শোনা গেল, আমার নাম্বার কি আপনার কাছে ছিল না? দেখতে এসে তো মনে হয় আমার নাম্বার আপনাকে দেওয়া হয়েছিল? আমার মুখে তখন আবারও এক চিলতে হাসি তবে এবারের হাসিটা একটু বেশি প্রসারিত। এতোক্ষন আন্দাজ করছিলাম এটা অরনি হতে পারে আর এখন নিশ্চিত হলাম। ওর সাথে খুব একটা কথা হয়নি আর ফোনে তো আজই প্রথম। আমি এবার একটু ঠান্ডা গলায় বললাম, কই আপনার নাম্বার কেউ আমাকে দেয় নি তো। আপনি কই পেলেন আমার নাম্বার? ও একটু শান্ত গলায় বলল, সকালে ছোট চাচ্চু দিয়ে গেল। আর তাই ফোন দিলাম। আমি বললাম, তাহলে আপনার কোন ইচ্ছে ছিল না ফোন দেওয়ার? ও একটু জলদি বলল, না আসলে এমনটা না। আমি ওর কথায় থেমে যাই। দুজনে কেউ কিছু বলছি না তাই একটু পরে আমি শুধু বলতে যাব কিছু তখনি ও বলল, আচ্ছা তাহলে রাখি। আমি ছোট করে শুধু হুম বলেছিলাম। ভাল থাকবেন বলেই কেটে দিয়েছিল সে। কলটা কাটার সাথে সে আমার মনোযোগী মনটাকেও আনমনা করে দিয়েছিল। এরপর শুধু দিন গুনতে থাকি। কবে বিয়ের দিন ঘনিয়ে আসবে সেটার জন্য ক্যালেন্ডারকে নিজের কাছে রাখি। যদিও এরপর আর ওর সাথে কথা হয় নি তবে ফোনে অনেকবার নাম্বারটা নিয়ে ফোন দিয়েও সাথে সাথে কেটে দিয়েছি। নিজের অজান্তেই যে তাকে কতটা নিজের করে চেয়েছি বুঝতেই পারিনি। শুধু তার কথা ভাবতেই একটা ভাল লাগা কাজ করত। মাঝে মাঝে ভাবতাম, সেও কি তবে এরকম ভাবে আমাকে ভাবছে? হয়তো ভাবছে নয়তো নয়। তবে আমার তো ভালই লাগে। বিয়ের দিনে তাকে সবার অগোচরে একটু লুকিয়ে দেখেছিলাম। সেও দেখেছিল। তার চোখে চোখ পড়তেই তার আগেই চোখটা নামিয়ে নেই। লজ্জা পেয়ছিলাম কিছুটা। তবে আমি কেন লজ্জা পাচ্ছিলাম জানিনা। লজ্জা তো তার পাওয়ার কথা। বিয়ের রাতে রুমে এসে তার সাথে কোন কথা বলতে পারিনি। সেও বলেনি। সে বিছানায় আর আমি সোফাতেই ঘুমিয়ে পরি। বারবার মনে হচ্ছিল এই হয়তো কিছু বলবে। কিন্তু না এমন কিছুই হয়নি সেদিন। কিন্তু বউভাতের দিনে সবাইকে তার সাথে পরিচয় করিয়ে দিচ্ছিলাম। তার আর আমার মাঝে কিছুটা দুরত্ব ছিল। দুলাভাইর হয়তো এটা সহ্য হয়নি। আমাকে একটা ধাক্কা দিতেই তার দিকে পরে যাচ্ছিলাম। তখন সে আমার হাতটা ধরে ফেলেছিল। তার সাথে আমার প্রথম স্পর্শ। ভেবেছিলাম দুলাভাইকে বকে দিব কিন্তু সে যখন দুহাত দিয়ে আমার হাতটা ধরে শার্টটা ঠিক করে দিয়ে বলল, একটু দেখে শুনে দাড়ান। নয়তো পরে যাবেন। তখন দুলাভাইর প্রতি ভালবাসা উতলে পরছিল আমার। এটার জন্য দুলাভাইকে একদিন বড়সড় একটা ট্রিট দেই। অনুষ্ঠান শেষে যখন আমি শশুরবাড়িতে যাচ্ছিলাম তখন নিজের মধ্যেই একটু খিদে চলে এলো। সারাদিন তো ব্যস্ততার কারনে কিছু খেতে পারিনি। তাই পানি খাচ্ছিলাম বারবার। ও মনে হয় বুঝেছিল কিছুটা। বাসায় আসতেই জলদি করে একবাটি পায়েশ নিয়ে এলো। আমি পায়েশটা যখন খাচ্ছিলাম তখন ও পাশেই দাড়িয়ে ছিল। তাকে জিজ্ঞেস করলাম আপনারও খিদে পেয়েছে মনে হয় তো আসুন একসাথে খাই। ও একটু হেসে বলল, তারাতারী অর্ধেকটা খেয়ে আমাকে দিন। কেউ আশার আগেই শেষ করতে হবে। আমি একটু হেসে ওকে খাবারটা দিতেই ও জলদি করে খেয়ে সেটা বিছানার নিচে লুকিয়ে রাখলো। আমার অনেক হাসি পেয়েছিলো। ওকে বললাম, পায়েশটা অনেক ভাল ছিল। ও মুচকি হেসে বলল, একটু পরে অনেক খেতে পারবেন। আপাতত একটু ধর্য ধরুন। ঠিকি ঠিকি একটু পরে অনেক খাবার সামনে দেওয়া হল। পায়েশের বাটিটা হাতে নিয়ে এক চামচ মুখে দিলাম। কিন্তু তখনকার মত ভাল লাগলো না। পুরোটা শেষ করতে পারলাম না। অরনি তখন জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিল। রাতে খাওয়ার শেষে যখন ঘুমানোর প্রস্তুতি নিচ্ছি তখন ও বিছানার পাশে এসে দাড়িয়ে আছে। আমি তো রুমে একটাই ডাবল বিছানা দেখছি। কোন সোফা বা অন্য কিছু নেই। অরনির দিকে তাকিয়ে ছিলাম আমি কি করব এই দৃষ্টিতে। তখন ও বলল, পায়েশটা আপনাকে ভাল লেগেছিল তো তখন পুরোটা খেলেন না কেন? আমি হেসে বললাম, তোমার পায়েশটা ভাল লেগেছিল তবে পরেরটা কেন যেন ভাল লাগেনি আর তাই খেতে পারিনি। আচ্ছা আপনি বিছানায় ঘুমান আমি নিচে শুয়ে পড়ছি। অরনি তখন বলেছিল, আমার সাথে বিছানায় ঘুমাতে সমস্যা হবে আপনার? আমি একটু তাড়াহুড়ো করে বললাম, না না তা কেন? আমি তো আপনার কোন সমস্যা হবে এরকম ভেবেই এটা বললাম। ও তখন বলল, তাহলে আজ একসাথেই থাকি। আমি আর কিছু বললাম না। পরবর্তিতে যখন ওকে এই ব্যস্ত শহরের ব্যস্ততায় নিয়ে আসি তখন প্রথম কিছুদিন অনেক ভালই কেটেছে। দুষ্টুমিস্টি কিছু শাষনে প্রতিবার শিহরিত হয় আমার অনুভুতিগুলো। কিন্তু বেশি সুখ তো কপালে থাকে না তাই কিছু সমস্যা।

অফিসে কাজ করছি একদিন এমন সময় ও ফোন করলো। বলল, এক বন্ধুর জন্মদিন আছে ওখানে যাবে। বিকেলের মধ্যেই চলে আসবে। আমি শুধু বলেছিলাম, একা যাবে কি? ও বলল, আমার বন্ধুরা অনেক করে বলেছে তাই আরকি। আমি একটু আস্তে করে বললাম, সাবধানে যেও। সেদিন অফিস থেকে ফিরে দেখি সন্ধা হয়ে এলো তবুও অরনি ফেরেনি। আমার একটু টেনশন হচ্ছিল তাই অরনিকে ফোন দেওয়ার জন্য ফোনটা হাতে নিলাম। আর তখনি কলিংবেল বাজলো। দরজা খুলে অরনি আমায় দেখে বলল, সরি সরি একটু দেরী হয়ে গেল। তুমি কখন এসেছো? আমি ঠান্ডা গলায় বললাম, বিকেলে এসেছি। ও বলল, তুমি একটু অপেক্ষা কর আমি ভাত বসিয়ে আসছি। অনেকটা সেজেগুজে গেছে সে বন্ধুর জন্মদিনে। খারাপ লাগলো। আমাকে ছাড়া কেন যাবে সে? আর গেলেও এতো সেজেগুজে যাওয়ার কি দরকার? তার সৌন্দর্য কি বাইরের মানুষকে দেখানোর জন্য? কিন্তু এসব কথা মনের ভেতরেই অভিমান হয়ে পরে রইলো। আরেকদিন অফিস থেকে ছুটি নিয়ে বাসায় এসেছি অরনিকে নিয়ে ঘুরতে যাব বলে। বাসায় এসে দেখি দরজা লক করা। তারমানে অরনি না বলে কোথাও গিয়েছে। আমার কাছে থাকা চাবিটা দিয়ে দরজা খুলে ভেতরে বসলাম। অনেক রাগ হয়েছিল সেদিন। ফোন দিতে যেয়েও দেই নি। সেদিন ও বাসায় এসে আমার মুখ দেখেই বুঝেছিল যে আমি রেগে আছি। শুধু এটুকু বলল, সায়মা, সুমনেরা এত করে বলল তাই না যেয়ে পারলাম না। আমি কিছু না বলে টিভিটা ছেড়ে দিয়ে খবর শুনতে লাগলাম। তারপরও সব ঠিক ছিল। আমার মনে তখন একটাই কথা, আমার থেকে তার বন্ধুগুলোই কি তার কাছে বেশি হয়ে গেল? অন্তত বলে তো যেতে পারতো। এরপরও তার সাথে ভালভাবেই ছিলাম। কিন্তু মাথা ঠিক রাখতে পারিনি সেদিন। অফিস থেকে ফিরতে একটু দেরী হয়ে গেছে। বাসায় এসে দেখি সে বাসায় নেই। আমি আসার কিছু পরে তার এক বান্ধবী সহ সে বাসায় আসলো। এসেই আমার দিকে কিছুক্ষন তাকিয়ে ভেতরে চলে গেলো। তারপর তার বান্ধবীর সাথে ভালমন্দ কিছু কথায় কাটিয়ে একটু পরে সে চলে গেল। ওর বান্ধবী চলে যাওয়ার পরে অরনি আমার পাশে এসে বসলো। আমি এতো পরিমান রেগে ছিলাম যে তার কোন কথা শোনার মত পরিস্থিতি ছিল না। সে যখনি কিছু বলতে যাবে তখনি তাকে থামিয়ে দিয়ে বলি, আমার থেকে যখন তোমার বন্ধুরাই বেশি তখন আমাকে কিছু না বললেও চলবে। আর প্লিজ এখন বলবানা যে খুব দরকার ছিল এই সেই। সেরকম হলে একটা ফোন দিতে পারতে তুমি। একটু চুপ থেকে ও বলল, শান্তা(ওর বান্ধবী) এসে এমনভাবে বলল যে আর না করতে পারিনি। ওর সাথেই গিয়েছি আর ওর সাথেই এসেছি। আমি বললাম, শান্তার বিয়ে হয়েছে? আমার দিকে তাকিয়ে বলল, না। তোমার অন্য বান্ধবী যাদের বিয়ে হয়েছে ওরা এসেছিল? ও কিছু বলছে না। আবারও বললাম কি এমন দরকার ছিল যে না গিয়ে হল না? মিনমিন গলায় বলল, সাকিবের জন্মদিন ছিল। আমি আর কিছু বললাম না। শুধু বললাম, ভালই। চলে আসার সময় ও আমার হাতটা ধরতে চাইলে ঝটকা দিয়ে ছাড়িয়ে নেই। ওর হয়তো লেগেছিল কোথাও কিন্তু দেখার ইচ্ছে হয় নি। রুমের ভেতর এসে মুখে দুহাত দিয়ে বসে আছি। একটু পরে এসেই ও বলল, বিয়ে করা মানে যদি একটা মেয়ের বন্দী হয়ে থাকা হয় তবে আমি এটা মেনে নিতে পারব না। আমার বন্ধুরা স্কুল, কলেজ, ভার্সিটি সবসময় আমার পাশে ছিল। ওদের আমি ছাড়তে পারব না। আমার এই স্বাধীনতায় কেউ হস্তক্ষেপ করুক এটা আমি চাই না। তাকে থামিয়ে জিজ্ঞেস করলাম, তোমার কাছে আমার থেকে তারা বেশি গুরুত্বপুর্ন। চোখে একটু একটু পানি নিয়ে বলল, তুৃমি বেশি গুরুত্বপুর্ন হলেও তারা আমার অনেক ভাল বন্ধু। আমি বললাম, আচ্ছা তোমার বিবাহিত বন্ধুরা কেন আসেনি বলতো? খোজ নিয়েছিলে? ও বলল, ওদের কি যেন সমস্যা ছিল। আর আফিয়া ওর হাসবেন্ড এর সাথে এসেছিল। আমি একটু হেসে বললাম, ওরা ওদের স্বামীর কথা ভেবে একা আসতে পারেনি। তুমি কিভাবে পারলে? আর একটাবার বলে তো যেতে পারতে? ও অনেকটা জোরে বলল, আমার বন্ধুদের সাথে আমি দেখা করব এখানে তোমাকে বলার কি আছে? আর রাগটা সামলাতে পারলাম না। বসা থেকে উঠে কষিয়ে একটা চর বসিয়ে দেই ওর গালে। গালে হাত দিয়ে ছলছল চোখ নিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে ও রুম থেকে বের হয়ে গেল। বিচানায় আবারও বসে পরি। কি করছি বুঝছি না। একটু পরে ও আবার রুমে ঢুকে ব্যাগ গোছানো শুরু করল। কাঁদতে কাঁদতে ব্যাগ গোছাতে গিয়ে ব্যাগটা পরে গেল। তখন আমি জিজ্ঞেস করলাম কি করছো তুমি? ও কিছু না বলে কেঁদেই চলেছে। ব্যাগ গোছানো শেষ হলে ও এই রাতেই চলে যাবে এটা জানালো আমায়। থাকবেনা আর এখানে। আমি বললাম, দেখো এমনিতে মাথা ঠিক ছিল না আমার। তাই চরটা ভুলে মেরেছি। আমি সরি। অনেকটা চেচিয়ে বলল, থাকবো না আমি আর এখানে। আমি মাথা ঠান্ডা রেখে বললাম, কাল সকালে যেও। এতো রাতে যেতে হবে না। কিন্তু ওর জেদ ও যাবেই। আমিও কড়া এক ধমক দিয়ে তাকে বসিয়ে রাখলাম। সারারাত তাকে বুঝাতে যেয়েও নিজের মন সাড়া দেয় নি। সকাল হতেই সে বেরিয়ে গেল। সারাদিন এক রুমের মাঝে আবদ্ধ হয়ে থেকেছি। অফিসেও কোন কিছু জানাই নি। রাতের বেলা অরনির বাবা ফোন দিয়ে বলল, বাবা, তোমাদের মাঝে কি কোন সমস্যা হয়েছে? আমি তেমন কিছু হয়নি বলে চুপ করে ছিলাম। আর কিছু বলতে হয়নি। একটু পরে উনি ফোনটা কেটে দিলেন। এরপর থেকেই শুরু হল বিয়ের আগের জিবন। মনে একটাই কষ্ট যে আমার স্ত্রীর কাছে আমার থেকে তার বন্ধুরাই বেশি গুরুত্বপুর্ন। অথচ আমি আমার মাকেই দেখেছি একদিন বাবার জন্য নিজের বাবার বাড়ি থেকে চলে গিয়েছিল। সবাইকে একটা কথাই বলেছিল যে আমি না গেলে উনি না খেয়ে থাকবে। রান্না করার কেউ নেই। আর এদিকে আমার স্ত্রী আমাকে না বলেই এখানে ওখানে চলে যায়। ব্যাপারটা নিয়ে ভাবলেই আমার জিবনটা কেমন যেন থমকে যায়। কোন মুল্য খুজে পাইনা এ জিবনের। তবুও আমাদের মত ছেলেদের বাঁচতে হয়।

যখন আমার বাড়িতে এসব ব্যাপার নিয়ে জানাজানি হয় তখন আমার মা বলেছিল, জিবনে অনেক বড় সমস্যা আসবে রে বাবা, তোকে এসব সামলে নিতে হবে। আমি জানি তুই কোন দোষ করতে পারিস না তবে ভেঙ্গে পরিস না। তোকে লড়তে হবে। আমিও বুঝেছিলাম এসব। ভেঙ্গে পরিনি। টেবিল ল্যাম্পটা বের করে তার কালো হয়ে যাওয়া চিমনিটা পরিস্কার করি। শহরের এই ঝলমলে আলো থেকে বেরিয়ে এসে সব বাতি নিভিয়ে টেবিল ল্যাম্প এর এই নিভু নিভু আলোটা আমায় একাকী আবারও বাঁচতে শেখায়৷ এই আলোয় সামনে একটা ডায়রীতে নিজের মন যা বলছে তা যত্ন করে লিখাটা আমাকে পুরনো প্রশান্তি দেয়। দিনশেষে এটাই আমার বেঁচে থাকার অবলম্বন। কিছু কাব্যিকতার সাথে কিছু ছন্দ মিলিয়ে গল্প কবিতারা আমাকে কষ্ট থেকে দুরে রাখে। সবচেয়ে বড় কথা অরনিকে ভুলতে না পারলেও মনে না করাতে সাহায্য করে। কিন্তু ঘুমোতে যাওয়ার আগে রাতের নিস্তব্ধতা আবারও তার কথা ভাবায়। অনেক কষ্টে ঘুমকে নিজের করে নিয়ে রাতটা পার করে আবারও দিনের ব্যস্ততায় হারিয়ে যাই সন্ধ্যাবেলা টেবিল ল্যাম্পের সামনে একাকী বসবো বলে। এভাবেই তাকে ছাড়া কেটে গেছে তিনটি মাস। শোনা হয়নি তার একটি কথাও। দেখা হয়নি তাকে লুকিয়ে নিজেরই অন্তরালে। তবু দিনগুলো কেটে গেছে।

এসব ভাবতে ভাবতে কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছি বলতেই পারব না। সকালে উঠেই ফ্রেশ হয়ে অফিসের উদ্দেশ্যে বের হই। যেতে যেতে ভাবি কাল রাতে টেবিল ল্যাম্পের সামনে বসে নিজের কথার আসরে বসা হয়নি। তবে কি আমি আবারও দুরে সরে যাচ্ছি নিজের থেকে নাকি আবারও সেই মায়ায় ঘেরা ভালবাসা জেগে উঠছে নতুন করে? নিজের মনের প্রশ্নে নিজেরই হাসি পায় আমার। ভালবাসাটা কখনও স্মিতই হয়নি যে জেগে উঠবে। ভেবেছিলাম অরনির বাসা থেকে হয়তো ডিভোর্স জাতীয় কিছু করা হবে কিন্তু আশ্চর্যজনক ভাবে এসব কিছুই করা হয়নি।

অফিসে বসে কাজ করছিলাম এমন সময় আমার ফোনটা বেজে উঠলো । রিসিভ করে সালাম দিলাম। ওপাশ থেকে সালামের জবাব নিয়ে একজন লোক পরিচয় দিল ভাই আমি মামুন। অরনির বন্ধু বলছিলাম। আমি ছোট করে বললাম, বুঝেছি, কিছু বলবেন কি? মামুন বলল, আজ অফিস শেষে কি একটু দেখা করতে পারবেন আমার সাথে? একটা জরুরী কিছু কথা ছিল। প্রথমে দেখা করতে না চাইলেও পরে কেন যেন হ্যা বলে দিলাম। ফোনটা রাখার পর ভাবলাম, আমি জানি মামুন সাহেব তার বন্ধুর হয়ে কিছু বলবে হয়তো। কিন্তু যখন তার সাথে দেখা একরকম আলাদা কিছুই হল। একটা রেষ্টুরেন্টে বসে প্রথমেই সে বলল, খুব খারাপ লাগে ভাই যখন নিজের কোন আপনজন নিজের থেকে অন্য কিছুকে বেশি গুরুত্ব দেয়। আমি বললাম, মানে? আমি বুঝলাম না কিছু। উনি তখন বললেন, ভাই, যদিও অরনির সাথে আমি কখনও এসব ব্যাপারে কথা বলিনি বা বলতে গেলে তার সাথে আমি অন্যদের মত এতটা কাছেরও না তবুও আমরা ভাল বন্ধু ছিলাম। বিয়ের পরেও যখন বন্ধুর কোন অনুষ্ঠানে ওকে একা দেখলাম তখন অনেকটা অবাক লাগলো। ওকে আমি বলেছিলাম আপনার ব্যাপারে। আপনি কেন আসেননি এরকমটা জিজ্ঞেসও করেছি। ও শুধু বলেছিল আপনি ওর বন্ধুর পার্টিতে এসে কি করবেন? আমি আবারও অবাক হই। একদিন সুমন নামে এক বন্ধুর পার্টিতে ওকে একা বসে থাকতে দেখে বলেছিলাম যে লাবন্য, শান্তা ওদেরও বিয়ে হয়েছে। ওরা কি এসেছে? তোর হাসবেন্ড হয়তো কিছু বলে না কিন্তু মনে মনে তারও হয়তো খারাপ লাগে। এটা শোনার পর ও আমার দিকে তাকিয়ে ছিল। এই সময় আমি মামুন সাহেবকে থামিয়ে দিয়ে বললাম, আপনি কি এসব বলার জন্য ডেকেছেন? উনি একটু থেমে থেকে বলল, ও মেয়ে হিসেবে অনেক ভাল শুধু কাছের মানুষদের হারাতে চায় না। তাই হয়তো ও আপনাকে.... মুখের কথা কেড়ে নিয়ে আমি বললাম, তাই হয়তো সবচেয়ে কাছের মানুষকেই হারিয়ে ফেলছে। মামুন সাহেব বলল, কিছুদিন আগে ফোন দিয়ে ওর সাথে কথা বলি আমি। আপনাকে ছাড়া ভাল নেই ভাই ও। ও একটু জেদি তবে আপনি নাহয় ওকে একটু বুঝিয়ে নিয়েন। ও আসলে বুঝেনি যে বিয়ের পরের জিবনটা একটু পরিবর্তিত হয়ে যায়। আমি ওনাকে বলি, ভাই আমিও তো কোথাও গেলে তাকে নিয়ে যাই। ছেড়ে তো কোথাও যাই না। সে বাড়িতে একা থাকে বলে কোন বন্ধুর সাথে আড্ডা না দিয়ে বাসায় এসে তাকে সময় দেই। সে কি এসব বুঝবে না? মামুন সাহেব বলল, সবি বুঝবে ভাই কিন্তু কখনও বলবে না। নিজের রাগ অভিমান ও কখনও প্রকাশ করেনা ভাইয়া। তবে আপনি নাহয় একটু মানিয়ে নিয়েন তার সাথে। সে যে আপনাকে ছাড়া থাকতে পারবে না। তাই তো আমি এসেছি তার হয়ে ক্ষমা চাইতে বলেই মামুন সাহেব হাত জোর করে আমার হাত ধরলেন। আমি উঠে তাকে শান্ত করে শুধু একটা কথাই বললাম, আপনিই কেন তার হয়ে এসেছেন? অন্যরা তো কেউ বলেনি এসব। মামুন সাহেব একটু হেসে বলল, তার জন্য কিছু করে তাকে আর আমার জন্য কিছু করার সুযোগ দিতে চাই না। এটাই ইচ্ছে। আমি অবাক চোখে তার দিকে তাকিয়ে আছি। লোকটি কি বলল এটা? তারপর উনি আমার হাতটা ধরে সবকিছু গুছিয়ে নিতে বলে চলে গেলেন। আমি বাসায় আসতে আসতে ভাবলাম কাল শুক্রবার। আজ রাতে একটু ঘুমানো যাবে। কিন্তু বাসায় এসে দেখি দরজা ভেতর থেকে লক করা। আমি একটু ভয় পেলাম। চাবি তো আমার কাছে ছাড়া শুধু অরনির কাছে আছে। অরনি কোনভাবেই আসার কথা নয় তবে কে এলো। দরজা থেকে একটু সাইডে দারিয়ে কলিং বেল চাপলাম। বুকের ভেতরের ধুকপুক বেরেই চলেছে। একটু ওরে দরজা খুলে মাকে দেখে অবাক হওয়ার সাথে একটু স্বস্তি পেয়েছি। মনে মনে ভাবছি মা তবে অরনির থেকে চাবি নিয়ে এখানে এসেছে। ভেতরে ঢুকে দেখি ছোট ভাইটাও এসেছে। একটু পরে বাবাকে দেখে সালাম দিয়ে বললাম, এভাবে হঠাৎ তোমরা? একটা ফোন তো করতে পারতে। বাবা বলল, তোর সমস্যা হলে চলে যাই আমরা? আমি অবাক হয়ে এটুকু বললাম, আমি কি সেটা বলেছি? তখন বাবা বলল, আচ্ছা বুঝেছি, যা এখন ফ্রেশ হয়ে আয়। রুমে ঢুকে বিছানায় বসে ভাবছি, সবাই এখানে হঠাৎ করে কেন? পাশে হঠাৎ করে একটা অবয়ব দেখতে পেয়ে ভয়ে একটু এ্যা করে চেচিয়ে উঠি। তাকিয়ে দেখি এটা অবয়ব না অরনি দাড়িয়ে আছে। আমাকে দেখেই সে মাথা নিচু করে ফেলল। ভ্রু কুচকে ভাবছি এও এসেছে? ব্যাগটা রেখে আমি কিছু না বলে গোসল দিতে গেলাম। গোসল থেকে বেরিয়ে দেখলাম অরনি তখনও দাড়িয়ে আছে ওখানে। ভেজা গামছাটা বাইরে শুকাতে দিয়ে রুমে এসে বিছানায় বসে যখন মাথার চুল ঠিক করছিলাম তখন অরনি একপা দুপা করে পাশে এসে বলল, সরি। আমি শুনিনি এমন একটা ভাব নিয়েই চুল ঠিক করছি। একটু পরে ও আবার বলল, আমি সরি। আমি কিছু না বলে বাইরে মা বাবার সাথে কথা বলার জন্য আসি। পেছন পেছন অরনিও এলো। সবাই মিলে যখন খেতে যাব তখন বাবা বলল, সেদিন কি হয়েছিল তোদের? আমি কিছু বলতে যাব তখন বাবা থামিয়ে বলল, থাক, আমি সব শুনেছি। সংসারে সমস্যা হবেই তাই বলে আলাদা থাকতে হবে। আর দোষ তো তোরি। মেয়েটা ওর বন্ধুর সাথে দেখা করতে গেছে এজন্যই তোকে বকতে হবে। ও কি করবে বাড়িতে সারাদিন? ওরও তো একটু বাহিরে বেরোনোর ইচ্ছে হয় নাকি। আমি শুধু বললাম, কিন্তু বাবা আমাকে... বাবা আবারও থামিয়ে দিয়ে বলল, যা হবার হয়ে গেছে। এখন থেকে আর কোন যেন সমস্যা না শুনি। আমি ছোটবেলার ভদ্র ছেলের মত মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানালাম। এরপর মা খেতে ডাকলো। খাওয়া শেষে আমি রুমে এসে শুয়ে পরলাম। একটু পরে দেখি অরনি বিছানার পাশে দাড়িয়ে মাথা নিচু করে আছে। আমি চুপচাপ মোবাইলে চোখ দিয়ে আছি। একটু পরে ও যখন বিছানায় উঠতে যাবে তখন আমি একটু গলা পরিস্কারের ছলে খেকিয়ে উঠি। আর এটাতে ও আবার নেমে যায়। আরও কিচুক্ষন দাড়িয়ে থেকে বলে, আমি কোথায় থাকব? আমি ওর দিকে তাকিয়ে বলি, আমাকে জিজ্ঞেস করছেন? ও কিছু বলল না তাই আমি বললাম, আপনি নিজেকে যেখানে স্বাধীন মনে করেন সেখানে থাকবেন। আসলে আমি দেখতে চাচ্ছিলাম তার মধ্যে আমার জন্য ভালবাসা আছে কিনা? আমি তো ওকে ভালবেসে ফেলেছি অনেক আগেই কিন্তু সে কি স্বামীর মানে বুঝেছে? একটু পরে সে আমার পায়ে হাত দিয়ে কাঁদতে কাঁদতে বলল, প্লিজ আমায় ক্ষমা করে দাও, আমি সরি। এরকম আর কখনও হবে না। আমি তখনি ছিটকে উঠে পা থেকে ওর হাতটা সরিয়ে বলি ছি ছি কি করছেন? ঘুমাবেন তো ঘুমান এর জন্য আবার পা ধরা লাগে নাকি? এটা বলেই আমি ছোফায় চলে গেলাম। ও তখন অবাক চোখে তাকিয়ে আছে। আমি মনে মনে হাসছি তখন। অনেকটা ওকে ফিরে পাওয়ার আনন্দে আবার অনেকটা আমার প্রতি ওর ভালবাসা থেকে। একটু পরে আবারও যখন ও ছোফায় আমার কাছে আসলো, তখন আমি বললাম, ও ছোফায় ঘুমাবেন। আচ্ছা এখানেই ঘুমান তবে বলেই যখন বিছানার দিকে যাচ্ছি তখনি ও হাতটা ধরে মাটিতে বসে কেঁদে কেঁদে বলল, বলছি তো যে ভুল হয়ে গেছে। আর কত কষ্ট পাবো এটার জন্য আমি। তোমাকে ছাড়া যে আমি থাকতে পারবনা এটা বুঝবে না তুমি? আমি মরে গেলে কি তবে খুশি হবে? আমি সত্যি আর পারছিনা। বুঝতে পেরেছি আমার ভুল ছিল ওসব। আমি আর কাঁদাতে পারলাম না তাকে। বসা থেকে উঠিয়ে ছোফায় বসালাম। বললাম, আপনি আমার জায়গায় থাকলে কি করতেন? ও বলল, ভুল তো করেই ফেলেছি, এখন কি করলে তুমি ক্ষমা করবে? আর আমি কি এতোটা খারাপ কিছু করেছি যে আমাকে আপনি করে বলতে হবে? আর টেবিল ল্যাম্পটা বের করেছো কেন? আমি একটু হেসে বললাম, ওটা বের না করলে আজ এই ঘরে তোমার সতীন থাকতো, তুমি না। আমার একাকিত্বের সঙ্গী তো ওই ল্যাম্প আর সাথে অদ্ভুত কিছু লিখা। ও এবার উঠে আমাকে জড়িয়ে ধরে বলল, আর কখনও বলবে না এমন কথা। আমি কখনই তোমাকে একা রেখে যাব না। বলেই আবার কান্না শুরু। আমি তাকে শান্ত করলাম। সবকিছু পেছনে ফেলে সামনের জিবনে অগ্রসর হওয়ার সিদ্ধান্তে নিজেকে প্রস্তুত করলাম। এখন আর ও একা কোথাও যায় না তবে আমি ওকে ওর বন্ধুদের বিভিন্ন আয়োজনে নিয়ে যাই। অনেক ভাল লাগে যখন ও আমার হাতটি ধরে কাউকে পরিচয় করিয়ে দেয় যে আমি ওর হাসবেন্ড। এমনি এক বিকেলে বারান্দায় বসে চা খেতে খেতে জিজ্ঞেস করি, আচ্ছা মামুন তোমার কেমন বন্ধু? ও অনেকটা অবাক হয়ে তাকিয়ে হেসে ফেলে বলল, সবচেয়ে আলাদা কেমন যেন একজন। শুধু মানুষের জন্য কিছু করতে চায় তবে কাউকে তার জন্য কিছু করার সুযোগ দেয় না। আমি জিজ্ঞেস করলাম, ও এরকম কেন? অরনি বলল, কিছু মানুষ হয় আলাদা যারা মানুষের স্বপ্নের মধ্যেই বাস করতে চায়। তেমনি একজন স্বপ্নচোর মামুন। হটাৎ ওর কথা বললে যে? তুমি ওকে চেনো কি করে? আমি বললাম, যেমনভাবে ও তোমার স্বপ্ন চুরি করেছে সেভাবেই চিনি ওকে। অরনি কিছুটা অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। হাত বাড়িয়ে তাকে নিজের বাহুডোরে নিলাম। হুট করে চোখ পরে গেল টেবিল ল্যাম্প এর ওপর। চিমনিটাতে কালি পরেছে। পরাটাই স্বাভাবিক। এখন যে এটা প্রতিদিন কাজে লাগে। এখন যে আমার একাকিত্বে অরনিও যোগ দিয়েছে। তবে শুধু উদ্ভট কথাগুলো বের হয় না। শুধু অরনিকে নিয়েই বের হয়। মেয়েটা রাগ অভিমান বা কিছু হলেই চুপ হয়ে লিখাগুলি পরবে। কখনও মুখ ফুটে কিছু বলবে না। তবে আমি কেমন করে যেন বুঝে যাই। আর সেও মনে হয় আমাকে বোঝে তার নিজের মত করে। আমিতো এভাবেই ভালো আছি এটা ভাবতেই অরনির কপালে একটা চুমু বসিয়ে দিলাম। অরনি আমার দিকে তাকিয়ে আরও শক্ত করে জরিয়ে ধরলো আমায়। হয়তো সেও এসবই ভাবছে। তবে টেবিল ল্যাম্পটা আর সেই স্বপ্নচোরই জানে আমাদের দুজনের ভালবাসার আলোটুকু কতটা দীপ্তিময়......

বিঃদ্রঃ তাই বলে এই নয় যে বিয়ের পর বন্ধুরা পর হয়ে যায়। বন্ধুরা গুরুত্বপুর্ন তবে নিজের স্বামী বা স্ত্রীর থেকে বেশি নয়। দুটো সম্পর্কের গুরুত্ব যেমন বেশি তেমনি অবস্থানও আলাদা।

মন্তব্য ৫ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৫) মন্তব্য লিখুন

১| ০৯ ই নভেম্বর, ২০১৮ বিকাল ৫:৪২

রাজীব নুর বলেছেন: ঢাকা শহরের রাস্তা ঘাট, জ্যাম, লোকাল বাসের অবস্থা- প্রেম চুমু সব কিছু নিয়েই লিখেছেন।
তবে মুল ব্যাপার গুলো অল্প কথাতে লেখা সম্ভব ছিল।

১৩ ই নভেম্বর, ২০১৮ সকাল ৯:৫২

ফাহিম আল মামুন বলেছেন: হয়তোবা আপনি সঠিক.......

২| ০৯ ই নভেম্বর, ২০১৮ বিকাল ৫:৫৮

হাবিব বলেছেন:




রাজীব নুর বলেছেন: ঢাকা শহরের রাস্তা ঘাট, জ্যাম, লোকাল বাসের অবস্থা- প্রেম চুমু সব কিছু নিয়েই লিখেছেন।
তবে মুল ব্যাপার গুলো অল্প কথাতে লেখা সম্ভব ছিল।

৩| ০৯ ই নভেম্বর, ২০১৮ সন্ধ্যা ৬:২০

সনেট কবি বলেছেন: কিছুটা পড়লাম।

১৩ ই নভেম্বর, ২০১৮ সকাল ৯:৫৩

ফাহিম আল মামুন বলেছেন: কেমন লাগলো?

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.