নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মাধ্যম ও সংস্কৃতি অধ্যয়নের পাঠশালা

সঙ্গে সাহিত্যের সুবাস ...

ফাহমিদুল হক

আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগে পড়াই। ফিকশন ও নন-ফিকশন দুই ধরনের লেখাই লিখি। গল্প লিখি, প্রবন্ধ লিখি, অনুবাদ করি। 'যোগাযোগ' নামের একটি একাডেমিক পত্রিকা সম্পাদনা করি। আপাতত চলচ্চিত্র-অধ্যয়ন এলাকায় উচ্চতর গবেষণা করছি।

ফাহমিদুল হক › বিস্তারিত পোস্টঃ

মেহেরজান: বিনির্মাণে বিপত্তি ও জাতীয়তাবাদী আবেগ

৩০ শে জানুয়ারি, ২০১১ সন্ধ্যা ৬:৩৪



রুবাইয়াত হোসেন পরিচালিত ‘মেহেরজান’ এবং চলচ্চিত্রটি নিয়ে তৈরী-হওয়া ব্যাপক প্রতিক্রিয়া, উভয়ই আমার দৃষ্টি কেড়েছে। আমার ধারণা হয় মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে আমরা অত্যন্ত আবেগপ্রবণ, হয়তো ঐ মাত্রায় বিশ্লেষণপ্রবণ নই। ফলে মুক্তিযুদ্ধের ‘গ্রান্ড ন্যারেটিভ’-এর বাইরে কোনো কিছুকেই আমরা অনুমোদন দিতে চাইনা। সেই গ্র্যান্ড ন্যারেটিভটা কী, আমরা সবাই জানি। যে স্বাধীনতাকামী বাঙালি জনগণের ওপরে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী আক্রমণ করে, হত্যা-ধর্ষণ-ধ্বংসের মতো যুদ্ধাপরাধ করে এবং বাঙালি মুক্তিযোদ্ধারা প্রতিরোধ গড়ে তুলে দেশকে স্বাধীন করে। এই ন্যারেটিভের আরেকটি অংশ হলো ইসলামপন্থী কয়েকটি দলের বাঙালি সদস্যরা ঐসব যুদ্ধাপরাধে সহায়তা করে অথবা ঐসব অপরাধে নিজেদের নিযুক্ত করে। ‘মেহেরজান’ ছবিটি ঐ গ্র্যান্ড ন্যারেটিভের বাইরে গিয়ে ভিন্ন ন্যারেটিভ নির্মাণ করেছে। ফলে ছবিটিকে ঘিরে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া তৈরী হয়েছে।



সেইসব প্রতিক্রিয়ার যে গড় বৈশিষ্ট্য, তাতে মূলত মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বিপরীতে উল্লম্ব অবস্থানে রেখে ছবিটিকে বিচার করেছে। আমি ছবিটিকে বিচার করতে চাই বাংলাদেশে নির্মিত মুক্তিযুদ্ধসম্পর্কিত অন্যান্য ছবির সঙ্গে আনুভূমিকভাবে। তার সঙ্গে মেলাতে চাই জাতিরাষ্ট্র ধারণার।



জাতিরাষ্ট্র যদি, বেনেডিক্ট এন্ডারসনের ভাষায় একটি ‘কল্পিত সমাজ’ (ইমাজিনড কমিউনিটি) অথবা গায়ত্রী স্পিভাকের ভাষায় ‘কৃত্রিম নির্মাণ’ (আর্টিফিশিয়াল কনস্ট্রাক্ট), হয়ে থাকে, তবে তার ‘কল্পিত’ ঐক্য ও সংহতির জন্য লাগাতারভাবে একটি আদর্শ জাতীয়তার অবয়ব বা বৈশিষ্ট্য গড়ে তুলতে হয় এবং কিছু ‘রেপ্রিজেন্টশন-পদ্ধতি’র (স্টুয়ার্ট হলের মতে) মাধ্যমে এই নির্মাণের কাজটি করতে হয়, সেই অবয়ব বা বৈশিষ্ট্যকে ধরে রাখার জন্যও। সংবাদপত্র, সাহিত্য বা শিক্ষা সেই রেপ্রিজেন্টশনের দায়িত্বটি বরাবর পালন করে এসেছে। অপেক্ষাকৃত অধুনা মাধ্যম চলচ্চিত্রও বিশ্বব্যাপী জাতীয়তা, আত্মপরিচয় নির্মাণে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে এসেছে।



বাংলাদেশের চলচ্চিত্র পরিচালকেরাও উৎসাহের সঙ্গে বাঙালি জাতিসত্তা গঠন, সংরক্ষণ ও প্রচারণার কাজটি করে চলেছেন। এদেশের শিল্পপ্রয়াসী চলচ্চিত্রের বিরাট অংশই বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ঘটনা অবলম্বনে নির্মিত। স্বাধীনধারার পরিচালক তারেক মাসুদ, মোরশেদুল ইসলাম, তানভীর মোকাম্মেলের পাশাপাশি মূলধারার চাষী নজরুল ইসলামের মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক চলচ্চিত্র নির্মাণের খ্যাতি আছে। মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক বেশিরভাগ চলচ্চিত্রে ঐ গ্র্যান্ড ন্যারেটিভকেই দেখি। তারেক মাসুদের ‘মাটির ময়না’ ছবিতে প্রথম দেখা গেল ঐ ন্যারেটিভ থেকে কিছুটা সরে আসা হয়েছে, যদিও তার ‘মুক্তির গান’ ছবিটা গ্র্যান্ড ন্যারেটিভেরই অন্যতম অংশীদার। ‘মাটির ময়না’য় প্রথম দেখা গেল একটি অন্যতম বড় চরিত্র, যার ইসলামিক বেশবাশ ও ম্যানারিজম থাকার পরও তিনি রাজাকার নন। নতুবা আগে নির্মিত মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক চলচ্চিত্রগুলোয় একটি রাজাকার চরিত্রের উপস্থিতি থাকে যে ইসলামপন্থী এবং যার চরিত্রে যাবতীয় বদস্বভাব রয়েছে। এরা একটু বয়ষ্ক ও সাদা পাজামা-পাঞ্জাবি-টুপি পরিহিত, এদের মুখে দাড়ি থাকে -- অর্থাৎ রাজাকার ও মোল্লা এইভাবে সমার্থক হয়ে ওঠে। একথা ঠিক ১৯৭১ সালের রাজাকাররা কোনো না কোনো ইসলামপন্থী দলের সদস্য ছিল। কিন্তু তারা সবাই বয়ষ্ক-টুপিপরিহিত ছিলনা। তাদের অনেকেই বয়সে তরুণ ও আমাদের মতোই শার্ট-প্যান্ট পরিধান করতো। এইসব নির্মাতা-স্রষ্টারা মূলত চিন্তাভাবনায় আধুনিক ও বামঘেঁষা হলেও ষাটের দশকের বাঙালি জাতীয়তাবাদী চেতনার মধ্য দিয়েই পশ্চিমা আধুনিকতা ও বামভাবনার স্থানীকীকরণ ঘটে। ফলে বাঙালি মুসলমানের বাঙালিত্বের অংশটুকুই তারা একমাত্র আত্মপরিচয় বলে ভাবতে চান। এজন্য মুসলমানিত্বের অংশটুকুকে তারা বাতিল করতে চান। ইসলামের অনুসারীরা তাদের কাছে ‘অপর’। ফলে চলচ্চিত্রে তাদের অপরায়ণের শিকার হয় বাঙালি-মুসলমান জাতিসত্তার ভেতরকার মুসলমানিত্ব অংশটি।



‘মাটির ময়না’ ছবির দ্বিতীয় ভাগে একটি দৃশ্য আছে ঢাকা থেকে পালিয়ে আসা নাগরিকেরা একটি লঞ্চে পাকিস্তানি বাহিনীর আক্রমণের ভয়াবহতা বর্ণনা করছে এবং পরপরই অন্ধ বয়াতীর গান শুরু হয় যেখানে কারবালার যুদ্ধকে ‘ভ্রাতৃঘাতী’ যুদ্ধ হিসেবে বর্ণনা করা হয় এবং যাকে বর্তমান যুদ্ধের সঙ্গেও সম্পর্কিত করা হয়। সুফিবাদ বা লোকধর্মের আদর্শপ্রভাবিত সহজিয়া ভাবের রক্তপাতহীন ছবিটি, চলমান যুদ্ধকে স্বীকার করে নিয়েও তাকে অতিক্রম করতে চায় এবং জাতীয়তাবাদী আবেগের বাইরে এসে সব যুদ্ধই শেষপর্যন্ত যে ভ্রাতৃঘাতী, সেই বার্তা দিতে চায়। তারেক ও ক্যাথরিন মাসুদের স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র ‘নরসুন্দর’-এ একজন বিহারী, পাকিস্তানী সেনা ও রাজাকারদের তাড়া খেয়ে পলায়নরত একজন মুক্তিযোদ্ধাকে বাঁচিয়ে দেয়। এটিও মুক্তিযুদ্ধের গ্র্যান্ড ন্যারেটিভের বাইরের ছবি, যেক্ষেত্রে আমরা বিহারীদের জানি মুক্তিযুদ্ধবিরোধী হিসেবে।



‘মেহেরজান’ ছবিতে মুক্তিযুদ্ধের অবমাননা নিয়ে যারা উত্তেজিত তাদের ‘মেহেরজান’-পূর্ব ছবিতে দৃষ্ট এধরনের ডিকনস্ট্রাকশনের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাই। এই পর্যায়ে আমি হুমায়ূন আহমেদের ‘শ্যামল ছায়া’ (২০০৪) ও তৌকীর আহমেদের ‘জয়যাত্রা’র (২০০৪) কথা বলতে চাই। প্রথমেই বলে নেয়া ভালো দু’টি ছবিতেই রাজাকার হিসেবে দু’টি চরিত্র ছিল, কিন্তু চরিত্রগুলো ছোট। অন্যদিকে ‘জয়যাত্রা’য় দেখা যায়, যখন পাক-সেনারা গ্রামে ঢুকে, তাদের জেরার মুখে পড়ে মসজিদের ইমাম। তিনি পাক-সেনার নৃশংসতার প্রতিবাদ করেন, এবং পাক-সেনার হাতে শহিদ হন। এভাবে একজন মৌলবি হন চলচ্চিত্রের প্রথম প্রতিবাদকারী এবং শহিদ। আর ‘শ্যামল ছায়া’য় যুবা-মৌলবি বলতে গেলে মূল চরিত্র। তিনি নৌকা আরোহীদের মধ্যে প্রথম মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেন। তিনি রাজাকারকে নিশ্চিত মৃত্যুর হাত থেকে বাঁচান। তার গুণাবলির চরম নিদর্শন দেখি অন্য ধর্মের মানুষের প্রতি তার উদারতায়। নৌযাত্রায় হিন্দুদের ধর্মচর্চার অধিকার রক্ষায় তিনি ছিলেন সচেষ্ট। এক মৌলবির মধ্যেই যাবতীয় গুণাবলীর সমাবেশ ঘটানো হয়েছে। একসময় ঘটতো ঠিক উল্টোটা।



লক্ষ করার বিষয় হলো এরমধ্যে নাইন-ইলেভেনের ঘটনা ঘটে গেছে, আফগানিস্তান-ইরাক আগ্রাসন ঘটেছে। মুসলমানদের আত্মপরিচয়ের নতুন নতুন ব্যাখ্যা আসছে। আমাদের বেশিরভাগ আর্ট সিনেমা যেহেতু মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক, তাতে ইসলামী দলভুক্ত রাজাকার চরিত্র থাকছে এবং বাঙালি মুসলমানের আত্মপরিচয়ের জিজ্ঞাসায় ‘প্রথমত বাঙালি না মুসলমান’ প্রশ্নটি অমীমাংসিত থাকছে -- এই পরিপ্রেক্ষিতে খোদ মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক চলচ্চিত্রেই নানা বিনির্মাণ বা ডিকনস্ট্রাকশন শুরু হয়েছে বিগত এক দশকে। ‘মেহেরজান’ সেই ডিকনস্ট্রাশন প্রক্রিয়ায় একটা উল্লম্ফন। আগের ডিকনস্ট্রাকশনগুলোয় কিন্তু আজকের মতো ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া দেখা যায়নি।



আরও একটি বিষয় হলো, যারা যুদ্ধে অংশ নিয়েছেন, বা মুক্তিযুদ্ধের প্রজন্ম, তাদের আবেগের পরিমাপে মুক্তিযুদ্ধ-পরবর্তী প্রজন্ম সৃজনশীল অভিপ্রকাশে আক্রান্ত হবেননা। বরং মুক্তিযুদ্ধের মতো বিশাল ঐতিহাসিক ঘটনাকে নানা দৃষ্টিকোণ থেকেই দেখতে চাইবে নতুন প্রজন্ম। আর এই দেখার ক্ষেত্রে তারা সমসাময়িক জাতীয় ও বৈশ্বিক জীবনদর্শন ও রাজনীতি, বৈশ্বিক মানবতাবাদ ইত্যাদি বহিঃস্থ ঘটনাক্রম-আদর্শ দ্বারা অবলীলায় তাড়িত হবে। এটা শৈল্পিক দায় এবং উপায়।



‘মেহেরজান’-বিতর্কে চলচ্চিত্রটিকে একটি টেক্সট হিসেবে কেউ পাঠ করছেন না। বা বলা যায় সেই দিকটায় দৃষ্টি দেবার অবকাশ পাচ্ছেন না, সংক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়ায়। অথচ ছবিটির চিত্রনাট্যে যথেষ্ট দুর্বলতা আছে। একমাত্র পাকিস্তানি সৈনিকের সঙ্গে মেহেরের প্রেমের বিষয়টি ছাড়া কোনো কিছুই পক্বতা লাভ করেনি ছবিতে। অথচ ছবিটি একসঙ্গে অনেক কিছুকে ধরতে চেয়েছে। এমনকি পরিচালকের নিজস্ব গবেষণার জায়গাটি, বীরাঙ্গনাদের অংশটিও পূর্ণ অভিঘাত নিয়ে হাজির হয়না। নীলা চরিত্রটির হঠাৎ-প্রস্থান একটি সম্ভাবনাকে অসমাপ্ত রাখে। মেহেরের প্রেমপর্বটি অতিদীর্ঘ, ঐরকম গ্রামীণ নির্জনতায় অনেক আগেই এই ‘অনাকাক্সিক্ষত’ প্রেমটি ধরা পড়ার কথা। কিছু কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় কেবল ইঙ্গিতের মাধ্যমে সারা হচ্ছে, অথচ যার বিস্তার জরুরি ছিল। যেমন যুদ্ধশিশু সারাহর একটি সমকামী সম্পর্কের ইঙ্গিত আছে ছবিতে। একই ইঙ্গিত আছে ‘প্রাণসখা’ অরূপ-রাহীর চরিত্রদু’টির ক্ষেত্রেও। সেই ইঙ্গিত চিত্রনাট্যে কিছুই যোগ করেনা। সমকামিতা নিজেই একটা বিরাট ডিসকোর্স, এই বিষয়ভিত্তিক আলাদা ছবিই হতে পারে। মুক্তিযুদ্ধের প্রেক্ষাপটের ছবিতে ঐ ইঙ্গিত অপ্রয়োজনীয় ছিল।



বাণিজ্যিক উপাদান ছবিটির অন্যতম সীমাবদ্ধতা। সময় ও চরিত্রানুযায়ী অবিশ্বস্ত বর্ণিল পোশাক, অমলিন ঝকঝকে বাংলাদেশের গ্রাম, ভারতীয় তারকাদের কাস্টিং, নির্রযোগ্য সিনেমাটোগ্রাফি-উদ্ভূত এক্সোটিক প্রাকৃতিক চলমান চিত্র -- ছবিটির প্রতি একটা ওরিয়েন্টালিস্ট গেইজ-এ (প্রাচ্যবাদী দৃষ্টিক্ষেপণ) প্রলুব্ধ করে। তবে বাণিজ্যিক বিনোদন আবার ছবির অন্যতম শক্তিও। ঐসব উপাদানের কারণে অনেক সাধারণ দর্শকের কাছেই এটা বিয়োগান্তক প্রেমকাহিনী হিসেবে হাজির হবে, মুক্তিযুদ্ধের প্রেক্ষাপটে যা একটা রূপকথার আখ্যান তৈরি করে। আর মুক্তিযুদ্ধের গ্র্যান্ড ন্যারেটিভের ডিকনস্ট্রাকশন করতে গিয়ে, রূপকথা-পরিস্থিতি, পরিচালকের জন্য বিশেষ সুবিধা এনে দেয়। সেই সুবিধা বা স্বাধীনতা পরিচালক নিতেই পারেন। নয়তো মুক্তিযুদ্ধ কেবল ইতিহাসের দিন-সংখ্যা নিয়ে পাঠ্যবইতে আটকে থাকবে, নানারূপে মানুষের মনে ঠাঁই নেবে না।



তবে বলতে হবে ‘মেহেরজান’-এর কাউন্টার ডিসকোর্স প্রিম্যাচিউর। ঐতিহাসিক ঘটনার সঙ্গে স্থানিক ও কালিক ব্যবধান গ্র্যান্ড ন্যারেটিভের বাইরে কাউন্টার ন্যারেটিভ জন্মের পথ করে দেয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ বা ভিয়েতনাম যুদ্ধ নিয়ে এরকম অনেক ছবি নির্মিত হয়েছে। অথচ মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি এখনও সিনিয়র প্রজন্মের কাছে তরতাজা। ফলে এই ধরনের ডিকনস্ট্রাকশন ‘মেহেরজান’-এর জন্য খানিক আগাম হয়ে গেল।



কিন্তু ‘মেহেরজান’বিরোধী বিক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া দেখে আমার ভয় হয়, ঐতিহাসিক বা জাতীয়-আন্তর্জাতিক যেকোনো ঘটনাক্রম নিয়ে নানামুখী বা ডিসকার্সিভ আলোচনার পথ বুঝি ক্রমশ রুদ্ধ হয়ে পড়ছে। মুক্তিযোদ্ধা বনাম রাজাকার/পাকিস্তানপন্থী ডাইকোটমির বাইরে বুঝি আর কিছু থাকতে নেই এই ভুবনে।







প্রথম প্রকাশ: প্রথম আলো, ৩০ জানুয়ারি, ২০১১





মন্তব্য ৪০ টি রেটিং +৬/-১

মন্তব্য (৪০) মন্তব্য লিখুন

১| ৩০ শে জানুয়ারি, ২০১১ সন্ধ্যা ৬:৪২

ফারা তন্বী বলেছেন: প্রথম আলোতে অলরেডী পড়েছি স্যার। গ্রান্ড ন্যারেটিভ আর কাউন্টার ডিসকোর্স টার্মদুটি বুঝতে কষ্ট হচ্ছে। প্লীজ একটু এক্সপ্লেইন করবেন।

৩০ শে জানুয়ারি, ২০১১ সন্ধ্যা ৬:৫২

ফাহমিদুল হক বলেছেন: গ্র্যান্ড ন্যারেটিভ মানে প্রাধান্যশীল বা স্ট্যাবলিশ ধারণা/কথাবার্তা, আর কাউন্টার ডিসকোর্স মানে তার বিপরীত/ভিন্ন ধারণা।

২| ৩০ শে জানুয়ারি, ২০১১ সন্ধ্যা ৬:৪৫

রোকন রাইয়ান বলেছেন: ধন্যবাদ।

৩| ৩০ শে জানুয়ারি, ২০১১ সন্ধ্যা ৬:৪৮

লুলু পাগলা বলেছেন: আপনার সব লেখাই আমি আগ্রহ নিয়ে পড়ি এবং ভালো লাগে। কিন্তু এই ইস্যুতে আপনার লেখা মোটেই ভালো লাগলোনা।মেহেরজান চলচ্চিত্র আমাদের ইতিহাস ও সামাজিক মূল্যবোধকে বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শণ করেছে। সেই বিতর্কিত চলচ্চিত্রের পক্ষে আপনার সাফাই গাওয়াটা মেনে নিতে কষ্ট হচ্ছে। যাইহোক, আপনার অবস্থান সম্পূর্ন আপনার ব্যাপার। কিন্তু মেহেরজান চলচ্চিত্রে আমাদের অতীত ইতিহাস বিকৃত করার যে অপচেষ্টা চালানো হয়েছে সেটার বিচার হওয়া উচিত বলে আমি মনে করি।

৩০ শে জানুয়ারি, ২০১১ সন্ধ্যা ৬:৫৪

ফাহমিদুল হক বলেছেন: ঠিক আছে। আপনার ভিন্নমতকে শ্রদ্ধা। কিন্তু আমি মেহেরজানের পক্ষে দাড়াই নাই, মেহেরজান নিয়ে তীব্র প্রতিক্রিয়ার ধরন নিয়ে প্রশ্ন তুলেছি।

৪| ৩০ শে জানুয়ারি, ২০১১ সন্ধ্যা ৬:৫৫

ঘুনেপোকা বলেছেন: good writing, i have already read it in the daily protho alo

৩০ শে জানুয়ারি, ২০১১ সন্ধ্যা ৭:৫১

ফাহমিদুল হক বলেছেন: থ্যাঙ্কস।

৫| ৩০ শে জানুয়ারি, ২০১১ সন্ধ্যা ৬:৫৬

ফেরারী... বলেছেন: "গ্রান্ড ন্যারেটিভ আর কাউন্টার ডিসকোর্স" -- ধান বান্তে শিবের গিত হয়ে গেল না ব্যাপার টা ।

কিন্তু ‘মেহেরজান’বিরোধী বিক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া দেখে আমার ভয় হয়, ঐতিহাসিক বা জাতীয়-আন্তর্জাতিক যেকোনো ঘটনাক্রম নিয়ে নানামুখী বা ডিসকার্সিভ আলোচনার পথ বুঝি ক্রমশ রুদ্ধ হয়ে পড়ছে। -- আলোচনার পথ রুদ্ধ হবার তো কিছু দেখছি না। আপনি মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে নানাদিকে নানামুখি আলোচনা করেন, আপত্তি নেই কিন্তু সেটা বাস্তব সম্মত হতে হবে বৈকি । ৭১ সালে নিশ্চয়ই মানুষ যুদ্ধ বাদ দিয়ে প্রেম-ভালোবাসায়, দেহ নিয়ে মজে ছিলোনা (তাও আবার পাকি সৈনিকের সাথে) ।

সিনেমা হবে ইতিহাসের দর্পন । সেখানে মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে কাল্পনিক কাহিনী বানানোর কোন অবকাশ নাই । সিনেমা বানানোর মত বা তার চেয়ে অসাধারন অনেক কাহিনী আমাদের মুক্তিযুদ্ধের আছে ।

৩০ শে জানুয়ারি, ২০১১ সন্ধ্যা ৭:৪৪

ফাহমিদুল হক বলেছেন: সিনেমা হবে ইতিহাসের দর্পণ, এইটা একটা অতি সরল ধারণা।

৬| ৩০ শে জানুয়ারি, ২০১১ সন্ধ্যা ৭:১০

ক্ষত্রিয় বলেছেন: http://www.sachalayatan.com/subasish/37406

নেন আপনার জন্য উপহার X(

৭| ৩০ শে জানুয়ারি, ২০১১ সন্ধ্যা ৭:১৫

বৃত্তবন্দী বলেছেন: প্রথম আলোতেই পড়েছি লেখাটা।

আপনি বলতে চাচ্ছেন রুবাইয়াত এই সিনেমায় গ্রান্ড ন্যরেটিভের বাইরে যেতে চেয়েছে বা বাইরে গিয়েছে। আমার মনে হয় কি ফাহমিদুল ভাই, আমরা আমাদের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকে এখনো ঐ পর্যায়ে নিয়ে যেতে পারিনি যেই পর্যায় থেকে আমরা গ্রান্ড ন্যরেটিভের বাইরে বের হবার মতো সাহস দেখাবো। কারণ আমাদের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের সাথে সাথে এখনো মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃত/পরিবর্তিত করার চেষ্টা করা হয়। শুধু তাই'ই না, আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধের বিরোধীতাকারীরা এখনো মাথা উঁচু করে ঘুরে বেড়ায়, যাদের বিচার আমরা এখনো করতে পারি নি।

এই অবস্থান থেকে যদি গ্রান্ড ন্যরেটিভের বাইরে গিয়ে কেউ কোনো কিছু তৈরী করেন (মুভি, নাটক, সাহিত্য) তাহলে হিতে বিপরীত হবে বলেই আমার ধারণা...

ধন্যবাদ

৮| ৩০ শে জানুয়ারি, ২০১১ সন্ধ্যা ৭:১৭

বাকী বিল্লাহ বলেছেন: জয়যাত্রা বা শ্যামল ছায়ায়' গ্র্যান্ড ন্যারেটিভের বাইরে 'ডিকনস্ট্রাকশন' ক্ষোভ-বিক্ষোভ তৈরি না করলেও মেহেরজান করলো কেন? প্রশ্নটা সম্ভবত এখানে যে এই 'ডি-কনস্ট্রকশনের' অভিঘাত কি, এর বিনির্মাতা কারা? ৬০ এর দশক থেকে এখন পর্যন্ত আমাদের রাজনৈতিক ইতি...হাসের গ্র্যান্ড ন্যারেটিভে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য ডি-কনস্ট্রাকশন হচ্ছে শেখ মুজিবের হত্যা। ওই বিনির্মাণ যদি আমাদের জনগোষ্ঠীর ওপর চেপে থাকা দুশো বছরের ধ্যান-ধারণা-জঞ্জাল-বঞ্চনা-ক্ষুধা-লিঙ্গীয় নিপীড়ন বা এরকম যে কোন কিছুকে এতটুকু হলেও ঝেড়ে ফেলতে পারত তবে চোখ বুজে বলা যায় যে ১৫ আগষ্ট ১৯৭৫ আজ স্বাগতমের একটি নামই হত। কিন্তু ইতিহাস বা বাস্তবতা কোনটিই তা নয়। কারণ ওটাই যে এ ডি-কনস্ট্রাকশনের স্রষ্টা কারা? তদ্দারা কি অর্জিত হল।

৩০ শে জানুয়ারি, ২০১১ সন্ধ্যা ৭:৪৭

ফাহমিদুল হক বলেছেন: ডিকনস্ট্রাকশনের কোয়ালিটি নিয়ে প্রশ্ন হতেই পারে, এবং সেটা হতে হবে টেক্সুয়াল। মানে ডিকনস্ট্রাকশন শব্দটা টেক্সটের সঙ্গে যায়, ঘটনাক্রমের সঙ্গে না। শেখ মুজিব হত্যার মতো নির্মম রাজনৈতিক ঘটনাকে কনস্ট্রাকশন বা ডিকনস্ট্রাকশন কিছুই বলা যায়না।
জয়যাত্রা বা শ্যামল ছায়ার তুলনায় মেহেরজান নিয়ে প্রশ্ন তোলার কারণ হলো ১. ডিকনস্ট্রাকশন প্রক্রিয়ায় এইটা এইগুলার তুলনায় আরেক কাঠি শিফট ২. কাস্টিং, মার্কেটিং এবং অন্যান্য কারণে (ফিল্ম ল্যাঙ্গুয়েজ, ইমেজ কোয়ালিটি) ছবিটা অন্য ছবির চাইতে বেশি মনোযোগ পেয়েছে।

৯| ৩০ শে জানুয়ারি, ২০১১ সন্ধ্যা ৭:৪০

এফ আই দীপু বলেছেন: স্যার, আজকের যুগান্তর বোধহয় আপনি পড়েন নি। মুক্তিযুদ্ধ কি তা আপনি অবশ্যই ভালো জানেন। ছবিটি ভালো করে দেখলে তার অর্থ কী দাঁড়ায়?

যুগান্তরের লিংকটা দিলাম। সময় করে পড়ে নিবেন।যুদ্ধ ও ভালোবাসাহীন ছবি মেহেরজান

১০| ৩০ শে জানুয়ারি, ২০১১ সন্ধ্যা ৭:৪১

ঘটলা বলেছেন: আমার ভাবতে গর্ব হয় যে মুক্তিযুদ্ধ এবং মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি অবমাননাকারী একটা চলচ্চিত্রের বিপক্ষে মানুষ এরূপ তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে। কেউ যদি আপনার জন্ম নিয়ে নানামুখী আলোচনা করতে চায়, আপনি কি সহ্য করতে পারবেন আপনার মা'কে নিয়ে কেউ কুৎসিত কোন কথা বললে?

১১| ৩০ শে জানুয়ারি, ২০১১ সন্ধ্যা ৭:৪৫

এফ আই দীপু বলেছেন: স্যার, আজকের যুগান্তর বোধহয় আপনি পড়েন নি। মুক্তিযুদ্ধ কি তা আপনি অবশ্যই ভালো জানেন। ছবিটি ভালো করে দেখলে তার অর্থ কী দাঁড়ায়?

যুগান্তরের লিংকটা দিলাম। সময় করে পড়ে নিবেন।যুদ্ধ ও ভালোবাসাহীন ছবি মেহেরজান

১২| ৩০ শে জানুয়ারি, ২০১১ সন্ধ্যা ৭:৫১

বাকী বিল্লাহ বলেছেন: 'ডিকনস্ট্রাকশন শব্দটা টেক্সটের সঙ্গে যায়, ঘটনাক্রমের সঙ্গে না।'! কিন্তু ওই ঘটনাক্রম আগে পরে যেসব টেক্সট বা ভাবধারা তৈরি করে তার কি হবে? অথবা টেক্সট যে ঘটনাক্রম তৈরি করে তাই বা ডিকনস্ট্রাকশন-এর অন্তর্গত নয় কেন?

৩০ শে জানুয়ারি, ২০১১ রাত ৮:২০

ফাহমিদুল হক বলেছেন: তা অন্তর্গত হবার কথা।
তাহলে যারা বঙ্গবন্ধুকে খুন করেছে তারা এই ছবিকে ফান্ড করেছে?

১৩| ৩০ শে জানুয়ারি, ২০১১ রাত ৮:০৪

ফেরারী... বলেছেন: সরল ধারনা বাদ দিলাম ।

৭১ সালে নিশ্চয়ই মানুষ যুদ্ধ বাদ দিয়ে প্রেম-ভালোবাসায়, দেহ নিয়ে মজে ছিলোনা (তাও আবার পাকি সৈনিকের সাথে) । --- এই যুক্তি খন্ডান ।

মুক্তিযুদ্ধের হাজার হাজার বিরত্বের, ত্যাগের কাহিনী থাকতে যুদ্ধ ছাড়া পাক সেনার সাথে প্রেম কাহিনী আর দেহবাজী কাহিনী কতটা বাস্তব সম্মত আর যুক্তিযুক্ত ??

যেই কিশোরটার বয়স ১০-১৫ সে এই সিনেমা থেকে আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে কি ধারনা পাবে?

যুক্তিযুক্ত উত্তর আশা করছি ।।

৩০ শে জানুয়ারি, ২০১১ রাত ৮:১৬

ফাহমিদুল হক বলেছেন: ১০-১৫ বছরের কিশোরের ভুল ধারণা হলে রেটিং দেন, গ্রেডিং করেন। কিন্তু একজনকে মতপ্রকাশ করতে দিতে হবে।
নরসুন্দর বা শ্যামল ছায়া দেখেননি? তখন প্রশ্ন করেননি কেন?
কয়টা বিহারী মুক্তিযোদ্ধাকে বাচিয়েছে? কয়টা মৌলবি মুক্তিযুদ্ধ করেছে?

মুক্তিযুদ্ধের হাজার হাজার বীরত্বের, ত্যাগের কাহিনী থাকতে ওরা বিহারীরে আর মোল্লারে নায়ক বানালো?

১৪| ৩০ শে জানুয়ারি, ২০১১ রাত ৮:০৪

বিবর্তনবাদী বলেছেন: কিন্তু ‘মেহেরজান’বিরোধী বিক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া দেখে আমার ভয় হয়, ঐতিহাসিক বা জাতীয়-আন্তর্জাতিক যেকোনো ঘটনাক্রম নিয়ে নানামুখী বা ডিসকার্সিভ আলোচনার পথ বুঝি ক্রমশ রুদ্ধ হয়ে পড়ছে। মুক্তিযোদ্ধা বনাম রাজাকার/পাকিস্তানপন্থী ডাইকোটমির বাইরে বুঝি আর কিছু থাকতে নেই এই ভুবনে।


সহমত। একটা সিনেমা তৈরি হয়েছে যার ব্যাপারে অনেকের নেতিবাচক ধারণার সৃষ্টি হয়েছে। খুবই স্বাভাবিক, ফলশ্রুতিতে সমালোচনা হচ্ছে। তাই বলে সিনেমা বন্ধ করে দেওয়ার দাবি আসলেই অযৌক্তিক।

৩০ শে জানুয়ারি, ২০১১ রাত ৮:১৮

ফাহমিদুল হক বলেছেন: দাবির ফল্ও পা্ওয়া গেছে। হল থেকে নামছে। ব্যানের আলোচনা্ও শুরু হয়েছে।

১৫| ৩০ শে জানুয়ারি, ২০১১ রাত ৮:১৩

প্রলাপ বলেছেন: সিনেমা বন্ধ করার দরকার নাই। আমরা বর্জন করলেই চলবে। আর সুশীলরা যেইভাবে "কী করিয়া পোস্ট মডার্ণ সিনেমার পাঠোদ্ধার করতে হয়" তার ওপর কোর্স নেয়া শুরু করেছেন, তাতে মনে হচ্ছে এগুলা উচ্চ শিখ্যিত সুশীলদের জন্যই নির্মিত, আমরা সাধারণ দর্শকরা জ্ঞানের সীমাবদ্ধতার কারণে পরিচালককে ভুল বুঝিতেছি।

সাধারণ দর্শকদের প্রতি অনুরোধ, সুশীলদের জন্য নির্মিত ছবি, সুশীলরাই দেখুক। আমরা বুঝতে পারি না, শুধু শুধু পয়সা খরচ করে "মুক্তিযুদ্ধের ওপর ভিত্তি করে নির্মিত" সিনেমা দেখতে যেয়ে "পাক-বাংলা প্রেমের সিনেমা" দেখে কগনিটিভ ডিসোনেন্স এ ভোগার প্রয়োজন নেই।

৩০ শে জানুয়ারি, ২০১১ রাত ৮:১৭

ফাহমিদুল হক বলেছেন: অলরেডি বর্জিত।

১৬| ৩০ শে জানুয়ারি, ২০১১ রাত ৮:১৬

ঘুনেপোকা বলেছেন: ইয়াহুদী মেয়ে, ইয়াহুদী পুরুষের জন্য আর বাঙালী মেয়ে হবে বাঙালী পুরুষের জন্য। সে কেন পাকিস্তানি সোলজারের সাথে প্রেম করতে যাবে। বাঙালী জাতিয়তাবাদীদের সাথে জায়নিস্টদের মিল এখানেই।

১৭| ৩০ শে জানুয়ারি, ২০১১ রাত ৮:২৭

মা-নবি০৩ বলেছেন: প্রতিক্রিয়ার ধরন নিয়ে আমার ও আপত্তি আছে
তবে নরসুন্দর বা শ্যামল ছায়া র সঙ্গে মেহের জানের পার্থক্য টা হলো "'শিল্প সাহিত্য বা চলচিত্রের বিষয় (subject) আমার মতে দু ধরনের :
এক অতি সাধারন ব্যক্তি বা বস্তুটি যাহা নিত্যদিন চোখের সামনে থাকলে ও চোখে পড়ে না শিল্প সাহিত্যিক রা তাকে চোখের সামনে তুলে ধরেন
আরেক সবচে ব্যতিক্রম যে ব্যাক্তি বা বস্তু তা ।

এইখানে মনে হয় এ চলচিত্রের নির্মাতা "আরেক " এর দিকে গিয়াছেন । কিন্তু যেখানে এখন ও এক নিয়ে যথার্থ কিছু হয়নি আরেক নিয়ে মাতামাতি টা হযম করা প্রগতিশীলদের পক্ষে ও কটিন হওয়াটা স্বাভাবিক । আর তিনি একই চলচিত্রে এত বেশী আরেক এর বিন্যাস এবং সমাবেশ ঘটিয়েছেন যে এ টি চলচিত্র না থেকে আরেক এর সংগ্রহশালা (Museum ) এ পরিনত হয়েছে ।''(কি /বি ? )ভিন্ন ধারার চলচিত্র (চিত্রকল্প / কল্প চিত্র) একপিছ মেহেরজান , মুক্তি যুদ্ধ কদুর তেল ও বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা পাইলস ও পলিপ চিকিৎসালয় এবং ০ ডিগ্রী ও ৩৬০ ডিগ্রীর পার্থক্য

১৮| ৩০ শে জানুয়ারি, ২০১১ রাত ৯:৩৬

ফিউশন ফাইভ বলেছেন: মেহেরজান আমি দেখিনি। ঘনিষ্ঠজনদের কেউ কেউ হলে দেখে এসে বলেছেন, ছবি হিসেবেই সেটা এমন কোনো মানসম্পন্ন কিছু হয়নি। সবমিলিয়ে দেখার আগ্রহও মিইয়ে এসেছে। মেহেরজানের কাহিনী আমার ভালো লাগতে না পারে, পরিচালকের সঙ্গে একমত না হতে পারি, কিন্তু একমত নই বলে নিষিদ্ধ করে দিতে হবে - এমন অবস্থান আমার নেই। দুনিয়ার কোনো কিছুই নিষিদ্ধ করার পক্ষে নই। একমাত্র বর্বররাই নিষিদ্ধ করার দাবি তুলতে পারে। স্যাটানিক ভার্সেস নিয়ে এরকম কাণ্ডই ঘটেছিল। ইংরেজিতে লেখা বইটায় কী লেখা আছে - সেটা না পড়েই মোল্লারা পথে নেমে এসেছিল। বইটা নিষিদ্ধ করার জন্য সোচ্চার হয়েছিল। ব্লগেও ঠিক একইভাবে একদল বৈজ্ঞানিক মোল্লার আবির্ভাব ঘটেছে। আমরা দেশে বসেই ছবিটা দেখতে পারিনি। অথচ অবৈধভাবে প্রবাসে থাকা এই বৈজ্ঞানিক মোল্লাগুলো জার্মানি কি আমেরিকায় বসে ছবিটা না দেখেই লোকমুখে শুনে কান্নাকাটি শুরু করে দিয়েছে। স্যাটানিক ভার্সেসের যেমন ধর্ম ছিল বর্ম, এখানে মুক্তিযুদ্ধ তাদের বর্ম। মিথ্যা তথ্য দিয়ে অবৈধভাবে জার্মানিতে অবস্থানকারী হিমু এবং অন্যান্যরা যে কদর্য ভাষায় ফারুক ওয়াসিফ এবং আপনাকে ব্যক্তিগত আক্রমণ করছে, বাংলাব্লগে এরকম উদাহরণ খুব বেশি নেই। যদিও ফারুক ওয়াসিফ কিংবা আপনার লেখার সমালোচনা তারা করতে পারেনি, সে যোগ্যতাই তাদের নেই, স্বাভাবিকভাবেই তাদের লেখার প্রথম লাইন গালাগাল, শেষ লাইনটিও। ব্লগের অপব্যবহার হিসেবে এটা চিহ্নিত হয়ে থাকলো।

৩০ শে জানুয়ারি, ২০১১ রাত ১১:২৯

ফাহমিদুল হক বলেছেন: আমরা দেশে বসেই ছবিটা দেখতে পারিনি। অথচ অবৈধভাবে প্রবাসে থাকা এই বৈজ্ঞানিক মোল্লাগুলো জার্মানি কি আমেরিকায় বসে ছবিটা না দেখেই লোকমুখে শুনে কান্নাকাটি শুরু করে দিয়েছে।

১৯| ৩০ শে জানুয়ারি, ২০১১ রাত ৯:৪০

মা-নবি০৩ বলেছেন: নরসুন্দর বা শ্যামল ছায়া প্রসংগে আরো কয়েকটি কথা :
* নর সুন্দর স্বল্প দৈঘ্য , প্রচারনায় মেহের জানের ধারে কাছে ও যায়নি
* শ্যামল ছায়া - হুমায়ন আহমেদ জনপ্রিয় উপন্যাস লেখক কিন্তু সিরিয়াস চলচিত্র নির্মাতা নয়
কিন্তু মেহের জানের পরিচালক এক জন একাডেমিক ব্যক গ্রাউন্ডে পন্ডিত এবং তিনি যথাযথ গবেষনার প্রসংগ সংবাদ পত্রের সংগে আলাপচারিতায় জানিয়েছেন । এবং ভারতীয় , পাকিস্থানি বাংলাদেশি অভিনেতাদের নিয়ে একটি চলচিত্র নির্মান করেছেন তাই মেহেরজান ক্রস ফায়ারে পড়েছে।

আর তিনি Gender studies এর আলোকে তুরে ধরতে চেয়েছিলেন পিতৃতন্ত্র নারীকে সমাজে কিভাবে treat করে কিন্তু তার চলচিত্র টি হয়ে উঠেছে পিতৃতন্ত্র কিভাবে (গোলাপি মোড়কে ) নারীকে উপস্থাপন করে তার চরম উদাহরন ।

আর এফডিসির বাইরের ধারার আরেক টি চরচিত্রের সমালোচকের বক্তব্য একটু উল্লেখ করছি "ছবির গল্পটা প্রায় ষোলআনা হাছাই কেবল সমাধান টা বাদ দিয়ে " রান ওয়ে পথ জানেনা পথের তালাশ মেহেরজান পুরোটা ই উল্টো

মুক্তিযুদ্ধে প্রেম বিষয়ে প্রাসংগিক একটি চলচিত্র "খেলা ঘর " পাকিস্থানি দের হাতে ধর্ষিত এক নারীর মনোবিকার এবং পালিয়ে থাকা এক বাংগালি যুবকের সাথে তার প্রেম কিংবা প্রেমের অভিনয়ে র গল্প টি কিন্তু খুব বেশী অালোচনা বা সমালোচনা পায়নি -কারন সেটি শক্তিমান একজন নির্মাতার খেলাঘরই হয়েছিল "

*আরেক টি কথা সময় (টাইমিং) ফালানির হত্যাকান্ডের ঘটনা এবং তার পরবর্তী প্রতিবাদ প্রক্রিয়ায় জাতিয়তাবাদ বুঝি একটু তেতে ই ছিল

এবার আসি "‘মেহেরজান’বিরোধী বিক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া দেখে আমার ভয় হয়, ঐতিহাসিক বা জাতীয়-আন্তর্জাতিক যেকোনো ঘটনাক্রম নিয়ে নানামুখী বা ডিসকার্সিভ আলোচনার পথ বুঝি ক্রমশ রুদ্ধ হয়ে পড়ছে। মুক্তিযোদ্ধা বনাম রাজাকার/পাকিস্তানপন্থী ডাইকোটমির বাইরে বুঝি আর কিছু থাকতে নেই এই ভুবনে। " প্রসংগে

এ সহনশীলতা বিহীন প্রবল প্রান্তিক (+......-) অবস্থান কিন্তু আমাদের অনেক দিনের তৈরী । যখন যে পক্ষের উপর আঘাত এসেছে , কিংবা ভিন্ন কিছু এসেছে আমরা কিন্তু এভাবে ই প্রতিবাদ করেছি তা সুশীর সমাজ হোক আর মোল্লা গোষ্ঠি হোক ।আমরা তখন ভিন্ন মতের লোকদের লেবেলিং করে কাঠ গড়ায় দাড় করিয়েছি । তখন বাক স্বাধীনতা বা চিন্তার স্বাধীনতার কথা ভুলেছি দু:খ জনক ভাবে এটি রাজনীতি থেকে শূরু হয়ে এখন সবখানে দাবানলের মতো ছঢ়িয়ে পড়েছে । "একটি ফুলকে বাচাবার আমাদের লঢ়াই " আজ পথ হারিয়েছে আমাদের অনেক দেরী হবার আগেই সহনশীল হতে শিখতে হবে


আপনার বক্ত্যব্যের মেহেরজান’বিরোধী বিক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া র সাথে আমি একমত কিন্তু । মেহেরজানকে আমি "একটি চলচিত্র' এর থেকে বেশী কিছু মনে করি না

৩০ শে জানুয়ারি, ২০১১ রাত ১১:৩৯

ফাহমিদুল হক বলেছেন: পড়লাম আপনার মন্তব্য।
এবং ঠিক আছে, আপনার মতে শ্রদ্ধা।

২০| ৩১ শে জানুয়ারি, ২০১১ রাত ২:৩৭

কনফ্লিক্ট বলেছেন: যা বলার ছিল ফিউশন ফাইভ বলে দিয়েছেন। যা বলবার আছে তা অনেকেই হয়তো বলবেন। আমি পপকর্ন নিয়ে বস্লাম। আলোচনা চলুক। গণতান্ত্রিক পরিবেশ সবাই বজায় রাখছি কিনা সেটাই আমার মুখ্য ভাবনা। ধন্যবাদ পোস্টের জন্য। পড়া হয় নি। আপাতত প্রিয়তে নিয়ে রাখলাম 8-|

২১| ৩১ শে জানুয়ারি, ২০১১ সকাল ৮:৫০

কাউসার রুশো বলেছেন: লেখাটা আপাতত চোখ বুলিয়ে গেলাম। পড়ে মন্তব্য করবো।
আমি মেহেরজান এখনও দেখিনি। তবে মেহেরজান নিয়ে তীব্র প্রতিক্রিয়ার ধরন দেখে আমি কনফিউজড। সবার সব যুক্তি মানতে পারছিনা।
মনে হয় আপনার লেখায় ব্যতিক্রম কিছু পাবো।

২২| ৩১ শে জানুয়ারি, ২০১১ বিকাল ৪:১৫

রোহান বলেছেন: ডিকন্সট্রাকশন আর মোল্লা থিওরী দেইখা ভালো লাগ্লো...আমাগো পোষ্টমডার্ন ইন্টেলেকচুয়াল সমাজ পারেও :)

২৩| ০২ রা ফেব্রুয়ারি, ২০১১ সকাল ৯:০৩

পারভেজ আলম বলেছেন: আপনে সামুতে আছেন জানতাম না। প্রথম আলোয় আপনার এই লেখার নিচে একটা মন্তব্য করছিলাম, ছাড়ে নাই। বাকি ভাইয়ের পোস্টে আপনার এই লেখা নিয়া একটা মন্তব্য করছিলাম। মন্তব্যটা নিচে তুলে দিলাম।

গ্রান্ড ন্যারেটিভে সমস্যা কি?
উত্তরাধুনিক চিন্তায় গ্র্যান্ড ন্যারেটিভ’কে খানিকটা খারাপ বা আগ্রাসী হিসাবে চিহ্নিত করার যেই প্রয়াসটা দেখা যায় সেইটা আমার কাছে কখনোই বোধগম্য মনে হয় না। এইটা মানি যে গ্র্যান্ড ন্যারেটিভ আলাদা কোন ন্যারেটিভ বা নতুন চিন্তার প্রকাশ বা প্রচারে বিপত্তি তৈড়ি করে বা বাধা হইয়া দাঁড়ায়। কিন্তু গ্র্যান্ড ন্যারেটিভের ওপর যে মানব সভ্যতা কি পরিমানে নির্ভরশীল সেই বিষয়টা এড়ায়া যাওয়াটা মোটেই বুদ্ধিমানের কাজ বইলা মনে হয় না। গ্র্যান্ড ন্যারেটিভ ছিল, আছে, থাকবে, সেই সাথে কাউন্টার ন্যারেটিভের আদলে হাজির হবে নতুন ন্যারেটিভ, নির্মান হবে নয়া গ্র্যান্ড ন্যারেটিভ। সমাজ সভ্যতা এইভাবেই আগায়। তবে প্রতিষ্ঠিত কোন গ্র্যান্ড ন্যারেটিভরে কাউন্টার দেয়ার পদ্ধতিটা যে ঐতিহাসিকভাবেই সমসাময়িক যৌক্তিকতার প্লাটফর্মে নির্মিত হয় এইটা অনেকে অস্বীকার করলে বা চিন্তার বাইরে রাখলেও সেইটা ঐতিহাসিক অসচেতনতাই হবে। সেইসাথে আরেকটা জিনিসও গুরুত্বপূর্ণ, আর তা হল কাউন্টার ন্যারেটিভ নির্মাতার ব্যক্তি, গোষ্ঠি অথবা শ্রেণী স্বার্থ। ন্যারেটিভ নির্মান অথবা বিনির্মানের প্রক্রিয়াটা কোন পাগলামী বা শিশুশুলভ খেলাধুলা না, এইটা বিভিন্ন ব্যক্তি, জাতি, গোষ্ঠির উন্নতি, অবনতি, আগ্রাসন অথবা প্রতিবাদের স্বার্থের সাথে জড়িত।

ঔপনিবেশিক ক্ষমতা কাঠামোয় জাতি সত্ত্বার গ্র্যান্ড ন্যারেটিভঃ
আমাদের উত্তর ঔপনিবেশিক জ্ঞানখন্ডের বিচারে বর্তমান দুনিয়ার নয়া ঔপনিবেশিক ক্ষমতা কাঠামোয় সবচেয়ে বড় গ্র্যান্ড ন্যারেটিভ হইলো গ্লোবালাইজেশ্ন, যা আদতে ওয়েস্টার্নাইজেশন ছাড়া অন্য কিছু না। সাংস্কৃতিক আগ্রাসনের মাধ্যমে প্রাক ঔপনিবেশিক ভুখন্ড গুলায় বা তথাকথিত তৃতীয় বিশ্বে নিজেদের কাচা মাল, জ্বালানী আর স্বস্তা শ্রমের যোগান এবং সেই সাথে এইসব সাব অল্টার্ণ জনগোষ্ঠির মাঝে নিজেদের ফিনিশড পণ্যের বাজার টিকাইয়া রাখাই এই ওয়েস্টার্নাইজেশনের মূল কথা। ঔপনিবেশিক কাল পর্বের শুরুর ভাগে ইউরোপে যেই গণতান্ত্রিক জাতি রাষ্ট্রের উদ্ভব তা চরিত্রগতভাবে বেনিয়া সমাজের প্রতিনিধিত্ব করে, বেনিয়া বা কর্পোরেট সমাজের স্বাধীন ব্যাবসার অধিকার দিতে এইসব জাতি রাষ্ট্রের উৎপত্তি। আর এই স্বাধীন ব্যাবসার মুনাফা অর্জিত হইছে উপনিবেশের জনগণরে শোষনের মধ্য দিয়া। জাত্যাভিমান আর জাতিগত শ্রেষ্ঠত্বের ধারণা এইসব জাতি রাষ্ট্রের উপনিবেশরে জায়েজ করার ডিসকোর্স যোগাইছে। এখন আমাদের মতো তৃতীয় বিশ্বের রাষ্ট্রের এই উপনিবেশী ক্ষমতা কাঠামো থেইকা বের হইয়া আসা বা সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে সংগ্রাম অব্যাহত রাখার জন্য পালটা জাত্যাভিমান, ভৌগলিক এবং সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য প্রেম, এবং নিজ জাতীয় সম্পদের অধিকার এবং সার্বভৌম স্বাধীনতার ধারণা সর্বস্ব জাতীয়তাবাদী গ্র্যান্ড ন্যারেটিভের অলটারনেটিভ কিছু আছে কি? মজার ব্যাপার হইলো যে যেইখানে এখন পর্যন্ত আমাদের বাঙালির মুক্তি সংগ্রামের এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনার কোন কার্যকর জাতীয়তাবাদী গ্র্যান্ড ন্যারেটিভই আজ পর্যন্ত নির্মিত হইলো না, সেইখানে আপনারা অনেকেই বাঙালির মুক্তিযুদ্ধের আবেগ আর এই আবেগ কেন্দ্রীক ঐক্যের মাঝে খুইজা পান ফেসিবাদের ছাপ। নাজিবাদ আর ফ্যাসিবাদের উদ্ভব হইছিল ঔপনিবেশিক দুনিয়ায় উপনিবেশের ভাগ বাটওয়ারায় নিজেদের কর্তৃত্ব আর শ্রেষ্ঠত্ব প্রতিষ্ঠা করতে চাওয়া দুইটা জাতি রাষ্ট্রে। আর ভাষা আন্দোলন থেইকা বাঙালির মুক্তিযুদ্ধ মূলত উপনিবেশ বিরোধী সাংস্কৃতিক এবং রাজনৈতিক সংগ্রামের উদাহরণ, এইসব আন্দোলন সংগ্রামের আবেগও তাই উপনিবেশের বিপক্ষেই যাবে, যদিও দুঃখজনক যে তার কোন স্বজাতি স্বার্থ রক্ষক ডিসকোর্স বা গ্র্যান্ড ন্যারেটিভ আমরা এখনো নির্মান করতে পারি নাই। আমাদের রাজনৈতিক শ্রেণী যেই ঔপনিবেশিক ঐতিহ্য বহণ করে তা মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বা এর গ্র্যান্ড ন্যারেটিভরে এখন পর্যন্ত নিজ স্বার্থেই তৈড়ি করছে, ব্যাবহার করছে। যেইখানে এখন পর্যন্ত বাংলাদেশে নির্মিত একটা ছবিও মুক্তিযুদ্ধের কোন গ্র্যান্ড ন্যারেটিভ রিপ্রেজেন্ট করতে পারলো না ঠিক ভাবে, সেইখানে মেহেরজান কি না দায়িত্ব নিছে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের কাউন্টার ন্যারেটিভ নির্মানের!
বস্তুত, মেহেরজান কোন কাউন্টার ন্যারেটিভ নির্মান করতে পারে নাই, এই ছবির সেই শিল্প মানই নাই। আপনার লেখায় যেই বানিজ্যিক উপাদান কেন্দ্রীক সীমাবদ্ধতা বা প্রিম্যাচিউর ডিসকোর্সের কথা বলছেন সেই কারণেই কোন গ্র্যান্ড ন্যারেটিভ নির্মানে এই ছবি ব্যর্থ। সাথে আরো যুক্ত করতে চাই যে, ছবির নির্মানের সাথে সাথে যৌক্তিক কোন কাউন্টার ডিসকোর্স নির্মানের সিরিয়াসনেস আমি খুইজা পাই নাই।

ব্যক্তি, গোষ্ঠি, জাতি আর ন্যারেটিভের কিছু জীব বৈজ্ঞানিক আলোচনাঃ
গ্র্যান্ড ন্যারেটিভ হিসাবে জাতি রাষ্ট্র কি একটি কৃত্তিম নির্মান? মানুষের ঐক্য বা সমাজের অকৃত্তিম নির্মান তাইলে কি? মানুষ বাইপেডাল নর বানর ভুক্ত প্রাণী বিশেষ। নর বানরেরা সকলেই সামাজিক প্রাণী। এরা গোত্রভুক্ত জীবন যাপনে অভ্যস্থ। আদীম মানুষও তাই ছিল, যেই মানুষের জটিল ভাষা ছিল না। গোত্র ছাড়া অকৃত্তিম মানব সভ্যতা খুজে পাওয়া যায় না। কিন্তু এতে কি জাতি রাষ্ট্র কোন কৃত্তিম নির্মান হয়? মানুষের সভ্যতা ভাষায় নির্মিত, ধর্ম রাষ্ট্র, জাতি রাষ্ট্র এইসবই ভাষায় নির্মিত। কিন্তু ভাষায় নির্মিত গ্র্যান্ড ন্যারেটিভ যেই জাতিসও্বার জন্ম দেয় তাকেই কি আমরা কৃত্ত্বিম বলতে পারি। আমাদের অকৃত্তিমতা আমাদের জেনেটিক, তাই বইলা জিনস এর বাইরে আমাদের জ্ঞান আর ধারণার বাহক আমাদের মিমস, যার সংগঠন বা মিলঝুলে গইড়া উঠে নেরেটিভ অথবা গ্র্যান্ড নেরেটিভ, এইসবরে কি আমরা কৃত্তিম বলতে পারি। আমাদের জেনেটিক পরিচয় যেমন কৃত্তিম বলার উপায় নাই তেমনি উপায় নাই আমাদের কোন মিমেটিক পরিচয় বা গ্র্যান্ড ন্যারেটিভ থেইকা উৎপন্ন পরিচয়রে। আমাদের জাতি সত্ত্বার এই গ্র্যান্ড নেরেটিভ যে কখনো পরিবর্তিত হবে না তা বলার উপায় নাই, কিন্তু আমাদের অস্তিত্ব, টিকে থাকা আর বিকাশ অথবা রাজনৈতিক ভাবে সরাসরি বলতে গেলে সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে যতদিন তার দরকার হবে ততদিন তার কাউন্টার নেরেটিভ নির্মান জাতিস্বার্থ বিরোধীই হবে।

০৩ রা ফেব্রুয়ারি, ২০১১ রাত ১:২২

ফাহমিদুল হক বলেছেন: আমি গ্র্যান্ড ন্যারেটিভগুলোকে অবমাননা করছি না। কিন্তু ডিকনস্ট্রাকশন বা কাউন্টার ন্যারেটিভের স্পেস দিতে হবে। এই স্পেস না দিতে পারা/চাওয়া অসুস্থতার লক্ষণ। আর আমি বলছি মেহেরজানই একমাত্র ডিকনস্ট্রাশন নয়।

এখন গ্র্যান্ড ন্যারেটিভগুলা এত বছরে কী করলো? কিছু দাড়ালো না কেন? এর দায় কার?

মেহেরজানের কাউন্টার ন্যারেটিভ উন্নত না। বুঝলাম। কিন্তু এটাকে তেড়ে আসার মানে হলো আপনার গ্র্যান্ড ন্যারেটিভের ভিত্তিও সবল না। ১০ গ্র্যান্ড ন্যারেটিভের অবদান কী তাহলে? একটা কাউন্টার দেখলেই এত হুলুস্থূল।

আমিতো বলেইছি এটা প্রিম্যাচিউর ও দুর্বল। ন্যারেটিভের জবাব ন্যারেটিভ হবে। গালি ও দুর্বল ন্যারেটিভকে হাওয়া করে দেয়ার পরিস্থিতি সৃষ্টি তার জবাব হতে পারেনা। এটা প্রাধান্যশীল মতাদর্শের হেজিমনি আকারে হাজির হয় তখন।

মেহেরজান আমাদের এই শিক্ষা কি দিল আমাদের আরও স্ট্রং গ্র্যান্ড ন্যারেটিভে মনোযোগী হতে হবে?

২৪| ০২ রা ফেব্রুয়ারি, ২০১১ বিকাল ৪:৫৫

একিলিস বলেছেন: Movie te dekhano 3jon muktijoddhar 3joni soja banglay bod lok. Ekhane kon grand narrative venge kon counter narrative anar chesta kora hoyechhe bole apni mone korchhen?

০৪ ঠা ফেব্রুয়ারি, ২০১১ রাত ১২:৫৩

ফাহমিদুল হক বলেছেন: ছবিতে তিন মুক্তিযোদ্ধা বদ লোক না, খর্বিত লোক। মানে বীর মুক্তিযোদ্ধা না।
এটার দায় সম্ভবত নারীবাদের। ছবিটার একটা নারীবাদী এ্যাপ্রোচ আছে। নারীবাদী সাহিত্য ও অন্যান্য কর্মের একটা বৈশিস্ট্য হলো নারীচরিত্রগুলোকে গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে হাজির করা এবং পুরুষ চরিত্রগুলোকে খর্ব করা।
এই ছবির নারী চরিত্রগুলো অপেক্ষাকৃত স্ট্রং।

২৫| ০৩ রা ফেব্রুয়ারি, ২০১১ দুপুর ১২:০৩

পারভেজ আলম বলেছেন: মেহেরজান আমাদের এই শিক্ষা কি দিল আমাদের আরও স্ট্রং গ্র্যান্ড ন্যারেটিভে মনোযোগী হতে হবে?

মুক্তিযুদ্ধের গণমানুষের পক্ষের স্ট্রং গ্র্যান্ড ন্যারেটিভ যে এখনো ঠিকঠাক তৈড়ি হয় নাই, সেইটা আমি আমার মন্তব্যেই বলছি, এইখানে মনোযোগের অবশ্যই দরকার আছে। তবে মেহেরজান আমাদের সেই শিক্ষা দিছে বইলা মনে হয় না। প্রথমতা আওয়ামীলীগ মুক্তিযুদ্ধের ন্যারেটিভ নির্মান করছে, তারপরে বিএনপি, জামাত ইসলামীরও ন্যারেটিভ আছে। তবে মেইনস্ট্রিম ন্যারেটিভের ভেতর দিয়া এবং এর বাইরেও নানান সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী রাজনৈতিক সচেতন স্বতস্ফুর্ততার মধ্য দিয়া এর নির্মান হচ্ছিল, হচ্ছে। আওয়ামীলীগ বা বিএনপির ঔপনিবেশিক দালালি শ্রেণী স্বার্থের কারণে তারা মুক্তিযুদ্ধের গ্র্যান্ড ন্যারেটিভে নিজেদের মালিকানা প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা করে, তারমানে এই না যে তারা মুক্তিযুদ্ধের রাজনৈতিক অবস্থানের পুরোপুরি বিপরীতে গিয়া এই কাজটা করে। কিন্তু এই ক্ষেত্রে জামাত ইসলামী এই কাজটা করে পুরাপুরি বিপরতীতে গিয়া। অবশ্যই ভবিষ্যতে মুক্তিযুদ্ধের গ্র্যান্ড ন্যারেটিভে লীগ বা বিএনপির মালিকানার বদলে জনগণের মালিকানা প্রতিষ্ঠিত হবে, জনগণের উপনিবেশ বিরোধী রাজনৈতিক সচেতনতার মধ্য দিয়াই সেইটা হবে। এইটা একটা কনস্ট্রাকটিভ প্রক্রিয়া, এখনো নির্মানাধিন। ডি কনস্ট্রাকশন অনেক পরের বিষয়।

এখন গ্র্যান্ড ন্যারেটিভগুলা এত বছরে কী করলো? কিছু দাড়ালো না কেন? এর দায় কার?

দায়ভার অবশ্যই দিপক্ষীয়। বাংলাদেশের শাসক রাজনৈতিক দলগুলা উপনিবেশের ধারাবাহিকতা বজায়ে রাখছে। সাম্রাজ্যবাদের তল্পিবহন করে এরা গণমানুষের পক্ষের ন্যারেটিভ নির্মানের পথে বাধা সৃষ্ঠি করে রাখবে এইটা খুবি স্বাভাবিক। অন্যদিকে এর বাইরে যারা আছেন, এই কাজটা করতে পারতেন তারা মুক্তিযুদ্ধ অথবা জাতীয়তাবাদী ন্যারেটিভ নির্মানের কাজ'কে গুরুত্ব দেন নাই। এরা আন্তর্জাতিকতাবাদ তথা বিশ্বমানবতার দোহাই দিয়া জাতীয়তাবাদ'রে ফেসিবাদ গণ্য করতেই ব্যস্ত ছিলেন। এরা মুক্তিযুদ্ধের আগে যেমন ছিলেন, তেমনি আপনাদের প্রজন্মেও বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চায় নেতৃত্ব দিছেন। মাঝখান দিয়া ফাপরে পরছি আমরা, আমাদের প্রজন্মের পোলাপানরা। আমরা লীগ বা বিএনপির জাতীয়তাবাদও অনুসরণ করতে পারি না, তেমনি আপনাদের জাতীয়তাবাদরে ছোট কইরা দেখার মনমানসিকতাও গ্রহণ করতে পারি না। এমনকি এখনো যেইখানে একটা কনস্ট্রাকশন প্রক্রিয়া সম্পন্ন হইলো না সেইখানে আপনারে অনেকেই ডি কনস্ট্রাকশনের পক্ষে সাফাই গাইছেন।

অহেতুক গালাগাল অথবা অপ্রয়োজনীয় যুদ্ধংদেহী মনোভাব আমি সমর্থন করি না। মেহেরজানের প্রদর্শনীর বিরুদ্ধেও আমি না। তবে এই ধরণের সেন্সলেস কর্মকান্ডের অবশ্যই কঠিন সমালোচনা হওয়া উচিত এবং সর্বসাধারণের বোধগম্য জবাবদিহীতা থাকা উচিত।

২৬| ০৩ রা ফেব্রুয়ারি, ২০১১ বিকাল ৪:৩৭

একিলিস বলেছেন: Jonab amar proshner uttor dite ki kosto hochchhe naki proshnota apnar atlamir level er sathe jachchhe na?

২৭| ১৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১১ দুপুর ১:৪২

শেখ আমিনুল ইসলাম বলেছেন: আপনার এই গুরুত্বপূর্ণ লেখাটিও আমরা ই-বুকের জন্য নিতে আগ্রহী। আশা করছি আপনার আপত্তি নেই।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.