নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

চূড়ান্ত রকম ফাঁকিবাজ একজন মানুষ আমি!

ফয়সাল রকি

Know thyself.

ফয়সাল রকি › বিস্তারিত পোস্টঃ

বড়োগল্প: চৈত্র দিনের অলস বেলায় (পর্ব-৩)

০৩ রা ডিসেম্বর, ২০২০ সকাল ১১:১৪



পর্ব - ১
পর্ব - ২

তিন

দুপুরের ভাত ঘুমটা ভেঙ্গে গেলে খানিকটা অস্বস্তি নিয়ে বিছানায় মটকা মেরে পড়ে থাকলো রূপকথা। দুপুরের খাবারটা যে আনন্দ নিয়ে মজা করে খাওয়া যায় হোস্টেলে গিয়ে সেটা প্রায় ভুলেই গিয়েছিল। আজ দুদিন হলো সে আনন্দ আবার ফিরেছে মায়ের হাতের রান্না পেয়ে। কাল সন্ধ্যায় জি বাংলার একটা সিরিয়াল মিস করেছে, আজ বিকালে কখন যেন সেটা দেখানোর কথা- ঠিক মনে করতে পারলো না সে। যাক গে, আগে তো কেবল টিভির সংযোগই ছিল না গ্রামে, বছরখানেক হলো সংযোগ লেগেছে। দেয়াল ঘড়িতে ঢং ঢং করে ঘন্টা বাজলো চার বার। চারটা বাজলো। তারমানে বাইরে রোদ পড়তে শুরু করেছে। বিকালের তাপহীন রোদটা ওর খুব ভালো লাগে। শহরে গিয়ে এই সময়টায় গ্রামকে খুব মিস করে সে ।

পাশ ফিরতেই ছোটবোন চুপকথাকে দেখলো, বিছানায় উপুড় হয়ে বই পড়ছে। নির্ঘাত গল্পের বই। পাঠ্যপুস্তক এতো আগ্রহ নিয়ে পড়ার মতো মেয়ে না সে। বললো, ছোট, চল বাইরে যাই। হেঁটে আসি।
- এখন?
- হ্যাঁ। চল না যাই।
- এখনো তো বিকাল হয়নি। বিকাল হোক। আর আমি এমনিতেই এখন ব্যস্ত আছি।
- পড়ছিস তো গল্পের বই! পরে পড়লেও চলবে।
- আরো একটা কাজ করছি, খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
রূপকথা ছোট বোনকে ভালো মতো লক্ষ্য করলো। না, পড়া ছাড়া অন্য কোনো কাজ করছে বলে তো মনে হলো না। বললো, কই, কী কাজ করিস?
বইটা রেখে বড়বোনের দিকে তাকালো চুপকথা। তারপর সামনে রাখা দুইটা মোবাইল ফোন দেখিয়ে বললো, এই দুইটাকে নিয়ে একটা এক্সপেরিমেন্ট চালাচ্ছি।
- তুই মোবাইল নিয়ে এক্সপেরিমেন্ট করছিস?
- হু। খুবই জটিল একটা সমস্যায় পড়েছি।
- ফাজলামো করিস আমার সাথে?
- না না, আপু শোনো একবার। এই যে দেখো, এটা হচ্ছে নোকিয়া তেত্রিশ দশ- একটা বাটন ফোন, আর এটা হলো স্মার্ট ফোন। বাটন ফোনটা মা ব্যবহার করে। এর ঘড়িতে সময় নিয়ে সমস্যা হচ্ছে। প্রতিদিন চার-পাঁচ মিনিট করে স্লো হয়ে যাচ্ছে। মা’র ধারণা কেউ একজন ইচ্ছা করে ফোনের সময় কমিয়ে দিচ্ছে।
- কে করছে? তুই?
- কী আজব! আমি করবো কেন?
- তাহলে কে?
- আমার ধারণা, এটা নিজে থেকেই হচ্ছে। ফোনে কোনো একটা সমস্যা হচ্ছে। এটা ধরতেই আমি দুইটা ফোন নিয়ে বসে আছি।
- কিভাবে ধরবি?
- এটা বের করার জন্য একটা বুদ্ধি আবিষ্কার করেছি। ধরো, একদিনে যদি চার মিনিট স্লো হয়, মানে চব্বিশ ঘন্টায় যদি দুইশো চল্লিশ সেকেন্ড স্লো হয় তাহলে এক ঘন্টায় কত হবে?
- কত?
- দশ সেকেন্ড! প্রায় এক ঘন্টা আগে আমার ফোনে একটা স্টপ ওয়াচ সেট করেছি, দেখি এক ঘন্টা শেষ হলে কী হয়!
- কাজের কাজ কিছু নাই, খালি হাবিযাবি-
- এটা যে কত গুরুত্বপূর্ণ একটা কাজ তুমি বুঝবে না। মা’র বদ্ধমূল ধারণা আমি তাঁর ফোনের টাইম চেঞ্জ করি। কাজেই আমাকে প্রমাণ করতেই হবে যে, কাজটা আমি করি না।
- আচ্ছা, ঠিক আছে। মানলাম- দশ সেকেন্ড কম হলো, কিন্তু কেন হলো? ব্যাখ্যা দিবি কিভাবে? ঘড়ির ক্ষেত্রে ব্যাটারীর চার্জ কমতে পারে কিন্তু ফোনের ব্যাটারীতে তো রেগুলার চার্জ দেয়া হয়।
- তা ঠিক। কিন্তু এটা যদি প্রমাণ করতে পারি যে, ঘড়ি নিজে থেকেই স্লো হয়ে যাচ্ছে তাহলে ব্যাখ্যাও নিশ্চয় একটা দেয়া যাবে।
- হুম। আর কতক্ষণ লাগবে?
- বেশিক্ষণ না। একটু অপেক্ষা করো আপু।
চুপকথা আরেকদফা ফোন দু’টোর দিকে নজর বুলিয়ে পড়ায় মনোযোগ দিল। তারপর হঠাৎ উৎসাহী হয়ে বড় বোনের দিকে তাকিয়ে বললো, আপু, তুমি কি ব্যাপারটা ধরতে পেরেছো?
- ঘড়ির ব্যাটারী?
- আরে না। এই যে, তোমার কলেজ ছুটি হলো না অথচ তোমাকে বাড়িতে ডেকে পাঠালো?
- এখানে আবার কী ব্যাপার আছে? কলেজ ছুটি না হলে কি বাড়ি আসা যাবে না?
- যাবে না কেন, একশো বার যাবে। কিন্তু আমার একটা ক্ষীণ সন্দেহ আছে। শুনবে?
- বল।
- তোমার বিয়ের জন্য ব্যাপারে আলোচনা হতে পারে।
- আবার ফাজলামো করিস?
- তুমি সিরিয়াসলি ভাবছো না ব্যাপারটা। তুমি কি জানো আজ ঢাকা থেকে এক সুদর্শন যুবক এসেছে?
- হুম জানি। এরকম বইয়ের ভাষা বলছিস কেন? সুদর্শন যুবক! সে তো কী যেন একটা গবেষণার কাজে এসেছে শুনলাম। সপ্তাহ খানেক থাকবে নাকি।
- সেটাই তো। ধরো, যদি কোনো কারণে ব্যাপারটা এমন হয় যে, পাত্রীও দেখে গেল আবার গবেষণার কাজও হলো। ঐ যে বলে না- রথ বেচাও হলো, কলা দেখাও হলো।
- রথ বেচা কলা দেখা না, কলা বেচা রথ দেখা।
- একই ব্যাপার। তোমার কী মনে হয়?
- আমার কিছু মনে হয় না। কিন্তু এই অদ্ভুত কিসিমের চিন্তা কি তোর মস্তিস্ক প্রসূত নাকি অন্য কাউকে বলতে শুনেছিস?
- আমিই ভাবছিলাম। কিন্তু আমি জানি এইরকমি কিছু একটা ঘটবে।
- যা ভাগ।
- হে হে হে, এখন তো আমাকে ভাগতেই হবে।
- তোর ঘড়ি দেখা হলো?
চুপকথা ঘড়ি দেখার কথা ভুলে গিয়েছিল। তাড়াতাড়ি ঘড়ির দিকে তাকিয়ে বিরক্ত হয়ে বললো, গেল তো! এক ঘন্টা পার হয়ে গেছে। সব তোমার জন্য-
- মোটেও আমার জন্য না। আজগুবি কথা চিন্তাভাবনা তোর মাথা থেকেই এসেছিল। আচ্ছা, তুই কি জোড়া নারিকেল গাছের ঘটনা বিশ্বাস করিস?
- অবিশ্বাসের কী আছে?
- সত্যিই কি জোড়া নারিকেল গাছ পুকুর পাড় থেকে হেঁটে হেঁটে মধ্যপুকুরে চলে গেছে?
- কী জানি!
- যাবি? চল দেখে আসি।
- আমি অবশ্য একবার দেখে এসেছি। চলো যাই।
- আচ্ছা আরেকটু পরে যাই, তুই আরো কয়েক পাতা পড়।

রূপকথা আবার মটকা মেড়ে শুয়ে পড়লো। চুপকথার কথা যদি সত্যি হয়, তাহলে সামনে একটা বড় ঝামেলা আসছে। সে কেবল ইন্টারমিডিয়েট সেকেন্ড ইয়ারে পড়ছে। এতো তাড়াতাড়ি বিয়ে করতে চায় না। ডাক্তার-ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার বিষয় নয়, অন্তত অনার্সটা পাশ করার ইচ্ছা ওর। বিসিএস পরীক্ষা দেবার একটা সুপ্ত ইচ্ছা জন্মেছে ইতিমধ্যে, কলেজের শিক্ষক হিসেবে নিজেকে কল্পনা করতে খুব ভালো লাগে। এখনো অনেক সময় আছে, তবুও এখন থেকেই নিজেকে তৈরি করতে চায়। আর তাছাড়া পুরোপুরি অপরিচিত একটা মানুষের সাথে বিয়ের পিঁড়িতে বসায় মন থেকে সাড়া পায় না। দেখা গেল, মানুষ হিসেবে খুব ভালো কিন্তু গা থেকে সবসময় আঁশটে গন্ধ বের হয়! এমন মানুষের সাথে রাতে এক বিছানায় শোয়া তো দূরের কথা, পাশাপাশি বসে থাকার কথা ভাবতেও ওর গা গুলিয়ে ওঠে। কেমন যেন একটা টেনশন হচ্ছে।

(চলবে)

ছবি: গুগলমামা।

মন্তব্য ১২ টি রেটিং +৭/-০

মন্তব্য (১২) মন্তব্য লিখুন

১| ০৩ রা ডিসেম্বর, ২০২০ দুপুর ১২:৩০

রাজীব নুর বলেছেন: আমার কোনো বোন নেই। রুপকথার মতো আমার একটা বোন থাকলে ভালো হতো।

০৩ রা ডিসেম্বর, ২০২০ দুপুর ১:৪৩

ফয়সাল রকি বলেছেন: শুধু রূপকথা কেন, রূপকথা-চুপকথা- এরকম দুইটা বোন পাতিয়ে ফেলুন।
মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ রাজীব নুর ভাই।

২| ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২০ রাত ১২:০৪

মনিরা সুলতানা বলেছেন: চরিত্রের ভিন্নতা বেশ জমিয়ে দিয়েছে ।

০৬ ই ডিসেম্বর, ২০২০ সকাল ১০:২৯

ফয়সাল রকি বলেছেন: ধনবাদ মনিরা আপু।

৩| ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২০ রাত ১২:০৭

ঢুকিচেপা বলেছেন: এ পর্বটা বেশ অন্য রকম হয়েছে। ঘড়ির কেসটা মাথায় থাকলো, উত্তর চাই।

০৬ ই ডিসেম্বর, ২০২০ দুপুর ১২:০৬

ফয়সাল রকি বলেছেন: ঘড়ির কেসটার সমাধান এখনো পাইনি। দেখা যাক কী হয়।
মন্তব্যর জন্য ধন্যবাদ।

৪| ০৬ ই ডিসেম্বর, ২০২০ রাত ২:৫৪

ওমেরা বলেছেন: আমার ভাবী, মেয়েকে রূপকথা নামে ডাকে আমরা কেউই এই নামটা পছন্দ করি না। কিন্ত আপনার গল্পে রূপকথা, চুপকথা নামদুটো ভালই লাগলো।

০৬ ই ডিসেম্বর, ২০২০ বিকাল ৪:৫৮

ফয়সাল রকি বলেছেন: আপনার ভাবীর আরেকটা মেয়ে হলে চুপকথা নাম রাখতে পারেন।
ধন্যবাদ ওমেরা।

৫| ০৬ ই ডিসেম্বর, ২০২০ বিকাল ৩:৪৭

মোঃ মাইদুল সরকার বলেছেন: ৩য় পর্বে এসে নায়িকার দেখা পাওয়া গেল। চলুক।

০৬ ই ডিসেম্বর, ২০২০ বিকাল ৪:৫৮

ফয়সাল রকি বলেছেন: পরের পর্বে দুজনের দেখা হয়ে যেতে পারে। হে হে হে।
ধন্যবাদ ভাই।

৬| ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২০ বিকাল ৪:৫৩

কাজী ফাতেমা ছবি বলেছেন: ভালো লাগলো এ পর্বও

১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২০ বিকাল ৫:৫৪

ফয়সাল রকি বলেছেন: ধনবাদ আপু।
আরো দুইটা পর্ব দিয়েছি। সময় করে ঘুরে আসবেন।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.