নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
পর্ব - ১
পর্ব - ২
পর্ব - ৩
পর্ব - ৪
পাঁচ
সকাল থেকে ঘরেই রয়েছে মতিন মিয়া। গতরাতে রমিলার সাথে খানিকটা অন্তরঙ্গ পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছিল। যদিও সন্ধ্যায় এক ধরনের দ্বিধা নিয়ে ঘরে ফেরে- রমিলার রাগ কি পড়েছে? সে আগ বাড়িয়ে নিজে থেকে কথা বলবে? বললেও কী বলবে? এ রকম পরিবেশে খুব একটা পড়েনি আগে, কাজেই বেশ অস্বস্তিকর অবস্থার মধ্যেই ছিল। অথচ ঘরে উল্টো পরিবেশের সম্মুখীন হয়। রমিলা বেশ খোশ মেজাজে থাকে, দুপুরের মনোমালিন্যের বিষয়টা বেমালুম ভুলে গেছে। আগেও এমনটা হয়েছে। কাজেই বিষয়টা নিয়ে তেমন মাথা ঘামালো না কিন্তু রাতের খাবার খেতে খেতে রমিলা অন্য এক প্রসঙ্গ তোলে। রমিলা বলে, তুমি আমারে একখান কথা দেও।
- কী কথা?
- আর ঐ পুস্করুনির পানি বেচবা না।
- আমি কি পানি বেচি নাকি?
- অতশত বুজি না, ঐ বেটির থাইকা তো পঞ্চাশটা টেকা লইছো!
- হেয় খুশি হইয়া দিয়া গ্যাছে, লইছি।
- তুমি আমারে কথা দেও- টেকাও লইবা না, কাউরে পানিও দিবা না।
মতিন মিয়া মাথা নাড়ে কিন্তু কিছু বলে না। দিনমজুর হিসেবে কাজ করা মতিন মিয়া প্রতিদিন কাজ পায় না। রমিলাই বরং নিয়মিত রোজগার করে। বাজারে নকু দর্জির দোকানে সেলাইয়ের কাজ করে। গর্ভবতী হওয়ার পরও চার-পাঁচ মাস পর্যন্তু কাজ করেছে। এরপরও কয়েকমাস কেটেছে, সংসারে টানাটানি শুরু হয়েছে। মতিন মিয়া মাঝে মাঝে গঞ্জে গিয়ে কাজকর্ম করে। ধানকাটা মৌসুমের জন্য অপেক্ষা করছে সে। কাসেম নগরের ধান কাটা শেষ হলে ওরা দল বেঁধে অন্য গ্রামে যায়। কিন্তু সেও কয়েক মাস দেরি আছে। তাছাড়া তখন রমিলাকে রেখে, সদ্য ভূমিষ্ঠ শিশুকে রেখে এবার গ্রামের বাইরে যেতে পারবে কিনা তা নিয়েও সন্দেহ জাগে। এরকম একটা পরিস্থিতিতে ঘটে যায় অলৌকিক ঘটনা আর মতিন মিয়ার ভাগ্য খুলে যায়। পুকুরের পানির বিনিময়ে দক্ষিণা বাবদ গত এক সপ্তাহ ধরে বেশ কিছু টাকা রোজগার করেছে। খলিল কাকার দোকানের কয়েক হাজার টাকা বাকী শোধ করেছে, হাতে অবশ্য তেমন কিছু অবশিষ্ট নাই। আর কয়েকটা দিন এরকম চললে ভালো হতো।
- কী হইলো, কথা কও না কেন?
- কী কমু?
- পুস্করুনির পানি আর বেচবা না।
- হু।
- হেই টেকা দিয়া কিছু খরিদ করলে আমাগো পোলার অমঙ্গল হইবো।
- তুমি কেমনে জানলা পোলা হইবো?
- পোলাই হইবো। আমার মন বলতাছে।
- মাইয়া হইবো। একখান মাইয়ার বড়ো শখ আমার।
রমিলা মুচকি হাসে, মতিন মিয়াও কথা বাড়ায় না। বাচ্চা পেটে আসার পর থেকেই রমিলা ছেলের কথা বলছে কিন্তু মতিন মিয়া যেদিন থেকে জেনেছে যে মেয়ে হবে সেদিন থেকে বারবার মেয়ের জন্য নিজের আগ্রহের কথা জানান দেয়। ছেলে মেয়ে নিয়ে ওর খুব একটা মাথা ব্যথা নেই। নিজেকে উদাহরণ হিসেবে ভেবে নেয়। সে নিজে ছেলে হবার পরও তো ওর বাবা সংসার ছেড়ে অন্য মেয়েলোককে বিয়ে করে চলে গেছে। ওর মা ছোট মতিনকে নিয়ে বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে ঘুরে এই গ্রামে এসে থিতু হয়েছে। অন্যের বাড়িতে ঝিয়ের কাজ করেছে। এক সময় করিম চেয়ারম্যানের পতিত জমিতে কাঁচাঘর তুলে থাকার অনুমতি পায়। মতিন বড়ো হতে থাকে কিন্তু প্রাপ্ত বয়স্ক হওয়ার আগেই মাকে হারায়। তারপর একদিন ওর মতোই পিছুটান ছাড়া রমিলার সাথে পরিচয় হয় গঞ্জে। সেখানেও এক দর্জির দোকানে সেলাইয়ের কাজ করতো রমিলা।
উঠানে বসে বিড়ি জ্বালায় মতিন মিয়া। সকাল বেলাতেই রোদের তেজ বাড়তে শুরু করেছে। এ বেলায় পুকুরের দিকে যাবে না বলেই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। মোবাইল ফোনটা বের করে দেখলো। নাহ, কোনো কল আসেনি। রিংটোন অন করা তারপরও কোনো কারণে যদি মিস হয়ে যায়! মারুফকে ওর ফোন নাম্বার দিয়েছিল গতকাল। আজকের দিনে ওর তেমন কোনো কাজ নেই জানার পর মারুফ ওকে প্রস্তাব দেয় গ্রামটা ঘুরে দেখানোর জন্য। সে সানন্দে রাজী হয়ে যায়।
বিড়িটা শেষ হওয়ার পর সে উঠে দাঁড়ায়। উঠানে বসে থাকতে ভালো না। বাজারের দিকে রওয়ানা দেয়। শহুরে মানুষটা মনে হয় বেলা করে ঘুম থেকে উঠে, তাই বের হতে দেরি হচ্ছে। কাঁচা রাস্তায় উঠতেই দেখা হয় মুরুব্বী হোসেন মিয়ার সাথে। ওকে দেখেই হোসেন মিয়া আগ্রহের সাথে বলে, কই যাও মতিন?
- চাচা, বাজারে যাইতাছি।
- পুস্করুনির পাড়ে তো মেলা মানুষ দেইখা আইলাম!
- কী কন চাচা?
- হ, শহর থাইকা নাকি সাম্বাদিক আইছে! তোমারে খুঁজতাছে।
মতিন মিয়া মাথা চুলকায়। ঐ পথে যাবে না বলে ঠিক করলেও সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছে। শহর থেকে সাংবাদিক আসা মানে অনেক বড়ো একটা বিষয়। এই ঘটনার কথা সারা দেশের মানুষের কাছে পৌঁছে যাবে। তখন আরো বেশি বেশি মানুষ আসবে। মতিন মিয়ার ডান হাতের তলা চুলকায়। ডান হাতের তলা চুলকালে নাকি অর্থপ্রাপ্তি হয়!
মতিন মিয়া যখন পুকুর পাড়ে পৌঁছলো তখন সাক্ষাৎকার পর্ব চলছে। শহর থেকে দুইজন সাংবাদিক এসেছে, তাদের একজন প্রশ্ন করছে এবং আরেকজন মোবাইল ফোনের ক্যামেরায় ভিডিও করছে। পাঞ্জাবী-টুপি পড়া একজন মানুষের সাক্ষাৎকার নেয়া হচ্ছে। সে অলৌকিক ঘটনার খুব সুন্দর বর্ণনা দিয়ে যাচ্ছে- গাছের তো হাতও নাই পাও নাই। গাছ তো আর নিজে নিজে চলে যেতে পারে না, অবশ্যই ওপরওয়ালার ইশারা আছে। তাঁর ইশারা ছাড়া এমন ঘটনা কখনোই ঘটতে পারে না। খুবই পবিত্র একটা বিষয়।
মতিন মিয়া এসব শুনতে শুনতে খুবই আনন্দিত হচ্ছে। সাধারণ মানুষ যদি এভাবে ভাবে তাহলে ওর জন্য খুব সুবিধা হয়। কিন্তু লোকটাকে সে ঠিক চিনতে পারলো না, সম্ভবত অন্য গ্রাম থেকে এসেছে। ওর একবারের জন্যও মাথায় এলো না যে, এই লোকটাকে সাংবাদিকরা সঙ্গে নিয়ে এসেছে।
ভীড়ের মধ্য থেকে কেউ একজন মতিন মিয়ার উপস্থিতির কথা জানালো। আরো জানালো যে, সে গাছ হেঁটে যাবার প্রত্যক্ষদর্শী। এতে মতিন মিয়ার বুক সামান্য ফুলে উঠলো। সাংবাদিকরা দ্রুততার সাথে চলমান সাক্ষ্যাৎকার শেষ করে মতিন মিয়ার দিকে নজর দিলো। প্রশ্নের সাথে চলতে থাকলো ক্যামেরাও।
- আপনার নাম?
- জ্বে মতিন মিয়া।
- আপনি কি এই ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী? মানে আপনি ঘটনার সময় উপস্থিত ছিলেন?
- জ্বে। বড়োই আচানক ঘটনা। আমরা আইছিলাম গাছ দুইখান কাইটা ফাইলাইতে। ঐ দক্ষিণ পাড়ে ছিল জোড়া নারিকেল গাছ। তিনজন কাঠুরে লইয়া আইছি। গাছে রশি বানছি। হেরপর যেই না গাছে কোপ দিল, সাথ সাথ জোড়া গাছ হেইদিকে হাঁটা দিল, একবারে পুস্করুনির মাঝ বরাবর। কেমন খাড়ায়া আছে দেহেন। গাছ তো পইড়াও যাইতে পারতো কিন্তু পড়ে নাই।
- রশি দিয়ে বাঁধা হলো কেন? যাতে পুকুরের পানিতে না পড়ে সেজন্য?
- এইডা গাছকাটার কায়দা। রশি বাঁধন লাগে।
- আচ্ছা, গাছে কোপ দেয়ার সাথে সাথে গাছ গভীর পানির দিকে হেঁটে চলে গেল?
- গাছের তো আর পা নাই। মাইনষের মতোন হাইটা যায় নাই। আস্তে আস্তে নাইমা গেছে।
- আপনি নিজের চোখে এই ঘটনা দেখেছেন বলছেন?
- জ্বে নিজ চোক্ষে দেখছি। জীবন বাঁচাইতে গাছ দুইখান পলায়া গেল। আল্লাহ চাইলে গাছের কুনো ক্ষতি হইতো না।
- মানে গাছের জীবন আছে। আর আল্লাহ চাইলে গাছকে যতদিন খুশি ততদিন বাঁচিয়ে রাখতে পারেন। তাই তো?
- জ্বে। সবই তাঁর ইচ্ছা।
- আপনি তাহলে বিশ্বাস করেন যে, এটা একটা অলৌকিক ঘটনা?
- জ্বে অবশ্যি বিশ্বাস করি। সকলে বিশ্বাস করে। অনেক দূর দুরান্ত থাইকা মা-বোনেরা আসতেছে বোতল ভইরা পানি লইয়া যাইতেছে।
- কেন? পানি নিয়ে যাচ্ছে কেন?
- এই পুস্করুনির পানি হইলো পবিত্র পানি। এই পানি পানে কঠিন ব্যাধী সাইড়া যায়।
- তাই নাকি?
- জ্বে, লোকে তো বিশ্বাস করতেছে।
- আপনি বিশ্বাস করেন?
- এমন আচানক ঘটনা বিশ্বাস না কইরা উপায় আছে?
- আমরা শুনেছি এই পুকুরের পানি নাকি বিক্রি হচ্ছে?
মতিন মিয়া আমতা আমতা করে। সাংবাদিকরা এই খবর পেল কিভাবে সে বুঝতে পারছে না। বললো, এমন কুনো সম্বাদ নাই।
- আমরা অবশ্য পানি বিক্রির খবর নিয়েই এসেছি। যাকগে, পুকুরের মালিক কে?
- আমাগো চেয়ারম্যান সাব।
- চেয়ারম্যান করিম সরকার?
- জ্বে। বড়োই ভালা মানুষ।
- উনি কি পানি বিক্রির টাকার ভাগ নেন?
মতিন মিয়া সাংবাদিকের প্রশ্ন বুঝতে পারলো না, ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে থাকলো। সাংবাদিক আবার জিজ্ঞেস করলো, চেয়ারম্যান সাহেব কি পুকুরের পানি বিক্রি করা টাকার ভাগ নেন?
ওকে এ প্রশ্নের উত্তর দিতে হলো না। তার আগেই বিএসসি শিক্ষক মোজাম্মেল হককে দেখা গেল পুকুর পাড়ে। তিনি গলা খাঁকারি দিয়ে বললেন, কোন পত্রিকার লোক আপনারা?
সাংবাদিকরা অপ্রস্তুত হয়ে পড়লো। পত্রিকার নাম বললো।
তিনি বললেন, আপনারা অলৌকিক ঘটনার খবর সংগ্রহ করতে এসেছেন তাই তো? এটা আসলে অলৌকিক কোনো ঘটনা না। আমি এর বিজ্ঞানসম্মত ব্যাখ্যা দিতে পারি।
যে সাংবাদিক এতক্ষণ মতিন মিয়াকে প্রশ্ন করছিল সে বললো, আপনি বলছেন- এটা কোনো অলৌকিক ঘটনা না?
- অবশ্যই না।
- আপনার পরিচয়?
- আমার নাম মোজাম্মেল হক, আমি কাসেম নগর জুনিয়র হাইস্কুলের বিএসসি শিক্ষক।
- স্যার, আপনাকে পেয়ে ভালোই হলো, আমরা একজন বিজ্ঞানের মানুষ খুঁজছিলাম। সবাই বলছে এটা অলৌকিক ঘটনা কিন্তু আপনি তা মানছেন না। তাহলে আপনি এটাকে কিভাবে দেখেন?
- খুব একটা কঠিন বিষয় না। গাছ দুটো হলো নারিকেল গাছ। নারিকেল গাছের মূল হলো গুচ্ছ মূল, একটা আরেকটা ভেতরে ঢুকে থাকে। গুচছ মূলের ক্ষেত্রে কাণ্ডের নীচে একগুচ্ছ সরু মূল থাকে যা মাটিকে আঁকড়ে ধরে রাখে। আরেকটা বিষয় হলো, এই পুকুরে মাছ চাষ করা হয়। যখন মাছের জন্য খাবার দেয়া হয় তখন মাছেরা পুকুরময় ঘুুরে বেড়ায়। মাছেরা পাড়ের গাছগুলোর শিকড়ের কাছাকাছি যায়, অনেক সময় শিকড়ের সাথে ঘষাঘষি করে করে এতে ভেতরের মাটি আলগা হয়ে যায়। আর ঐ যে পাড়ের দিকে তাকিয়ে দেখেন, পাড়ের মাটি ধীরে ধীরে ক্ষয়ে যাচ্ছে। জায়গায় জায়গায় পাড়ে ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে। গাছের নীচের মাটি ধীরে ধীরে ক্ষয়ে গেছে। তারপর যখন গাছ কাটার জন্য কোপ দিয়েছে তখন পুকুরের ঢাল বেয়ে গাছ দুটো নীচের দিকে চলে গেছে।
- কিন্তু গাছ দুইটা সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে থাকলো কেন?
- এজন্য নারিকেল গাছের পাতাগুলো দায়ী। নারিকেল গাছের পাতাগুলো যেভাবে চারদিকে ছড়িয়ে আছে তাতে একটা ভারসাম্য তৈরি হয়েছে। আর কাজেই গাছ দুটো পড়ে না গিয়ে সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
- আপনার কথা মানলাম। কিন্তু আমরা দেখছি যে অনেক লম্বা দুইটা গাছ পুকুরের মাঝখানে দাঁড়িয়ে আছে। যখন গাছ দুইটা নেমে গেছে তখন কিভাবে ভারসাম্য বজায় থাকলো?
- গাছ দুটো লম্বা হলেও ভরকেন্দ্র কিন্তু নীচে, মাটিতে। গুচ্ছমূলের কারণে আর সম্ভবত গাছ দুটো দীর্ঘদিন পাশাপাশি থাকার কারণে ওদের মূলদ্বয়ের মধ্যে কোনো একটা সংযোগ তৈরি হয়েছে যার কারণে ভরকেন্দ্র আরো শক্তি পেয়েছে। যদি ভরকেন্দ্র ঠিক না থাকতো তাহলে যেকোনো গাছ যেকোনো দিকে হেলে যেতে পারতো।
- চমৎকার একটা বিজ্ঞান সম্মত ব্যাখ্যা দেওয়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ স্যার।
সাংবাদিক দ্রুতই মোজাম্মেল হকের সাক্ষ্যাৎকার শেষ করে অন্য দিকে ঘুরে গেল। সে সম্ভবত মতিন মিয়াকে খুঁজলো কিন্তু আশেপাশে না পেয়ে অন্য আরেকজনের সাক্ষ্যাৎকার নেয়া শুরু করলো। মোজাম্মেল হক আরো কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকলেন।
কাঁচারাস্তার পাশে প্রায় শতবর্ষী আমগাছের নীচে দাঁড়িয়ে সব দেখছে দেলোয়ার হোসেন। পুকুর পাড় থেকে পালিয়ে আসা মতিন মিয়াকে গাছের আড়ালে দাঁড় করিয়ে রেখেছে। ওকে সাংবাদিকরা কী কী প্রশ্ন করেছে আর সে কী জবাব দিয়েছে তা খুঁতিয়ে খুঁতিয়ে শুনলো।
দেলোয়ার হোসেন এমনিতেই খুঁতখুঁতে স্বভাবের, ইদানীং সেটা আরো বেড়ে গেছে। ওর কাছে খবর আছে, জয়নাল ড্রাইভার চেয়ারম্যান সাহেবকে মেরে ফেলার জন্য লোক লাগিয়েছে। গ্রামে জহের চোরার উপস্থিতি নিয়েও সাবধানে আছে সে। সামনে ইলেকশন, শোনা যায় জয়নাল ড্রাইভার নাকি চেয়ারম্যানী ইলেকশন করবে। অথচ মানুষজন তাকে পছন্দ করে না। সে ছিল ট্রাক ড্রাইভার। জেলা শহর থেকে ঢাকা-চট্টগ্রামের দিকে মালামাল নিয়ে আনা নেওয়া করতো। গ্রামে পরিবার রেখে গেলেও, খুব বেশি একটা সময় এখানে থাকতো না। বছর খানেক আগে হঠাৎ একদিন সে ড্রাইভিং পেশা ছেড়ে দিয়ে গ্রামের ফিরে এলো, সঙ্গে অনেক টাকা। পটাপট কিছু জমি কিনে ফেললো আর গঞ্জে একটা গদিঘর বানিয়ে ব্যবসাপাতি শুরু করলো। তবে নামের সাথে যুক্ত হওয়া ড্রাইভার শব্দটা এখনো মুছে যায়নি। দেলোয়ার হোসেনের বদ্ধমূল ধারণা, জয়নাল ড্রাইভার চোরাচালানের সাথে যুক্ত ছিল এবং সম্ভবত এখনো আছে, নয়তো আঙ্গুল ফুলে কলা গাছ হওয়ার কোনো কারণ নেই। তবে চেয়ারম্যান সাহেব এসব আমলে নেন না।
সাংবাদিকরা জোড়া নারিকেল গাছের সংবাদ সংগ্রহ করতে এসেছে খবর পাওয়ামাত্রই দেলোয়ার হোসেনের মনে ক্ষীণ সন্দেহ জেগেছিল, সঙ্গে সঙ্গে খবর পাঠিয়ে হক মাস্টারকে ডেকে এনেছে। সাংবাদিকদের যদি টাকা খাওয়ানো না হয় তবুও উনি ব্যাপারটা সুন্দরভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন। তবে মতিন মিয়াকে যে প্রশ্ন করা হয়েছে তাতে আর ওদের নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই। বললেন, মতিন, তুই একখান ছাগল।
- আমি আবার কী করলাম?
- তুই পানির গুণাগুণ কইতে গেলি ক্যান?
- আমি বুঝবার পারি নাই।
- তুই একখান ছাগল। এখন এইজাগায় খাড়ায় থাকবি। হেরার যাওনের সময় কইবি, চেয়ারম্যান সাবে তাগো সালাম জানাইছে। তারপর সঙ্গে কইরা চেয়ারম্যান বাড়িত লইয়া আইবি। পারবি তো?
- জ্বে পারুম।
- আমি যাইতাছি।
- আইচ্ছা।
- হেরা যুদি যাইতে না চায় তাইলে আমারে মুবাইল দিবি। ঠিক আছে?
মতিন মিয়া মাথা নাড়ে।
- তোরে যেন আর পুস্করুনির ধারের কাছেও না দেহি।
মতিন মিয়া আবারো মাথা নাড়ে।
দেলোয়ার হোসেন চেয়ারম্যান বাড়ির দিকে রওয়ানা দেয়। সাংবাদিক দুজন সম্ভবত জেলা শহর থেকে এসেছে। ওদের ম্যানেজ করতে হবে। গাধা মতিনের যে ভিডিও করেছে সেটা মুছে দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। প্রয়োজন হলে কিছু খরচাপাতিও করা লাগতে পারে, তবে কোনোভাবেই চেয়ারম্যান সাহেবের গায়ে কোনো দাগ লাগানো যাবে না।
(চলবে)
ছবি: গুগলমামা।
১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২০ সকাল ১১:১৭
ফয়সাল রকি বলেছেন: সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ ভৃগুদা।
পরের পর্ব এখনো লেখা হয়নি। একটু ব্যস্ততায় আছি।
ভালো থাকবেন।
২| ০৯ ই ডিসেম্বর, ২০২০ রাত ১০:৫৬
রাজীব নুর বলেছেন: মতিন মিয়ার সাথে আমার কিছু মিল আছে।
১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২০ দুপুর ২:৪৩
ফয়সাল রকি বলেছেন: আমারো তাই ধারণা। আপনার সাথে কিছু কিছু মিল থাকতে পারে।
৩| ২৭ শে জানুয়ারি, ২০২১ রাত ৯:৪৬
করুণাধারা বলেছেন: ব্লগে একেবারেই আসতাম না, কিন্তু অফলাইনে নিয়মিত আপনার এই সিরিজ পড়েছি। চমৎকার গাঁথুনি গল্পের, সুন্দর আগাচ্ছিল, কেন বন্ধ করলেন জানিনা। আপনি কি এটা মলাটবন্দি করে প্রকাশ করেছেন? সেটা আমাদের জানাবেন না?
শুভকামনা রইল। ভালো থাকুন।
০২ রা ফেব্রুয়ারি, ২০২১ দুপুর ২:০৯
ফয়সাল রকি বলেছেন: সিরিজটা পড়েছেন জেনে খুবই আনন্দিত। আসলে ব্যস্ততার কারণে লগিন করা হয় না। আপনার মন্তব্য দেখে এলাম।
আরো কয়েকটা পর্ব লিখেছি, কিন্তু শেষ করা হয়নি। যেভাবে ভেবেছিলাম সেভাবে শেষ করা যাচ্ছে না, বড়ো হয়ে যাচ্ছে।
আর মলাটবন্দি করার ব্যাপারে আপাতত কোনো ইচ্ছা নেই।
ভালো থাকবেন। সাবধানে থাকবেন।
©somewhere in net ltd.
১| ০৯ ই ডিসেম্বর, ২০২০ রাত ৯:০৭
বিদ্রোহী ভৃগু বলেছেন: জমে উঠেছে কাহিনী
দেখা যাক কি হয় শেষ পর্যন্ত!