নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
বেড সুইচ চেপে আলো জ্বালতেই খাটের নিচ থেকে আসা অদ্ভুত শব্দটা থেমে গেল।
নীচ থেকে ভরাট কণ্ঠে কে যে বললো- লাইট অফ কর, দেখলে তো ভয় পাবি!
তিতলি সঙ্গে সঙ্গে আলোটা নিভিয়ে দিয়ে অপেক্ষা করতে লাগলো কিন্তু আর শব্দটা হলো না অনেকক্ষণ। জানলা দিয়ে সামান্য কিছু আলো ঢুকছে ঘরে যাতে অস্পষ্টভাবে নিজের অবয়ব দেখা যায়। সে আলোয় অন্য কাউকে দেখলো না। খাটের নীচ থেকে মাঝে মাঝে ভারী নিঃশ্বাসের শব্দ আসছে। কেউ একজন নিশ্চিত আছে। কিন্তু বন্ধ ঘরে সে ঢুকলো কী করে!
রাত ভারী হচ্ছে অথচ ভয়ে সে ঘুমাতে পারছে না। বাথরুম চেপেছে কিন্তু খাট থেকে নামার সাহস হচ্ছে না। কেউ যদি পা টেনে ধরে! সাহস সঞ্চয় করে গলায় ভারিক্কি ভাব এনে বললো, কে আপনি? ওখানে কী করছেন?
ভরাট কণ্ঠটা বললো, আমি ভয়! এই যে দেখ-
অদ্ভুত শব্দটা আবার শুরু হলো। আবছা আলোতেও তিতলি স্পষ্ট দেখলো খাটের নীচ থেকে একজোড়া শীর্ণ-লম্বা হাত সড়সড় করে বের হয়ে আসছে। সে ভয়ে চিৎকার করলো কিন্তু গলা দিয়ে কোনো আওয়াজ বের হলো না। হাত দুটো লম্বা হতেই থাকলো, সাধারণ মানুষের হাতের চেয়ে অনেক লম্বা। ধীরে ধীরে বিছানার চাদর বেয়ে উঠে আসতে লাগলো। কণ্ঠটা চাপা স্বরে হা হা করে হাসছে।
তিতলি বেড সুইচ ধরার জন্য হাত বাড়ালো কিন্তু ধরতে পারলো না। সুইচটা সরল দোলকের মতো দুলতে লাগলো। হাত দুটো বিছানা বেয়ে উঠে আসছে। ও বিছানার চাদর খামচে ধরে উঠে বসার চেষ্টা করলো কিন্তু শরীর নড়লো না। যেন জমে বরফ হয়ে গিয়েছে। ভয়ে চোখ বন্ধ করে ফেললো।
শব্দটা থেমে গেল। শীর্ণ-লম্বা হাত দুটো থেমে গেল কিনা বোঝা যাচ্ছে না। তিতলি চোখ খোলার মতো সাহস পাচ্ছে না।
আজ বিকালে একটা অদ্ভুত ঘটনা ঘটেছে।
সে বন্ধুদের সাথে নদীর পাড়ে ঘুরতে গিয়েছিল। সাদা কাশবন দেখার লোভ সামলাতে পারেনি। কাশফুলের একটা আলাদা সৌন্দর্য আছে যা ওকে সবসময় আকর্ষণ করে। এলোমেলো বাতাসে চারপাশ ভেসে যাচ্ছিল, সে চুলের বাঁধন খুলে কোমর পর্যন্ত লম্বা চুলগুলোকে উড়তে দিল। ঠিক তখনি শুনতে পেলো অপরিচিত একটা কণ্ঠ বললো, এই মেয়ে চুল ছেড়েছিস কেন? জানিস না, নদীর পাড়ে শ্মশানঘাট আছে! ওখানে মড়া পোড়ায়!
আশে পাশে তাকিয়ে বন্ধুদের বাইরে অন্য কাউকে দেখলো না। নির্ঘাত ভুল শুনেছে। ব্যাপারটাকে গুরুত্ব না দিয়ে কাশফুলের সাথে ছবি তুলতে ব্যস্ত হয়ে পড়লো। হঠাৎ একটা দমকা বাতাসে চুলগুলো এলোমেলো হয়ে গেল। তখনি কণ্ঠটা আবারো ভেসে এলো, কি, কথা কানে যাচ্ছে না? এক্ষুণি চলে যা এখান থেকে নতুবা বিপদে পড়বি!
তিতলি ভয় পেয়ে গেল। যথারীতি আশেপাশে কেউ নেই। তাছাড়া বাতাসের শো-শো শব্দে সামান্য তফাতে থাকা বন্ধুদের কথাও ঠিক মতো কান পর্যন্ত পৌঁছাচ্ছে না। তাহলে কথাটা বললো কে?
বন্ধুদের বলতে পারলো না বিষয়টা, ওরা অহেতুক হাসাহাসি করবে। দেরি হয়ে যাচ্ছে বলে ফেরার তাগাদা দিল সে। ফেরার পথে দেখলো কাশবনের উল্টোদিকের শ্মশান থেকে ধোঁয়া ভেসে আসছে, সম্ভবত মড়া পোড়ানো হচ্ছিল।
পঁচা একটা দুর্গন্ধ চারপাশে ছড়িয়ে পড়েছে।
চোখ খুললো তিতলি।
শব্দটা আবার শুরু হলো। শীর্ণ হাত দুটো বিছানা বেয়ে পায়ের কাছাকাছি চলে এসেছে। সাথে সাথে চোখ বন্ধ করে ফেললো কিন্তু এবার শব্দটা থামলো না। চাপা স্বরের হাসিটা আরো জোড়ালো হলো।
তিতলি আবারো চিৎকার করলো কিন্তু কোনো আওয়াজ হলো না। স্পষ্ট অনুভব করলো, হাত দুটো ওর একটা পা চেপে ধরেছে। অসম্ভব ঠাণ্ডা আর ভারী হাত। অনেকটা মৃত মানুষের শরীরের মতো। আতংকে দম আটকে যাবার উপক্রম হলো। হাত-পা ছুড়াছুড়ি করলো। অন্য পা'টা দিয়ে হাত দুটো সরানোর চেষ্টা করলো। হাত দুটো আরো জোড়ে চেপে বসলো।
এসময় হঠাৎ বেডসুইচটা হাতে এসে গেল। কিন্তু সে আলো জ্বাললো না। আলো জ্বালার পর সত্যি যদি অদ্ভুত কিছু একটা দেখে তাহলে কী হবে? তিতলির হঠাৎ কিছু একটা মনে পড়লো। সম্ভবত গোলাম দস্তগীর স্যারের ফার্স্ট ইয়ারের পড়ানো কোর্সের কোনো একটা লেকচারের কথা! আচমকাই সে বদলে গেল। মনে মনে বলতে লাগলে, সব আমার মনের ভুল। আমার সাথে কিছু ঘটছে না। সব মনের ভুল। কিছু শুনছি না। আমি বিশ্বাস করি, জ্বীন-ভূত বলে কিছু নেই।
শব্দটা থেমে গেল। হাত দুটোও হারিয়ে গেল। তিতলি পা নাড়াতে পারলো সহজেই। তবু সে থামলো না, নিজেকে বলেই চলেছে, আমি বিশ্বাস করি আমার সাথে কিছু ঘটছে না। সব আমার মনের ভুল।
আলো জ্বেলে চোখ খুলে তাকালো। নেই, অস্বাভাবিক কিছু নেই। এখন সাহস করে খাটের নীচটা একবার দেখতে হবে। সে জানে খাটের নীচেও কিছু নেই, তারপরও দেখতে হবে। ভয়টাকে পুরোপুরি দূর করতে হবে। বুক ভরে দম নিয়ে খাটের নীচে উঁকি দিল। নাহ, কিচ্ছু নেই। ঘাম দিয়ে জ্বর ছাড়ার মতো অনুভূতি হলো।
বাথরুমে যাবার জন্য মেঝে পা নামাতেই লক্ষ্য করলো, যে পায়ে শীর্ণ হাতদুটো ধরেছিল সেখানে একগাদা ছাই লেগে আছে।
ছবি: গুগল মামা।
১৫ ই জুলাই, ২০২১ সন্ধ্যা ৬:৪০
ফয়সাল রকি বলেছেন: আমিও ভূত খুব ভয় পাই জুনাপু।
আমার বউ বাতি নিভিয়ে রাজ্যের সব ভূতের সিনেমা দেখে আর আমি পাশের রুমে পালাই!
এই গল্পটা পড়ে সে খুব হেসেছে! যে ভূত ভয় পায় তার নাকি ভূতের গল্প লেখা উচিত না
২| ১৫ ই জুলাই, ২০২১ সন্ধ্যা ৬:৫৫
সেলিম আনোয়ার বলেছেন: আমি আবার পুরো বাসায় একাই আছি। যদিও ভর ডর বলে কিছু কতটুকু আছে কে জানে। তবে এমন গল্প পড়ার মোক্ষম অবস্থায় আমি আছি।
১৭ ই জুলাই, ২০২১ দুপুর ১২:১৩
ফয়সাল রকি বলেছেন: হে হে হে, সমস্যা হয়নি তো?
৩| ১৫ ই জুলাই, ২০২১ রাত ৮:০১
শোভন শামস বলেছেন: সুন্দর লিখেছেন, চালিয়ে যান
১৭ ই জুলাই, ২০২১ দুপুর ১২:১৪
ফয়সাল রকি বলেছেন: ধন্যবাদ শোভন শামস ভাই, সাথে থাকুন।
৪| ১৬ ই জুলাই, ২০২১ রাত ১:২৩
অপু তানভীর বলেছেন: ভুতের গল্প ভালা পাই
১৭ ই জুলাই, ২০২১ দুপুর ১২:১৪
ফয়সাল রকি বলেছেন: আমি অবশ্য খুব একটা ভালা পাই না।
৫| ১৯ শে আগস্ট, ২০২১ সন্ধ্যা ৭:২৫
চাঁদগাজী বলেছেন:
তিতলিকে ভুতের ভয় দেখানোর প্লটের কি দরকার? চারিপাশে জীবনের সফেন ঢেউ, সেগুলো নিয়ে লেখেন। অপু তানবির ভুত মুত নিয়ে লেখেন, তেমন পাঠক পান না।
১৯ শে আগস্ট, ২০২১ সন্ধ্যা ৭:৩৪
ফয়সাল রকি বলেছেন: অনেক কিছু নিয়েই লিখতে পারি না, ভুতে ভয় পাই।
পাঠক তো বরাবরই পাই না, সেটা নিয়ে ভাবি না। আমিও নিয়মিত আসতে পারি না। যেদিন একটু সুযোগ পাই সেদিন দেখে যাই। আপনার ট্রাক্টারটার খোঁজ করি। ছবি দেখলেই ভালো লাগে।
৬| ১৩ ই সেপ্টেম্বর, ২০২১ দুপুর ১২:৩২
জুল ভার্ন বলেছেন: ভুতের গল্প পড়ে গা ছমছম করছে! গল্প ভালো লেগেছে।
১৩ ই সেপ্টেম্বর, ২০২১ সন্ধ্যা ৬:০৫
ফয়সাল রকি বলেছেন: পাঠ ও মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।
©somewhere in net ltd.
১| ১৫ ই জুলাই, ২০২১ সন্ধ্যা ৬:৩৭
জুন বলেছেন: এই গল্প পড়ে জেগে থাকা অবস্থায় আমারই তো হাত পা ঠান্ডা হয়ে আসছে রকি
ভুত বা ভুতের গল্প অনেক ভয় পাই
+