নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সামু তে সময়ক্ষেপণ করি, অতি জানাশোনার ভিড়ে নিজের স্বল্পকায় জ্ঞান আজিকে সার্থক বলিয়া বোধোদয় হইতেছে। পড়াশুনা আইন বিষয়ে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর, ঢাবি।

মার্কো পোলো

মার্কো পোলো › বিস্তারিত পোস্টঃ

মুসলিম, হিন্দু ও খ্রিষ্টান ধর্মে তালাক বা বিবাহবিচ্ছেদের পদ্ধতি

১৭ ই অক্টোবর, ২০১৬ রাত ২:২৪


তালাক অর্থ বৈবাহিক সম্পর্কের বিচ্ছেদ ঘটানো। এ শব্দটির উৎস আরবী ভাষা থেকে, যার অর্থ কোনো কিছু ভেঙ্গে ফেলা বা ছিন্ন করা। মুসলিম আইনের বিধান মতে, তালাক স্বামী-স্ত্রীর একটি বৈধ ও স্বীকৃত অধিকার যখন স্বামী ও স্ত্রীর মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ক এমন পর্যায়ে পৌঁছায় যে, দুইজনের পক্ষে একত্রে বসবাস করা সম্ভব হয় না তখন যে কোন পক্ষ থেকে বা উভয়ে কিছু নির্দিষ্ট উপায়ে তালাকের মাধ্যমে তাদের এই সম্পর্ক ছিন্ন করতে পারেন।

♦মুসলিম আইন অনুযায়ী তালাক ও তালাকের পদ্ধতি

আইনের বিধানমতে তালাক দেবার ক্ষমতা বা অধিকার স্বামী ও স্ত্রীর সমান নয়৷ স্বামীর এক্ষেত্রে প্রায় একচ্ছত্র ক্ষমতা রয়েছে। স্বামী বা স্ত্রী যে কোন এক জনের ইচ্ছেতে (কিছু আইনগত শর্ত পূরণের মাধ্যমে) তালাক হতে পারে৷ মুসলিম আইন অনুযায়ী নিম্নলিখিত ভাবে তালাক দেওয়া যায়:

→স্বামীর পক্ষ থেকে তালাকঃ

আমাদের দেশে প্রচলিত মুসলিম আইন অনুযায়ী একজন পূর্নবয়স্ক ও সুস্থ মস্তিস্কের মুসলিম ব্যক্তি যে কোন সময় কোন কারণ দর্শানো ছাড়াই তার স্ত্রীকে তালাক দিতে পারে। আইনের কাছে তাকে কোন জবাবদিহি করতে হয়না এবং স্ত্রী, তাকে কেন তালাক দেওয়া হল তা জানতে চাইতে পারেনা। তবে এক্ষেত্রে এখনও অনেকে মনে করেন “এক তালাক, দুই তালাক, তিন তালাক” বা বায়েন তালাক উচ্চারণ করা মাত্র তালাক হয়ে যায়। কিন্তু এটি একটি ভুল ধারণা৷ স্বামী যেকোন সময় তালাক দিতে পারলেও তাকে আইনগত ভাবে নিয়ম মেনেই তালাক দিতে হয়।

→স্ত্রীর পক্ষ থেকে তালাকঃ

স্ত্রী তিন উপায়ে তালাক দিতে পারেন:
(ক) আদালতের মাধ্যমে,
(খ) তালাক-ই-তৌফিজের মাধ্যমে,
(গ) খুলার মাধ্যমে।

এছাড়া স্বামী-স্ত্রী দুই জনই নিজেদের ইচ্ছাতে নিজেদের সম্মতিক্রমে সমঝতার মাধ্যমে তালাকের ব্যবস্থা করতে পারেন। যদিও তালাক টি রেজিস্ট্রেশন করা এখন আইনের মাধ্যমে বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।

→তালাকপ্রাপ্ত স্বামী-স্ত্রী কি পুনরায় বিয়ে করতে পারবে?

হাঁ পারে৷ সেক্ষেত্রে নতুন করে বিয়ে করতে হবে।

→তালাকের পর সন্তান কার কাছে থাকবে-

তালাকের পর সন্তান মায়ের কাছে থাকবে। এক্ষেত্রে ছেলে সন্তান ৭ বছর পর্যন্ত এবং মেয়ে সন্তান বয়ঃসদ্ধিকাল পর্যন্ত মায়ের কাছে থাকবে৷ তবে তাদের ভরণপোষণের দায়িত্ব বাবা বহন করবে৷ যদি বাবা দায়িত্ব পালন না করে সেক্ষেত্রে চেয়ারম্যান সালিসীর মাধ্যমে আলাপ আলোচনা করে বিষয়টি মীমাংসা করতে পারেন।

→তালাক কখন প্রত্যাহার করা যায়?

৯০ দিন অতিক্রান্ত হবার আগেই তালাক প্রত্যাহার করা যায়।

♣তালাকের আইনগত পদ্ধতিঃ

১. কোন ব্যক্তি স্ত্রীকে তালাক দিতে চাইলে তাকে যে কোন পদ্ধতির তালাক ঘোষণার পর যথা শীঘ্রই সম্ভব স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ/পৌর/সিটি চেয়ারম্যানকে লিখিতভাবে তালাকের নোটিশ দিতে হবে এবং স্ত্রীকে উক্ত নোটিসের নকল প্রদান করতে হবে।

২. নিম্নের (৫) উপ-ধারার ব্যবস্থাবলীর মাধ্যম ব্যতিত প্রকাশ্য অথবা অন্যভাবে প্রদত্ত কোন তালাক, পূর্বাহ্নে বাতিল না হলে চেয়ারম্যান নোটিশ প্রাপ্তির তারিখ হতে নব্বই দিন অতিবাহিত না হওয়া পর্যন্ত বলবৎ হবে না।

৩. নোটিশ প্রাপ্তির ত্রিশ দিনের মধ্যে চেয়ারম্যান সংশ্লিষ্ট পক্ষদ্বয়ের মধ্যে আপোষ বা সমঝোতা সৃষ্টির উদ্দেশ্যে সালিসী পরিষদ গঠন করবে এবং উক্ত সালিসী পরিষদ এ জাতীয় সমঝোতার (পুনর্মিলনের) জন্য প্রয়োজনীয় সকল ব্যবস্থাই অবলম্বন করবে।

৪. তালাক ঘোষণা কালে স্ত্রী গর্ভবতী থাকলে বা অন্তঃসত্ত্বা থাকলে তালাক বলবৎ হবে না।

৫. কার্যকরী তালাক দ্বারা যার বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটেছে, সে স্ত্রী এ জাতীয় তালাক তিন বার কার্যকরী না হলে অন্য কোন ব্যক্তিকে বিবাহ না করে পুনরায় একই স্বামীকে বিবাহ করতে পারবে।

৬. যে কোন ধরণের তালাক রেজিষ্টেশনের ক্ষেত্রে নিকাহ রেজিষ্ট্রার বা কাজী সাহেবকে ২০০ (দুই শত) টাকা ফি প্রদান করে তালাক রেজিস্ট্রী করতে হবে।

→নোটিশ ছাড়া তালাক দিলে শাস্তি

ধারা – ৭(২) অনুযায়ী নোটিশ ছাড়া তালাক দিলে এক বৎসর পর্যন্ত বিনাশ্রম কারাদন্ড অথবা দশ হাজার টাকা পর্যন্ত জরিমানা অথবা উভয় প্রকার শাস্তি হবে।

স্ত্রী তিন ভাবে স্বামীর কাছ থেকে বিচ্ছেদ চাইতে পারে।

১. তালাক-ই-তৌফিজ,
২. খুলা,
৩. আদালতের মাধ্যমে বিচ্ছেদ।

→তালাক-ই-তৌফিজ

নিকাহনামার ১৮ নং ঘরে স্বামী যদি স্ত্রীকে তালাক প্রদানের ক্ষমতা অর্পণ করে থাকে, সে ক্ষমতার বলে স্ত্রী যদি স্বামীর কাছ থেকে বিচ্ছেদ চায় তাহলে সে বিচ্ছেদকে তালাক-ই- তৌফিজ বলে।

→খুলা

স্বামী এবং স্ত্রীর আলোচনা সাপেক্ষে নিজেদের সমঝোতার মাধ্যমে যে বিচ্ছেদ হয় তাকে ‘খুলা’ বিচ্ছেদ বলে, তবে স্বামীকে ‘খুলা’ বিচ্ছেদে রাজী করানোর দায়িত্ব হচ্ছে স্ত্রীর (প্রয়োজনে কোন কিছুর বিনিময়ে)। এ ক্ষেত্রে স্বামী স্ত্রীকে ইদ্দত কালীন ও গর্ভস্থ সন্তানের ভরণপোষণ দিতে বাধ্য।

→আদালতের মাধ্যমে বিচ্ছেদ

তালাক-ই-তৌফিজ ও খুলার মাধ্যমে স্ত্রী যদি বিচ্ছেদ না নিতে পারে এবং স্ত্রী যদি বিচ্ছেদ নেওয়া একান্ত প্রয়োজন মনে করে তাহলে ১৯৩৯ সালের মুসলিম বিবাহ বিচ্ছেদ আইনে অত্যন্ত স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে কি কি কারণে একজন স্ত্রী আদালতে বিয়ে বিচ্ছেদের আবেদন করতে পারবে। কারনগুলো হলোঃ

১. চার বৎসর পর্যন্ত স্বামী নিরুদ্দেশ থাকলে।

২. দুই বৎসর স্বামী স্ত্রীর খোরপোষ দিতে ব্যর্থ হলে।

৩. স্বামীর সাত বৎসর কিংবা তার চেয়েও বেশী কারা দন্ড হলে।

৪. স্বামী কোন যুক্তিসংগত কারণ ব্যতীত তিন বছর যাবৎ দাম্পত্য দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হলে।

৫. বিয়ের সময় পুরুষত্বহীন থাকলে এবং তা মামলা দায়ের করা পর্যন্ত বজায় থাকলে।

৬. স্বামী দুই বৎসর ধরে পাগল থাকলে অথবা কুষ্ঠ ব্যাধিতে বা মারাত্মক যৌন ব্যাধিতে আক্রান্ত থাকলে।

৭. বিবাহ অস্বীকার করলে। কোন মেয়ের বাবা বা অভিভাবক যদি ১৮ বছর বয়স হওয়ার আগে মেয়ের বিয়ে দেন, তা হলে মেয়েটির ১৯ বছর হওয়ার আগে বিয়ে অস্বীকার করে বিয়ে ভেঙ্গে দিতে পারে, তবে যদি মেয়েটির স্বামীর সঙ্গে দাম্পত্য সম্পর্ক (সহবাস) স্থাপিত না হয়ে থাকে তখনি কোন বিয়ে অস্বীকার করে আদালতে বিচ্ছেদের ডিক্রি চাইতে পারে।

৮. স্বামী ১৯৬১ সনের মুসলিম পারিবারিক আইনের বিধান লঙ্ঘন করে একাধিক স্ত্রী গ্রহণ করলে।

৯. স্বামীর নিষ্ঠুরতার কারণে।

→আদালত স্বীকৃত নিষ্ঠুর ব্যবহার সমূহ:

ক) অভ্যাসগত ভাবে স্ত্রীকে আঘাত করলে বা নিষ্ঠুর আচরণ করলে, উক্ত আচরণ দৈহিক পীড়নের পর্যায়ে না পড়লেও, তার জীবন শোচনীয় করে তুলেছে এমন হলে।

খ) স্বামী খারাপ মেয়ের সাথে জীবন যাপন করলে।

গ) স্ত্রীকে অনৈতিক জীবন যাপনে বাধ্য করলে।

ঘ) স্ত্রীর সম্পত্তি নষ্ট করলে।

ঙ) স্ত্রীকে ধর্মপালনে বাধা দিলে।

চ) একাধিক স্ত্রী থাকলে সকলের সাথে সমান ব্যবহার না করলে।

ছ) এছাড়া অন্য যে কোন কারণে (যে সকল কারণে মুসলিম আইনে বিয়ের চুক্তি ভঙ্গ করা হয়)।

আদালতে উপরিউক্ত অভিযোগ প্রমাণের দায়িত্ব স্ত্রীর। অভিযোগ প্রমাণ সাপেক্ষে স্ত্রী বিবাহ-বিচ্ছেদের পক্ষে ডিক্রি পেতে পারে, আদালত ডিক্রি দেবার পর সাত দিনের মধ্যে একটি সত্যায়িত কপি আদালতের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট চেয়ারম্যানের কাছে পাঠাবে। চেয়ারম্যান উক্ত নোটিসকে তালাক সংক্রান্ত নোটিস হিসেবে গণ্য করে আইনানুযায়ী পদক্ষেপ নিবে এবং চেয়ারম্যান যেদিন নোটিশ পাবে সে দিন থেকে ঠিক নব্বই দিন পর তালাক চূড়ান্ত ভাবে কার্যকর হবে।



♦হিন্দু আইনে বিবাহবিচ্ছেদ

বিবাহ বিচ্ছেদের ধারণা সাধারণভাবে গৃহীত বা অনুমোদিত হলেও হিন্দু আইন অনুযায়ী স্বীকৃত নয়। হিন্দু সমাজে বিবাহকে দেখা হয় স্বামী ও স্ত্রীর ধর্মীয় কর্তব্য সম্পাদনের উদ্দেশ্যে পবিত্র মিলন হিসেবে। হিন্দু ধর্মদর্শন বৈবাহিক সম্পর্ককে 'অবিচ্ছেদ্য সম্পর্ক' হিসেবে গণ্য করে। ঋষি মনু বিশ্বাস করতেন যে, স্ত্রীর কর্তব্য এমনকি মৃত্যুর পরও চলতে থাকে। তাই তার কখনোই দ্বিতীয় স্বামী থাকতে পারে না।
কারণ, হিন্দু পুরাণতত্ত্ব অনুযায়ী বিবাহের মধ্য দিয়ে স্বামী ও স্ত্রীর মাঝে অবিচ্ছেদ্য সম্পর্ক তৈরি হয়। এ কারণেই হিন্দু প্রথা অনুযায়ী বিবাহ বিচ্ছেদ স্বীকৃত না হলে কোনো পক্ষই একে অন্যকে ডিভোর্স দিতে পারে না।

♣হিন্দু মতবাদের দায়ভাগ আইনে (যা বাংলাদেশে প্রচলিত) ডিভোর্স স্বীকৃত নয়। যদিও মিতাক্ষরা আইনে ডিভোর্স বেশ কিছু ক্ষেত্রে স্বীকৃতি পেয়েছে।

তবে ভারতে ১৯৫৫ সালের হিন্দু বিবাহ আইনে কতিপয় বিশেষ ক্ষেত্রে আনীত অভিযোগ প্রমাণ সাপেক্ষে বিবাহবিচ্ছেদ সম্ভব হলেও বাংলাদেশে এ আইন প্রযোজ্য নয়।

আইনটি পাসের ফলে অবিচ্ছেদ্য সম্পর্ক হিসেবে বিবাহের ধারণা পুরোপুরি বিলুপ্ত হয় এবং তা মুসলিম আইনের মতোই আইনসিদ্ধ চুক্তিতে রূপান্তরিত হয়।

আইনটিতে বিবাহ বিচ্ছেদের অংশটি সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ। ধারা ১৩(১)-এর অধীনে স্ত্রী বা স্বামী উভয়কেই বিবাহবিচ্ছেদ ঘটানোর অধিকার দেয়া হয়েছে। স্বামী ও স্ত্রীর যে কেউ আদালতে বিবাহ বিচ্ছেদের আজ্ঞপ্তি (ডিক্রি অন ডিভোর্স) পাওয়ার জন্য আবেদন (পিটিশন) দাখিল করতে পারেন। আইন অনুযায়ী বেশ কিছু কারণে বিবাহ বিচ্ছেদের আবেদন করা যায়। যেমন-

১) স্বামী যদি তার স্ত্রী ব্যতীত অন্য কোনো নারীর সঙ্গে স্ত্রীর ইচ্ছার বিরুদ্ধে সহবাস করে থাকে।
২) আবেদনকারী যদি নিষ্ঠুরতার শিকার হয় কিংবা আবেদনকারীকে যদি দরখাস্ত দাখিলের পর থেকে টানা দুই বছর ত্যাগ করা হয়।
৩) স্বামী-স্ত্রী দুজনের কেউ যদি অন্য ধর্ম গ্রহণের মাধ্যমে নিজ ধর্ম ত্যাগ করে।
৪) দুই পক্ষের কেউ যদি দুরারোগ্য মানসিক ব্যাধিতে আক্রান্ত হয়; যা কখনোই ভালো হওয়ার নয়।
৫) কেউ যদি কুষ্ঠের মতো দুরারোগ্য কিংবা সংক্রামক ব্যাধিতে আক্রান্ত হয়।
৬) স্বামী-স্ত্রীর কাউকে যদি সাত বছর ধরে খুঁজে পাওয়া না যায়। তখন সংক্ষুব্ধ পক্ষ বিবাহ বিচ্ছেদের জন্যে আদালতের দ্বারস্থ হতে পারেন।
৭) শুধু তাই নয়, ওই আইনের ধারা ১৩(২)(৪) অনুযায়ী একজন হিন্দু নারী বিবাহ বিচ্ছেদের জন্য পিটিশন দায়ের করতে পারেন, যেখানে তার ১৫ বছর পূর্ণ হওয়ার আগেই বিবাহ সম্পন্ন হয়েছে এবং সে ১৫ বছর পূর্ণ হওয়ার পর বিবাহ বাতিল করেছে।
৮) তবে ১৮ বছর পূর্ণ হবার পূর্বেই এ ধরনের আবেদন করতে হবে।

♣হিন্দু অধ্যুষিত রাষ্ট্র নেপাল ১৯১০ সালে মূলিকি আইন প্রণয়নের মাধ্যমে পুরুষদের পরোক্ষভাবে বিবাহবিচ্ছেদ ঘটানো আইনগত স্বীকৃতি দিয়েছে। পরবর্তীতে আরো দুটি পৃথক আইন প্রণয়নের মাধ্যমে নারীদেরকেও ওই অধিকার দেয়া হয়েছে।

★বাংলাদেশে প্রচলিত দায়ভাগ আইন অনুসারে ডিভোর্স সম্ভব নয়। কারণ হিন্দু সনাতন আইনে ডিভোর্সের কোনো প্রচলন নেই। কেবল একটি ক্ষেত্রে স্ত্রী তার সতিত্ব হারালে স্বামী থেকে পৃথক বসবাসের প্রশ্ন আসে।

স্ত্রী যদি একান্তই মনে করেন যে, স্বামীর সঙ্গে বসবাস করা দুর্বিসহ, তা হলে তিনি পিত্রালয়ে বা অন্য কোনো নিরাপদ স্থানে পৃথক থাকতে পারেন। তবে এ ক্ষেত্রে স্ত্রী স্বামীর কাছ থেকে ভরণপোষণ পাওয়ার অধিকারী হন। ১৯৪৬ সালে বিবাহিত নারীর পৃথক বাসস্থান এবং ভরণপোষণ আইন পাস হওয়ার পর, এ আইন অনুযায়ী- এক স্ত্রীর বর্তমানে স্বামী অন্য স্ত্রী গ্রহণ করলে স্ত্রী স্বামীর কাছ থেকে পৃথক থাকলেও স্ত্রীকে ভরণপোষণ দিতে স্বামী বাধ্য থাকবেন।

♣কিন্তু স্বামী যদি অসৎ চরিত্রের হয় তাহলে কী ঘটবে?

এক্ষেত্রে নারীদের জন্য একটি আইনি দিক উন্মুক্ত আছে। বাংলাদেশে প্রচলিত ডিভোর্স আইন, ১৮৬৯-এর ধারা ১০-এ নারীদের ক্ষমতায়ন করা হয়েছে, যেখানে কিছু যুক্তিসঙ্গত কারণে একজন স্ত্রী ডিসট্রিক্ট কোর্ট অথবা হাইকোর্ট বিভাগে বিবাহবিচ্ছেদের পিটিশন (আবেদন)দাখিল করতে পারেন।
যেমন- যদি কোনো স্বামী ব্যভিচার, ধর্ষণ, ব্যভিচারের মাধ্যমে নতুন বিবাহ, বিকৃত যৌনাচার, একই সময় দুই স্ত্রীর সঙ্গে বসবাস, পশুপ্রবৃত্তি ও ধর্মত্যাগ করে থাকে তাহলেই স্ত্রী আদালতে দরখাস্ত দিতে পারে।

তারপরও বাংলাদেশের আদালতগুলোতে উল্লেখযোগ্য প্রতিষ্ঠিত বিচারিক কোনো নজির ও নীতি নেই, যেখানে আদালত তার ন্যায়পরায়নতা, সুবিচার ও বিবেচনাপ্রসূত জ্ঞানের মাধ্যমে হিন্দু বিবাহবিচ্ছেদ সম্পর্কিত নীতি প্রতিষ্ঠিত করতে পেরেছে।
তাহলে প্রশ্ন জাগে, কেন হিন্দু নারীরা তাদের অধিকারের ব্যাপারে সোচ্চার নয়!
বিচ্ছেদের ক্ষেত্রে বয়সের বিষয়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সম্প্রতি ভারতে বিচ্ছেদ হয়ে যাওয়া হিন্দু পুরুষ ও নারীদের মাঝে চালানো এক গবেষণায় দেখা গেছে, এদের ৩৩ শতাংশ পুরুষ ও ৬০ শতাংশ নারীর বিবাহ সম্পন্ন হয়েছিল ২০ বছর বয়স পূর্ণ হওয়ার আগেই।

♣বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে বিবাহবিচ্ছেদের ব্যাপারে করণীয় কী?

★প্রথমত, বিবাহ বিচ্ছেদের মূলে যেসব কারণ কাজ করে থাকে সেগুলোর মুখাপেক্ষী যাতে না হতে হয়, সেদিকে সতর্ক দৃষ্টি রাখতে হবে। বিচ্ছেদ কখনোই সুখ আনে না, এর ফলে জীবনে গুরুত্বপূর্ণ একটি অধ্যায়ের অনাকাঙ্ক্ষিত পরিসমাপ্তি ঘটে।
এক্ষেত্রে বিবাহের পক্ষদ্বয়ের মধ্যে পারস্পরিক যোগাযোগ, সহমর্মিতা, আন্তরিকতা ও আস্থা রাখা জরুরি।

★দ্বিতীয়ত, যথাযথ আইন প্রণয়নের মাধ্যমে নারী ও পুরুষকে বিবাহবিচ্ছেদের অধিকার দিতে হবে।
প্রশ্ন জাগে যে, হিন্দু রীতি অনুযায়ী বিবাহ যেখানে অবিচ্ছেদ্য বন্ধন, সেখানে আইনের মাধ্যমে এই অধিকার প্রদান করা হলে হিন্দু দর্শনের সঙ্গে সংঘর্ষ তৈরি হবে কি না?
এর উত্তরে বলা যায়, যখন কোনো আচরণ নির্যাতনের শামিল হয় তখন এই অধিকারের চর্চা অমূলক হবে না।

★তৃতীয়ত, আইন প্রনয়নের ক্ষেত্রে আইনগত উদ্দেশ্য ও আইনগত ইচ্ছা এই দুটি বিষয় পরিষ্কার করা দরকার। পরিশেষে মানবিক আইন বিজ্ঞান ও দর্শন (জুরিসপ্রুডেন্স) এর সঙ্গে সঙ্গতি রেখে, শুধু একটি সমপ্রদায়ের নির্দিষ্ট কিছু মানুষের জন্য নয় বরং সমাজে প্রত্যেকটি মানুষের অধিকারের প্রতি সম্মান দেখানোর জন্যে যুগোপযোগী আইন প্রণয়ন এবং তার সঙ্গে সঙ্গে প্রণীত আইনের যথাযথ বাস্তবায়নই কাম্য।

বিঃদ্রঃ বর্তমান বাংলাদেশে প্রত্যেকটি জেলায়/অঞ্চলে একজন করে হিন্দু বিবাহ রেজিষ্ট্রার রয়েছেন এবং প্রয়োজন প্রেক্ষিত কিছু কিছু জেলায়, পৌরসভায়ও একজন করে নিয়োগ নেওয়া হয়েছে। তাই আপনারা বিবাহ রেজিষ্টেশন এবং বিচ্ছেদ সহ সকল প্রকার হিন্দু বিবাহ সংক্রান্ত সহায়তা এই রেজিষ্ট্রারের কাছ থেকে পাবেন।



♦খ্রিষ্টান ধর্মে বিবাহবিচ্ছেদ

খ্রিষ্টানদের জন্য বিবাহবিচ্ছেদের ব্যাপারে আমাদের দেশে রাষ্ট্রীয় আইন রয়েছে, তা ব্রিটিশ কর্তৃক প্রবর্তিত, যা ১৮৬৯ সালের ক্রিশ্চিয়ান ডিভোর্স অ্যাক্ট নামে পরিচিত। কিন্তু এ আইনের কোনো ক্যাথলিক খৃষ্টান বিবাহবিচ্ছেদ ঘটালে তা গ্রহণীয় নয়। প্রোটেষ্ট্যান্ট খ্রীষ্টান সম্প্রদায় বিভিন্ন বিষয়ের ওপর ভিত্তি করে বৈধ বিয়ের বিচ্ছেদ মেনে নেয়। তবে, বিশেষ বিবেচনায় অথবা চার্চের হস্তক্ষেপে কিছু ক্ষেত্রে ক্যাথলিক সম্প্রদায়ের মধ্যে বিবাহবিচ্ছেদ হতে দেখা যায়।

উল্লেখ্য, ১৮৬৯ সালের ক্রিশ্চিয়ান ডিভোর্স অ্যাক্টের বিবাহবিচ্ছেদের ব্যাপারে নারীকে অধিকার প্রদান করা হয়েছে। বিবাহবিচ্ছেদের ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে, স্ত্রীর ক্ষমতা ও অধিকারকে স্বামীর পাশাপাশি সমুন্নত রাখা হয়েছে এবং স্ত্রীকেও স্বামীর পাশাপাশি সমতা দেওয়ার চেষ্টা করা হয়।


★একটি সভ্য সংস্কৃতিতে কখনোই বিবাহবিচ্ছেদের যথেচ্ছা ব্যবহার কাম্য নয়। কারণ তা সমাজে অস্থিরতা, সামাজিক ব্যবচ্ছেদ বা বিচ্যুতি ও প্রতিশোধপরায়ণতা বাড়ায়।


(ছবিঃ ইন্টারনেট)

মন্তব্য ১০ টি রেটিং +৩/-০

মন্তব্য (১০) মন্তব্য লিখুন

১| ১৭ ই অক্টোবর, ২০১৬ ভোর ৪:১৩

স্বপ্ন কুহক বলেছেন: সুন্দর পোষ্ট । ধন্যবাদ।

১৭ ই অক্টোবর, ২০১৬ সকাল ১০:৩০

মার্কো পোলো বলেছেন:
আপনাকেও অসংখ্য ধন্যবাদ।

২| ১৭ ই অক্টোবর, ২০১৬ ভোর ৫:৩৩

রক্তিম দিগন্ত বলেছেন:
ধন্যবাদ পোস্টটার জন্য।

কিছু কিছু পয়েন্ট কাজে লাগবে। এগুলো নিশ্চিত হবার জন্যই আপনার কাছে পোস্টের দাবি তুলেছিলাম।

১৭ ই অক্টোবর, ২০১৬ সকাল ১০:৩৪

মার্কো পোলো বলেছেন:
আপনাকেও অসংখ্য ধন্যবাদ। :)

৩| ১৭ ই অক্টোবর, ২০১৬ সকাল ৯:২৬

বিলিয়ার রহমান বলেছেন: সুন্দর পোষ্ট।:)

১৭ ই অক্টোবর, ২০১৬ সকাল ১০:৩৬

মার্কো পোলো বলেছেন:
ধন্যবাদ ভাই। আপনার সাড়া না পেলে অপূর্ণতা থেকে যায়। :)

৪| ১৭ ই অক্টোবর, ২০১৬ সকাল ১১:১৩

শোভ বলেছেন: কোরআনে স্ত্রী তার স্বামীকে তালাক ডেয়ার কোন বিধান নেই , থাকলে জানতে চাই

১৭ ই অক্টোবর, ২০১৬ বিকাল ৩:১৪

মার্কো পোলো বলেছেন:
কোরআনে স্ত্রী কতৃক তালাক দেয়ার বিধান নেই। ১৯৬১ সালের মুসলিম পারিবারিক আইন অধ্যাদেশ অনুযায়ী স্ত্রীকে তালাক দেয়ার ক্ষমতা প্রদান করা হয়েছে। যা ডেলিগেটেড পাওয়ার নামে পরিচিত।
নিকাহনামার ১৮ নং ঘরে স্ত্রীকে এ ক্ষমতা প্রদান করা হয়ে থাকে। আর স্বামী যদি স্ত্রীকে তালাক প্রদানের ক্ষমতা অর্পণ করে থাকে, সে ক্ষমতার বলে স্ত্রী যদি স্বামীর কাছ থেকে বিচ্ছেদ চায় তাহলে সে বিচ্ছেদকে তালাক-ই- তৌফিজ বলে।
এ ১৮ নং ঘরে যদি স্বামী তার স্ত্রীকে তালাক প্রদানের ক্ষমতা প্রদান করে তাহলে স্ত্রী তার স্বামীকে তালাক দিতে পারে।
মূলত স্বামী কতৃক স্ত্রীকে নির্যাতন ও পারিবারিক সুরক্ষা প্রদানকল্পে এ ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে।

ধন্যবাদ।

৫| ১৮ ই অক্টোবর, ২০১৬ রাত ৮:১৮

শোভ বলেছেন: ১৯৬১ সালের মুসলিম পারিবারিক আইন অধ্যাদেশ অনুযায়ী স্ত্রীকে তালাক দেয়ার ক্ষমতা প্রদান করা হয়েছে। আমার কথা হলো কোরআনতো দেয় নাই । ওখানে শুধু পরুষের কথা বলা হয়েছে । আমার মাথা এখানেই নস্ট । কেন এমন হলো ?

১৮ ই অক্টোবর, ২০১৬ রাত ৮:২৯

মার্কো পোলো বলেছেন:
কোরআনে অনেক বিষয়ই নেই, কিন্তু হাদিসে যেগুলো খুঁজে পাওয়া যায়। আমি জানি না স্ত্রীকে এ ক্ষমতা দেওয়া ঠিক হয়েছে কিনা। তবে পুরুষকে একতরফা তালাক দেওয়ার ক্ষমতা, স্ত্রীকে নির্যাতন এসব কিন্তু ভাবার বিষয়।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.