![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
বাংলাদেশের ভিবিন্ন আঞ্চলিক ভাষার প্রতি বরাবরই আমার অন্যরকম একটা টান এবং আগ্রহ। ভিবিন্ন এলাকায় ঘুরতে গেলেই আমি তাদের ভাষা এবং সংস্কৃতি সম্পর্কে জানার চেষ্টা করি। বাংলাদেশের বিশেষত চট্টগ্রাম, রংপুর, খুলনা, বরিশাল,ঢাকা, ময়মনসিংহ, রাজাশাহী ও সিলেটে অঞ্চলে রয়েছে আলাদা আলাদা আঞ্চলিক ভাষা ও সংস্কৃতি। তবে এর মধ্যে সিলেটের ভাষা এবং চট্টগ্রামের ভাষা আমার কাছে সবচেয়ে ব্যাতিক্রম লেগেছে। সেই আগ্রহ থেকে সিলেটি ভাষা সম্পর্কে পড়া শুরু করি। যার সারমর্ম এরূপ,
সিলেটি ভাষা একটি পরিপূর্ন সাবলীল ভাষা যা লিখা হয় নাগরী লিপি দিয়ে। সিলেটি ভাষা যা অনেকে কেবল সিলেটিদের ভাষা বলে মনে করেন আসলে সিলেট ছাড়াও আসামের কাছাড় জেলা, মেঘালয় ও ত্রিপুরা রাজ্যের অধিকাংশ মানুষের মুখের ভাষা সিলেটি তাছাড়া প্রবাসী বিরাট এক অংশ তো আছেই ।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে সিলেটি ভাষা কি বাংলারই বিকৃত রূপ না সম্পূর্ন পৃথক একটি ভাষা এ নিয়ে অনেক বিতর্ক রয়েছে আমি কেবল আমার লব্দ জ্ঞান টুকু তুলে ধরব আমি সিলেটী ভাষাকে আলদা একটি ভাষা বলব এই জন্য যে, সিলেটি ভাষাই একমাত্র আঞ্ছলিক ভাষা যে ভাষার সম্পূর্ন আলাদা ব্যাকরন ও অক্ষর লিপি রয়েছে যার নাম নাগরী লিপি যেখানে পৃথিবীতে এমন অনেক দেশ রয়েছে যাদের নিজস্ব লিপি নেই যেমন মালয়শিয়ার ভাষা মালয় যা শুধুমাত্র কথ্যভাষা যার কোন নিজস্ব অক্ষরলিপি নেই,তারা ল্যাতিন অক্ষর লিপি্ রুমি ও আরাবিক অক্ষর লিপি জুয়ালি। ভাষা গবেষক সৈয়দ মোস্তফা কামাল ও অধ্যাপক মুহম্মদ আসাদ্দর আলীর মতে “জটিল সংস্কৃত প্রধান বাংলা বর্ণমালার বিকল্প লিপি হিসেবে ‘সিলটী নাগরী’ লিপির উদ্ভাবন হয়েছিল খ্রিষ্টীয় চতুর্দশ শতাব্দির মাঝামাঝি সময়ে”। গবেষকদের ধারণা, ইসলাম প্রচারক সুফী দরবেশ এবং স্থানীয় অধিবাসীদের মনের ভাব বিনিময়ের সুবিধার জন্যে নাগরী লিপির উদ্ভাবন হয়েছিল।ডক্টর সুনীতিকুমার চট্রোপাধ্যায়ও “খৃষ্টীয় চতুর্দশ শতাব্দীকে সিলেটে এই লিপির প্রচলনকাল বলে অনুমান করেন”।আবার কেউ কেউ হযরত শাহজালালের সাথে এই লিপির সিলেটে আগমনেরও ধারনা করে থাকেন।অধ্যাপক শিব লাহিরীর মতে “এ লিপি উর্দুলিপির থেকেও অনেক প্রাচীন ৩ টি অক্ষর ছারা সেখানে কোন যুক্তাক্ষর নেই।সিলেটি ভাষার লিখিতরূপ প্রদানকারী এই নাগরী লিপির মাত্র ৩২টি অক্ষর বা বর্ণ রয়েছে। বর্ণগুলো হচ্ছে আ ই উ এ ও ক খ গ ঘ চ ছ জ ঝ ট ঠ ড ঢ ত থ দ ধ ন প ফ ব ভ ম র ল ড় শ হ”। অনেকের মতে সিলেটী নাগরী লিপির ব্যবহার শুধু মুসলমানদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল। নাগরী সাহিত্যে ছাদেক আলী সত্তাধিক জনপ্রিয় কবি। তিনি ১৭৯৮ সালে কুলাউড়ায় জন্ম গ্রহণ করেন। ইসলাম ধর্ম গ্রহণের আগে তার নাম ছিল গৌর কিশোর সেন। ১৮২৩ সালে তিনি মৌলভীবাজারের মুনসেফ ছিলেন।নাগরী পুঁথি রচয়িতাদের মধ্যে এ পরযন্ত মুন্সী ইরফান আলী,দৈখুরা মুন্সী, আব্দুল ওহাব চৌধুরী, আমান উল্যা, ওয়াজি উল্যা, শাহ হরমুজ আলী, হাজী ইয়াছিনসহ ৫৬ জনের পরিচিতি পাওয়া গেছে।তাছারা ঐ সময়ে জনশ্রুতি আছে যে,নাগরি লিপি মাত্র আড়াই দিনে শেখা যায়।তাই এ ভাষা আঠার ও উনিশ শতকে সিলেটের বাইরে কিশোরগঞ্জ, নেত্রকোণা, ময়মনসিংহ ও কাছাড় অঞ্চলে প্রচার ও প্রসার লাভ করেছিল।
নাগরী হরফে লিখা এক বিরাট সাহিত্য সম্ভার রয়েছে, ভিন্ন ভিন্ন সুত্র থেকে এ পর্যন্ত ‘সিলটী নাগরী হরফ’-এ লেখা ১৪০ খানা গ্রন্থের সন্ধান পাওয়া গেছে। এর মধ্যে ৮৮ টি প্রকাশিত। এসবের অনেক বই সিলেট কেন্দ্রীয় মুসলিম সাহিত্য সংসদে এখন পাওয়া যায়।
সিলেটি ভাষা নিয়ে দেশ- বিদেশে চলছে গবেষণা ।সিলেটি ভাষার উপর এ পর্যন্ত বেশ ক’জন পিইএচডি ডিগ্রী অর্জন করেছেন। এর মধ্যে বৃটিশ নাগরিকও আছেন।বিদেশীদের মধ্যে ব্রিটিনের সোয়াস বিশ্ববিদ্যালয় থেকে লয়েড উইলিয়াম সিলেটি ভাষার উপর পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন এছারাও এই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন রুপা চক্রবর্তী ও মতিয়ার চৌধুরী।শুধুমাত্র তাই নয় ‘সিলেটী নাগরী” লিপি, ভাষা ও সাহিত্য’ নিয়ে গবেষণার পর জনাব গোলাম কাদির ১৯৮৩ খৃষ্টাব্দে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেছেন।তাছারও ভারতের গোহাটি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ‘সিলেটী নাগরী” লিপি, ভাষা ও সাহিত্য’ নিয়ে পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেছেন ড.আব্দুল মুছাব্বির ভূঁইয়া ও ড. মোঃ সাদিক।
নিম্নে সিলেটি ভাষার কিছু প্রবাদ ও প্রবচন দেয়া হলঃ
আইতে জাইতে পচার বাপ, আম পাকলে মৌয়া– অর্থাৎ এমনিতে আমাকে ডাকে পচার বাপ বলে, আর আমার কাছে কোনো প্রত্যাশা নিয়ে এলে বলে মেশো।
জমানারে ধরছে ভুতে, যুবা নারীয়ে চাটিত মুতে– অর্থাৎ সবকিছু উলট পালট হয়ে গেছে।
চিনেনা ভুবির গুড়ি বিয়া করতে চায় মৌলবির পুড়ি– কোন কাজের নয়, আবার শখ আছে।
আন্দুদুন্দু পলো বায়, আল্লায় দিলে মাছ পায়– বুড়বাকের মতো কাজ করা, ভাগ্যে থাকলে ফল হয় নয়তো বৃথা পরিশ্রম করে।
চেংও উজাইন, ব্যাংও উজাইন, কৈয়া পুটি তাইনও উজাইন– সবার দেখাদেখি এগিয়ে যাওয়া।
যার পড়ে গাই উড়ো (গরু কাদায় পড়েছে) তাইন ধরইন লেঞ্জো মুড় (লেজ আর মাথা)– যার বিপদ তিনিই সবচেয়ে বেশি সচেষ্ট।
যাচতে জামাই খাইন না, খুজতে জামাই পাইন না– সাধাসাধি করা হল গ্রহণ করলেন না, এখন প্রার্থনা করেও পাচ্ছেন না।
অবাগা যেবায় চায়, সাগর হুকাইয়া যায়– অভাগা যেদিকে যায় সাগর শুকিয়ে জায়
হাই মরলো হাঞ্জা বেলা, কান্দি উঠল পতাবেলা– সময় মতো কোন প্রতিক্রিয়া নেই, অসময়ে তর্জন গর্জন।
সিলেটি নাগরী লিপি আজ প্রায় বিলুপ্ত এর ব্যবহার আজ আর লক্ষ্য করা যায় না।যেরকম ভাবে চলছে হয়তো তা একসময় সম্পূর্ণ হারিয়ে যাবে। তবুও ইহা সিলেটিদের তথা একটি জাতিগোষ্ঠির ভাষার নিদর্শন।
২| ২৭ শে মার্চ, ২০১৭ বিকাল ৫:৩১
মোঃ নাদিরুজ্জামান বলেছেন: ভাষা সাধারণত এভাবেই এক স্থান থেকে অন্য স্থানে পরিবর্তিত হয়ে উদ্ভভ হয়। যেভাবে বাংলা ভাষা হিন্দি ভাষা মালয় সহ সব ভাষার উদ্ভব হয়েছে।
©somewhere in net ltd.
১|
২৭ শে মার্চ, ২০১৭ সকাল ১১:৫৮
চাঁদগাজী বলেছেন:
আন্চলিক ভাষা বলতে কিছু নেই, এরা অশিক্ষার কারণে ভুল বাংলা বলে আসছেন।