নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সুরঞ্জনা, বলো নাকো কথা ঐ যুবকের সাথে.. :)

একজন বোকা মানুষ

একজন বোকা মানুষ › বিস্তারিত পোস্টঃ

সাজু মন্ডল এবং এক সন্ধ্যা ।

০৭ ই জুন, ২০১৩ রাত ১২:১৪

"আমার আর হরতালে কি যায় আসে?" বিড়বিড় করে বললেন সাজু মন্ডল।



হাতে তখনো ভাঙা হেডলাইটটা.. যেনো এখনো বিশ্বাস করতে পারছেন না আধা ঘন্টার মাঝে কি হয়ে গেলো ..

ব্যাটারী ড্রীভেন অটোরিক্সায় যখন উঠলাম ময়মনসিং শহরের সি.কে.ঘোষ রোড থেকে, সন্ধে তখন ছুইছুই । রেল ক্রসিং পার হতেই হৈহৈ করে ছুটে এলো এক দল লোক । একটু দুরে ত্রিশালগামী মিনিবাস একটা পুড়ছিলো, পেছনের গাড়িগুলো ঘুড়ে পালালো, আমাদের অটোটা আটকে গেলো। আধবুড়ো ড্রাইভার বিহবল হয়ে শুধু বলতে লাগলো, বাবারা বাবারা.... পিতৃসম্ব্ধনে উত্সাহিত হয়েই কিনা যুবকদল তাকে শুদ্ধ গাড়ি ভাঙ্গতে শুরু করলো। টেনে সরিয়ে আনলাম তাকে, মাথায় পানি ঢেলে বসালাম চা দোকানির বেন্চে। ১০ মিনিটেই গাড়িটার দফারফা সম্পন্ন হোলো । পুলিশ এলো, পিকেটাররা পালাল্. কি করে একটা হেডলাইট ছিটকে এলো ড্রাইভার চাচার কাছে, যার নাম বললেন সাজু মন্ডল ।



বাড়ি ছিলো কিশোরগন্জ, ভূমিহীন শ্রমিক হিসেবে ময়মনসিংহ শহরে আসেন।



"বাড়িতে কে কে আছে?"

"বউ আর মাইয়া একটা। কেলাস এইট পাস দিলো।" খসখসে গলায় বলল সাজু মন্ডল...।

জমার রিক্সা চালানো দিয়ে শুরু. পরিশ্রম করতে জানেন তাই কয়েক বছরে নিজের একটা রিক্সা হোলো. আরো কয়েক বছরে দুইটা....।

মেয়ে বড় হচ্ছে , আয় বাড়ানো দরকার তাই ঝুকি একটা নিয়েই নিলেন দুই মাস আগে । রিক্সা দুটো বিক্রি করে দিলেন আর লোন নিলেন একটা এনজিও থেকে(সাজু মন্ডলদের সরকার ঋন দেয় না) সব মিলিয়ে এক লাখ চল্লিশ হাজার টাকায় অটোটা কিনলেন । তেল খরচ নাই, যা আয় হবে তা দিয়ে বাসা ভাড়া দেবেন আর সাপ্তাহিক ২৫০ টাকা কিস্তি, কিছুদিন পরেই ঋন শোধ হবে আর ২-১ বছরে হয়তো এক টুকরো জমিও কিনতে পারবেন জীবনে ১ম বারের মত ।

অনেকেই জানেন না যে হরতালে নিবন্ধিত গণ-পরিবহনগুলো ভাংচুর হলে মালিকরা সরকারের কাছ থেকে ভর্তুকি পায় (থ্যাংস টু শাহজাহান সিরাজ ), ভালো অংকেরই পায়। কিন্তু এই ভর্তুকি কেবলই "নিবন্ধিত্" গণ-পরিবহন এর জন্যে। অটোগুলোকে সরকার এখনো নিবন্ধন করেনি , এর মালিকরা তাই ভর্তুকি পাবেনা........

হাতের লাইটটার দিকে তখনো তিনি তাকিয়ে ছিলেন্। চাওয়ালার দোকানের টিভিতে তখন বিএনপির পরের দিনের হরতালের খবর । হঠাৎ বেজে উঠলো সাজু মন্ডলের সস্তা সেলফোনটা।

"মা রে, আমার সব শেষ......" ১ম বারের মত ভেংগে পরলেন তিনি, চোখে পানি আনলেন সবার ওই ছোট দোকানটায়।

মন্তব্য ৩ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৩) মন্তব্য লিখুন

১| ১১ ই জুন, ২০১৩ ভোর ৫:১০

খেয়া ঘাট বলেছেন: নিপীড়িত সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষের এই দুঃখের শেষ কোথায়????
সরকার যায়, আসে - কিন্তু এসব মানুষের ভাগ্যের কোনো পরিবর্তন হয়না।
সাজু মন্ডলের জন্য খুব দুঃখ পেলাম। বড়ই ব্যর্থ মানুষ , আর কিছুই যে করার নাই।

২| ১১ ই জুন, ২০১৩ সকাল ৮:০৯

একজন বোকা মানুষ বলেছেন: ধন্যবাদ , কিন্তু 'আর কিছুই যে করার নাই' এই কথাটির সাথে কখনই আমি একমত নই । আমার দেশের অধিকাংশ মানুষ খুব সজ্জন , কিন্তু আফসোস তারা কেউই রাজনীতিতে আসাকে রুচিকর মনে করে না। ফাকা জায়গা তাই পূরণ হ​য় আবর্জনায় ।

৩| ১১ ই জুন, ২০১৩ রাত ৮:৪৫

খেয়া ঘাট বলেছেন: রাজনীতিতে আসতে চাইলেও সে পথ বন্ধ করে দেয়া হয়।
আর যারা সজ্জন তারাও কুকুরের সাথে ঘেও ঘেও করতে চায়না। ফলে কুকুররা ঘেও ঘেও করেই যাচ্ছে। আর পাগলামি বেড়ে গেলে কামড় বসিয়ে দিচ্ছে।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.