![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
- বাইসাব , ইট্টু দেইক্কা আহি?
- আচ্ছা, যাও ।
রিক্সায় মিরপুর ১০ থেকে যাচ্ছি পল্লবি । রিক্সাওয়ালা ছফর মিয়া দিন দুনিয়ার ব্যাপক খবর রাখে । সমস্যা সেটা না, সমস্যা হলো সেগুলো সারাহ্মন শেয়ার করাটা । রিক্সায় ওঠা মাত্র হেফাজতে ইসলাম থেকে শুরু হয়ে এখন গোলাম রনির লাথিতে এসে পৌছেছে ।
রাস্তার পাশে মাঝারি একটা জটলা । পকেটমার একজন ধরা পরেছে, আয়োজন করে মারা হচ্ছে তাকে ।
রিক্সা বসে থাকায় আমি ভুপৃষ্ঠ হতে একটু ওপরে, তাই দেখতে পাচ্ছি । পকেটমারটার চেহারা ট্র্যাডিশনাল পকেট মারের মতই, হ্যাঙলা আধমড়া একজন কিশোর , বাটারফ্লাই স্ট্রোক সুইমিং এর মত তার মাথা একবার ভিড়ের ওপরে দেখা যাচ্ছে , আবার ডুবে যাচ্ছে। তাকে ঘিরে আছে বলিষ্ঠ কয়েক জন , এদেরই কারও পিকপকেটিং করেছে কিশোরটা । যারা ঘিরে আছে , মনে হলো তারাই মারছে । বাকিরা উকি ঝুকি দিচ্ছে ।
কারও মনে বোধহয় ঘুনাহ্মরেও এই ভাবনাটা আসে নাই যে পুরো ব্যাপারটাই সাজানো !
দুরে ভীড় দেখা মাত্র ছফর মিয়া উত্তেজিত হয়ে গেলেন । জিনেটিক্যালি, বাঙ্গালী কিছুটা পিপড়া স্বভাবের । কোথাও দুটা পিপড়া দেখা গেলেই কিছুহ্মনের মাঝেই সেখানে রাজ্যের পিপড়া এসে জমা হয় । কোথাও ভীড় করে কাউকে পেটানো হচ্ছে, আশে পাশের লোকজন ছুটে এসে কিছু জিজ্ঞেস না করেই আগে দু ঘা লাগাবে। তারপর হয়তো খোজ করবে, ঘটনা আসলে কি?
রিক্সা সাইড করে ছফর মিয়া ভিড়ে সেধিয়ে গেলেন । আমি আমার অদৃশ্য সিগারেট বের করে তাতে মিথ্যামিথ্যি টান দিতে লাগলাম ।
৫-৬ বছরের এক টোকাই আমাকেস অবাক হয়ে দেখতে লাগলো ।
আমি বললাম , কিরে হাফপ্যান্ট ? বিড়ি খাবি?
- বিড়ি কই?
- এই যে হাতে?
- দেহা যায় না তো !
- বাতাসী বিড়ি, দেখে যায় না এগুলা। খাইলে নে, নাইলে ভাগ ।
সে হাত বাড়িয়ে দিলো। আমি অদৃশ্য সিগারেট বের করে ওর আঙুলের ফাকে দিলাম।কিছুহ্মন অবাক হয়ে আঙুলের দিকে তাকিয়ে রইলো ।তারপর আস্তে আস্তে হাসি ফুটলো মুখে । ঠোটের ফাকে লাগিয়ে ধুমপানের ভঙ্গি করতে করতে ব্যাটা চলে গেলো ।
শিশুদের সেন্স অব হিউমার ঈর্ষনীয় রকমের ভালো থাকে ।
ছফর মিয়া ফেরত আসছে । মুখখানা তিতা তিতা ।
- কি মিয়া, মাইর দিছো তো ঠিক মত ?
- মাইর দিতারি নাই, হেরে যারা ঘিরা রাখছে , মাইর দিতে দিতাছে না। কয় হের উস্তাদ কেডা নাম বাইর করব , যার পকেট মারছে হেয় নাকি সম্বাদিক ।
সাংবাদিকের পকেট বলে কথা, ওস্তাদ ধরে তো টান পরবেই ।
ভীড় করে থাকা জনতা তখনও আশায় আছে , কিছুহ্মনের মাঝেই হয়তো তারাও মার দেয়ার সুযোগ পাবে । দুটো লাথি দিতে পারলেও অপেহ্মা সার্থক ।
সাদা একটা মাইক্রোবাস এসে থামলো ভিড়ের কাছাকাছি । দুজন নামলো ভেতর থেকে । ঘোষনা করলো তারা ডিবির লোক ।
যারা পকেটমার টাকে ধরেছিলো তারা বেশ দ্রুতই রাজি হলো ডিবির কাছে পকেটমারকে সোপর্দ করতে ।
শর্ত হলো তারাও যাবে ডিবি অফিসে ।পকেটমার মহদয়, ডিবির দুজন আর ভীড় থেকে ৪ জন উঠে পরলো গাড়িতে । রাস্তায় জমে থাকে খানিকটা পানি ছিটিয়ে ডিবির মাইক্রোবাস ছুটলো..।
ধুরো হালা , হুদাই টাইম নষ্ট .. গজ গজ করতে করতে ফিরছে আশাহত জনতা । ছফর মিয়া বোধহয় এবার রিক্সা ছাড়বে অবশেষে ।
আরে আমার মানিব্যাগ ? আয় হায় আমার মোবাইল ??
দুই জন একসাথে পকেট চাপড়ে চেচিয়ে উঠলো ।এবার একটা দেখার মত দৃশ্য হলো ।
একটা লাথি মারার আশায় বুভুহ্মের মত দাড়িয়ে থাকা ভীড়টার সবাই আবিষ্কার করলো সবারই মানিব্যাগ কিংবা সেলফোনটা অথবা দুটোই ইতমধ্যে খোয়া গেছে। কিভাবে ঘটলো এটা?
ছফর মিয়া হতভম্ব । কোমড় থেকে তার ফোনটা জড়ানো ছিলো পেচানো লাল তারে , আধখানা কাটা অংশটার দিকে বেচারা বেকুব হয়ে তাকিয়ে আছে ।
ডেকে বললাম ,’ শোনো মিয়া, ঘটনা কি হইলো বলতেছি……… ।‘
অর্গানাইজড ক্রাইমের একটা ইলাসট্রেশান ছিলো এটা ।
৪-৫ জনের একটা গ্রুপ ভান করলো যেনো পকেটমার পেটানো হচ্ছে ।
স্বাভাবিক ভাবে সেখানে ভিড় হয়ে যাবে।
এমন একটা ভিড়ে মানুষের মাথায় যে জিনিস টা একেবারেই আসবে না তা হোলো আরেকটি পিকপকেটিংয়ের সম্ভাবনা ।
মানুষের সেন্টার অব অ্যাটেনশান থাকবে মাঝের পকেটমারটা , যাকে দুই জন পেটানোর নাম করে আসলে প্রটেকশান দিবে, যখন অন্য দুই জন জমায়েতের পকেট সাফ করতে থাকবে ।
তারপর সময় মত রেসকিউ টিম মাইক্রোবাস নিয়ে হাজির হলে সবাই পগার পার ।
ছফর মিয়া থমথমে মুখে রিক্সা ছাড়লো । বাকি রাস্তা স্পিকটি নট ।
৬ দিন পরে , উত্তরা ব্রিজের কাছে ।
জমায়েতটা দেখে চিনতে পারি নাই , কিন্তু হ্যাংলা স্বাস্থমন্ত্রী কিশোরটার বাটারফ্লাই স্ট্রোক চোখে পড়লো । ধরে রাখা দুই
জনের চেহারাও চিনতে পারলাম । আজকে তো একটা হেস্তনেস্ত করা দরকার , ভিড়ের দিকে এগুতে এগুতে ফোন দিচ্ছিলাম এক অফিসারকে।
হঠাৎ চোখ পড়লো ভিড় থেকে একটু দুরের এক ল্যাম্পপোস্টের দিকে । হাতে সিগারেট ধরার ভঙ্গিতে দাড়িয়ে আছে এক
শিশু । কাধের বস্তাটা সামলে অদৃশ্য সিগারেটে আরাম করে টান দিলো একটা ।
ফোনটা না করে ওর দিকে এগিয়ে গেলাম । পেছন থেকে কাধে হাত রাখতেই চমকে ঘুরলো আমার দিকে ।
-কিরে হাফপ্যান্ট ?
কিছু না বলে ভয়ের চোখে তাকিয়ে রইলো আমার দিকে ।
-ভয় পাইতেসিস ক্যান এতো?
কাধে হাত রেখেই কিছুহ্মন পকেটমার নাটক দেখলাম ।
-তোর কাজটা কি বোঝার চেষ্টা করছি , তুই আসলে ইনফরমার । খেয়াল রাখিস পুলিশ আসে কি না । আর কাজ শেষ হইলে সাদা মাইক্রোবাস কে সিগনাল দিস , তাই তো?
পিচ্চি চুপ করে তাকিয়ে আছে ।
-তোর হাতে এখন দুইটা অপশন । তোকে একটা ঠিকানা দিচ্ছি , গিয়ে আমার কথা বললে থাকার ব্যবস্থা হয়ে যাবে । তোর বয়েসি আরো অনেক বাচ্চা আছে ওখানে । খাওয়া দাওয়ার কোনো টেনশান নাই । অথবা এখন পুলিশ আসবে , তোর গ্যাংয়ের সবাই ধরা পড়বে । তুইও তাদের সাথে ধরা পরে জেল খাটবি ।
পিচ্চি চুপ ।
আমি কার্ড বারিয়ে দিলাম , এই নে । এখানে ঠিকানা লিখা আছে ।
পিচ্চি তবু চুপ ।
- কি হলো , নে !
ছেলেটা এবার ধীরে ধীরে আমার দিকে ঘুরলো। তারপর শান্ত চোখে বললো, আমারেও হেগো লগে পুলিশেই দেন ।
ছেলেটির চোখের দিকে তাকিয়ে হঠাৎ আমার গা শিউরে উঠলো । অধিকাংশ খুনিরাই জন্ম থেকে খুনি নয় । কিন্তু কেউ কেউ জন্মই নেয় খুনি হয়ে । এই শিশুটির চোখে আমি এক খুনিকে দেখলাম ।
একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে একহাতে বাচ্চাটাকে ধরে রেখে আরেক হাতে উত্তরা জোনের এক পরিচিত পুলিশের বড় কর্তাকে ফোন দিলাম । আকাশ জুড়ে তখন শেষবিকালের মন খারাপ করা আলো ।
২৮ শে আগস্ট, ২০১৩ ভোর ৪:১৭
একজন বোকা মানুষ বলেছেন: _ _ _ _ _
২| ২৭ শে আগস্ট, ২০১৩ দুপুর ২:১১
আনমনা 007 বলেছেন: ++ লেখায় হুমায়ুন আহমেদের কিছুটা ভাব আছে।
২৮ শে আগস্ট, ২০১৩ ভোর ৪:১৩
একজন বোকা মানুষ বলেছেন: মন্তব্যটিকে অবশ্যই কমপ্লিমেন্ট হিসেবে নিলাম । হুমায়ুন আহমেদের নাম আমার লেখার আশে পাশে আসাটাই আমার জন্য টোস্টের উপলহ্ম । বোকা মানুষদের কাজ আরকি ?
৩| ২৭ শে আগস্ট, ২০১৩ দুপুর ২:৪৯
লিন্কিন পার্ক বলেছেন: ভাল লাগল
২৮ শে আগস্ট, ২০১৩ ভোর ৪:১৪
একজন বোকা মানুষ বলেছেন: ধন্যবাদ
৪| ২৭ শে আগস্ট, ২০১৩ বিকাল ৩:০৭
লামাজ বলেছেন: ধন্যবাদ ভােলা িলেখেছন।
২৮ শে আগস্ট, ২০১৩ ভোর ৪:১৫
একজন বোকা মানুষ বলেছেন: ধন্যবাদ
৫| ২৭ শে আগস্ট, ২০১৩ রাত ৮:৫৮
প্রোফেসর শঙ্কু বলেছেন: ভালো লেগেছে গল্প।
২৮ শে আগস্ট, ২০১৩ ভোর ৪:১৬
একজন বোকা মানুষ বলেছেন: ধন্যবাদ
৬| ২৮ শে আগস্ট, ২০১৩ দুপুর ১:১২
আমিনুর রহমান বলেছেন:
অনেক ভালো লাগা রইল +++
২৮ শে আগস্ট, ২০১৩ বিকাল ৫:২১
একজন বোকা মানুষ বলেছেন: আপনার জন্য শুভ কামনা , ধন্যবাদ
৭| ২৮ শে আগস্ট, ২০১৩ দুপুর ১:২০
অপর্ণা মম্ময় বলেছেন: পুরো লেখাটাই উপভোগ্য আর শেষটা খুব সুন্দর। সেই পথশিশুর চোখ দেখে যে মন্তব্য --
অধিকাংশ খুনিরাই জন্ম থেকে খুনি নয় । কিন্তু কেউ কেউ জন্মই নেয় খুনি হয়ে । এই শিশুটির চোখে আমি এক খুনিকে দেখলাম ।
শুভকামনা বোকা মানুষ
২৮ শে আগস্ট, ২০১৩ বিকাল ৫:২৫
একজন বোকা মানুষ বলেছেন: একটা কথা বলেই ফেলি, আমি মুলত লেখক নই । আমি অবজার্ভার । এসব মুলত সত্য ঘটনা । আমি আমার চিন্তা গুলো সহ লিখার চেষ্টা করি। বোকা মানুষের কাজকারবার আর কি
৮| ২৮ শে আগস্ট, ২০১৩ দুপুর ২:৩৪
আমি নীল বলছি বলেছেন: দারুন একটা লেখা পড়লাম। লেখক কে ধন্যবাদ।
২৮ শে আগস্ট, ২০১৩ বিকাল ৫:৩৬
একজন বোকা মানুষ বলেছেন: নীলকেও ধন্যবাদ ।
৯| ২৮ শে আগস্ট, ২০১৩ বিকাল ৫:১১
অলওয়েজ ড্রিম বলেছেন: প্রিয় বোকামন, আপনার গদ্য লেখার হাত তো অনেক ভাল। অদৃশ্য সিগার খাওয়ার দৃশ্যটা মাথায় গেঁথে গেল। হাসছি...
সবাই কবি নয় কেউ কেউ কবি। তেমনি জন্মমাত্রই লেখক নয় সবাই। তবে ব্যতিক্রমী কারো কারো জন্মই হয় অসাধারণ গদ্যের হাত নিয়ে। একটু চেষ্টা করে দেখবেন কি আপনি শেষোক্তদের দলভুক্ত কি না?
শুভ কামনা...
২৮ শে আগস্ট, ২০১৩ বিকাল ৫:৩২
একজন বোকা মানুষ বলেছেন: আহা , আপনার কথা যদি সত্যি হতো।
১০| ২৮ শে আগস্ট, ২০১৩ সন্ধ্যা ৭:২৫
মহামহোপাধ্যায় বলেছেন: চমৎকার লাগলো প্রিয় বোকামানুষ। ধরিয়ে নিলাম (নাকি জ্বালিয়ে নিলাম হবে) একটা অদৃশ্য সিগারেট। তবে দু আঙ্গুলে সিগারেট ধরে কম্পোজ করতে খুব অসুবিধা হচ্ছে। তার উপর আনকোরা তো !!
২৯ শে আগস্ট, ২০১৩ রাত ১০:৫২
একজন বোকা মানুষ বলেছেন: অভ্যেস হয়ে এলে আর সমস্যা হবে না
১১| ২৮ শে আগস্ট, ২০১৩ সন্ধ্যা ৭:৫৪
জুলিয়ান সিদ্দিকী বলেছেন: আগে ম্যাজিক দেখানো বা নাচ গানের ভিড় বানিয়ে কাজগুলা করা হতো।
©somewhere in net ltd.
১|
২৭ শে আগস্ট, ২০১৩ দুপুর ১:৫৬
মদন বলেছেন: ++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++