নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

পুরান ঢাকার সিপাহী

পুরান ঢাকার সিপাহী › বিস্তারিত পোস্টঃ

পুরান ঢাকা এবং কিছু কথা

২২ শে এপ্রিল, ২০১২ বিকাল ৫:১৯

পুরান ঢাকা, একটি বিবর্ণ হয়ে যাওয়া একটি রঙধনুর নাম। পুরান ঢাকা, ধুলোয় মাখা একটি বইয়ের নাম। একটি মিথ আর কিছু বাস্তবতা। জানা-অজানার ভেলায় দুলতে থাকা আমরা তরুন সমাজ কতটুকু বুঝি বা বুঝতে চাই পুরান ঢাকাকে? আসুন না, কিছু কথা বলি এ সম্পর্কে।

আমাদের দেশে, বিশেষত ঢাকা মহানগরীতে লোকজনদের পুরান ঢাকা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলে তার মনের চোখে প্রথমেই হয়ত ভেসে ওঠে জট পাকানো কিছু বাড়িঘর, সরু একটা গলি, আর রাস্তার ধারের আবজর্নার স্তূপ। বাস্তবতা কী আসলেই এমন? হ্যাঁ, রাস্তাগুলো আসলেই অপেক্ষাকৃত সরু। বিশ-পচিশ হাজার জন লোকের জন্য মুঘল সরকারের তৈরী করা রাস্তাগুলো সে সময়ের প্রেক্ষাপটে যথেষ্টই ছিল। কিন্তু ১৯০০ সনের পর থেকেই বাঁধে ঝামেলা। পূর্ববঙ্গের বিস্তীর্ণ এলাকা থেকে হাজারে হাজারে মানুষ নিজেদের অভিবাসনের জন্য পঙ্গপালের মত ছেঁকে ধরে এ শহরটিকে। ফলতঃ যা হবার তা-ই হয়েছে। শহরের যোগাযোগ ব্যবস্থায় বিপর্যয় ঘটেছে।

এবার আসা যাক রাস্তার ধারের আবর্জনার স্তূপের কথায়। নব্য ঢাকাবাসীদের এ এক অমূলক ধারণা। ঢাকা মহানগরীর অন্যান্য এলাকার তুলনায় বরং এখানকার রাস্তাগুলোয় ময়লা ফেলার প্রবণতা কম। পুরান ঢাকার শিল্প ও বানিজ্যিক এলাকাগুলোতে এর কিছুটা ব্যতিক্রম দেখা যায়। তবে JICA’র সহায়তায় আমাদের সিটি করপোরেশন প্রতিটি রাতে নিরলস কাজ করে যায় আমাদের এ আয়তনে ছোট্ট, কিন্তু জনসংখ্যায় বিশাল এ শহরটিকে ভোরের আলো ফোটার আগে পরিস্কার করে ফেলতে।

বাড়িঘরের বেলায় একটা কথা না বললেই নয়। আমার সাধারণভাবে জেনে আসছি পুরান ঢাকা অপরিকল্পিত শহর, এর প্রায় সব বাড়িঘর অপরিকল্পিত। এখানে আপনাদের কাছে আমাদের পুরান ঢাকাবাসীদের একটা প্রশ্ন আছে। তা হল – পরিকল্পনা করে ঝিল আর হাঁওড়-বাওড় অবৈধভাবে ভরাট করে বাড়িঘর নির্মাণ করা ভালো, না অভিজ্ঞতার আলোকে সত্যিকার ভিটিভূমিতে তথাকথিত অপরিকল্পিত বাড়িঘর নির্মাণ ভালো? মনে রাখতে হবে, ‘চকচক করলেই সোনা হয় না’। বলুন দেখি, পুরান ঢাকার ক’টা বাড়িতে ঢুকে দেখেছেন আপনারা, যে ভেতর থেকে বাড়িগুলো কেমন? কতটা মজবুত? খেয়াল করে দেখবেন, সাম্প্রতিক সময়ের ভূমিকম্পগুলোতে ঢাকা মহানগরীর নিত্য-নতুন ঝকঝকে সব ভবন হেলে পড়ার খবর, তার মধ্যে ক’টা ছিল পুরান ঢাকার? একটি নতুন ভবনও হেলে পড়েনি পুরান ঢাকায়; ফাটলও দেখা দেয় নি কোনো বাড়িতে। এটা সত্যি যে, পুরান ঢাকা’র জরাজীর্ণ কিছু প্রাচীন ভবন হেলে পড়েছে, কিন্তু দেড়-দুশো বছরের পুরাতন এসব ভবনগুলো হেলে পড়া অতি স্বাভাবিক একটি ঘটনা। যে শহরের প্রত্যেকটি মহল্লায় দুটি বা তার অধিক সংখ্যক মসজিদ রয়েছে, ইনশাল্লাহ সে শহর এতো সহজে ভেঙ্গে পড়বে না।

আর নতুন ঢাকায় তো আজানের শব্দই শোনা যায় না!

আমরা পুরান ঢাকা’র লোকেরা পাশের বাড়ির পানির পাইপ ফেটে গেলে নিজেরা নেমে পড়ি তা মেরামতে, আর নতুন ঢাকায় পাশের ফ্ল্যাটে মানুষ মানুষ মরে পড়ে থাকে। পচে গিয়ে গন্ধ না ছড়ানো পর্যন্ত প্রতিবেশীরা জানতেও পারে না কিছু। ঠিক যেন ঘরের অবাঞ্ছিত ইদুর।

রোজ সন্ধ্যেয় যেন মেলা বসে আমাদের রাস্তাগুলোয়; হাসির মেলা, গল্পের মেলা, আড্ডার মেলা, তারুণ্যের মেলা। বাড়িঘরের বারান্দার লাইট, রাস্তার ধারের দোকানগুলোর আলো, ভুরভুর করে সুগন্ধ ছড়ানো শিক কাবাব আর বিরিয়ানী, ধূমায়িত চায়ের কাপ আর ব্যাকগ্রাউন্ডে গান – ‘ইচাক দানা বিচাক দানা, দানে উপার দানা, ইচাক দানা......’ অথবা ‘মেরে ম্যাহেবুব কায়ামাত হোগি, আজ রুসওয়া তেরি গালিওঁ মে মুহাব্বাত হোগি.....। আহ্। সে এক স্বর্গীয় অনুভূতি, বলে বোঝাবার মত নয়। অন্যদিকে নতুন ঢাকায়, ঘরে দরজা দিয়ে বসে কম্পিউটারে ভার্চুয়াল সোশ্যাল অ্যাক্টিভিটি আর সিগারেট ফুঁকতে ফুঁকতে বিলিয়ার্ড খেলতে থাকা। অন্ধকার ধানমন্ডি লেকের পাড়ে যতসব অসামাজিক কাজকর্ম। হাহ হা। আর রাস্তা? সে-তো এক মৃত্যুকূপ। চলতে গিয়ে একটু অসতর্ক হলেই পেছন থেকে কোন যন্ত্রদানব এসে.................! বেঁচে আছেন কী করে আপনারা!

১৫ই ডিসেম্বর রাতে একবার ঘুরে দেখুন পুরান ঢাকা। পতাকা সাজানোর আদলে তারুণ্যের শক্তি আর উদ্দামতাটা হয়তো এবার একটু অনুভব করতে পারবেন।

আপনাদের এলাকার রাস্তার ম্যানহোলের ঢাকনা গাপ করে দিয়েছে কোন ছিঁচকে চোর। কী করেন আপনারা? বোধকরি রোজ সকালে অফিসে বা স্কুল-কলেজ-ইউনিভার্সিটিতে যাবার সময় দুটা গালি দেন চোর ব্যাটা আর ডিসিসি-কে। এভাবেই চলতে থাকে; উপযুক্ত কর্তৃপক্ষ ঢাকনা না লাগানো পর্যন্ত।

আর আমরা কী করি জানেন? পুরো মহল্লা থেকে চাঁদা উঠাই। এরপর নিজেরাই রড, সুড়কি, সিমেন্ট, বালু নিয়ে মেরামত চালু। একদিনেই সমস্যার সমাধান। সপ্তাহখানেক পরে ডিসিসির লোকজন এল ওদের কাছ থেকে মেরামতির টাকাটা উসুল করে কাচ্চি বিরিয়ানী আর কোক খাওয়া এবং আবারো আনন্দ উৎযাপন। এরই নাম সামাজিক শক্তি, বুঝেছেন?

যাই হোক। আসুন একদিন পুরান ঢাকায়। কল্পনার খোলস ছাড়ুন। বাস্তব দেখুন, জীবন দেখুন। নিয়ে যান মধুর কিছু স্মৃতি। দিনে এলে ঘুরে দেখুন মুঘল আমলের ঐতিহাসিক স্থাপনাগুলো আর সন্ধ্যেয় এলে রাস্তায় রাস্তায় হাঁটতে থাকুন। মনটা বেজায় স্ফূর্তি লাভ করবে। ফিরে যাবার আগে লালবাগের রয়েল রেস্টুরেন্ট বা চকবাজারের বেচারাম দেউরীর নান্না বিরিয়ানী দিয়ে পেটপুজো সেরে নিন



কীভাবে আসবেন: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সলিমুল্লাহ মুসলিম হলের বিপরীতে ঢাকেশ্বরী রোড ধরে সোজা হাঁটতে থাকুন। অনেকখানি হাঁটার পর পৌছে যাবেন লালবাগ চৌরাস্তা। এবার ডানে লালবাগ, হাজারীবাগ আর বামে চকবাজার, কোতয়ালী, সূত্রাপুর। হাঁটতে থাকুন যেদিকে খুশি। হারিয়ে গেলে রাস্তার পাশের দোকানদারকে জিজ্ঞাসা করে রাস্তা চিনে নিন। ভয় পাবেন না, পুরান ঢাকায় জনমানবহীন (!) কোন রাস্তা নেই।

আপনাদের ইতিবাচক মনোভাব দেখলে পুরান ঢাকা বিষয়ে আরো লিখব। আপনারা চাইলে পুরান ঢাকা বিষয়ক উইকিটি দেখে নিতে পারেন – http://bn.wikipedia.org/wiki/পুরনো_ঢাকা

ভালো থাকবেন।

মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ০৬ ই জুন, ২০১২ রাত ১০:১৬

ইংলা বলেছেন: বেইলি রোড থেকে বেচারাম দেউরীর নান্না বিরানীতে যাবো কিভাবে বলতে পারেন?

২| ২২ শে জুলাই, ২০১২ সকাল ১১:৩৯

নাওেয়দ বলেছেন: ভাই, লেখাটায় আবেগ আছে অনেক। পুরান ঢাকা নিয়ে একটা প্রোগ্রাম অ্যারেঞ্জ করার চেষ্টা করছি আমরা কিছু এলাকাবাসি। আপনার লেখাটা পড়ে ভালো লাগলো। আমাদের সাথে যোগ দিলে খুব খুশি হতাম।

একটা মেসজ দিলেই হবে।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.