![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
জন্ম- ১৯৮৭ খ্রিঃ চাঁদপুর জেলার হাজীগঞ্জ উপজেলাধীন ২নং বাকিলা ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডের লোধপাড়া গ্রামের সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে। পিতার নাম মোঃ সিরাজুল ইসলাম, মাতার নাম ফাতেমা বেগম।
পুরুষকে অর্ধেক কষ্ট দেয় টাকা. আর বাকি অর্ধেক কষ্ট দেয় তার শখের নারী
আপনি কি মানুষ? নাকি হেঁটে-চলে বেড়ানো একটা টাকার মেশিন? যে যন্ত্রের একটাই কাজ—দিনরাত খেটে টাকা রোজগার করা আর সেই টাকা অন্যের খুশির জন্য বিলিয়ে দেওয়া? কখনো আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজের ক্ষয়ে যাওয়া শরীরটাকে প্রশ্ন করেছেন, "এই জীবনটা কার জন্য?" উত্তরটা কি প্রতিবারই একটা নারী মুখ হয়ে ফিরে আসে না? সেই মুখ, যার হাসির জন্য আপনি নিজের সবটুকু নিংড়ে দিয়েছেন, আর বিনিময়ে পেয়েছেন এক বুক যন্ত্রণা আর নীরব অশ্রু।
ভয়ংকর লাগছে শুনতে? নিজের জীবনের সাথে মিলে যাচ্ছে? তাহলে প্রস্তুত হোন। আজ আমরা পুরুষের জীবনের সেই সবচেয়ে বড় প্রহসন নিয়ে কথা বলব, যেখানে সে নিজেই শিকার এবং নিজেই শিকারী। সেই নির্মম সত্য, যা সমাজ লোকলজ্জার ভয়ে লুকিয়ে রাখে—পুরুষের অর্ধেক কষ্ট যদি হয় টাকার জন্য, তবে বাকি অর্ধেক এবং সবচেয়ে যন্ত্রণাদায়ক কষ্টটা আসে সেই নারীর কাছ থেকে, যার জন্য সে ওই টাকা আয় করে।
কসাইখানায় বলির আগে পশুকে খুব যত্ন করে খাওয়ানো হয়, জানেন তো? ঠিক তেমনি, সমাজ একজন পুরুষকে ছোট থেকে বড় করে তোলে এক অদেখা বলির জন্য। তার মাথায় ঢুকিয়ে দেওয়া হয়—"তোমাকে বড় হতে হবে, প্রতিষ্ঠিত হতে হবে, দায়িত্ব নিতে হবে।" কার দায়িত্ব? একটি পরিবারের, একজন নারীর। আর সেই দায়িত্ব পালনের একমাত্র মাপকাঠি হলো টাকা।
আপনার মনে আছে, নিজের প্রথম শখের গিটারটা বিক্রি করে দিয়েছিলেন কেন? কিংবা বন্ধুদের সাথে ঘুরতে যাওয়ার পরিকল্পনা বাতিল করেছিলেন কেন? কারণ আপনার সামনে একটা লক্ষ্য ছিল—একটা Stableভবিষ্যত, একটা সুন্দর সংসার। আর সেই সংসারের কেন্দ্রে ছিল একজন নারী। তার মুখে হাসি ফোটানোর জন্য, তার সব শখ পূরণ করার জন্য আপনি নিজের স্বপ্নগুলোকে নির্দ্বিধায় জবাই করেছেন। আপনার রক্ত জল করা পরিশ্রমের প্রতিটি ফোঁটা রূপান্তরিত হয়েছে তার হাতের চুড়িতে, তার পরনের দামি শাড়িতে, তার আরামের জীবনে। আপনি হয়েছেন সংসারের চালক, আর সে হয়েছে যাত্রী।
আপনি ভেবেছিলেন, আপনার এই ত্যাগ, এই ভালোবাসা সে বুঝবে। আপনি বিশ্বাস করেছিলেন, আপনার এই পরিশ্রমের মর্যাদা সে দেবে। কিন্তু এখানেই আপনার জীবনের সবচেয়ে বড় ভুলটা আপনি করে ফেলেছেন। আপনি তাকে আপনার জীবনের সবকিছু ভেবেছেন, আর সে আপনাকে ভেবেছে তার জীবনের সবকিছু পাওয়ার একটা সহজ মাধ্যম।
কষ্টটা ঠিক কখন শুরু হয়? যখন আপনি সারাদিনের খাটুনির পর বিধ্বস্ত হয়ে বাড়ি ফেরেন আর শুনতে হয়, "অমুকের স্বামী তো ওকে বিদেশ ঘুরতে নিয়ে গেল, তুমি আমাকে কী দিয়েছ?" আপনার সারা জীবনের অর্জন এক মুহূর্তে তার কাছে শূন্য হয়ে যায়। যখন আপনার টাকায় কেনা স্মার্টফোন ব্যবহার করে সে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অন্যের সাথে কথা বলে, অথচ আপনার সাথে দুটো কথা বলার সময় তার হয় না। যখন আপনার দেওয়া স্বাচ্ছন্দ্যের জীবনে থেকে সে আপনাকে অভিযোগ করে, আপনি তাকে যথেষ্ট "সময়" দেন না।
কোন সময়? যে সময়টা আপনি তার আর আপনার সন্তানের ভবিষ্যৎ সুরক্ষিত করার জন্য বেচে দিয়েছেন অফিসের বসের কাছে, রাস্তার জ্যামের কাছে, আর নিজের অজস্র বিনিদ্র রাতের কাছে?
সবচেয়ে ভয়ংকর আঘাতটা আসে তখন, যখন আপনি আবিষ্কার করেন, আপনার অনুপস্থিতিতে আপনার সাজানো ঘরটাই অন্য কারো জন্য অভিসার হয়ে উঠেছে। আপনার টাকায় কেনা বিছানায় যখন অন্য কেউ অধিকার স্থাপন করে, তখন আপনার পায়ের নিচের মাটি সরে যায়। আপনার রোজগার করা অর্থ, আপনার দেওয়া নিরাপত্তা—সবকিছুই তখন আপনার বিরুদ্ধে সবচেয়ে বড় অস্ত্র হিসেবে ব্যবহৃত হয়। সেই নারী, যাকে আপনি রানী করে রাখতে চেয়েছিলেন, সে-ই আপনাকে তার জীবনের সবচেয়ে বড় প্রতিবন্ধক ভাবতে শুরু করে। আপনার প্রতিটা ত্যাগ তার কাছে হয়ে যায় আপনার "কর্তব্য"। আর তার প্রতিটা বিশ্বাসঘাতকতা হয়ে যায় তার "ব্যক্তি স্বাধীনতা"।
সে আপনাকে বোঝায়, দোষটা আপনার। আপনি রোমান্টিক নন, আপনি সময় দেন না, আপনি তাকে বোঝেন না। কিন্তু সে একবারও বলে না, যে স্বাচ্ছন্দ্য আর নিরাপত্তার ওপর দাঁড়িয়ে সে এই অভিযোগগুলো করছে, সেই ভিতটা আপনারই রক্ত দিয়ে গড়া।
পুরুষ সারা জীবন অর্থ আয় করে, কিন্তু সেই অর্থের ওপর তার নিজের কোনো অধিকার থাকে না। সন্তানের স্কুলের বেতন, স্ত্রীর শপিং, সংসারের খরচ—সবকিছু মিটিয়ে মাস শেষে তার নিজের জন্য কী অবশিষ্ট থাকে? একটা ছেঁড়া গেঞ্জি আর একাকীত্ব। সে নিজের জন্য একটা ভালো শার্ট কিনতে গেলেও দশবার ভাবে, "এটা না কিনে বাচ্চার জন্য খেলনা কিনলে ভালো হতো।"
এই যে আত্মত্যাগ, এর বিনিময়ে সে কী চায়? খুব বেশি কিছু নয়। শুধু একটু সম্মান, একটু নির্ভরতা, একটু ভালোবাসা। কিন্তু হায়! যাদের জন্য সে নিজের বর্তমানকে উৎসর্গ করে, তারাই তার অতীতকে ভুলে যায় আর ভবিষ্যৎকে অনিশ্চিত করে তোলে।
নারী খুব ভালো করেই জানে, এই পুরুষটা তাকে ছাড়া অসহায়। তার দুর্বল জায়গাটা কোথায়, নারী সেটা চেনে। তাই সে বারবার সেখানেই আঘাত করে। সে জানে, এই পুরুষ লোকলজ্জার ভয়ে, সন্তানের মুখের দিকে তাকিয়ে সবকিছু মুখ বুজে সহ্য করবে। এই সুযোগটাই সে নেয়। পুরুষ তখন হয়ে যায় নিজের বাড়িতেই একজন ভাড়াটিয়া। যে শুধু খরচ দিয়ে যায়, কিন্তু কোনো অধিকার পায় না।
সমাজ বলে, "পুরুষের কাঁদতে নেই।" কেন? কারণ পুরুষ কাঁদলে নাকি সে দুর্বল হয়ে যায়। কিন্তু আসল সত্য হলো, পুরুষ কাঁদে। আড়ালে কাঁদে, রাতের অন্ধকারে বালিশে মুখ লুকিয়ে কাঁদে, চলন্ত গাড়ির স্টিয়ারিং-এ মাথা রেখে কাঁদে। তার সেই কান্না কেউ দেখে না।
যে নারী তার কান্নার কারণ, সে তখন হয়তো নতুন কোনো স্বপ্নের জগতে বিভোর। যে সন্তানের জন্য সে কাঁদে, সে সন্তান তখন নিজের জীবন নিয়ে ব্যস্ত। পুরুষ তখন একা। তার কষ্ট বোঝার মতো কেউ থাকে না। টাকা আর নারী—এই দুইয়ের যাঁতাকলে পিষ্ট হতে হতে সে একসময় জীবন্ত লাশে পরিণত হয়। তার বাইরের খোলসটা শক্ত থাকে, কিন্তু ভেতরটা রোজ একটু একটু করে মরে যায়।
তাই পরেরবার যখন কোনো পুরুষকে দেখবেন চুপচাপ, একা বসে আছে, তাকে বিচার করতে যাবেন না। হতে পারে, সে তার জীবনের সবচেয়ে বড় যুদ্ধটা লড়ছে—একদিকে টাকার চিন্তা, আর অন্যদিকে এক নারীর দেওয়া অসহনীয় যন্ত্রণা। যে যন্ত্রণা তীরের ফলার মতো তার হৃদয়ে গেঁথে আছে, যা না সে বের করতে পারছে, না সে সহ্য করতে পারছে।
পুরুষের জীবন এক চক্রাকার ট্র্যাজেডি। সে যাকে সুখী করার জন্য সবকিছু বাজি রাখে, দিন শেষে তার হাতেই সবচেয়ে বেশি কষ্ট পায়। এটাই হয়তো তার নিয়তি।
©somewhere in net ltd.