নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
দুঃখের কবিতাই শ্রেষ্ঠ কবিতা। ভালোবাসা হলো দুঃখ, এক ঘরে কবিতা ও নারী।
প্রতিমাসের শেষ শুক্রবারে আমার বাসায় একটা পার্টি হয়। সকাল ১০টা না বাজতেই ওরা বাসায় চলে আসবে; দুজনে বেডের দুপাশে বসবে; ধাক্কাধাক্কি করে, কখনো-বা মাথার চুল টানাটানি করে আমার ঘুম ভাঙাবে। চোখ খুলতেই মুখের কাছে এসে দুজনে উপুড় হয়ে একযোগে সুর করে টেনে টেনে বলবে— গুড মর্নিং…
আমি উঠে বসি। দুজনকে দুহাতে হাগ করে বলি— ইউ আর সো রিলেন্টলেস!
তারপর ওয়াশরুমে ঢুকি।
বের হলে দেখি দুজনে মিলেমিশে বেডরুম গোছাচ্ছে।
আচ্ছা, পার্টির কথাটা একটু বলে নিই। এদিন মনা বাজার-সওদা করে, আর কনা করে রান্নাবান্না। আমার দায়িত্ব হলো ওদের সাথে আরাম করে খাওয়া।
আমার মায়ের রান্নার হাত খুব ভালো ছিল। সব রান্নার মধ্যে কষানো মুরগির মাংসের কথা আমি আজও ভুলতে পারছি না। শীলার রান্নাও আমার মায়ের মতোই। কিন্তু ওর মুরগি কষানো আমার মায়ের কষানোর মতো হয় না। এ নিয়ে বিস্তর গবেষণা করেও কোনো সুরাহা পাই নি। এমন সময় একদিন মনা আর কনা বাসায় এলো। ওরা বললো, মাটির চুলোয় রান্না করতে হবে, আর হলুদ-আঁদা, মরিচ-জিরা, সব মশলা পাটায় পিষতে হবে। ‘দ্য আইডিয়া’। কিন্তু আমরা তো গ্যাসের চুলোয় রান্না করি, মাটির চুলো কোথায় পাবো? এবারও ওরাই ‘দ্য সলিউশন’ নিয়ে হাজির হলো। বাসার বাইরে বাগানের পাশে যে খোলা জায়গাটা রয়েছে, ওখানেই গর্ত করে অ্যাডহক মাটির চুলো বানিয়ে ফেলা হলো।
এরপর শীলা আমাদের ঘিয়ের পোলাও আর মুরগি কষানো খাওয়ালো। আমি ৪৫ বছর আগে মায়ের কাছে ফিরে গেলাম— মা যেন কষানো মাংস দিয়ে আমাকে ভাত বেড়ে দিল।
এভাবে প্রায় নিয়মিতই আমাদের এ ক্ষুদ্র পার্টি চলতে থাকলো। দুপুরের পর পড়ন্ত রোদে গাছের ছায়া হেলে পড়লে তার নীচে একটা পিঁড়িতে বসে শীলা রান্না করতো; কনা তার সাথে যোগ দিত। আমি আর মনা পাশে চেয়ার পেতে বসে রান্নাবান্না দেখতাম, ধেড়ে গলায় গান গাইতাম।
কনা রান্নাবান্নায় খুব পটু নয়। কিন্তু তিনজনে একত্র হয়ে একটা গেট টুগেদার করি, এটাই হলো মূল লক্ষ্য।
খেতে বসে আমরা নানান আলোচনায় মেতে উঠি। কিন্তু কোনো কোনোদিন আমার মনটা খুব ভারী থাকে। খেতে খেতে একটা দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে পড়ে।
শীলা খুব ভালো মেয়ে ছিল।
সন্ধ্যায় মনা বাসা থেকে বের হয়ে যায় শহর দেখতে। ফিরতে ফিরতে অনেক রাত হয়। কখনো রাত পার হয়ে যায়। পরদিন দুপুরে লাঞ্চ করে সে বাগের হাটের বাসে চেপে বাড়ি চলে যায়।
বাসায় কনা আর আমার সময়টুকু খুব নিরিবিলিতে কাটে। টিভি দেখি; গান গাই; গল্প করি। কনা ভালো নাচতে পারে; কত্থক, না কী যেন নাম— সবই উচ্চমার্গীয়। শিল্পকলা একাডেমিতে দু-একটা অনুষ্ঠানে সে নেচেছে। কনা বলে, দর্শকসারিতে প্রতিক্রিয়া বেশ ভালো ছিল।
কনা একদিন হঠাৎ বললো, ভাইয়াকে কি আজও টাকা দিয়েছ?
আমার কোনো প্রতিক্রিয়া হলো না। প্রতিক্রিয়া হওয়ার কথা ছিল কিনা তাও বুঝি না।
হতাশ ও আহত স্বরে কনা বলতে লাগলো, খুব ঘৃণা লাগে, নিজেকে ছোটো মনে হয়। আপন বড়ো ভাই কীভাবে এটা পারে! মাঝে মাঝে প্রতিবাদ করতে ইচ্ছে হয়। কিন্তু পারি না। তুমি তো সবই বোঝো...
সারাবছর অভাব-অনটনের মধ্য দিয়ে ওদের চলতে হয়। মনার কোনো ব্যবসাপাতি নেই, আবাল্য ওর ভবঘুরে স্বভাব। স্বল্প কিছু ঘের আছে, কিন্তু তাতে সুবিধা করতে পারে না। এর উপরে আছে কনার ইউনিভার্সিটির খরচ। ওকে হিমশিম খেতে হয়। আমার পুরো সম্পদের একাংশ ওদের দিয়ে দিলে আমার কোনো কমতি হবে না। মনা এটা জানে, আরো জানে যে আমার বাসার সিন্ধুকটা ওর জন্য আমি বারোমাসই খুলে রাখি।
কিন্তু ওরা কেউ জানে না— আমি ভেবে রেখেছি, আমার স্থাবর-অস্থাবর সব সম্পত্তি কনার নামেই উইল করে যাব। কনা আমার কেউ না। অথবা জানি না— কনা আমার কে।
সন্ধ্যায় চলে যাওয়ার সময় কনা অনেকক্ষণ পায়চারি করলো। ওর মনে ঐ ব্যাপারটা খুব তোলপাড় করছে তা ঢের বুঝতে পারলাম।
ইতস্তত করতে করতে কনা মুখ খুললো।
— ভাইয়া, বলছিলাম কী, কিছু মনে করবে না তো?
— নাহ। কী কথা, বলো?
— আমার কিছু টাকার দরকার।
— টাকা লাগবে নিবে। কত?
কনা একটা টাকার অঙ্ক বললো। অঙ্কটা খুব ছোটো নয়, অবশ্য অনেক বড়োও নয়। আমি ওর নামে একটা ক্রস্ড চেক লিখে হাতে দিলাম।
কনা চেকটা পেয়ে মাথা নীচু করে খাটের একপাশে বসে রইলো। ওর চোখ থেকে কয়েক ফোঁটা পানি ঝরে পড়লো।
ও একটা ছেলেকে ভালোবাসে। এ টাকা সেই ছেলেটার জন্য।
— ভাইয়া। কনা বলতে থাকলো— এসব আমার ভালো লাগে না। তুমি যে এক মহাপুরুষ, মুনিঋষির চেয়েও মহত্তর, আমার ভাইয়া এটা কোনোদিনই জানবে না। সে শুধু জানবে আমাদের মধ্যে একটা ঘৃণ্য সম্পর্ক আছে, যাকে পুঁজি করে সে তোমার পকেট খালি করছে। এসব আমার একদম ভালো লাগে না।
ওর চোখের উপর আঙুল বুলিয়ে খুব মোলায়েম একটু আদর মেখে দিলাম। ওর অবয়বে অনেক অনেক কৃতজ্ঞতা আর ভালোবাসা ফুটে উঠলো।
কনার সাথে একটা গভীর অবৈধ সম্পর্ক সৃষ্টির সকল সুযোগ তৈরি করে দিয়েছে মনা। উদ্দেশ্য একটাই— এর বিনিময়ে যাতে আমার কাছ থেকে নিয়মিতভাবে টাকা তুলতে পারে। অদ্ভুত সুচতুর ফন্দি।
আমি ইচ্ছে করলেই মনাকে বলে দিতে পারি, তোর বোনের সাথে আমার কোনো অবৈধ সম্পর্ক নেই। এটা বলে ফেললে মনা যে বিশ্বাস করবে না তা আমি জানি। কারণ, সকালবেলা কনাকে আমার ঘরে রেখেই সে বাজার করতে বেরিয়ে পড়ে। ইচ্ছে করেই একটু বেশি সময় নিয়ে বাসায় ফিরে। এ দীর্ঘ সময়ে একটা পূর্ণাঙ্গ পুরুষ আর একটা যৌবনবতী মেয়ে ঘরে বসে লুডু খেলবে না। সন্ধ্যাবেলাতেও ওকে আমার কাছে সমর্পণ করেই সে বাসা থেকে বের হয়ে যায়। নির্জন গৃহে দুজন নর-নারী সারারাত বিবিসি চ্যানেল দেখে কাটাবে না, এটা যে-কোনো আহাম্মকই বোঝে।
আমি কনাকে বলি, আমার মেয়েটা তোমার চেয়ে দু বছরের ছোটো। ও বেঁচে থাকলে আজ এতখানিই বড়ো হতো। হয়ত তোমার মতোই ইউভার্সিটিতে পড়তো। … আমি মহাপুরুষ নই, তবে কামকে জয় করতে জানি। মেয়ের মতো একটা মেয়ের সর্বনাশ করবো, আমি এতটা নির্মম নই। তোমার দরিদ্রতার সুযোগ গ্রহণ করবো, আমি এতটা নীচ আর এতটা পশু নই। আমি ভালো আছি। তোমাদের নিয়ে খুব আনন্দেই তো আছি।
১১ অক্টোবর ২০১৫
---
কালের চিহ্ন, একুশে বইমেলা ২০১৬
---
কালের চিহ্ন ডাউনলোড করতে চাইলে এখানে ক্লিক করুন
২৩ শে মার্চ, ২০১৮ সন্ধ্যা ৭:৪৪
সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: ধন্যবাদ মোস্তফা সোহেল।
২| ২১ শে মার্চ, ২০১৮ সকাল ৯:০৭
চাঁদগাজী বলেছেন:
বইটার কি পরিমাণ কপি বিক্রয় হয়েছিল?
২৩ শে মার্চ, ২০১৮ সন্ধ্যা ৭:৪৫
সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: অনেকদিন চাঁদগাজী ভাইয়ের সাক্ষাৎ পেয়ে ভালো লাগলো। ধন্যবাদ আসার জন্য।
৩| ২১ শে মার্চ, ২০১৮ সকাল ৯:১১
মামুন ইসলাম বলেছেন: চমৎকার জীবন পারির গল্প ।
২৩ শে মার্চ, ২০১৮ রাত ৯:৪১
সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: ধন্যবাদ মামুন ইসলাম।
৪| ২১ শে মার্চ, ২০১৮ সকাল ১০:০৯
সূচরিতা সেন বলেছেন: পৃথিবীর সব পুরুষের চরিত্র এরকম হওয়া প্রয়োজন।
২৩ শে মার্চ, ২০১৮ রাত ৯:৪৩
সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: ধন্যবাদ সূচরিতা সেন। আপনার নামটা কি আগে অন্যকিছু ছিল?
৫| ২১ শে মার্চ, ২০১৮ সকাল ১০:১৫
অনন্য দায়িত্বশীল আমি বলেছেন: ডাউনলোড করবো।
২৩ শে মার্চ, ২০১৮ রাত ৯:৪৪
সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: আপনি অনন্য দায়িত্বশীল বটে।
৬| ২১ শে মার্চ, ২০১৮ সকাল ১০:৪৮
পদাতিক চৌধুরি বলেছেন: বেশ ভালো হয়েছে।
শুভেচ্ছা রইল।
২৩ শে মার্চ, ২০১৮ রাত ৯:৪৪
সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: ধন্যবাদ পদাতিক চৌধুরি। শুভেচ্ছা আপনাকেও।
৭| ২১ শে মার্চ, ২০১৮ সকাল ১১:৩০
বিজন রয় বলেছেন: একটি সাদা জীবন চাই।
+++
২৩ শে মার্চ, ২০১৮ রাত ১০:৩৫
সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: একটা সাদা জীবন চাই। তাই হোক।
৮| ২১ শে মার্চ, ২০১৮ সকাল ১১:৪২
ওমেরা বলেছেন: ইয়া আল্লাহ এটা গল্প !! শিরোনাম দেখে মনে হয়েছিল এটা আপনার জীবনের কোন ঘটনা। তবে গল্পটা আমার খুব ভাল লাগছে ।
২৪ শে মার্চ, ২০১৮ দুপুর ১২:১৩
সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: ইয়া আল্লাহ, আপনি ধরে ফেললেন, এটা একটা গল্প!!
যাক, গল্পটা আপনার ভালো লেগেছে জেনে খুশি হলাম। ধন্যবাদ পড়ার জন্য।
৯| ২১ শে মার্চ, ২০১৮ দুপুর ১:১৩
রাজীব নুর বলেছেন: সব কিছু মিলিয়ে ভালো লাগলো।
ভালো থাকুন।
২৪ শে মার্চ, ২০১৮ দুপুর ১২:২০
সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: ধন্যবাদ রাজীব নুর ভাই।
১০| ২২ শে মার্চ, ২০১৮ রাত ১২:০৭
সুমন কর বলেছেন: আগে কি পড়েছিলাম? চমৎকার লাগল।
+।
২৪ শে মার্চ, ২০১৮ দুপুর ১২:৩৭
সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: হ্যাঁ সুমন ভাই, আগে পড়েছিলেন। আবার পড়ার জন্য অনেক ধন্যবাদ।
১১| ২৩ শে মার্চ, ২০১৮ রাত ৮:১৫
শায়মা বলেছেন: অনেক অনেক ভালো লাগা ভাইয়া....
কনা মনার গল্প .....
কিন্তু শিলার কি হলো সে কি বাবার বাড়ি চলে গেলো?
২৪ শে মার্চ, ২০১৮ দুপুর ১২:৫৬
সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: শিলার কথাটা বুঝে নিতে হবে। যে-কোনো কিছুই হতে পারে।
ধন্যবাদ পড়ার জন্য।
১২| ২৪ শে মার্চ, ২০১৮ দুপুর ১২:০৫
আহমেদ জী এস বলেছেন: সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই ,
জিতেন্দ্রিয় নায়কের গল্প ।
অল্পতে ভালো লেখা হয়েছে । একটা কিছু বলাও আছে মনে হয় .................
২৪ শে মার্চ, ২০১৮ দুপুর ১২:৫৮
সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: টু দ্য পয়েন্ট। এক জিতেন্দ্রিয় নায়কের গল্প।
একটা কিছু বলা হয়ে গেছে আশা করি।
ধন্যবাদ আহমেদ জী এস ভাই। শুভেচ্ছা।
©somewhere in net ltd.
১| ২১ শে মার্চ, ২০১৮ সকাল ৯:০৫
মোস্তফা সোহেল বলেছেন: নিজে সৎ থাকতে চাইলে কোন ভাবেই কেউ খারাপ কিছু করতে পারেনা।
গল্প ভাল লেগেছে।