নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
দুঃখের কবিতাই শ্রেষ্ঠ কবিতা। ভালোবাসা হলো দুঃখ, এক ঘরে কবিতা ও নারী।
সুমন একমনে ল্যাপটপে কাজ করছিল। এমন সময় টেবিলের উপর পড়ে থাকা মোবাইলটা বেজে ওঠে। হাতে নিয়ে সে এক পলক নম্বরটি দেখে। একটা অপরিচিত নম্বর। বাটন টিপে কানের কাছে মোবাইল ধরে সুমন বললো- হ্যালো স্লামালাইকুম, হ্যালো...
অপর প্রান্তে কোনো শব্দ নেই। সুমন আবার একটু জোরে জিজ্ঞাসা করে, হ্যালো...। এবার উত্তর মেলে... একটা মেয়েকণ্ঠ। মেয়েটির মুখে কথা আটকে যাচ্ছে। সে টেনে টেনে বলে, ভাইয়া, আপনি কি হাসান ভাইয়া বলছেন?
সুমন খুব মজা পায়। হেসে দিয়ে বলে, না আপু, আমি সুমন ভাইয়া বলছি।
স্যরি সুমন ভাইয়া, আপনার সাথে তো আমার পরিচয় নেই। আমি মিনুর বান্ধবী বলছি, আমার নাম নিপা। আপনি কি মিনুর সেঝ ভাইয়া বলছেন?
সুমন থামে। একটু বিরতির পর বলে, কার বান্ধবী বলছেন?
নিপার বান্ধবী। আপনার ছোটোবোন নিপার বান্ধবী বলছি।
ম্যাডাম, আমার তো মনে হচ্ছে আপনি একটু ভুল করছেন।
ভুল করবো কেন? মিনু তো আমাকে এই নাম্বারটি দিয়েই বললো মোবাইল করতে। এটা কি ০১০০০০০০৬৬৭ না?
স্যরি, আপনি রং নাম্বারে করেছেন। এনি ওয়ে, আপনার কী নাম যেন বললেন? আপনার কণ্ঠটা কিন্তু ভারি মিষ্টি।
থ্যাংক্স ফর দি কমপ্লিমেন্টস। কিন্তু আপনার কণ্ঠস্বরও আমার কাছে দারুণ লেগেছে।
আপনাকেও ধন্যবাদ। কিন্তু আমার নাম্বারটি কোথা থেকে পেলেন, বলুন তো?
ভাইয়া, আমার মনে হচ্ছে আপনি ঠাট্টা করছেন। মিনু নিশ্চয়ই আপনার ছোটোবোন। তা না হলে ও আমাকে এ নাম্বারটা দেবে কেন?
আচ্ছা, আমি মিনুর বড় ভাইয়া না হলে কি আমার সাথে কথা বলা যাবে না?
ছিঃ ছিঃ ভাইয়া, ওভাবে বলছেন কেন? আমি কি বলেছি যে আমি আপনার সাথে কথা বলবো না?
থ্যাংক ইউ। এটা কি আপনার নাম্বার?
হ্যাঁ, একান্তই আমার।
তা হলে তো মাঝে মাঝে কথা বলা যাবে। আপত্তি আছে কোনো?
দ্যাট উড বি মাই প্লেজার। আপত্তি থাকবে কেন?
আপনার ল্যান্ডফোন নেই?
হ্যাঁ আছে, তবে ওটা বাবা-মার ঘরে থাকে।
তাতে অসুবিধে নেই, আমার ল্যান্ডফোন আছে। অবসর পেলে মিস্ডকল দেবেন, আমি আপনাকে ল্যান্ড ফোনে কল করবো।
আইডিয়াটা দারুণ।
আমার নাম্বার ০০০০০০৪। বুঝেছি মনে রাখতে পারবেন না। আপনার নাম্বারটা প্লিজ?
৭০০০০০০।
মোবাইলে যে অনেক বিল উঠে গেলো আপনার।
আরে ধূর, বিল না উঠলে মোবাইল কোম্পানি চলবে কী করে?
আপনি কী করেন যেন?
ভাইয়া, আপনার রসিকতাটা রেখে একটু মিনুকে ডেকে দিন না প্লিজ। আপনিও ঠিক হাসান ভাইয়ার মতো, একবার কথা শুরু করলে আর থামতেই চান না।
আচ্ছা, আপনি কি শুধু মিনুর সাথে কথা বলতেই ফোন করেছেন, না আমার সাথে কথা বলবেন বলে মিনুর নাম করছেন?
ছিঃ, আপনি না কী যে একটা, দিন না ভাইয়া মিনুকে। আপনি কিন্তু আমার প্রচুর বিল উঠিয়ে দিচ্ছেন।
এই যা, কিছুক্ষণ আগে বললেন বিল উঠলে ক্ষতি নেই, এখন আবার টাকার ওপর মায়া পড়ে গেলো?
বুঝতে পেরেছি ভাইয়া, আপনি খুবই দুষ্টু, আমি রাতে আবার ফোন করবো, দশটায়। মিনুকে কিন্তু ঠিক দশটায় মোবাইলটা হ্যান্ড ওভার করবেন। নইলে খবর আছে। বলে নিপা লাইন কেটে দেয়।
কিন্তু দশটায় নিপার ফোন এলো না। সাড়ে দশটায়ও না। সুমন অবশ্য ভেবে কোনো কূলকিনারা পায় নি এই নিপা মেয়েটা কে, সে তার নাম্বারই বা কোথা থেকে পেলো। মিনু নামে তার কোনো ছোটোবোন নেই, অথচ সে বলছে মিনুই তাকে এ নাম্বারটা দিয়েছে। মিনুটাই বা কে?
রাত এগারটার দিকে সুমন কল দেয় নিপাকে।
হ্যালো স্লামালাইকুম। কী খবর ভাইয়া, ভালো?
হ্যাঁ ভালো। দশটায় না কল করার কথা ছিল?
ওহ্হো... হ্যাঁ। আসলে ভাইয়া খুব একটা মজার কাণ্ড হয়েছিল।
মজার কাণ্ড? কী রকম?
আপনার সাথে কথা বলার কিছুক্ষণ পরই মিনু ফোন করে, ওর ভাইয়ার মোবাইল থেকে।
ও...। আচ্ছা মিনু কে?
মিনু আমার ক্লাসমেট। আগামীকাল আমাদের এক জায়গায় যাওয়ার প্রোগ্রাম আছে। আমি যাবো কিনা তা কনফার্ম করে বলার জন্য ওর ভাইয়ার মোবাইল নাম্বার দিয়েছিল।
কিন্তু সে আমার মোবাইল নাম্বার দিল কেন?
মজার কাণ্ডটা ঘটেছে এখানেই। ওর ভাইয়ার মোলাইল নাম্বার ০১০০০০০০৯৯৭। একটা টুকরো কাগজে লিখেছিল। ভুলবশত ওর ইংরেজিতে লেখা নাইন সংখ্যাটাকে সিক্স হিসেবে ডায়াল করি, ফলে নাইন নাইন সেভেন এর জায়গায় সিক্স সিক্স সেভেনে রিং চলে যায়। খুব মজার না ঘটনাটা? বলে নিপা একটু মিষ্টি করে হাসলো।
কী দারুণ সৌভাগ্য আমার! সুমন বলে।
সোভাগ্য তো আমারও। আপনার মতো একজন মানুষের সাথে পরিচয় হলো।
আচ্ছা, আপনি কী করেন?
আমি এবার এইচএসসি দিলাম। সিটি কলেজ থেকে। আপনি?
আমি ঢাকা ভার্সিটিতে পড়ছি। ইংলিশ ফাইনাল ইয়ারে।
এখন কি বাসায়?
হ্যাঁ, বাসায় তো। এতো রাতে আমি কখনো বাইরে থাকি না। সুমনের কণ্ঠে রসিকতা।
কেন, মা-বাবার শাসন? নাকি নিজে নিজেই ভদ্র ছেলে?
ভদ্রতা নিজে নিজে। নিজে ভদ্র না হতে পারলে অন্যের শাসনে কেউ হয় না।
এটা কি নিজস্ব ফিলসফি?
একান্তই আমার।
আপনার ইনটেলেক্টফুল ফিলসফিটা বেশ ইন্টারেস্টিং।
আই এ্যাম ইমপ্রেস্ড।
থ্যাংক ইয়্যু। তো ভাইয়া, আপনার সাথে কথা বলে বেশ তৃপ্তি পেলাম। মাঝে মাঝে ফোন করলে খুশি হবো।
আমিও আপনার সাথে কথা বলতে পেরে নিজেকে গর্বিত মনে করছি।
আজ তাহলে রাখি ভাইয়া?
ওকে, আল্লাহ হাফেজ।
আল্লাহ হাফেজ।
৩০ সেপ্টেম্বর ২০০৬
০২ রা মার্চ, ২০২২ সকাল ৮:১৮
সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: শুরুতে ছিল ১টা গল্প। পরে সেখান থেকে দুইভাগে ভাগ হয়ে গল্প হয়ে যায় দুইটা। এ অংশ ছিল গল্পের অনুক্রমণিকা পরের অংশ অন্যত্র আছে, আরেকদিন দেয়া হবে
মোবাইল নাম্বারের ব্যাপারটা আমার আগেও স্মরণে ছিল। এ নাম্বারগুলো আমার নিজস্ব, তাই কোনো ঝুঁকি মনে করি নি। কিন্তু কত ভাবেই তো কত বিড়ম্বনার সৃষ্টি হতে পারে (আগে হয়েছেও, স্রেফ আমারই কোনো এক গল্প নিয়ে), তাই এগুলো আমূল পালটে দিলাম। আপনার এ পয়েন্টটা বুদ্ধিদীপ্ত ছিল।
ভাবী পোস্টটা পড়ে আর কী করতো? অনেক গল্পের প্রথম পাঠিকাই তো স্বয়ং ভাবী, যদিও মনে পড়ে না এটা তিনি কখনো পড়েছেন কিনা
©somewhere in net ltd.
১| ০২ রা মার্চ, ২০২২ রাত ১:২৫
জটিল ভাই বলেছেন:
বারবার ভাইয়া ডাক কি হৃদয়ের রক্তক্ষরণের কারণ হয়নি?
পোস্টের নামে এভাবে ওপেন নাম্বার দেওয়াটা কিন্তু রহস্যময়! ভাবী যদি পোস্টটা পড়তো!