নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

শব্দকবিতা : শব্দেই দৃশ্য, শব্দেই অনুভূতি [email protected]

সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই

দুঃখের কবিতাই শ্রেষ্ঠ কবিতা। ভালোবাসা হলো দুঃখ, এক ঘরে কবিতা ও নারী।

সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই › বিস্তারিত পোস্টঃ

আই-ফ্রেন্ড

২৩ শে মার্চ, ২০২২ রাত ১১:৫৯

কলিংবেল টিপতেই ইমু ভাবী এসে দরজা খুলে দিল। একগাল মিষ্টি হাসি ছড়িয়ে দিয়ে সে বলে উঠলো, শাহিদ ভাইয়া, আপনি এতদিন পরে? ... ইশ, আপনার কথা কদিন ধরে আমার এত মনে পড়ছিল... জানেন, পরশু রাতে আপনাকে স্বপ্নে দেখেই আমার মনটা খুব খারাপ হয়ে গেল।
কী এমন খারাপ স্বপ্ন সে দেখেছিল তা জিজ্ঞাসা করলো না। প্যান্টের পকেট থেকে ক্যান্ডিগুলো বের করে ইমু ভাবীর দিকে হাত বাড়িয়ে দেয়, ভাবী যেন আগেই এটা জানতো, ঠিক সেভাবেই হাত বাড়িয়ে অতি সহজাতভাবে ও-গুলো সে মুঠোয় তুলে নেয়।
বসছেন না কেন? বলেই শাহিদের দিকে একটা চেয়ার এগিয়ে দেয়।
বসবো না। এ কথা বললেও শাহিদ চেয়ারের সামনে গিয়ে অলসভাবে বসে পড়ে।
শাহিদ ভাইয়া, আপনি কি সাঁতার জানেন?
শাহিদ হেসে দিয়ে বলে, খাল-বিল-পুকুরের পানিতে বেড়ে উঠলাম, আর সাঁতার জানবো না?
ইমু ভাবী মুখটা খুব করুণ করে বলে, স্বপ্নে কী দেখলাম জানেন? কেরাই নৌকা ভাড়া করে আমরা আড়িয়াল বিলে নৌকা বাইচ দেখতে গেছি। অনেক আনন্দ হচ্ছে। আপনি আমাকে মুরলি কিনে দিলেন...। তারপর ভাবী একটু মুচকি হেসে বলে, স্বপ্নে কিন্তু আমার কোনো বাচ্চা-কাচ্চা নেই। নৌকা বাইচ দেখে ফেরার পথে প্রচণ্ড ঝড় উঠলো। মাঝ বিলে নৌকা ডুবে গেল। নৌকার সবাই দেখি সাঁতরে পাড়ে উঠে গেছি, কিন্তু আপনি নেই। ইমু বলে কী, আপনি সাঁতার জানেন না, তাই ডুবে মারা গেছেন। এই কথা শুনে আমি এমন জোরে কাঁদতে শুরু করলাম, দেখি সে আমাকে ঠেলছে আর ধমক দিচ্ছে, এই কাঁদছো কেন? কাঁদছো কেন?
শাহিদ হেসে দেয়। বলে, খুকী, স্বপ্ন স্বপ্নই। তা না হলে ঝড়ের মধ্যে মাঝ বিলে নৌকা ডুবে গেলে কি কেউ এতদূর সাঁতরে পাড়ে উঠতে পারে?
আমার মনে হয় আপনি পারেন।
আপনার কীভাবে এমন ধারণা হলো?
আমি জানি না। কিন্তু আমার মনে হয় আপনার এমন একটা অসাধারণ ক্ষমতা আছে।
আপনি একটা অদ্ভুত মেয়ে।
ইমু ভাবী মিষ্টি করে হেসে মাথা নীচু করে।
কী খাবেন? ভাবী জিজ্ঞাসা করে।
খিদে নেই, শাহিদ চেয়ারে গা এলিয়ে দিয়ে বলে, পাগলটা কোথায়?
সে তো কাল দেশের বাড়ি গেছে।
ওওও। আজ কি বাসায় ফিরবে?
না, কাল সকালে ফিরবে।
তাহলে চলুন এক কাজ করি।
কী?
তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে নিন। জলদি।
কেন?
জাতীয় জাদুঘরের সামনে আজ চটপটি খাব।
আমি কিন্তু ভালো চটপটি বানাতে পারি।
আপনারটা অনেক খেয়েছি। জাদুঘরের অডিটরিয়ামে আজ ‘মাটির ময়না’ ছবি দেখানো হবে। গত ‘ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে’ এটা আমি দেখেছিলাম, জাতীয় জাদুঘরের অডিটরিয়ামেই দেখানো হয়েছিল। ছবিটা আমার কাছে খুবই ভালো লেগেছিল। দেখতে দেখতে আপনার কথা খুব মনে পড়েছিল, ওটা আপনাকে দেখাবোই। আজ চটপটি খেয়েই ঢুকে পড়বো। বাচ্চাদের নেয়ার দরকার নেই। ওরা খালাম্মার কাছে থাক।
আমি তো এখনো গোসল টোসল কিছুই করি নি।
একদিন না করলে কিছু হবে না। ঝটপট রেডি হয়ে নিন।
ইমু ভাবী রেডি হওয়ার জন্য চলে গেল। শাহিদ ভাবে, এই অসাধারণ ছবিটা দেখে নিশ্চয়ই ভাবী কাঁদবে, কারণ তার মন খুব নরম, শাহিদের মনের মতোই। আলেয়া আপুর মনটাও এত নরম ছিল। ছোটোবেলায় ওদের টেলিভিশন ছিল না, পাশের বাড়িতে নাটক সিনেমা দেখতো। করুণ কোনো দৃশ্য দেখলেই আলেয়া আপু কেঁদে কেঁদে বুক ভাসাতো। রাতে শুয়ে শুয়েও সে কাঁদতো, শাহিদ তখন শক্ত করে আপুর গলা জড়িয়ে ধরে থাকতো, আর ফিশফিশ করে বলতো, আপু, তুই কাঁদিস না, তুই কাঁদলে আমারও খুব কান্না পায়। হঠাৎ একদিন শাহিদের কলেরা হলো, সবাই তাকে নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়লো, কোন ফাঁকে আলেয়া আপুও কলেরায় পড়ে গেল, দুদিনের মাথায় শাহিদ ঝরঝরে সুস্থ হয়ে উঠলো, কিন্তু দুপুরেই আলেয়া আপু মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়লো। আপুর জন্য তারপর সে কত কেঁদেছে, গোপনে, নির্জনে, গভীর রাত্রিতে শুয়ে শুয়ে, খারাপ স্বপ্ন দেখে ঘুম ভেঙ্গে গেলে।
প্রথমবার ‘মাটির ময়না’ ছবি দেখার পর শাহিদ খুবই অভিভূত হয়ে গিয়েছিল। ছবি দেখা শেষে পরিচালক তারেক মাসুদের সাথে কিছুক্ষণ অন্তরঙ্গ আলাপ করবার সুযোগও সে পেয়েছিল, অবশ্য একা নয়, অনেক দর্শকের সাথে, জাতীয় জাদুঘরের প্রবেশ পথে দাঁড়িয়ে তিনি বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দিচ্ছিলেন, শাহিদও বেশ কয়েকটা প্রশ্ন করবার সুযোগ পেয়েছিল। ‘মাটির ময়না’ তারেক মাসুদের বাল্যজীবন ভিত্তিক ছবি। এই ছবি দেখার পরই শাহিদের মনে ইচ্ছে জেগেছিল, ‘মাটির ময়না’ ছবির মতোই সে একটা করুণ ছবি বানাবে, এটির নামও হতে পারে ‘মাটির ময়না’, তবে দ্বিতীয় খণ্ড। সেই ছবিটি আলেয়া আপুর জীবন থেকে নেয়া হবে, তবে শাহিদের জীবনটাও তা থেকে বাদ যাবে না।
ছবি বানাবার তীব্র বাসনা এখনো তার বুকের মধ্যে আগুন জ্বালে। তার ইচ্ছে মৃত্যুর পূর্বে সে অন্তত তিনটি ছবি বানাবে। এক সময়ে হুমায়ূন আহমেদের গল্প নিয়ে একটা কালজয়ী সিনেমা করার শখ তার হয়েছিল। হুমায়ূন আহমেদ দিনে দিনে তার ধরাছোঁয়ার বাইরে চলে যাচ্ছেন, তাঁকে নিয়ে ছবি করার ইচ্ছে আপাতত বাদ। ইদানীং ইমনের মাথায়ও এই ভূত চেপে বসেছে। তবে ওর পরিকল্পনা একটু অন্যরকম। ইমন ছোটো থেকে ধীরে ধীরে বড়ো’র দিকে পা বাড়াতে চায়, সেই হিসাবে তার প্রথম পদক্ষেপ হলো টেলিভিশন নাটক তৈরি করা। ইমন বলে, সাহিত্যে খ্যাতি পেতে চাইলে আগে মিডিয়ায় পরিচিতি পেতে হবে, মিডিয়ায় পরিচিতির জন্য নাটক তৈরি ও প্রচারের কোনো বিকল্প নেই। আজকাল ওদের তুলনায় বয়সে কত তরুণ ছেলেরা টিভি নাটক বানিয়ে রাতারাতি বিপুল নাম করে ফেলছে। শাহিদ অবশ্য এ সম্পর্কে একটু দ্বিমত পোষণ করে। সাহিত্য আর টেলিভিশন নাটক এক নয়। সাহিত্যে খ্যাতি পাওয়ার জন্য ভিন্ন মাধ্যমে খ্যাতি অর্জনটা অপরিহার্যও নয়। দৈবাৎ এমন জুটে গেলেও সেটা নিরেট প্রাপ্তি হয় না। সাহিত্যের প্রয়োজনেই সাহিত্যকে ভালোবাসতে হবে, সাহিত্যে আত্মোৎসর্গ করে যেটুকু প্রাপ্তি মিলবে সেটাই সত্যিকারের প্রাপ্তি। তবে ইমনের মতো টেলিভিশন মিডিয়ায় পরিচিতি অর্জন করার পর মিডিয়াকে একেবারে ছেড়ে দিয়ে সে সাহিত্যে ফিরে যেতে চায় না, সে-ও নাটক তৈরি করবে, সারাজীবন ভরে মাত্র তিনটি নাটক তৈরি করলেও কোনো আক্ষেপ নেই, তবে তা হতে হবে এমন যা মানুষকে বিষম ভাবিয়ে তুলবে, একটা নতুন দিগোন্মোচনের ইঙ্গিত তাতে থাকতে হবে। সে সাহিত্যেও থাকবে, একই সঙ্গে মিডিয়ায়ও থাকবে। ইমন অতি শীঘ্র নাটক করবার জন্য শাহিদকে চাপ দিয়ে আসছে। সে বলে, প্রথম নাটকটা হতে হবে ফুল অব ফানস, হাস্যরসে ভরপুর। নাটকে গরীব-মিসকিন মার্কা নায়িকাদের তরুণরা পছন্দ করে না, নায়িকাকে ধনীর দুলালী হতে হবে, শ্যুটিং হবে একটা অভিজাত বাসায়, ওটাই নায়িকাদের বাসা, নায়িকাটিকে হতে হবে চোখ-ধাঁধানো রূপসী ও স্মার্ট, বাস্তবে সুশিক্ষিত এবং নবাগত, আগামী দু-তিন বছর তাদের নাটক ছাড়া অন্য কোথাও অভিনয় করতে পারবে না, ভালো জিনিস সর্বত্র ছড়িয়ে পড়লে মূল্য কমে যায়। কিন্তু শাহিদ চায় একটা সিরিয়াস টাইপের নাটক করতে। কোনো অভিজাত বাসার দরকার নেই, শ্যামপুরে ওর যেই কোচিং সেন্টারটা আছে ওটাই হবে নাটকের লোকেশন। পাত্রপাত্রীর সংখ্যাও হবে অনেক কম। প্রধান চরিত্রটি ইমন নিজেই রোল করবে, একটা জীবনঘনিষ্ঠ চরিত্র হবে এটি, যে যুবক জীবন সংগ্রামে বার বার পরাজিত, তবুও অকুতোভয়ে সামনে এগিয়ে চলছে নিশ্চিত বিজয়ের লক্ষ্যে। এটা ইমনেরই জীবনকাহিনি। শাহিদ মনে মনে নাটকের বিষয়বস্তু ঠিক করে ফেলেছে। আরো দুটি চরিত্র থাকবে, একটি ছেলে একটি মেয়ে, দূরে কোথাও যাওয়ার দরকার নেই, ইমনের ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে সুমন নামের যে ছেলেটি আছে সে সুদর্শন, বীনা নামের মেয়েটির মতো সুন্দরী মেয়েও খুব কম হয়। এদের নিয়ে নাটক করলে খরচের একটা বিরাট অংক বেঁচে যায়, নায়ক-নায়িকাদের পারিশ্রমিক। ওরা তো আর পারিশ্রমিক চাইবে না, অভিনয়ের সুযোগ পাচ্ছে এটাই ওদের জন্য সবচাইতে বড়ো পুরস্কার।
এসব শাহিদ আর ইমনের আকাশকুসুম কল্পনা ছাড়া আর কিছুই নয়, এতকিছু করার মোহ ওদের আছে, কিন্তু সামর্থ্য আছে কিনা এ সম্পর্কে ওরা নিশ্চিত নয়, ওরা আজও জানে না ওদের স্বপ্ন কোনোদিন পূরণ হবে কিনা।

সেজেগুঁজে মুখচোখ বেজার করে সামনে দাঁড়িয়ে আছে ইমু ভাবী।
রেডি? ফাইন। চলুন। চেয়ার ছেড়ে উঠতে উঠতে শাহিদ বলে।
শাহিদ ভাইয়া, একটা কথা বলতে চাইছিলাম। ইমু ভাবী মাথা নীচু করে নরম স্বরে বলে।
কী কথা?
আপনি আবার কিছু মনে করবেন না তো?
মনে করাকরির কী আছে? বলুন।
ওদের দাদি বলছিল কী।
কী বলছিল?
থাক, আপনি একাই চলে যান। আমার একটু মাথা ধরেছে। হলে ঢোকার পর যদি আরো বেড়ে যায়।

শাহিদ পরে বুঝতে পেরেছিল, ভাবীকে ওদিন ওভাবে জাতীয় জাদুঘরে নিয়ে যাওয়ার প্রস্তাব দেয়াটা ঠিক হয় নি। সে তাকে যা-ই ভাবুক না কেন, সে তার আপন বোনও নয়, সে এক পরস্ত্রী, ইমু শুনলে কি এটা সহজভাবে নিতে পারতো? ভাবীও হয়ত প্রথমে এটা সহজভাবেই নিয়েছিল, কিন্তু রেডি হবার পর তার মাথায়ও এই জিনিসটা টোকা দেয়। শাশুড়ি তাকে কিছুই বলেন নি, ওটা তার বানানো কথা।
ইমু ভাবীর সাথেও আর যোগাযোগ হয় না বহুদিন। যোগাযোগ না করাই সবচেয়ে ভালো। যত যোগাযোগ, ততই বিচ্ছিন্নতা, ততই মনোকষ্ট।
কোনো আঘাতকেই বড়ো করে দেখতে নেই। কোনো আঘাতকেই আঘাত মনে করতে নেই। জীবনে কোনো কষ্টকে, দুঃখকে প্রশ্রয় দিতে নেই। অতীতে যা ঘটে গেছে পুকুরে গোসল করে সব ধুয়েমুছে গা ঝাড়া দিয়ে উঠতে হবে, ঝরঝরে শরীর, ফুরফুরে মন। সজীবতায় ভরপুর।

এরই মধ্যে হঠাৎ একদিন সেমন্তির একটা কুরিয়ার এলো।

'আই-ফ্রেন্ড' উপন্যাসের অংশ বিশেষ এখানে দেয়া হয়েছে

**

'আই-ফ্রেন্ড', উপন্যাস, একুশে বইমেলা ২০০৫

**

ডাউনলোড লিংকঃ উপন্যাস 'আই-ফ্রেন্ড'


অথবা বইটই অ্যাপ

মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ২৪ শে মার্চ, ২০২২ রাত ১২:৪২

জটিল ভাই বলেছেন:
আই ফ্রেন্ডের চেয়ে উত্তম
নয় কি আইফোন?
এ যুগের এরা বুঝিবে কি
কে আসলে আপন?

মাটির ময়নার চেয়ে টম
আর জেরির কর্ম,
এসবই এদের কাছে চিল
আনন্দ, ফুর্তি, ধর্ম!

(মাটির ময়নার কথা মনে করে দিলেন। সেইসাথে মনে পরে গেলো এ যুগের পোলাপানের কথা!)

২| ১৬ ই এপ্রিল, ২০২২ ভোর ৬:১১

মিরোরডডল বলেছেন:




আই-ফ্রেন্ড উপন্যাস পড়েছিলাম কিনা মনে করতে পারছি না :(

মাটির ময়না মুভিটা দেখেছিলাম ।
তারেক মাসুদের সবগুলো কাজই অনবদ্য ।
তার অকাল মৃত্যু মেনে নেয়া কষ্টকর ।
এই মুভিতে খুব সুন্দর একটা গান আছে…

পাখিটা বন্দি আছে দেহের খাঁচায়
পাখিটা
ও তার ভবের বেড়ি পায়ে জড়ানো
উড়তে গেলে পড়িয়া যায়





আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.