নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
দুঃখের কবিতাই শ্রেষ্ঠ কবিতা। ভালোবাসা হলো দুঃখ, এক ঘরে কবিতা ও নারী।
গত কয়েকদিন ইউটিউবে প্রচুর নাটক দেখেছি। বেশিরভাগই কমেডি ড্রামা, অল্প কিছু ছিল সামাজিক নাটক। নাটক দেখার পর মন জুড়ে আনন্দের রেশ জেগে থাকতো। সেই রেশ এভাবে স্বপ্নেও স্থান করে নিবে, এটা মনে হয় নি কখনো। ইউটিউবের সিকোয়েন্স হিসাবেই হয়ত স্বপ্নের ভিতরে নাটক ঢুকে পড়লো গতরাতে। তবে নাটকে রোমান্টিসিজমের পরিবর্তে একটা বেদনাঘন আবহের সৃষ্টি হলো। স্বপ্নের সেই ঘটনাই বলছি এখন।
স্বপ্নের ভিতর দুটো নাটক কিংবা নাটকের গল্প দেখেছি। আমরা জানি, স্বপ্নের স্থায়িত্ব খুব কম। সেই ক্ষুদ্র সময়ের মধ্যেই আমার নাটক দুটো দেখা হয়, অথচ নাটক দুটোর প্রভাব খুব দীর্ঘস্থায়ী এবং মনের মধ্যে তা গভীর ছাপও ফেলেছে।
প্রথম নাটকটা প্রকৃত অর্থে নাটক কিনা তা স্পষ্ট না। একটা গ্রামীণ পরিবেশ; একটা রাস্তার পাশে বাঁশঝাড়ের ছায়া পড়েছে, বাঁশপাতার ফাঁক দিয়ে সদ্য হেলে পড়া সূর্যের আলোর ছিটা ছড়িয়ে পড়ছে, সেই সাথে মৃদু বাতাসে দোল-খাওয়া বাঁশ-শাখার ছায়াগুলো ভূমির উপরে আলোর সাথে ছন্দ তুলে ছোটাছুটি করছে। সেখানে মধ্যবয়স্ক একজন লোক বসে আছেন- একবার মনে হলো আমার অশীতিপর চাচা, পরক্ষণেই দেখা গেল চাচা নন, অপরিচিত তৃতীয় কোনো ব্যক্তি। আমার চাচা যেভাবে একটা পিঁড়িতে বসে বাঁশের ফলা চাঁছতেন, ঐ লোকটাও ওভাবে বসে হাতে একটা দা কিংবা অন্যকোনো বস্তু নিয়ে কাজ করছেন। তিনি ওখানে ওভাবে বসে থেকেই আগে ঘটে যাওয়া ঘটনাপ্রবাহ বা সিকোয়েলের কাহিনি বর্ণনা করলেন, তারপর পরের দৃশ্যগুলো উন্মুক্ত করে দিলেন, কিংবা গল্পগুলো ব্যাখ্যা করলেন। গল্পটা আমার কিছুই মনে নেই, শুধু এটুকু অনুভব করা যাচ্ছিল- গল্পের শুরুটা খুব অদ্ভুত ও জটিল ছিল। কিন্তু স্বপ্নের ভিতরেই আগের সিকোয়েলগুলোর সাথে ধারাবাহিকতা বজায় রেখে চমৎকার সমাপ্তি টানার অনবদ্য শৈল্পিকতায় আমি মুগ্ধ ও অভিভূত হয়ে গেলাম। এ মুহূর্তে মনে হলো, গল্পের শেষে একজন বেদনাবিধূর দুঃখিনী নারী কোনো এক জনমানবহীন, মরুভূমিপ্রায় প্রান্তরের মাঝখানে ঘোমটায় মুখ ঢেকে বসে পড়ে গুমরে কাঁদতে থাকবেন। ঘটনার পরিণতি এতই করুণ যে, আমি তৎক্ষণাৎ ফুঁপিয়ে কাঁদতে শুরু করলাম। এ নাটক বা গল্পের এভাবেই যবনিকাপাত হয়; কিংবা এরপর হয়ত কিছু ঘটেছিল, কিন্তু আমার স্বপ্নকোষ তা ধরে রাখতে পারে নি। ঘুমের ভিতরে স্বপ্ন শেষ হয়ে গেছে, অথচ ঘুমের ভিতরেই আমার মন বারবারই চমৎকৃত হচ্ছিল লেখকের সুনিপুণ দক্ষতা ও কৌশলে – তিনি যেভাবে গল্প শুরু করে সুন্দর সমাপ্তি টেনেছেন তার জন্য।
পরের নাটক বা গল্পটা আগের নাটকের পরবর্তী সিকোয়েল ছিল না; কিংবা এমনটাও আমি নিশ্চিত না যে, এ নাটকটা আগের নাটক শেষ হবার পর পরই দেখেছি; কিংবা একটার সাথে অন্য নাটকটা ওভারল্যাপ করেছে, ব্যাপারটা তেমনও না। কিন্তু, এ নাটকটার প্রায় পুরোটাই আমার চোখের সামনে ঘটেছে; আবার, কিছু কিছু ঘটনা আমি স্বপ্নের ভিতরেই অনুভব করে পূরণ করে নিয়েছি, অর্থাৎ, কোনো ঘটনার আগের বা পরের অংশ উহ্য থাকলে সেটা আমি নিপাতনে বুঝে নিয়েছি। ব্যাপারটা আরো পরিষ্কার করে বলি – প্রথম নাটকটা কিংবা এটা, স্বপ্নের ভিতরে আমি কোনো ইউটিউব কিংবা টেলিভিশন চ্যানেলে দেখি নি। ঘটনা আমার চোখের সামনে ঘটেছে, পাত্রপাত্রীরা স্বপ্নের ভিতরে জীবনযাপন করেছেন, যা আমার কাছে গল্প কিংবা নাটকের মতো মনে হচ্ছে। এমনও হতে পারে, আমি কিছু পাত্রপাত্রীর জীবনপ্রবাহ দেখেছি, যা আমার কাছে গল্প বলে ভ্রম হচ্ছে।
কলেজ অ্যাডমিশনের সময়ে সিনিয়র ভাইয়েরা কলেজের বিভিন্ন ক্লাসরুমের সামনে অ্যাডমিশন টেস্টের সাজেশন পেপার বিক্রি করতেন, যেগুলো ছিল ফটোকপি করা লুজশিট, যা ছিল হাতে লেখা বা স্টেনসিল্ড। আমি নীলক্ষেত থেকে ছাপানো গাইড-বই কিনেছিলাম। অ্যাডমিশন টেস্টের ফর্ম ফিল আপ করে জমা দেয়ার পর আমাকে-শহর-চেনানো ইউনুস ভাইকে সাথে নিয়ে আমি সেই সময়ের দেশের সর্বশ্রেষ্ঠ কলেজ, অত্যাশ্চর্য প্রতিভাদের কলেজ, ঢাকা কলেজের অলিগলি-করিডোর, বিভিন্ন গ্যালারি (ক্লাসরুম) ও অডিটোরিয়াম ঘুরে দেখছিলাম। সিনিয়র ভাইয়েরা সবাই তাদের নিজ নিজ সাজেশন বিক্রি করার জন্য অস্থির ছিলেন। না কিনলেই পস্তাবো, কারণ, প্রশ্ন কমন না পড়লেই মনে হবে, হায়, বড়ো ভাইদের সাজেশন পেপারেই সব কমন প্রশ্ন ছিল! তাই অনেকগুলো সাজেশন পেপার কেনার ইচ্ছে থাকলেও টাকার অভাবে অল্প কয়েকটা কিনেছিলাম।
আমার বড়ো ছেলে যখন বিবিএ, অনার্স থার্ড ইয়ারে, তখন তাকে একদিন বললাম, ‘তোমার রেজাল্টটা ভালো করার চেষ্টা করো, শুধু গান-বাজনা কইরা ভার্সিটি পার করলে তো রেজাল্ট খারাপ হবে, বিসিএস দিতে পারবা না।’ ছেলে এ কথা শুনে মুখ ম্লান করে বললো, ‘আমি তো আপনাকে অন্য বাবাদের চাইতে আলাদা ভাবছিলাম।’ আমি অবাক হয়ে এমন কমেন্টের কারণ জিজ্ঞাসা করলে সে আমাকে আরো অবাক করে দিয়ে বললো, ‘সবার বাবা-মা তাদের ছেলেমেয়েদেরকে বিসিএস দেয়ার জন্য অ্যাডভাইস দিয়া দিয়া পাগল করে ফেলে। আপনি কোনোদিন দেন নাই বলে প্রাইড নিতাম। আজ তো আপনিও দিলেন।’ সবাই কি তাহলে ‘স্বতন্ত্রতা’ই পছন্দ করে? আমি অন্য বাবাদের চাইতে ‘স্বতন্ত্র’ হতে পারি নি বলে কিছুটা হলেও বুকে ব্যথা অনুভব করেছিলাম; এবং তার পর থেকে আর কোনোদিন ছেলেকে বিসিএস অফিসার হবার জন্য কোনো প্রেষণা কিংবা অনুপ্রেরণা দিই নি। তার ভবিষ্যত সে নিজে গড়ে নিবে। প্রত্যেকের ভবিষ্যত তার নিজের ‘ভাগ্যরেখা’য় অঙ্কিত, যেটি তাকে নিজ হাতেই কেটে নিতে হয়।
বাজারে ডিফেন্স অ্যাডমিশন গাইড, কলেজ, মেডিক্যাল কলেজ বা ইউনিভার্সিটি অ্যাডমিশন গাইডের মতো বিসিএস পরীক্ষার গাইডও হয়ত থাকবে। ‘হয়ত’ বলছি এ কারণে যে, বিসিএস গাইড আমি কখনো দেখি নি, অথচ গতরাতের শেষ বা দ্বিতীয় স্বপ্নটা ছিল বিসিএস গাইড নিয়ে।
এ স্বপ্নটার পটভূমিও একটা গ্রামীণ জনপদ।
একটা রাস্তার মোড়। দুপুর গড়িয়েছে। গাছগাছালিতে রাস্তার একটা দিক ছাওয়া, অন্যদিকে সূর্যের মৃদু হলুদাভ রোদ বাঁকা হয়ে নেমে আসছে। এখানে অল্প কিছু লোকের জটলা- বাদামওয়ালা, আচারওয়ালা, ঝালমুড়িওয়ালা – এমন ধরনের কিছু দোকানওয়ালা এখানে বেচাকিনি করছেন। আমি এসব দেখছি, কিন্তু কোথায় আমার অবস্থিতি তা জানি না। আমরা টেলিভিশন কিংবা সিনেমা যখন দেখি, পর্দায় গল্প বা ঘটনা চলমান থাকে, আমরা সেই গল্পের ভিতরে থাকি না, আমরা পর্দার বাইরে দর্শক হিসাবে থাকি। স্বপ্নের এ নাটকেও আমার উপস্থিতি এরকম- মানুষের জীবনযাত্রা, চলাচল দেখতে পাচ্ছি, কিন্তু আমার অবস্থান কোথায় তা দেখতে পাচ্ছি না আমি।
আমার উল্টোদিক থেকে এমন সময় এক জীর্ণশীর্ণ, হালকা গড়নের, সামনে সামান্য কুঁজো হওয়া, সাদা ও ময়লা পায়জামা-পাঞ্জাবি পরা, গরীব ধরনের লোক বেশ হকার ছেলেদের মতো হেঁটে আসতে থাকলেন, যার হাতে একগোছা বিসিএস ভর্তি সহায়িকা – যদিও বইগুলোর নাম দেখা গেল না, কেউ আমাকে বলেও দেয় নি, তবুও স্বপ্নসুলভ নিয়মে আমি জানলাম, এগুলো বিসিএস ভর্তি পরীক্ষার গাইড। এবং এমন সময়ে আমি বুঝতে পারলাম, আমি একজন শিক্ষিতা ও উচ্চমার্গীয় ভদ্রমহিলার পাশে বায়বীয় অবস্থায় উপস্থিত রয়েছি। যুগপৎ দেখতে পাচ্ছি, আমার দৃষ্টির ডানদিকে তীর্যক কোণ বরাবর খুব নিকটে তিনি দাঁড়িয়ে আছেন; তার বাদামি রঙের অভিজাত শাড়িটা আমার চোখে দৃশ্যত হচ্ছে। পরের মুহূর্তেই গাইডওয়ালা লোকটি এ মহিলার হাতে একখানা ভর্তিগাইড তুলে দিলেন। মহিলা বইটি হাতে নিয়ে পৃষ্ঠা খুলে তাতে কী যেন লিখতে থাকলেন। আমি আড়চোখে কিংবা অন্তরের চোখে দেখতে পাচ্ছি - তার ঠোঁটে এক রহস্যময় নিষ্ঠুর ক্রূর হাসির অস্ফুট চিকন রেখা ভেসে উঠছে; হ্যাঁ, ঠোঁটখানি একটুখানি বাঁকাও করলেন তিনি। গাইডওয়ালার প্রতি কিছুটা ক্ষোভও হয়ত তার মনে ফুটে উঠছে। তার হাতে গাইড-বই তুলে দেয়ায় তিনি আহত বা অপমানিত বোধ করছেন। এসব বইয়ের তার কোনো প্রয়োজন নেই। ইচ্ছে করলে তিনি নিজেই এখন সেরা বিসিএস গাইড রচনা করতে পারেন। এখানে এই বিপনিচত্বরে এসে দাঁড়ানো মানেই কি বিসিএস গাইড কেনা? কেন তার হাতে মানুষ এসব আবর্জনা তুলে দেয়? তাকে দেখে কি কিছুই বোঝা যায় না? ভদ্রমহিলার অন্তরে অহঙ্কারগুলো আক্রোশে নীরবে ফুঁসতে থাকে। মানুষের কীভাবে এত আস্পর্ধা হয়? কাণ্ডজ্ঞান বলতে কিছু নেই মানুষের- গাইডওয়ালার বোঝা উচিত ছিল, তিনি বিসিএস পরীক্ষার্থী নন, বরং স্বয়ংসম্পূর্ণ বিসিএস অফিসার একজন, যিনি নিজেই অগণিত বিসিএস অফিসারের সুপিরিয়র তত্ত্বাবধায়ক। শুরুতে তিনি গাইড-বইয়ের ভিতরের পাতায় কী যেন লিখেছিলেন মনে হয়েছিল; কিন্তু স্বপ্নপট বদলে গেছে; এখন দেখা যাচ্ছে তিনি একটা ফুল’স ক্যাপ সাইজ সাদা কাগজে কবিতার মতো ইংরেজিতে দুটো প্যারাগ্রাফ লিখেছেন- চমৎকার হাতের লেখা, সাদা কাগজের উপরে নীল কালির অক্ষরগুলো শিল্প হয়ে ফুটে উঠেছে। তিনি কাগজটি কিংবা বিসিএস গাইডটি লোকটার হাতে ফেরত দিলেন, যখন তার চোখে-মুখে গাইডওয়ালার প্রতি বিরক্তি ঝরে পড়ছিল। ‘জীর্ণ-শীর্ণ’ করুণ লোকটার গাইড-বইটি বিক্রি হলো না; বিমর্ষ মুখে ওটি ফেরত নিয়ে চলে যেতে থাকলেন গাইডওয়ালা। একটু দূরে গিয়ে তিনি ঘুরে দাঁড়ালেন। ভদ্রমহিলার দিকে তাকাচ্ছেন তিনি, তার কপালে সামান্য ভাঁজ পড়ে, চোখদুটো একটু সরু হতে থাকে, সেখানে জমে উঠতে থাকে একগাঁদা জিজ্ঞাসা ও বিস্ময়। কোথায় যেন ভদ্র মহিলাকে দেখেছেন তিনি। হয়ত চিনতে পারবেন তাকে। চেষ্টা করলেই চিনতে পারবেন। তিনি খুব করে তাকে চিনতে চেষ্টা করছেন। হ্যাঁ, তার মনে পড়ছে। এখানে দ্রুত, খুব দ্রুত একটা ফ্ল্যাশব্যাক ঘটতে থাকে।
এই ভদ্রমহিলা তার পরিচিতা। অনেকদিন আগে একবার তাদের দেখা হয়েছিল, ঠিক এখানেই। তারা একসাথে এই জায়গা থেকে বিসিএস ভর্তি-গাইড কিনেছিলেন। বিসিএস ভর্তি নিয়ে তাদের মধ্যে বেশ আলোচনাও হয়েছিল। একদিনের দেখায় কার কতটুকুই বা মনে থাকে? গাইডওয়ালা সেদিনের কথা ভোলেন নি।
লোকটা ঘুরে দাঁড়িয়ে আছেন। তার ঠোঁটে পান খাওয়ার চিহ্ন। তার গরীব চোখদুটো কিছুটা উজ্জ্বল হয়ে ওঠে। তিনি সম্ভবত মুখ ফুটে বলতে চাইছেন- ‘আরে আরে, আপনি সেই বিসিএস পরীক্ষার্থী মেয়েটা না? আপনি কি আমাকে চিনতে পেরেছেন? সেই যে একবার আমাদের দেখা হয়েছিল?’ তিনি কথাটা বলতে চাইছেন, হয়ত এখনই বলবেন… কিন্তু, শেষ মুহূর্তে তিনি কথাটা আর জিজ্ঞাসা করলেন না। আমার তখনো ঘুম ভাঙে নি, কিন্তু গল্পটা ওখানে ঐ অবস্থায়ই শেষ হয়ে যায়, কিংবা দৃশ্য ওখানে ‘ফ্রিজ’ বা স্থির হয়ে যায়। আমি ঘুমের ভিতর কিংবা স্বপ্নের ভিতরেই বলতে থাকি- অসাধারণ একটা প্লট তো! একজোড়া যুবক-যুবতী, যারা জীবনের কোনো এক পর্যায়ে একসাথে বিসিএস ভর্তি গাইড কিনেছিল, একসাথে নিয়মিত স্টাডি করতো। মেয়েটা বিসিএস পাশ করে ডাকসাইটে অফিসার হয়ে গেল। উচ্চপদ আর আভিজাত্যের চাপে তার অতীতের দৈন্য নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়, বলা যায়, তার কোনো অতীত থাকে না, পুরোটাই সুবর্ণ বর্তমান। ছেলেটার বিসিএস পরীক্ষার বয়স পেরিয়ে যায়, ভাগ্যচক্রে সে নিঃস্ব হয়ে পড়ে, একসময় নিজেই বিসিএস ভর্তি গাইড ফেরি করে বিক্রি শুরু করে। ভাগ্যের কী নির্মম পরিহাস! আমি স্বপ্নের ভিতরই আফসোস করতে থাকি- হায়, এ নাটকটা যদি ইতিমধ্যে কেউ না বানিয়ে ফেলতো, এটা নিয়ে কত সুন্দর একটা গল্প লিখতে পারতাম!
ঘুম ভাঙবার পর আমি এ ভেবে অবাক হলাম যে, স্বপ্নে দেখা নাটক বা গল্পটা আদতেই অভিনব। আমি এ যাবত যত নাটক দেখেছি বা গল্প পড়েছি, তা থেকে এর থিম সম্পূর্ণ ভিন্ন। ইউটিউব বা টিভি চ্যানেলে নাটক দেখার প্রতিফলন হিসাবেই স্বপ্নের ভিতরেও নাটক মঞ্চস্থ হয়েছে; তবে স্বপ্নের থিমের সাথে আমার বাস্তব চালচিত্রের কোনো মিল আছে কিনা তা নিয়ে আমি নিজেই সন্দিহান। বিসিএস নিয়ে বড়ো ছেলের সাথে সেই যে বহুদিন আগে একবার আলোচনা হয়েছিল, তারপর আর কোনোদিন সেই আলোচনা আমাদের টেবিলে স্থান পায় নি। ছেলের ভবিষ্যত যথারীতি ছেলের হাতেই ন্যস্ত, সে আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছে সুন্দর ভবিষ্যত গড়ে তোলার জন্য। ইতোমধ্যে আমার শেষ গল্পটা লেখার পর মাঝখানে বড়ো একটা বিরতি চলে গেছে। মাথার ভিতর জড়ো হয়েছে আরো অসংখ্য প্লট। গত সন্ধ্যায় নতুন আরেকটা প্লটের কথা ভাবছিলাম, যেটি মনে মনে গুছিয়েও ফেলেছি। আজ আমার সেই গল্পটিই লেখার কথা ছিল। ‘লিরিক’ নামক একটা গল্প লেখা পেন্ডিং রয়েছে অনেকদিন ধরে, যেটি লিখবো বলে সুজানাকে কথা দিয়েছিলাম। গত সন্ধ্যায় যে প্লটটা গুছিয়ে ফেলেছি, ওটা আসলে সেই ‘লিরিক’ গল্পের প্লট। সুজানাকে দেয়া কথা রাখার জন্য হলেও ঐ গল্পটা লেখা হবে, কিন্তু, স্বপ্নের এই অসাধারণ থিমটা যদি ধরে না রাখি, তাহলে অন্য অনেক ব্রিলিয়ান্ট থিমের মতো এটাও একসময় হারিয়ে যেত, তাই স্বপ্নটাকে ধরে রাখার জন্যই স্বপ্নে পাওয়া নাটকের গল্পটা লিখে ফেললাম।
***
‘লিরিক’ লিখতে দেরি হচ্ছিল। সুজানাও ওটা লেখার জন্য বার বার তাগাদা দিচ্ছিল। সুজানাকে শান্ত করার জন্যই স্বপ্নরচিত নাটকের গল্পটা পড়তে দিলে সে এটা পড়ে অভিভূত হয়েছিল। তবে, তার কয়েকটা মন্তব্যে আমি যারপরনাই বিরক্ত বোধ করি এবং মনে মনে তার প্রতি আমার ক্ষোভ চরম আকার ধারণ করে। আমার উপর যাদের ব্যক্তিত্ব কিংবা কীর্তির কোনো প্রভাব নেই, যাদের লেখালেখি নিয়ে আমি কোনোদিনই ভাবি নি, কিংবা আমাকে ভাবায়, এমন কোনো লেখা যারা এখনো লিখতেই জানেন না, তখন কেউ যদি বারংবার বলেন, তাদের কোনো একটি লেখা বা আলোচনা থেকে প্রভাবিত হয়ে আমি স্বপ্নের ভিতর এ দুটো নাটক বা নাটকের গল্প দেখেছি, তখন আমার ক্ষোভ নিয়ন্ত্রণ কিংবা সংবরণের কোনো উপায় দেখি না। সুজানার প্রথম মন্তব্য আমি সাধারণ ভাবে নিয়েছিলাম এবং পরোক্ষভাবে বোঝানোর চেষ্টা করেছিলাম, যাদের নাম উল্লেখ করছো কুশীলব হিসাবে, ওরা এখনো স্কুলেই ভর্তি হয় নি, বা ভর্তি হলেও বড়োজোর প্লে-গ্রুপের ছাত্র, আর আমি শিক্ষকদের শিক্ষক। তোমার এতখানি আস্পর্ধা কী করে হয় আমার নামের সাথে যার-তার নাম বলার? আর শোনো, অন্যান্য যে-সব কমেন্টের কথা বলেছ, ওগুলো কারা, কোথায় বলেছে, সেটাই তো আমি জানি না; যার কথার এত গুরুত্ব দিয়ে আমার কাছে উপস্থাপন করেছ, হয়ত তিনি তোমার গুরু-সমতুল্য, আমার কাছে তিনি অষ্টম শ্রেণির ছাত্র। বয়স দিয়ে নয়, সাহিত্যের মান দিয়ে দিয়ে সাহিত্যিকের মান নির্ণয় করতে হয়। কিন্তু নির্বোধ সুজানা আমার মন্তব্যের মর্ম ধরতে না পেরে, বিষয়টি আমি স্পষ্ট করে গল্পে উল্লেখ করা সত্ত্বেও, উপর্যুপরি নানা টাল-বাহানায় প্রতিষ্ঠা করতে সচেষ্ট হলো যে, আমার স্বপ্নের নাটক দুটো তারই শুভাকাঙ্ক্ষী কতিপয় ব্যক্তির প্রভাবে কল্পিত বা সূচিত হয়েছিল। এ অবস্থায় আমার মনকে মুক্ত করার এক এবং একমাত্র পথ ছিল – এক ঝটকায় আমার মন থেকে সুজানাকে ছুঁড়ে ফেলা। অতঃপর আমি জঞ্জালমুক্ত হয়েছিলাম এবং আমার মন শান্ত হয়ে বহুদিন অব্দি স্বপ্নে রচিত দুটো নাটকের কথা ভেবে ভেবে বুঁদ ছিল, যেখানে ছিলেন আমার অশীতিপর মুক্তিযোদ্ধা চাচা, কিংবা চাচার মতোই অন্য একজন; আর ছিলেন একজন অহংকারী প্রমীলা অফিসার, যিনি ভুলে গিয়েছিলেন তাঁর জীর্ণ অতীত ও অতীতের এক অনন্য সাথিকে, যাকে আজও আমার নিজের ছায়া ভেবে দুঃখে দুঃখে লীন হতে থাকি।
২১ ডিসেম্বর ২০২০
১১ ই আগস্ট, ২০২২ রাত ২:৩৭
সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: ভাবসি শায়মা আপুকে জিজ্ঞেস করব আপনাকে ৩/৪ দিন দেখিনি তাই। আন্তরিকতার জন্য ধন্যবাদ গোফরান ভাই। ব্যক্তি জীবনে খুবই ব্যস্ত সময় যাচ্ছে। আসছি শীঘ্রই। শুভেচ্ছা।
২| ১১ ই আগস্ট, ২০২২ রাত ২:০৩
শায়মা বলেছেন: আমিও মাঝে মাঝে হাসির নাটক দেখি ভাইয়া। সবচেয়ে মজার দেখেছি রঙ্গিলা ফানুশ ১।
আর সুজানাকে একদম ছুড়ে ফেলো বুড়িগঙ্গায় তারপর নাটকটা নিশ্চিৎ মনে লেখো।
১১ ই আগস্ট, ২০২২ রাত ২:৪৩
সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: নাটক আমি অনেক দেখি। টিভি সব সময়ই ছাড়া থাকে। ক্রিকেট হলে স্পোর্টস চ্যানেলে, নইলে চ্যানেল আই, আরটিভি বা বাংলাভিশন। আগে এনটিভি দেখতাম বেশি। তবে দুঃখজনক সত্য হলো, নাটকের নাম মনে থাকে না বা রাখি না, কারণ, ব্লগিং, ফেইসবুকিং, গানিং এবং ওয়ার্কিং একসাথে করতে গিয়ে সব মিক্সিং হইয়া যায়।
লাস্ট লাইনের জন্য -
৩| ১১ ই আগস্ট, ২০২২ রাত ৩:০৮
কামাল৮০ বলেছেন: নাটক সিনেমা দেখা হয়না অনেক দিন।
১১ ই আগস্ট, ২০২২ রাত ৩:১৭
সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: অন্তত একটা গান দেখে / শুনে যান
৪| ১১ ই আগস্ট, ২০২২ ভোর ৬:২৩
কামাল৮০ বলেছেন: গান শুনানোর জন্য ধন্যবাদ।অনেক গানেই আপনার নাম দেখা যায়।তখন গর্ভ করে বলি,দেখ আমাদের ব্লগারের কত সুন্দর রুচিশীল পছন্দ।
১১ ই আগস্ট, ২০২২ সকাল ১০:১২
সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: ধন্যবাদ কামাল ভাই। আমার শেয়ার করা মিউজিক ভিডিওগুলো সচরাচর আমারই এডিট করা বা বানানো। এজন্য ক্রেডিট লাইনে গীতিকার, সুরকার, শিল্পী বা অন্যান্য কুশীলবদের সাথে ভিডিও এডিটর বা ক্রিয়েটর হিসাবে আমার নামও থাকে। কখনো অরুচিশীল কিছু চোখে পড়লে দয়া করে জানাবেন।
অনেক অনেক শুভেচ্ছা রইল কামাল ভাই।
৫| ১১ ই আগস্ট, ২০২২ সকাল ৯:০৬
সৈয়দ মশিউর রহমান বলেছেন: দীর্ঘস্থায়ী এবং মনের মধ্যে গভীর প্রভাব ফেলতে পারা এখানেই একটি স্বার্থক নাটকের স্বার্থকতা। গান ভালো লেগেছে।
১১ ই আগস্ট, ২০২২ সকাল ১০:১৫
সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: সুন্দর কথা বলেছেন মশিউর ভাই। গান ভালো লেগেছে জেনে আনন্দিত।
এই সকালে আপনার মন যেন আবার খুব বেশি নস্টালজিক না হয়ে পড়ে!!
৬| ১১ ই আগস্ট, ২০২২ সকাল ৯:৪৪
জুল ভার্ন বলেছেন: খুব সুন্দর এবং গুছিয়ে লেখার জন্য সুখপাঠ্য হয়েছে। +
ইউটিউবে আমি নাটক/মুভি দেখিনা। টিভিতে আমি কদাচিত নাটক দেখি। নেটফ্লিক্স ছাড়াও বিভিন্ন চ্যানেলে বিদেশী মুভি দেখি নিয়মিত।
১১ ই আগস্ট, ২০২২ সকাল ১০:১৮
সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: নেটফ্লিক্স কদাচিৎ দেখি। ছেলেমেয়েরা যখন সেন্ট্রাল টিভিতে দেখতে থাকে, ওদের পাশে বসে যতটুকু দেখা আর কী! ইউটিউবে আমি অধিক সময় ব্যয় করি মূলত নিজের চ্যানেলের জন্যই। সাইড বাই সাইড যেগুলো পপ-আপ করে, বা নামডাক শুনি সেগুলো দেখার চেষ্টা করি সময় পেলে। আর টিভিতে সব সময় চোখের সামনেই জ্বলছে
প্রথম লাইনটার জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ প্রিয় জুল ভার্ন ভাই।
৭| ১১ ই আগস্ট, ২০২২ সকাল ১০:২১
শূন্য সারমর্ম বলেছেন:
নাটক তাহলে ভালোর দিকে যাচ্ছে।
১১ ই আগস্ট, ২০২২ বিকাল ৪:৫৯
সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: যদিও আপনার কমেন্টের সাথে গল্পের যোগসূত্রটা ধরতে পারি নি, তবুও প্রসঙ্গটা আমার খুবই প্রিয় হওয়ায় এ ব্যাপারে কিছু হাইলাইট করছি। আমি বিটিভি আমল থেকে টিভির পোকা। শুধু নাটকই না, সূচনা সঙ্গীত থেকে জাতীয় পতাকা উড়ানো পর্যন্ত প্রায় একনাগাড়েই টিভি দেখা ছিল আমার প্যাশন। বাংলাদেশে ডিশ কেবল আসার পরও আমার টিভি দেখা খুব একটা কমে নাই। যতখানি দেখতে পারি না, তা শুধু অফিস আর ব্যস্ততার কারণে। এজন্য টিভি প্রোগ্রামের মান সম্পর্কে মোটামুটি ধারণা আমার আছে। যারা অল অন এ সাডেন টিভিবক্স খোলেন, যে প্রোগ্রামটা দেখেন, ওটা তার কাছে যেমন লাগে, তার দৃষ্টিতে প্রোগ্রামের মান ওটাই।
বাংলাদেশে এখন এত চ্যানেল, গুনেও শেষ করা যায় না এত ছায়াছবি, এত নাটক, আপনি ক'টা দেখবেন? তবে, এত বেশি চ্যানেল হওয়ায় জব অপরটিউনিটি বেড়েছে অনেক; সেলিব্রেটিদের সংখ্যাও বেড়েছে।
বিটিভি আমলে অনুষ্ঠান এত নীচের দিকে যাচ্ছিল, প্রযোজকরা কিছুতেই কিছু করতে পারছিলেন না। একমাত্র ইত্যাদিই ছিল বিনোদনের ভরসা। হুমায়ূন আহমেদসহ মাত্র কয়েকজন ভালো নাট্যকার ছিলেন। ইমদাদুল হক মিলন ছিলেন আমার কাছে সবচাইতে বিরক্তিকর নাট্যকার। দর্শক সমালোচনার প্রেক্ষিতে তখন শুরু হয় প্যাকেজ প্রোগ্রাম। তবে, যেই লাউ, সেই লাউই থেকে যায়, চাল কুমড়া বা মিষ্টি কুমড়া কিছু হতে পারে নি। এসব বলছি এ কারণে, কিছু অকেশনাল টিভি দর্শক হুটহাট করে বলতে থাকেন, আহ, কী একেকটা অনুষ্ঠান হতো বিটিভিতে, এখন আর সেই মান নাই। এরা হলো বলদ। আগেও কোনোদিন টিভি দেখে নাই, এখনো দেখে না। আতিকুল হক চৌধুরী, সেলিম আল দীন, আখতার ফেরদৌস রানা, নওয়াজীশ আলী খান - এরকম অল্প কয়েকজন ভালো নির্মাতা ছিলেন। বাকিরা দর্শকদের কিছু দিতে পারতেন না, বিরক্তি আর হতাশা ছাড়া।
এখন টেকনোলজি অনেক উন্নত। নাট্যকারের সংখ্যা অনেক। কম্পিটিশনও অনেক। বাংলাদেশী চ্যানেল ডিশ অ্যান্টেনায় ঢোকার পর থেকেই কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া টিভির মান অবশ্যই উর্ধগামী।
৮| ১১ ই আগস্ট, ২০২২ দুপুর ১২:১৪
ককচক বলেছেন:
স্বপ্ন দেখার কারণ ইত্যাদি নিয়ে ঘাটাঘাটি করে যতটা জেনেছি, 'স্বপ্ন মানুষের চিন্তা, অভিজ্ঞতা, ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা ইত্যাদির মিশ্রণ। তবে আপনার স্বপ্নের গল্প পড়ে মনে হচ্ছে আপনার মাথা স্বপ্নের মধ্যেও কিঞ্চিৎ খবরদারি চালাতে পারে। ঘুমের মধ্যে সিকোয়েন্স মেনটেন করে স্বপ্ন টেনে নিয়ে যাওয়া বিরাট ব্যাপার৷ গল্পের উপস্থাপনও বরাবরের মতো ভালো হয়েছে।
স্বপ্ন আমিও দেখি। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে মাঝেমধ্যে এমনএমন স্থান দেখি যেসব স্থান বাস্তবে আমি কখনো দেখিনি। স্পেশালি 'রেল লাইন' আমার স্বপ্নের কমন একটা মেটারিয়াল রেললাইন। এই জীবনে স্বপ্নে কত ধরনের রেললাইন আমি দেখেছি, তার কোনো হিসেব নাই। আমার স্বপ্নগুলো আমাকে নিয়ে ক্যামনে যেনো রেললাইনের দিকে চলে যায়। যেমন ধরুন, কোনোএক পাড়াগাঁয়ের ছোটো আঁকাবাঁকা পথে হাটছি, তারপর হঠাৎ দেখা যায় রেললাইন।। ঠক ঠক ঝকঝক করে একবা একাধিক ট্রেন চলে আসতেছে, আমি আটকে যাচ্ছি বা প্রিয় কেউ আটকে যাচ্ছে...
অনেক আগে এইসব স্বপ্নের কথা যখন এক নিকটাত্মীয় ডাক্তার আন্টির সাথে শেয়ার করেছিলাম, 'তুমি বোধহয় রেললাইনের স্বপ্ন নিয়ে বেশি ভাবছো বা আতংকিত, অতীতে হয়তো ট্রেন দুর্ঘটনার কোনো ভিডিও দেখেছো বা পড়েছো... যা মাথায় থেকে গেছে' 'রেললাইন মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলো, সব ঠিক হয়ে যাবে। কিন্তু এই সমস্যা আমার এখনো রয়ে গেছে।
১১ ই আগস্ট, ২০২২ সন্ধ্যা ৬:৪৭
সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: ঘুমের মধ্যে স্বপ্ন দেখার ব্যাপারে আপনি যা বলেছেন, এটাই স্বপ্ন দেখার সবচাইতে গ্রহণযোগ্য ব্যাখ্যা। বৈজ্ঞানিকভাবে আরো অনেক অনেক কারণ থাকতে পারে, তবে আমার নিজের অভিজ্ঞতায় দেখেছি, স্বপ্ন দেখার ব্যাকগ্রাউন্ড মোটামুটি এমনই। আর পোস্টেও সেটাই উল্লেখ করেছি যে, কিছুদিন ধরে ইউটিউবে প্রচুর নাটক দেখছিলাম। এখন রাতজাগার অভ্যাস হয়ে গেছে। কিন্তু আগে, বিশেষ করে স্কুল লাইফে এত রাত জাগা হতো না। ঐ সময়ে রাত জেগে কোনো গল্পের বই পড়লে, এবং যদি তা একটানা কয়েকদিন ধরে পড়া হতো, তাহলে গল্পের রেশ হিসাবে পুরো উপন্যাস কয়েক রাত ধরে স্বপ্নের ভিতর সিনেমার মতো দেখতে থাকতাম। ক্লাস নাইন বা টেনে পড়ার সময় আমি শরৎচন্দ্রের 'চরিত্রহীন' পড়েছিলাম। আড়াই দিন লেগেছিল শেষ হতে। রাত জেগে পড়তে হয়েছিল। উপন্যাস শেষ হলে আমি এক ঘোরের মধ্যে চলে যাই। কয়েক রাত ধরে আমি স্বপ্নের মধ্যে উপন্যাসের খণ্ড খণ্ড অংশগুলো দেখতে থাকলাম, আর বেদনায় কেবলই কাতর হতে থাকলাম।
আমিও মাঝে মধ্যে এমন স্বপ্ন দেখেছি, যা দেখে আমি অত্যন্ত অবাক হয়েছি এজন্য যে, আমি কোনোদিন ঘূণাক্ষরেও, এমনকি অবচেতনেও ওসব ভাবি নি বা কল্পনা করি নি। এর হয়ত কোনো বৈজ্ঞানিক বা ধর্মীয় বা আধ্যাত্মিক ব্যাখ্যা থাকবে।
মূলত, মানুষ গড়পড়তা যা ভাবে বা করে, স্বপ্নে তাই দেখে। একজন অ্যামেরিকান, যে-কোনোদিন বাংলাদেশ দেখে নি, হয়ত নামও শোনে নি, তার পক্ষে বাংলাদেশের অজপাড়াগাঁয়ে লাঙল জোয়াল গরু নিয়ে মাঠে লাঙল ঠেলার স্বপ্ন দেখাটা অসম্ভব। তেমনি, আমি কোনোদিন ইউকে বা জার্মানি যাই নি। আচার কালচার দেখি নি। জার্মানদের সাথে বসে তাস খেলার স্বপ্ন দেখাটা অসম্ভবই। তবে, এই যে এখন এ বিষয়গুলো লিখলাম, এর পরে হয়ত ঠিক ঠিকই স্বপ্নেও এ কাজগুলো দেখে ফেলবো এবং তা হবে এ লেখালেখির কারণেই
রেল লাইন নিয়ে আপনি আরো অনেক স্বপ্ন দেখবেন। এগুলো স্বপ্নে দেখতে দেখতে আপনার মনের মধ্যে একটা ছাপ হয়ে গেছে। এ নিয়ে হয়ত ভাবেন, কিংবা অবচেতনে এগুলো কাজ করে, যার ফলে এখন যেমন রেল লাইন দেখেন, আগামীতেও আপনি রেল লাইন ধরে রাতের বেলা হাঁটতে থাকবেন নিরুদ্দেশ
চমৎকার, দীর্ঘ মন্তব্য, বিশেষ করে নিজের স্বপ্নের অভিজ্ঞতা শেয়ার করার জন্য অনেক ধন্যবাদ। চমৎকার কমেন্ট। শুভেচ্ছা রইল।
৯| ১১ ই আগস্ট, ২০২২ সন্ধ্যা ৬:৫৯
ককচক বলেছেন: স্কুল লাইফে এমন ঘটনাও ঘটেছে, ধরেন খুব সকালে মাইকে কারো মৃত্যুর সংবাদ ঘোষণা করা হয়েছে। আমি ঘুমের মধ্যে হয়তো শুনেছি, এবং স্বপ্নেও দেখেছি কেউ ঐ ব্যক্তি মারা গেছে... মানুষ কাদছে। অর্থাৎ কারো মৃত্যু হলে মৃত্য ব্যক্তির বাড়ির আশেপাশে যা হয় আরকি! সব হচ্ছে।
ধন্যবাদ সুন্দর প্রতিউত্তরের জন্য।
১১ ই আগস্ট, ২০২২ রাত ৯:৫৮
সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: এটা মনে হচ্ছে খুব কমন একটা ফেনোমেনা। একসময় আমার অভ্যাস ছিল, রেডিও খুব মৃদু ভলিয়্যুমে ছেড়ে দিয়ে কানের কাছে রেখে ঘুমানো। গানের সুরে সুরে ঘুমের মধ্যেই এক মূর্ছনার সৃষ্টি হতো, সেই গানের কথাগুলো যেন ছায়াছবি হয়ে স্বপ্নের ভিতর জীবন্ত হয়ে উঠতো। অর্থাৎ, স্বপ্নের ভিতর দেখতাম, ছায়াছবিতে কোনো নায়ক কিংবা নায়িকা, কিংবা কোনো অনুষ্ঠানে শিল্পী গানগুলো গাইছেন। আবার, স্বপ্নের ভিতরেই আরেক স্বপ্ন দেখতাম, আমি শুয়ে আছি, আমার পাশে রেডিও বাজছে।
এরকম ঘটনাও অহরহ ঘটবে। ঘরের ভিতরে অনেক মানুষ কথা বলছে। হয়ত কোনো বিষয়ে আলোচনা বা তর্ক হচ্ছে। আপনি স্বপ্নের ভিতরেও সেই আলোচনা সভা দেখছেন। হয়ত সেই আলোচনার একজন আলোচকও আপনি। অদ্ভুত ঘটনাটা তখনই ঘটবে, স্বপ্নের ভিতরে কোনো বিষয়ে আপনি জোরে তর্ক করে উঠছেন, চিৎকার দিয়ে উঠছেন, সবাই চমকে উঠে আপনার দিকে তাকাবে, তারা দেখবে, আপনি ঘুমের ঘোরে জোরে জোরে চিৎকার করছেন, আর ঐ মুহূর্তে আপনার ঘুমও ভেঙে যাবে।
ভোরে আজানের সময়ও এরকম হয়। ঘুমের ঘোরে বা স্বপ্নে দেখছেন, মুয়াজ্জিন আজান দিচ্ছেন, স্বপ্নের ভিতরে হয়ত মুয়াজ্জিনের পাশে দাঁড়িয়ে তন্ময় হয়ে আজান শুনছেন। আজান শেষে দোয়া পাঠ করছেন। নিজ কণ্ঠের দোয়ার শব্দে নিজের ঘুম ভেঙে যাবে।
আপনার উপরের কমেন্টের উত্তরে আরো দু-একটা হাইলাইট যোগ করি। ছোটোবেলায় যাত্রাপালা দেখতে দেখতে ভোর হয়ে যেত। বাসায় এসে শুতে এবং ঘুমোতে ঘুমোতে প্রায় বেলা উঠে যেত। সেই সকাল থেকে সারাদিন ঘুমাতাম, আর ঘুমের মধ্যে পুরো যাত্রাপালার দৃশ্যগুলো ছোটাছুটি করতো। যখন সিনেমা দেখা শুরু করি, ছবি দেখা শেষ করে হল থেকে ফিরতে অধিক রাত হয়ে গেলে ঐ রাতে ঘুমের ডিস্টার্ব হতো। তখন ঘুমের মধ্যে ছবির দৃশ্যগুলো খুব ঘন ঘন আনাগোনা করতো। এ বিষয়টি আমার এক দীর্ঘ গল্পেও আছে - কুটিমিয়ার যাত্রা-দর্শন - গল্পের শেষের দিকে
আবার আসার জন্য ধন্যবাদ ককচক।
১০| ১১ ই আগস্ট, ২০২২ রাত ১০:০২
ককচক বলেছেন: ঠিক বলেছেন। সময় নিয়ে আপনার গল্পটা পড়বো।
১১ ই আগস্ট, ২০২২ রাত ১০:১৩
সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ।
১১| ১১ ই আগস্ট, ২০২২ রাত ১১:০৮
জটিল ভাই বলেছেন:
এবারে স্বপ্নে পাওয়া গানের অপেক্ষায় রইলাম
১১ ই আগস্ট, ২০২২ রাত ১১:১২
সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন:
তবে, আমি স্বপ্নের মধ্যে একবার কবিতা লিখেছিলাম, ঘুম ভাঙবার সাথে সাথে কয়েকটা শব্দ থাকলেও সকালবেলা দেখি কিছুই মনে নাই একবার গানের কলিও লিখেছিলাম বলে আবছা মনে পড়ে
১২| ১২ ই আগস্ট, ২০২২ রাত ১২:২৮
আখেনাটেন বলেছেন: চমৎকার......।
এবার বিসিএস গাইড বিক্রি যুবক ও সেই গরবিনী নিয়ে একটা স্ক্রিপ্ট লিখে ফেলেন....ইউনিক হবে নিশ্চয়...
১২ ই আগস্ট, ২০২২ দুপুর ২:০৭
সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন:
এবার বিসিএস গাইড বিক্রি যুবক ও সেই গরবিনী নিয়ে একটা স্ক্রিপ্ট লিখে ফেলেন....ইউনিক হবে নিশ্চয়... লিখতে পারলে দারুণ হতো নিঃসন্দেহে। স্বপ্নের ভিতর নাটকের সেই দৃশ্য বা সিকোয়েন্সটা এখনো স্পষ্ট চোখে ভাসছে। কী নিপুণ অভিনয়, আর করুণ রসঘন বেদনাকাতরতা, আমি যতবার ভাবি, বিস্মিত হই।
'চমৎকার' বলার জন্য অনেক ধন্যবাদ। শুভেচ্ছা নিন।
১৩| ১২ ই আগস্ট, ২০২২ রাত ১:০৫
নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
সোনাবীজ ভাই
রাগ কইরেননা।
এত বড় গল্প
পড়ার ধৈর্য নাই।
কয়েক ভাগে ভাগ
করে দিতে পারতেন!
১২ ই আগস্ট, ২০২২ দুপুর ২:০৯
সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: নূরু ভাই, রাগ করবো কেন? আমার সাধারণ পোস্ট তো এর চাইতে আরো লম্বা, সবাই পড়বে না, হয়ত কেউই পড়বে না, তা জেনেও লম্বা পোস্টই লিখি। সাব্জেক্টের প্রয়োজনেই এগুলো লম্বা হয়। যাই হোক, পোস্ট ভিজিট করার জন্য ধন্যবাদ নিন এবং শুভেচ্ছা।
©somewhere in net ltd.
১| ১১ ই আগস্ট, ২০২২ রাত ১:৪৯
মোহাম্মদ গোফরান বলেছেন: ১ম প্যারা পড়ে মন্তব্য করে ফেললাম।।
ইউটিউব ও এডিকশন একবার নাটক দেখা শুরু করলে দেখতেই থাকি থাকি দেখতেই থাকি। আমি আরো ভাবসি শায়মা আপুকে জিজ্ঞেস করব আপনাকে ৩/৪ দিন দেখিনি তাই।