নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
দুঃখের কবিতাই শ্রেষ্ঠ কবিতা। ভালোবাসা হলো দুঃখ, এক ঘরে কবিতা ও নারী।
আমাদের ছোটোবেলায় বিনোদনের প্রধানতম উৎস বা উপকরণ ছিল যাত্রাপালা। যখনই কোথাও যাত্রাপালার পাট শুরু হতো, গ্রামময় সাড়া পড়ে যেত এবং যাত্রাপালা মঞ্চস্থ হওয়ার দিনের জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করতো মানুষ। এ নিয়ে ব্লগে এর আগে দুই পর্বে সমাপ্ত পোস্ট ছোটোবেলায় দেখা আমাদের যাত্রাপালা লিখেছিলাম। এ নিয়ে আমার গল্পও আছে - কুটিমিয়ার যাত্রা দেখা।
ছোটোবেলায় স্বাভাবিকভাবেই বড়োদের সাথে (বড়োদের বলতে বাবা-মাকেই বোঝাচ্ছি) যাত্রাপালা দেখতে যেতে হতো, যদিও অনেক সময়ই বন্ধুবান্ধবদের সাথে (মা-বাবা ছাড়া) যাওয়ার জন্য অনেক চেষ্টা করেছি, কিন্তু আমাকে বাড়ি থেকে একা ছাড়া হয় নি। যেবার বাড়ি থেকে সর্বপ্রথম একা একা রাতে বের হওয়ার অথোরিটি পেয়ে গেলাম, সেবার আমাদের পাশের গ্রাম সুতারপাড়ায় 'রহিম বাদশাহ ও রূপবান কন্যা' যাত্রাপালা মঞ্চস্থ হলো। যদ্দূর মনে পড়ে, সহপাঠী নুরুল ইসলাম, আবুল, ফজলু- এদের সাথে গিয়েছিলাম। তখন হাইস্কুলে পড়ি। যারা অভিনয় করবেন, তাদের অনেকের সাথেই পরিচয় আছে, এবং তারা সবাই আমার বয়োজ্যেষ্ঠ। পরিচয়ের সূত্র ধরেই অভিনেতাদের সাজাবার বাড়িতে (গ্রিনরুম বিশেষ। এর বোধহয় একটা প্রচলিত নাম আছে, ভুলে গেছি) পর্যন্ত যাওয়ার প্রিভিলেজ হয়েছিল। দেখে খুব অবাক হয়েছিলাম ও মজা পেয়েছিলাম, একেকজন কালো বা শ্যামলা গাত্রবর্ণের মানুষকেও কীভাবে কসমেটিক্স দিয়ে ফর্সা বা সুন্দর করে ফেলে।
গ্রামের যাত্রাপালাগুলো শুরু হতে হতে অনেক রাত হয়ে যেত। অনেক যাত্রাপালা রাত ১২টার দিকে শুরু হয়ে ভোর বা সূর্য ওঠা পর্যন্ত চলতো। সুতারপাড়া গ্রামের 'রূপবান' যাত্রাপালা সম্ভবত রাত এগারটার দিকে শুরু হয়েছিল। প্রধান চরিত্র রূপবান কন্যা ও তাজেলের পাট যিনি নিয়েছিলেন, তাদের দুজনকেই আমি চিনতাম। সুতারপাড়ার এক বনেদী ও সম্ভ্রান্ত পরিবারের ছেলে, জনাব আইয়ুব আলী চোকদার সাহেবের দ্বিতীয় পুত্র বাবুল ভাই হয়েছিলেন 'রূপবান'। এখানে বলে রাখি, আপনারা আশা করি জানেনও, ঐ সময়ে যাত্রাপালার পাত্রপাত্রীরা সবাই 'পুরুষ' ছিলেন; তবে, ঐ যাত্রাপালার পর অনেক যাত্রাপালাতেই বিভিন্ন স্থানে পেশাজীবী অভিনেত্রীদের নায়িকা চরিত্রের জন্য আনা হতো। এবং, যাত্রাপালার অন্যতম আকর্ষণ থাকতো নর্তকীদের নাচ, যাদের আমরা 'বাইয়ালি' বলতাম। সেই বাইয়ালিরাও পুরুষই ছিলেন। পরের দিকে প্রফেশনাল ফিমেইল ড্যান্সারদের আনা হতো; ততদিনে যাত্রাপালার আবেদন ঢাকা পড়ে যেতে থাকে বিভিন্ন স্থানে সিনেমা হল গড়ে ওঠার কারণে।
রূপবান যাত্রাপালাটি যখন দেখি, সম্ভবত ঐ সময়ে আমি ক্লাস এইট বা নাইনে পড়ি এবং ততদিনে আমি আমাদের জয়পাড়া সিনেমা হলে সিনেমাও দেখেছি (আমার দেখা প্রথম ছায়াছবি। ফলে, সিনেমার অভিনয়ের সাথে যাত্রাপালার অভিনয়ের পার্থক্য বেশ বুঝতে পারি।
সিনেমা দেখার অভিজ্ঞতা থাকা সত্ত্বেও 'রূপবান' যাত্রাপালা ছিল আমার জন্য ব্যাপক অভিজ্ঞতার এক যাত্রাপালা, যা দেখে আমি প্রভূত আনন্দ পেয়েছিলাম। বাবুল ভাইয়ের কণ্ঠে রূপবান কন্যার গান যেন অমর্ত্যের সুর হয়ে ঝরে পড়ছিল, আমি এতটাই মুগ্ধ ও তন্ময় হয়েছিলাম। এই বাবুল ভাই পরবর্তী বছরই বোধহয় আমাদের গ্রামে 'সয়ফুল মুলুক ও বদিউজ্জামান' যাত্রাপালায় 'সয়ফল মুলুকের' পাট নিয়েছিলেন, এবং সেখানে যাত্রাপালার নায়ক, আমাদের গ্রামের চিরসবুজ নায়ক জিন্নত ভাই ও বাবুল ভাইয়ের কণ্ঠের জাদুতে দর্শকশ্রোতাগণ ছিলেন মন্ত্রমুগ্ধের মতো সম্মোহিত।
'রূপবান' যাত্রাপালায় তাজুলের অভিনয় এবং গানও ছিল বাবুল ভাইয়ের সাথে প্রায় সমানে সমান। (তাজেল অভিনেতার নাম আমি এ মুহূর্তে ভুলে গেছি)।
যাত্রাপালা শেষ হতে হতে সকাল হয়ে যায়। একরাশ মুগ্ধতা ও তৃপ্তি নিয়ে আমরা বাড়ি ফিরি।
ছোটোবেলায় 'রূপবান' ছায়াছবির গান (সালাহউদ্দিন পরিচালিত ও ১৯৬৫ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত) সাড়াদেশে ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেয়েছিল। এখন তো কালেভদ্রে বিয়েবাড়িতে বা কোনো অনুষ্ঠানে গান বাজানোর জন্য মাইক আনা হয়, কিন্তু সেই সময়ে বিয়ে অনুষ্ঠানসহ আনন্দ উদ্যাপনের যে-কোনো অনুষ্ঠানে মাইকের গান ছিল আবশ্যিক একটা বিষয়। এবং মাইক বাজানো হয়েছে, কিন্তু রূপবানের গান বাজানো হয় নি, বিশেষ করে বিয়েবাড়িতে, এমন নজির খুব কম ছিল।
সারা বাংলাদেশে তুমুল জনপ্রিয়তা প্রাপ্ত ও সাড়াজাগানো এ গানগুলো আমারও মন মাতিয়ে রাখতো। রাতের বেলা, ১০টার দিকেই বেশিরভাগ ক্ষেত্রে রূপবানের গান বাজানো হতো। আমি তন্ময় হয়ে শুনতাম। অনেক সময় ঘুমের ঘোরেও শুনতাম, বাজছে রূপবানের গান - আমার বাড়ির দক্ষিণ ধারে গো, ও দাইমা কীসের বাদ্য বাজে গো শোনো দাইমা দাইমা গো।
পোস্টটা ধীরে ধীরে বড়ো হয়ে গেলো। মূল উদ্দেশ্য ছিল শুধু গানটা শেয়ার করা - শোনো তাজেল গো। এটা শেয়ার করতে যেয়ে উপরের কথাগুলো চলে এলো।
রূপবানের পালাগান থেকে 'রূপবান' (১৯৬৫) ও 'রঙ্গীন রূপবান'সহ (পরিচালক - আজিজুর রহমান, ১৯৯৫) 'রূপবান' শীর্ষক বেশকিছু ছায়াছবি নির্মিত হয়েছে বাংলাদেশ ও ভারতে। এতেই বোঝা যায়, রূপবান এ বাংলার মানুষের মনে কতখানি স্থান জুড়ে আছে।
বাংলা গানে আমি সর্ভভুক - এ কথাটা আমি অনেক জায়গায় বলেছি। যখন যে-গানে ডুবে যাই, ঐ গান নিয়েই থাকি একটানা অনেকদিন। গত কয়েকদিনে আমি তুমি যে আমার গানের লিরিকে আমার নিজের সুর করেছি, যাতে মূল সুর করেছিলেন কিংবদন্তি সুরকার সুবল দাস, এরপর যথাক্রমে তোরা যে যা বলিস ভাই ও তুই ফেলে এসেছিস কারে মন করেছি। তার আগে আরেকটা যাত্রাপালার গান করেছি - ৮০'র দশকে আমাদের দোহার উপজেলায় ব্যাপক জনপ্রিয় হয়েছিল 'কমলার বনবাস' নামক একটি যাত্রাপালা, যার উপর ছায়াছবি নির্মিত হয়েছে (মান ভালো মনে হয় নি আমার কাছে), ইউটিউবে অসংখ্য যাত্রাপালাও দেখা যায় - সেই যাত্রাপালার একটা গানের প্রথম তিন লাইনের সুর ও লিরিক আমার মুখস্থ ছিল, কিন্তু মাঝে মাঝেই সেই সুর হঠাৎ হঠাৎ আমার কণ্ঠে এসে গুন গুন শুরু করে। এই সুরের উপর ভিত্তি করে আমি দুই অন্তরা লিরিক লিখি এবং সুরও তৈরি করি- আমি কোথায় যাই, আমি কোথায় যাই রে। গতরাতে বসেছিলাম লালনের 'সহজ মানুষ' করার ইচ্ছে নিয়ে। কিন্তু তা থেকে আমি হঠাৎ চলে গেলাম রূপবানের গানে। এটা খুব প্রাণের গান, তাই এটা থেকে আগে নিষ্কৃতি পাওয়ায় বাসনায় এটা শেষ করলাম।
কণ্ঠে সবসময় সুর ও মেলোডি আসে না। গতরাতে গাইতে যেয়ে দেখি গলায় বেশ মেলোডি আসছে। ওটার উপর সারাদিন কাজ করার পর বিকালের দিকে দেখি যে এবার কণ্ঠে সুর আরো বেশি মেলোডিয়াস। অতএব, বিকালেও আরেকবার রেকর্ড করি। সেটাই ফাইনাল করে ফেললাম।
গানের ইউটিউব লিংক : প্লিজ এখানে ক্লিক করুন - শোনো তাজেল গো
অথবা নীচের লিংকে ক্লিক করুন :
কথা ও সুর : রূপবানের যাত্রাপালার গান। গীতিকার ও সুরকার অজানা। ইউটিউবের বিভিন্ন লিংকে গীতিকার হিসাবে 'রূপবান' (১৯৬৫)-এর পরিচালক 'সালাহউদ্দিন'-এর নাম দেখা যায়।
মূল শিল্পী : 'রূপবান' (১৯৬৫) ছায়াছবিতে নীনা হামিদ এবং 'রঙ্গীন রূপবান' (১৯৯৫) ছায়াছবিতে রুনা লায়লা কণ্ঠ দিয়েছেন। ছায়াছবির গানে দুই অন্তরা দেখা যায়। তবে, আমি ইউটিউবে আপলোডকৃত বিভিন্ন যাত্রাপালার গানে তিন অন্তরাও দেখেছি। আমার গাওয়া গানের দ্বিতীয় অন্তরাটি ছায়াছবির গানে আমি পাই নি।
এ মিউজিক ভিডিওতে মিউজিক কম্পোজিশন ও কণ্ঠ : খলিল মাহ্মুদ
মিউজিক কম্পোজিশন গাইড : বেবি লাবিব
লিরিক :
শোনো তাজেল গো
মন না জেনে প্রেমে মইজো না
শোনো তাজেল গো
মন না জেনে প্রেমে মইজো না
মন না জেনে প্রেমে মইজো না
মন না জেনে প্রেমে মইজো না
শোনো তাজেল গো
মন না জেনে প্রেমে মইজো না
আগে না চিনিলে গো তারে
প্রেম করিলে পড়বে ফ্যারে
শেষে কাঁদলে এ দুঃখ যাবে না
শেষে কাঁদলে এ দুঃখ যাবে না
শোনো তাজেল গো
মন না জেনে প্রেমে মইজো না
প্রেম পিরিতির এমনি গো ধারা
এক পিরিতির দুইজন মরা
এমন মরা মরে কয়জনা
এমন মরা মরে কয়জনা
শোনো তাজেল গো
মন না জেনে প্রেমে মইজো না
আমি করি বন্ধুর গো আশা
তুমি তাজেল সর্বনাশা
এত জ্বালা আর প্রাণে সহে না
এত জালা প্রাণে সহে
এত জালা আর প্রাণে সহে না
শোনো তাজেল গো
মন না জেনে প্রেমে মইজো না
মন না জেনে প্রেমে মইজো না
শোনো তাজেল গো
১০ ই সেপ্টেম্বর, ২০২২ বিকাল ৩:৪২
সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: আহারে, শিশু ছাত্রটার জন্য মায়াই লাগলো।
যাক, গানটা সম্পর্কে আপনিও অবগত আছেন জেনে ভালো লাগলো।
কমেন্টের জন্য ধন্যবাদ জুল ভার্ন ভাই।
২| ১০ ই সেপ্টেম্বর, ২০২২ সকাল ১১:১০
অপ্সরা বলেছেন: আমি জানিনা যাত্রাপালার গান আমার ভালো লাগে না.......
যদিও জানি যাত্রাপালার গান মানুষের হৃদয়ে গেঁথে যায়।
কিন্তু তুমি বানিয়েছো তাই সবই ভালো আমার কাছে।
১০ ই সেপ্টেম্বর, ২০২২ বিকাল ৩:৪৯
সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: গ্রাম বাংলায় এক সময় যাত্রাপালা খুবই জনপ্রিয় ছিল, যেহেতু বিনোদনের অন্যান্য উপষঙ্গ খুব কম ছিল। আজকাল সেই ঐতিহ্যকে ধরে রাখার জন্য বিটিভিতে (অন্যান্য চ্যানেলে হয় কিনা মনে পড়ছে না) মাঝে মাঝে যাত্রাপালা দেখানো হয়, গত এক সপ্তাহের মধ্যেই দেখেছি। তবে, বর্তমানে অন্যান্য মাধ্যমগুলো এত এগিয়ে গেছে যে, যাত্রাপালা শুধু ইতিহাসের অংশই হয়ে যেতে বসেছে; সাধারণ মানুষ এখানে আর তেমন আনন্দ পাবার অবস্থায় নেই।
কিন্তু তুমি বানিয়েছো তাই সবই ভালো আমার কাছে। এ কথায় খুবই আপ্লুত বোধ করছি। অনেক ধন্যবাদ আপু।
৩| ১১ ই সেপ্টেম্বর, ২০২২ দুপুর ১২:৩৯
সাহাদাত উদরাজী বলেছেন: অসাধারন।
১১ ই সেপ্টেম্বর, ২০২২ দুপুর ১:৩৯
সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: অসংখ্য ধন্যবাদ সাহাদাত উদরাজী ভাই। শুভেচ্ছা।
©somewhere in net ltd.
১| ১০ ই সেপ্টেম্বর, ২০২২ সকাল ১০:৫২
জুল ভার্ন বলেছেন: ছেলে বেলায় দেখেছিলাম রূপবান সিনেমা। শোনো তাজেল গো....মন না জেনে প্রেমে মইজো না.....গানটা অসম্ভব জনপ্রিয়তা পেয়েছিল। আমি তখন শিশু শ্রেণীর ছাত্র....আমাদের স্কুলের এক অনুষ্ঠানে এই গানটা অত্যন্ত দরদ দিয়ে এক শিশু ছাত্র গাইলে সবাই খুব হাসাহাসি করেছিল..... +