নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
দুঃখের কবিতাই শ্রেষ্ঠ কবিতা। ভালোবাসা হলো দুঃখ, এক ঘরে কবিতা ও নারী।
আমাদের গ্রামের জুম্মন হোসেনের ছেলে লিটন হোসেন এবার ইন্টারস্কুল ফুটবল টুর্নামেন্টের সেরা খেলোয়াড় হয়েছে। শুধু তাই নয়, ফাইনাল ম্যাচে হ্যাট্রিক করে প্রথম বারের মতো নিজের স্কুলকে ৩-০ গোলের বিজয় উপহার দিয়েছে এবং উপজেলার ১২টা হাইস্কুলের মধ্যে তার স্কুল হয়েছে অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন। প্রতি ম্যাচেই সে কমপক্ষে একটা গোল করেছে এবং গ্রুপপর্বে একটা ম্যাচে ৪ গোলসহ সে আরো একটা হ্যাট্রিক করেছিল। ৫ ম্যাচে তার স্কুল করেছে ১৫টা গোল, যার মধ্যে সে একাই দশ-দশটা গোল প্রতিপক্ষের জালে ঢুকিয়েছে। কিন্তু প্রতিপক্ষের একটা গোলও তার স্কুলকে হজম করতে হয় নি; এই কৃতিত্বও অবশ্য তারই। সে সারা মাঠ চষে খেলে। প্রতিপক্ষের খেলোয়াড়রা গোল দিতে আসবে কী, লিটনকে গার্ড দিতে দিতেই তাদের দফারফা হয়ে যায়; ৪-৫ জন খেলোয়াড় তাকে ঘিরে রাখে, কিন্তু সে চোখের পলকে সবাইকে ফাঁকি দিয়ে বল নিয়ে ভোঁ দৌড় দেয়, গোল-কিপার কিছু বুঝে ওঠার আগেই কোনদিক দিয়ে গোল হয়ে যায়- গোলকিপার টের পায় দর্শকের উত্তেজিত ‘গোল গোল’ শব্দ শুনে। যারা ব্রাজিলের ভক্ত, তারা তার নাম দিয়েছে ‘নেইমার’, আর যারা আর্জেন্টিনার ঘোর সমর্থক, তারা কেউ তাকে ডাকে ‘মেসি; কেউ-বা তাকে ‘ম্যারাডোনা’ও ডাকে। তার এত গোল করার জাদুকরী ক্ষমতা দেখে গ্রামবাসী তাকে উপাধি দিয়েছে ‘গোল-মেশিন’। লিটন হোসেনের কারণে যেমন তার স্কুলটি প্রথম বারের মতো চ্যাম্পিয়ন হবার গৌরবে উদ্ভাসিত আজ , তেমনি আমাদের গ্রামটির নামও অনেক ছড়িয়েছে তার কারণেই। তার সুনাম আগের সব খেলোয়াড়দের সুনাম ছাপিয়ে গেছে। আমাদের গ্রামের বাবুল-আনোয়ার দুই ভাই এককালে ফুটবলে অপ্রতিদ্বন্দ্বী খেলোয়াড় ছিল। এ দুই ভাই যে-দলে খেলতো, সে-দলই জিততো। এ দু ভাই ছিল পারমানেন্ট স্ট্রাইকার। দু ভাই ছোটো ছোটো পাস দিয়ে কবিতার মতো ছন্দ তুলে যখন প্রতিপক্ষের ডি-বক্সের দিকে এগিয়ে যেত, সে খেলা দেখলে দু নয়ন জুড়িয়ে যেত। লিটন হোসেন তার বাবার কাছে সেই বাবুল-আনোয়ার ভ্রাতৃদ্বয়ের গল্প শুনে শুনে বড়ো হয়েছে। জুম্মন হোসেনের সহপাঠী ছিল নূরুল ইসলাম বাবুল। সে বাবুলের খেলার এতই ভক্ত ছিল যে, সে অনেক আশা নিয়ে তার ছেলেকে ফুটবল খেলোর প্রতি আগ্রহ সৃষ্টি করিয়েছে, আর ছেলেকে বলেছে, তোমাকে বাবুল-আনোয়ার দুই ভাইয়ের মতো খেলোয়াড় হতে হবে। লিটন হোসেন বাবার অনুপ্রেরণায় এগিয়ে চলছে। সে উপজেলার মধ্যে এখন নামকরা, জনপ্রিয় ও সুপরিচিত ফুটবলার। ছেলের সুবাদে এখন জুম্মন হোসেনেরও সম্মান ও পরিচিতি অনেক বেড়ে গেছে। কোনো টুর্নামেন্টে খেলা দেখতে গেলে আয়োজক কমিটি জুম্মন হোসেনকে ডেকে তাদের সাথে চেয়ারে বসার সুযোগ করে দেয়। জুম্মন হোসেন খুবই সম্মানিত বোধ করে। রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাবার সময়, এমনকি হাঁটেবাজারেও অনেকে তাকে দেখিয়ে বলে- ঐ লোকটা হলো লিটন হোসেনের বাবা। জুম্মন হোসেন মাঝেমধ্যে তাদের সাথে আলাপ-সালাপও করে।
সবাই খুব আফসোস করে, লিটন হোসেন ধনীর ছেলে হলে শহরের উন্নত স্কুলে লেখাপড়া করতে পারতো; হয়ত সে বিকেএসপিতেও পড়াশুনা করে নিজের খেলোয়াড়ি প্রতিভার বিকাশ ঘটানোর সুযোগ পেত।
লিটন হোসেনের বাবা জুম্মন হোসেন শেষ পর্যন্ত ধনী হতে পারে নি। কোনোমতে এসএসসি পাশ করে এলাকার আরো অনেকের মতো সেও বাপের ভিটামাটি, জমাজমি বিক্রি করে মিডল ইস্টে পাড়ি জমিয়েছিল ধনী হবার জন্য না, যাতে সংসারের অভাব-অনটন দূর হয়, মা-বাবা, ভাইবোনেরা যাতে একটু সুখে থাকতে পারে, সেজন্য। প্রায় ১৫ বছর ধরে সউদিতে চাকরি করেছে সে। বিয়েশাদি করে দুই ছেলেমেয়ের বাবাও হয়েছে। কিন্তু বছর শেষে কফিল রিনিউ করতে যে-পরিমাণ টাকা চলে যায়, বাড়িতে স্ত্রী-ছেলেমেয়ের সংসার, মা-বাবা, ভাইবোনের সংসার চালানোর জন্য ওভারটাইম করে টাকা রুজি করতে যেয়ে তার শরীর আর শরীর নাই এখন। শেষ পর্যন্ত চাকরিতে ইস্তফা দিল ১৫ বছরের মাথায়। ভালো কোম্পানি ছিল। তাই চাকরি ছাড়ার সময় ভালো অংকের কিছু গ্রাচুইটি পেয়েছিল, যা তার জন্য এক বিরাট আশীর্বাদ হিসাবে দেখা দিয়েছিল। সে দেশে এসে ঐ টাকা দিয়ে একটা সিএনজি কিনে ফেলে। প্রথম ৬ মাস অন্য ড্রাইভার চালাতো। তাতে প্রতিদিন দুই কিস্তিতে ৮শ টাকার মতো পেত। পরে সে নিজেই ড্রাইভিং শিখে ড্রাইভিং লাইসেন্স করে ফেললো। নিজেই এখন নিজের গাড়ির ড্রাইভার। আয়-উন্নতি বেশ ভালোই হচ্ছে, তবে কষ্ট আছে, গাড়ি রক্ষণাবেক্ষণ, দালাল, নেতা-পাতিনেতাদের চাঁদা, ইত্যাদির জন্য বিড়ম্বনা সহ্য করতে হয় অনেক। তবে, এতেও তার অনেক আনন্দ এবং স্বস্তি আছে। লিটন হোসেন এবার ক্লাস টেনে উঠেছে। সে ভালো খেলোয়াড় যেমন, ছাত্র হিসাবেও মন্দ না। ক্লাসে কখনো রোল নাম্বার ১ বা ২ হয় নি সত্য, কিন্তু ৫-এর নীচে কোনোদিন নামে নি। প্রতিবারই তার লক্ষ্য থাকে রোল নাম্বার ১-এর দিকে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত রোল নাম্বার ৩ ছাড়িয়ে আর উপরে যেতে পারে নি কখনো। সংসারের টানাটানির জন্য কোনো টিউটরের কাছেও পড়ার সুযোগ হয় না তার। এবার বাড়িতে থেকে জুম্মন হোসেন টিউটরের ব্যবস্থা করেছে। সবসময় ছেলের পাশে পাশে থাকার, খোঁজখবর নেয়ার সুযোগ হয়েছে এখন। এতে ছেলেও খুব উৎসাহ পায়। খেলাধূলার জন্য পরাশুনায় সামান্য ক্ষতি হয় বটে, তবে লিটন হোসেন আশাবাদী, সে পুষিয়ে নিতে পারবে, আগামী বছর এসএসসিতে সে অবশ্যই ভালো একটা রেজাল্ট করতে পারবে বলে সে দৃঢ়ভাবে আশাবাদী।
গতকাল বিজয়ী দলকে সংবর্ধনা দিয়েছে হাইস্কুলের পক্ষ থেকে। স্কুলের সাবেক ছাত্রগণ, যাদের অনেকেই বর্তমানে স্ব স্ব ক্ষেত্রে সমোজ্জ্বল, তারাও আমন্ত্রিত হয়েছিলেন সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে। এ দলকে নিয়ে স্কুলের বর্তমান-সাবেক সকল ছাত্রই খুব গর্বিত। সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি স্বয়ং উপজেলা চেয়ারম্যানও এ স্কুলেরই একজন কৃতী সন্তান। তিনি সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে উপস্থিত হয়ে নস্টালজিক হয়ে গেলেন। ফিরে গেলেন তার ছাত্রজীবনে। তিনি নিজেও একজন দুর্দান্ত অ্যাথলেট, ফুটবলার ও হাডুডু প্লেয়ার ছিলেন। নিজের স্কুলের জন্য তিনি অনেক গৌরবময় অবদান রেখেছিলেন খেলোয়াড় হিসাবে, কিন্তু ফুটবলে রানার-আপ হওয়া ছাড়া আর কিছু করতে পারেন নি তিনি। আজকের এ দলের বিজয়ে তিনি অনেক উচ্ছ্বসিত। তিনি বিজয়ী দলের প্রত্যেককে ৫০ হাজার টাকা নবাদ পুরস্কার ঘোষণা করলেন, আর লিটন হোসেনের অসামান্য অবদানের জন্য তাকে আরো এক লক্ষ টাকা বেশি, অর্থাৎ মোট দেড় লক্ষ টাকা পুরস্কার দেয়ার কথা ঘোষণা করলেন।
লিটন হোসেনের সাথে সকালে হাইস্কুলে যেতে হয়েছিল জুম্মন হোসেনকে। উপজেলা চেয়ারম্যান মহোদয় পুরস্কারের চেক পাঠিয়েছেন প্রধান শিক্ষকের কাছে; সেটা আনার জন্য।
প্রধান শিক্ষক সাহেব লিটন হোসেনের হাতে দেড় লাখ টাকার চেক তুলে দিলেন। তিনি জুম্মন হোসেনের সাংসারিক টানাপোড়নের কথা জানেন। ছেলের অর্জিত এ পুরস্কারের টাকাটা অনেক কাজে দিবে জুম্মন হোসেনকে।
‘এ আপনার সোনার ছেলে। ওকে নিয়ে আমরা গর্বিত। আপনাকে নিয়েও আমরা গর্বিত যে, আপনি এমন একজন ছেলের জন্মদাতা পিতা, যাকে আমাদের স্কুলে পড়ানোর জন্য ভর্তি করিয়েছেন।’ সহৃদয় প্রধান শিক্ষক মহোদয় জুম্মন হোসেনের সাথে করমর্দন করতে করতে এ কথাগুলো বললেন। তারপর লিটনকে নিজের কাছে টেনে নিয়ে আদর করতে করতে বললেন, ‘মা-বাপের কথা শুনবি। খেলায় চ্যাম্পিয়ন হইছস। এবার চাই, তুই লেখাপড়ায়ও চ্যাম্পিয়ন হ। কী, পারবি না?’ লিটন হোসেনের থুতনিতে একটা টোকা দিয়ে তিনি বলতে থাকেন, ‘অবশ্যই পারবি। এই বছর তো আর খেলাধূলা নাই। ভালো কইরা মনোযোগ দে। খয়ের আর জসীমরে ডিঙ্গাইয়া যাবি তুই। তোর জন্য আমার দোয়া থাকলো। যা ব্যাটা। যাহ।’ মৃদু আদুরে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দেন লিটনকে। লিটন হোসেন ‘জি স্যার, ইন শা’ল্লাহ বলে’ লজ্জিত হাসি হাসে।
তারপর প্রধান শিক্ষক মহোদয় জিজ্ঞাসা করেন, ‘আইচ্ছা লিটইন্যা, ক দেহি, এই টাকা দিয়া তুই কী করবি?’
লিটন হোসেনের মনের বাসনাটা তাহলে এখন বলা যায়। সে ভেবেছিল বাসায় গিয়েই বাবাকে সে জানাবে। প্রধান শিক্ষক গুরুজন। তিনি যেহেতু জিজ্ঞাসা করেই ফেলেছেন, এটা এখন বলা যায়।
ক্লাস ফাইভের বৃত্তির টাকা পেয়ে সে মায়ের জন্য একটা শাড়ি কিনে এনেছিল। তা দেখে তার মা তো আনন্দে কেঁদেই ফেলেছিল। ‘আমার ছোট্ট সোনামানিকটা রে, ঠিক আমার বাবার মতো। হায় রে, আমার বাবায় হঠাৎ হঠাৎ আমার জন্য শাড়ি নিয়া আসতো রে।’ ছেলেকে বুকে জড়িয়ে ধরে লিটন হোসেনের মা সাজেদা খাতুন অনেকক্ষণ কেঁদেছিল। লিটন হোসেন মায়ের এই আবেগ আর আপ্লুতভাব দেখে খুব শান্তি পেয়েছিল মনে। বাকি টাকার পুরোটাই সে মায়ের হাতে তুলে দিয়েছিল। তার পরের দু বছরও সে মায়ের হাতে টাকা তুলে দিয়ে বলে ছিল, ‘এ টাকা তোমারই মা। তোমার যা খুশি তাই করো।’ মা সেই টাকা দিয়ে কী করেছিল সে জানে না। ক্লাস এইটের বৃত্তি পেলে সে মাকে ডিপ ফ্রিজ কিনে দিবে বলে ইচ্ছে পোষণ করেছিল। কিন্তু দুর্ভাগ্য, ক্লাস এইটে সে বৃত্তি পায় নি। ১, ২ ও ৪ রোল নাম্বারের তিনজন পেয়েছিল, ওর রোল নাম্বার ৩; মেধা তালিকায় সে উঠে আসে নি। এর আগে বিভিন্ন খেলাধূলায় সে প্রচুর ট্রফি, মেডেল পেয়েছে, যাতে তার ঘর ভর্তি; কিন্তু কোথাও কোনো টাকার কাজ-কারবার ছিল না। অসীম দয়াময় আল্লাহ তার মনের বাসনা পূরণ করবেন বলেই এবার ফুটবল খেলায় উপজেলা চেয়ারম্যানের মাধ্যমে তিনি দেড় লাখ টাকার বিরাট একটা অংক তাকে পাঠিয়েছেন।
‘স্যার, আমার মাকে পুরা তিন ভরি সোনার একটা হার বানিয়ে দিব।’ প্রধান শিক্ষকের দিকে তাকিয়ে লিটন হোসেন এ কথাটা বলা মাত্রই তিনি ‘বাহ! বাহ! ধন্যি মায়ের ধন্যি ছেলে’ বলে উঠলেন। ‘খুব ভালো! খুব ভালো! তোর মা অনেক খুশি হইব রে বেটা।’
জুম্মন হোসেন নিজেও পুলিকত হলো। তার চোখ চিক চিক করে উঠলো আশা ও আনন্দে। বিবাহিত জীবনে মা-বাবা-ভাইবোনের সংসার, নিজের সংসার টানতে টানতে নিজের জীবনের সাধ-আহ্লাদের দিকে যেমন কোনোদিন তাকানোর ফুরসত হয় নি, তেমনি স্ত্রীকেও কোনো হাউশের গয়নাগাঁটি পর্যন্ত কিনে দিতে পারে নি সে। স্ত্রীও সহনশীলা, ধৈর্যশীলা, বড্ড বোঝমনা রমণী। সে সবকিছু মেনে নিয়েছে। তবু প্রতিবেশীনিদের সাথে চলাফেরা, আলাপ-আড্ডার সময় দু-একটু মন তারও যে খারাপ হয় না, তা না। একদিন ক্ষোভের স্বরে সেও জুম্মন হোসেনকে কয়েক কথা শুনিয়ে দিয়েছিল, ‘তোমার মুরদ দেখছি। কোনোদিন ইমিটেশনের একটা হারও যদি আইন্যা দিতা, বুঝতাম, তোমারও শখ বলে কিছু একটা আছে।’
সংসার, সংসার করতে করতেই জুম্মন হোসেনের জীবনটা গেল, স্ত্রীর সাধ-আহ্লাদ পূরণ করা তার আর হয়ে উঠলো না। এবার ছেলের পুরস্কারের টাকা দিয়ে ছেলেই তার মায়ের একটা সাধ পূরণ করে দিতে যাচ্ছে। সোনার হারটি তার চোখের সামনে ভেসে উঠলো। হারটি সে স্ত্রীর গলায় পরিয়ে দেয়ার সময় সে নিজে উদ্বেলিত হবে, স্ত্রীর চোখেও কান্না চলে আসবে ছেলের গর্বে। এটা ভাবতে ভাবতেই জুম্মন হোসেনের চোখ বেয়ে টুপ করে এক ফোঁটা পানি পড়বে, অমনি সে মুখ ঘুরিয়ে বাম হাত দিয়ে চোখের পানি মুছে ফেললো।
‘চলো বাবা, যাই। স্যার, আসি তাহলে। দোয়া করবেন ছেলের জন্য।’ বলে জুম্মন হোসেন ছেলেকে নিয়ে বের হয়ে গেল।
রাস্তায় বের হয়ে তারা একটা রিকশায় নিল। উপজেলা শহরে যেতে হবে। ওখানেই ব্যাংক। ব্যাংক থেকে টাকা তুলে বাসায় ফিরবে বাবা-ছেলে।
একটা কাজ করলে কেমন হয়? টাকা তুলে সোনারুর ঘরে ঢুকবে। আজই হার কিনবে। বাসায় গিয়ে সাজেদাকে চমকে দিতে হবে। ছেলের সাথে এ ব্যাপারটা আলাপ করতে যাবে, তখনই মনে হলো, না, ওটা ভুল হবে। যার জিনিস, তাকেই পছন্দ করতে হবে। হারের আছে নানান ডিজাইন। ক্যাটালগ দেখে সাজেদা নিজের পছন্দমতো ডিজাইন বলবে। সে অনুযায়ী রেডিমেড হার কিনবে, অথবা অর্ডার দিবে বানানোর জন্য। জুম্মন হোসেনের পছন্দে হার বানা কেনা সেই ডিজাইন সাজেদার পছন্দ নাও হতে পারে।
ব্যাংক থেকে টাকা তুলে বাপ-বেটা বাড়িতে এলো। খুশির খবরটা লিটন হোসেনই দিল।
‘মা, তোমার তো নাকের চুঙ্গিটা আর কানের দুলজোড়া ছাড়া আর কোনো গয়নাগাঁটিই নাই। তাই আমি প্ল্যান করছি আমার পুরস্কারের পুরা দেড় লাখ টাকা দিয়া তুমি একটা হার বানাইবা। তোমারে খুব সুন্দর লাগবে।’
ছেলের কথা শুনে সাজেদা খাতুনের বুক ভরে গেল।
***
সকালবেলা লিটন হোসেন আর তার মাকে নিয়ে উপজেলা শহরে যাওয়ার কথা ছিল জুম্মন হোসেনের। যেতে পারলো না। একটা রিজার্ভ্ড খেপ আছে সিএনজিতে। খুবই জরুরি। রোগী নিয়ে ঢাকা যেতে হবে।
সাজেদারই বরং তেমন ইচ্ছে ছিল না জুম্মন হোসেনকে সাথে নেবার। সে নিজেই যাবে ছেলেকে নিয়ে, জুম্মন হোসেনের কোনো প্রয়োজন নেই, পুরুষ মানুষ গয়নাগাঁটির তেমন বোঝেই বা কী? এসব কথায় স্বামীকে বুঝিয়ে খেপে পাঠিয়ে দিল সাজেদা খাতুন।
রোগী নিয়ে রওনা হলেও জুম্মন হোসেনের মনটা খুবই আনচান করতে লাগলো। সে অনেকবারই স্ত্রীকে বলেছিল, এতগুলো টাকার কারবার, সোনাদানার ব্যাপার, খাঁটি সোনাই কিনলো, নাকি খাদ কিনলো, মেয়ে মানুষ পেয়ে দোকানদার কীই না কী গছিয়ে দিল, তার ঠিক-ঠিকানা নেই। একজন বয়স্ক পুরুষ মানুষ সাথে থাকলে, সে অলঙ্কারের কিছু না বুঝুক, অন্তত দোকানের মানুষের মনে একটু হলেও চিন্তা থাকবে, ঠকানোর কোনো কাজ করা যাবে না।
তবে, একই সাথে সে খুবই উত্তেজনাও অনুভব করতে লাগলো। সাজেদার গলায় একটা সোনার হার ঝুলছে, আলো ঝলমল করে ওর বুকটা জ্বলছে, সাজেদা এমনিতেই রূপবতী, এই হার পরলে ওকে না জানি কত রূপসী দেখাবে। জুম্মন হোসেনের খুব সুখ লাগছে এসব ভাবতে।
রোগীকে ঢাকায় পৌঁছে বাড়ি ফিরতে বিকেল হয়ে যাবে। জুম্মন হোসেনের মনে একটু অভিমান দানা বাঁধে। সে বাড়িতে থাকলে নিজ হাতে সাজেদার গলায় হারটা পরিয়ে দিত। তার অনুপস্থিতিতে সে কি একা একাই গলায় হার পরে সারা পাড়ায় মহিলা মহলে ঘুরে বেড়াবে না? ছেলে তাকে হার কিনে দিয়েছে, এ গর্বেও হয়ত তার পা মাটিতে পরবে না। জুম্মন হোসেনের মন আরো খারাপ হয়। একদিকে নিজ হাতে সাজেদার গলায় হার পরিয়ে দেয়ার শখটা তার পূরণ হবে না, অন্যদিকে, এই হারের কারণে হয়ত স্ত্রীর খোঁটাও অনেক শুনতে হবে তাকে। থাক, শুনবে, সমস্যা কী? খোঁটা হলেও ঘটনা তো সত্য। সে নিজের টাকায় হার কিনে দিতে পারে নি, ছেলের টাকায় স্ত্রী গলায় হার পরেছে। আজ না হোক, কোনোদিন না কোনোদিন জুম্মন হোসেনকেও ছেলের রোজগারের উপরই বাঁচতে হবে। আমাদের বিধান তো এমনই।
মনকে শক্ত করতে থাকে জুম্মন হোসেন। যা হবার হবে। সবকিছুই সহজ ভাবে নিতে হবে।
হঠাৎ শক্ত করে ব্রেক কষলো। ভাবতে ভাবতে সেকেন্ডের জন্য সে অন্যমনস্ক হয়ে গিয়েছিল। অমনি উলটো দিক থেকে আসা একটা বাসের বিকট হর্নে তাকে চমকে ব্রেক কষতে হলো; অল্পের জন্য সামনাসামনি ভয়ানক অ্যাক্সিডেন্ট থেকে কোনোমতে বাঁচলো। নাহ, নিজেকে ধিক্কার দিতে থাকে জুম্মন হোসেন, এতসব ভেবে গাড়ি চালানো যায় না, মাথা থাকতে হবে পরিষ্কার, সামনে সতর্ক চোখ, স্টিয়ারিঙে হাত, এক্সিলেটরে পা। আজকাল সড়ক দুর্ঘটনা অনেক বেড়ে গেছে। প্রতিদিনই মৃত্যু। জীবনকে হাতের মুঠোয় নিয়ে গাড়িতে চড়তে হয়, অনেকগুলো প্রাণের জীবন হাতের মুঠোয় নিয়ে গাড়ি চালাতে হয়। ড্রাইভারকে আপনভোলা হওয়া যাবে না কোনোমতেই। জুম্মন, তুমি গাড়িতেই থাকো। জুম্মন তুমি গাড়িতেই থাকো।
হ্যাঁ, বাড়িতে ফিরতে ফিরতে জুম্মন হোসেনের বিকেল হয়ে গেল। তার মনটা ভার ভার। ঐ যে, ঐরকম একটা দ্বিধা তার মনে আছে, স্ত্রী হয়ত হার পরে ঘুরে বেড়াচ্ছে, যা দেখলে তার মেজাজটা হঠাৎ চড়ে যাবে বলে তার মনে হচ্ছে। আশ্চর্য, আগে কখনো নিজেকে এমন মনে হয় নি তার। তার মনে কোনো হিংসা, সংশয় ছিল না কখনো। আগাগোড়া একটা নিস্কলুষ মন তার। কিন্তু, অযথা তার মন আজকে চেতছে কেন এভাবে? ছেলের কাছে নিজের একটা পরাজয় হয়ে গেল, যতদিন বাঁচবে, স্ত্রীর কাছে এই খোঁটা শুনতে হবে, কারণ কি সেটাই?
বাড়িতে ঢুকে সত্যিই জুম্মন হোসেনের মেজাজ রুষ্ট হতে থাকলো। সারা বাড়ি যেন আনন্দে দুলছে। ছেলেমেয়েদের ছোটাছুটি, হাসাহাসি, কলকল- সবাই খুব আনন্দে মাতামাতি করছে। ছেলেটার প্রতিও তার রাগ বাড়তে থাকে হঠাৎ। মাকে হার বানিয়ে দিয়েছ বলে কি এত অহঙ্কার করতে হবে? ভাইবোন-মায়ে মিলে এত উল্লাস করে বাড়িঘর মাথায় তুলে নিয়েছে। আহ্লাদের আর শেষ নেই যেন! সাজেদার উপর মেজাজ আরো বেশি বিগড়ে যেতে থাকে। বলেছিলাম তো, আমাকে সাথে নিয়ে আরেকদিন হার কিনতে যেয়ো। টাকা তো আমি খেয়ে ফেলতাম না। তোমার ছেলের টাকা তোমারই থাকবে, বাজারেও হার, সোনাদানা ফুরিয়ে যাবে না। না, আর যেন তর সইলো না।
মেজাজ তিরিক্ষি অবস্থায় ঘরে ঢুকে খাটের কিনারে মাথা নীচু করে বসলো জুম্মন হোসেন।
‘কী হয়েছে? মন খারাপ কেন?’ হাসি মুখটা ম্লান করে সামনে এসে জুম্মন হোসেনের মাথায় হাত বোলাতে বোলাতে সাজেদা জিজ্ঞাসা করে, ‘শরীর খারাপ করে নাই তো?’
জুম্মন হোসেন ঘাড় সোজা করে সাজেদার গলার দিকে তাকাতে চায়, কিন্তু তাকানোর সাহস তার হয় না, দ্বিধায়। সাজেদার গলার হার সে একটানে ছিঁড়ে ফেলে বিস্ফারিত হবে। সে খুব অবাক হচ্ছে। কখনো তো নিজেকে এত নিয়ন্ত্রণহীন মনে হয় নি তাকে!
‘আব্বু-আব্বু’ বলে ডাকতে ডাকতে ছোটোবোনকে নিয়ে ঘরে ঢকুলো লিটন হোসেন। ওদের মুখ হাসিতে উজ্জ্বল। ওরা বার বার রহস্যময় চোখে মায়ের মুখের দিকে তাকাচ্ছে, আকারে-ইঙ্গিতে কী যেন বলাবলি করছে, এটা টের পেলো জুম্মন হোসেন। বুঝতে পেরেই চোখ তুলে ওদের দিকে তাকায় সে, আর অমনি সাজেদার গলার দিকে চোখ পড়লে সে দেখে, গলা খালি, কোনো হার নেই। মুহূর্তে সে মাটি হয়ে গেল। সে খামোখাই এত উত্তেজিত হয়েছিল। সাজেদা অমন আদেখলা স্ত্রীই না যে, একা একা হার পরে ঘুরে বেড়াবে। সে একজন সতী-সাধ্বী, গুণবতী, পতিভক্তা নারী, ঠিক তার মায়ের মতোই।
সে জড়তাগ্রস্ত স্বরে জিজ্ঞাসা করে, ‘কী ব্যাপার, হার কিনো নাই?’
এ কথায় তিনজনই মিষ্টি করে হাসতে লাগলো। এ হাসিটাও কেমন রহস্যময় মনে হচ্ছে।
‘হ্যাঁ, হার কিনবো না! কত দিনের শখ আমার।’ বলতে বলতে সে আলমিরা খুলে একটা শপিং প্যাকেট বের করে সাজেদা। ঝলমল করছে প্যাকেটটা। ‘হার কিনতেই তো হাটে গেছিলাম!’ একথাটা এতই রহস্য করে বললো সাজেদা, মনে হলো আজও সে প্রথম দিনের মতোই রহস্যময় বাসর-বধূ, এবং ছেলেমেয়েরা এখানে না থাকলে এখন সে সাজেদার উপর ক্ষিপ্রগতিতে ঝাঁপিয়ে পড়তো। মুহূর্তে সে এতই চাঙ্গা হয়ে উঠলো যে, নিজেকে শান্ত করার জন্য সে উঠে গোসলে যাওয়ার জন্য উদ্যত হলো, অমনি সবাই তাকে জেতে ধরে বসিয়ে বললো, ‘যাচ্ছ কোথায়, বসো।’
তারপর প্যাকেট খুলে একে একে বের করলো একটা অ্যাশ কালালের ৩৮ সাইজের জিন্স প্যান্ট, একটা ডাবল এক্স-এল সাইজের লাল পোলো শার্ট, আর ৪২ সাইজের একজোড়া চকোলেট কালারের জুতা, চকোলেট কালারের একটা বেল্ট। তিনজনে মিলে খাটের উপর সাজিয়ে বিছিয়ে দিল। শেষ নয়, আরো আছে। একটা রঙিন সান গ্লাস, একটা ঘড়ি।
‘এই হলো তোমার ছেলের পক্ষ থেকে তোমার জন্য গিফ্ট।’ এ কথা বলে জুম্মন হোসেনের দিকে তাকিয়ে থাকলো সাজেদা খাতুন। জুম্মন হোসেনের কোনো ভাবান্তর হচ্ছে না, নির্বিকার। সে জিজ্ঞাসা করলো, ‘তোমার হারটা দেখাও।’
‘আমার হার তুমি দেখো নাই? আমার হার তো তুমি।’ বলে জুম্মন হোসেনের বুকে তর্জনি দিয়ে একটা টোকা দিল সাজেদা।
‘বিয়ের প্রথম দিনগুলোতে তুমি অ্যাশ কালারের জিন্স পরতে, লাল পোলো শার্ট পরতে, চকোলেট কালারের জুতা, চকোলেট কালারের বেল্ট। তোমাকে কী যে সুন্দর লাগতো। তারপর কত বছর গেল। তোমার সেই পোশাক আর দেখি নাই।’ বলতে বলতে সাজেদা খাতুনের গলা কিছুটা ধরে আসে।
তারপর বলে, ‘আমি ছেলেকে খুব বকা দিয়েছি। ছেলে হলো তোমার। তোমার জানের জান, কইলজার টুকরা। ছেলের যা কিছু অর্জন, সবই তো তোমার। আমি ছেলেরে পেটে ধরা ছাড়া আর কিছুই করি নাই। ছেলের টাকা দিয়া যদি কিছু দিতে হয়, দিবে তোমারে। আমারে কেন?’ একটু থেমে বলে, ‘সংসারের জন্য বাবারা যা করে থাকে, তার তুলনা হয় না। আমাদের সমাজে বাবারাই তো সংসারটা ধরে রাখে, বাঁচিয়ে রাখে। আর ছেলেমেয়েরা সবকিছুতেই খালি মা আর মা, মা ছাড়া আর কিছু দেখে না। আমি তার উলটা। আমার বাবারেও দেখেছি, সারাজীবন সংসারের জন্য কলুর বলদের মতো ঘানি টেনে গেছে। তুমিও একদম আমার বাবার মতন। খালি দিয়াই যাও, কিছু পাইতে চাও না।’ সাজেদা খাতুন বলতে থাকে, ‘কোনো হার কিনি নাই। সব টাকা অ্যাকাউন্টে জমা দিয়ে এসেছি। আর মাত্র লাখ খানেক টাকা হলেই তোমার ২ নাম্বার সিএনজিটা করে ফেলতে পারবে। তারপর দুই সিএনজিতে যা পাব, বছর দুয়েকের মধ্যেই আমাদের ঘরটাও পাকা হয়ে যাবে, ইন শা’ল্লাহ।’
‘বাচ্চাদের মতো কান্দো কেন? যা, তোরা বাইরে যা।’ বলে শাড়ির আঁচল দিয়ে জুম্মন হোসেনের চোখ মুছে দিল সাজেদা।
একটু পরই জুম্মন হোসেন নিজেকে দেখতে পেলো, সে কাত হয়ে সাজেদার বুকের মাঝখানে মুখ বুজে শুয়ে আছে। সে খামোখাই উত্তেজিত হয়েছিল। লিটন হোসেন যখন বলেছিল, সে তার মাকে একটা হার কিনে দিবে, সে খুব অপমানিত বোধ করেছিল, নিজেকে খুব ছোটো, তুচ্ছ মনে হচ্ছিল। সংসারের জন্য, ছেলেমেয়েদের জন্য সে জীবন দিয়ে দিচ্ছে, অথচ ছেলের মুখ থেকে বাবার জন্য কোনো গিফ্টের নাম উচ্চারিত হলো না? এমন যদি হতো, সে একজন অথর্ব বাবা, সংসারের জন্য কোনো অবদান নাই, তা হলে এতে তার দুঃখ হতো না। কিন্তু সে সংসারের প্রতি নিবেদিতপ্রাণ কর্তা। সে খুব স্বাভাবিকভাবে নিজেকে নিয়ন্ত্রণে রেখেছিল এ ক’দিন। আজ যতই সময় ঘনিয়ে আসছিল, সেই ক্ষোভ ও খেদ ততই মাথাচাড়া দিয়ে উঠছিল। কিন্তু কথাটা মুখ ফুটে বলার মতো সাহস বা শক্তি যেমন তার ছিল না, তেমনি সে সংকোচও কাটিয়ে উঠে এটা বলে ফেলতে পারছিল না।
ছেলের অপরাধকে সে ক্ষমা করে দিল। ও তো ছোট্ট মানুষ। ও যা বুঝেছে, ঠিকই বুঝেছে। সংসারে মা-ই সব। সাজেদা কিছু কথা ঠিক বলেছে, বাকিগুলো ঠিক না। একজন বাবা সংসারের জন্য আয়রোজগার করে ঠিকই, কিন্তু গাছের গোড়ায় পানি ঢেলে গাছকে বাঁচিয়ে রাখার কাজটা করে স্বয়ং মা। বাবা মারা গেলে সন্তান এতিম হয় না, মা মারা গেলে এতিম হয়। কারণ, ছোটোকাল থেকে মায়ের কোলেপিঠেই সন্তানরা বড়ো হয়। যেদিকে তাকায়, সেদিকেই মা। এজন্য মায়ের কথাটাই সবার আগে মুখে আসে।
জুম্মন হোসেন সম্বিৎ ফিরে পায়। মুহূর্তে সে জেগে উঠে সাজেদাকে আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরে। সাজেদা খাতুন স্বামীর হাবভাব সবই বোঝে। ‘এই খবরদার। ছাড়ো আমাকে। আজও তোমার ধৈর্য হলো না।’ বলে এক ঝামটায় নিজেকে ছাড়িয়ে বের হয়ে যায় সাজেদা। জুম্মন হোসেন হাত-পা ছড়িয়ে দিয়ে চিত হয়ে শুয়ে ঘাড় কাত করে জানালা দিয়ে বাইরের গাছগাছালির উপর দিয়ে সন্ধ্যার লালচে আঁধারের দিকে তাকিয়ে থাকে – সাজেদা, ঠিক তার মায়ের মতোই একজন গুণবতী, লক্ষ্মী নারী, যে তার স্বামীর জন্য অন্তঃপ্রাণ। সাজেদার প্রতি তার ভালোবাসা আর শ্রদ্ধা উথলে উঠতে থাকে, যেমন তার মায়ের জন্যও হরহামেশাই বুক ছাপিয়ে কান্না চলে আসে। মায়ের মতো পৃথিবীতে আর কে আছে?
২৮ সেপ্টেম্বর ২০২২
বাবার নাম জুম্মন হোসেন, ছেলের নাম লিটন হোসেন। শুরুতে এ দুটি নাম ছিল যথাক্রমে মুরল আলি ও আক্কাস মিয়া। কোথাও এ নাম দুটো চোখে পড়লে দয়া করে বললে কৃতজ্ঞ থাকবো।
২৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০২২ সকাল ১০:৫৫
সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: জুম্মান যদি ১৫ বছর সৌদিতে চাকুরী করে ততদিনে লিটন কলেজে পড়ার কথা ৷ ব্রিলিয়ান্ট অবজারভেশন।
জুম্মন হোসেনের ১৫ বছর চাকুরির সাথে লিটন হোসেনের স্কুল বা কলেজে পড়ার সম্পর্ক নাই। কিন্তু কোনো কোনো বুদ্ধিমান পাঠক এ জিনিসটা অবশ্যই হিসাব করবেন, এ বিষয়টা আমার মাথায় অনেক কাজ করেছে। প্রথমত, জুম্মন এসএসসি পাশ করার পর মিডল ইস্টে গেছে, কিন্তু কত বছর পর বিদেশে গেছে, সে বিষয়টা উহ্য বা রহস্যময় করে রাখা হয়েছে। জুম্মন এসএসসি পাশ করার সাথে সাথেই সে বিয়ে করেছে কিনা, এ বিষয়টাও ক্লিয়ার না। সচরাচর যা হয়, ছেলেরা কয়েক বছর চাকরি করার পর দেশে এসে বিয়ে করে আবার বিদেশে চলে যায়। যারা এই ট্রেন্ডের সাথে পরিচিত, তারা বুঝবেন ব্যাপারটা। বিয়ের কত বছর পর লিটনের জন্ম, তাও বলা নেই। জুম্মন ১৫ বছর চাকরি করে দেশে ফিরেছে। কবে ফিরেছে সেটাও উল্লেখ নাই। এতকিছু বিশ্লেষণের পর লিটন হোসেনকে কলেজের ছাত্র বানানো যায়, অনার্সের ছাত্র বানানো যায়, আবার প্রাইমারির ছাত্রও বানানো যায়।
আপনাকে ধন্যবাদ এ দীর্ঘ গল্পটা পড়ার জন্য। এ প্লটটা মাথায় এসেছে বাংলাদেশের সাম্প্রতিক একটা সাফল্যের পর। আরো একটা প্লট ছিল, সেটা কই গেল, খুঁজে পাচ্ছি না
গল্প হিসেবে না দেখে একজন বাবার আত্বকথা হিসেবে এই লিখাটি চলে মনে হয়। আত্মকথার স্টাইলে লেখা হয় নি, তবে, আমি যে স্টাইলে লিখেছি, এটাও কোনো নতুন স্টাইল না। লেখক নিজের জবানিতে নিজের গল্প না বলে অন্যের গল্প বলছে।
আবারও ধন্যবাদ ও শুভেচ্ছা নিন।
©somewhere in net ltd.
১| ২৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০২২ সকাল ৯:২০
কালো যাদুকর বলেছেন: আপনার মত আমি এত ভাল পাঠক না। তবে একটি অসমতা লেখাতে পাচ্ছি ৷ জুম্মান যদি ১৫ বছর সৌদিতে চাকুরী করে ততদিনে লিটন কলেজে পড়ার কথা ৷
গল্প হিসেবে না দেখে একজন বাবার আত্বকথা হিসেবে এই লিখাটি চলে মনে হয়।